শুধু তোমারই জন্য পর্ব ৯

##শুধু_তোমারই_জন্য পর্ব ৯
#সাবানা_খাতুন

অর্নব সকালে অনুভব করল তার পিঠে বেশ ব্যাথা করছে।কাল কাঁকন এতো জোরে ধাক্কা দেবে সে নিজেও ভাবতে পারেনি।কিন্ত কাঁকন এইরকম কেন করল সে এখনো বুঝতে পারছে না। এত সব কিছু ভাবছে অর্নব, দেখে এমন সময় কাঁকন রুমে ঢুকল,আর তাকে দেখেই অর্নব জোরে জোরে শুরু করল, উহঃ আহঃ এতো যন্ত্রণা হচ্ছে পিঠে,কি বলব কেউ কি আমার কষ্ট টা বুঝবে আরে এত জোরে কেউ ধাক্কা দেয়। কাঁকন আড়চোখ দিয়ে অর্নবকে দেখছে কিন্ত মুখ একদম ভাবলেষহীন রেখেছে, যার কারনে মনে হচ্ছে অর্নবের ব্যাথার কোনো প্রভাব কাঁকনের মধ্যে নেই।অর্নব লক্ষ্য করল ব্যাপার টা এইবার রেগে বলল তুমি কি কিছু শুনতে পাচ্ছো না?উহঃ মাগো কত যন্ত্রণা হচ্ছে বলে অর্নব মিথ্যা কাঁদার ভাব নিয়ে আসে চোখে।ব্যাথার ওষুধ সামনে দিয়ে কাঁকন বলল নাটক টা না করে নাও এটা লাগিয়ে নাও ব্যাথা ভাল হয়ে যাবে।অর্নব বলল আমি নাটক করছি আর আমার হাত পৌঁছাবে না পিঠে তুমি লাগিয়ে দাও।পারব না জোর গলায় কাঁকন বলল।তুমি আমার কষ্ট টা বুঝবে কিকরে তোমাকে তো আর লাগেনি অর্নব বলল ।কাঁকন কঠিন দৃষ্টি করে আর মুখ কে শক্ত করে বলল , তুমি কারোর কষ্ট কোনোদিন বুঝতে পারবে না,কারন তুমি অন্য কে কষ্ট দিতে ভালবাসো,এটা তো শারীরিক, ওষুধ দিলে ভাল হয়ে যাবে একসময়,কিন্ত মনে যারা আঘাত দেয় সেই ব্যাথার কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি।কাঁকন অর্নবের হাতে ওষুধ দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

অর্নব একদম হতভম্ব হয়ে যায়,কাঁকনের হলো টা কি? এইরকম ব্যবহার কেনো করছে কাল থেকে বেশ তো রান্না করে খাওয়ালো এরই মধ্যে এমন কি হলো? কোথায় তার পিঠে আদর করে মলম লাগাবে তা না করে চলে গেল। একটু পরে রিয়া এসে বলল দাদা তুই কি আমাকে ডেকেছিস? অর্নব বলল না তো কই -কে বলল তোকে?,বৌদি বলল তুই নাকি পিঠে ওষুধ লাগাবি ,দে আমি লাগিয়ে দিচ্ছি ।রিয়া ওষুধ লাগাচ্ছে ,অর্নব জিজ্ঞাসা করল তুই কাল কি সারপ্রাইজ দিবি বলেছিলি না।রিয়া বলল কাল দেবো বলেছিলাম ,কাল যখন শেষ সারপ্রাইজ ও শেষ। অর্নব ভাবছে রিয়াও রেগে আছে তার উপর ,এবার বলল তোদের মেয়েদের বোঝা জাস্ট ইমপসিবল ।কাঁকনের কি হয়েছে রে, রিয়া বলল জানিনা।তোরা সারাদিন একসাথে থাকিস আর বলছিস জানিস না বলল অর্নব।দাদা তুই আগে বল পিঠে লাগল কি করে,অর্নব অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে বলল বলতে পারছি না কোথাও হয়তো লেগে গিয়েছে।তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করলাম সেটা তো বলবি বলল অর্নব।আচ্ছা দাদা একটা কথা বলতো,তুই যেটা বৌদির সাথে করলি।যদি সেম কাজ কেউ আমার সাথে করত তাহলে তুই কি করতিস? অবশ্যই তাকে শাস্তি দিতাম বলল অর্নব, তোর বোন বলে বলল রিয়া।বৌদিও কারোর মেয়ে তাহলে ভাব তার মনে কতটা কষ্ট তুই দিয়েছিস? অর্নব রিয়ার কথা শুনে,লজ্জা পেল,দেখ তখন কলেজে পড়ি সব জিনিসে আ্যডভেঞ্চার খুঁজতাম ।ভুল করে একটা জিনিস হয়ে যায়।যাক তুই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিস সেটাই বড় কথা বলল রিয়া।

এমন সময় নয়না হন্তদন্ত হয়ে অর্নবের রুমে ঢুকে। একদম অর্নবের সামনে এসে বসে পড়ল।আরে তুমি এখানে এত সকালে কি করছো? অবাক হয়ে অর্নব জিজ্ঞাসা করল।বেবি আমি শুনলাম তুমি চোট পেয়েছো😢😢, আই এম সো ওরি এবাউট ইউ,তাই আমি এখানে চলে এলাম।অর্নব বলল তোমাকে কে বলল, কাঁকন এইসময় রুমে ঢুকে বলল আমি ডেকেছি।অর্নব অবাক হয়ে বলল …..তুমি….., হ্যাঁ আমি আসলে তোমার ফিউচার ওয়াইফ, তুমি অসুস্থ তাই ভাবলাম ওকে আজ থেকে তোমার সেবা করতে দেওয়া হোক আর কত তুমি একে ওকে ডাকবে।নয়না বিশ্বাস করতে পারছেনা কাঁকন তার সাথে এত ভালো ব্যবহার করবে।তবুও মুখে ভাব যেন অহংকারি রেখে বলল ও আমার পাস্ট, প্রেজেন্ট,আর ফিউচার তুমি মাঝখানে ঢুকে সব সমস্যা করলে। কাঁকন মুখ ভাবলেশহীন রেখে বলল আর তিন মাস পর তোমরা একে অপরের হয়ে যাবে।অর্নব একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কাঁকনের দিকে।নয়না এবার অর্নবের একদম কাছে গিয়ে বসল।আদুরে গলায় বলা শুরু করল বেবী ডোন্ট ওরি আই এম হেয়ার বলে অর্নবের হাত ধরে ফেলে অর্নব একদম অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।এন্ড ইউ পিপল জাস্ট গেট আউট ফ্রম হেয়ার ।রিয়া কাঁকনের কানে বলল শালা ফরেনের মাল এত কথায় কথায় ইংরাজি ঝাড়ে বিরক্ত লাগে।কাঁকন বলল চল এখান থেকে,কাঁকন ও এই দৃশ্য দেখতে পারছে না,কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে তার😔😔

কাঁকন রুমে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে অন্যমনস্ক ভাবে, তার মন সকালের দৃশ্যতে আটকানো।অর্নব রুমে ঢুকল কিন্ত টের পেল না কাঁকন ,অর্নবের বেশ রাগ উঠছে কাঁকনের উপর নয়না কে ডেকে এনে মজা নেওয়ার জন্য ।কাঁকনের হাত কে একঝটকায় তুলে ধরল ।হাতের চিরুনীটা ঠক করে নিচে পড়ল,সাময়িক হতভম্ব হয়ে পড়ে কাঁকন।এরপর ঘোর কাটতেই চেঁচিয়ে বলল,এটা কি হচ্ছে অসভ্যদের মতো ব্যবহার করছ কেনো? অর্নব এইবার বেশ রেগে গিয়ে একটা জোরে চড় মারল কাঁকনের গালে ।মুহূর্তের মধ্যে কাঁকনের গাল লাল হয়ে গেল।এবার দেখলে সভ্য ব্যবহার ,কাল থেকে দেখছি তোমার এটিটিউড জিজ্ঞাসা করছি কি হয়েছে বলছোই না।কাঁকনের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে,অর্নব কে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগল কাঁকন ।আর অর্নব অনুশোচনা বোধ করতে লাগল এত জোরে চড় মারার জন্য। সেও কাঁকনকে জাপটে ধরল,অন্য রকমের অনূভুতি পেল অর্নব তাহলে সে কি কাঁকনের প্রেমে পড়ল।

( ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক)😣😣

কাঁকন হঠাৎ অনুভব করে যে সে অর্নবকে জড়িয়ে আছে।চমক ফিরতেই অর্নবের বাহু ডোর থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসে বলল, এসব কি করছিলে?আমি না হলে বুঝতে পারিনি কিন্ত তুমিতো আমাকে রুখতে পারতে।অর্নব এইবার মজার ছলে বলল সুন্দরী মেয়েদের জন্য,আমার বুক অলওয়েজ ওপেন।ও তাই না ব্যঙ্গ করে কাঁকন বলল, হবে হয়তো বড় লোকের ছেলেরা কত মেয়েকে নিয়ে কত কিছু ভাবে। তা আমার মত অতি সাধারণ মেয়ে কি বুঝবে ,কাঁকন আবার স্বমূর্তি ধরল তোমার জন্য এটা একটা গেম ।সেখানে কার মনে আঘাত লাগল কি হল কিছু জানার,বা ভাবার প্রয়োজন নেই। চড় টা মনে হয় ভাল করে লাগেনি আর একটা দিতে হবে দেখছি অর্নব রাগে বলল,কাঁকন রেগে গিয়ে বলল আমার গায়ে হাত তোলো কোন অধিকারে? অর্নব বলতে যাচ্ছিল কিছু একটা,বলতে গিয়েও গলার কাছে কথা আটকে যায়, সত্যি তো ওকে তো কোনো অধিকার দেয়নি অর্নব ।খুব বলতে ইচ্ছে করছিল অর্নবের আমার বৌয়ের অধিকারে,কিন্ত কিছুই বলতে পারছিল না।নিজে থেকে ওর উপর জোর চালাচ্ছে।কাঁকন বলল কি উওর দাও কোন অধিকারে আমাকে মারলে।দেখো আমি তোমার সাথে তর্ক করতে চাইনা,তুমি আর কোনোদিন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না বলে দিলাম।অর্নবের খুব ইচ্ছা করছিল কাঁকনকে আই লাভ ইউ বলে ওকে জাপটে ধরে কিস💋💋করতে কিন্ত কথা যেন মুখে উঠছে না, ঠোঁট কামড়ে অর্নব দাঁড়িয়ে থাকে।

কাঁকন পেছন ঘুরে চোখে জল নিয়ে বলল চলে যাও এখান থেকে।নিজের আসল ভালবাসা নয়নার কাছে ।ওকে বুকে জড়িয়ে অধিকার ফলাও, আমার মাএ তিনমাস বাকি।অর্নব এটা শুনে চমকে যায়,এরই মধ্যে তিনমাস শেষ হয়ে গেল,বুকে অজানা ভয়ে চিনচিনে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়, কাউকে হারানোর ভয়ে।কাঁকন বলতেই থাকে, তিনমাস পর তোমাদের মাঝখানে আর কেউ থাকবে না,ডিসটার্ব করার মতো, সুখে শান্তিতে থাকবে।আর আজ থেকে তুমি আমাকে ভেবে নিও বাড়ির একজন অতিথি মাএ।অর্নব কিছুই বলতে পারছে না ওর কষ্ট হচ্ছে অনেক । ওর জীবনে নয়না বর্তমান আর ওকে ফেলে কাঁকনকে নিজের করা মুশকিল।যদি এমনটা হয় তাহলে, নয়নার ফ্যামিলি আর ওর ফ্যামিলির সাথে সব সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে যেটা খুব খারাপ হয়ে যাবে বিজনেসের ক্ষেএে।মন বলছে কাঁকন থাক,আর কাঁকনকে অর্নব বলতে চাইছে আমি শুধু তোমারই জন্য। অর্নবের খুব খুব ইচ্ছা করছিল কাঁকনকে জাপটে নিজের বুকে ধরে রাখতে অনন্ত কাল যেখানে ডিসটার্ব করার কেউ যেন না থাকে ।আর মাথা বলছে ধরে রেখে লাভ তো নেই কাঁকন তো আর ওকে ভালবাসেনা যে বললেই চিরজীবন তার কাছে থেকে যাবে ।কাঁকনের চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে তার সব স্বপ্ন ,বুকে কষ্টের হাহাকার 😔😔কাঁকনও ভাবছে আমাকে ভাল যখন বাসোনা তাহলে মায়া বাড়িয়ে কি লাভ।ডিভোর্স পেপারের ছবিটা তার চোখের সামনে এখনো ভাসছে,কষ্ট টা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তার।দুজন মনে মনে নিজেদের মনের কথা বলছে মুখ ফুটছে না কারোর।কাঁকন এখনো পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে, অর্নব কি বলবে ভেবে পেল না।দোনামোনা করতে করতে অর্নব আর দাঁড়ায় না বেরিয়ে যায় রুম দিয়ে।

অফিসে বসে অর্নব এখনো পর্যন্ত ৬ থেকে ৯ টা সিগারেট খেয়ে ফেলেছে। মন খুব খারাপ কাঁকনের ব্যবহারে আজ খুব কষ্ট পেয়েছে।কিন্ত এমন কি হল যে এত পরিমান অভিমান জন্ম নিল কাঁকনের মনে জিজ্ঞাসা করলেও হেঁয়ালি কথায় জবাব দিচ্ছে ।কোনো কাজে তার মন বসছে না,অর্নব ভাবছে একবার কাঁকনকে মনের কথা বলবে আবার মনে করল যদি সে আবার রেগে যায় তো কি করবে। কাঁকন তো এসেছে ডিভোর্স নিতে তাকে কেনইবা ভালবাসবে।ধুরররর ভাল লাগে না মন খারাপ করে বলল অর্নব ,সিগারেটের ছাই ফেলে কাজে মন দেয়।পিওন এসে বলল বড়বাবু আপনাকে ডেকেছেন,অর্নব অভিরাজের কেবিনে ঢুকল, বাবা ডাকছো আমায়? অভিরাজ মাথা নাড়লেন যে তিনি ডেকেছেন।আজ তিনমাস হয়ে গেল এখনো অভিরাজ অর্নবের উপর রেগে আছে।অর্নব চেয়ারে বসল, অভিরাজ বলল তুই কি কোম্পানি কে ডুবাবি? অর্নব অবাক হয়ে বলল এরকম কেন বলছো।কারন আজ তিন মাস হয়ে গেল একটা ও ডিল হয়নি,একটাও প্রোজেক্ট জমা হয়নি আর গত সপ্তাহে ২৫ লাখটাকার ক্ষতি হলো কিছু নজরে পড়েনা? বলে দে তোর দ্বারা হবে না তাহলে আমি নিজে দেখে নেবো।অর্নব বলল দেখছি আমি কি করতে পারি,বলে মন খারাপ করে কেবিনের বাইরে চলে আসে,আজ কার মুখ দেখে বেরিয়ে ছিলো কে জানে সব উল্টো হচ্ছে।

ঘরে এসে দেখে রুমে কাঁকনের কোনো জিনিস নেই ছ্যাৎ করে উঠে বুক।কাঁকন কোথায় তাহলে চলে যায়নি তো অজানা ভয় অর্নব কে ঘিরে ধরে। রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে সবাইকে জিজ্ঞাসা করে কাঁকন কোথায়? কেউ বলতে পারল না।অর্নব যেন নিজেকে অসহায় মনে করল,বাড়ির সব জায়গায় এমনকি বাড়ির বাইরে পর্যন্ত পাগলের মতো অর্নব কাঁকনকে খুঁজছে।এমন সময় অর্নব দেখল কাঁকন গেস্ট রুম থেকে বেরিয়ে আসছে।অর্নব কাঁকনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল তুমি এখানে কি করছো আর তোমার জিনিস পএ কোথায়? কাঁকন দৃঢ়কন্ঠে বলল আজ থেকে আমি এখানে থাকব,অর্নব অবাক হয়ে জিঞ্জাসা করল কেনো?

জমা দিয়ে কি আর লেখা যায়😢।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here