#প্রেত_পুরুষ
—————–(৪র্থ পর্ব)
অপূর্বের ক্ষুব্ধ দৃষ্টি আমার বড্ড অচেনা।বাসার বাইড়ে হট্টগোল আরও বেড়ে যাচ্ছে।
অপূর্ব আলিফ সাহেবের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললো,চাচা বাইরে ঝামেলা বেড়ে যাচ্ছে।একজন আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।
আমি অবাক হয়ে ভাবছি বাইরে কীসের ঝামেলা!
বাবা মাথা নাড়িয়ে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ডাক্তার আলিফকে বললো,আমার মেয়েটা সত্যিই ঠিক আছে তো বাবা?
আলিফ সাহেব মুচকি হেসে বললেন, একদম ঠিক আছেন।ভয় পেয়ে সেন্সলেস হয়ে ছিলেন।প্রেশারটা লো হয়ে গেছে আমি ঔষধ দিয়ে দিয়েছি।আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।
বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সাথে অপূর্বও গেল তবে যাওয়ার আগে আলিফের দিকে আবার সেই রক্তলাল চোখ করে তাকালো একবার।
আমার কাছে সবকিছুই কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে।
আমি মায়ের দিকে তাকালাম, মা এখনও কাঁদছেই এবার খুব চিন্তা হচ্ছে আমার।বাইরে কি হয়েছে এই ব্যপারে মাকে জিজ্ঞেস করতে যাবো তখনই মা চম্পাকে আমার কাছে থাকতে বলে বাবার পিছন পিছন বেরিয়ে গেল।আমি এবার অসহ্য হয়েই চম্পার হাতটা টেনে ধরে জিজ্ঞেস করলাম,কি হয়েছে বলছিস না কেন?তোমরা সবাই এভাবে কাঁদবে আর বাইরে হট্টগোল, ঝামেলা সব শুনবো অথচ আমাকে কিছুই বলবে না?
চম্পা আস্তে আস্তে বললো,শান্ত হ ইরা।সব জানতে পারবি তোর শরির খারাপ করবে এখন এতো উত্তেজিত হস না।
আমার খুব চিন্তা হচ্ছে সাথে করে রাগও।মা,বাবা,চম্পা কেউ আমাকে কেন কিছু বলছে না এতে করে আমার চিন্তাটা আরও দ্বিগুণ হচ্ছে।
আমি চুপ করে রইলাম।ডাক্তার আলিফের গলা ভেসে এলো আমার কানে, ওনার প্রেশার মাপার যন্ত্রটা আমার হাতে লাগানোর জন্য আমাকে হাত বাড়াতে বলছেন।
আমি তাকালাম উনি চেয়ার টেনে আমার বিছানার একেবারে কাছে এসে বসেছেন।আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম।উনি যন্ত্রটা আমার হাতে লাগাতে লাগাতেই বললেন,বাইরে কি হয়েছে এই ব্যপারে সবটা বলা উচিৎ ওনাকে।এভাবে উনি আরও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন।
আমি একটু উৎকন্ঠা নিয়েই আলিফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম,আপনি জানেন কি হয়েছে?
আলিফ সাহেব মুচকি হাসলেন,তারপর কিছু একটা বলতে যাবেন তখনই চম্পা ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,বাইরে কিছু হয়নি।আর যে সব ঝামেলা হচ্ছে এগুলো নিয়ে তোর চিন্তা করার দরকার নেই।মামা সব সামলে নিবেন।
আলিফ সাহেব আবারও মুচকি হেসে চম্পাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,বাইরের পরিস্থিতি এখনও আপনাদের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করছেন?
আমি নিশ্বাস আটকে বললাম,তুই কাঁদছিস,মা কাঁদছে বাবাকেও দেখলাম খুব চিন্তিত তাও তুই বলছিস এসব নিয়ে চিন্তা না করতে?চম্পা তুই যদি এবার আমাকে সবকিছু খুলে না বলিস আমি উঠে বাইরে চলে যাবো।
কথাটা বলে আমি উঠতে যাচ্ছিলাম চম্পা আমাকে আটকালো।আলিফ সাহেব গলা পরিস্কার করে বললেন,বাইরে যাবেন না আপনাকে এখন রেস্ট নিতে হবে।আমি বলছি কি হয়েছে।
আমি কৌতহল নিয়ে ওনার দিকে তাকালাম।আলিফ বলা শুরু করলেন,আপনাকে আজকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল কেউ।সেখান থেকে কয়েক ঘন্টা আগে অপূর্ব সাহেব আপনাকে নিয়ে এসেছেন আর আপনাদের এলাকার সব লোকজন ব্যপারটা জানার পরে যে ছেলেটা আপনাকে তুলে নিয়ে যায় তাকে ধরে এনেছে।ওর পরিবারের লোকজনকেও আনা হয়েছে।ওই ছেলের বাবা চাইছেন এখন আপনার সাথে ছেলেটার বিয়ে দিয়ে ছেলেকে শাস্তির হাত থেকে বাঁচাতে।আর আপনার এলাকার লোকজনও সেটাই চাইছে প্রায় বেশ কয়েক ঘন্টা আপনি বাসার বাইরে ছিলেন ওরা আটকে রেখেছিল তাই এখন আপনাকে ওই খারাপ ছেলেটাকে বিয়ে করে পাপমুক্ত হতে হবে।আপনার বাবা কিছুতেই এই সিদ্ধান্ত মানছেন না বলেই লোকজন জড়ো হয়ে হট্টগোল করছে আপনাকে ওই ছেলেটার সাথে আজকে রাতের মধ্যেই বিয়ে না দিলে ওরা আপনাদের বাসা থেকে বের করে দিবে, এই এলাকায় থাকতে দিবে না।আপনার বাবার ব্যবসা -পাতি বন্ধ করে দেয়ার হুমকিও দেয়া হচ্ছে।আলিফ কথা শেষ করে ওনার প্রেশার মাপার যন্ত্রটা আমার হাতে লাগিয়ে দিলেন।
কথাগুলো শোনে আমার সারা শরির কাঁপতে শুরু করেছে।আমার নিশ্বাস আটকে আসছে, সব কিছু কেমন যেন দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।এ কোন বিপদে পড়লাম আমি আমি আর আমার পরিবার। আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়তে লাগলো।
চম্পা আমার দিকে তাকিয়ে অস্থির হয়ে বললো,আমি জানি এসব শুনলে তোর খারাপ লাগবে।ইরা কাঁদিস না মামা পুলিশকে ফোন করেছেন ওনারা আসলেই সব ঝামেলা মিটে যাবে।
তবুও যেন আমার মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।এই এলাকার লোকেরা পুলিশকেও মানে না যদি রেগে যায় সেই ছোট বেলা থেকেই দেখছি।
হঠাৎ মায়ের গলা শুনা গেল চম্পাকে ডাকছে।
চম্পা যাওয়ার জন্য উঠে আমার সম্মতির অপেক্ষা করছিল, আমি মাথা নেড়ে যেতে বললাম।
চম্পা চলে গেল, ঘরে এখন শুধু আমি আর ডাক্তার আলিফ।হঠাৎ আলিফের গলা শুনে আমি চমকে উঠে ওনার দিকে তাকালাম, বলছেন’ সাইয়ারা আপনার খুব বিপদ কিন্তু ভয় নেই আমি আছি শুধু আমার উপর ভরসা রাখবেন।
আবার খেয়াল করলাম সেই চেনা গলার সুর।এই মানুষটার গলার সুর আমার এতো পরিচিত কেন লাগছে বুঝতে পারছি না।
আমি থতমত খেয়ে প্রশ্ন করলাম,আপনি কি করবেন?
আলিফ ঠোঁট বাকিয়ে অদ্ভুতভাবে হাসলেন।তারপর বললেন,পুলিশ আসলে আমি কথা বলবো আরকি।আপনি চিন্তা করলে শরির খারাপ করতে পারে তাই একজন ডাক্তার হিসেবে রোগীকে ভরসা দিলাম।দেখি আপনার পাল্স হাতটা দিন।
আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম,ডাক্তার আলিফ পাল্স দেখার জন্য আমার হাত স্পর্শ করতেই আমার সারা শরির কেঁপে উঠলো।ঘাড়ের জন্মদাগটায় এতোটা যন্ত্রণা শুরু হলো যে আমি কুকিয়ে উঠলাম।আলিফ আমার হাত শক্ত করে ধরে আছেন।পাল্স দেখার জন্য এতোটা শক্ত করে হাত ধরা লাগবে কেন!
আমি হেচকা টানে হাত ছাড়িয়ে আনলাম।
আলিফ চমকে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,হাত সরিয়ে নিলেন কেন? দেখতেই তো পারলাম না।
আমি আমতা আমতা করে বললাম আমার ঘাড়ে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।আমার খুব অস্থির লাগছে।
কোথায় যন্ত্রণা হচ্ছে দেখি কথাটা বলে আলিফ আমার দিকে ঝুকে এলেন।উনি আমার এতোটাই কাছ থেকে আমার ঘাড় দেখার জন্য ঝুকলেন যে ওনার নিশ্বাসটা আমার ঘাড়ের উপর পড়লো। আমার সারা শরিরে যেন একটা শীতল বাতাস বয়ে গেল সাথে সাথে ঘাড়ের যন্ত্রণাও মিলিয়ে গেল।আমি বিছানার এক কোনে সরে এসে জবাব দিলাম, আর যন্ত্রণা হচ্ছে না।
উনি মুচকি হেসে বললেন,তাহলে তো আর ঔষধ লাগবে না, ডাক্তারের চোখই একটা ঔষধ জানেন তো?আপনার চোখটা দেখি।
আমি আবার কিছুটা সরে এলাম ওনার দিকে।
উনি আমার চোখ দেখার জন্য দু চোখের নিচের অংশ টেনে ধরে বললেন আমার চোখের দিকে তাকান।আমি না বলা পর্যন্ত তাকিয়ে থাকবেন পলক যেন না পড়ে।আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম।উনি দরজার দিকে কয়েক বার তাকালেন।তারপর আমার চোখের দিকে এক সৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।আমিও ওনার কথা অনুযায়ী চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।নীলাভ চোখ দুটো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মনে হয় সমুদ্র দেখছি।একটা সময় আমি খেয়াল করলাম ডাক্তার আলিফের চোখদুটো লাল হয়ে গেছে এবং চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে।আমি কিছু একটা বলতে যাবো তখনই উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে অস্থিরভাবে বলা শুরু করলেন, না.. সাইয়ারা চোখের পলক ফেলবে না।সাবধান! তাকিয়ে থাকো দয়া করে তাকাও আরও অল্প একটু সময়।কোনো কথা না।শুধু তাকিয়ে থাকো।
ওনার কথাগুলো আমার খুব অদ্ভুত লাগলো।বুঝতে পারছি না কি করতে চাইছেন ডাক্তার আলিফ!এটা যদি ওনার ট্রিটমেন্ট হয় তবে ওনার চোখ দুটো এমন লাল হয়ে গেল কেন আর উনি কাঁদছেনই বা কেন।
কিন্তু এই কন্ঠস্বর সত্যিই আমার খুব চেনা কিন্তু কোথায় শুনেছি এই কন্ঠস্বর আমি!আমি আর তাকিয়ে থাকতে পারছি না।তারপরও অদ্ভুতভাবে আমি পলক না ফেলেই তাকিয়ে আছি।
ডাক্তার আলিফ জোরে নিশ্বাস ফেলছেন,এতোটাই জোরে যে নিশ্বাসের শব্দটা সারা ঘরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
হঠাৎ আমার কানে এলো কে যেন সাইয়ারা বলে ডাকছে আমাকে,আমি দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখলাম দরজায় অপূর্ব দাঁড়িয়ে আছে।ওকে অস্থির আর ভিষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি দ্রুত প্রশ্ন করলাম,বাবা মা সবাই কোথায়? বাইরে কি অবস্থা?
অপূর্ব চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মুখে কোনো কথা বলছে না কিন্তু মনে হচ্ছে রাগে ফুসছে।
তখনই মা ঘরে ঢুকলো, আমি মাকে প্রশ্ন করলাম চম্পা কোথায় মা? কেন ডেকেছিলে ওকে?
মা অবাক হয়ে বললো,কখন ডাকলাম চম্পাকে আর তুই ঘরে একা ছিলিস নাকি?
মা চম্পাকে ডাকা শুরু করলো।
কয়েকটা ডাক দেয়ার পর চম্পা এলো, এসে মাকে এখানে দেখে বিস্ময়ে হা হয়ে বললো, মামী তুমি এখানে আর আমি সারা ঘর তোমাকে খুঁজে দেখলাম কোথাও নেই।কেন ডেকেছিলে?
মা আবারও বললো চম্পাকে ডাকেনি।কিন্তু আমরা তো স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিলাম মায়ের গলা।
মা অপূর্বকে পাঠালেন বাবাকে ডাকার জন্য তারপর আমার কাছে এসে বসলো।
বাবা এসে আমার আরেক পাশে বসলো।আমিও উঠে বসলাম।বাবা কথা শুরু করবে তখনই মা বাবাকে ইশারায় বুঝালো আলিফ রয়েছে এখানে।
ডাক্তার আলিফ মনে হয় ব্যপারটা বুঝতে পারলেন তাই মুচকি হেসে বললেন,আসলে আমি বাইরে যেতাম কিন্তু সাইয়ারাকে যে স্যালাইনটা লাগিয়েছি ওটা বার বার কম বেশি করতে হচ্ছে এটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি বাইরে যেতে পারছি না।অসুবিধা নেই আপনারা কথা বলুন আমি এসবে মন দিবো না।
আলিফের কথা শুনে বাবা মা একটু লজ্জাই পেল তারপর বাবা যেন কষ্ট করে একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,সবই তো তুমি দেখছো বাবা আর সবই শুনছো।এই কথাগুলো যদি শুনো তাতে আর কি যায় আসে।
মা চম্পাকে ইশারা করলো দরজা লাগানোর জন্য।চম্পা দরজা লাগিয়ে এসে দাঁড়ালো আমার পাশে।ঘরে এখন আমি, বাবা,মা,চম্পা আর ডাক্তার আলিফ।
বাবা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলা শুরু করলো,সাইয়ারা মা আমার নিশ্চয়ই এই মুহুর্তে তোমার বাবার পরিস্থিতি বুঝতে পারছো।তোমার চাচাজানও চলে এসেছেন তিনিও চাইছেন যেন ওই বদজাত ছেলেটার সাথে তোমার বিয়ে হয়।
আর বাইরের লোকের কথা আর কি বলবো।
কিন্তু আমি তো কিছুতেই আমার মেয়ের এই ক্ষতি করতে পারি না।অনেক চেষ্টা করেছি,পুলিশকে ফোন করেছি।রাস্তা নাকি বন্ধ, বিকেলের ঝড়ে গাছ পড়ে জায়গায় জায়গায় রাস্তার বেহাল দশা করে দিয়েছে।এই মুহুর্তে আমি আইনের সহায়তাও পাচ্ছি না।
আর এদিকে ওরা বলে দিয়েছে যদি ওই ছেলের সাথে তোমার বিয়ে না দেই তবে আজকে রাতের মধ্যেই তোমার বিয়ে দিতে হবে।বিয়ে যদি না দেই তবে ওরা আমাদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিবে,আমার ব্যবসা বানিজ্যও বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে।এলাকাবাসী এতো গুলো মানুষের কাছে তোমার বাবা বড়ই অসহায় মা।দশজনের ক্ষমতার কাছে আমি যে একজন ক্ষুদ্র মানুষ পেরে উঠবো না তাই আমি ওদের কথা মেনে আজকে রাতের মধ্যেই তোমার বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বাবার কথাগুলো শুনে আমার চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো, তারপর আমি কাঁপাকাঁপা গলায় প্রশ্ন করলাম কার সাথে বাবা?
বাবা মাথা নিচু করে জবাব দিলো, অপূর্বের থেকে ভালো ছেলে এই মুহুর্তে পাওয়া আর সম্ভব না।ছেলেটা আমাদের নিজের ছেলের মতোই।আমি ওর সাথে কথা বলেছি ছেলেটি এক বাক্যে রাজি শুধুমাত্র আমার কথায়।এবার যদি তুমি মত দাও মা তবে তোমার বাবাকে আর তোমাদের নিয়ে অসহায় পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না।ভেবে দেখো কি করবে।
মা তখন বাবাকে উদ্দেশ্য করে আস্তে করে বললো,ভাবাভাবির আর কিছুই নেই তুমি বুঝতে পারছো না।এই ছেলের সাথেই আমার মেয়ের বিয়ে হবে।
চম্পা আমার কাছে এসে আমার হাতে আলতো করে স্পর্শ করলো, আমি চম্পার দিকে তাকাতেই ও মাথা নেড়ে না করলো।
হঠাৎ আমার চোখ পড়লো আলিফের দিকে উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
মা যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে বললো, বিয়ের সব ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি আর অপূর্বের সাথে যদি কথা বলতে চাস একবার ওকে ডেকে আনি।
মা উঠে চলে যাচ্ছিল আমি মাকে আটকে যন্ত্রের মতো বললাম,আমি অপূর্বকে বিয়ে করবো না মা।
মা অবিশ্বাসের চোখে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো,বাবার চোখে মুখেও অসহায়ত্ব আর অবিশ্বাস।
চম্পার ঠোঁটে হাসি।
আমি মাথা নিচু করে আবার বলা শুরু করলাম,অপূর্বকে বিয়ে না করলেও আমার বিয়ে আজ রাতেই হবে।আমি যাকে বলবো তার সাথে।
মা অস্থির হয়ে বললো,কার কথা বলছিস, কাকে বিয়ে করতে চাস তুই?
আমি হাত ইশারায় আলিফকে দেখালাম।
মা-বাবা দুজনেই চমকে উঠলো।
বিস্ময়ে আলিফের মুখ হা হয়ে আছে।
মা অনেকটা বিরক্তি নিয়ে আমতা আমতা করে বললো,এসব কি বলছিস ইরা?
বাবা মাকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীরভাবে বললো,দেখো তো সাইয়ারার জ্বর আসছে কি না।
আলিফ এবার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,না আংকেল ওনার জ্বর নেই।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন,সাইয়ারা সত্যিই আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান?আপনার বাবার মনে হচ্ছে আপনি জ্বরের ঘুরে ভুলভাল বকছেন।একটু ভেবে নিশ্চিত হয়ে বলুন আসলেই আমাকে বিয়ে করতে চান?
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।
কেন হঠাৎ আমি চেনা নেই, জানা নেই এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করতে চাইলাম তা নিজেই বুঝতে পারছি না।শুধু মনে হচ্ছে বিয়ে যদি করে তবে এই ছেলেটাকেই করবো।
বাবা থতমত খেয়ে বসে আছে।মা আমার কাছে এসে ফিসফিস করে একটার পর একটা প্রশ্ন করেই চলেছে।
আলিফ বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,আংকেল আপনারা এই মুহুর্তে যে পরিস্থিতিতে আছেন আমি তো নিজের চোখেই সব দেখতে পাচ্ছি তাই একটা মেয়ের সম্মান রক্ষার্থে আপনারা যদি চান তবে আমি সাইয়ারাকে বিয়ে করতে রাজি।আপনারা নিশ্চয়ই আমার পরিচয় নিয়ে ভাবছেন? আমি আমার সমস্ত পরিচয় আপনাদের দিবো।বাবা মাকেও নিয়ে আসতে পারতাম কিন্তু এই মুহুর্তে তো ওরা আসতে পারবে না পুলিশই যখন আসতে পারছে না এই এলাকায়।
আমি ফোনে বাবা মায়ের সাথে আপনাদের যোগাযোগ করিয়ে দিবো।আমি আসলে এই বিয়েতে অমত করছি না কারণ এটাই হয়তো হওয়ার ছিল।আল্লাহ চাইছেন বলেই আমি এই ঝড়ের মধ্যে আপনাদের এলাকায় রোগী দেখতে আসলাম।
বাবা বেশ কিছুক্ষণ আলিফের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর কিছু একটা চিন্তা করছিল, মা একটু অস্থির হয়েই বললো,কিন্তু সাইয়ারার জন্মদাগটার কি হবে?
আমি অনেকখানি চমকে গিয়েই মায়ের দিকে তাকালাম।
বাবা ইশারায় মা কে চুপ থাকতে বলে মাকে সাথে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আলিফ চুপচাপ ঘরের একপাশে পায়চারি করা শুরু করলেন আর এদিক ওদিক দেখতে লাগলেন।
চম্পা আমার কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিস ইরা।এই মুহুর্তে এই ডাক্তার আলিফ সাহেব ছাড়া ভালো পাত্র আর কেউ নেই তোর জন্য।অন্তত অপূর্ব শয়তানটার থেকে তো বেঁচে যাবি।
আমি অবাক হয়ে চম্পার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম অপূর্ব শয়তান হবে কেন?
চম্পা কেমন যেন একটা কাচুমাচু করে বললো,এমনিই আমার তো ওকে কখনও ভালো ছেলে মনে হয় না তাই।
কেন জানি না চম্পার মুখ দেখে ওর বলা কথাটা আমার বিশ্বাস হলো না।তবুও আমি আর কোনো প্রশ্ন না করে চুপ করে রইলাম।
মা কিছুক্ষণ পরে আলিফকে ডেকে নিয়ে গেল।
তার আধ ঘন্টা ঘানেক পরেই বাবা,মা আলিফ সহ একজন মওলানা মতো লোক আমার ঘরে ঢুকলেন।
ওনারা ঘরে প্রবেশ করার পরে বুঝতে পারলাম মওলানা মতো লোকটা কাজী।আর উনিই আমার আর আলিফের বিয়ে পড়াবেন।যেভাবে ছিলাম সেভাবেই আমাকে বিয়ের জন্য বসানো হলো।বিয়ে পড়ানো শুরু হলো,কাজী সাহেব আমাকে যখন কবুল বলতে বললেন ঠিক তখনই অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটলো..
চলবে..
লিখা: উম্মেহানি মিম
★কমেন্টে পূর্বের এবং পরের পর্বের লিংক দিয়ে দিবো।