এখানে আকাশটা ভালোবাসার পর্ব ৯

#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ০৯
.
বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে নিজের রুমের জানালার ধারে বসে আছে নিশিকা। খুব খারাপ লাগছে বাবা মা ভাইবোনেরা চলে যাওয়াতে। ইচ্ছে করছিল ছুটে চলে যেতে। কিন্তু….!
সে আজই যেতে চেয়েছিল কিন্তু তার শাশুড়ি নিষেধ করলেন আজ যেতে, আরো নাকি কিছু পারিবারিক অনুষ্ঠান বাকি, সবাই বউ দেখতে আসবে, কি আর করা।

“নিশিকা পরী মন খারাপ মনে হচ্ছে? বাসার জন্য খারাপ লাগছে?”
এবার কেঁদেই ফেলে নিশিকা।
জয় এতটা বোঝেনি যে নিশিকা একেবারে কেঁদে ফেলবে। ওর কান্না যে একেবারেই সহ্য হয়না জয়ের।
“মাকে বলে তোমাকে দিয়ে আসব এখুনি, তবু কেঁদো না এভাবে”
বাবা মা ভাইবোন ছাড়া থাকতে ইচ্ছে করে না আবার জয়কে ছেড়ে এক মূহুর্ত ভালো লাগে না। কি করবে নিশিকা!
“তুমি যাবে না?”
নিশিকার প্রশ্নে জয় হেসে ওঠে, বলে “নাহ, সায়ানকে নিয়ে যেতে বলব, কয়েকদিন গিয়ে থাক, তারপর সায়ান আবার দিয়ে যাবে তারপর আমরা একসাথে যাবো, তখন বাকি ফর্মালিটিজ মেইনটেইন করা যাবে… কেমন?”
“না”
“কেন?”
“আমি যাব না”
“আরে রাগ করলে? আচ্ছা কয়েকদিন না আরো বেশিদিন থাকবে, খুশি?”
এটা বলেই জয় সায়ানকে ফোন করার জন্য ফোন হাতে নিল।
“কাকে ফোন করছ?”
“সায়ানকে বলি….?”
জয়ের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে জয়কে জাপটে ধরে নিশিকা বলে
“আমি তোমাকে ছাড়া কোত্থাও যাব না”
“ও এই ব্যাপার, হাহাহা, আগে বলবে তো! আমি বুঝিনি সরি। আচ্ছা বেশ আমরা কালই যাবো বাবা মাকে বলে কেমন?”
“হুম” আদুরে কন্ঠে উত্তর দেয় নিশিকা।
.
নওশির মনটা আজ ভীষণ খারাপ, কিচ্ছু ভালো লাগছে না আপু ছাড়া, সব ফাঁকা সবাই আছে তাও…!
আপু পাশে ছিল তাই এত দিন বুঝতে পারেনি আপু তার কতটা জায়গা জুড়ে ছিল।
আস্তে আস্তে সায়ানের রুমে সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নওশি।
“ভাইয়া আসবো?”
“আয় নওশি”
“ভাইয়া আপু কবে আসবে? আমার কিছুই ভালো লাগছে না”
“কাল আসবে”
“সত্যি বলছ?”
“হুম”
“ওয়াও!!!”
এক নিমিষেই সব মন খারাপ চলে যায় নওশির।
এবার নিজেই পুরো বাড়িটাকে মূহুর্তের মাঝে মাতিয়ে তোলে, এই ক্ষমতা শুধু নওশিরই আছে মনে হয়।
সৃষ্টিকর্তা সবাইকে এই ক্ষমতা দেন না, সবাই তার চারপাশ আলোকিত করে রাখতে পারে না!
বাবা মা, সায়ান, রায়ান আর রোশনি সব্বাইকে আবার আনন্দে ভরিয়ে দেয় তার স্বভাবসুলভ চঞ্চলতা দিয়ে!
.
আজ সায়ান ভীষণ খুশি৷ প্রোজেক্টের পিছনে তার এত্ত পরিশ্রম আজ সাক্সেসফুল! তার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।
সবাইকে নিয়ে আজ অফিসে তাৎক্ষণিক খুব ছোট খাট একটা পার্টির আয়োজন করলো সায়ান।
“ধন্যবাদ রিদিমা, নতুন হিসেবে আপনি অনেক বেশি পারদর্শিতা দেখিয়েছেন যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন, আমি আপনার উপর খুবই খুশি!”
“থ্যাংকস স্যার”
রিদিমাও আজ অনেক খুশি, কিন্তু সেটা এই প্রোজেক্ট এর জন্য নয়। বসের আলাদা নজরে পড়েছে এই জন্যে।
এইতো চাই তার… বস দেখতে খুব হ্যান্ডসাম, হিহিহি নিজের মনেই হাসে রিদিমা।
রিদিমাকে এবার একটু অন্যচোখে দেখতে শুরু করেছে সায়ান। মেয়েটা ভালোই কাজ করছে, বেশ স্মার্ট মেয়ে!
.
“সানজু কেমন আছিস?”
“ভাল রায়ান, তুই?”
“আমিও, আচ্ছা রায়ান তুই সত্যি ভাল আছিস”
“হুম কেন রে? এভাবে জানতে চাইছিস যে?”
“না এমনি রে”
“চল কোথাও বসি? ক্লাস তো শেষ”
“না রায়ান আমি একটু ব্যস্ত”
রায়ানকে অবাক করে দিয়ে চলে যায় সানজানা!
কিছু ভালো লাগছে না সানজানার। কেন বুঝে না রায়ান। আর যদিও বুঝে তবে হয় দূরে যাবে নয়তো কাছে আসবে। কিন্তু কোনোটাই করছে না রায়ান! উফ অসহ্য একটা!
এভাবে একতরফা ভাবে ভালবাসা যায় নাকি!!! ও কিছুই কি বুঝতে পারেনি? নাকি বুঝতে চাইছে না? সানজানা ভাবতে পারে না।
আগামী সপ্তাহ ভার্সিটি যাবে না বলে ঠিক করে সে। তাকে বুঝতেই হবে কি চায় রায়ান। শুধু কষ্ট পেয়ে কি লাভ!
“কাকু দ্রুত বাসায় চলুন”
“হ্যাঁ আম্মুজান, কিন্তু আপনার মন খারাপ কেন?”
“এমনি কাকু”
হঠাৎ সামনে একটা ট্রাক কিছুটা রং সাইডে এসে পড়ে আর সানজানাদের গাড়ি ব্রেক করতে করতে ধাক্কা খায় ট্রাকের সাথে!
গাড়ির সাইডের কাচ ভেঙে ছোট্ট এক কাচ টুকরা সানজানার মাথায় লেগে কেটে যায়।
ড্রাইভার মজিদ হাতে ব্যথা পান।
আশেপাশের মানুষ দ্রুত এগিয়ে এসে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়…!
.
“চকলেট গুলো কার রে রোশনি? আমার মনে হচ্ছে”
“ওই ধরবি না নওশি আপু, ওগুলো বড় আপু আর জয় ভাইয়ার”
“ও বাবা কত্ত আদর, আর আমি বাড়িতে আছি আমাকে এত অবহেলা!”
বোনকে একটু ক্ষেপানোর জন্য কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল নওশি।
“আপু তুই তো চকলেট ভালবাসিস, তোকে আমি আমার সব চকলেট দিয়ে দিব, তুই যেন আপুর মতো চলে যাস না! প্লিজ….”
রোশনির কথা শুনে অবাক হয়ে যায় নিশিকা।
বোনকে বুকের মাঝে টেনে নিয়ে বলে “ধুর পাগলি এসব বলে না, চল তো দেখি আম্মু কি করছে?”
“হুম চল” আদুরে গলায় বলে রোশনি।
.
“মেয়েটা চলে গিয়ে বাড়িটা কেমন যেন ফাঁকা হয়ে গেল”
স্ত্রীর কথায় কেবল মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলেন সাহরাফ।
আসলেই কেমন যেন লাগছে। এভাবে নাশু আর রুশু ও চলে যাবে, ভাবতেই ফাঁকা ফাঁকা লাগছে সাহরাফ সাহেবের। সারাজীবন যদি সবাই এভাবে কাটাতে পারতেন, বাচ্চা দের মতো চিন্তাভাবনা ঘোরাফেরা করে তার মাথায়।
সারাদিনে কয়েক দফা কথা হয়েছে সবার নিশিকার সাথে, তবুও!
মানুষের জীবন থেমে থাকে না। সৃষ্টিকর্তা সবকিছুর জন্যই এক ধরাবাঁধা নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন। সবাইকেই সেই নিয়মের মাঝেই চলতে হয়।
এটাই জীবন।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here