শুধু_আমারই
২য়_পর্ব
আমি কিচেনে কাটাকুটির কাজ করছি হঠাৎ আমার আঙ্গুল কেটে রক্ত বেরুতে থাকে। সায়ান পাশেই বকবক করছিল আঙুলের রক্ত দেখে অস্থির হয়ে বলে পিয়া খুব ব্যাথা পাচ্ছো?? কষ্ট হচ্ছে?? এতো রক্ত!!
আমি বিরস মুখে বলি সামান্য আঙুল কেটেছে, সায়ান। তুমি এতো ঢং করছো কেন??.
স্বপ্না বু ফিক করে হেসে বলেন পিয়া তুমি এতো বেরসিক কেন?? সায়ান তোমাকে কত ভালোবাসা দেখাচ্ছে আর তুমি খালি বিরস কথা বলো ওর সাথে।!
আমি হেসে বলি তাই বুঝি সায়ান! তুমি আমার সাথে আহ্লাদ করছো??
সায়ান ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে আমি সত্যিই তোমার কাটা আঙুল নিয়ে ভাবছিলাম। তোমরা সবকিছুই খালি ফান হিসাবে দেখো কেন??.. বলে সায়ান কিচেন থেকে বেড়িয়ে পড়ে।
আমি আর স্বপ্নাবু অট্টহাসিতে গড়িয়ে পড়ি।
আজ ষোলোতম দিন আমার বিবাহিত জীবনের। এ ষোলো দিনে অনেক কিছু বদলে গেছে।
এ বাড়ির বউ হিসাবে মা আর স্বপ্না বু আমাকে অনেক বেশি আদর করেন। মোটাসোটা মিষ্টি চেহারার আমার শাশুড়ী মা আমায় মায়ার বাঁধনে আষ্টেপৃষ্টে রেখেছেন।
আর সায়ান আমার কাছে বিভিন্ন কারণে প্রায় প্রতিদিনই ঝাড়ি খায়। তবে তাতে ওর কিছু যায় আসে না। উল্টো হেসে বলে এতোদিন আম্মু একা বকতো এখন তুমিও যোগ দিয়েছো।
ওর অনেকগুলো দোষের মধ্যে একটা দোষ হলো সময়মত অফিসে না যাওয়া।
কিন্তু সায়ানের ভাষ্যমতে অনটাইম অফিস যাওয়ার চেয়ে এমপ্লয়িদের কাছ থেকে অনটাইম কাজ বের করাটা জরুরি।
সেদিন আমার আব্বুও বলল সায়ান নাকি সবসময়ই এমন খামখেয়ালী ছেলেমানুষীতে ভরপুর। সায়ানের আব্বু আশফাক চৌধরী আর রোকেয়া ম্যাম মূলত এ কোম্পানিটা এক সাথে চালু করেছিলেন। দুজনের বোঝাপড়া নাকি দারুন ছিল। সায়ানের আব্বুর মৃত্যুর পরে আমার শাশুড়ী শক্তভাবেই কোম্পানিকে সামনে এগিয়ে নেন।
উনি যেমন সিনসিয়ার, ডিসিপ্লিন্ড ছিলেন সায়ান হয়েছে তার উল্টো। কিন্তু অফিসের সবাই নাকি সায়ানের পারফরমেন্সে বেশ খুশি। সায়ানের মধ্যে ছেলেমানুষী থাকলেও সে অনেক দায়িত্বশীল, আন্তরিক আর অনেক বেশি টেলেন্টেড।
এতো বড় এ ডুপ্লেক্স বাসায় আমরা তিনজন মেয়ে মানুষ আর একমাত্র পুরুষ লোক সায়ান। বাসায় থাকা অবস্থায় সায়ান সারাক্ষণ আমাদের আশেপাশেই থাকে। এমন না যে মোবাইলে বা ল্যাপটপে মাথা ঢুকিয়ে নিজের রুম বন্দি হয়ে থাকে।
সায়ান অফিস সেরে আগে মায়ের পেছনে ঘুরঘুর করতো এখন মায়ের পাশাপাশি আমার পেছনে ঘুরঘুর করে।
এ কয়েকদিন সায়ানের সাথে মিশে আমি এটা বুঝতে পেরেছি সায়ান মনের দিক থেকে খুব সোজা সরল নরম মনের মানুষ। ওর মধ্য কোনো কুটিলতা নেই বরং ছেলেমানুষীতে ভরা।
সায়ান এখন আর ডিভানে শোয় না, বিছানাতেই আমার পাশে শোয়। প্রথম কয়েকদিন ডিভানে শুয়ে তার ব্যাকপেইন শুরু হয়। তবুও মুখ ফুটে বলে না বিছানায় শোয়ার কথা।
শেষে আমিই বলি এতো যখন ব্যথা, কেন বিছানায় শুচ্ছো না?? আমি তো মানা করি নি। তুমি কি সানজানাকে তোমার পবিত্রতা বুঝাতে চাইচ্ছো??
সায়ান অবাক হয়ে বলে পিয়া তুমি এভাবে বলছো কেন?
— তো ভুল কি বলছি? তুমি যে বিছানায় না শুয়ে ডিভানে শুয়ে ভং ধরেছো ওটার ব্যাখা দাও তো!
— আমি আমি… আসলে তোমাকে সিকিউর ফিল করাতে…
—- আমাকে কিছু ফিল করানোর দরকার নাই।
শুনো সায়ান, তুমি আমি একই রুমে ঘুমাচ্ছি। সুতরাং তুমি ডিভানে ঘুমাচ্ছো না বিছানায় ঘুমাচ্ছো তাতো কেউ দেখছে না। আর তুমি যে অতি ভালো মানুষ একেবারে সাধু টাইপ তা আমি বুঝে গেছি। সুতরাং এতো চিন্তা কিসের??
আর এটা তোমার বিছানা, তুমি কিনা আমাকে এর পুরো সাম্রাজ্য দিয়ে রেখেছো, কেন???
শুনো, আমার পরবর্তী জীবনে যে আমার পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন করবে এমন মানুষের ধারেকাছে আমি যাবোই না সুতরাং তুমি নিশ্চিতে ওপাশে ঘুমাতে পারো। তবে তুমি যদি সানজানাকে জবাবদিহিতার ভয় পাও তবে সেটা আলাদা কথা।
সায়ান হয়তো আমার পারমিশনের অপেক্ষাই করছিল। আমি বলার সাথে সাথে সুরসুর করে বিছানার এক পাশে এসে শুয়ে পড়ে।
সেদিন থেকেই মূলত আমাদের বিয়ে নামক তিক্ততা সরে সুস্থ স্বাভাবিক একটা বন্ধুত্ব শুরু হয়।
সায়ান এখন আমার সাথে অনেক বেশি সাবলিল। বরং ওর হাবভাব দেখে মা -স্বপ্না বু তো বুঝে বসে আছে যে সায়ান আমার উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।
আসলে ঐদিন সায়ানের এফেয়ারের কথা জেনে আমার মাথা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। আমি রাগে থরথর করে কাঁপছিলাম। সায়ান আমাকে বুঝানোর আপ্রাণ চেষ্ঠা করছিল আর আমার কেবলই মনে হচ্ছিল কিছু একটা দিয়ে সায়ানের মাথা ফাঁটিয়ে দেই। দুপুর পর্যন্ত আমি রুম থেকে বের হই নি। সায়ান মা আর স্বপ্নাবুকে ঐদিন কিভাবে সামলেছিলো ও- ই জানে। কিছুক্ষণ পর পর সে রুম থেকে বের হচ্ছিল আর ঢুঁকছিলো। টেনশনে মুখ লাল, নিজের মাথার চুলগুলো কিছুক্ষণ পর পর টেনে ধরছিলো। ওর অস্থিরতা দেখে মনে হচ্ছিলো যে কোনো সময় সে অজ্ঞান হয়ে যাবে।
সায়ানের এমন করুন কাঁদো কাঁদো চেহারা আমার মনে একটু হলেও দাগ কাটে।
আসলেই তো পুরো ব্যাপারটাতে কারো কোনো দোষ ছিলো না। কেউ কারো খারাপ চায় নি। মা আমাকে পছন্দ করেছেন সায়ানকে না জিজ্ঞেস করে। আর সায়ান কেমন মা পাগল ছেলে তা তো আমি নিজেই দেখেছি সুতরাং ঐ অবস্থায় মায়ের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেয়াটাই ওর জন্য স্বাভাবিক ছিল।
এখন আমি যদি সায়ানের এফেয়ারের কথা প্রকাশ করে হৈচৈ করতাম তবে মা অবশ্যই ভেঙে পড়তেন। একদিকে ছেলের মতামত না নিয়ে বিয়ে দেয়ার ভুল অন্যদিকে আমার জীবন এমন অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয়ার অপরাধবোধে উনার আবার না কোনো দূর্ঘটনা ঘটে যেত। আমি এতোটাও নিষ্ঠুর নই যে মায়ের মতো এতো ভালো মানুষের এমন পরিনতি চিন্তা করবো।
তাই আমি মাথা ঠাণ্ডা করে সিদ্ধান্ত নেই বিয়ে যেহেতু হয়েই গেছে এখনই ডিভোর্সের কথা সবার সামনে না তুলে কিছুদিন যেভাবে চলার সেভাবেই চলতে দিবো। পড়ে মা সুস্থ হয়ে উঠলে পরিস্থিতি বুঝে উনাকে সত্য জানানো হবে। তবে সায়ানকে আমি কড়াকড়িভাবে বুঝিয়ে দেই আন্টি সুস্থ হয়ে উঠলে আর একদিনও আমি এ বাড়িতে থাকবো না। সায়ানও তাতে সায় দেয়।
বিয়ে নামক যে সুখ স্বপ্ন নিয়ে আমি এ বাসায় এসেছিলাম তা আপাতত ঝেড়ে ফেলে আমি আন্টির সুস্থতার দিকে মনোযোগ দেই। তারাহুরো করে, হুট করে নেয়া সিদ্ধান্ত সবসময় যে ভালো নাও হতে পারে তার প্রমাণ হয়তো আমাদের এই বিয়ে। আমি এরজন্য কাউকেই আর দোষী মনে করি না। না সায়ানকে না আন্টিকে না আমার পরিবারকে।
সায়ানের ভালোবাসার নাম “সানজানা”। আমি শুধু এ টুকুই জানি। সে কোথায় থাকে , আমাদের বিয়ের কথা জানে কিনা, কি তার রিয়েকশন আমি জানি না। এতোদিনে একবারও আমি সায়ানকে এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেসও করি নি। সায়ানও আগ বাড়িয়ে আমাকে কিছু বলে নি।
আমি সায়ান ও তার ভালোসার মানুষটিকে নিয়ে মোটেও মাথা না ঘামিয়ে মিথ্যা মিথ্যা সুখের সংসার করে যাচ্ছি। খুব একটা ঝামেলাও হচ্ছে না বরং আমার আর সায়ানের দুজনের পরিবারই খুশি। কেউ ধরতেই পারছে না আমরা ভেতরে ভেতরে কি স্বন্ধি করে আছি। অবশ্য তার একমাত্র কারণ সায়ান। সে বিয়ের চাপ থেকে মুক্তি পেয়ে আমার অতি অনুগত হয়ে গেছে। আমি যেন ওর বেস্ট ফ্রেণ্ড।
রাতের খাবার শেষে প্রায়ই আমি স্বপ্নাবুর সাথে কিচেন গুছাই আর টুকটাক গল্প করি। সায়ান মাঝে মাঝেই আমায় ডেকে রুমে নিয়ে যায়।
স্বপ্নাবু মুচকি মুচকি হাসে। সেটা দেখে আমারও হাসি পায়। উনি নিশ্চই ভাবেন আমার আর সায়ানের বিবাহিত জীবনের কত না ভালোবাসার রং ঢং চলছে!
দিনের বেলাতে সায়ানের অফিস, আমার হসপিটালের ব্যস্ততা থাকায় রাতের বেলাটা আমার জন্য সায়ান অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। কত না গল্পের ঝুড়ি খুলে বসে আমার সামনে। ছেলেটা এতো কথা বলতে জানে! ওর ছেলেবেলার গল্প, বন্ধুদের গল্প, দুরন্তপনার গল্প, কত কি! আমিও মজা পাই শুনে। আমি তো জীবনে লেখাপড়া ছাড়া কিছুই করলাম না! সায়ানের গল্প শুনতে শুনতে এক সময় আমি ঘুমিয়ে পড়ি। সায়ান কখন ঘুমায় আমি তা টেরও পাইনা। বরং সকালে ওর নির্মল ঘুমন্ত মুখটা দেখে আমার যেন সুন্দর একটা দিন শুরু হয়।
সায়ান আমাকে ওর বন্ধু ভাবলেও আমি ওকে কি ভাবি আমি জানি না। আমার খুব অবাক লাগে অগোছালো আলোথালো এ ছেলেটা ইদানিং আমার মনে প্রায়ই দোলা দেয়। আমি আমার মনকে কোনোভাবেই প্রশয় দেই না কিন্তু কেন জানি হাসিখুশি নির্মল মনের এ লাজুক ছেলেটা আমার মতো বেরসিক মেয়ের মনে দক্ষিণা হাওয়ার পরশ বুলিয়ে দেয়।
****-**********★********-*****
আজ রাতে মায়ের রুমে বসে আমি আর স্বপ্নাবু গল্প করছিলাম। সায়ান উঁকি দিয়ে আমার হাত টানতে লাগে —কি এতো গল্প কর! কথা আছে, চল!
মা মুচকি হেসে বলেন ঠিকই তো পিয়া! কি খালি আমাদের সাথে গল্প করো। যাও তো!
বিদায় নিয়ে আমি রুমে চলে আসি।
— কি সায়ান, তুমি সবার সামনে আমাকে এভাবে নিয়ে আসলে কেন?? আমি তো একটু পরই আসতাম। আর কথায় কথায় তুমি আমার হাত ধরো কেন ??
সায়ান হয়তো হাত ধরার কথা বলায় বিব্রত হয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলল সরি পিয়া আমি আসলে.. আসলে… ওভাবে..
— আচ্ছা ঠিক আছে! তবে তোমার হাত এতো নরম কেন? একেবারে মেয়েদের মতো!
সায়ান চোখগুলো উজ্জল করে বলে কি যে বলো! আমার হাতের কত জোর তুমি জানো! দেয়ালের ছবি দেখিয়ে সায়ান বলে দেখো ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ান ছিলাম এ নরম হাত দিয়েই।
আর ক্রিকেটে এ কব্জির জোড়েই ছক্কা পিটাতাম বুঝলে?? আর পাঞ্জা লড়তাম….
— আচ্ছা বুঝলাম! সানজানার হাতও এই নরম হাত দিয়েই ধরো! তাই তো!
সায়ান মুচকি হেসে বলে তা ধরি তবে খুব একটা ধরার সুযোগ পাই নি।
মানে কি? আচ্ছা আজ সানজানার কথা বলো তো! ওর সম্পর্কে তো তুমি কিছুই বলো না।
— তুমিও তো জিজ্ঞেস করো না।
— আচ্ছা আজ জিজ্ঞেস করছি বলো!!
— কি বলবো, ও এতো ব্যস্ত থাকে যে ঠিকমতো আমাদের কথাই হয়ে উঠে না।
— তাই তো! তোমাকে তো কখনোও মোবাইলে ওরকম কুটুরকুটুর গুটুরগুটুর প্রেম করতে দেখি না। অনেকদিনের প্রেম বুঝি যে আহ্লাদ ঢং কমে গেছে??
— না অনেক দিনের না এই পাঁচ মাস হবে। তারমধ্যে ও দুমাস ধরে আমেরিকা, কানাডা বেড়াচ্ছে।
— ও.! তো কি করে তোমার সানজানা? মানে পড়াশোনা? দেখতে কেমন?? ফটো-টটো দেখাও।
— ওর ফটোর দরকার কি, টিভি খুললেই পাবে।
— টিভি খুললেই মানে??
— মানে ও মডেল এখন তো নাটকও করে। সবাই চেনে ওকে! সায়ান আত্মতৃপ্তির হাসি দেয়।
— কোন সানজানার কথা বলছো তুমি? মডেল!! এক মিনিট তুমি কি জেরিনের কথা বলছো?? সানজানা জেরিন?? সবাই তো ওকে জেরিন নামে চেনে!!
— হু সেই! আমি সানজানা বলেই ডাকি। ওর পরিবারও এ নামেই ডাকে।
— ও ওয়াও! ও তো মহা সুন্দরী! কোনো রিউমার নেই, স্কেন্ডেল নেই, অল্প দিনেই সবার মন জয় করে ফেলেছে। এই জেরিন তোমার গার্লফ্রেন্ড??
— হু!
— তুমি সত্যি বলছো?? তোমার মতো ছেলেকে জেরিন ভালোবাসে??
— আমার মতো মানে?? আমি কি অযোগ্য? তুমি কি এক বাক্য আমাকে বিয়ে করো নি??
— তা ঠিক, আমি সেই ভুল করেছি। যাই হোক ভালোই হলো। গর্ব করে বলতে পারবো আমার সতীন হলো বিখ্যাত মডেল জেরিন ওরফে সানজানা জেরিন। তুমি যদি কোনো টেমা, বোঁচা, যদু মধুর জন্য আমাকে ছাড়তে তবে মানুষ আমাকে আহারে আহারে করতো। এখন সম্মান দিয়ে কথা বলবে।
আমার কমপিটিটর সে রকম টাফ হা.. হা… আমি হাসতে লাগি।
সায়ান মুখটা অন্ধকার করে বলে পিয়া তুমি আমাকে ইচ্ছে করে এমন বলছো!
— আরে নাহ! তুমি সবকিছুতে এতো সিনিয়াস হয়ে যাও কেন? আমি এমনি মজা করছিলাম।
তোমাকে নিয়ে তো আমি মাথাই ঘামাই না। বরং এখান থেকে কবে মুক্তি পাবো সেটারই অপেক্ষায় আছি।
— কিসের মুক্তি?? আমরা কি তোমাকে জ্বালাই??
— না তা জ্বালাও না। তবে মিথ্যা অভিনয় করতে ভালোও লাগে না।
রুমের মধ্যে হঠাৎ নিস্তব্ধতা নেমে আসে।
সায়ান মুখ অন্ধকার করে চুপ করে থাকে।
আমিও চুপ হয়ে ভাবি আসলেই কি আমি মুক্তি চাই! মা এখন যথেষ্ট সুস্হ তবুও আমি কি কারণে এখনও এখানে আছি! বোকা সায়ান তার কিছুই বুঝে না!
আমি হঠাৎ প্রসঙ্গ বদলে বলি তো মিস্টার সায়ান তুমি তো সেই রকম দান মারলে! একেবারে হট সুন্দরী মডেল! ডেটিং ফেটিং কেমন চলে? চুম্মা টুম্মা দিয়েছো??
সায়ান চোখ গোল গোল করে বলে পিয়া তোমার মুখের কোনো লাগাম নাই ? আর কি বিচ্ছিরি ওয়ার্ড বলছো চুম্মা টুম্মা?
— ঐ হলো কিসি বিসি করেছো?? নাকি সাধুবাবা তলে তলে আরও এডভান্স??
— উফ না! ওর সাথে তো দেখাই করেছি মাত্র কয়েকবার। সানজানা আসলে আমার কোম্পানির প্রমোশোনাল ফটোশুটে কাজ করেছিল। ওখান থেকেই প্রথম দেখা তারপর ভালোলাগা। সানজানা-ই ভালোবাসার কথা প্রথমে বলে আমিও হ্যাঁ বলি। তারপর কাজের ফাঁকে ফাঁকে দেখা করা , মোবাইলে কথা, মেসেজ চালাচালি এরপর তো সে আমেরিকা চলে গেলো।
— আহারে কি দুঃখ! বড়ই মর্মান্তিক, কি ট্রেজেডি! আমি মুখ টিপে হাসতে লাগি।
সায়ানও আমার সাথে হাসি জুড়ে দেয়। পিয়া তুমি না খুবই দুষ্ট! সারাদিন সবার সামনে আমার সাথে কঠিন ব্যবহার কর আর একা পেলেই তোমার মুখের কোনো লাগাম থাকে না আর তোমার দুুষ্টু বুদ্ধিরও লাগাম থাকে না।
—কি করবো বল তোমার মতো অবুঝ, অবলা, আকর্ষনীয়, হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে আমি কন্ট্রোলই করতে পারি না।
আচ্ছা আমাদের এমন বিয়ে নামক অঘটনের কথা ওকে জানিয়েছো??
— না, এখনও জানাই নি। মোবাইলে আর কতটুকু ব্যাখা দিতে পারবো। ভাবছি দেশে আসলে সব বলবো। আম্মু যে অসুস্থ সেটা সানজানা জানে। কিন্তু আমার এমন হঠাৎ বিয়ে হয়ে গেছে তা এখনও বলি নি। কিভাবে যে বলবো!!
— ভয় পাচ্ছো?? আচ্ছা আমরা দুজনই না হয় বুঝাবো। তোমার তো কিছু করার ছিলো না। সানজানাকে বুঝালে নিশ্চয়ই বুঝবে, কি বল?? ও কি আমার মতো রগচটা নাকি?
— না, না! ও অনেক সুইট! আমাকে খুব বুঝে। আসলে আমাদের নিজেদের মাঝে এখনও ওরকম গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে নি। আমি একটু লাজুক স্বভাবের জানোই তো। আর সানজানা অনেক বেশি চটপটে মিশুক প্রকৃতির। বেশির ভাগ সময় ও-ই কথা বলে আর আমি শুনি। আসলে আমাকে ও কিছু বলার সুযোগই দেয় না। সায়ান লাজুক হাসি দিয়ে বলে আমি আসলে ওতো কথা খুঁজেও পাই না।
— তুমি কথা খুঁজে পাও না, না?? আমার সাথে তো সারাক্ষণ বকবক কর!
— তোমার ব্যাপার আলাদা। তুমি আমাকে অনেক বেশি স্পেস দাও। মেয়েদের ব্যাপারে আমি বরাবরই লাজুক ছিলাম বলে আমার কখনোও কোনো মেয়ে বান্ধবী ছিলো না। কিন্তু তোমার সাথে আমি কেন জানি প্রথম দিন থেকেই অনেক বেশি সাবলিল শুধু বিয়ের অঘটন ছাড়া। এটা অবশ্য তোমারই কৃতিত্ব!
আর তুমি নিজেকে এতো রগচটা ভাবো কেন??
হ্যাঁ তুমি একটু কাট কাট কথা বলো, তবে তুমি মোটেও রগচটা না। তোমার মধ্যে আসলে মেয়েলি ন্যাকা ন্যাকা ঢং নাই, এই-ই যা। আচ্ছা তোমার কখনো প্রেম ভালোবাসা হয় নি??
— নাহ! ঐযে বললে মেয়েলী ঢং কম আমার! ওটা কম বলে হয়তো কেউ আমার ধারে কাছেই ঘেষে নি। এখন মনে হচ্ছে একটা প্রেম অন্তত করা উচিত ছিল।
—- কেন??
— তুমি সারাক্ষণ কত কথা বলো তোমার জীবনের আর আমি অভাগিনী খালি পড়াশোনা করেই দিন পার করলাম। আমার জীবনটা বড়ই বেরসিক…. বর্ণ হীন, গন্ধহীন,… লবণ বিহীন তরকারীর মতো !
সায়ান আমার কথায় তার গজদাঁত নিয়ে হাসতে থাকে আর আমি মুগ্ধ হয়ে সানজানার ভালোবাসাকে দেখতে লাগি! চোখ সরিয়ে ভাবি অন্যের ভালোবাসাকে আমি কেন মুগ্ধ হয়ে দেখবো! ছিঃ!
চলবে।
লেখক– ঝিনুক চৌধুরী