এক মুঠো গোলাপ
sinin tasnim sara
৩৭
_____
সেদিনের পর থেকে অনিমার জীবন এক অদ্ভুত স্বপ্নের মায়া জালে আটকা পড়ে। নিত্যনতুন কল্পনায় পরবর্তী দিনগুলোকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে সে। দেখা যেত প্রায়শই পড়ার টেবিলে বসে সামনের জানালা দিয়ে সুদূর আকাশ পানে চেয়ে মনের ক্যানভাসে আঁকছে কোনো এক বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যার দৃশ্য ।
“বহুদিন বাদে দেখা করতে গিয়েছে প্রিয় মানুষটার সাথে। দু একটা কথা বলতে পারে কি পারেনা, আকাশ ভেঙে নামে ঝুম বৃষ্টি। চমকে ওঠে দুজন। বৃষ্টি থেকে গা বাঁচানোর নিমিত্তে প্রিয়তম যখন তার ডান হাত আলতো করে নিজ হাতের মুঠোয় চেপে ধরে চপল পায়ে এগিয়ে চলে ছাউনির নিচে, ঠিক সেই মুহুর্তে অনিমার সারা শরীর জুড়ে কাঁপন ধরে। মন জমিনে অভিশপ্ত খরা সরে গিয়ে ঝুপঝাপ প্রেম বৃষ্টি নামে। চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে নিজের পাগল পাগল মনটাকে সামলায়।”
বাস্তবে যখন ফেরে তখন লজ্জায় রক্তিম হয়ে ওঠে তার বদনখানা। কল্পনায় আঁকা সেই অদ্ভুত সন্ধ্যেবেলাটা হুট করে তার বড্ড প্রিয় হয়ে যায়।
দু’টো বছর কাটে চোখের পলকেই।
নির্দিষ্ট সময় পর চোখ ভরা স্বপ্ন আর বুক ভরা আশা নিয়ে যখন প্রিয়তমের দোরগোড়ায় পা রাখে তখন এক নতুন সত্যের মুখোমুখি হতে হয়। এই একটা সত্য তার পুরো জীবনটাকে তছনছ করে দেবার জন্য যথেষ্ট ছিল।
একটা ছোট্টো শব্দ ভালোবাসা। ছোট্টো শব্দটা ঘিরে কতশত সুখস্বপ্ন সাজানো, জড়িত তিনটে জীবন।
এক ঝটকায় সব শেষ।
অতীতের স্মৃতিচারণ শেষে হাতের গ্লোবটা ছুঁড়ে ফেললো অনিমা।
আক্রোশে টেবিলের ওপর চাপড় দিয়ে আপন মনেই বলে উঠলো,
“ভালোবাসা এত অভিশপ্ত কেন? ভালোবাসা দহনে যে পীড়া, তা কি পৃথিবীর কোনোরূপ দহনে আর আছে!”
________
নিদ্র অফিস থেকে ফিরলো বিকেলে। ফিরেই যেতে চাচ্ছিলো সুপ্তর কাছে কিন্তু বাসায় বিভিন্ন ঝামেলায় আটকে পড়ায় আর হলো না। ফ্রী হলো সন্ধ্যার একটুপর। নিজের ঘরে যাওয়ার পর রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করলো শরীরে। এক দেড় ঘন্টা না ঘুমোলেই নয়।
ফোনে আ্যালার্ম সেট করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। ঠিক ঠিক দু ঘন্টা ঘুম হলো তার।
উঠে ফ্রেশ হতে হতে আরো এক ঘন্টা।
টাইমটা অবশ্য এভাবেই মেইনটেইন করে নিয়েছে ও।
শীতের প্রকোপ অনেকটাই কমে গিয়েছে। এখন রাতের বেলা চাঁদের আলো স্পষ্ট দেখা যায়। আকাশের তারা গোনা যায়।
বাইরে আজ চাঁদনি রাত। এমন একটা সময় নিঃসঙ্গতায় কাটাবে, মনটা মানছিল না নিদ্রর। এগারোটার দিকে বাইক নিয়ে সে বেরিয়ে পড়লো রাফনিদের বাসার উদ্দেশ্যে।
,
ইউনিভার্সিটি থেকে এসেই বই নিয়ে বসেছে সুপ্ত। আজ আ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর ওকে খুব বকাঝকা করলেন। গ্যারান্টি দিয়ে বললেনও পরীক্ষায় ও ফেইল করতে করতে রেকর্ড গড়বে। এসে থেকেই ভাবছে,পরীক্ষা দরজায় নক করছে। বইয়ের সাথে তো যোগাযোগই নেই। আস্তে আস্তে লক্ষ্য থেকে সরে যাচ্ছে সে । এমনটা চলতে থাকলে ভালো রেজাল্ট তো দূর, ক’টা সাবজেক্টে ফেইল করবে তার হিসেব মেলাতেই হিমশিম খেতে হবে বোধহয়।
নিদ্রর সাথে আজ সারাদিন কথা হয়নি। ভালো হয়েছে, যত কম কথা তত ভালো। নিদ্রর ভয়েস শুনলেও ওর কাছে যেতে ইচ্ছে হয়। প্রেমিককে বিয়ে করলে এই মুসিবত, সবসময় তার সান্নিধ্যে থাকতে ইচ্ছে করে।
বই নিয়ে বসে এমন উল্টোপাল্টা চিন্তা মাথায় আসায় নিজের ওপর বিরক্তবোধ করতে লাগলো সুপ্ত।
মনে মনে নিজেই নিজেকে বিরাট এক ধমক দিয়ে পড়ায় মনযোগ দিতে বললো৷ আনফরচুনেটলি পারলো না তার পূর্বেই কানে ভেসে এলো বাইকের শব্দ।
বই ফেলে এক ছুটে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখলো নিদ্র এসেছে। এই আশংকাই করছিল মনে মনে।
মাথা নেড়ে হতাশ সুরে নিজেকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“এবার তোকে ফেইল করা থেকে কেউ আটকাতে পারবে না সুপ্ত”
___
নিদ্রকে ওপরে এসে আর কলিংবেল বাজাতে হলো না। দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুপ্ত। ঠোঁটে চিরচেনা মিষ্টি হাসি।
নিদ্র ওকে দেখে ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,
— কেমন আছো?
জবাব না দিয়ে সোজা ও নিদ্রর গলা জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো।
নিদ্র দু হাতে ওর কোমর আঁকড়ে ধরে মৃদু হেসে শুধোলো,
— বড় আপু ঘুমিয়েছে আপনার?
— হু।
— আমি তো ভাবলাম আপনিও ঘুমিয়ে পড়েছেন ম্যাডাম। ইদানীং ম্যাডামের যা ব্যস্ততা!
আমার সাথে কথা বলার মত সময় নেই তার।
— আপনি কি খোঁজ নেন আমার বাবুমশাই?
মাথা তুলে নিদ্রর চোখে চোখ রাখলো সুপ্ত। নিদ্রর মনে হলো বউয়ের মায়াবী আঁখি দুটি একরাশ অভিমান জমিয়ে রেখেছে।
এক হাত দিয়ে ওর কপালের উপর পড়ে থাকা ছোটো ছোটো চুল গুলোকে কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে আদরমাখা কণ্ঠে উত্তর দিলো,
— ব্যস্ততা আমারও বেড়েছে জানো! চাকরিটা আর ভাল্লাগছে না, নিজস্ব একটা আইটি ফার্ম করার চিন্তাভাবনা করছি।
— হঠাৎ?
— ভেতরে চলো পুরোটা খুলে বলি।
— আমি কিন্তু এভাবে যাবো।
নিদ্রর জুতোপরা পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ালো সুপ্ত।
নিদ্র মুচকি হেসে ওকে আগলে নিলো। দরজা আটকে গুটি গুটি পায়ে প্রবেশ করলো ওরা ভেতরে।
,
নিদ্রর এক কলিগ আছে ইরাবতী। সে ই প্রথমে আইটি ফার্ম করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। ইনভেস্টমেন্ট হবে শেয়ারে।
তার কথা হলো, এত কষ্ট করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি অন্যের আন্ডারে জব করার জন্য!
এখন কর্মচারী না বস হওয়ার সময়। আত্মবিশ্বাস রেখে এগিয়ে যেতে হবে।পরিশ্রম করলে সবই সম্ভব।
প্রস্তাব টা পছন্দ হয়েছে নিদ্রর । তার নিজেরই এই জবটা ভালো লাগছিল না। বস ভালো, এনভায়রনমেন্ট ভালো কিন্তু নিজস্ব একটা পরিকল্পনা তো আছে। তাছাড়া ওর বন্ধু শৌখিন আজ বলল বিসিএস দেয়ার কথা।
যদিওবা ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি হবার সময় থেকে লেখাপড়া চলমান অবস্থায় কখনোই ও বিসিএস নিয়ে চিন্তা করেনি।সাধারণত ঐ লাইনের স্টুডেন্টদের জন্য বিসিএস কম্পালসারি নয়৷ অধিকাংশ ইঞ্জিনিয়াররা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করতে পছন্দ করে। স্বাভাবিক,
স্যালারি যেখানে বেশি চাহিদাও সেখানে বেশি।
কিন্তু বন্ধুর কথা শুনে হঠাৎ আজ মনে হচ্ছে ট্রাই করা উচিৎ। সে জানে বিসিএস ছেলের হাতের মোয়া নয়। প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। আ্যানার্জি আছে পড়ার। তাছাড়া তার ব্যস্ততা দেখে যদি বউটার মাথা থেকে বাচ্চার ভূত নামে!
এসব পরিকল্পনার কথা অবশ্য বলল না নিদ্র। স্রেফ আইটি ফার্ম আর বিসিএস দিতে চাইছে সেটা বলল।
সব শুনে সুপ্ত চোখ সরু করে তাকালো নিদ্রর দিকে। গম্ভীর স্বরে বলল,
— বিজনেস পার্টনার একজন মেয়ে কেন হুমমম ?
নিদ্র বোকা বনে গেল ওর কথা শুনে। এতটা সময় ধরে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলল। ওর মনে উঁকি দিল এই একটা প্রশ্ন, “বিজনেস পার্টনার মেয়ে কেন!”
হতাশ হলো নিদ্র। সাথে হাসিও পেল।
সুপ্তর গালে হাত রেখে দুষ্টু হেসে বলল,
— জেলাস ফীল হয় আমার বউয়ের?
— অফকোর্স। নাউ টেল মি তোমার ইরাবতী দেখতে কেমন।
— দেখতে শুনতে তো মাশাল্লাহ ভালোই।
— তারমানে তুমি ওকে লক্ষ করেছো ভালো মত।
মুখ ফুলিয়ে বলল সুপ্ত।
নিদ্রর মজা লাগছে।
— কথাবার্তা বলতে গেলে তো একটু লক্ষ করতেই হয়।
— না লক্ষ করবে না তুমি। বাসায় বউ আছে না তোমার! তার দিকে সারাদিন তাকায় থাকো কেউ তো কিছু বলবে না।
— ইরার দিকে তাকালে সেও তো কিছু বলল না আমায়।
— বাহ্ বাহ্ ইরাবতী থেকে ইরায় নেমে এসেছে। এক দেখায় এই অবস্থা, ভবিষ্যতে আরো কি করবা!
সব বন্ধ তোমার। কোনো ফার্ম টার্ম দেয়া হবে না আর না চাকরি করতে হবে। তোমার ইরা শিরা উপশিরা কিছু বলেনি তো কি হয়েছে?
আমি বলছি। বলছি না ওয়ার্ন করছি; তুমি কারো দিকে তাকাবে না। না মানে না।
তুমি শুধু আমার। আমার দিকেই তাকিয়ে থাকবে।
— আচ্ছা ঠিকাছে তোমার দিকেই তাকিয়ে থাকবো সবসময়।
সুপ্তর চিবুকে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল নিদ্র।
— ভেরি গুড।
গৌরবের হাসি ফুটে উঠল সুপ্তর ঠোঁটের কোণে।
— রাতে খেয়েছো বউটা?
— উঁহু
— সেকি। এতরাত হয়ে গিয়েছে এখনো খাওনি তুমি?
— এত অবাক হচ্ছ কেন। খাওনি তো তুমিও।
— কে বলেছে। আমি কবজি ডুবিয়ে খেয়ে এসেছি। গলা অবধি খাবার ভরা।
— উমহ্ মিথ্যে কথা। আমি জানি তুমি এখনো উপোস।
— তুমি বুঝলে কি করে?
— তোমার মুখ দেখে বুঝলাম।
— আমার মুখে কি লেখা আছে?
— লেখা নেই। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি।
— ফিলোসফি হু?
— ফিলোসফি না। ভালোবাসা।
ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষটার সকল সুবিধা অসুবিধা বোঝা যায়।
— ম্যাজিক?
— ইয়েস বাবুমশাই। লাভ ইজ ম্যাজিক্যাল।
মুচকি হেসে নিদ্রর পায়ের ওপর থেকে নামলো সুপ্ত।
খোলা চুলগুলো দু’হাতে পেঁচিয়ে খোপা করতে করতে আদেশের সুরে বলল,
— ফ্রেশ হয়ে নাও। খাবার দিচ্ছি।
— এখন আর খাবো না তো।
— আমি বলেছি ফ্রেশ হয়ে নাও। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তোমায় ডাইনিং টেবিলে দেখতে চাই আমি।
নিদ্রকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে গেল সুপ্ত।
______
খাওয়া শেষে ব্যালকনিতে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছে নিদ্র। আর সুপ্ত ওর বুকে পিঠ ঠেকিয়ে। বহুদিন বাদে আজ জ্যোৎস্না বিলাস হবে।
আকাশের বুকে মস্ত চাঁদটা যেন রূপোর থালা। চাঁদের ঝলমলে আলো আর ঠান্ডা বাতাস নিস্তব্ধ প্রকৃতিকে মোহনীয় রূপ দান করেছে।
সুপ্তর খোলা চুলে নাক ডুবিয়েছে নিদ্র। আবেশে চোখ মুদে নিয়েছে সুপ্ত। নিদ্রর গরম নিঃশ্বাস ওর সারা দেহে অদ্ভুত শিহরণ জাগাচ্ছে।
কিছুটা সময় এভাবে কাটানোর পর সুপ্ত ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।
নিদ্র দু হাত প্রসারিত করলো ওকে বুকে নেবার জন্য। ও মুচকি হেসে নিদ্রর টিশার্ট টেনে ধরে টিশার্টের ভেতর ঢুকে গলা জড়িয়ে ধরলো ।
নিদ্র হাসতে হাসতে শুধোলো,
— ধাঁধার কথা মনে আছে?
— আছে আছে। বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে হবে না আমায়। ধাঁধাও মনে আছে,সীমারেখাটাও জানা আছে।
গলা ছেড়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে রাগত্ব স্বরে বলল সুপ্ত।
নিদ্র ঠোঁট চেপে হাসলো। ওর নাক টেনে দিয়ে বলল,
— আমি কিন্তু তোমায় আন্সার খোঁজার উপায় বলে দিতে পারি।
— লাগবে না আমার কোনো উপায় জানা।
তুমি তো আমার কাছে আসতে চাও না। ইরাবতী কে নিয়েই থাকো যাও।
টিশার্ট থেকে বের হয়ে নিদ্রর থেকে খানিক সরে দাঁড়ালো সুপ্ত।
নিদ্র ওর হাত ধরে কাছে আনার চেষ্টা করলো কিন্তু ও এলো না।
দ্বিতীয় বার জাপটে নিজের দিকে ফেরাতে হলো। সুপ্ত অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
নিদ্র আলতো করে ওর গালে হাত দিয়ে নিজের মুখের সামনে এনে ধীর কণ্ঠে বলল,
— সুপ্ত হাজবেন্ড ওয়াইফের সম্পর্কে ফিজিক্যাল টাই আসল নয়। ইটস জাস্ট আ বডি নিড। সম্পর্কে ভালোবাসা, আস্থা। দায়িত্ব নেবার ক্ষমতা এসবকিছুই জরুরি।
— তুমি কি আমার দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ?
— আমি তো তা বলিনি সুপ্ত। দায়িত্ব বলতে শুধু ভরণপোষণ নয়। তোমার ফিউচার সিকিওর করাটাও এর মধ্যে পড়ে। তুমি ইউশা কে পাওয়ার পর থেকে পাগলামি করছো। অথচ অনার্সটাও পাশ করনি এখনো। তোমার মনে আছে যখন লাইফের তিক্ত সত্যগুলো আমার সামনে রিভেল করছিলে, তখন নিজেকে বারবার অসহায় বলছিলে তুমি।
আমি চাইনা সুপ্ত আর কোনোপ্রকার অসহায়ত্ব তোমার চেহারায় ফুটে উঠুক।
আর এ-ও চাইনা পৃথিবীর বুকে আরো একজন অসহায় সুপ্ত জন্ম নিক ।
— কেন,তুমি কি আমাকে ছেড়ে যাবে?
— প্রাণ থাকতে তো নয়। কিন্তু হায়াত-মউত এর কথা বলা যায়না। আমার বিয়োগের পর নিজেকে সামলে নিতে হলেও তোমার পায়ের নিচের মাটিটা শক্ত হওয়া প্রয়োজন সুপ্ত।
— সন্তান কখনোই আমার ক্যারিয়ারের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না নিদ্র। সন্তান রা মায়েদের শক্তি হয়, দূর্বলতা নয়।
— আমি জানি সুপ্ত। নিজের মা কে-ই দেখেছি আমায় বুকে নিয়ে সমস্ত পৃথিবীর বিরুদ্ধে লড়তে। সে কেন লড়তে পেরেছিল জানো? কারণ তার পুঁজি ছিল তার সাথে। এই পুঁজিটা হলো শিক্ষা। শুধুমাত্র শিক্ষা ছিল বলেই সে সাহস পেয়েছে শূন্য থেকে শুরু করার।
সফলতার পথে অনেক বাঁধা এসেছে ঠিক। কিন্তু কাটিয়ে উঠতে পেরেছে দুঃসাহসিকতার সাথে।
— তোমায় ভালোবেসে কিন্তু লক্ষ্যের কথা ভুলে যাইনি আমি।
— তুমি ভুলতে চাইলেও আমি তোমায় কিছুতেই ভুলতে দেবো না। কিন্তু সন্তানের জন্য অবসেশন…
— আমি আর অবসেসড হবো না নিদ্র।
সুপ্তর কথা শুনে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো নিদ্র। কপালে গাঢ় একটা চুমু খেয়ে বলল,
— সবসময় মনে রাখবে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য পেতে হলে পড়ালেখার বিকল্প নেই। পৃথিবীতে কোনো কিছুই কাজে আসেনা এই শিক্ষা ছাড়া। আমি তোমায় সফলতার স্বর্ণ শিখরে দেখতে চাই সুপ্ত।
নিদ্রর কথা শুনে সুপ্ত মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো অবশ্যই সে তার স্বপ্ন পূরণ করবে।
মুখে বলল,
— আমিও চাই তুমি আমার পাশে থাকো সারাটা জীবন।
— থাকবো। অবশ্যই থাকবো আমার শুভ্র গোলাপ।
নিদ্রর ওষ্ঠজোড়া নেমে এলো সুপ্তর পেলব অধরের ওপর।
সুপ্ত চোখ মুদে শক্ত করে খামচে ধরলো নিদ্রর টিশার্ট।
বন্ধ চোখজোড়া থেকে টুপ করে দু ফোঁটা অশ্রুজল গড়িয়ে পড়লো।
প্রকৃতিতে শীতলতা হুট করেই কমে গেল। হাওয়ায় নাম না জানা কিছু ফুলের সুঘ্রাণ ভেসে বেড়াতে লাগলো। ওদের এই মধুর মিলনের সাক্ষী হয়ে গেল নয়নাভিরাম এই প্রকৃতি৷
চলবে,