প্রাণের_চেয়েও_প্রিয় পর্ব ৩১+৩২

#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_31
#Writer_TanhaTonu

পরের দিন ধানমন্ডি থেকে ডিরিক্টলিই সিদ্রাত আরশিকে নিয়ে স্কুলে যায়।স্কুলে যাওয়ার পর বনি আর ফারহা আরশিকে সব জিজ্ঞাস করে…
—”আরশি তোকে কি বুঝিয়েছিলাম আমি?এতো বুঝানোর পরও কেন গেলি পার্লারে?”

ফারহার কথায় আরশির মুখটা ছোট হয়ে যায়।ও জবাবে বলে…
—”আমি তো তোদের কথা ভালো করেই বুঝেছিলাম।কিন্তু পরে ইতি ম্যামকে দেখে আমার মাথা ঘুরে গিয়েছিলো।মনে হচ্ছিলো সিদ্রাত স্যার আমার থেকে দূরে চলে যাবে..এজন্যই আর টাইম ওয়েস্ট না করে…”
—”টাইম ওয়েস্ট না করে বোকার মতো পার্লারে চলে গেলি!ডাফার গার্ল!”

বনির রাগী কন্ঠ শুনে আরশি মুখ ভেঙচি দিলো।অতঃপর ক্লাস শুরু হতেই ওরা ক্লাসে মন দিলো।সেকেন্ড পিরিয়ডে ইতিকে দেখার পর যদিও আরশির অস্থির লাগছিলো তবুও ও নিজেকে সামলে নিলো।ইতি আরশিকে পড়া ধরার পর নিজে থেকেই বলল…

—”আরশি তুমি তো ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল তাইনা?”
—”জ্বি ম্যাম”
—”হুমম..আমি কিন্তু তোমাকে আরও অনেক আগে থেকেই চিনি।প্রায় আটমাস তো হবেই..তুমি কিন্তু খুবই সুইট”
আরশি ইতির কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।ইতি ওর সাথে এতো সুন্দর বিহেইভ করছে!তার থেকেও বড় কথা হলো ওকে আরও আটমাস আগে থেকেই চিনে?কিন্তু কিভাবে?
আরশির মনে অনেক প্রশ্ন উদয় হলেও কিছুই জিজ্ঞাসা করতে পারল না।কারণ ইতির সাথে তো আর ও ফ্রি না..তাছাড়া মাত্র দু’দিনের পরিচয়..তাও আবার ক্লাসের সূত্র ধরে..

স্কুল ছুটি হলে আরশি পার্কিং সাইডে গেলো।সিদ্রাতের সাথে যাবে তাই।তাছাড়া সিদ্রাত ওকে ওয়ার্ন করে দিয়েছে যেনো আর কখনো স্কুলের গেইট থেকে একা বের না হয়…
আরশি একা বলে ওর সাথে বনি আর ফারহাও ছিলো।সিদ্রাত আসলেই ওরা দুজন চলে যাবে।দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়ই বনি জিজ্ঞাসা করল…
—”আরশি আমি তো একটা ব্যাপার বুঝলাম না..ইতি ম্যাম তোকে আরও আটমাস আগে থেকে চিনে কিভাবে?”

ফারহা বলল…
—”আরে ম্যাম তো সিদ্রাত স্যারদের আত্মীয়।হয়ত তাই চিনে”
বনি ফারহার কথায় ঝাঁঝালো কন্ঠে জবাব দেয়…
—”থাপ্পর চিনিস?স্যার আমাদের স্কুলে জয়েন প্লাস আরশিদের বাসায় মানে নূপুর আপুদের থেকে জায়গা কিনেছে ছয় মাস হলো।আর তাও যদি বলতে চাই তাহলে বড় জোর সাতমাস ধরে চিনতে পারে যদিও এর সম্ভাবনা ১০℅ এর মতো।কারণ সাত মাস আগে অর্থাৎ স্যারের স্কুলে জয়েন করার এক মাস আগে আরশি স্যারকে দেখে প্রেমে পড়েছিলো।তো স্যার যদি তখন দেখে থাকে সেটা আলাদা ব্যাপার যদিও বললাম এর পসিবিলিটি কতটুকু।কিন্তু আটমাস আগেই কিভাবে??”

আরশি এতক্ষণ ফারহা আর বনির কথা শুনছিলো।এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলল…
—”থামবি তোরা?এমনিই কাল থেকে আমার উপর দিয়ে তুফান যাচ্ছে।এখন আর এসব অদ্ভুত চিন্তা ভালো লাগছে না।চিনলে চিনছে..প্রবলেম কি??”

বনি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সিদ্রাত চলে আসে।সবাই একে-অপরকে বিদায় দিয়ে যার যার রাস্তা ধরে।আরশি সিটে হেলান দিয়ে বসে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে।সিদ্রাত ড্রাইভ করতে করতে বলে…
—”ক্লান্ত মনে হচ্ছে!কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত নাকি?”

আরশি সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল…
—”স্যার প্রিটেস্টের তো আর ছয়দিন আছে।এই ছয়দিন আর এক্সাম যে কয়দিন চলে সে কয়দিন আপনি কি একটু আমায় গাইড দিয়ে পড়াবেন?আমার মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে..কি পড়ব না পড়ব!কখন পড়ব কিছুই বুঝতে পারছি না”

সিদ্রাত মৃদু হেসে বলে…
—”এই ছয় মাস পর তোমার পড়াশুনার কথা মনে পড়ল?মাই গড!”
আরশি মাথা নিচু করে ফেলল।অপরাধীর স্বরে বলল…
—”বিশ্বাস করুন আমি আগে এমন ছিলাম না।অনেক পড়াশুনা করতাম।কিন্তু এ বছর যে কি হলো আমার?কিন্তু না..আমি বাকি আটটা মাস ভালো করে পড়ব।এসএসসির তো আটমাস আছে এখনো..”
সিদ্রাত বলল…
—”হুমম..আমিও গতকাল রাতে সেটাই বুঝাতে চাচ্ছি।এখন সব ছেড়ে পড়াশুনায় কন্সান্ট্রেট করো”

আরশি লম্বা একটা শ্বাস ফেলে আমতা আমতা করে বলল…
—”আচ্ছা স্যার,,আমি অনেক ভালো করে পড়লে কি,,আপনিও আমায়,,,ভালো,,বা,,সবে,,ন?”

আরশি এটা বলে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলল।
সিদ্রাত কিছুক্ষণ পলকহীনভাবে তাকিয়ে রইল আরশির দিকে।অতঃপর নিশব্দে আবারও ড্রাইভিংয়ে মন দিলো।আরশি চোখ খুলে সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে হতাশ হলো।বিষণ্ণ মন নিয়ে কারের বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।সিদ্রাত আরশির মনের অবস্থাটা বুঝেও কিছু করতে পারল না…

বাসায় আসার পর আরশি রুমের দরজা নক করতে ভয় পাচ্ছে।কারণ ও ভালো করেই জানে আজ ওর কপালে দুঃখ আছে।সিদ্রাত আশ্বাস দিয়ে বলল…
—”ভয় পেয়ো না।আমি আছি”

আরশি কাঁপা কাঁপা হাতে কলিং বেল বাজালো।এক মিনিটের মধ্যেই আরশির আম্মু দরজা খুলল।আরশিকে দেখে ওর আম্মু রেগে ফায়ার।আরশি ভয়ে সিদ্রাতের হাত খামচে ধরল।সিদ্রাত বলল…
—”আন্টি এখন ওকে কিছু বলে,,,”
ঠাশশ…
সিদ্রাত কথাটা শেষও করতে পারেনি তার আগেই আরশির আম্মু আরশির আগে চড় বসিয়ে দিলো।ঘটনায় সিদ্রাত বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।আরশির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। আরশির আম্মু চিল্লিয়ে বলে…
—”অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস তাইনা?সব ডিসিশন নিজে নিজেই নিবি?তোর হেয়ার কালার করতে ইচ্ছে হয়েছে এটা কি আমায় বলা যেতো না?নাকি আমি এতোই তুচ্ছ?সাহস দিতে দিতে মেয়েকে একদম উচ্ছন্ন বানানো হচ্ছে।তোর পা ভেঙে আমি ঘরে বসিয়ে রাখব..অনেক ছাড় দিয়েছি..অনেক”

আরশির আম্মু কথাগুলো বলেই আরও একটা চড় দেয়।আবারও দিতে নিবে তার আগেই সিদ্রাত আরশিকে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।এতক্ষণে সিদ্রাতের আম্মুও চলে এলো।সিদ্রাত বলল…
—”আন্টি কি করছেন?শান্ত হোন..ও ছোট মানুষ একটা ভুল করে ফেলেছে।আপনিও যদি ছোট হয়ে যান তাহলে কিভাবে হবে?আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি আমাদের বাসায়।পরিবেশ শান্ত হলো দিয়ে যাবো নে।আরশি চলো”

সিদ্রাত কিছুটা রাগ নিয়েই আরশিকে নিজেদের বাসায় নিয়ে যায়।আরশি কাঁদতে কাঁদতে শেষ।সিদ্রাত আরশিকে নিজের বেডে বসিয়ে দেয়ালে খুব জোরে একট ঘুষি দেয়।আরশি ভয়ে কেঁপে উঠে।তারপর দৌড়ে গিয়ে সিদ্রাতের হাতটা দুহাত দিয়ে ধরে ফেলে অসংখ্য চুমু এঁকে দেয় আর কাঁদতে কাঁদতে বলে…
—”পাগল হয়ে গিয়েছেন?নিজেকে আঘাত করছেন কেন?”

সিদ্রাত আরশির কথায় নিজেকে সামলে নিলো।লম্বা একটা শ্বাস ফেলে আরশিকে বেডে বসিয়ে যে গালে চড়টা পড়েছে সে গালে ডিপলি কিস করল।আরশির পুরো শরীর শিরশির করে উঠল।ও সিদ্রাতের শার্টের কলার খামচে ধরল।সিদ্রাত চোখ বন্ধ করে আরশির গালে ছোট ছোট কিস দিতে দিতে বলল…
—”খুব জোরে লেগেছে তাইনা?সরি..রিয়েলি সরি পিচ্ছি. আমি তোমায় প্রটেকশন দিতে পারিনি”

আরশি সিদ্রাতকে জড়িয়ে ধরে।আধো কান্না মিশ্রিত কন্ঠে নিম্নস্বরে বলে….
—”আপনিও আমায় ভালোবাসেন স্যার..আমি,,জানি আপনিও…আমায় ভালো,,বাসেন,,”

আরশি এটুকু বলেই সিদ্রাতের বুকে ঢলে পড়ে।এভাবে ঢলে পড়ায় সিদ্রাত চমকে যায়।আরশির মুখটা উঁচু করে ঠোঁটে আলতো করে কিস করে বেডে শুইয়ে দিয়ে বারান্দায় চলে যায়…

🍂🍂🍂🍂

কেটে যায় দশ দিন…আরশির প্রিটেস্টও শুরু হয়ে গিয়েছে।সেদিন আরশির সেন্স ফেরার পর সিদ্রাত আরশির আম্মুকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আরশিকে ওদের রুমে রেখে এসেছিলো।এরপর আর কোনো প্রবলেম হয়নি।আরশির কথামতো সিদ্রাত প্রতিদিন রেগুলার্লি আরশির অন্যান্য সাবজেক্টগুলোও নিজ দায়িত্বে পড়াচ্ছে।কিন্তু এতেও আরশি শঙ্কামুক্ত না।কারণ ও-ই জানে ওর প্রিপেরাশন কেমন!
এতো কিছুর মাঝেও আরশি সিদ্রাতের কাছ থেকে ওর কাঙ্ক্ষিত জবাব পায়নি।কিন্তু ও হাল ছাড়েনি।আরশির পাগলামিগুলো দিন দিন আরও বেড়ে যাচ্ছে।আগে নীরবে ভালোবাসলেও এখন আরশি অনায়াসেই সিদ্রাতের সামনে ওর ভালোবাসাগুলো তুলে ধরতে চায়।কিন্তু সিদ্রাত তা বেশি পাত্তায় নেয় না।উলটো আরশিকে বুঝাতে চায় ওর জন্য এই সময়টায় কোনটা বেশি জরুরী..পড়াশুনা নাকি আবেগ!

আজ আরশির বায়োলজি এক্সাম ছিলো।এক্সাম তিনটায় শেষ হয়েছে।আজ একটু ক্লান্ত লাগছে শরীরটা।সিদ্রাতের আসতে লেইট হবে।তাই আরশি নিজেই কারের ভিতর গিয়ে বসে।মাথাটাও কেমন যেনো ঘুরছে মেয়েটার।আরশি চোখ বন্ধ করে সিটে শরীরটা এলিয়ে দিলো।প্রায় বিশ মিনিট পর সিদ্রাত কারে এসে বসে।আরশির ক্লান্ত মুখটা দেখে ওর বুকটা ধক করে উঠে।মৃদু কন্ঠে আরশিকে ডাক দেয়…
—”আরশি আর ইউ অল রাইট?”

সিদ্রাতের আওয়াজে আরশি চোখ মেলে তাকায়।একদম ফ্যাকাশে লাগছে মুখটা।আরশি সিদ্রাতের বুকে মাথা রেখে ক্ষীণ গলায় বলে…
—”এভাবেই ড্রাইভ করুন।আমার ভালো লাগছে না।একটু আপনার বুকে মাথাটা রাখলাম”

সিদ্রাত কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল।কিন্তু আরশির সামনে তা প্রকাশ করল না।শান্ত কন্ঠে বলল…
—”তাহলে চলো হসপিটালে যাই”
—”নাহ বাসায় যাবো প্লিজ”

সিদ্রাত আর কিছু বলে না।কার স্টার্ট দেয়।কিন্তু মনটা একদম অশান্ত লাগছে।কার ড্রাইভ করতে করতে এক পর্যায়ে সিদ্রাত বলল…
—”আমার বুকে শুতে ভালো লাগে?”
—”হুম..অনেএএকক”
—”কিন্তু এভাবে পরপুরুষের বুকে শোয়া তো ঠিক না পিচ্ছি।”
আরশি আহ্লাদি গলায় বলল…
—”নিজের বরের বুকে শোয়া সওয়াব।আমি আন্টিকে বলতে শুনেছি উনি আমাকে আপনার বউ করবে..আম্মুকে আর আব্বুকে বলেছে।তাই এখন তো আর কোনো ডাউটই নেই”

আরশি এটা বলে মুচকি হেসে নিজের পুরো শরীরটার ভর সিদ্রাতের উপর ছেড়ে দিলো।সিদ্রাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরশিকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ড্রাইভিং এ মনোনিবেশ করে…
#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_32
#Writer_TanhaTonu

আরশি ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।আকাশটা বেশ মেঘলা করেছে।কেমন একটা গুমোট ভাব।সেই সাথে ঠান্ডা আবহাওয়া..
বিকাল চারটা বাজে হয়ত।কিন্তু বিশাল ছাই রঙা আকাশের নিচে ছাদের উপর দাঁড়িয়ে আরশির মনে হচ্ছে এখন মাত্র ফজরের আজান দিয়েছে।তাই আকাশটা এমন।আরশির কাছে আকাশটা ফজরের সময় যেমন লাগে তেমন না লেগে মাগরিবের সময় যেমন লাগে তেমনও লাগতে পারত..দুটোই অন্ধকার..তবে একটা পার্থক্য আছে এখানে..ফজরের সময়ের আবহাওয়া আর মাগরিবের সময়ের আবহাওয়ার মধ্যেই সেই পার্থক্যটা..ফজরের সময় অন্যরকম একটা শান্তি ফিল হয় যেটা মাগরিবের সময় বাইরে থাকলে হয়না..উলটো আরও ছন্নছাড়া টাইপ ফিল হয়…

হঠাৎ একটা শীতল বাতাস আরশির শরীর স্পর্শ করে চলে গেলো।পরম শান্তিতে আরশি দুচোখ বন্ধ করে দুহাত দুদিকে প্রসারিত করে দিলো..আহা কি শান্তি!

—”আরশি বৃষ্টি নামবে।এখানে কি করছো?”

সিদ্রাতের কন্ঠস্বর শুনে আরশি হাত দুটো নামিয়ে পেছনে ফিরে সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসল।সিদ্রাত দরজার কাছ থেকে এগিয়ে আরশির পাশে রেলিং ঘেষে দাঁড়ালো। আরশি বলল…
—”স্যার আবহাওয়াটা কেমন লাগছে?”
—”হুম মোটামুটি ভালো।তবে মাঝারি ঝড়ও হতে পারে”

আরশি সিদ্রাতের দিকে একবার তাকিয়ে আবারও চোখ সরিয়ে ফেলল।সামনের দিকে তাকিয়ে বলল…

—”স্যার এক্সামের খাতা কি দেখে ফেলেছেন?”
—”হুমম…সবাই-ই ভালোই করেছো হায়ার ম্যাথ,ম্যাথ দুটোতেই”

আরশি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।তবুও চিন্তা শেষ হয়নি।আগামী পরশুই সব সাবজেক্টের খাতা দিবে।এক্সাম শেষ হয়েছে আজ সাতদিন।আরশির মুখটা দেখে সিদ্রাত বুঝল ওর এক্সাম সন্তোষজনক হয়নি।গম্ভীর কন্ঠে বলল…
—”প্রিটেস্ট এক্সাম তো দিয়েই ফেলেছো।পাস্ট নিয়ে ভেবে এখন আর কি লাভ?তবে ফিউচারেরটা যেনো ভালো হয়।ওটা খারাপ হলে তোমাকে কতটা সাফার করতে হবে আশা করি সেটা আমায় বিষদভাবে বর্ণনা করতে হবে না”

আরশি করুণ চোখে তাকালো।সিদ্রাত আবারও বলল…
—”আচ্ছা বাদ দাও এসব।বাসায় চলো।বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে”

আরশি সিদ্রাতের পিছু পিছু চলে গেলো।বাসায় এসে আরশি নিজের রুমের বারান্দায় দাঁড়ালো।মুষল ধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে।আরশি গ্রিলের ফাঁকা দিয়ে দু’হাত বাইরে মেলে দিলো।বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা আরশির হাত দুটোকে সিক্ত করে যাচ্ছে..এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। আরশির শুকনো মুখে পানির ছিটা লেপ্টে মুক্তোর মতো দেখাচ্ছে যার মাতাল করা অনুভূতি অনুভব করছে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো নর আর মেটাচ্ছে তার চোখের তৃষ্ণা…
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরল আরশিকে।আরশি লাফ দিয়ে পেছনে তাকাতেই চমকে উঠল।খুশিতে সে নিজেই আরও টাইট করে জড়িয়ে ধরল সামনে থাকা মানুষটাকে…
—”আপুউ..আপুউ কেমন আছো?আমার কথা তোমার মনে পড়ল?উফফ আ’ম সো মাচ এক্সাইটেড সিয়িং ইউ”

নূপুর হেসে বলল…
—”উফফ রিলাক্স আরু..এতো এক্সাইটেড হলে হয়?উফফ ছাড় আমায়।আমি চেইঞ্জ করে আসি।বৃষ্টিতে পুরো ভিজে গিয়েছি”

আরশি নূপুরকে ছেড়ে ওকে নিয়ে রুমের ভিতর গেলো।নূপুর নিজের সাথে আনা ট্রলিটা থেকে একটা জামা বের করতে লাগল।আরশি হালকা হেসে বলল…
—”বাব্বাহ পুরো ট্রলি ব্যাগ!কয়দিন থাকবে আপু?পুরো একমাস কিন্তু থাকতেই হবে কমপক্ষে”

নূপুর ওয়াশরুমে যেতে যেতে হেসে বলল…
—”এক মাস কি আর সম্ভব বোকা?বাট দশদিন যে আছি তাতে কোনো ডাউট নেই”

নূপুর ভিতরে চলে গেলে আরশি দৌড়ে কিচেনে গেলো।গিয়ে দেখে ওর আম্মু অলরেডি ফ্রুটস কাটা শুরু করে দিয়েছে।আরশিকে দেখে ওর আম্মু ফ্রুটস কাটতে কাটতে বলল…
—”কিরে কথা হয়েছে নূপুরের সাথে?যা ফ্রুটসগুলো নিয়ে যা”
—”হুম আম্মু আমি ফ্রুটস নিতেই এসেছি।তুমি কি জানতে যে নূপুর আপু আসবে?”

আরশির আম্মু মুচকি হেসে বলল…
—”না রে বাবা..হুট করে এসেই তো সারপ্রাইজ দিয়ে দিলো।মেয়েটা এখনো চঞ্চলই রয়ে গেলো”

আরশি ওর আম্মুর কথাগুলো শুনতে শুনতে ট্রে তে পিরিচগুলো সাজিয়ে নিলো।নিজের রুমে এসে দেখল নূপুর মাত্র ওয়াশরুম থেকে বের হলো।আরশি মিষ্টি হেসে বলল…
—”নূপুর আপু আজ সত্যিই সেরকম সারপ্রাইজ দিলে”

নূপুর মুচকি হেসে আরশিকে জড়িয়ে ধরল আর বলল…
—”তোকে মিস করেছি আরশি..উফফ খুউউবব মিস করছিলাম।এজন্যই তো চলে এলাম।অবশ্য এখানে আসার আরও একটা কারণ আছে।তবে সেটা আমি সিউর না।আর বলতেও পারব না”

নূপুর লাজুক হেসে কথাটা শেষ করল।আরশি ভ্রু কুচকে তাকালো নূপুরের দিকে।অতঃপর ঠোঁট চেপে হেসে বলল…
—”নূপুর আপু জানো..আমি না আশেপাশে প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি..আহা কি সুভাস!মনে হচ্ছে এই সুভাসে আমার সাথে আরও অনেকেই মাতাল হয়েছে”

নূপুর আরশির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে পরক্ষণেই হেসে দিলো।আরশিও হেসে দিলো।নূপুর হাসি থামিয়ে বলল…
—”আরশি এবার তোর প্রেমের পুরো কাহিনী বলতো।আমিও ভালো করে একটু শুনি আমাদের পিচ্ছির প্রেম কাহিনী”

আরশি মুখ ফুলিয়ে বলল…
—”প্রেম কাহিনী না আপু..বলো নিরামিষ কাহিনী।সিদ্রাত স্যার আমায় পাত্তাই দেয় না।তবে আমার মনে হয় উনিও আমায় ভালোবাসেন।এজন্যই তো মাঝেমাঝে উনার ব্যবহারে অভিমান হলেও সেটা ধরে রাখিনা।ছুটে যাই উনার কাছে।হুহ ইতাছাড়া কবি বলেছে..একবার না পারিলে দেখো শতবার..হুহ তাই আমিও সেই চেষ্টায়ই আছি”

আরশির কথা শুনে নূপুর হু হা করে হেসে দিলো।হাসতে হাসতে বলল…
—”চালিয়ে যা আরু..তোর শতবারের চেষ্টায় সফল হওয়া প্রেমকাহিনীর ট্রিট তো আমাকে নিতেই হবে”

আরশিও হেসে দেয়…

পুরো বিকালটা আরশি আর নূপুর এভাবেই গল্প আড্ডায় কাটিয়ে দেয়।নূপুর আরশির থেকে দুই বছরের বড় হলেও ওদের বন্ডিং বেশ মজবুত..

রাতে আরশি আর নূপুর মিলে ফেইসবুকে এটা সেটা দেখছিলো।তখনই সিদ্রাতের ফোন আসে।আরশি সিদ্রাতের কল দেখে প্রচুর অবাক হয়।কারণ এই সাতমাসে সিদ্রাত ভুলেও একদিন আরশিকে ফোন দেয়নি।নূপুর আরশিকে চোখ টিপ দেয়।আরশি নূপুরের চোখ টিপুনি দেখে লজ্জা পেয়ে যায়।লাজুক হেসে ফোন রিসিভ করতেই নূপুর সাথে সাথে লাউড স্পিকার দিয়ে দেয়।আরশি স্পিকার অফ করতে গেলে নূপুর চোখ পাকায়।আরশি অসহায়ভাবে নূপুরের দিকে তাকিয়ে “হ্যালো” বলে..
—”হ্যালো আসসালামু আলাইকুম ”
—”ওয়ালাইকুমুস সালাম।আরশি তুমি কি ফ্রি আছো?একটু দরকার ছিলো”

নূপুর চোখ সরু করে তাকায়।আরশি সিদ্রাতের এমন কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।কারণ এধরণের কথা সিদ্রাত কখনো বলেনি।আরশি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে…
—”স্যার কোনো প্রবলেম?কি দরকার?”
—”হুম একটু বেশিই প্রবলেম।প্লিজ একটু আমার রুমে আসো।খুবই ইম্পোর্টেন্ট”

আরশি ঢোক গিলে জবাব দেয়…
—”ওহ..কিন্তু স্যার আম্মুকে কি বলব?আর আন্টি বা মুন আপু বা আঙ্কেলকেই কি বলব?”

সিদ্রাত উদ্বিগ্ন গলায় বলে…
—”কাউকে কিছু বলতে হবে না।লুকিয়ে আসো।আমি আমাদের দরজার সামনে দাঁড়াচ্ছি”
—”কিন্তু,,,”
—টুট টুট—-
—”হ্যালো??”
আরশি দেখে ফোন কেটে দিয়েছে।নূপুর মুচকি হেসে বলে…
—”যাও যাও তাড়াতাড়ি.. তোমার নিরামিষ নামক প্রেমিক মে বি রোমিও হয়ে গিয়েছে”
আরশি লাজুক হেসে বলে…
—”ধ্যাত কি যে বলো না আপু”

নূপুর হেসে দেয় আরশির লজ্জা দেখে।পরে নূপুরের সাহায্যেই এই রাত এগারোটায় আরশি নিজেদের রুম থেকে বের হয়।বের হতেই দেখে সিদ্রাত দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।চুলগুলো ভেজা,চোখগুলো কেমন যেনো ফোলা..মুখটাও ফ্যাকাশে লাগছে।আরশির বুকটা ধক করে উঠে সিদ্রাতের এমন রূপ দেখে…
চলবে…

#এলোমেলো_অনুভতিরা আজ দিবো না।কেউ ওয়েট করো না
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here