#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_59
#Writer_TanhaTonu
“প্রিয়তমা,
তোমার মনে হয়ত এই কয়দিনে আমার ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।বাট সত্যিটা আমি জানি..আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি
তুমি ভালোবাসার আগে থেকেই আমি তোমায় ভালোবাসি।যাই হোক…আমার ভালোবাসা নিয়ে যে কারণে তোমার মনে প্রশ্ন উঠেছে সে কারণটাকেই সরিয়ে আনলাম।সিহুকে আমি ওর আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।তোমার সংসার,তোমার স্বামী..সব তোমারই ছিলো আর আছেও।একটা বাচ্চা মেয়ের জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হবেনা।সিহু আগেও একা থাকতে পেরেছে।ভবিষ্যতেও পারবে।তাছাড়া ওকে বুঝতেও হবে অনাথদের জন্য না এই সমাজ।
আমি সন্ধ্যার পর ফিরে আসব।তুমি চিন্তা করো না…
তোমার প্রিয়তম”
আরশি স্তব্দ হয়ে গেলো চিঠিটা পড়ে।চোখ দিয়ে ফোটা ফোটা জল গড়িয়ে পড়ছে মেয়েটার।বারবার চোখের সামনে সিহরাতের সেই হাসি, দুষ্টমি, আহ্লাদিপনা, খিলখিল করে হেসে উঠা–এসবই ভেসে উঠছে।আরশি ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল।দুহাতে মুখ চেপে বিনা শব্দে কাঁদতে লাগল…
_____________________________________
বাসায় আসতে আসতে সিদ্রাতের একটু দেরি হলো।দেরি বলতে সন্ধ্যার একটু পরে আসল।সিদ্রাত রুমে এসে লাইট অন করল।রুমে আরশিকে দেখতে পারল না।কিন্তু এতে অবাক হলো না সিদ্রাত কারণ এমনটাই তো হয়ে আসছে।সিদ্রাত চেইঞ্জ করে ওয়াশরুমে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মুখ মুছছিলো সিদ্রাত তখনি ফুঁপানোর আওয়াজ ভেসে আসল।সিদ্রাতের কপাল কুঞ্চিত হয়ে গেলো।কিছু একটা ভেবে সিদ্রাত বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো।যা ভেবেছিলো তাই..আরশি বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।সিদ্রাত পিছন থেকে আরশিকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুজল।আরশির কান্নার আওয়াজ-গতি আরও বেড়ে গেলো।সিদ্রাত আরশির কাঁধে নাক দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল….
—”কি হয়েছে হুম?কাঁদছ কেন?কেউ বকেছে?মেরেছে?”
আরশি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল…
—”আপনি ভীষণ নিষ্ঠুর…”
সিদ্রাত মুচকি হাসল।ও ভালো করেই বুঝতে পারল আরশি কেন এসব বলছ।সিদ্রাত মৃদু হেসে বলল…
—”নিষ্ঠুর তো এতোদিন ছিলাম।নিজের বউকে কষ্টের মধ্যে রেখে অন্যের বাচ্চা নিয়ে পড়ে ছিলাম।কিন্তু এখন আমি ভুল বুঝতে পেরেছি।আমার লাইফে এখন তোমার প্রায়োরিটি বেশি।তারপর আমি আর তুমি মিলে ফুটবল টিম বানাবো।যখন আমাদের বাবু চলে আসবে তখন আর সিহুর কথা আরও মনে পড়বে না..জানো আমি ভাবছি সিহুকে দত্তক দিয়ে দিবো কাউকে।শুধু শুধু নিজের সময়,টাকা নষ্ট করে পরের বাচ্চাকে পেলে লাভ আছে বলো?”
আরশি এবার আরও জোরে কেঁদে উঠল।হিচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলল….
—”আপনি সত্যিই নিষ্ঠুর।এতোদিন আপনার মনে হয়নি টাকা নষ্ট হচ্ছে?আজ মনে হচ্ছে তাইনা?এতো টাকা কি বাতাসে উড়াবেন নাকি আপনার টাকা কম?উল্টা-পাল্টা কথা বলবেন না…”
সিদ্রাত আরশিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আরশির চোখে চোখ রেখে বলল…
—”বলছ টাকা নষ্ট হবে না?”
আরশি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।সিদ্রাত আরশিকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো।আরশিও গুটিশুটি হয়ে সিদ্রাতের বুকে লেপ্টে রইল।সিদ্রাত কোমল কন্ঠে বলল…
—”সিহুর জন্য মায়া হয়?”
আরশি মুখ উঁচু করে সিদ্রাতের দিকে তাকালো।সিদ্রাতও তাকিয়ে আছে আরশির দিকে।আরশি আবারও সিদ্রাতের বুকে মুখ গুজে মুখটা কালো করে বলল…
—”উহু..হয়না..”
সিদ্রাত মুচকি হেসে বলল..
—”সিহুকে ভালো বাবা-মা দেখে দত্তক দিবো যেনো তাদের সিহুর জন্য মায়া হয়”
আরশি মুখ ফুলিয়ে সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে হনহন করে রুমের ভিতর চলে গেলো।সিদ্রাত মনে মনে হেসে বলল…
—”ভাঙবে তবুও মচকাবে না”
সিদ্রাতও রুমের ভিতর এলো।দেখল আরশি নাকে মুখে কম্ফোর্টার তুলে দিয়ে অন্যদিকে ফিরে বেডের এক কোণায় শুয়ে আছে।সিদ্রাত হালকা হেসে নিচে চলে গেলো।প্লেটে খাবার নিয়ে আবারও রুমে এলো।আরশির পাশে বসে ওকে টেনে তুলল।আরশি বিরক্তি নিয়ে বলল…
—”কি সমস্যা?”
সিদ্রাতের শান্ত কন্ঠের জবাব…
—”না খেয়ে ঘুমালে শরীর খারাপ করবে”
আরশি মুখ ভার করে অন্যদিকে তাকালো।সিদ্রাত মুচকি হেসে ভাত মাখাতে লাগল।আরশির ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে কষ্টে।ও এখন হারে হারে বুঝতে পারছে সিহু কী ছিলো ওর জন্য!সিদ্রাতকে খুব করে জিজ্ঞাসা করতে মন চাচ্ছে যে সিহু খেয়েছে কিনা?ও কি করছে এখন?পুরো বাড়িতে হয়ত মেয়েটা একা আছে ভেবেই আরশির মনের ভিতর ঝড় বইতে লাগল। চোখগুলো আবারও ভরে আসছে।সিদ্রাত বলল…
—”জানপাখি হা করো”
আরশি সিদ্রাতের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে হা করল।গলা দিয়ে যেনো খাবার নামছে না।ছোট্ট মেয়েটা কি করছে কে জানে!কিছু খেয়েছে কিনা তাও জানা নেই আরশির।সিদ্রাত ছোট ছোট লোকমা বানিয়ে আরশিকে খাইয়ে দিলো।তারপর আরশির মুখ মুছে দিয়ে ইনোসেন্ট ফেইস করে বলল…
—”আমায় খাইয়ে দিবে না এবার?”
আরশির বড্ডমায়া হলো সিদ্রাতের এমন ফেইস দেখে।সেই সাথে ভালোও লাগল এতো কিউট লুক দেখে।আরশিও সিদ্রাতকে খাইয়ে দিলো।তারপর প্লেটগুলো নিয়ে কিচেনে যেতে নিলে সিদ্রাত বলল…
—”তুমি পড়তে বসো।আমি এগুলো ক্লিন করে আসি”
—”কিন্তু,,,”
—হুশ..চুপ..”
সিদ্রাত আরশির হাত থেকে প্লেটগুলো নিয়ে চলে গেলো।আরশি মন খারাপ করে বই বের করে বেডের কার্নিশের সাথে হেলান দিয়ে বসে রইল।আজ ঘূর্ণিঝড় হলেও পড়া সম্ভব না এটা আরশি ভালোই বুঝতে পারল।পড়াশুনা করার একটু মনমানসিকতাও নেই।বড্ড একা একা লাগছে সিহুকে ছাড়া।খুব করে ইচ্ছা করছে ছুটে সিহুর কাছে যেতে।
সিদ্রাত রুমে এসে আরশিকে ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে আরশির পাশে বসল।তারপর আরশির কাঁধে হাত রাখল।আরশি মলিন মুখে সিদ্রাতের দিকে তাকালো।সিদ্রাত আরশির বইটা বন্ধ করে পাশে রেখে দিয়ে বলল….
—”আজ আর পড়তে হবে না।মন খারাপ থাকলে পড়াশুনা হয়না..একদমই না।শুধু সময় নষ্ট হয়”
আরশি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল…
—”আগামীকাল ক্লাস আছে।না পড়লে কিভাবে হবে”
সিদ্রাত আরশির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল।তারপর আরশির হাত জোরা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আঙুল দিয়ে খেলতে খেলতে বলল…
—”আগামীকাল ক্লাস করতে হবে না।বাসায় রেস্ট নাও।শরীরটাকে একদিনের জন্য না হয় অবসর দাও”
—”আর মাত্র দুদিন ক্লাস হবে।তারপর সামার ভ্যাকাশনের ছুটি..”
সিদ্রাত ভাবলেশহীনভাবে বলল…
—”কিছু হবে না।পরশুদিন যেও…তোমার শরীর আর মন দুটোই যে খারাপ তা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি… ”
আরশির চোখ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে সিদ্রাতের কপালের উপর পড়ল।সিদ্রাত সাথে সাথে উঠে বসে আরশির চোখের পানিগুলো ঠোঁট দিয়ে শুষে নিলো।আরশি চোখজোড়া বন্ধ করে রাখল।সিদ্রাত আরশিকে পাশে শুইয়ে আরশির গলায় মুখ গুঁজে ফেলল।আরশি আনমনে দুহাতে সিদ্রাতকে জড়িয়ে ধরল। সিদ্রাত নরম কন্ঠে বলল…
—”কাঁদবে না আর কখনো..তোমার কান্না আমার সহ্য হয়না”
আরশি চোখের জলটা মুছে নিলো।শান্ত হয়ে সিদ্রাতকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইল।সিদ্রাত বলল…
—”মাত্র নয়টা বাজ…তোমার কি ঘুম পেয়েছে?
—”উহু…”
আরশি হুট করে জিজ্ঞাসা করল…
—”আপনি চিঠিতে লিখেছেন আপনি আমায় অনেক আগে থেকেই ভালোবাসেন।ব্যাপারটা বুঝিনি আমি”
সিদ্রাত বলল…
—”শুনতেই হবে?”
আরশি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।সিদ্রাত গভীর শ্বাস ফেলল।তারপর বলা শুরু করল…
—”তুমি যখন ক্লাস টেনে উঠলে তার একমাস আগে আমায় দেখেছিলে..রাইট?”
আরশি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।সিদ্রাত ঘুরে শুয়ে আরশিকে নিজের বুকে নিয়ে নিলো।আরশিও ভদ্র বাচ্চাদের মতো সিদ্রাতের বুকের সাথে মিশে রইল।সিদ্রাত আরশির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে….
—”তার আরও চারমাস আগে আমি তোমাকে আহসান মজিলে দেখেছি।তুমি হয়ত সেদিন ফেমিলির সাথে আহসান মঞ্জিল গিয়েছিলে।আমিও গিয়েছিলাম ফ্রেন্ডসদের সাথে।সেখানে গিয়েই আমার নজর আটকে যায় পিচ্ছি চঞ্চলা এক লাল পরীর দিকে।আমি সেদিন চোখই সরাতে পারছিলাম না।সেই লাল পরীর লাল চিকন ঠোঁট,কাজল কালো হরিণী চোখ আর বাচ্চামো..সবই আমায় মুগ্ধ করেছিলো।আমার চোখ,মন সব আটকে গিয়েছিলো তার মাঝেই।তারপর চারটা মাস আমি যে কি নিদারুণ যন্ত্রণায় ভুগেছি আমি জানি…রাতে ঘুমালেও সেই লাল পরী স্বপ্নে আসে।দিনে বসে স্টাডি করলেও যেনো লাল পরীর ভ্রম দেখতে পাই।আমি যেনো পুরো পাগলপ্রায়..তারপর ধীরে ধীরে সেই পরীর খবর নেই।তাদের স্কুলের প্রিন্সিপাল আমার ফ্রেন্ডের খালু হওয়ার সুবাদে তার সাথে ডিসকার করি যে আমার একটা টিচিং জব দরকার যেহেতু আব্বুও সেটাই চায়।তারপর প্ল্যান অনুযায়ী সেই লাল পরীর স্কুলেও জয়েন করি।বাট আমার জন্যও সারপ্রাইজ ছিলো..বাবা নতুন যে বাসা কিনে তা আমার ওই পরীর বাসায়ই ছিলো।আমাদের বাসায় আমার পরীটাকে লাচ্ছির গ্লাস হাতে এলোমেলো চুলে দেখে আমি সেদিন প্রচুর সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছিলাম।মনটা যেনো বারবার বলছিলো “সিদ্রাত তোর রব নিজেই দায়িত্ব নিয়েছে তোর লালপরীকে তোর করে দেয়ার” তারপর অনেক বাঁধা-বিপত্তির পরে আমার রব সত্যিই আমার লালপরীকে আমার করে দিয়েছে…”
আরশি সিদ্রাতের কথাগুলো এতোক্ষণ অতি মনোযোগসহ শুনছিলো।সিদ্রাত কথাগুলো শেষ করে নিশব্দে হাসল।আরশির মনটাও অজানা আনন্দে ভরে উঠল।তার প্রিয়তমও তাকে এতো আগে থেকে ভালোবাসে যে!আরশি খুশিতে আনন্দে লজ্জায় সিদ্রাতের বুকে মুখ লুকালো।তারপর আলতো করে সিদ্রাতের বুকের বামপাশে কামড় দিলো..
—”আউচ..এই কি করলে!”
আরশি লাজুক হেসে বলল…
—”লাভ বাইট দিয়েছি”
সিদ্রাত হেসে উঠল।অতঃপর ঘোর লাগা কন্ঠে আরশির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল..
—”বি কেয়ারফুল মিসেস আরশি সিদ্রাত আজওয়াদ।আপনার সিদ্রাত কামড়ানো শুরু করলে কিন্তু কেঁদেও কুল পাবেন না।আমাকে যে জায়গায় কামড় দিয়েছে আমিও কিন্তু ঠিক সেখানে দিবো।শুধু সেখানে না…আরও অনেক জায়গায় যেখানে যেখানে দিলে তুমি সুখময় যন্ত্রণা অনুভব করবে…”
আরশি গাল জোরা লাল হয়ে গেলো লজ্জায়।কানগুলো যেনো গরম হয়ে গিয়েছে।আরশি পারলে এখনি মাটিতে ঢুকে যেতো।সিদ্রাত এমন লাগাম ছাড়া কথা কীভাবে বলে তাই বুঝে পায়না মেয়েটা।আরশি লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলল…
—”আপনি দা গ্রেট নির্লজ্জ..”
সিদ্রাত আরশির কথায় কান দিলো না।আরশির গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।আরশি কেঁপে উঠল।সিদ্রাত সাথে সাথে ঠোঁট সরিয়ে নিজের হাত আরশির গালে ছোঁয়ালো।তারপর গলায় আর কপালেও হাত রাখল।অতঃপর ফিসফিসিয়ে বলল…
—”তোমার হাত-পা এমন গরম হচ্ছে কেন?কি ব্যাপার হুম?তুমি আমাকে মনে মনে অবজার্ভ করছ তাইনা?আর এজন্যই গরম হয়ে যাচ্ছো!”
সিদ্রাত কথাগুলো বলে ভ্রু নাচালো।আরশি এবার আরও বেশি লজ্জা পেলো।লজ্জায় সিদ্রাতের দিকে তাকানো তো দূর এভাবে মিশে শুয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে।আরশি সিদ্রাতের বুকে একটা কিল দিয়ে লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে কম্ফোর্টারের ভিতর ঢুকে মুখও ঢেকে ফেলল আর বলল…
—”আপনি আর এজীবনে বাচ্চা পয়দা করতে পারবেন না..নির্লজ্জ খারুচ একটা..”
সিদ্রাত টেডি হাসি দিয়ে বলল…
—”দাঁড়াও বাচ্চা কীভাবে পয়দা করতে হয় তা তোমাকে হাতে-কলমে..না অন্যকিছুর মাধ্যমে প্রেক্টিক্যালি শিখাচ্ছি..”
সিদ্রাত বাঁকা হেসে নিজেও কম্ফোর্টারের ভিতর ঢুকে পড়ল।কয়েক মিনিটের মধ্যেই আরশি কাতরে উঠল…
—”উহহহুউ..”
সিদ্রাত ফিসফসিয়ে বাঁকা হেসে বলল…
—”এটুকুতেই এই অবস্থা!এখনো তো কিছুই করলাম না”
আরশি দাঁতে দাঁত চেপে বলল…
—”অসভ্য,খারুচ,সাদা বিলাই…ছুঁবি না তুই আমায়।উফফ.. তোর দাঁত আগে ফেলবি তারপর আমার কাছে আসবি..”
সিদ্রাত হু হা করে হেসে উঠে আরশিকে নিজের বাহুডোরে বন্দি করে নিলো…
চলবে…
#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_60
#WriterTanhaTonu
সিদ্রাত টেডি হাসি দিয়ে বলল…
—”দাঁড়াও বাচ্চা কীভাবে পয়দা করতে হয় তা তোমাকে হাতে-কলমে..না অন্যকিছুর মাধ্যমে প্রেক্টিক্যালি শিখাচ্ছি..”
সিদ্রাত বাঁকা হেসে নিজেও কম্ফোর্টারের ভিতর ঢুকে পড়ল।কয়েক মিনিটের মধ্যেই আরশি কাতরে উঠল…
—”উহহহুউ..”
সিদ্রাত ফিসফসিয়ে বাঁকা হেসে বলল…
—”এটুকুতেই এই অবস্থা!এখনো তো কিছুই করলাম না”
আরশি দাঁতে দাঁত চেপে বলল…
—”অসভ্য,খারুচ,সাদা বিলাই…ছুঁবি না তুই আমায়।উফফ.. তোর দাঁত আগে ফেলবি তারপর আমার কাছে আসবি..”
সিদ্রাত হু হা করে হেসে উঠে আরশিকে নিজের বাহুডোরে বন্দি করে নিলো….
___________________________________
আরশি মুচরা-মুচরি করতে করতে বলল…
—”এতো শক্ত করে ধরেছেন কেন?ছাড়ুন আমায়।আমি ঘুমাবো..”
সিদ্রাত আরশিকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখে ঘোরলাগা কন্ঠে বলল…
—”তোমার সত্যিই ঘুম পাচ্ছে?কিছু ফিল হচ্ছে না?”
আরশির নিশ্বাসের গতি সিদ্রাতের ঘোর লাগা কন্ঠের সাথে বেড়েই যাচ্ছে।ঘন নিশ্বাসের আওয়াজও বাড়ছে যা সিদ্রাতকে আরও বেসামাল করে দিচ্ছে।সিদ্রাত আরশির জামার চেইনটা আস্তে করে খুলে দিলো।আরশির শিরদাঁড়ায় শীতল স্রোত খেলে গেলো।ও শিউরে উঠে আকুল চোখে সিদ্রাতের দিকে তাকালো।সিদ্রাত আরশির খোলা পিঠে তর্জুনী দিয়ে স্লাইড করতে করতে লো ভয়েসে বলল…
—”তোমার নিশ্বাস বলছে তুমি আমার সঙ্গ পেতো চাও,,তোমার চোখ জোরাও আকুল..তোমার কম্পমান ঠোঁটও বিদ্রোহ করছে তোমাকে কেন আমি ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নিচ্ছি না!আর তুমি সেসব অস্বীকার করে বলছ ঘুমাবে!”
সিদ্রাত কথাগুলো বলে নিশব্দে হাসল।আরশি সিদ্রাতের চোখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে অতি যত্নে নিজের ওষ্ঠদ্বয় সিদরাতের ওষ্ঠদ্বয়ের ভাজে বিলিয়ে দিলো।সিদ্রাতও আকড়ে নিলো আরশিকে।দুজনের নিসৃত লালা মিশে যেতে লাগল একত্রে।সিদ্রাত আরশির ঠোঁট ছেড়ে কপালে কপাল ঠেকালো।আরশির নিশ্বাস অনেক বেশি ঘন হয়ে গিয়েছে।সিদ্রাতেরও ঘন গরম নিশ্বাস আরশির মুখের উপর পড়ছে।সিদ্রাত আবারও জড়িয়ে ধরে আরশিকে।ঠান্ডা কন্ঠে বলে…
—”ঘুমাও এবার।রাত বাড়ছে…”
আরশি সিদ্রাতের কথায় বেশ ক্ষানিকটা অবাক হয়।ওর চোখজোরা ছলছল করে উঠে যেনো চোখের অশ্রুকণাগুলো সিদ্রাতের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করে বলছে এতো গভীর স্পর্শের পর কেন এই প্রত্যাখান!
সিদ্রাত আরশির চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।আরশিকে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।ওদিকে আরশি নিশব্দ কান্নায় সিদ্রাতের উন্মুক্ত বুক ভেজাতে লাগল।সিদ্রাত বুঝেও পাত্তা দিলো না।একসময় দুজনই ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো….
ভোরের একটু আগে আরশির ঘুমটা ভেঙে গেলো।আরশি একপলক সিদ্রাতের দিকে তাকালো।ডিম লাইটের আলোয় খুবই কিউট লাগছে সিদ্রাতকে।কত শান্তিতে ঘুমোচ্ছে সে!আরশি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখল চেইন খুলা থাকার কারণে পড়নের জামাটা অনেক্ষানি নিচে নেমে গিয়েছে।আরশি বেশ ক্ষানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো।কিন্তু সিদ্রাত ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখায় জামাটা ঠিকও করতে পারছে না আবার ভয়ে নড়তেও পারছে না যদি সিদ্রাত উঠে যায়!তাহলে তো আরও বেশি লজ্জা পাবে সিদ্রাতের সামনে।আরশি অনেক সতর্কের সাথে জামাটা উপরে উঠাতে লাগল।কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।সিদ্রাত চোখ খুলে আরশির মুখপানে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ঘুমঘুমু কন্ঠে বলল…
—”গুড মর্নিং মাই লাভ”
সিদ্রাত এটা বলে ঘুরে শুতে নিলে পুরো জামাটাই খুলে নিচে নেমে যায়।আরশির চোখ বড় বড় হয়ে যায়।সিদ্রাত তা খেয়াল করে আরশির দিকে তাকাতে নিজেও ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।বেচারার মুখটা একদম হা হয়ে গিয়েছে। সিদ্রাত বড় বড় চোখ করে আরশির শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে।আরশি রাগে কেঁদেই দিলো।তারপর কম্ফোর্টারটা শরীরের উপর টেনে সিদ্রাতের দিকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল…
—”খারুচ..অসভ্য..নির্লজ্জ কোথাকার!জীবনে মেয়ে দেখেননি তাইনা?”
সিদ্রাত হুশে ফিরে এলো।তারপর ইচ্ছা করে কম্ফোর্টারের উপর দিয়ে আরশির শরীর একবার পর্যবেক্ষণ করে বাঁকা হেসে বলল…
—”মেয়ে তো অনেক দেখেছি।কিন্তু এখন যা দেখলাম গড স্যোয়ার তা এর আগে কখনো দেখিনি..”
আরশি রাগে আর লজ্জায় আবারও কেঁদে উঠল।ওর ইচ্ছা করছে সিদ্রাতের মাথাটা দিয়ে ফুটবল খেলতে। আরশি কান্না আর রাগ নিয়ে বলল…
—”আপনাকে এলিয়েন বললেও খারাপ হবে।আপনি এতো খারাপ যে নিজের স্ত্রীর সাথেও ফ্লার্ট করছেন..ছিহ..”
সিদ্রাত হেসে উঠল।তারপর আরশিকে কম্ফোর্টারের উপর দিয়েই জড়িয়ে ধরে আহ্লাদি কন্ঠে বলল..
—”জানপাখিটা রাগ করো কেন?আমিই তো এখানে..অন্য কেউ তো না।এতো লজ্জার কি আছে!বি ইজি সোনা..”
আরশির তবুও লজ্জা লাগছে।শুধু লজ্জা না..হাই লেভেলের লজ্জা।ও ঠোঁট ফুলিয়ে সিদ্রাতের সাথে মিশে শুয়ে থাকল।সিদ্রাত আরও কিছুক্ষণ পর বলল…
—”নামাজের সময় তো শেষ হয়ে যাচ্ছে।পড়বে না?”
আরশি লম্বা একটা শ্বাস ফেলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।সিদ্রাত আরশির কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলল…
—”ওকে আমি ওযু করে আসি।তুমি চেইঞ্জ করে নাও।একসাথে নামাজ পড়ব দুজন…”
আরশি ঘাড় কাত করে সম্মতি দিলো।সিদ্রাত ওয়াশরুমে চলে গেলো…
দুজন একসাথে নামাজ পড়ে শুয়ে শুয়ে গল্প করতে লাগল।আরশি সিদ্রাতের বুকে আঁকিবুকি করছে আর সিদ্রাত এটা-সেটা বলে যাচ্ছে।সিদ্রাত হুট করে বলল…
—”ওহহো তোমাকে একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি।মুন গতকাল ফোন দিয়েছিলো।ওদেরকে বাসায় ইনভাইট করেছি।মুন, আরহাম আর ওদের ছোট্ট বাচ্চা..এই তিনজনই আসবে শুধু..”
আরশি চমকে সিদ্রাতের দিকে তাকালো।তারপর খুশিতে আধখানা হয়ে বলল…
—”সত্যিই!!উফফ কতদিন পর মুন আপুর সাথে দেখা হবে!এই বজ্জাত লোক আপনি আমায় আগে বলেননি কেন?কত আয়োজন করতে হবে..উফফ আমি এগুলো কখন করব!?”
সিদ্রাত হেসে বলল…
—”আরে বউ শান্ত হও..আমি আছি তো..আমিহ হেল্প করব তোমায়।তাছাড়া ওরা আসবে দুপুরের দিকে”
আরশিকে তবুও চিন্তিত দেখাল।ও চিন্তিত কন্ঠেই বলল…
—”তবুও..কাজ শেষ করতে সময় কম লাগবে না।আচ্ছা আপনি ঘুমোন।আমি বরং কিচেনে যাই।রান্নাবান্না শুরু করে দেই গিয়ে..”
আরশি উঠে বসল।সিদ্রাত হালকা হেসে নিজেও উঠে বসল।তারপর কিউট করে হেসে বলল…
—”চলেন রানী সাহেবা দুজন একসাথেই কাজ করি।আমিও আপনাকে সাহায্য করি”
আরশি মুচকি হাসল।তারপর বলল…
—”ওকে আপনি আগে আমায় বলুন কি কি রাঁধতে পারেন আপনি?”
—”সবকিছু পারি ম্যাডাম।আপনি শুধু অর্ডার দিয়ে দেখুন..”
আরশি সিদ্রাতকে ভেঙচি দিয়ে বলল…
—”যাদের মুখ চলে তাদের হাত-পা চলে না।আমার সাথে কিচেনে এসে হাত-পা চালিয়ে দেখান।চলুন এখন”
সিদ্রাত মৃদু হেসে আরশির সাথে কিচেনে গেলো।আরশি একদম পাকা গিন্নীদের মতো কাজে নেমে পড়ল।সিদ্রাত আরশিকে সব সবজি কেটে দিলো।এই ফাঁকে আরশি কিছু চিকেন মেরিনেট করে ফেলল আর ম্যায়োনিজ বানালো ।তারপর দুজন একসাথে মিলে সব রান্না শেষ করতে লাগল।কাজের মাঝে অবশ্য সিদ্রাত আরশিকে কম জ্বালাচ্ছে না।একবার কোমরে হাত দিচ্ছে তো একবার পিঠে কিস করছে,,আবার চুলে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে।আরশি রেগে পেছনে তাকিয়ে বলল…
—”আরেকবার ডিস্টার্ব করলে কিন্তু আমি আপনার মন্ডুটা কেটে মুড়িঘন্ট বানাবো..”
সিদ্রাত হেসে দিলো।হাসতে হাসতে বলল…
—”লাইক সিরিয়সলি!তোমার আমায় খেতে মন চাচ্ছে সেটা বললেই পারো..বেড তো রেডি আছেই।শুধু শুধু কষ্ট করে মুড়িঘন্ট বানাতে হবে না”
আরশি এবার পারেনা রাগে কেঁদেই দেয়।ও দাঁতে দাঁত চেপে বলল…
—”দেখুন ভালো হচ্ছে না। আমি কিন্তু কেঁদে দিবো…”
—”ওকে ওকে জান…আর জ্বালাবো না।তুমি কাজ করো ”
আরশি ভেঙচি কেটে রান্নায় মনোযোগ দিলো…
এগারোটার দিকে সব রান্না, অায়োজন শেষ হলো।আরশি আর সিদ্রাত দুজনই শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।দুপুরে কলিং বেল বেজে উঠতেই আরশি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।সামনে মুনকে দেখে জড়িয়ে ধরল।আরশির পেছনে সিদ্রাতও আসল।মুন মুচকি হেসে বলল…
—”কেমন আছো আমার পিচ্ছি ভাবীটা?”
আরশি মুনকে ছেড়ে মুখ ফুলিয়ে বলল…
—”আমাকে তো তুমি ভুলেই গিয়েছো মুন আপু।ছিহ তুমি এতো স্বার্থপর!অবশ্য হাজবেন্ড পেয়েছো, বাচ্চা পেয়েছো..এখন আর আমাকে মনে রেখে কি হবে?”
মুন হালকা হাসল।পিছন থেকে আরহাম বের হয়ে বলল…
—”এই যে পিচ্চি ভাবী আমাদেরকে কি বাইরেই দাঁড় করিয়ে রাখবেন নাকি?”
আরশি জিহবায় কামড় দিয়ে সরে দাঁড়ালো আর বলল…
—”প্লিজ ভিতরে আসুন ভাইয়া..”
মুন আর আরহাম ভিতরে প্রবেশ করল।আরহামের কোলে ওর মেয়ে।আরহাম মেয়েকে মুনের কোলে দিয়ে সিদ্রাতকে জড়িয়ে ধরে বলল…
—”শালা কেমন আছিস বল?বউ পেয়ে তো তোর মন এখন উড়ু উড়ু”
সিদ্রাত হালকা হেসে বলল…
—”ইডিয়েট আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বল।আমি তোর বউয়ের বড় ভাই হই..”
আরহাম শব্দ করে হেসে দিলো আর বলল…
—”আগে দোস্ত তারপর অন্যসব শালা..”
সিদ্রাতও হাসল।সবাই সোফায় গিয়ে বসল।আরশি সবাইকে কোল্ড ড্রিংক্স দিলো।তারপর সিদ্রাতের পাশে বসল।আরহাম বলল…
—”তো পিচ্চি ভাবী..পড়াশুনা সংসার..সব কেমন চলছে?”
আরশি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল…
—”আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া।তা আমার ননদিনীর যত্ন নিন তো?সে কিন্তু আপনার প্রেমে মাতোয়ারা”
মুন লাজুক হাসল।আরহাম মুচকি হেসে মুনের দিকে তাকিয়ে বলল…
—”আপনার ননদকেই জিজ্ঞাসা করুন যত্ন নিই কিনা?”
সিদ্রাত হাসল।আরশি ঠোঁট উলটে বলল…
—”ভাইয়া প্লিজ আমায় আপনি করে বলবেন না।আপনার থেকে মিনিমাম দশ বছরের ছোট তো হবোই যদি আপনার আর আপনার বন্ধুর বয়স সেইম হয়”
আরহাম হালকা হাসল।সিদ্রাত বলল…
—”আরশিপাখি ওদেরকে স্ন্যাকসগুলো এনে দাও”
—”ওহ হ্যাঁ…আমি ভুলে গিয়েছিলাম”
আরশি উঠে যেতে লাগল।আরহাম দুষ্টুমি করে বলল…
—”কি প্রেম!’আরশিপাখি’…”
সিদ্রাত হালকা হাসল।আরশি চিকেন নাগেটস,চিকেন ব্রেড উইথ ভেজিটেবল,চিকেন বল,বিফ টিকা এনে সেন্টারে টেবিলে সার্ভ করল।সবাই হালকা পাতলা খেতে খেতে গল্পে মজে গেলো।আরশি আর মুন উপরে সিদ্রাতের রুমে গিয়ে গল্প করতে লাগল।সিদ্রাত আর আরহাম লিভিং রুমেই রয়ে গেলো।হঠাৎ আরহামের মেয়ে ঘুমের মধ্যেই কেঁদে উঠল।মুন ব্যস্ত হয়ে বলল…
—”ইনু সোনা কি হয়েছে মা?খারাপ লাগছে?বমি করবে?”
ইনায়া চোখ ডলতে ডলতে বলল…
—”আমাকে আদল কলো না তুমি..”
মুন মুচকি হেসে ইরার কপালে চুমু দিয়ে বলল…
—”কে বলেছে সোনা তোমাকে আমি আদর করিনা?তুমিই তো আমার কলিজা..”
মুন ইনায়াকে কতগুলো চুমু দিলো।তাও ইনায়ার কান্না থামছে না।হম্বিতম্বি করে অনেক আদর করে মুন ইনায়ার কান্না থামাতে সফল হলো।আরশি অবাক নয়নে মুন আর ইনায়ার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর ভিতরটা জ্বলছে খুব।এটা ভেবে নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে যে মুন যদি নিজের হাজবেন্ডের প্রথম পক্ষের সন্তানকে নিজের সন্তানের জায়গায় বসাতে পারে..এতো আদর-যত্ন দিতে পারে তাহলে আমি কেন সিহরাতকে নিজের মেয়ে ভাবতে পারলাম না।সিহরাত তো সিদ্রাতের অংশও না..
আরশি চোখের কোণাটা এক আঙুলে মুছে ফেলল।মুন ইনায়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল…
—”উফফ আরশি জানো না এই মেয়েটা যে কী!সারাদিন মা মা করবে।আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না।আরহামকেও চিনে না যখন ইনায়া আমার কাছে থাকে।আমার কখনো মনেই হয়না ওকে অন্য কেউ গর্ভে নিয়েছিলো।বরং আমার অনেক খুশি লাগে এটা ভেবে যে জান্নাতের এই ফুলটার মা হওয়ার সুযোগ দিয়েছে আমায় আল্লাহ।আলহামদুলিল্লাহ… ”
মুনের চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি।আরশিও মুনের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসল।ওর খুব বেশি করে সিহরাতের কথা মনে পড়ছে।অসহ্য এক যন্ত্রণা কাজ করছে বুকের ভিতর।মুন ইনায়াকে আরশির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল…
—”আম্মু এটা তোমার মামনী হয়…মামনীর কাছে যাবে?”
ইনায়া ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে মাথা নাড়ালো।আরশির কাছে ইনায়াকে খুব ভালো লাগল।ও ইনায়াকে নিজের কোলে নিয়ে বলল…
—”মা বলো তো মামনী….”
বাচ্চাটা সাথে সাথে চিকন কন্ঠে বলল..
—”মামুনী..”
আরশি মুচকি হাসল।ইনায়া আরশিকে দু হাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরল।আরশি নিজের চোখের জল আর আটকে রাখতে পারল না।টপটপ করে গড়িয়ে পড়ল।মুন বলল…
—”আরশি..আমি সিহুর কথা শুনেছি।ছোট্ট একটা মেয়ের সাথে কিন্তু ইগো ওয়ার্ডটা যায়না।আমি জানি তুমি ওকে মিস করছ।ফিরিয়ে আনো সিহুকে”
আরশি করুণ চোখে মুনের দিকে তাকালো।মুন চোখের মাধ্যমে আরশিকে আশ্বস্ত করল।আরশির ঠোঁটের কোণে যেনো খুশির রেখা ফুটে উঠল….
চলবে…