প্রাণের_চেয়েও_প্রিয় পর্ব ৬৩+৬৪

#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_63
#Writer_TanhaTonu

রুহানের কথা শুনে আরশির হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো।ওর মাথাটা যেনো চক্কর দিয়ে উঠল।অনর্গল অবিরাম অশ্রু গড়াতে লাগল আরশির চোখ জোড়া বেয়ে।বারবার কানে যেনো বাজছে সিহুর “আম্মু” ডাকটা।আরশি নিজে যেনো বাচ্চাটার কষ্ট উপলব্ধি করতে পারছে।আরশি চিৎকার করে কেঁদে উঠল……

—”সিহুউউউ…”
___________________________________
আরশির চিৎকারে সিদ্রাত ধরফরিয়ে উঠল ঘুম থেকে।আরশির দিকে তাকিয়ে দেখল ও কাঁদছে।সিদ্রাত উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করল…

—”আরশি কি হয়েছে? কাঁদছ কেন?”

আরশি ভাঙা কন্ঠে জবাব দিলো…
—”সিহু,,,সেন্স,,লে,,স হয়ে গ,,গিয়েছে,,”

আরশির কথাটা বুঝতে সিদ্রাতের একটু সময় লাগল।ও কপাল কুচকে কিছুক্ষণ আরশির দিকে তাকিয়ে রইল।কথাটার মানে ওর ব্রেইন কেচ করতেই ফোন নিয়ে তাড়াতাড়ি রুহানের নাম্বারে ডায়াল করল।রুহান সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে সিহুর অসুখের কথা সিদ্রাতকে জানালো।সিদ্রাতের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে।ও ঢোক গিলে রুহানকে বলল…

—”এম্বুল্যান্সের আশা বাদ দিয়ে এক্ষুনি ওকে নর্দার্নে নিয়ে যাও রুহান।লেইট করো না।আর আমাকে ইমিডিয়েটলি আপডেট দাও।সিহুর যেনো কিছু না হয়…এজ সুন এজ ইউ ক্যান স্টার্ট ফর..”

সিদ্রাত ফোন কেটে দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে রইল।আরশি হেচকি তুলে কেঁদেই যাচ্ছে।সিদ্রাত বিরক্ত হয়ে আরশিকে ধমক দিয়ে বলল…
—”আহ আরশি..জাস্ট শাট আপ।তোমার এই বিরক্তময় কান্না অফ করো।ভালো লাগছে না কিছু..”

আরশি সিদ্রাতের ধমকে সাথে সাথে চুপ হয়ে গেলো।কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আরও জোরে জোরে কাঁদা শুরু করল।সিদ্রাত করুণ চোখ আরশির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।আরশি কাঁদছে আর বিলাপ করছে।সিদ্রাতের ইচ্ছা করছে আরশির মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দিতে।প্রায় এক ঘন্টা পর রুহান ফোন করল।সিদ্রাত ফোন রিসিভ করতে নিলে আরশি কাঁদতে কাঁদতে বলল….

—”লাউড স্পিকার দিন..আমি শুনব”

সিদ্রাত কপাল কুচকে আরশির দিকে তাকালো।তারপর ফোন লাউডে দিয়ে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল…
—”হ্যাঁ রুহান বলো..”
—”স্যার সিহুকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।হার্টে ক্ষুদ্র একটা ছিদ্র ধরা পড়েছে প্লাস লেফট ফুসফুসে সর্দির কারণে ইনফেকশনও হয়েছে..”

সিদ্রাত বাকরুদ্ধ হয়ে যায় রুহানের কথা শুনে।কিছু যে বলবে তা-ই পারছে না।স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ওর সবকিছু।ছোট্ট করে শুধু বলে…
—”আমাকে আপডেট জানাবে কি হলো..”

সিদ্রাত এটুকু বলে ফোনটা কেটে দিয়ে নির্বাক হয়ে বসে রইল।এতোক্ষণ আরশির কান্না ওর কাছে বিরক্তিকর লাগলেও এখন নিজের চোখ থেকেই টপটপ করে পানি পড়তে লাগল।এদিকে আরশি রুহানের কথা শুনে মুখ চেপে কাঁদছে।নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে।অচেতন মন যেনো বারবার আরশিকে ধিক্কার দিয়ে বলছে সিহুকে তোর কাছে রাখলে আজ এমন হতো না।বাচ্চাটার এতো বড় বিপদে অন্তত তার পাশে থাকতে পারতি।বাচ্চাটা হয়ত আরও একটু ভালো থাকত..আরশি অচেতন মনে এসব ভাবছে আর কাঁদছে।সিদ্রাত ধরা গলায় বলল….

—”কাঁদলে তো সমাধান হবে না…দোয়া করো,,,”

সিদ্রাত কথাটা বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ওযু করে এসে নফল নামাজ পড়তে লাগল।দীর্ঘসময় কেঁদে কেঁদে মোনাজাত করল।আরশিও ততক্ষণে নামাজে এসে দাঁড়িয়েছে।মেয়েটা কান্নার চোটে নামাজই পড়তে পারছে না।ঠোঁট চেপে কান্না আটকে রেখে নামাজ শেষ করল।কিন্তু মোনাজাতে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারল না।হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।সিদ্রাত অসহায় চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে রইল।আরশির মোনাজাত শেষ হলে সিদ্রাত আরশির পাশে বসে ওকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল।আরশি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর বিড়বিড় করে বলছে….

—”আমাদের সিহুর কিছু হবে না তো!প্লিজ বলুন না সিহু সুস্থ হয়ে যাবে”

সিদ্রাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল…
—”ইনশা আল্লাহ…”

চিন্তা,অস্থিরতা আর কান্নাকাটিতেই সিদ্রাত-আরশির রাতটা কেটে গেলো।প্রতিটা মূহুর্তে পাখির মতো উড়ে সিহুর কাছে চলে যেতে ইচ্ছা করেছে তাদের।রাতের শেষভাগে রুহান ফোন দিলে সিদ্রাত আর আরশির বুকের ভারটা কমে….

—”স্যার সিহু ভালো আছে।আপনারা টেনশন করবেন না।হয়ত সারা রাত ঘুমাননি..এখন একটু রেস্ট নিন”

সিদ্রাত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে…
—”আলহামদুলিল্লাহ.. সিহুকে কি ক্যাবিনে দেওয়া হয়েছে?”
—”হ্যাঁ..ও ঘুমোচ্ছে।বাচ্চাতো..তাই ডক্টররা কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেনি।কম্পিউটারের মাধ্যমে ছোট্ট একটা লেজার ঢুকিয়ে ছিদ্রটা ঠিক করেছে আর ইনফেকশনের জন্য ওষুধ দিয়েছে।সর্দি লাগাতে নিষেধ করেছে..”

সিদ্রাত আর আরশি দুজনই চিন্তা-মুক্ত হয়।মনে হচ্ছে বুকের উপর থেকে একটা পাহাড় সরে গেলো।আরশি সিদ্রাতের কাছ থেকে ফোনটা খপ করে নিয়ে বলল….

—”রুহান ভাইয়া আমি ভিডিও কল দিচ্ছি।আপনি একটু সিহুকে দেখান”

রুহান বলল…
—”ওকে ম্যাম..”

আরশি ভিডিও কল দিলো।রুহান ব্যাক ক্যামেরা সেট করে ফোন রিসিভ করল।ঘুমন্ত নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে দেখে আরশির প্রাণ জুড়িয়ে গেলো সেই সাথে চোখ থেকে অবাধ্য কিছু জলও বেরিয়ে আসল।আরশি মোবাইলের উপর দিয়ে সিহুর কপাল বরাবর চুমু খেলো।সিদ্রাতও তৃপ্তি মিটিয়ে সিহুকে দেখল।বুকের ভিতর যেনো অদ্ভুত প্রশান্তি লাগছে।তারপর রুহানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কেটে দিলো।আরশির উদ্দেশ্যে বলল…
—”চলো কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নাও।নাহলে শরীর খারাপ করবে।সারা রাত তো সজাগ ছিলে”

আরশি সম্মতি দিলো সিদ্রাতের কথায়।গুটিশুটি হয়ে সিদ্রাতের পাশে শুয়ে পড়ল।সিদ্রাত আরশিকে জড়িয়ে ধরে ওর গলায় মুখ গুজল।সারাদিনের ক্লান্তি আর সারারাতের অস্থিরতা,চিন্তা আর সজাগ থাকায় খুব কম সময়েই দুজন ঘুমিয়ে পড়ল।এখন শান্তির একটা ঘুম দেওয়া যাবে।পুরো দিনটা যেনো ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেলো দুজনের উপর দিয়ে….

পরের দিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সিদ্রাত আর আরশি সিহুর ব্যাপারে রুহানের সাথে কথা বলে ব্রেকফাস্ট করে নিলো।বলতে গেলে গতকাল সারাদিনই না খাওয়া।ব্রেকফাস্ট করা হলে সিদ্রাত বলল…

—”রেডি হয়ে নিও।আশেপাশেই কিছু জায়গায় ঘুর‍তে যাবো”

—”ওহ…আচ্ছা ঠিকাছে..কখন যাবেন?”
—”আধা ঘন্টা পরই”

আরশি মুচকি হাসল।সিদ্রাতও মৃদু হাসল।আরশি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হতে শুরু করল।সিদ্রাত বেডে বসে ফোন স্ক্রল করতে লাগল।আরশি টাওয়াল দিয়ে প্যাঁচানো চুলগুলো খুলে দিলো।ওমনি ঝরঝর করে সবগুলো চুল আরশির পিঠ বেয়ে নিচে ঝুলে পড়ল আর ঠিক তখনি সিদ্রাতের চোখ আটকে গেলো আরশির চুলের দিকে।আরশি হেয়ার ড্রায়ারটা নিয়ে যেইনা চুল ড্রাই করতে যাবে ওমনি সিদ্রাত পেছন থেকে আরশিকে জড়িয়ে ধরে ওর ভেজা চুলে মুখ ডুবালো।আরশি শিউরে উঠল।হেয়ার ড্রাই সহ ওর হাতটা অটোমেটিকেলি নিচে নেমে গেলো।সিদ্রাত আরশির ঘাড়ের ডানে বামে কিস করতে লাগল।আরশি চোখ বন্ধ করে অস্ফুট কন্ঠে বলল…

—কি করছেন?”

সিদ্রাত ঘোর লাগা কন্ঠে বলল…
—”তোমার চুলের ঘ্রাণে পাগল হয়ে যাবো আমি।এ যেনো দুর্লভ এলকোহল..”

আরশি সিদ্রাতের কথার জবাবে কিছু বলতে পারল না।সিদ্রাতের বুকের সাথে ঠেশ দিয়ে দাঁড়িয়ে সিদ্রাতের অসহনীয় স্পর্শগুলো সহ্য করতে লাগল।কিছুক্ষণ পর সিদ্রাত শান্ত হলো।আরশির কানের লতিতে বাইট দিয়ে বলল…

—”বাকিটা রাতের জন্য তোলা রইল”

আরশির শরীর জুড়ে শীতল মিশ্র অনুভূতি বয়ে গেলো।সিদ্রাত মুচকি হেসে আরশির পাশ থেকে সরে এলো।আরশি বেশকিছুক্ষণ সেভাবেই দাঁড়য়ে রইল।তারপর লম্বা একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে নিয়ে রেডি হতে লাগল।ভুলেও সিদ্রাতের দিকে তাকালো।লজ্জা নামক অঅনুভূতি যে ওর পুরো সত্তায় বিরাজ করছে এখন…..
চলবে…
#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_64
#Writer_TanhaTonu

আরশি সিদ্রাতের কথার জবাবে কিছু বলতে পারল না।সিদ্রাতের বুকের সাথে ঠেশ দিয়ে দাঁড়িয়ে সিদ্রাতের অসহনীয় স্পর্শগুলো সহ্য করতে লাগল।কিছুক্ষণ পর সিদ্রাত শান্ত হলো।আরশির কানের লতিতে বাইট দিয়ে বলল…

—”বাকিটা রাতের জন্য তোলা রইল”

আরশির শরীর জুড়ে শীতল মিশ্র অনুভূতি বয়ে গেলো।সিদ্রাত মুচকি হেসে আরশির পাশ থেকে সরে এলো।আরশি বেশকিছুক্ষণ সেভাবেই দাঁড়য়ে রইল।তারপর লম্বা একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে নিয়ে রেডি হতে লাগল।ভুলেও সিদ্রাতের দিকে তাকালো।লজ্জা নামক অঅনুভূতি যে ওর পুরো সত্তায় বিরাজ করছে এখন…..
_____________________________________

আরশি আর সিদ্রাত রেডি হয়ে আশেপাশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরার জন্য রেডি হলো।প্রথমেই তারা গেলো চ্যাপেল নামক ব্রিজে।অপূর্ব মনোরম সেখানকার দৃশ্য।ইউরোপের দৃষ্টিনন্দন পর্যটক সেতুগুলোকে র‍্যাংকিংয়ে রাখা হলে নিসন্দেহে এই সেতু টপ লিস্টে থাকবে।সেতুটি মূলত লুসার্নের রিসু নদীর উপর তীর্যকভাবে অবস্থিত।বিভিন্ন ধরণের লাইটেনিং করা সেতুটিতে।নদীর স্বচ্ছ নীল পানিতে সেতুর গোল্ডেন কালার লাইট প্রতিফলিত হয়ে যেনো আরও বেশি সুন্দর করে তুলেছে পরিবেশটাকে।আরশি মুগ্ধ চোখে সেই পানির দিকে তাকিয়ে রইল।সিদ্রাত আরশির পিছনে এসে দাঁড়িয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে স্লো ভয়েসে বলল….

—”কেমন লাগছে?”

আরশি মুচকি হেসে বলল…
—”অনেক ভালো”
সিদ্রাত মৃদু হাসল।তারপর সবার অলক্ষ্যে আরশি কাঁধে চুমু খেলো।আরশি শিউরে উঠল। আতঙ্ক দৃষ্টিতে মাথা ঘুরিয়ে সিদ্রাতের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।সিদ্রাত ইনোসেন্ট মার্কা একটা হাসি দিলো।আরশি ভেঙচি কেটে আবারও আশেপাশের পরিবেশ দেখতে লাগল….

এরপর দুজন গেলো সুইজারল্যান্ড এর আল্পস পর্বতে অবস্থিত সবচেয়ে বড় পর্বত ম্যাটারহর্ণে।এখানে এসে আরশির মুগ্ধতা যেনো আরও বেড়ে যাচ্ছে।একপাশে সবুজ পর্বত আর অপরপাশে বরফে আবৃত ধূসর-সাদা পর্বত।দুই রঙা পর্বতের মাঝ দিয়ে সরু রাস্তা।সেই রাস্তায় ছোট্ট একটা কারে করে দুজন আরও ভিতরে পৌঁছে গেলো।কার থেকে নেমে আরশি পরিবেশটা উপভোগ করতে লাগল।বরফ হওয়ার কারণে বেশ ঠান্ডাও লাগছে শরীরে।সিদ্রাত আরশিকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।আরশি অবাক নয়নে সিদ্রাতের দিকে তাকালো।সিদ্রাত আরশির নাক টেনে বলল…
—”বেশি ঠান্ডা লাগছে?”
আরশি ছোট্ট করে হেসে বলল…
—”এসেছিই তো ঠান্ডার দেশে।একটু তো করবেই”

সিদ্রাত মুচকি হেসে বলল…
—”এদিকে থাকতে হবে না।চলো ওইদিকে যাই।ওখানটায় পুরোটাই সবুজে ঘেরা…”
—”হুম…”

সারাদিন ঘুরাঘুরি শেষে,,একান্তে রোমান্টিক কিছু সময় কাটানোর পরে সাড়ে চার ঘন্টার জার্নি করে আবারও হোটেলে ফিরে এলো দুজন।রাত সাড়ে নয়টায় নিজেদের বুক করা রুমে পা ফেলল দুজন।আরশি ক্লান্ত শরীর নিয়ে দুম করে বেডে বসে পড়ল।সিদ্রাত হালকা হেসে বলল…
—”শেষ এনার্জি?”
আরশি মুখটা ছোট্ট করে মাথা নাড়ালো।তারপর বলল…
—”অনেক ঘুরেছি আজ।আমি কি এতো জার্নিং করতে পারি নাকি!উফফ জীবনের সবচেয়ে বড় রেকর্ড।একদিনে নয় ঘন্টার জার্নি সাথে ছয় ঘন্টা ঘুরাঘুরি!ভাবা যায়!অবশ্য ভালোই হয়েছে ছেলেমেয়েদেরকে গল্প শুনাতে পারব।বলতে পারব তোদের এই অকম্মা মা এতো জার্নি করে আবার কোনো অসুস্থতা ছাড়াই সুইজারল্যান্ড ঘুরে এসেছে…”

সিদ্রাত আরশির কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে হাসল।বেডের সাথে মিশে ফ্লোরে হাটু মুড়ে বসে আরশি কোলে মাথা রাখল।সিদ্রাত আচমকা এমন করায় আরশি কিছুটা চমকে উঠল।তারপর সিদ্রাতের চুলে হাত বুলিয়ে বলল…
—”কি হয়েছে?সমস্যা?”
সিদ্রাত কিছুটা আক্ষেপ আর কিছুটা দুষ্টুমির সাথে বলল…
—”দেখো না আমি এখন ৩০+ অথচ এখনো ছোট ছোট হাত-পা নিয়ে খেলতে পারলাম না।তুলতুলে নরম মুখটায় চুমু দিয়ে বুকে জড়াতে পারলাম না আমার অংশকে।অথচ আরহাম আমার সমবয়সী হয়েও ওর আড়াই বছরের মেয়ে আছে..হাহ!হাওইভার তুমি আবার এসব সিরিয়াসলি নিয়ো না ওকে!আমার বউটাই তো পিচ্চি এখনো।আমার বউটা একটু বড় হোক।তারপর আমরা ডাবল ফুটবল টিম বানাবো”

সিদ্রাত কথাটা বলে হালকা হেসে আরশির দিকে তাকালো।কিন্তু ওর হাসিটা বেশিক্ষণ টিকল না।কারণ আরশির চোখগুলো জলে টইটম্বুর করছে।সিদ্রাত সাথে সাথে ফ্লোর থেকে উঠে আরশির পাশে বসে ওর গাল দুটো নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে চোখে চুমু খেলো।আরশি ধরা গলায় বলল….
—”আপনার খুব ইচ্ছা করে তাইনা নিজের সন্তানের মুখ দেখতে?”

সিদ্রাতের ইচ্ছা করছে নিজের মাথাটা ফাটাতে যে কেন আরশিকে অতিরিক্ত ইমোশনাল হয়ে এসব বলতে গেলো।পরস্থিতি স্বাভাবিক করতে সিদ্রাত বলল….

—”উহহু আরশি পাখি..তুমি পারোও..আমার ইচ্ছা করার কি আছে?আমার সন্তান তো আছেই।আমাদের সিহরাত আছে না!ওর কন্ঠে পাপা ডাক শুনলে এমনিই হৃদয় জুড়িয়ে যায়।তুমি এতো ভেবো না ওকে!আমাদের সন্তান তো আছেই।কিছু বছর যাক।সময় হলে না হয় আমরা সিহুর জন্য একটা ভাই বা বোন আনব।সো রিলাক্স বেবি…”

আরশি ভার মন নিয়েই সিদ্রাতের বুকে মাথা রাখল।আরশির চোখ থেকে এখনো পানি পড়ছে।আরশি ধরা গলায় বলল…
—”আমি আপনার মন পড়তে পারি সিদ্রাত..আমি জানি মনে মনে আপনিও চান আমাদের ঘরে ছোট্ট একটা অতিথি আসুক”

সিদ্রাত আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল…
—”হুম চাই আমি আরশি পাখি।তবে তার চেয়েও বেশি চাই তোমার ক্যারিয়ারে যেনো আমার ভালোবাসাটা বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়।সো এই টপিক এখানেই শেষ।সময় হলে আমিই এই টপিক পুনরায় ওপেন করব।এখন আর এসব নিয়ে কথা বলবে না”

আরশি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলেও ওর মন সায় দিলো না।সিদ্রাত বলল…
—”ওকে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।তোমার পরে আমি ফ্রেশ হবো”
—”হুমম….”

আরশি ওয়াশরুমে চলে গেলো।এই ফাঁকে সিদ্রাত ফোন করে ডিনারের অর্ডার দিয়ে দিলো।আরশি বেরিয়ে এলে সিদ্রাত গেলো ফ্রেশ হতে।আরশি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মুখে ক্রিম লাগাচ্ছিলো।দরজায় নক পড়তেই ও ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালো।তারপর এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই একটা মেয়ে একটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল….
—”ম্যাম আপনি যে অর্ডার করেছিলেন সেই ড্রেসটা”

আরশি মুচকি হেসে ব্যাগটা নিয়ে একটা পেপারে সাইন করে দিলো আর বলল…
—”থ্যানক্স এ লট”
মেয়েটিও মুচকি হেসে বলল….
—”মাই প্লেজার ম্যাম…”
তারপর মেয়েটি চলে গেলো।আরশি দরজার লক করে ব্যাগের ভিতর তাকিয়ে লাজুক হাসল।বিড়বিড় করে বলল…
—”ইয়া খুদা আজকের রাতটার জন্য আমার থেকে লজ্জাটা উঠিয়ে নাও।নাহলে উনাকে আমি কিভাবে স্পেশাল একটা রাত গিফট করব!”

একটু পর সিদ্রাত বেরিয়ে এসে দেখল আরশি বেডে বসে মোবাইলে কি যেনো স্ক্রল করছে।সিদ্রাত বেডের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে আবারও কলিং বেল বেজে উঠে।গলার টাওয়ালটা বেডে ছুড়ে মেরে দরজার দিকে এগিয়ে যায়।একজন স্টাফ এসে ডিনার দিয়ে গেলো।সিদ্রাত ডিনার নিয়ে রুম লক করে দিলো।ট্রেটা সেন্টার টেবিলে রেখে আরশির কাছে এগিয়ে গেলো।আরশি ফোন থেকে মাথা তুলে সিদ্রাতের দিকে তাকাতেই হা হয়ে গেলো।পুরো শরীরে একটা টাওয়াল ছাড়া আর কিছুই নেই।ফর্সা বডিটা যেনো আরশিকে খুবই এট্র‍্যাক্টেড করছে।সিদ্রাত ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল….

—”আর ইউ ফিলিং হট?”

আরশি সিদ্রাতের কথায় থতমত খেয়ে চোখ সরিয়ে ফেলল।সিদ্রাত আরশির দিকে তাকিয়ে দেখল ওর গালদুটো লাল হয়ে যাচ্ছে।সিদ্রাত হালকা হাসল।তারপর বলল…
—”ওকে কুল কুল..চলো ডিনার করব”

আরশি লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলল…
—”জ্বি..”

দুজন দুজনকে খাইয়ে দিলো।প্রায় দশটা দশ/বারোর দিকে ডিনার শেষ হলো।আরশি সিদ্রাতকে বলল…
—”আচ্ছা শুনুন না..আপনার কাছে কি মাথা ব্যথার কোনো ওষুধ আছে?”

সিদ্রাত কপালে ভাজ ফেলে বলল…
—”আর ইউ ফিলিং ব্যাড?মাথা ব্যথা করছে?আগে বলবে না।দাঁড়াও ওষুধ দিচ্ছি”

সিদ্রাত উদ্বিগ্ন হয়ে ওর লাগেজের কাছে গেলো।আরশি ঠোঁট টিপে হাসল।সিদ্রাত অনেক খুঁজেও কোনো ওষুধ পেলো না।আরশির দিকে করুণ স্বরে তাকিয়ে বলল…

—”পাচ্ছি না কেন বলো তো…আমি তো সবসময়ই কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে রাখি”

আরশি মন খারাপ করে বলল…
—”আচ্ছা থাক বাদ দিন।এমনিই সেড়ে যাবে”
সিদ্রাত বলে উঠল…
—”না না..তা বললে হয় নাকি!আচ্ছা তুমি একটু ওয়েট করো।আমি রিসিপশনে গিয়ে দেখি হেল্প পাই কিনা।”
আরশি বিব্রতভাব নিয়ে বলল…
—এখন আবার যাবেন!”
—”কিছু হবে না।তুমি একটু থাকো।আমি আসছি।”

সিদ্রাত টাওয়াল চেইঞ্জ করে একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর টি শার্ট পড়ে বেরিয়ে গেলো।আরশি মৃদু হেসে লাইট অফ করে দিলো…

সিদ্রাত প্রায় বিশ মিনিট পর ফিরে আসল।রুমে এসে লাইট অফ পেয়ে ভ্রু কিঞ্চিত কুচকে ফেলল।লাইট অন করে দেখল রুমে কেউ নেই।সিদ্রাত কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।হন্য হয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলে কিছু একটা ভেবে থেমে গেলো।ধীর পায়ে বারান্দায় এগিয়ে যেতেই চমকে উঠল।মনে হচ্ছে ওর সামনে কোনো হুরপরী দাঁড়িয়ে আছে।সিদ্রাতের চোখে যেনো মূহুর্তেই ঘোর চলে আসল।পুরো শরীরে যেনো অদ্ভুত এক অনুভূতি ঢেউ খেলে যাচ্ছে।সিদ্রাত আরশিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর উন্মুক্ত পিঠে মুখ ডুবালো।আরশির পুরো শরীর কাঁপুনি দিয়ে ঝাঁকিয়ে উঠল।সিদ্রাত আরশির খোলা পিঠে নাক ঘষতে ঘষতে ঘোর লাগা কন্ঠে বলল…
—”অনেক আবেদনময়ী লাগছে তোমায়..এতোটা সুন্দর না হলেও পারতে।এজন্যই বুঝি আমায় বাইরে পাঠালে”

আরশি বেশ ক্ষানিকটা লজ্জা পেলো।সিদ্রাত আরশিকে নিজের দিকে ঘুরালো।আরশির চোখগুলো বন্ধ।ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট কামড়ে রেখেছে আর ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছে।সিদ্রাত নেশামাখা চোখে আরশিকে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলো।স্লিভলেস ব্ল্যাক নাইটটার বেশির ভাগ অংশই খোলা।পিঠের পেছনে প্রায় কোমর পর্যন্ত উন্মুক্ত।সামনে এক পা পুরোই দেখা যাচ্ছে।গলাটা এতোটাই বড় যে বুকের অংশও প্রায় উন্মুক্ত।সিদ্রাত যেনো তাকিয়েই থাকতে পারছে না।মনে হচ্ছে ওর চোখজোড়া ঝলসে যাচ্ছে।সিদ্রাত আর কিছু না বলে আরশিকে কোলে তুলে নিলো।আরশি সিদ্রাতের বুকের সাথে লেপ্টে রইল।রুমে নিয়ে খুব যতনে আরশিকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।আরশিও সিদ্রাতের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।সিদ্রাত নিজের শরীরে টিশার্টটা খুলে আরশিকে গভীরভাবে নিজের সাথে মিশিয় নিলো।আরশিও আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলল।সিদ্রাত নাইটিটা খুলে ফেলতে নিলেই আরশি লজ্জারাঙা মুখ নিয়ে আস্তে করে বলল…
—”লাইটটা অফ করে দিন না।আমার লজ্জা লাগছে”

সিদ্রাত ঘোর লাগা কন্ঠেই বলল…
—”উহু..আমি আজ সব দেখব,তোমায় আদর করব,পরম ভালোবাসায় তোমায় আপন করে নিবো।আজ কোনো বাঁধা,কোনো না শুনব না..”

সিদ্রাত কথাটা বলেই নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।আরশিও পরম ভালোবাসায় সিদ্রাতকে আকড়ে ধরল….
চলবে….

একদিন দেইনি।আজ কিন্তু বড় করেই দিলাম…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here