হৃদয়ের অন্তরালে তুমি পর্ব ২

# হৃদয়ের _ অন্তরালে _ তুমি ♥♥

# পর্ব : ০২

# লেখক : আয়ান আহম্মেদ শুভ

** আসলে কাগজটা ছিলো ডিভোর্স পেপার । মাহির ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে দেখলো আগে থেকেই মহূয়া এটাতে সাইন করে দিয়েছে । মাহির কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা । আসলেই কি মাহির এতো খারাপ যে তার সাথে থাকা যায় না ? আচ্ছা বিলাসিতার জিবন থেকে সম্পূর্ন ভালোবাসার জিবন কি মোটেও সুন্দর না ? ভালোবাসা কি অর্থ দিয়ে বিচার করা যায় ? সত্যি মাহির আর কিছু ভাবতে পারচ্ছে না । মাহির ডিভোর্স পেপারটা ছুরে মারলো সোফার উপর । হঠাৎই মাহিরের চোখে পরলো একটা লেটারের দিকে । তার মানে ডিভোর্স পেপারের পাশা পাশি মহূয়া আমার জন্য কিছু লিখেওছে ? মাহির লেটারটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো । লেটারে লিখা ছিলো

— দেখো মাহির আমি সব কিছু ভেবে চিন্তে এই সিধান্ত নিয়েছি । তোমার সাথে আর এক সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না । তাই ডিভোর্স পেপারটা সাইন করে পাঠিয়ে দিলাম । প্লিজ আমাকে মুক্তি দাও

** মাহির লেটারটা পরে একটা অৎভূত হাসি দিলো । এই হাসির রহস্য কি ! তা একমাত্র মাহিরই জানে । যাই হোক মাহির সোফার কাছে গিয়ে ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে নিজেকে নিজে বললো

— মহূয়া তুমি বলেছো আমি না কি তোমার কোনো ইচ্ছেই পূরন করি নাই কখনও । হুম তবে আজ আমি তোমার ইচ্ছে অপূন রাখবো না । আমার যতই কষ্ট হোক না কেনো তোমার ইচ্ছে পূরন করবো

✒ মাহির কথা শেষ করতেই একটা পেন হাতে নিয়ে ডিভোর্স পেপার সাইন করে দিলো । মাহির যখন ডিভোর্স পেপারটা সাইন করচ্ছিলো তখন মাহিরের চোখের নিচে পানি টল টল করচ্ছিলো । যতই হোক প্রীয় মানুষকে হারানোর কষ্ট টা অন্য সকল কষ্টকে হারমানায় । ডিভোর্স পেপার সাইন করে মাহির নিজের ব্যাগ পত্র গুছিয়ে মালিহাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পরলো বাসা থেকে । মালিহা এখন ঘুমাচ্ছে কিন্তু যখন ও ঘুম থেকে উঠে মা এর জন্য কাঁন্না করবে তখন কি করবে মাহির ? এমনিতেই মালিহার যেই বয়স সে বয়সে মা এর দুধ খেতে দিতে হয় । মাহির এই বাচ্চার খাওয়ার ব্যবস্থা কি করে করবে ? মাহির আর কিচ্ছু ভাবতে পারচ্ছে না । মাহির মালিহাকে কোলে নিয়ে সোজা চলে এলো বাস স্টান্ডে । এই অভিনয়ের , বিষাক্ত শহরে মাহির না নিজে আর এক মূহুর্ত থাকবে । না নিজের মেয়ে মালিহাকে এক মূহুর্ত থাকতে দিবে । মাহির চলে যাবে তার নিজের মা বাবার কাছে । সেই গ্রামে , সেই আপনজনদের কাছে । যাদের ছেরে ছিলো সে মহূয়ার জন্য ।

* যাই হোক বাস স্টান্ডে এসে মাহির নির্দিষ্ট বাসে উঠে নিজের সিটে বসে পরলো । মাহিরের কোলে মালিহা । মালিহা প্রচুর পরিমানে কাঁন্না করচ্ছে । মাহির যখন বাসা থেকে বেরিয়ে পরে ঠিক তখন থেকে মালিহা কাঁন্না করচ্ছে । মাহির অনেক চেষ্টা করচ্ছে মালিহাকে থামানোর কিন্তু কোনো ভাবেই মালিহা থামচ্ছে না । বাসে থাকা কিছু মানুষ মাহিরের দিকে অৎভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো । মাহির বুঝে উঠতে পারচ্ছে না কি করে সে মালিহার কাঁন্না থামাবে ? মাহির মালিহাকে বুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকলো । কিছুক্ষন বাদে একজন লোক মাহিরকে উদ্দেশ্য করে বললো

— এই যে ভাই এই বাচ্চাটা কি আপনার ? সেই কখন থেকে দেখতেছি বাচ্চাটা কাঁন্না করে যাচ্ছে । ওর মা কোথায় ?

— হুম ভাই বাচ্চাটা আমার আর ওর মা নেই

মাহিরের এমন কথা শুনে মাহিরের পিছনের সিটে বসে থাকা একজন মহিলা বলে উঠলো

— নেই মানে ? কোথায় উনি ? আরে ভাই এই বাচ্চাটা অনেক ছোট । ওর ক্ষিদে পেয়েছে । সেই জন্য কাঁন্না করচ্ছে । ওর মা এর কাছে নিয়ে যান

— আপনারা বুঝতে পারচ্ছেন না কেনো ওর মা নেই । বার বার একই প্রশ্ন করে আমাকে বিভ্রান্ত করছেন কেনো ? ( চিৎকার করে )

— আচ্ছা ওর মা নেই মানে বুঝতে পারলাম না । সে কোথায় ?

— চলে গেছে আমাকে ছেড়ে

— ওহহহ আমরা সত্যি দুঃখিত আসলে আমরা সবাই ভেবেছি অন্য কিছু

— দুঃখিত হওয়ার কিছু নাই ওর মা বেঁচে আছে তবে অন্য কারো সাথে

মাহিরের এই কথাটা শোনার পরে বাসে বসে থাকা প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষ মাহিরের দিকে তাকালো । আসলে সবাই একটু অবাক হয়ে গেছে । কারন এতো ছোট্ট বাচ্চা রেখে কেউ কি কখনও বিশেষ করে কোনো মা কি তার এতো ছোট বাচ্চাক ফেলে চলে যায় !!! এরকম দুধের শিশুকে ফেলে চলে যেতে সেই মা এর একটুও কষ্ট হয় নাই ? এতোক্ষন সবাই নিজের মতো করে মাহিরকে জাজ করেছে কিন্তু এখন সবাই মাহিরের মুখ থেকে সম্পূর্ন ঘটনা শোনার জন্য উদগ্রিব । মাহিরের পাশে বসে থাকা একজন লোক বললো

— ভাই বিষয় কি ? একটু খুলে বলবেন ?
* মাহির একে একে তার সাথে ঘটে যাওয়া সম্পূর্ন ঘটনা বাসে বসে থাকা সকলের সাথে শেয়ার করলো । মাহির কথা গুলো বলতে গিয়ে নিজের চোখের পানি আটকাতে পারলো না । মাহির তার সাথে হওয়া প্রতারনা , অর্থ ও বিলাশিতার জন্য ছেড়ে যাওয়া , মালিহাকে মায়ের স্নেহ থেকে বন্চিত করা , এই সবের সম্পূর্ন বর্ননা দিলো সকলকে । মাহির নিজের কথা শেষ করতেই সকলের মুখের দিকে তাকালো । সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে মাহিরের কথা শুনে

✒ যাই হোক বাস তার আপন গতিতে ছুটতে থাকে । মাহির চুপ চাপ বসে আছে মালিহাকে কোলে নিয়ে । ইতি মধ্যে মালিহাকে একটা ফিডারে গরুর দুধ দিয়ে খায়িছে মাহির । মালিয়া এখন নিরবে ঘুমাচ্ছে । মাহির ফেলে আসা কিছু সৃতি কল্পনা করচ্ছে । কতটা সুন্দর ছিলো তার স্বপ্নের পৃথিবী…………………………

✒ যাই হোক বিকেলের দিকে বাস পৌঁচ্ছালো মাহিরের নির্দিষ্ট ঠিকানায় । মাহির মালিহাকে নিয়ে নেমে পরে বাস থেকে । মাহির একটা শান্তির নিঃশ্বাস নিলো । কারন মাহির চলে এসেছে তার সেই চিরচেনা শহরে । মাহির পথ চলতে শুরু করলো । মাহির ভাবচ্ছে এতো দিন পরে মাহিরকে ওর মা বাবা দেখলে কি করবে ? তারা কি মাহিরের পাশে থাকবে ? নাকি দুর দূর করে তারিয়ে দিবে ? না মাহির খুব ভালো করে জানে তার মা বাবা এমনটা করবে না কারন তারা তাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে । তবে এটা ঠিক একটু অভিমান করবে হয়তো । আসলে তাদের অমতে একটা ভূল করে ফেলেছি তো । যাই হোক মাহির চলতে চলতে চলে এলো নিজের বাড়ির সামনে । বাড়ির সামনে আসতেই মাহির দেখতে পেলো তার মা উঠোনে বসে আছে । মাহির বাড়িতে ঢুকতেই তার মা বসা থেকে উঠে দারালো । মাহিরের মা মাহিরকে বললো

— মাহির তুই….!!!

— মা

* মাহির কোনো কথা বলতে পারচ্ছে না । মাহির দৌরে গিয়ে মাহিরের মা কে জরিয়ে ধরে কাঁন্না করতে থাকলো । মাহিরের কোল থেকে মালিহাকে নিয়ে গেলো একটা অপরিচিত মেয়ে । যাই হোক মাহির কেঁদেই চলেছে থামচ্ছে না । কারন আজ মাহিরের বুকে পাহাড় সমান কষ্ট । মাহির এই পাহাড় সমান কষ্টাকে আর বহন করতে পারচ্ছে না । হালকা করতে চাচ্ছে সে , নিজের কষ্ট গুলো থেকে । ঐ দিকে মাহিরের কাঁন্নার শব্দে উঠোনে চলে এলো মাহিরের বাবা । মাহিরের বাবা এসে মাহিরকে দেখে বললো

— এতো বছর পর কিসের জন্য এসেছিস তুই এখানে ? আবার নতুন কোন নাটক শুরু করেছিস তুই ? আমরা তোকে ভূলে গেছি । দয়া করে বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে ( রাগ দেখিয়ে চিৎকার করে )

মাহির ওর মাকে ছেড়ে দিয়ে বাবার মুখের দিকে তাকালো । অনেকটা অভিমান জমে আছে তার হৃদয়ে যা স্পষ্ঠ দেখা যাচ্ছে মাহিরের বাবার চোখে । মাহির কোনো কথা না বলে দৌরে গিয়ে বাবাকে জরিয়ে ধরলো । মাহিরের বাবা মাহিরের এমন কাজে ভিষন অবাক হয়ে গেলো । মাহিরের বাবা মাহিরকে বললো

— কি হয়েছে তোর ? ( মাহিরের মাথায় হাত দিয়ে )

— বাবা………… ( কাঁন্না করতে করতে )

— কাঁদিস না বাবা । তুই কাঁন্না করলে আমাদের ভিষন কষ্ট হয় । জানিস ছোট বেলায় তুই যখন কাঁদতিস তখন আমি তোকে কাঁধে নিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরাতাম । জানিস মাহির তখন তুই প্রচুর হাসতিস । তুই এতো দিন ছিলিস না আমাদের কাছে । প্রতিদিন আমাদের কাঁদতে হতো তোর কথা ভেবে ।

** মাহিরের বাবার কথা গুলো শুনে মাহিরের আরও বেশি কাঁন্না চলে এলো । এতো ভালোবাসা পেয়েও কেনো সে ওই মিথ্যে ভালোবাসার পিছনে ছুটলো ? এটা ভাবতেই মাহির কাঁন্নায় ভেঙে পরে

** রাতের দিকে মাহির খাবার টেবিলে বসে তার মা বাবাকে সম্পূর্ন ঘটনা বললো । মাহিরের মা বাবা সব সময়ের মতো এবারও মাহিরকে বললো

— দেখ মাহির আমরা সব সময় তোর পাশে আছি । আর কষ্ট পাস না তুই । মালিহাকে নিয়ে নতুন করে জিবন শুরু কর

— হুম বাবা , তোমরা আর আমার মেয়ে ছাড়া এই পৃথিবীতে কেই বা আছে আমার ? আজ থেকে নিজের জিবন নতুন করে শুরু করবো ।

✒ যাই হোক রাতে মাহির মালিহাকে কিছু খাবার দিলো । অতপর বাবা মেয়ে মিলে শুয়ে পরলো । মালিহা ঘুমাচ্ছে আর মাহির এখন ও মহূয়ার কথা ভাবচ্ছে । কেমন আছে মহূয়া ? আমাকে কি ভূলে গেছে ? মালিহার কথা কি ওর মনে পরে না একটুও ? আচ্ছা ও কি আবারও ফিরে আসবে ? যদি ও ফিরে আসে তখন কি আমার ওকে মেনে নেওয়া উচিত ? হাহাহা কত বোঁকা আমি এখন তো ও ভালোই আছে । ওর সব শখ , ইচ্ছে উজ্জল পূরন করচ্ছে । মালিহার কথা মনে পরলে কখনও যেতো না । না আর যাই হোক চরিত্রহিন , লোভি নারীর সাথে জিবন চলা যায় না । আর কখনও পিছন ফিরে তাকাবো না আমি । মাহির এসব কথা ভাবা বন্ধ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো

** সকালে ঘুম থেকে উঠে মাহির দেখতে পেলো বিছানায় তার মেয়ে মালিহা নেই । মাহির ভিষন ভয় পেয়ে গেলো । কারন মালিহা মাহিরের জিবন । বেঁচে থাকার শেষ সম্বল । মাহির মালিহাকে পাগলের মতো খুঁজতে থাকে রুমের প্রত্যেকটা কোনায় । কিন্তু মালিহাকে খুঁজে পেলো না । অতপর মাহির দৌরে রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে চলে যায় নিজের মা বাবার রুমে । সেখানে গিয়ে মাহির মাহিরের মা বাবাকে উদ্দেশ্যে বললো

— বাবা মালিহাকে তোমরা দেখেছো ?

— না তো মালিহা তো তোর কাছেই ছিলো

— হ্যা বাবা কাল রাতে ও আমার পাশেই ছিলো কিন্তু সকাল বেলা মালিহাকে দেখতে পেলাম না বিছানায় ।

— তুই নিজের রুমটা ভালো করে খুঁজে দেখ বাবা

— বাবা খুঁজেছি কিন্তু পাইনি । ওফ আল্লাহ এখন আমি কি করবে ? কোথায় খুঁজবো মালিহাকে ?

✒ মাহির মাথা ভর্তী টেনশন নিয়ে নিজের মেয়েকে খুঁজতে থাকে । ঘন্টা খানেক পার হয়ে গেলো কিন্তু মাহির মালিহাকে কোথাও খুঁজে পেলো না । মাহিরে টেনশন এখন চরম পর্যায় । মাহির পাগলের মতো খুঁজতে খুঁজতে চলে এলো বাড়ির পাশে পুকুরে কাছে । পুকুর পারে আসতেই মাহির দেখতে পেলো………………………..

# চলবে……………………….

( কেমন লাগলো পর্বটা ? জানান । আর হুম গঠন মূলক মন্তব্য আশা করচ্ছি । পরবর্তী পর্ব আশা করি আরও ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করবো )

# Happy Reding ♥♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here