#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ২৩+২৪
বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ পাচ্ছে শান্ত। নিশ্চয়ই বাড়ির সব ছোটগুলো একসাথে হয়েছে। এদের নিয়ে কী যে করবে শান্ত। এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির ভিতরে ঢুকে। দেখেছ এদের কান্ড, বাড়ির সদর দরজা খোলা। যা ভেবেছিল তাই! সবগুলো খাবার টেবিলে বসে চেঁচামেচি করে যাচ্ছে। শান্তকে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে দেখে সবাই এক নজর শান্তর দিকে তাকায়। মিরা ছোটদের খাবার বেড়ে দিতে দিতে শান্ত কে উদ্দেশ্য করে বলল,
—-” জান্নাত কে ঠিক ভাবে পৌঁছে দিয়েছে এসেছিস?”
শান্ত মাথা দুলিয়ে বলল,
—-” হ্যাঁ আন্টি।”
মিরা শান্তর দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” কোন সমস্যা হয়নি তো?”
শান্ত মৃদু স্বরে বলল,
—-” না, তবে জান্নাতের মা জান্নাতের কথা ভেবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। জান্নাতের বাবা তাকে ডাক্তার দেখিয়েছেন এখন সবকিছু নিয়ন্ত্রনে আছে।”
অনু আফসোস করে বলল,
—-” আহারে এ কয়দিন তার ওপর দিয়ে কী ঝড় গেছে একমাত্র আল্লাহই জানে।”
মিরা শান্তর দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” এখন আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকিস না। যা গিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ওদের সাথে খেয়ে নে।”
শান্ত জবাবে বলল,
—-” আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
শান্ত আর কথা না বাড়িয়ে রুমের দিকে হাঁটা শুরু করে।
______________________________
মিরান গাড়ি চালানোর মাঝে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকায়। তুলি কানে ইয়ারফোন গুঁজে গান শুনছে। হয়তো আবারও জালিম ফালিমের গানটা শুনছে। মিরান আর একটু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে। তোহা হাবিব কে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে আর হাবিব তোহার গায়ের মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। মিরান সোজা হয়ে বসে আবার গাড়ি চালাতে শুরু করে। মেয়েটা কে এতদিন শুধু গুন্ডি ভেবে এসেছে কিন্তু মেয়েটার যে এত ভালো একটা মন আছে তা বুঝতে পারিনি মিরান। ওর মাম্মা পাপার দ্বিতীয় ম্যারেজ ইউনিভার্সিটি পর তার একটা এতিম খানা তৈরি করে তারা। মিরান চেয়েছিল হাবিবকে আজ রাতে ওখানে দিয়ে আসতে। কিন্তু মাঝে তোহা বাধ সাধলো। এত রাতে হাবিব কে ওখানে পাঠানোর দরকার নেই। আপাতত ওদের সাথে ময়মনসিংহে চলুক তারপরে ফিরে এসে একটা ব্যবস্থা করা যাবে। তোহার কথা মিরানের মতে ধরে। তাই হাবিবকে সঙ্গে নিয়ে ওরা ময়মনসিংহের যাচ্ছে। মিরানের ভাবনার সমাপ্তি ঘটে তুলির কথায়। তুলি ইয়ারফোন খুলে মিরানের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” ভাইয়া আর কতক্ষণ লাগবে আমাদের পৌঁছাতে?”
মিরান মৃদু স্বরে বলল,
—-” আর আধাঘন্টা সময় লাগতে পারে। কেন?”
তুলি ছোট করে বলল,
—-” এমনি ভাইয়া।”
মিরান আর কিছু না বলে গাড়ি চালানোতে মন দেয়। আর তুলি আবারো ইয়ারফোন কানে গুঁজে গান শুনতে শুরু করে।
______________________________
ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে যতই কথা বলুক না কেন? কথা বলার সমাপ্তিতে মনে হয় আর একটু কথা বললে হয়তো ভালো হতো। আরো কত না বলা কথা রয়ে গেছে মনের চিলেকোঠায়। অনন্যার বেলায়ও এর ব্যাতিক্রম কিছু না। অনন্যার কাছের মানুষটি থাকে সেই সাত সাগর তের নদী পরে। গভীর রাত ছাড়া মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায় না অনন্যা। সারাদিন মানুষটা কাজে ব্যস্ত থাকে সন্ধ্যার পরে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে শুরু হয় ওদের ফোন আলাপ। প্রতীকের কথা অনন্যাদের বাড়ির সবাই জানে। তাদের এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি হওয়ার কথা নয়। প্রতীকের মতো ছেলে হয় না। প্রতীক তার বাবার ব্যবসা থাকা সত্বেও আর্মিতে চাকরি করে। ইতিমধ্যে তার সাহসিকতার জন্য নানা সম্মাননা সম্মানিত করা হয়েছে তাকে। হাজার মাইল দূরে থেকেও অনন্যার খেয়াল রাখে সে। প্রেম আর প্রিয়ার একমাত্র ছেলে প্রতীক। অনন্যার এক বছরের জন্মদিনে প্রেম আর প্রিয়া প্রতীক কে সাথে নিয়ে দেশে আসে। প্রতীক অনন্যার জন্মদিনের দিন প্রথম অনন্যা কে দেখে। ওইটুকু বয়সে প্রতীকের মনে অনন্যার জন্য কেমন অনুভূতি হয়েছিল তা শুধু ঐ জানে। প্রতীক অনন্যা কে প্রথম কোলে নিয়েই শব্দ করে চুমু দিয়েছিল গালে। তখন প্রতীকের এমন পাগলামিতে উপস্থিত সবাই হেসে দিয়েছিলো। তখন থেকে প্রতীক ওকে লিটিল এঞ্জেল বলে ডাকে। ধীরে ধীরে অনন্যা বড় হতে শুরু করে আর অন্যদিকে প্রতীকের পাগলামি বাড়তে শুরু করে। অনন্যা যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন কোনো কারণবশত অনন্যা পুরো পরিবার লন্ডনে চলে যায়। সেখানকার স্কুলে ভর্তি করানো হয় অনন্যা কে আর ওর ভাইয়াকে। নতুন ক্লাস ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন বন্ধু বাড়তে শুরু করে অনন্যা। এর মধ্যে একটা ছেলে বন্ধু ছিল অনন্যার লন্ডনের স্থায়ী বাসিন্দা। নামটা ছিল হ্যারি বা হ্যানরি। নামটাও ঠিক মত মনে নেই অনন্যার। ছেলেটা যে অনন্যা কে পছন্দ করত তা অনন্যা বুঝতে পারতো কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে অনন্যা তাকে কখনো কিছু বলেনি। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন প্রতীক এসব কথা জানতে পারে। ব্যাস লংকা কান্ড বাধায় বাড়িতে। সেই মুহূর্তে কিছুতেই শান্ত করা যাচ্ছিল না তাকে। তার একটাই কথা তার লিটিল এঞ্জেল তার থেকে একটু একটু করে দূরে চলে যাচ্ছে। সে তার দূরত্ব মানতে পারছে না কিছুতেই। অনন্যার মাম্মা পাপা আর প্রতীকের মাম্মা পাপার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে প্রতীক কেঁদে কেঁদে অনন্যা কে চেয়েছিল ওর জন্য। প্রতীকের সেই অবিশ্বাস্য কান্না দেখে মন নরম হয় ছিল ওদের মাম্মা পাপাদের। কিন্তু তারপরও অনন্যার মাম্মা প্রতীকের চোখের পানি মুছে দিয়ে বেশ গম্ভীর গলায় বলেছিল সেদিন, আমার মেয়েকে তো আর যেমন-তেমন ছেলের কাছে বিয়ে দিতে পারিনা? আমার মেয়েকে যার কাছে বিয়ে দেবো সে সবথেকে সেরা হবে। তাই তুমি লেখাপড়া কমপ্লিট করে এমন কিছু করো যা দেখে আমার মনে হয় তুমি আমার মেয়ের জন্য বেস্ট। তখন আমি নির্দ্বিধায় তোমার হাতে আমার মেয়েকে তুলে দিবো। ব্যাস এই কথার পর থেকে প্রতীক মন দিয়ে লেখাপড়া করতে শুরু করে। লেখাপড়া শেষ করার পরে সবাই বলেছিল ওর বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করতে। কিন্তু প্রতীক ব্যবসা দেখাশোনা না করে আর্মির চাকরির জন্য অ্যাপ্লাই করে। এদিকে অনন্যার ভাইয়ার ডাক্তারি পড়া শেষ হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। এখন সে দেশে ফিরতে চায়। অন্যান্য দেশে ফেরার ঠিক এক মাস আগে প্রতীক অনন্যা কে প্রপোজ করে। অনন্যা উত্তরে হ্যাঁ, না কিছু না বলে বলেছিল ‘ভেবে বলবে’। প্রতীক মন খারাপ করে অনন্যাকে কিছু না বলে ট্রেনিংয়ের জন্য চলে। প্রতীক চলে যাওয়ার তিন দিন পরে অনন্যা জানতে পারে প্রতীকের ট্রেনিংয়ে চলে যাওয়ার কথা। এ কথা শোনার পর থেকে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে ধরেছিল ওকে। বারবার প্রতীকের করা পাগলামিগুলো মনে পড়ছিল। দুদিন যেতে না যেতেই অনন্যা প্রতীকের জন্য ভেঙে পড়ে। অনন্যা ওর ভাইয়া সাহায্য নিয়ে প্রতীক এর ট্রেনিং এর জায়গায় চলে যায়। মিরান ব্যবস্থা করে অনন্যা আর প্রতীকের দেখা করানোর জন্য। ঐদিনের অনন্যা প্রতীক কে ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলে দেয়। ওই থেকে শুরু ওদের পথ চলা। এখন শুধু প্রতীকের একটাই অপেক্ষায় অনন্যার লেখাপড়া শেষ হলে ওকে ওর রাজ্যের রানী করে নিয়ে যাবে। এইসব পুরনো কথা ভেবে অনন্যা শব্দ করে হাসতে শুরু করে। ফোনের ওপাশ থেকে প্রতীক ভুরু কুঁচকে বলল,
—-” হঠাৎ এমন করে হাসতে শুরু করলে কেন?”
অনন্যা ঠোঁট চেপে হাসি আটকিয়ে বলল,
—-” একটা পাগলের কথা মনে পড়েছে তাই!”
প্রতীক ভুরু আরেকটু কুঁচকে বলল,
—-” পাগল! হঠাৎ তোমার কোন পাগলের কথা মনে পড়লো? আর তুমি এই ভাবে হেসে টিয়ার ঘুমের ডিস্টার্ব করছ কেন?”
অনন্যা ভেঙ্গিয়ে বলল,
—-” আপনাকে আর আপনার শালির জন্য চিন্তা করতে হবে না। আপনার শালি এখন আমার পাশে নেই। সে নিচে হল রুমে বসে মুভি দেখছে। আমিও ছিলাম তার পাশে পরে আপনার ফোন পেয়ে ওর পাশ দিয়ে উঠে আসি।”
অনন্যার কথা শুনে প্রতীক হাসে। শব্দ করে হাসে। হাসির প্রতিটা শব্দ অনন্যার বুকে শীতলতা এনে দেয়। প্রতীক হাসি থামিয়ে বলল,
—-” তোমার বাচ্চা মেয়ের মত কথা বলা এখনো গেলো না। এখনো সেই ছোট্ট টি রয়ে গেলে।”
অনন্যা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
—-” আমার এই সবকিছুর জন্য পাগল একজন জানেন আপনি?”
প্রতীক মৃদু স্বরে বলল,
—-” কে সে?”
অনন্যা ঠোঁট ফুলিয়ে হেসে বলল,
—-” আছে কেউ একজন, সে আমাকে ছোটবেলা থেকে ভালোবাসে। আমার জন্য কোনটা ভাল তা আমার থেকে বেশি জানে। আমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় সেই ছোটবেলায় আমার মাম্মা আর পাপার কাছ থেকে আমাকে চেয়ে নিয়েছে।”
প্রতীক লাজুক গলায় বলল,
—-” এখনো তোমার ওই সব কথা মনে আছে?”
অনন্যা মৃদু স্বরে বলল,
—-” বারে আমার পাগলের কথা আমি কখনো ভুলতে পারি?”
অনন্যার কথা শুনে প্রতীক চুপ হয়ে যায়। অনন্যার বলা কথাগুলো ওর হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। কিছু মুহূর্ত চুপ থেকে তা উপলব্ধি করতে চায় প্রতীক। এরমধ্যে প্রতীকের কানে যায় ফোনের ওপাশ থেকে গাড়ির শব্দ। প্রতীক কৌতুহলী হয়ে বলল,
—-” গাড়ির শব্দ? এত রাতে আবার কে এলো?”
অনন্যা ধীর গলায় বলল,
—-” ভাইয়া ভাবি এসেছে হয়তো। আচ্ছা এখন ফোন রাখছি আমি। নিচে গিয়ে দেখে আসি কে এসেছে!”
প্রতীক মৃদু স্বরে বলল,
—-” ঠিক আছে।”
ফোন কাটে না কেউ দুজনের মাঝে নীরবতা। প্রতীক জানে অনন্যা তার মুখে ভালোবাসি না শুনে ফোন কাটবে না। প্রতীক আর অনন্যাকে অপেক্ষা না করিয়ে মাতাল কন্ঠে বলল,
—-” আই লাভ ইউ লিটল এঞ্জেল!”
অনন্যা চোখ বুজে শব্দগুলোর গভীরতা অনুভব করছে। মাত্র তিনটি শব্দ! এই শব্দ তিনটি একদিন না শুনলে সবকিছু কেমন বিষাদ ময় লাগে ওর কাছে। চোখ খুলে অনন্যা, প্রতীকের বলা কথার উত্তর দিতে হবে তাকে। ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,
—-” আই লাভ ইউ মিস্টার উঠবি হাসবেন্ড!”
অনন্যার কথা শুনে প্রতীক প্রতিবারের মতো এক গাল হেসে দেয়। আর অনন্যা লজ্জায় ফোন কেটে দৌড় দেয় নিচে হল রুমের দিকে।
______________________________
রাত তিনটের বেশি বাজে। এক ভয়ানক দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে যায় তাসলিমা। ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠে এক হাত নিজের বুকে দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে তাসলিমা। কী ভয়ানক দুঃস্বপ্ন দেখল সে? তার আদরের কলিজার টুকরো মেয়ে কুয়াশার আড়ালে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে চোখ যায় বাম হাতের দিকে। কেউ একজন শক্ত করে ধরে আছে হাত টা। তাসলিমা হাতের মালিকের দিকে তাকায়। জান্নাত? ও এখানে কী করে এলো? না কী ও স্বপ্ন দেখছে? বাস্তবতা আর স্বপ্নের মাঝে তফাৎ খোঁজর জন্য তসলিমা কাঁপা কাঁপা হাত এগিয়ে দেয় জান্নাতের দিকে। জান্নাতের গালে হাত রেখে চোখের পানি ছেড়ে দেয় তাসলিমা। মেয়েটার চোখের কোণে কেমন পানি শুকিয়ে দাগ পড়ে আছে। হয়তো অনেকক্ষণ ধরে কান্নাকাটি করেছিল। তাসলিমা চোখের পানি মুছে মাথা নুইয়ে জান্নাত কে চুমুতে ভরিয়ে দিতে শুরু করে। মিনিট কয়েকের মধ্যে জান্নাত ঘুম থেকে উঠে পড়ে। মায়ের পাশে বসে থাকতে থাকতে কখন যে চোখটা লেগে গেছিল বুঝতে পারিনি জান্নাত। হঠাৎ গরম গরম নিঃশ্বাস ভিজে ভিজে কিছু নিজের মুখের উপর পড়ার তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়ে জান্নাত। তাকিয়ে দেখে ওর মা ওকে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে আর চোখের পানিগুলো জান্নাতের মুখের উপর আছড়ে পড়ছে। জান্নাত ওর মায়ের চোখে পানি দেখে তড়িঘড়ি উঠে পড়ে ওর মায়ের হাত ধরে বলল,
—-” মা কী হয়েছে তোমার? কান্না করছো কেন তুমি?”
জান্নাতের মা জান্নাতের কথা শুনে বুঝতে পারে জান্নাত স্বপ্নে নয় বাস্তবে তার সামনে বসে আছে। হঠাৎ করে জান্নাতের মা জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দেয়। জান্নাতের মায়ের কান্না শুনে জান্নাতের বাবা ঘুম থেকে উঠে উত্তেজিত হয়ে বলল,
—-” কী হয়েছে কান্না করছো কেন তুমি? এই দেখো তোমার জান্নাত তোমার সামনে আছে?”
জান্নাত মা কোনমতে কান্না থামিয়ে জান্নাতের দুই গালে হাত দিয়ে ওর কপালে আলতো চুমু দিয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল,
—-” কোথায় হারিয়ে গেছিলিস তুই? জানিস আমার কী অবস্থা হয়েছিল তোকে ছাড়া?”
জান্নাতের বাবা জান্নাতের মাকে একে একে সব কিছু খুলে বলে। শান্ত কিভাবে জান্নাতে খুঁজে পেল, কিভাবে ওদের কাছে পৌছে দিয়ে গেলো। সবকিছু খুলে বলে। সবশুনে জান্নাতের মা কৃতজ্ঞতার কন্ঠে বলল,
—-” ওর কাছে তো আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।তুমি একদিন ওকে সময় করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসো।”
জান্নাতের বাবা মৃদু স্বরে বলল,
—-” সে না হয় নিয়ে আসব কিন্তু তুমি এখন ঘুমাও। কিছুক্ষণ আগে তোমার স্যালাইন শেষ হয়েছে এখন তোমার ঘুমানো প্রয়োজন।”
জান্নাতের বাবার কথা শুনে জান্নাতের মা জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে বলল,
—-” এই নাও আমি ঘুমিয়ে পড়েছি এবার তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো!”
জান্নাতের বাবা মন খারাপের অভিনয় করে বলল,
—-” মা মেয়ে মিলে আমাকে এমন বাতিলের খাতায় ফেলে দিলে?”
জান্নাত জান্নাত এর বাবার কথা শুনে শব্দ করে হেসে বলল,
—-” তুমি সেই হিংসুটে রয়ে গেলে বাবা! তুমি বরং মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরো।”
জান্নাতের কথা শুনে জান্নাতের বাবা হেসে জান্নাতের মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
—-” এই না হলে আমার মেয়ে!”
জান্নাতের বাবার কথা শুনে জান্নাতের মা আর জান্নাত শব্দ করে হেসে দেয়।
______________________________
হঠাৎ কারও চিল চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় শান্তর। ঘুম ঘুম চোখে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় আশপাশ তাকায়। রুমে তো কিছু নেই তাহলে? বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে। বাইরে কেউ বা কারা দৌড়াদৌড়ি করছে। শান্ত বিছানা ছেড়ে উঠে দরজার খুলে দাঁড়ায়। না কাউকে তো দেখতে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি দেখি কেউ এদিকে আসে কী না! লম্বা হাই তুলে পিটপিটে চোখে তাকায়, ঐ মিরু আসছে এদিকে। শান্ত মিরুকে ডাক দিয়ে বলল,
—-” এই মিরু এদিকে আয় তো।”
অনন্যা শান্তর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
—-” হ্যাঁ ভাইয়া বলো।”
শান্ত কোমরে হাত দিয়ে বলল,
—-” বাড়িতে কী হয়েছে বলত তো? এত চেঁচামেচি কিসের?”
অনন্যা ঠোঁটে হাসি এনে বলল,
—-” হয়েছে তো অনেক কিছু কোনটা রেখে কোনটা বলবো তোমাকে?”
শান্ত চোখ ছোট ছোট করে বলল,
—-” মানে কী হয়েছে একটু খোলসা করে বল তো?”
অনন্যা ঠোঁটের হাসি আরেকটু প্রসারিত করে বলল,
—-” মানে তোহা ভাবি আর ভাইয়া বাড়িতে এসেছে কিছুক্ষণ আগে আর সঙ্গে ভাবির বোনও এসেছে। কিন্তু সবথেকে বড় কথা হলো হাবিব….
শান্ত কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে বলল,
—-” তোহা ভাবি মানে?”
অনন্যা মৃদু স্বরে বলল,
—-” ওমা তুমি জানো না? তোহা ভাবি ভাইয়াকে ভালোবাসে। ইভেন মাম্মা পাপা দু’জনেই রাজি আছে।”
শান্ত বিস্ময় গলায় বলল,
—-” মিরান জানে এসব কথা?”
অনন্যা ধীর গলায় বলল,
—-” না ভাইয়া এখনো কিছু জানেনা। তবে শুনেছি কাল সন্ধ্যার পর ভাবি ভাইয়াকে প্রপোজ করবে।”
শান্ত কিছুক্ষণ ভেবে অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” তুই যা এখন, আমার ঘুম পাচ্ছে।”
অনন্যা আর কিছু না বলে ওখান থেকে চলে যায়। শান্ত ওখানে দাঁড়িয়ে একা একা বিড়বিড় করতে শুরু করে। তোহার সঙ্গে ওর কথা বলতে হবে। তোহা কী আবেগের বশে মিরানের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চাইছে? তাহলে তোহা ভুল মানুষকে পছন্দ করেছে। মিরান মজা করার পত্র নয়। আর যদি তোহা মিরানকে সত্যি ভালোবেসে থাকে তাহলে ওকে মিরানের সম্পর্কে সবকিছু খুলে বলতে হবে। কাল সকাল সকাল ওকে তোহার সঙ্গে কথা বলতে হবে।
চলবে…..