প্রেমময়নেশা 💙পর্ব ৫৪+৫৫

#প্রেমময়নেশা(The story of a psycho lover)
#পর্ব- ৫৪( অতীতের রহস্য-সমাধান)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অতীত,,,

সুপ্তি কিছু বলবে তার আগেই মল্লিকা তার মুখে চেপে ধরে। তারপর
আর কিছু মনে নেই তার।

যখন সুপ্তির জ্ঞান ফিরে তখন সে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে।

সুপ্তিঃ আমি এখানে কীভাবে??

মল্লিকাঃ আমি এনেছি তোকে।

সুপ্তিঃ এইসব এর মানে কি মল্লিকা?

মল্লিকাঃ এখন থেকে তোকে এই হসপিটালেই পচেঁ মরতে হবে আর খান বাড়িতে নিদ্রকে বিয়ে করে আমি রাজ্যত্ব করবো।
সবাই জানবে তুই

তোর কোনো প্রেমিক এর সাথে পালিয়ে মারা গিয়েছিস।
নিদ্র একেবারে ভেজ্ঞে পড়বে। সেই সুযোগ ই আমি নিবো
নিদ্র আর তোর ছোট ছোট বাচ্ছাদের
সামলানোর জন্য আমি অই বাড়িতে বউ হয়ে ঢুকবো।

সুপ্তিঃ ছিহ মল্লিকা তোকে আমি বন্ধু মনে করেছিলাম আর তুই?
আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকা করলি?

মল্লিকা ঘর কাঁপিয়ে হেঁসে উঠলো–
তাইনা?? এই বিশ্বাসঘাতকতা আমি তোর বড় বোনের থেকেই শিখেছি।
আমার জীবনটা পুরো শেষ করে দিলো।

খুব ভালোবাসে না তোকে? তোর বড় বোন।
তোর এমন অবস্হা করবো নাহ সারাজীবন মনে রাখবি।

এইখানে অসুস্হ হয়ে পড়ে থাক।

(মল্লিকা যখন খান বাড়িএ বউ হলো তখন মিসেস কলি নিদ্র এর সাথে সমস্ত সম্পর্ক নস্ট করে দেয়।
কারন মিসেস কলির মনে হচ্ছিলো এর পিছনে নিশ্চই মল্লিকার কোনো চক্রান্ত আছে)

বর্তমান,,

।সুপ্তি আবারও বলে উঠলো–
মল্লিকার প্লান অনুযায়ী সে এই খান বাড়ির বউ হলো।
আর আমার ছেলেদের ক্ষতি করতে থাকলো।
সবার কাছে সে ঠিকই ভালো সেঁজে থাকতো কিন্তু তার সে শুধু ক্ষতি করতেই এসেছিলো।

এমনকি আমার বড় ছেলেকেও মেরে ফেললো।

এই বলে ঢুকরে কেঁদে উঠলো
সুপ্তি।

আমান বলে উঠে–

এমনি এমনি মিসেস মল্লিকা
আয়ুশ কে মারেনি।
তার পিছনেও একটা কারন আছে।

অয়ন বলে উঠে–

আয়ুশ কোনোভাবে যেনে গিয়েছিলো
তার মা মিসেস মল্লিকার কাছে আছে।
এবং ইশানকেও সায়েরী ফাঁসিয়েছে।
মিসেস মল্লিকা ই এইসব এর পিছনে আছে।
কিন্তু আয়ুশের কাছে তেমন প্রমান ছিলো নাহ।
অতীত এর কিছু একটা কানেকশন তো আছেই। তাই আয়ুশ বাংলাদেশে আমার মায়ের কাছে(মিসেস কলির) যায়।
সেইটা মিসেস মল্লিকা জেনে যায়। আর আয়ুশকে
নিজের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।

আমানঃ অনেক সুন্দর প্লেন করেছিলেন উনি।
আমি আর রিমিপাখি যতবার অই হসপিটালে প্রমান কালেক্ট করতে গিয়েছি।
ততবার উনি সেই প্রমান নস্ট করে দিয়েছেন যাতে আমরা প্রমান কালেক্ট করতে না পারি।

নিদ্র সোফায় বসে পড়ে মাথায় হাত দিয়ে কেঁদে উঠে।

সুপ্তিও কেঁদে যাচ্ছে। আয়ুশ তাদের প্রথম সন্তান ছিল।
সন্তানের হারানোর কস্ট টা যে কি তা হয়তো বলে বুঝানো যাবে।

ইশান সুপ্তিকে জড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে।

নিদ্র এইবার উঠে দাঁড়িয়ে
মল্লিকার গলা চেপে ধরে–

নিদ্রঃ খুন ই করে ফেলবো তোকে

তোর জন্য আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।
আমাদের সুখের সংসার এমনকি আমাদের
ছেলেকেও মেরে ফেললি।

আমান কোনোরকম নিদ্র এর থেকে মল্লিকাকে ছাড়িয়ে নেয়।

মল্লিকা গলা ধরে কেঁশেই যাচ্ছে।

আমানঃ শান্ত হোন নিদ্র আংকেল

নিদ্র বলে উঠে–
আমি যে পারছি না বাবা।

এই মহিলার জন্য আমাদের সুখের পরিবার ধংশ হয়ে গেলো।

আমি বলে উঠলাম–
ইশা আপুর থেকেও তার ভালোবাসা কে কেড়ে নিয়েছে।
এই মহিলা এতোটাই জঘন্য আমাদের বিয়ের দিনে উনাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিলো।
সেই দিন আমি বউ সেজে ছিলাম।
কেন আপনি আমাদের থেকে আপনি সেই দিন টা কেড়ে নিয়েছিলেন বলতে পারেন??
বলতে বলতে আমার চোখ থেকে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ে।

উনি এসে আমাকে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
আমি উনার বুকে মুখ গুজে কেঁদে দেই।

আমান এর চোখ থেকেও জল গড়িয়ে পড়ে

ইশা বলে উঠে–
আমি আয়ুশ কে কোনোদিন ভালোবাসি নি
তাইতো আমার আয়ুশকে আমি চিনতে পারিনি।
নাহলে বলো আমার ই প্রথমে আয়ুশকে চিনার কথা তাইনা?

রিমি তো অয়নকে ভালোবাসে তাই প্রথমেই চিনে ফেলেছিলো।

(কাঁদতে কাঁদতে)

আমি বলে উঠলাম–

নাহ ইশা আপু!! আসলে পরুস্হিতি টাই এমন হয়ে গিয়েছিলো যে সবকিছু উলোটপালোট হয়ে গিয়েছিলো আমাদের জীবন ই এমন হয়ে গিয়েছিলো।

ইশাঃ আমার আয়ুশের কিচ্ছু হয়নি।
তাইনা বলো??
এই বলে ইশা আপু আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে।
আমি আসলে এইসময় আপুকে ঠিক কি বলে শান্তনা দিবো বুঝতে পারছিনা।

আমিও ঠিক এইরকম পরিস্হিতে পড়েছিলাম।

কিন্তু আমি তো উনাকে ফিরে পেয়েছি। আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া।

এমা ইশা আপুতো অজ্ঞান হয়ে গেছে।—রিমি

আমি বলে উঠলাম।

আমান ঃ শকড টা সহ্য করতে পারিনি।

আমান এর ইশারায় কিছু নার্স ইশা আপুকে
ভিতরের রুমে নিয়ে যায়।

অয়নঃ স্যালাইন চললে জ্ঞান ফিরে আসবে।

অয়নঃ এই মহিলার কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি পাপ্য।

(মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে)

মল্লিকা এইবার খানিক্টা জোড়েই হেঁসে দেয়।

আমানঃ উনি কি এইবার পাগল হয়ে গেছে।

মল্লিকাঃ আমার শাস্তি প্রাপ্য তাইনা??
অয়ন।
তোমার মা যা করেছিলো তা কী??

অয়নঃ মানে??

মল্লিকাঃ আমার শাস্তি প্রাপ্য ঠিক আছে আমি মেনে নিবো কিন্তু কলিকেও তার যোগ্য শাস্তি পেতে হবে।

আমানঃ এইসব কি বলছেন?

মল্লিকাঃ বুঝতে পারছো নাহ তো??

আমি কথা দিচ্ছি আমি নিজেকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
কিন্তু কলিকেও তার শাস্তি পেতে হবে।

অয়নঃ আপনি আবার কোনো ছলনা করছেন তাইনা???
আমার মা কোনো দোষ করতে পারে না

(চিৎকার করে)

মল্লিকাঃ ঠিক আছে শুনো তাহলে সেই অতীত।।

(কলি ও মল্লিকা একি ভার্সিটিতে পড়তো।
মল্লিকারা ৩ ভাই বোন ছিলো।
মল্লিকার ছোট একটি বোন আছে নুসরাত।
ভাই বিদেশে স্টাডি করছে।
একদিন নুসরাত এর বিয়ে ঠিক হলো রাফসান এর সাথে।৷ নুসরাত রাফসান কে প্রচন্ড পরিমানে ভালোবাসতো।
রাফসান ছিলো নুসরাত এর বাবার ছেলের বন্ধু।
কিন্তু রাফসান নুসরাত কে ভালোবাসতো নাহ।
রাফসান কলিকে ভালোবাসতো। কলিও রাফসান কে ভালোবাসতো। তাই তারা বিয়ের দিন পালিয়ে যায়। বিয়ের সাঁজে নুসরাত রাফসান এর জন্য অপেক্ষা করছিলো কিন্তু যখন সে শুনে রাফসান তাকে ধোকা দিয়ে নুসরাত এর সাথে পালিয়ে গেছে
সবাই সেদিন ধিক্কার জানাচ্ছিলো। এমনকি কলির বাবা ছলনা করে মল্লিকার বাবার থেকে সম্পত্তি নিয়েছিলো।
মল্লিকার বাবার মাথা নিচু হয়ে গিয়েছিলো
তখন সেই দিন ই নুসরাত সুইসাইড করে।
নিজের ছোট মেয়ের মৃত্যু সহ্য করতে পারিনি মল্লিকার বাবা
তিনিও হার্টঅ্যাটাক করে। তার ৭ দিনের মাথায় মল্লিকার মা মারা যায়। তিনি একেবারে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন
সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। নিজের পরিবার এর মৃত্য মেনে নিতে পারেনি কলিও রুশান। তারা ঠিক করেছিলো
প্রতিশোধ নিবে কলির বাবা, রাফসান ও কলির থেকে। ততদিনে কলির বাবা মারাগিয়েছিলো। তাই কলির বাবার বদলে সুপ্তিকে টার্গেট করেছিলো।)

বর্তমান,,

মল্লিকাঃ আমি নিজের প্রতিশোধ নিতে পেরেছি।

আমার কোনো অনুতাপ নেই।
(জোড়ে হাঁসতে হাঁসতে)

আমানঃ আপনার সাথে যেইটা হয়েছে সত্যি সেইটা হয়তো ঠিক নাহ কিন্তু আপনি যেইটা করেছেন
সেইটা ভুল কিন্তু আপনি যা করেছেন তা ক্ষমার যোগ্য নাহ একজন কে মেরেই ফেললেন।

অয়নঃ হয়তো নানা একটা ভুল কাজ করেছিলো কিন্তু নানার থেকে প্রতিশোধ নিতে এতো গুলো জীবন আপনি নস্ট করে দিলেন।

মল্লিকাঃ তোমার বাবা-মাও এইসব এর জন্য দায়ী।
কলি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো।
(চিৎকার করে)
আমি আর কি করতাম? আমার সবকিছু শেষ করে দিয়েছিলো অই রাফসান আর কলি।
কলির খুব আদরের দুই বোন। মিঃ ইসান(কলির বাবা) এর দুই আদরের মেয়ে
রুশনি ও সুপ্তি। তাই আমি আর রুশান এই দুইজন এর জীবনেই প্রবেশ করি।
শুধুমাত্র কলির জীবনকে নরকে পরিনত করে দেওয়ার জন্য।
আমার বন্ধু হয়েই আমার সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা তাইনা??
এমনকি কলির বাবা ছলনা করে আমাদের সসম্পত্তিও নিজের নামে করে নিয়েছিলো।

আমি বলে উঠলাম–
কিন্তু রাফসান আংকেল আর কলি আন্টি একে অপরকে ভালোবাসতো। কাউকে ভালোবাসা তো আর অপরাধ নয়।

🌸🌸🌸🌸🌸🌸

পুলিশরা রুশানের কাছে গিয়ে বলে উঠলো-
ইউ আর আন্ডার এরেস্ট মিঃ রুশান। রুশান কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো-
আমাকে কেউ মেরে ফেলো। আমার মতো বাবার
বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। এই বলে রুশান
পাগলের মতো চিৎকার করে যাচ্ছে।
রুশানঃ আমাকে কেউ মেরো ফেলো নাহ। আমি তো সহ্য করতে পারছিনা। আমার চোখের সামনে আমার মেয়ের রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে আছে।
আমি এই হাত দিয়ে আমার মেয়েকে (রুশান নিজের হাত উচিয়ে) মেরেছি খুন করেছি আমি তাইনা?

এই বলে রুশান নিজের হাত দিয়ে পাশের দেয়ালে
জোড়ে জোড়ে আঘাত করে নিজের হাতে রক্তাক্ত করেই যাচ্ছে।

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

ফারহান চিৎকার করে বলে উঠে–

এই জঘন্য লোকটাকে এখুনি আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যান অফিসার।
নাহলে আমি নিজেই এই খুনি লোকটাকে মেরে ফেলবো।

মিসেস কলি অনেক কস্টে নিজেকে মুক্ত করে
এসেছে।
কিন্তু সানাকে এইভাবে রক্তাক্ত অবস্হায় দেখবে ভাবেনি।

মিসেস কলি ঃ সানা মা( কান্না করে)

ফারহান এখনো সানার বুকে চুপ্টি করে আছে।
কখনো কথা বলবে নাহ সে।
বরং শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে আর জেগে উঠবেনা

সুমু এখনো কেঁদেই যাচ্ছে।

রুশান কিছু একটা ভেবে পুলিশদের থেকে নিজেদের ছুটিয়ে পালিয়ে যায়।

ফারহানঃ ধরুন উনাকে।

।।।।।।।।।
🌸🌸🌸🌸

আমানঃ আপনাকে এর শাস্তি এখন পুলিশ দিবে।

তখুনি কিছু পুলিশ ঢুকে।

আমান কিছু বলবে তার আগেই একটা কল আসে।

আমান কলটা পেয়ে একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়।

অয়ন ঃ কি হয়েছে আমান??

আমানঃ রুশান আংকেল সুমুকে গুলি করতে গিয়ে
সানা কে করেছে ফেলেছে
সানা এখন আর নেই

কথাটি শুনেই আমরা থমকে যাই।

অয়ন ঃ আমার বনুর কিচ্ছু হয়নি(কাঁদতে কাঁদতে)

অয়ন আমানের শার্টের কলার চেপে বলে উঠে—
তুই মিথ্যে বলছিস তাইনা???
আমার বনুর কিচ্ছু হয়নি আমি জানি

আমান আবারও বলে উঠে–
নাহ রে আমি সত্যি বলছি।
রুশান আংকেল এই কাজে এতোটাই অনুতপ্ত ছিলেন
পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে সে নিজেই নিজেকে গুলি করে।

রুশান আংকেলও সুইসাইড করেছে।

মল্লিকাঃ নায়াহহহহহহহহহহহহহ
(চিৎকার করে)

মল্লিকার আপন বলতে তার এই ছোট ভাই ছিলো সেও তাকে ছেড়ে চলে গেছে নাহ মানতে পারছেনা সে।
বড্ড আদরের ভাই ছিলো।

নাহ মল্লিকা মানতে পারছেনা। এইটা কি হলো??

(সত্যি এই প্রতিশোধ খেলায় কারো না কারো আপনজন ঠিকই হারিয়ে গেছে।
সবাইকেই কাঁদতে হয়েছে। প্রতিশোধের নির্মম খেলায় আমাদের জীবন থেকে অনেকেই হারিয়ে গেছে। পাপ কখনো পাপ কে ছাড়েনা। এমন অনেকেই এই গল্পে রয়েছে যারা অকালেই তাদের প্রান হারিয়েছে।



।#প্রেমময়নেশা(The Story of a psycho lover)
#পর্ব-৫৫ ( পরিনতি)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আমিও একেবারে স্তব্ধ হয়ে যাই। সানা আপু আর নেই। আমাকে আর কে জুনিয়ার ভাবি বলে ডাকবে।উনার দিকে তাঁকাতেই চোখ থেকে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়লো। উনি চুপ হয়ে পাথরের মতো বসে আছেন। সানা উনার বড্ড আদরের বোন ছিলো। আমি তো দেখিছি উনি সানাকে কতটা ভালোবাসতেন। আমার এই মুহুর্তে চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। আমি উনার কাছে গিয়ে বলে উঠি—আপনি।
উনি আমাকে ঝাপটে ধরে কান্না করে দেয়।
—রিমিপরী আমি কী করে মেনে নিবো বলো??
আমার ছোট্ট বোনটা আর নেই।

আমি যে পারছিনা। গো।

আমান বলে উঠে–
আমান মনে হয় আমাদের এখন বাংলাদেশও যাওয়া উচিৎ শেষবারের মতো সানাকে দেখতে।

ইশান বলে উঠে–
আমিও যাবো। সানা তো আমারও বোন।

সুপ্তি কেঁদে বলে উঠে–
আমরা সবাই যাবো। এইভাবে আমাদের কোল থেকে আমাদের মানিক রা হারিয়ে যাচ্ছে।
আমার ছেলেটার লাশতো দেখতে পেলাম নাহ অন্তত
সানাকে শেষবার এর মতো দেখতে চাই।

মল্লিকার ছোট ভাই আর নেই সে মেনে নিতে পারছেনা। বাবা-মা ছোট বোন কবেই তাকে ছেড়ে চলে গেছে।

এই প্রতিশোধের নেশাই তার থেকে তার ভাইকে কেড়ে নিলো।

তখনি কিছু পুলিশ আসলো।

মল্লিকা তাদের কাছে নিজেকে সমর্পন করে দিলো।
আজ তার মুখে কোনো কথা নেই। না আছে সেই জেদ কিংবা রাগ।

।।।।।।।
🌸🌸
রুশনি চিন্তায় বসে আছে

রুশনিঃ কি যে হলো কে জানে এখনো কলি আপু কিংবা কারো কোনো দেখা নেই।
দুরর।।

তখুনি কলিং বেল বেজে উঠে–

রুশনিঃ আরে কে কোথায় আছিস??
দেখ তো কে এলো?

কিছু সার্ভেন্ট দরজা খুলে দেখে কলি সুমু ও
ফারহান দাঁড়িয়ে।

রুশনি বলে উঠে–
কলি আপু তুমি?। রুশান কোথায়?
এদের সাথে? আর তুমি( ফারহানকে উদ্দেশ্য করে)
তোমার পোষাকে এতো রক্ত কেন??
(অবাক হয়ে)

কলি কেঁদে দেয়।

তখনি দুইটা লাশ নিয়ে কিছু লোক প্রবেশ করে।

তারা লাশ দুটো রেখে দেয়।

রুশনিঃ এইসব কি?
এখানে এইসব কাদের লাশ??
আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা?
আচ্ছা এই রুশান আর সানা কোথায়?

এইবার সুমুও কেঁদে দেয়।

কলি বলে উঠে–
ওরা আর নেই

রুশনিঃ ওরা আর নেই মানে???
তুমি এইসব কি বলছো।মাথা ঠিক আছে তোমার? কিসব উল্টাপাল্টা বকছো হ্যা।
মানে এই লাশ দুটো সানা আর আমার রুশানের
(চিৎকার করে)

মিসেস কলিঃ এইটা সত্যি রে রুশনি(কাঁদতে কাঁদতে)

রুশনি লাশ দুটোর থেকে কাপড় সরিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়।

রুশনিঃ নাহ এরা আমার সানা আর রুশান নাহ।
সব মিথ্যে সব মিথ্যে।

রুশনি পাগলের মতো করতে থাকে।

তখনি ছুটে আসি আমরা

( নিদ্র এর রিসার্ভ করা প্লেন এর জন্য বাংলাদেশে আসতে বেশি সময় লাগেনি)

অয়ন ও সুপ্তিকে দেখে সবাই অবাক হয়নি তেমন।

আমান সবাইকে আগে থেকেই ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছে
অয়ন সানার লাশ দেখে ছুটে যায়। চিৎকার করে কান্না করতে থাকে।

অয়নঃ কি হয়েছিলো ফারহান।

সুমু বলে উঠে–
আমি বলছি।

সুমু প্রথম থেকে সব খুলে বলে।

আমি সুমুকে জড়িয়ে ধরি কেঁদে দেই।

লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

🌸🌸🌸🌸

আমি বলে উঠলাম–
মানুষ এতোটা নিশ্বার্থভাবে কাউকে ভালোবাসতে পারে??
সানা আপু। তুমি কেন চলে গেলে?
(কাঁদতে কাঁদতে)

আমান বলে উঠে–
একতরফা ভালোবাসা গুলো বোধহয় সত্যি কস্টকর হয়।

অয়ন সানার লাশের পাশে বসে কেঁদে যাচ্ছে।

অয়ন বলে উঠে–

তুই এতোটা কস্টে ছিলিস বনু? আমি তো বুঝিইনি।
সবার দিকেই খেয়াল রেখেছিলাম কিন্তু তুই আড়ালে থেকে যে এতোটা কস্টে ছিলিস তা তো বুঝিনি।

সুমু বলে উঠে–

সব আমার দোষ।

আমি বলে উঠলাম– নাহ সুমু আসলে আমাদের জীবনটাই না এক নিমিষে পালটে গেলো।

ফারহান এক দৃস্টিতে দেখে যাচ্ছে।
তার শার্টে এখনো সানার রক্ত।
মেয়েটা তাকে এতোটা ভালোবাসতো।
কবে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছিলো?
ফারহান কোনো দিন বুঝতে পারেনি সানা তাকে ভালোবাসতো।
ফারহান এর ও তো সানাকে নিয়ে কোনোদিন
কোনো ফিলিং ছিলো নাহ।

ফারহান তো শুধু সুমুকেই ভালোবাসে।
কলিঃ আমার অয়ন

কলি অয়নের
কাছে আসতে গেলে অয়ন হাত দিয়ে আটকিয়ে দেয়।

অয়নঃ প্লিয মাহ।
আজকে আমাদের বনু আমাদের সাথে নেই।
এর পিছনে কিন্তু তোমারোও দোষ আছে।

কলিঃ অয়ন!

কলি মুখ চেপে কেঁদে দেয়।

এতোদিন পর সে তার ছেলেকে কাছে পেয়েছিলো আর অয়ন তাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

এইটাও কি স্বাভাবিক নয়? সেদিন তার জন্যই মল্লিকার জীবন টা নস্ট হয়ে গিয়েছিলো
তাই মল্লিকা ও রুশান প্রতিশোধ নিতো নাহ।

আমি বলে উঠলাম–
ভালোমার তো কোনো দোষ নেই।

ভালোমা তো আংকেল কে ভালোবাসতো তাই তারা
পালিয়ে গিয়েছিলো।

ভালোমা বলে উঠে– নাহ রে রিমি অয়ন ঠিকই বলেছে
আমারও দোষ
ছিলো।

সুপ্তি রুশনির কাছে ছুটে যায়।

রুশনি পাগলের মতো করছে।

রুশনিঃ শেষে কিনা রুশান তার নিজের মেয়েকেই মেরে ফেললো??
আচ্ছা আমাকে তার আগে মারতে পারলো নাহ।
তাহলে আমাকেও এই দিন দেখতে হতো নাহ।

সুপ্তি কি বলে রুশনিকে শান্তনা দিবে সে তো নিজের ছেলেকেও হারিয়েছে।

পায়েল আর ইশান ও কেঁদে ফেললো।
সত্যি মানুষের জীবন কি থেকে কী হয়ে গেলো।

সবাই তো খুব সুখেই ছিলো কিন্তু কিছু অতীত সবার বর্তমানকে শেষ করে দিলো।

।।।।।।। 🌿🌿🌿🌿🌿

৫ মাস পর,,,

জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আপনমনে আকাশের পানে তাঁকিয়ে আছে ফারহান।
তখনি কেউ কাঁধে হাত রাখে।

ফারহান তাঁকিয়ে দেখে সুমু।

ফারহানঃ সুমু!

সুমুঃ কি ভাবছো?

ফারহানঃ কিছু নাহ।

সুমুঃ আমি জানি তুমি সানার কথা ভাবছো?

ফারহান সুমুর দিকে তাঁকায়।

সুমুঃ এইটা ভেবো নাহ আমি তোমাকে ভুল বুঝছি।

জানো আমারও সানার কথা মনে পড়ে। সানা মেয়েটিই এমন। ওর কথা আমরা সারাজীবন মনে রাখবো।

ফারহানঃ আমি চাই সানা যেখানেই থাকুক। ভালো থাকুক।

সুমু ও বলে উঠে-
আমিও তা চাই।

।।।।।।
৫ মাস অতিক্রম হয়ে গেছে।
রুশনি এখন আর এই বাড়িতে থাকেনা। সে এখন প্রায়-সময় গ্রামের বাড়িতেই থাকে। এই বাড়িতে থাকলে তার সবসময় সানা আর রুশানের কথা মনে পড়বে তাই সে এখন গ্রামের বাড়িতেই থাকে।

লন্ডনে,,
ইশান ও পায়েল তাদের সংসার করছে। ইশান এখন
নিদ্র এর সাথে তার অফিস সামলায়। সুপ্তিও তার সংসারে ফিরে গেছে।
কিন্তু আজও আয়ুশের জন্য রাতের আধারে নিদ্র ও সুপ্তি কেঁদে উঠে।
ইশা অন্য দেশে চলে গেছে সে নিজের মতো করে নতুন করে সব শুরু করবে কিন্তু সে আর তার জীবনে আর কাউকে চায়না। আয়ুশের স্মৃতি নিয়েই সে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিবে।

আর মল্লিকা জেলে রয়েছে। সে এখন পাগল প্রায় । নাহ পারছে মরতে নাহ পারছে বেঁচে থাকতে

এদিকে,,
সানার ছবিতে
হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।
কলি। মেয়েটা পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখতো আজ সে নেই ভাবতেই মনটা কেঁদে উঠে কলির।

অয়ন হাতের ঘড়িটা পড়তে পড়তে নীচে নামতে নামতে বলে উঠে–
মা আমি যাচ্ছি হসপিটালে,,

মিসেস কলি নিজের চোখের জল মুছে নেয়।

অয়ন বুঝতে পারলো সানার কথা ভেবে
তার মা কান্না করছে।
অয়ন বলে উঠে–

মা

কলি বলে উঠে- আমি জানি তুই কি বলবি
আমি জানি সেদিন তোর হয়তো মাথা ঠিক ছিলো নাহ। কিন্তু যুক্তি দিয়ে দেখতে গেলে আমার আর রাফসানের ও (অয়নের বাবা) দোষ ছিলো।

অয়ন বলে উঠে–
মা প্লিয আমি আর এইসব শুনতে চাইনা। আমি শুধু জানি আমার বোন যেখানেই থাকুক

কলি
বলে উঠে–
রিমিকে নিয়ে কিন্তু বিয়ের শপিং যেতে হবে মনে আছে তো।
হসপিটাল থেকে দুজনে একসাথেই আসিস।

অয়ন মুচকি হেঁসে বলে–
আচ্ছা।।।

(অয়ন এখন আবার ডক্টর অয়ন চৌধুরী হিসেবে জয়েন করেছে)

আমি মনোযোগ সহকারে ক্লাস করছি
আমান স্যার ক্লাস করাচ্ছে। তখনি উনি প্রবেশ করে।

উনাকে দেখে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে যাই।

সবাই বলে উঠি-
গুড মর্নিং স্যার!!

অয়নঃ গুড মর্নিং।
তোমরা বসো।

আমান বলে উঠে–
কি ব্যাপার। ডক্টর অয়ন চৌধুরী এই সময়।

অয়নঃ দোস্ত তোর ভাবিকে নিতে এসেছি বুঝতেই পারছিস। বিয়ের শপিং এ যেতে হবে। আমি কি তোর ভাবিকে এখন নিয়ে যেতে পারি?
(দাঁত কেলিয়ে)

বিয়ের কথা শুনে আমানের মুখ অন্ধকারে ঘিড়ে যায়।
তাও সে কোনোরকম মুখে হাঁসি ফুটিয়ে বলে-
তোর হবু বউ আবার জিজ্ঞেসা করতে হয় নাকি?

সবাই আমার দিকে তাঁকিয়ে মিটিমিটি হাঁসছে।

অয়নঃ এইযে আমাদের বিয়েতে কিন্তু তোমাদের সবার দাওয়াত রইলো।

সবাই বলে উঠে–
অবশ্যই স্যার!

কিছু কিছু মেয়েতো আফসোস ই শেষ তাদের ক্রাশ প্রফেসরেরে বিয়ে বলে কথা।

ইসস এই লোকটাও নাহ কোথায় কোন কথা বলতে হয়
জানেই নাহ।
ক্লাসেএ সবার সামনে বলে দিচ্ছে।

অয়নঃ রিমিপরী চলো।

সবাই এখনো আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
এদিকে আমি লজ্জায় শেষ।

কি হলো চলো

এই বলে উনি আমার হাত ধরে বাইরের দিকে নিয়ে যায়।

আমান বলে উঠে–
ক্লাস আপতত শেষ।

আপাতত আমি এখন উনার কেবিনে বসে আছি।

উনি ওয়ার্ডে কিছু পেশেন্ট দেখতে গিয়েছেন।

(ওহ আপ্নাদের তো বলা ই হয়নি আর ১৫ দিন পরে আমাদের বিয়ে। হ্যা অনেক প্রতিকলুতা পেরিয়ে আমরা আবারও এক হতে চলেছি।)

তখুনি উনি কেবিনে আসেন এবং বলে উঠেন–
চলো রিমিপরী আজকে শপিং যেতে হবে।

আমি বলে উঠলাম–
আপনি সবার সামনে অইরকম বললেন কেন??

অয়নঃ আমার হবু বউকে আমি বলেছি সমস্যা কি?
(ভ্রু কুচকে)

রিমিঃ জানেন সবাই হাঁসছিলো
আমাকে একেবারে লজ্জায় পড়তে হয়েছে।
আপনিও না নির্লজজ হয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।

অয়ন আমাকে হেচকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে মিহি কন্ঠে বলে উঠে–
রিমিপরী কি জানে? যখন সে লজ্জায় লাল হয়ে যায় তখন তার সাইকো নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা।
তোমার এই মায়াবতী লজ্জাময়ী চেহারার জন্য আমি যে সব করতে পারি।

ইসস উনার এই মিহি কন্ঠে এক প্রকার নেশা আছে।
শরীরে এক প্রকার শিহরব বয়ে গেলো।
আমার যে বড্ড লজজা লাগছে।
আমি লজ্জা ঢাকতে উনার বুকে মুখ গুজে রইলাম।

রিমিকে ও অয়নকে এতো কাছে দেখে আমানের বুকটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসার মানুষকে
অন্যকারো সাথে দেখা যে কতটা কস্টের তা আমান ছাড়া কেউ বুঝবেনা।

যতই সে সকলের সামনে হাঁসি থাকুক। দিনশেষে সেও মানুষ।

সে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে যায়।

অয়ন বলে উঠে–
রিমিপরী আজকে সারাদিন এইখানেই থেকে যাওয়ার প্ল্যান করেছেন?

আমি বলে উঠলাম–
আমার সাইকো চাইলে থাকতেই পারি।

অয়ন ঃ কিন্তু ম্যাডাম সামনে যে আমাদের বিয়ে তা কি আপনি ভুলে গেছেন?শপিং এ যেতে হবে তাইনা?

আমি বলে উঠলাম- চলুন!

।( রিমি অয়নের বিয়েতে সবাই দাওয়াত রইলো আসবেন কিন্তু আগেরবার আমি জানতাম বিয়েটা হবেনা তাই কাউকে দাওয়াত দেইনি এইবার দিলাম)




।।


#দ্বিতীয়_অধ্যায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here