কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-৪৬.(অন্তিম পাতা)🎈
@হাফসা আলম
___________________
নামাজ শেষ করে রিঝ নিজের গাড়ির কাছে যায়।ফোনটা আবার বেজে উঠে।আজ সকাল থেকে সে ফোনের জন্যেই অর্ধ কাহিল।ভাবে তুতুল ফোন দিয়েছে।রামিমের নাম্বার দেখে সে বিরক্ত হয়।কন্ঠে বিরক্ত নিয়ে সে ফোন ধরে বললো,’ শালা আর কত জ্বালাবি?বাসর ঘরেও তোরা থাকবি আমি নিশ্চিত।’
বাসরঘর কথা বলে রিঝ নিজেই কেমন যেন লজ্জা পেল।খুশিতে সে পাগল হয়ে গেল না কি?এসব কথা তার মুখে বড্ড বেমানান।রামিম চুপ করে রইলো।তার নিঃশ্বাসের শব্দ পর্যন্ত আসছে না এপাশে।রিঝ ধমকের সুরে বললো,’ফাইজলামু করার হলে পরে করিস।আমি তুতুলকে নিয়ে আসি।বেচারি অপেক্ষা করছে।’
রামিম নিজের মুখ চেপে ধরে।ঢোক গিলতে গিয়ে গলায় সে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে।তার মনে হচ্ছে গলার রগ গুলো সব ছিড়ে যাবে।তবুও সে আর্তনাদ করলো না।রামিমের সাড়া শব্দ না পেয়ে রিঝ একটু থামল,বললো,’ কি হয়েছে?চুপ কেন তুই?কিসব ফান শুরু করেছিস?ভালো লাগছে না।আমি যাই।বউ আমার বউ সেজে অপেক্ষা করছে।’রিঝ ফোনটা কাঁটতেই নিলো।আকাশের গলা পাওয়া গেল।ভাঙ্গা গলা।রিঝ চুপসে গিয়ে বললো,’আকাশ কি হয়েছে তোর?তুই কেঁদেছিস?রূমাশ্রী ঠিক আছে?’
‘ তুই স্কয়ার হসপিটালে আয়।প্লিজ।’’ কেন?’ রিঝের কন্ঠ শুনে আকাশ মিইয়ে গেল।বানিয়ে বললো,’রূমাশ্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে প্লিজ তুই আয়।আমি কিছু বুঝতে পারছি না।’রিঝ চাপা হেসে সান্ত্বনা দিয়ে বললো,’ তুই না বাপ হবি?এখনো ভয় পাস?আচ্ছা আমি তুতুলকে নিয়ে আসছি।’’ তুতুল এখানে আছে।’রিঝ অবাক হয়ে বললো,’আছে মানে?’’আসমার সাথে চলে এসেছে।তুই শুধু আয়।’আকাশ আর কথা বলতে পারলো না।ফোনটা কেঁটে সে হসপিটালের ফ্লোরে আস্তে আস্তে পা ভেঙ্গে বসে পড়লো।
রিঝের কালো শেরওয়ানির উপরের দুটি বোতাম খোলা।শরীর ঘেমে গেছে।হসপিটালে ঢুকতেই যেন গরম আরো বেরে গেছে।সবাইকে দেখে সে অবাক হলো।কি অবস্থা সবার?কি এমন হলো?রিঝকে দেখে সবাই ভূত দেখার মত চমকে তাকিয়ে আছে।একে হসপিটাল রিঝের সবচেয়ে অপছন্দের স্থান।তার উপরে সবার এমন এলোমেলো অবস্থা দেখে সে কয়েক পা পিছিয়ে যায়।একটু একটু করে সামনে এগিয়ে আসে।সবাই চোখের পানি মুছতে থাকে।রামিম দাঁতে দাঁত চেপে চোখমুখ খিঁচে বসে আছে এক কোণায়।রূমাশ্রী,আসমা,আলভী,প্রীতি,তার নিজের বাবা মা,তুতুলের বাবা মা,ভাই,ভাবী,আরোহী,আরো আরো অনেকে।সবার মাঝে শুধু একজন নেই?রিঝ আলভীর দৃষ্টি অনুসরণ করে কাঁচের দরজার দিকে তাকায়।আইসিইউতে কে?রিঝ কৌতুলহে পড়ে দেখে।কাঁচের ওপাশে ভেসে উঠে চেহারা।রিঝ দরজায় হাত রেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো।আর খুললো না।কারো সান্ত্বনা গায়ে মাখালো না।সে তাকালোই না।চোখ বন্ধ করে অবিশ্বাস্য রূপে হাসলো।শব্দ করে হাসতে লাগলো।সবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ অনেক তো মজা হলো।আমি সত্যি ভয় পেয়েছি।তোরা এসব বন্ধ কর।আল্লাহর দোহাই লাগে।’আকাশ শব্দ করে কেঁদে উঠে।আলভী বসে পড়ে নিচে।সকালেই তো বোনকে বলেছিল সে সব সময় তার নিজের বাড়িতে থাকবে।এখন এসব কেন হলো?আমিনার চিৎকারে রিঝ প্রচন্ড রেগে চেঁচিয়ে উঠে বললো,’ মা আপনি এভাবে কাঁদছেন কেন?এটা হসপিটাল।মজার জায়গা না।রামিম তোরা পুরো পরিবারকে এখানে নিয়ে হাজির হয়েছিস কেনো?অসভ্য।এসব সরা।তুতুলকে উঠে বসতে বল।আমি সত্যি ভয় পেয়েছি।দেখ বুক কাঁপছে।শরীর কাঁপছে।আমার আত্মা কাঁপছে ভাই।এসব বন্ধ কর।’ সবার কান্নার শব্দে রিঝের হৃৎপিন্ড আর্তনাদ করে উঠে।হু হু করে ভয় তার শরীরকে আরো কাঁপিয়ে তুলছে।এই দৃশ্য বার বার দেখতে হবে কেন তাকে?সে আর দেখবে না।সব মিথ্যা।আবার মনে হয় সে পাগল হয়ে গেছে।এবার কি আনন্দে, খুশিতে পাগল!হতেই পারে।পাগলদের তো মতিগতি ঠিক থাকে না।রিঝ ঘুরে তাকালো।মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,’আমি আবার পাগল হয়ে গেছি আম্মু।ভালো সাইক্রিয়াটিস্ট ডাক্তার দেখাও।এখনই দেখাও।আজ বিয়ে।বর পাগল হলে বাপেরা মেয়ে দেয় না।’
সর্বশক্তি দিয়ে সে দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকলো।ডাক্তার নার্স তাকে ধাক্কাদিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলো।রিঝকে এক চুলও সরাতে পারলো না।রিঝ চেয়ার টেনে নিরবে বসলো।গায়ের শেরওয়ানিটা খুলে ছুড়ে মারলো ফ্লোরে।তুতুলের দিকে তাকালো পূণ্য দৃষ্টি মেলে।সাথে সাথে কলিজা পুড়ে গেল যেন।চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়েছে সে।ধীরে ধীরে সে আবার তাকালো।কি করে?কিভাবে কিছু জানতে চাইলো না।সে শুধু তাকিয়ে রইলো।কি সাজ!কি সৌন্দর্য!কি মায়া!এত সুন্দর মানুষ হয়!না এ মেয়ে মানুষ না।পরী,পরী হ্যাঁ পরী।রিঝ ফ্যাকাশে ঠোঁটে হাসলো।বললো,’তুমি অপেক্ষা করতে বলেছিলে।আমি করছি।আমার ফল কি?কি পাবো আমি?আমার জন্ম কি অপেক্ষা করার জন্যেই হয়েছে?’ রিঝ কিছুই বুঝতে পারলো না।তার কোনো অনুভুতি কাজ করছে না।কিসব দৃশ্য!কি হচ্ছে এসব?রিঝ হাতটা তুলে একটু ছুঁয়ে দিতে চাইলো।তার হাতের ভয়ংকর কম্পনের কাছে সে হার মানতে নারাজ।দ্রুত হাত বুকের সাথে ঘষে।আবার কাঁপছে।রিঝ দেখে,লাল বেনারসিতে কি অপূর্ব লাগছে।হাতে লাল চুড়ি,গলায় অলংকার।নাকে গোল বড় নথ,মাথায় টিকলি,রক্ত কোথা থেকে আসলো?রিঝ দ্রুত দু’হাতে রক্ত মুছে দিতে চাইলো।কিন্তু পারছে না।কেন?এত রক্ত কিভাবে আসলো?হাত!এত নিষ্প্রাণ কেন?আঙ্গুল গুলো এতো স্তব্ধ কেন?রক্ত!এখানেও?রিঝ আবার পাগলের মত হাতের রক্ত ঘষে তুলতে চাচ্ছে।দু’জন ডাক্তার তাকে টেনে ধরলো পিছন থেকে।সরাতে পারলো না।রিঝ হঠাৎ ছুঁটে এসে উম্মাদের মতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তুতুলের শরীরকে।আবার শুইয়ে দিলো।হঠাৎ ঝড় থেমে গলো।রিঝ তুতুলের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,’তুমি আবার সুস্থ হয়ে উঠো।এসব তো চলেই।এমন একটু আকটু কাঁটা ছিড়া কিছু না।তুমি বাঘিনী।পাহাড়ের উপর থেকে পড়েও সুস্থ হয়েছো।আজ আমাদের বিয়ে।তোমাকে আমার রুম দিয়ে দিবো।এক সাথে থাকবো।তুমি ভুলে গেলে?কত প্লান ছিলো?সকালে তো সবঠিক ছিল।তুমি আমার দূরে থেকেও কাছে ছিলে।এখন এতো কাছে থেকেও কেন দূরে মনে হচ্ছে?তুতুল প্লিজ উঠে পড়ো।মজা আমার আর ভালো লাগছে না।আমি কি করবো?আমার মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।আমার দম নিতে কষ্ট হচ্ছে।আমি আমি কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না।আমার দুনিয়া অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে।সব অন্ধকার!আমার কালো পছন্দ বলে আমাকে কালোতে ডুবিয়ে মারতে যাও?দেখ সুস্থ হয়ে যাও।এসব কোন ব্যাপার না।’রিঝ চোখ দু’হাতের বাহু দিয়ে মুছে নেয়।মাথার ঘামও মুছে নেয়।তুতুলের চোখটা একবার মাত্র খুলো।সেখানেই প্রাণ আত্নারার শেষ ইতি হলো।সন্ধ্যা হয়ে এসেছিলো চারপাশ।সেই সাথে জীবনের পরিসমাপ্তিও ঘটেছে।আজ এতো দ্রুত সন্ধ্যা কেন হলো?রিঝ বুঝতে পারলো না।তুতুল রিঝের দিকে শান্ত,সুন্দর,শীতল চোখে তাকিয়ে রইলো।নিঃশ্বাস থেমে গেলো।হাত পা ছেড়ে আরো নিস্তব্ধ হয়ে পড়লো সে।গোলগোল চোখ গুলো আরো একটু বড় হয়ে ফুঁটে উঠেছে।কি মাধূর্য সেই চোখে!কত কথা যেন বলতে চায়!অনেক কথা!রিঝের হৃদয় ভেঙ্গে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত হয়ে যায় সেই দৃষ্টিতে।টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে নিজের সত্ত্বা।প্রীতি সিনেমার ডাক্তারদের মতো ভনিতা করতে পারলো না।ফ্লোরে ধপাস করে বসে সে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।সব ভয়ংকর ভালোবাসার মৃত্যু তার সামনেই কেন হয়?কেন?চিৎকারের শব্দে সবাই ছুঁটে আসে।রিঝ নিজেকে ছাড়িয়ে আবার দরজার কাছ থেকে ফিরে আসলো।একদম শান্ত নিস্তব্ধ এক মানুষ হয়ে বসে পড়লো।সবার আহাজারি আর্তনাদ তার কানে গেলো না।সে তাকিয়ে রইলো গোল খোলা চোখের দিকে।তার জীবন শুধু দু’টি বছরের ছিলো?সে বুঝতে পারলো না কোন ঝড়ের কবলে পড়ে তার সুন্দর সাজানো পৃথিবী হঠাৎ লন্ডভন্ড হয়ে গেলো?এতো এলোমেলো লাগছে কেন জীবন?রিঝ তুতুলের হাতটা নিজের হাতে নেয়।মুঠোয় বন্দি কিছু একটা।মুঠো খুলতে চায় ধীরে ধীরে।পারে না।শক্ত হাতের মুঠো!রিঝ আরো একবার চেষ্টা করে।খুলে পায়েল হাতে চুলে আসে।আসমা দূর থেকে বলে,’এই পায়েলের জন্যেই সব।’মুখ চেপে সে কাঁদতে শুরু করে।রিঝ পায়েল হাতে উঠে দাঁড়ায়।রিঝকে এতো শান্ত দেখে বাকিদের মনের ঝড় আরো বেরে যায়।বুকে চাপা ভয় হামাগুড়ি দিয়ে বাড়তে থাকে।আয়শা ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে চায়।ছেলে একটু কাঁদুক।কাঁদলে ভালো লাগবে।রিঝ ধরলো না।সে নিজের পায়ে হাঁটতে পারছিলো না যেন।চেয়ার টেনে নেয় পায়ের কাছে।সাদা চাদর সরিয়ে দেখে লাল দু’খানি পা।আলতা রাঙ্গা পা।সাদা পা জোড়ায় লাল আলতা।যেন দুধে আলতা।পায়ের উপরের সোনালি পাড়টা একটু তুলে নেয় রিঝ।নিস্তেজ হয়ে থাকা দুটি পায়ে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।বিড়বিড় করে কিছু বলে।সবাই অদ্ভুত চোখে দেখে।মনে পড়ে পূর্বের কথা।তখন কি ভয়ংকর উম্মাদের মত করেছিল।এখন এত শান্ত!বাম পায়ে পায়েল পরিয়ে দেয়।আবার পায়ে চুমু খায়।তুতুলের মাথার কাছে আসে।দু’হাতের তালুতে নেয় মুখ।শ্বাসরূদ্ধ কর কন্ঠে আস্তে আস্তে সে বলে,’ উঠে যাও।দয়া করো।এই সুযোগ আর পাবে না।রিঝমানকে দয়া করা অসম্ভব প্রায়।তুমি সুযোগ পাচ্ছো।দয়া করো!দয়া!দোহায় দয়া করো।’
রিঝের আকুতি ভরা কন্ঠ তুতুলের কান যাচ্ছে কি?মৃত মানুষের কানে কথা যায়?তারা কি শুনে আপন জনের আর্তনাদ?প্রিয়জনের ভয়ংকর পাগলাটে ভালোবাসা তারা বুঝতে পারে?যদি পাড়তো!ইশ যদি!রিঝ থ হয়ে বসে থাকে অনেক্ষন।একজন ডাক্তার অক্সিজেন মাক্স খুলতে যাবে রিঝ ভয়ংকর চিৎকার করে উঠে।ভয়ে পিছিয়ে যায় ডাক্তার।হঠাৎ শব্দ করে কেঁদে উঠে রিঝ।আবার চুপ করে যায়।তুতুলে গালের সাথে লেগে থাকা রক্তমাখা চুল সরিয়ে রিঝ ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে দম বন্ধ কর হিম শীতল কন্ঠে বললো,তুমি কেন আমার ভাগ্যে নেই?কেন মানুষ ভাগ্যের সাথে লড়াই করতে পারে না?’
ভাগ্য নির্মম একটা খেলা খেলে গেলো রিঝের সাথে।এটা তার কল্পনায় ছিলো না।সে এই জীবনে এমন ভয়ংকর কল্পনা মাথায় আসতে দেয়নি।এই সব স্বপ্ন।রিঝ নিশ্চিত এসব স্বপ্ন।স্বপ্ন নয় আর কি?আজ তাদের বিয়ে।বিয়ে তো আগেই হয়ে গেছে।আজ থেকে তুতুল তার নিজের হয়ে নিজের কাছে থাকবে।এই মেয়েটাকে নিয়ে তার প্রতিরাত কাঁটবে।প্রতিটি সকালে চোখ খুলে দেখবে সে পাশে আছে।এই তো একদম পাশে।লোমশ বুকের উপরে!তার কোঁকড়া চুল গুলো থাকবে রিঝের নাকের উপরে,চোখের পাশে,দুইঠোঁটের মাঝে লেপ্টে।আহা কি ঘ্রাণ তার সেই চুলের।লেপ্টে থাকা সেই চুল সমেত গালে সে প্রতি সকালে চুমু আঁকবে।আলিঙ্গনে ভাঙ্গবে ঘুম।একটা ছোট শরীর তার বৃহৎ বাহুর মাঝে লুকিয়ে থাকবে।তার সকাল,তার দুপুর,তার বিকেল,তার সন্ধ্যা,তার রাত সব শেষ!মাত্র কিছু সময়ে?কিভাবে?তার পৃথিবীটা টুকরো টুকরো অংশে কেনো ভেঙ্গে গেলো?উত্তর খুঁজতে হলে তো তাকেও মরতে হবে।মরবে?রিঝ মরিয়া হয়ে উঠে।সেও মরবে।যাকে এতো চেয়েছে।এতো পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা দেখিয়েছে,যার জন্য সে জঘন্য সব কাজ করেছে।কারো মনে কষ্ট দিয়েছে,কারো ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছে সেই তাকেই যদি না পায় তাহলে এই জীবনের কি মূল্য আছে?পেয়ে হারানোর বেদনা যে কি গভীর ক্ষত বুঝানো অসম্ভব।কাউকে বুঝানো যাবে না।রিঝ মাথা দু’হাতে চেপে ধরে নিচে বসে পড়ে।চিৎকার করে উঠে বিকট শব্দে।চারপাশের সব মানুষ এই রুমে ভীর করে।রিঝ আর্তনাদ করে কেঁদে উঠে।হাউ মাউ করে শব্দ হয় চারপাশে।শুধু চিৎকার আর চিৎকার!হসপিটাল একটা মৃত্যুপুরীতে রূপ নেয়।নিজের সব শক্তি দিয়ে রিঝ নিজের হাত কামড়ে ধরে।গড়গড় করে গড়িয়ে পড়তে শুরু করে রক্ত।সবাই তাকে থামাতে ছুঁটে আসে।আলভী নিজের বোনের পাশ থেকে দৌড়ে আসে।রিঝ উম্মাদের মতো মাথার সব চুল ছিড়তে শুরু করে।শরীরে খাঁমচি দিতে শুরু করে।তাকে কেউ থামাতে পারছে না।শক্তি হাজার গুন বেড়ে গেছে যেন।জানোয়ারের মত সে এদিক সেদিক গড়াতে শুরু করে।ছুরি কাঁচি যা সমনে পাচ্ছে নিজেকে আঘাত করছে।শরীরের অনেক অংশ সে ছিঁড়ে ফেলে।আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে তুলে হাত,বুক।গলার কাছে ছুরি নেয়।আয়েশা হাত জোড় করে চিৎকার করে বলে,’ আল্লাহর দোহায় আব্বা এসব করবে না।আত্নহত্যা মহা পাপ।’ চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে রিঝের।রক্তে মাখামাখি সাদা হাতা কাঁটা গেঞ্জি।দু পায়ের জুতো কোথায় চলে গেছে।খালি পায়ে সে আশেপাশের সোফায় নিজের পায়ে আঘাত করতে শুরু করে।মাথা থাপড়াতে থাকে।ছেলেরা সবাই শক্ত করে ধরে রেখেছে।রিঝ থামে না।একটা সময় চুপ হয়ে যায়।সবাই নানা ভাবে আঘাত পায়।ক্লান্ত হয়ে সবাই বসে পড়ে।রিঝ উঠে তুতুলের কাছে যায়।তুতুলের প্রাণহীন শরীরটা দেখে রিঝের বুকের আগুনে যেন ঠান্ডা পানির ছিটে পড়ে।ক্ষত স্থানে পানি পড়লে যেমন জ্বলে,ঠিক বুকটা জ্বলে উঠে দাউ দাউ করে।কি মরণ যন্ত্রনা!তুতুলের একটা হাত নিজের গালে রাখলো।গালের কাঁটা জায়গা গুলো আরো জ্বলে উঠার কথা।কিন্তু উঠলো না।আরো ঠান্ডা হয়ে গেছে সব।শরীরের সব কাঁটা জায়গা শুঁকিয়ে গেছে যেন মুহূর্তে।তুতুলের বুক থেকে অনেকটা শাড়ি সরে গেছে।রিঝ সেই শাড়ি ঠিক করে দেয়।আবার পাশে বসে।ফিসফিসে গলায় বলে,’পাগলামি করতে নিষেধ করেছিলে।আমি আবার পাগলামি করেছি।তুমি উঠে যাও।আমাকে বুঝাও।পারলে শাস্তিও দেও।এই চশমা..’ রিঝ নিজের চশমা খুলে নেয়।দু’হাতে নিয়ে মটমট করে ভেঙ্গে গুড়ো করে ফেলে।চশমার ভাঙ্গা কাঁচ তার হাতকে করে তুলে ক্ষতবিক্ষত।হৃদয়ের ক্ষতের রক্তক্ষরণ যদি দেখানো যেত তাহলে উপস্থিত সবাই আরো আঁতকে উঠে চিৎকার করতো।রিঝ কিছু উল্টোপাল্টা কথা বলে।ভিত্তীহিন।যার কোন মানে নেই।একটা ছুরি আবার খুঁজে নেয়।সবাই দ্রুত এগিয়ে আসতে চায়।রিঝ আগে আগে বলে,’কাছে আসলে কিন্তু এখনি গলায় বসিয়ে দিবো।’ দূরে সরে যায় একে একে।আশেপাশের মানুষ দেখে এক পাগল প্রেমিক,জামাইকে।বউ পাগল!তাদের সবার আগ্রহ।এতো পাগল হয় কিভাবে?রিঝ ছুরিটা বসায় তুতুলের বুকের পাশে।একটা চাপ দিলেই গড়গড় করে হৃৎপিণ্ডে ঢুকে যাবে।বেড়িয়ে আসবে এখনো শুঁকিয়ে যায়নি এমন রক্ত গুলো।হোসাইন সাহেব চিৎকার করে উঠলেন,’আমার মেয়ে,এ এই এই কি করছো তুমি?’ আলভী চেঁচিয়ে উঠে বললো,’ রিঝ সরা এটা।তুতুল ব্যাথা পাবে।সরা কইতাছি?তোর সাথে আমি আমার বোনের বিয়ে দিবো না।আল্লাহর কসম দিমু না।তুই জানোয়ার।এটা সরা।’ প্রীতি আশ্চর্য চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলো।আলভী কিসব বকছে।তার মতে তুতুল জীবিত।কিভাবে?প্রীতি ভয়ে আলভীকে জড়িয়ে ধরে।আলভীর শরীর ধীরে ধীরে কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ে।তার শুধু চোখ দু’টি খোলা।প্রাণ ভরে দেখছে আদরের ছোট বোনকে।এই সাজে দেখার সখ থাকলেও এই ভাবে কখনো দেখতে চায়নি সে।কখনো না।প্রীতির দুবাহু শক্ত করে ধরে বাচ্চাদের মতো চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে আলভী।রিঝ বুকের পাশে ছুঁরি ঘুরিয়ে বললো,’আমার ইচ্ছে করছে নিজ হাতে তোমার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে বুঝাতাম আমার কি কষ্টটাই না হচ্ছে।’ বলেই সে ছুরি নিজের বুকে বসিয়ে দিলো।লম্বালম্বি করে বুকের চামড়া ছিড়ে গড়গড় করে গড়িয়ে পড়লো রক্তের সমুদ্র।রিঝ কেঁদে কেঁদে হাসছে।এক পা ভেঙ্গে পড়ে যেতে যেতে সে মাতাল কন্ঠে বললো,’তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে তুলাপাখি।পরীর মত।’
চোখ বুঝতে বুঝতে সে বিড়বিড় করে বললো,’কাউকে তীব্র ভাবে চাওয়া পাপ…বড় পাপ..এ পাপের যন্ত্রনা মৃত্যুর চেয়ে কঠিন।’
_________________________
বড় আম গাছটার নিচে বসে আছে রিঝ।তার গায়ে সাদা ব্যান্ডেজ।বুক জুড়ে ব্যান্ডেজ।শরীরের জায়গায় জায়গায় যেখানে থাকত কারো স্পর্শের মোহনীয় ছোঁয়া আজ আঘাতে জর্জরিত সেই স্থান গুলো।কি অদ্ভুত লীলাখেলা দুনিয়ার।বিয়ের দিনটাই বেঁছে নিয়েছিল আল্লাহ!তার উপরে কারো শক্তিনেই।তার সাথে কেউ পড়ে না।কেউ না।দুনিয়ার সাথে পাড়লেও তার সাথে পারা অসম্ভব।সত্যি অসম্ভব।রিঝ দেখছে দুরে কবর খোড়া হচ্ছে।এখানে প্রিয়,প্রানের প্রিয় মানুষটাকে শুঁইয়ে দিতে হবে কিছুক্ষণ পরে।এই একটা মানুষকে সে জীবনের সবচেয়ে দামি করেছে।এই একটা মানুষকে সে মরিয়া হয়ে চেয়েছে।দুনিয়ার সাথে লোকেদের সাথে লড়াই করেছে।ছিনিয়ে নিয়েছে।পরিশেষে সে তো নিঃস্বই রয়ে গেছে।ইয়াজ এসে বসে পাশে।রিঝ তাকালো না।সে মাটির স্তুব জমা হচ্ছে সেদিকে তাকিয়ে আছে।ভাবছে,তাকেও কবর দিয়ে দিতে বলবে।দু’জনে একসাথে।হিন্দুদের নিয়ম আছিলো ,স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে তার সাথে পুরিয়ে দেওয়া হতো।ইসলামে এসব নেই।কিন্তু সে মনে প্রাণে চাইছে তাকে যেন তার স্ত্রীর সাথে এক কবরে দাফন করা হউক।সে জড়িয়ে ধরে রাখবে তুতুলের ছোট দেহটাকে।একদম আষ্টেপৃষ্ঠে।কবরে কি সংসার করা যায়?রিঝের চিন্তাশক্তি অদ্ভুত হয়ে আসে।সে আর ভাবে না।চুপ করতে বলে মস্তিষ্ককে।কিন্তু মস্তিষ্ক আজ তার কথা শুনছে না।সে দেখে তুতুল আর সে একটা ঘন জঙ্গলে দৌড়ে বেরাচ্ছে।তুতুলের গায়ে সাদা ফ্রক।তার গায়ে সাদা পাঞ্জাবি।কি আনন্দের সাথে সে দৌড়ে বেরাচ্ছে।এই তো ছুঁয়ে দিবে।ধরলেই জড়িয়ে নিবে শরীরের সাথে।রিঝ চিৎকার করে উঠে,’তুতুল আস্তে দৌড়াও।আমি ধরতে চাই তোমাকে।একদম জড়িয়ে নিতে চাই।দয়া করো।ধীরে দৌড়াও।দয়া করো।’ ইয়াজ শক্ত করে রিঝের বাহু ধরে।রিঝের হুশ ফিরে।তাকে মাতালের মত লাগছে।নেশা না করে মানুষ মাতাল হয়?ইয়াজের আজই জানা হলো।তার কন্ঠ ভাঙ্গা।কেঁদেছে!রিঝ ম্লান মুখে হাসলো।ইয়াজের চোখ লাল।রিঝ একবার মুখ তুলে তাকায়।রিঝের চোখমুখের অবস্থা দেখে সে আতঙ্কিত হয়ে একটু পিছিয়ে যায়।রিঝ চোখ ফিরিয়ে সামনে তাকায়।গোঁ গোঁ কন্ঠে বলে,’অন্যের স্ত্রীর জন্য রাত ভর কান্না করতে লজ্জা করে না তোর?’
ইয়াজ সোজা হয়ে বসলো।কিছু বললো না।চুপ করে রইলো।রিঝও কিছু আর বললো না।কাঁদুক।পৃথিবীর সবাই কাঁদুক।সে আর কাঁদবে না।চিঠিটা আবার হাতের ভাঁজ থেকে খুললো।বার বার চোখ বুলাতে লাগলো।বিড়বিড় করে পড়তে লাগলো,’ আমি ভালোবাসি আমার সেই মানুষটাকে যে আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে।আমি ভালোবাসি আমার চোখ বন্ধের সেই স্বপ্ন রিঝমান রহমানকে।’রিঝের চোখ ভিঁজে উঠলো।গালে হাত দিয়ে দেখল সে কাঁদছে।দ্রুত চোখ মুছে নেয়।চিরকুট বুকে নিয়ে আবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।চিৎকার করে বলে,’তোমাকে ভালোবেসে আমি কিছু পাইনি তুতুল।কিছু না।’
এটুকু বলে আবার চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।সবাই আহত চোখে তাকায়।কেউ এগিয়ে এসে সান্ত্বনা দেয় না।এই প্রেমিকের গল্প তো সবারই জানা।এর ভালোবাসার গভীরতা তো সবার মুখে মুখে।একে কি বলে সান্ত্বনা দিবে?ইয়াজও কাঁদতে লাগলো।মনে মনে বুঝালো অন্যের বউয়ের জন্য কেনো কাঁদছি।কিন্তু আবার চোখ ভিঁজে আসছে।এত কষ্ট কেন চারপাশে?অক্সিজেন যেন বিষাক্ত হয়ে উঠেছে।দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।রিঝের পৃথিবীর সাথে যেন তার পৃথিবীরও ভাঙ্গন হয়েছে।হঠাৎ মেঘ গর্জে উঠে।রিঝের মনে পড়ে তাদের বিয়ের দিনেও হয়েছিলো বৃষ্টি।তার এই দু’হাতে ছিলো ভালোবাসার তুতুল।এখন কই?এখনো থাকার কথা।আজ তো তাদের আবার বিয়ে।রিঝ বাঁধন ছাড়া গরুর মতো দৌড়ে কবরের কাছে যায়।সাদা কাপড় দেখে হঠাৎ থেমে যায়।খালি পায়ে আবার দৌড় দেয়।পায়ের রক্তে রাস্তা ভিঁজে উঠছে যেন।নিজের রুমে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে।ভোরের আলো অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে।আজ তাদের নতুন সূর্য উঠার কথা।পবিত্র ভাবে তারা আবদ্ধ হয়ে এক সাথে এই ঘরে থাকত।সারা রাত গল্প করে কাঁটাতো।তার সকাল হতো তার বউকে দেখে দেখে।একটুও ঘুম আসতো না চোখে।শুধু ফুলের সুবাসে সে নিজের প্রাণের মানুষটিকে দেখত।কার সুবাস বেশি সুন্দর?ফুলের না তার প্রিয়তমার?রিঝ হলফ করে বলতে পারে তার প্রিয়তমার মত সুন্দর ঘ্রাণের কেউ পৃথিবীতে নেই।কেউ না।এই রুমের রং হওয়ার কথা ছিল সাদা।শুভ্র সাদা রং।কালো রঙ্গের সব পাল্টে দিত তার প্রিয়তমা।কালো তার পছন্দ না।সাদার মত উজ্জ্বল তার জীবন।রিঝ মনে মনে ভাবে,কালো পছন্দ করে বলেই কি তার জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে?রুমের সব সাদা হলে কেমন হতো,রিঝ কল্পনা করে।বিছানার রং সাদা,চাদরের রং সাদা,চেয়ার ,টেবিল সব সাদা।আর,রিঝ দেখে তাদের দুজনকে।তুতুল বড় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কোঁকড়া চুল ঠিক করছে।রিঝ ক্লান্ত ঘামে ভেঁজা শরীর নিয়ে জড়িয়ে ধরে দু হাতে।উন্মুক্ত নগ্ন কোমরটা কি মিশ্র!রিঝের শরীরের রোম রোম অনুভুতিতে ডুবে যায়।ভালোবাসার অনুভুতিতে।চুলের ভাজে মুখ ডুবিয়ে সে কত কথা বলে।প্রিয়তমা সেই কথায় হাসতে থাকে।আয়নায় স্পস্ট দেখা যাচ্ছে।সেই ঠোঁটের পাশের তিল!সেই ঠোঁটের হাসি!সেই জ্বলজ্বল করা চোখ!দুই রিঝের মাঝে কত পার্থক্য!কত অমিল।একজন কতই না খুশি।আর একজন!!হঠাৎ সব উধাউ হয়ে যায়।রিঝ নিজের বিছানার উপরের সব ছুড়ে ফেলে।চাদর সমেত বালিশ নিচে পড়ে।হাটুতে মুখ গুঁজে সে বসে পড়ে ফ্লোরে।তার কি করতে ইচ্ছে করছে?সে বুঝতে পারছে না।শুধু জানে এই শ্বাস বন্ধ হয়ে যাক।এই নিঃশ্বাস থেমে যাক।তার শরীর ধ্বংস হয়ে যাক।রিঝ উঠে আলমারি খুলতে চেষ্টা করে।আলমারির চাবি কই মনে নেই।নিচে যায়।রান্না ঘর থেকে দা নিয়ে আসে সে।কুপিয়ে আলমারি ভেঙ্গে ফেলে।ছিন্নভিন্ন করে কাঠ।তার থেকে বের করে সফেদ পাঞ্জাবি।রিঝ পাঞ্জাবির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।এই পাঞ্জাবি সে মাত্র একবার পরেছিলো।নতুন পাঞ্জাবি।শুধু তুতুলের জন্য কিনেছে।তুতুলের সখ পুরোনের জন্য।তার বউ সব নতুন পড়বে।যেহেতু তুতুল তার গায়ের পাঞ্জাবি পড়তে চেয়েছে তাই রিঝ একবার পড়ে দেখেছে।পাঞ্জাবিটা সে একবার বুকে জড়িয়ে ধরে নিঃশ্বাস ফেললো।সব বিষাক্ত বিষের মত।নতুন পাঞ্জাবির গন্ধে রিঝের দম বন্ধ হয়ে আসলো।সে কাঠের উপরে পাড়া দিয়ে পা-টাকে আরো জখম করে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।শরীরের এতো ক্ষত তাকে একটুও পিরিত করতে পারছে না।সে পিরিত হচ্ছে শুধু হৃদয়ের ভয়ংকর ক্ষতে।যন্ত্রনায় কাতরাতে কাতরাতে যদি তার রুহটা উড়ে যেত!ইশ যদি এটা হত!কেন হচ্ছে না?
তুতুলের শরীরে পড়ানো হয় তার স্বামীর পাঞ্জাবি।নতুন সাদা পাঞ্জাবিতে তাকে সদ্য ফোটা ফুলের নেয় সচ্ছ দেখায়।চারপাশের সবার ভালোবাসা চোখের পানি হয়ে বের হচ্ছে।তুতুল যদি একবার মাত্র,একবার চোখ খুলে দেখত তাহলে দেখতে পেতো সে ভালোবাসার সমুদ্র ছেড়ে যাচ্ছে।পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যেন তাকেই ভালোবাসছে।সবাই তাকে কেন এত ভালোবাসলো?সে তো এত ভালোবাসা পাওয়ার মত কিছুই করেনি?শুধু শুধু কেউ এত ভালোবাসা পায়?ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে সে অসীম ভালোবাসা পাচ্ছে।ছোট বাচ্চা তুতুলও এক মুহূর্তের মাঝে তুতুলের চোখের প্রেমে পড়ে গেছে।সে দেখতে এসে অঝোরে কাঁদছে।কে বলে প্রেম শুধু রূপে হয়?কে বলে প্রেম সাদা চামড়ার সাথে হয়?প্রেম হয় চোখের সাথে চোখের।মনের সাথে মনের।প্রেম হয় ভালোবাসার সাথে ভালোবাসার।আত্নার সাথে আত্নার।জানাজার নামাজ পড়ায় তুতুলের বাবা।তিনি মাদ্রাসার স্টুডেন্ট ছিলেন।নামাজের মাঝে শক্ত পাথর হয়ে রইলেন।শেষ করেই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।বাবার কাঁধের সবচেয়ে বড় বোজা নিজের সন্তানের লাশ বহন করা।মৃত্যুর চেয়েও কষ্টের এই কাজ।রিঝ নিজে তুতুলকে কোলে নিয়ে নিচে নামায়।তারপর আর সে কবর থেকে উঠে না।সবার দিকে তাকিয়ে বলে তার গায়ের উপরেই মাটি ফেলা হোক।সবাই বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যায়।এসব কি বলছে?এটা তো সম্ভব না?জীবিত মানুষকে কিভাবে কবর দিবে?সবাই মিলে রিঝকে টেনে উঠাতে চায়।রিঝ উঠে না।ধস্তাধস্তি শুরু হয়।রিঝের পাগলামি দেখে সবাই আরো হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে রইলো।একটা জীর্ণশীর্ণ শরীর,দূর্বল শক্তি,তার সাথে পারছেনা এতো শক্তিশালী কেউ।কি অদ্ভুত!অবশেষে আয়েশাকে ডেকে নিয়ে আসা হলো।বড় ঘোমটা দিয়ে আয়েশা ছেলের মাথার কাছে বসলেন।কাছে ডাকলেন।কোমল গলায় বললেন,’আব্বা আমার উপরে উঠে এসো।’
রিঝ বাচ্চাদের মত মাথা নাচিয়ে বললো,’না যাবো না।’
‘ আব্বা আমার।শুনো।মায়ের কথা শুনো।’’আম্মু তুমি যাও।আমি তুতুলের সাথে থাকতে চাই।কবরে সংসার করবো।’’ঠিক আছে তাহলে আমিও তোমার সাথে যাবো।আমাকেও কবর দেওয়া হোক।’ রিঝ মাথা তুলে মায়ের দিকে একবার তাকালো।তারপর আবার আগের মতো বসে রইলো।আয়েশা নেমেই আসছিল।রিঝ বললো,’এতো মানুষের জায়গা হবে না।’’ তুমি তো খুব স্বার্থপর ছেলে।’’কেন আম্মু?’’ বউ নিয়ে সংসার করবে মাকে রাখবে না?’’ রাখবো তো।কিন্তু এটা তো কবরের সংসার।’’ তো কি হয়েছে?’’ তুমি আসলে তো বাবাও আসবে।’’ হুম আসবে।’’আনাস আসবে।ওর বউ আসবে সবাই আসবে।এতো মানুষের জায়গা হবে না।’’ হবে।’’আমাদের তো ছোট সংসার।’’তাতে কি মা-বাবাকে জায়গা দিবে না?’রিঝের বাচ্চাদের মতো আচরণ।আলভী একপাশে বসে পাগলের মত কাঁদে।তারও ইচ্ছে করছে নিজেকে কবর দিয়ে দিতে।পৃথিবীতে কেন আল্লাহ মায়া,ভালোবাসা দিয়েছে?দিয়েছে যখন তখন আলাদা করার মত ভয়ংকর শক্তিশালী মৃত্যু কেন দিলো?আলভী পা ছড়িয়ে কাঁদতে লাগলো।পায়ের নখ দিয়ে মাটি খুঁড়তে শুরু করলো।তার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।রিঝ কয়েক সেকেন্ড নীরব থেকে বললো,‘ আম্মু তোমাকে কবর দিলে তো তুমি মারা যাবে।’’আমি জানি।’’আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।কিন্তু আমাদের সংসারে তোমাকে নেওয়া যাবে না।’আয়েশা ভারী অবাক হওয়ার ভাব করে বললো,’কেন আব্বা?’’ কারণ বাবাকে ছাড়া তুমি কিভাবে থাকবে?’রিঝের বাবা এসে বললো,’আমিও তো যাবো।’’ রিঝ কেমন করে যেন হাসলো।আয়েশার বুক ছিড়ে কান্না এলো।কি অবস্থা তার আদরের কলিজার!আল্লাহ!রিঝকে কথার মাঝে ভুলিয়ে কবর থেকে টেনে উপরে তুলে নিয়ে আসা হয়।সে চিৎকার করে বলে,’আম্মু তুমি ধোঁকা দিলে?সবাই আমাকে ধোঁকা দেয়।তুতুল দিয়েছে তুমিও দিয়েছ।আমি যাদের ভালোবাসি সবাই হয় এক একজন ধোঁকাবাজ।আমি কি করবো?কি করবো?এই পৃথিবী জঘন্য।আমি ঘৃন্না করি সব।নিঃশ্বাসকেও।ছাড় সব অসভ্যরা।’রিঝের আর্তনাদ বাড়ে।চিৎকার করতে থাকে সে।তাকে ধরে রাখে পাঁচ সাতজন মিলে।ব্যান্ডেজ থেকে বের হতে শুরু করে রক্ত।হাত পায়ের ক্ষত আরো বেড়ে যায়।সে পাগলে রূপ নেয়।ভয়ংকর প্রেমিক পাগল।পৃথিবীর নিয়তী এতো কঠিন কেন?কেন এত মারাত্নক নিয়ম মৃত্যু?কেন ভালোবাসায় বিচ্ছেদ আছে?রামিম দু’হাতে রিঝকে জড়িয়ে ধরে।রিঝের আর্তনাদে আকাশ বাতাস এলোমেলো হয়।মেঘ ভেঙ্গে পড়ে।বিষাক্ত হয়ে পরে পরিবেশ।কালো অন্ধকারে ডুবে যায় চারপাশ।একটি ছেলে সারাটা জীবন ধরে শুধু একজনকে চেয়েছে।তাকে চাওয়ার মাঝেই সে নিঃশেষ হয়ে নিজেকে হারিয়েছে।আজ নিয়তির কাছে হেরে সে ত্যাগ দিয়েছে নিজের আপনসত্ত্বাকে!এক জনমে একজনকে ভালোবেসে নিজেকে বিলিন করে আজ সে বৈরাগী!ভালোবাসা গোলাপের মত।এতে থাকে কাঁটা আর কাঁটা।সবাই শত চেয়েও গোলাপ নিতে পারে না।কয়েকজনের ভাগ্যে জুটে সেই গোলাপ।রিঝমান তাদের একজন হয়েও আজ নিঃস্ব।পেয়ে যদি সেই গোলাপ হারিয়ে ফেলা হয়!তার আর্তনাদ বুঝা অসম্ভব।মনে প্রানে চেয়ে গোলাপের ভাগ পেলো সে।পেয়ে হারিয়ে ফেলল।রিঝের প্রতি যেন আকাশ থেকে সমবেদনা আসছে,আফসসো হচ্ছে চারপাশের বাতাসে।নিজের আপনসত্ত্বা,নিজের রং হারিয়ে কেমন দেখায়?রিঝ তার প্রমান।একটি সবুজ গাছের রং সেই সবুজই যদি বিলিন হয়ে যায়?তাহলে কেমন দেখাবে তাকে?রং একটা জিনিসের কতটুকু জুড়ে থাকে তার প্রমান পাওয়া যাবে পৃথিবীর সবকিছু যদি সাদা বা কালো হয়ে যায় তখন।ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়।বৃষ্টির মিষ্টি শব্দ রিঝের মাথার ভেতরে ক্ষত সৃষ্টি করছে।সে চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।বন্ধ করতে বলে বৃষ্টি।কিন্তু বৃষ্টি বন্ধ হয় না।রিঝ দু’হাতে প্রাণপনে কবর ঢাকতে চায়।সে চায়না বৃষ্টির পানিতে তার প্রাণের প্রিয় প্রিয়তমা ভিজুক।……..
বর্তমান…….
জারাবী কান চেপে চোখ বন্ধ করে রাখে।তার বাবা কি ভয়ংকর গল্প শুনিয়েছে তাকে?প্রাণ আত্না কাঁপছে থরথর করে।কিছু মুহূর্ত এভাবে থেকে সে বললো,
তারপর?তারপর কি হয়েছিল?রিঝ কি পাগল হয়ে গিয়েছিল?’
‘ হুম হয়ে গিয়েছিল?’
‘ আর ভালো হয়নি?’
‘ হয়েছিল?’
‘ বিয়ে করেছে?’
‘না।’
‘ তার জীবনে আর প্রেম আসে নি?’
আলভী হাসলো।দীর্ঘ সেই হাসিতে তার মেয়ে খুব বিরক্ত হয়ে উঠলো।রিঝকে নিয়ে তার কৌতুহলের শেষ নেই।কত কত প্রশ্ন।বাবা এমন জায়গায় থামিয়ে দিলো তার তো এখন কিছুই ভালো লাগছে না।এই একটা মানুষের গল্প শুনে সে তার প্রেমের প্রেমে পরে গেছে।কেউ এতো ভালো কিভাবে বাসতে পারে?কিভাবে?এসব গল্পে হয়।সে জানে তার বাবা যে গল্পটা শুনিয়েছে সেটাও কোন বইয়ের গল্প।বাস্তবে এসব হয় না।আলভী ড্রাইভিং করছে।একটা ছবি বের করে সে তার মেয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,’এখানে আছে সে।নিজের ভালোবাসা নিয়ে।’জারাবী হাতে নেয়।নিচে লেখা বান্দরবান।চোখ গুলো খুলে যেন হাতে চলে আসবে।সে বড় বড় চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ কি যে বলো বাবা এসব হয় না কি?’
‘ হুম হয়।সে ওখানেই আছে।মনে আছে গল্পের নায়িকার বিয়ে হয়েছিল পাহাড়ের শহর বান্দরবানে?’
‘ হুম মনে আছে।নায়িকার নাম তুতুল।আমার নাম।ভাবা যায় বাবা আমিও নায়িকা।’ জারাবী হাসলো।দীর্ঘ সেই হাসি মনে দাগ কেঁটে দিলো আলভীর।সে বললো,’এভাবে হাসবে না।আমার সামনে তুমি হাসবে না একদম।আর এই নামও নিবে না।এটা তোমার মা দিয়েছে।তার সামনে নিবে।’জারাবী মুখ গোমড়া করে বললো,’ কেন বাবা?তুমি সব সময় আমাকে হাসতে নিষেধ করো।’আলভী কিছু বললো না।জারাবী মুখটা আরো গোমড়া করে জানালার বাহিরে মুখ দিয়ে কি যেন ভাবলো।মুখ ফিরিয়ে বললো,’ উনি কি সত্যি আর বিয়ে করেনি?’
‘তোমার কি মনে হয়?’
‘ মনে হয় করেনি।এতো ভালোবাসতো।তবে করতেও পারে।’আলভী বিড়বিড় করে বললো,’মায়ের মত বেশি বুঝে।’ জারাবী রেগে বললো,’বাবা মায়ের নামে কিছু বলবে না।’’ মেয়েরা হয় বাবা ভক্ত।তুমি মাভক্ত কেন?’’কারণ মা আমাকে হাসতে বলে।বেশি বেশি হাসতে বলে।সব সময় হসপিটাল থেকে ফিরলেই সামনে দাঁড় করিয়ে হাসতে বলে।আর তুতুল বলেও ডাকে।তুমি ডাকো জারাবী নামে।আমার তুতুল নাম ভালো লাগে।কেমন তুলতুলে নাম।মা বলে আমার হাসি তার প্রিয় মানুষের মত হয়েছে।একদম সে যেমন হাসে।কিন্তু মানুষটা কে?’ আলভী রেগে যায়।বলে,’ জারাবী তুমি বেশি কথা বলো।চুপ থাকতে শিখো।’ মন খারাপ করে জারাবী আবার চুপ করে থাকে।কিছুক্ষণ পরে ছোট করে সে বললো,’ বাবা আমি আর একটা কথা বলি?’ আলভী না চাইতেও বললো,’হুম বলো।’’ গল্পটা কি সত্যি ছিলো?তিনি সত্যি বান্দরবানে আছে?’’হুম আছে।তার প্রিয়তমাকে সে কথা দিয়েছিল পাহাড় কিনে দিবে।সে কথা সে রেখেছে।তবে এসব গল্প আর কল্পনা মাত্র।তুমি আর প্রশ্ন করবে না’ জারাবী তার হাতের কাঠের ডায়েরিটা লুকিয়ে রাখে বাবার চোখের সামনে থেকে।সে জানে তার বাবার বলা গল্পে কোথাও লুকিয়ে আছে একজন প্রেমিকের অসমাপ্ত প্রেমকাহিনী।মনে মনে ঠিক করে সে বান্দরবানে যাবে।দেখে আসবে সেই প্রেমিককে।তার প্রেমকাহিনীর প্রেমে পড়ে গেছে যে সে।আলভীর চোখ ভিজে উঠে।সে নিজের গালের পানি শক্ত হাতে মুছতে চায়।মেয়ে বুঝে না বাবা তার নামটা শুনলেই কেমন যেন করে।একবার তো একটা সুন্দর মেয়ের ছবি বাবার সামনে দেখিয়ে সে জিজ্ঞেস করেছিল উনি কে?সেদিনই বাবার ভয়ংকর জ্বর উঠেছিল।সে আর ঐ ভুল করেনি।শতশত প্রশ্ন বুকে নিয়ে সে ভাবে তুতুল নামে আছেটা কি?
_____________________
সবুজ অরন্যের ঝোপে বাস করে এক তাগড়া পুরুষ।বয়স ধরা যায় না।শরীরে প্রচন্ড শক্তি।মাঝে মাঝে তাকে বনে জঙ্গে শুধু শুধু ঘুরে বেরাতে দেখা যায়।মাঝে মাঝে অদ্ভুত বাঘের মত চিৎকার শুনা যায়।বৃষ্টির সময় বেশি।যেন খুব আহত কোন বাঘ।যার শরীরে রয়েছে অসম্ভব আঘাত।মাঝে মাঝে তাকে দেখা যায় হেসে হেসে অদৃশ্য সত্ত্বার সাথে কথা বলছে।নিজে নিজে কথা বলাই যেন তার কাজ।সেই অদ্ভুত মানুষটি রিঝমান।বাবা হঠাৎ মারা যায়।তখন সে পাগল ছিল।যখন ভালো হয় মাও হারিয়ে যায়।কোন দায়িত্ব খুঁজে না পেয়ে সে এই জঙ্গলের শহরে এসে আশ্রয় নেয়।এই সেই প্রিয় শহর।কাছে আসার শহর।তার প্রাপ্তিত শহর।তার মিলনের শহর।যার বুকে সে শান্তি খুঁজে পায়।মাথায় অদ্ভুত সমস্যার কারণে মানুষের ভীরে থাকতে ইচ্ছে করে না তার।সুস্থ হয়েও সে হঠাৎ অসুস্থ পাগল হয়ে যায়।তখন তাকে ধরে বেঁধে রাখতে হয়।অন্যের কাছে বোজা হওয়ার চেয়ে নিজের পাগলামী নিজের কাছে রাখা ভালো।পাহাড়ের চূড়ায় একটা কুটির আছে।বেতের তৈরি ঘর।সেই ঘরের চারপাশে লতাপাতা বিছানো।লতাগুলো একপাশ থেকে বেয়ে অন্যপাশে চলে গেছে।সবুজ লতার ভাঁজে ভাঁজে লাল ফুল।সন্ধ্যার দিকে জোনাকির আনাগোনা বাড়ে খুব।ঘাসফড়িং উড়ে এসে জুড়ে বসে।সবুজের একটা ছোট রাজ্য বলা চলে।রিঝ বসে পাহাড়ের কিনারায়।ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে হাজার ফুট নিচে।হঠাৎ কুয়াশার চাদর ঠেলে বেরিয়ে আসে কালো শাড়ির তুতুল।রিঝ মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকে।মেয়ে যেন একটু বেশিই সুন্দর হয়ে গেছে।দিন দিন সৌন্দর্য তুঙ্গে উঠছে।এত সুন্দর হওয়া ভালো না।তার রূপ তো বিলিন হচ্ছে।পরে দেখা যাবে আরো সুন্দর ছেলে খুঁজে নিবে নিজের জন্য।সবুজ পাতা ঠেলে তুতুল খালি পায়ে নুপুরের ঝনঝন শব্দ তুলে রিঝের বাম পাশটা দখল করে বসে।তারপর রিমিঝিমি শব্দের মত কন্ঠে বলে,’আপনার ভয় করছে না?’রিঝ ঈষৎ হাসলো।চশমাটা তুতুল নিজের হাত দিয়ে ঠেলে দিলো।কোমল মতি গলায় বললো,’ ভয় করা উঁচিত।থাকেন থমথমে জায়গায়।তার উপরে আপনার কল্পনা জুড়ে সব মৃত মানুষ ঘুরে বেড়ায়।’
‘ মৃত মানুষ যদি হয় টুকরো টুকরো ভালোবাসার পাহাড় তাহলে ভয় নয় উৎফুল্ল অনুভুতিতে মরে যেতে ইচ্ছে করে।’
‘আপনি এত মরি মরি করেন কেন?’’ আমার স্বপ্ন মৃত্যু।আমার ভালোবাসা মৃত্যু।আমি মরতে চাই।’’আমার চেয়েও মৃত্যুকে বেশি ভালোবাসেন?’রিঝ নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো,’হুম।তোমার থেকেও অনেক বেশি।অনেক অনেক।’তুতুল রাগ করলো।কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।হঠাৎ বলে উঠলো,‘ আচ্ছা আপনার কল্পনায় আমি সব সময় কালো শাড়িতে কেন থাকি?সাদা পাঞ্জাবিতে নই কেন?’রিঝ কথা বললো না।সামনে পাহাড়ের উঁচুনিচু সীমানার দিকে তাকিয়ে রইলো।শূন্য দৃষ্টিতে তাকে বড্ড বেখেয়ালি লাগছে।তুতুল রিনরিনে গলায় হাসলো।রিঝের মনে হলো মোহনীয় কোন যন্ত্রনা শরীরে ভর করছে।মাথাটা শূন্য শূন্য হয়ে যাচ্ছে।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।দূরের সেই পাহাড় সে আর দেখতে পাচ্ছে না।ক্রমেই ঘোলাটে হয়ে আসছে সেই দৃশ্য।রিঝ তুতুলকে থামতে বলবে,হুম থামতে বলবে ভেবে,সে তুতুলের চোখে চোখ রাখে।হায় সর্বনাশা চোখ!তার তো সব সর্বনাশ হয় এই গোল চোখের মায়াবী আগুনে।শরীরের সব হাড় এক সাথে মটমট করে ভেঙ্গে গেলে যেমন কষ্ট যন্ত্রনা অনুভব হয় রিঝের অনুভুতি তার চেয়ে একটু বেশি।লম্বা দাঁড়িতে রিঝের কোমল সুন্দর হৃদয় কাড়া মুখটা দেখা যাচ্ছে না।তুতুল গালে একবার আলতো হাতে হাত বুলিয়ে বললো,’বাড়ি ফিরবেন না?’রিঝ হাত গুলো গালে আরো লেপ্টে দিয়ে বললো,’ সংসার পেতেছি।’’জঙ্গলে?’ হুম।’ ‘ এভাবেই থাকবেন সারা জীবন?’খুব ইচ্ছে করছে রিঝের তুতুলের বুকের মাঝে লুকিয়ে সে ডুবে যেতে।মাথা রাখতে কোলে।জীবন কাল্পনিক নয় কেন?জীবনে কেন বাস্তবতা থাকে?গল্পেও কেন মৃত্যু থাকে?রিঝ তুতুলের শান্ত সতেজ চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।কত কত সময় পেরিয়ে গেল।সে চোখ সরিয়ে নিলো না।সময় পেরিয়ে যেতে লাগল।গোধূলি বেলা দৌড়ে দৌড়ে এলো।ভীর জমালো আকাশে।রিঝের মনে প্রশ্ন!কি প্রশ্ন যেন?প্রতিদিনের প্রশ্ন।প্রতিটি দিনের এই সময় জুড়ে যে প্রশ্ন তার সয়নে সপনে রয়ে যায়।নিস্তেজ প্রাণহীন কন্ঠে রিঝ জিজ্ঞেস করলো,একটা প্রশ্ন করি?’’কি প্রশ্ন?? ‘করলেই শুনতে পাবে।’
তুতুল হাসলো।ঠোঁটের উপরে হাত রেখে সেই হাসি অমাইক ভাবে ফুটিয়ে তুললো।তারপর বললো,’আচ্ছা বলুন।’
‘তোমাকে ভালোবেসে আমি কি পেয়েছি??জানতে খুব ইচ্ছে হয়।তুমি কি জানো??’তুতুল পশ্চিম আকাশের দিকে তাকায়।লাল ছাপ ক্রমেই যেন বাড়ছে।সে আর একটু ঘেঁষে বসলো।তারপর নিজের একটা হাত রিঝের হাঁটুতে রাখা হাতের ভাঁজে গুঁজে দিলো।হাতটা জড়িয়ে ধরে রিঝের কাঁধে মাথা রাখলো।রিঝ মাথা ঘুরিয়ে তুতুলের মুখের দিকে তাকালো।সূর্যের কমলা রং এসে পড়লো তুতুলের মুখে।সাদা রং পালটে লাল হয়ে উঠলো মুখটা।ঠোঁটের উপরে পড়ছে লাল কমলা ছাঁপ।তুতুল আলতো করে ঠোঁট জোড়া নেড়ে বললো,” ভালোবাসাটা হচ্ছে ফুলের মতো।কিভাবে জানেন??ফুল আপনার জন্য ফুটে না।সে অন্যকে নিজের রঙ্গে রাঙ্গীয়ে তুলতেই ফুঁটে।জন্মায়।এটাই তার ধর্ম।ভালোবাসাটাও তেমন।ভালোবেসে আপনি কখনোই নিজের জন্য কিছু আশা করতে পারবেন না।এটাই নিয়ম।ভালোবাসা হবে নিঃস্বার্থ।ফুল যেমন অন্যকে সৌন্দর্য দিতে দিতেই নিজে শুকিঁয়ে পড়ে এটাই তার ভালোবাসা।সে নিজেকে না তার আশেপাশের পরিবেশ প্রকৃতিকে,মানুষকে ভালোবাসে।তার বিনিময়ে সে তার সবচাইতে দামি সৌন্দর্য দেয়।কৃষ্ণচূড়াকে দেখন।সে নিজের জন্য কি রাখে??কিছুই না।সে নিজের গাছকে রাঙ্গীয়ে তুলে।নিজের ভিত্তি নিজের সেই পথকে রাঙ্গীয়ে তুলে।এটাই ফুলের কাজ।এটাই ভালোবাসা।ভালোবাসায় পাওয়ার আশা করতে নেই।আপনি জানেন না??’রিঝ নির্নিষন চোখে তাকিয়ে ছিলো।তুতুল মাথাটা একটু তুললো।তার কালো শাড়ি উড়তে শুরু করলো।আঁচল উড়ে রিঝের চোখেমুখে আছড়ে পড়তে শুরু করলো।রিঝ ঠোঁটে হাসি ঝুলালো।হাতটা ছাড়িয়ে তুতুলকে বুকের পাশে নিয়ে আসলে।এক হাতে জড়িয়ে নিলো।তারপর বললো,” তুমি সব সময় কৃষ্ণচূড়ার মতো ভালোবাসা খুঁজেছ।আমি তোমাকে সেই ভালোবাসা সারা জীবন দিয়ে যাবো।কৃষ্ণচূড়া যেমন নিজের রংকে ভালোবাসে।আমিও ঠিক একুই ভাবে তোমাকে ভালোবাসবো।আমি শিউলি হবো না।হবো কৃষ্ণচূড়া।যে আমৃত্যু নিজের রং ধরে রাখবে।ভালোবাসার রং।কৃষ্ণচূড়ার রং লাল।সেই লাল রং তুমি আমার জীবনের।আমি তোমাকে নিয়ে জীবন শেষ করবো।তুমি শুরু তুমি শেষ।তুমিই ভালোবাসা।তোমার স্মৃতিই বাঁচার আশা।শুনো আমার রং,তোমার চোখের পল্লবে পল্লবে আমি থাকতে চাই।এই ভাবেই ভালোবাসতে চাই।এভাবে জড়িয়েই বাঁচতে চাই।হোকনা সেটা স্বপ্ন।হোকনা সেটা কল্পনা।হোকনা সেটা স্মৃতি।আমি ভালো আছি।তোমাকে ভালোবেসে।”
চারপাশে ধোয়ার জন্ম হয়।সব উধাউ হয়ে যায়।কই?তুতুল কই গেল?রিঝ পাগলের মত খুঁজতে থাকে।তার কাঁধেই তো মাথা ছিল।এখন কই গেল?রিঝ উম্মাদের মতো আশেপাশের সব তন্ন তন্ন করে খুঁজে।পাগলের মত এদিক সেদিক দৌড়ায়।স্বপ্নের মত সব গায়েব হয়ে যাচ্ছে।তার স্বপ্ন,তার কল্পনা,তার জীবন,পৃথিবী সব আস্তে আস্তে বিলিন হয়ে গেলো।অন্ধকারের গভীর আতলে সে তলিয়ে গেল।চারপাশের সব অন্ধকার রিঝের কলিজায় ভর করে।বিষাক্ত বাতাসে ভরে উঠে তার শ্বাস।নিঃশ্বাস থমকে যায় গলার কাছে।মৃত্যুর জন্য হাহাকার বাড়তে থাকে।আর্তনাদ বাড়তে থাকে।বৃষ্টিও আসে।কেন এলো?ফোটা ফোটা পানি রিঝের মাথার ভিতরে তান্ডব করে। রিঝ চিৎকার করে উঠে।সেই চিৎকারের আর্তনাদে সব পাখিরা উড়ে যায়।গাছের সব ডালপালা নড়েচড়ে উঠে।কষ্টের ছাপ পড়ে পরিবেশে।দূর দূর থেকে মানুষ কান খাড়া করে শুনে।ওই তো চিৎকার!কি বেদনা দায়ক!কষ্টে সবার বুকটাও নাড়া খেয়ে উঠে বারে বারে।কাঁপতে থাকে শরীর।দ্রুত তারা রাস্তা ছাড়ে।ভুত প্রেতের ভয়ে কেউ এদিকে আসে না।জুম চাষীরা বড় বড় পা ফেলে পাহাড় থেকে নেমে পড়ে।দ্রুত বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।শরীরের হাড়ে হাড়ে ব্যথার জ্বালায় রিঝ হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়ে।মাথার প্রতিটি রগ যেন টনটন করে উঠে।কাঁট কাঁট করে ছিড়ছে।গলার রগ গুলো সব ফুলেফুলে উঠেছে।এই বুঝি ছিড়বে!ভয়ংকর শব্দ করে রিঝ মাথা চেপে ধরে।কষ্ট!খুব কষ্ট হচ্ছে।হৃদয় ছিড়ে খন্ড খন্ড হচ্ছে।মাথায় কেউ বাড়ি দিয়ে ভেঙ্গে গুড়ো করছে।কেমন যেন সব শব্দ শুনতে পাচ্ছে?এই শব্দ খুব ব্যথাদায়ক।
রিঝ পশ্চিম আকাশের দিকে তাকায়।চোখ গুলো শান্ত হয়ে আসে।শীতল একটা অনুভুতি হয়।সেদিকে তাকিয়েই সে হালকা হেঁসে উঠে।ঠোঁটের হাসি বজায় রেখে বিড়বিড় করে উঠে,’শুনো মেয়ে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে শুধু তোমাকে ভালোবেসেছি।ভালোবাসবো।এবং বেসেই যাবো।আমার ভালোবাসার তীব্রতা তুমি না এই পৃথিবীতে থেকে বুঝেছ,না ওই দুনিয়াতে থেকে বুঝবে।আমি ভালোবাসি তোমাকে।সাথে অসম্ভব ঘৃণা করি তোমাকে।আচ্ছা একটা মানুষকে আমি কিভাবে সমপরিমাণ ভালোবাসতে এবং ঘৃণা করতে পারি বলবে??পারবে তুমি।কিন্তু বলবে না।আমার সর্বাঙ্গে তোমার নামে লুকিয়ে আছে অসংখ্য ভালোবাসা।আমার প্রতিটি লোমকূপ দাড়িয়ে জানান দেয় আমি ভালোবাসতে জানি।শুধু তোমাকেই ভালোবাসতে জানি।তুমি হিনা নিঃস্ব এই শহরে একাকি আমার রাত্রি কাটে।সকাল হয়।দুপুর হয়।আবার রাত আসে।ঋতুর পরে ঋতু আসে।চশমার ফ্রেমে শিশির জমে।দিন পেরিয়ে মাস আসে।আসে বছর।তবুও ভালোবাসার প্রহর শেষ হয় না।
“সর্বনাশা প্রেম আমায় মাতাল করেছে
সব হারিয়ে আমায় আবার নিঃস্ব করেছে।
মাতাল হাওয়ায় ভাসিয়ে আমায় সুখ দিয়েছে
নিমিষেই সব সুখ কেড়ে নিয়ে দুঃখে ভাসিয়ে দিয়েছে।
তবুও ক্ষতবিক্ষত হৃদয় আমায়
শুধু তোমায় ভালোবাসায়।
শুধু তোমায় ভালোবাসতে শিখায়।”
বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা টপটপ করে রিঝের শরীর ছুঁয়ে দিচ্ছে।মাথা চেপে বসেই থাকে রিঝ।উঠে না।সব পাখি ঘরে ফিরছে।নিজেদের আপন ঠিকানায়।চুপচাপ নিনিবিলি হয়ে পড়ছে বৃষ্টি।রিঝ চিরকুটের লেখা বিড়বিড় করতে থাকে।
শরৎচন্দ্র বলেছিলেন,
‘যাহাকে ভালোবাসি সে যদি ভালো না বাসে,
এমনকি ঘৃণাও করে তাও বোধ করি সহ্য হয়!
কিন্তু যাহার ভালবাসা পাইয়াছি
বলিয়া বিশ্বাস করেছি, সেইখানে ভুল
ভাঙ্গিয়া যাওয়াটাই সবচেয়ে নিদারুন।
পূর্বের টা ব্যাথা দেয়।
কিন্তু শেষের টা ব্যাথাও দেয়, অপমান ও করে।
____ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (চরিত্রহীন)।যদিও কথাটার ভাব ভিন্ন তবুও কোথাও যেন এই ভালোবাসাটা তেমনই।পেয়েও হারিয়ে ফেলা কেমন বিচার?এত কাছে থেকে!এত সামনে থেকেও না পাওয়ার বেদনা কুড়েকুড়ে খাচ্ছে রিঝকে।যদি ভালো শুধু সেই বাসতো তবে সে নিজেকে বুঝাতে পারতো।যার ভালোবাসা সারা জীবন অর্জন করতে চেয়েছিল,তা পেয়েও ছুঁয়ে দেখতে পারলো না এর কষ্ট সে কাকে বুঝাবে?সত্যি আল্লাহর চেয়ে বড় শক্তিশালী কেউ নেই।তিনি সর্বশক্তিমান।এবং সব শক্তির অধিকারী।মানুষ শুধু মানুষের সাথেই লড়াই করে যেতে পারবে।যেমন রিঝ ইয়াজের সাথে করেছে।মৃত্যুতে এসে সবাই ঠেকে!এটাই বাস্তবতা।রিঝের প্রচন্ড শীত করছে।ঠান্ডা যেন হুহু করেই তার শরীরে জড়িয়ে পড়ছে।সন্ধ্যা!রাত!!ভয়ঙ্কর অনুভুতি হচ্ছে তার।এই অন্ধকারকে সে প্রচন্ড ভয় পায়।বুক ভার হয়ে আসে।চোখের কানায় কানায় জমে উঠে দুঃখের সমুদ্র।শরীর থরথর করে কাঁপে।রিঝ কাপঁনি দিয়ে উঠছে।পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব কাঁপছে তার।দু’হাতে নিজের বাহু জড়িয়ে ধরে সে।তাতেও নিজেকে থামাতে পারছে না সে।হাত জড়ো করে সে বসে পড়ে পাহাড়ের কিনারে।বসায় ঠান্ডা লাগছে আরো বেশি।এই তো সেই সন্ধ্যা,সেই রাত,অজস্র সুখের দৃশ্য রিঝের চারপাশে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।প্রতিটি কালো রাত তাকে মৃত্যুর গভীরে তলিয়ে নিয়ে যায়।অনুভব করায় তুমি হারিয়েছ।আর পাবে না।তুমি নিঃস্ব।পৃথিবীর কাছে তুমি আহত।তুমি দূর্বল,সময়ের কাছে।তুমি ক্ষতবিক্ষত,নিজের ভালোবাসার কাছে।রিঝের শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।সে শ্বাস নিতে পারছে না।দম বন্ধকর অনুভুতিতে তার দম আটকে আসছে।গলায় যেনো নিঃশ্বাস দলা পাকিয়ে গেছে।শরীরের রক্ত চলাচল যেন বন্ধ হয়ে আসছে।এটাই কি মৃত্যু যন্ত্রনা??রিঝ বাঁকা হয়ে পা গুটিয়ে শুয়ে পরে।নিজের হাত পা কুন্ডলী পাকিয়ে নিয়েছে।কাঁপছে ভয়ংকর রূপে।যেন ভূমিকম্প হচ্ছে তার শরীরে।চোখ দিয়ে না চাইতেই গড়িয়ে পড়ছে অজস্র নোনাজল।ভয়ঙ্কর মৃত্যু যেন অশরীরী আত্নার মতো তার আশেপাশে ঘুপাক খাচ্ছে।কিন্তু সে জানে ধরা দিবে না।মানুষ যখন কোন কিছুকে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চায়,সেটা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে তা সে কখনোই পায় না।তাই সর্বোচ্চ দিয়ে কিছুই চাওয়া উঁচিত না।কখনোই না।রিঝ চোখ বুজে নেয়।ভেসে উঠে রক্তাক্ত দেহ।বাঁচতে চাওয়ার আকুতি।ভালোবাসার শেষ নিঃশ্বাস।সেই দীর্ঘ বিশাল শ্বাস।যা তাকে কাঁপিয়ে তুলে আরো ভয়ঙ্কর ভাবে।শরীর থরথর থেকে আরো ভয়ঙ্কর মাত্রায় কাঁপছে।রিঝের প্রচন্ড ইচ্ছে এই কম্পনে সে যেন নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।মৃত্যুর শেষ আর্তনাদের দৃশ্য আর দেখতে পেলো না রিঝ।চটকরেই চোখটা খুলে হেঁসে উঠে।দাঁতে দাঁত চেপে উচ্চারন করে,’আগে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে তোমাকে চাইতাম।এখন আমি মৃত্যুকে চাই।সেই তুমি যেমন আমার হলে না,মৃত্যুও সহজে আমার হবে না।আগে আমি সর্বস্ব দিয়ে তোমায় ভালোবাসতাম।এখন আমি প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে ভালোবাসছি।হ্যাঁ আমি মৃত্যুকে ভালোবাসি।”
অন্ধকার চারপাশকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসে।বাতাসে গাছের মাথা গুলো হেলেদুলে পড়ছে।ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকে।রিঝ পকেট থেকে বের করে সাদা উড়না।নিজের শরীরে জড়িয়ে নেয় সেই উড়না।কাঁপানী কমে থেমে থেমে।ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পরে রিঝের দেহ।দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে পরে চারপাশে।
“ কিছু বিচ্ছেদ মানুষকে মৃত প্রায় জীবিত রাখে।”
_____________________সমাপ্তি।
অবশেষে শেষ!তবে আমি জানি শেষ পড়ে কারোই ভালো লাগবে না।কিন্তু আমার কিছুই করার ছিলো না।এই গল্পের শেষটা এমনই ছিল।গল্পে রিঝ হচ্ছে অদ্ভুত এক চরিত্র।যে এতো কিছু করেও কিছুই পেলো না।দিন শেষে সৃষ্টিকর্তার কাছে সে হেরে গিয়েছে।গল্পে তুতুল হচ্ছে এমন একটি চরিত্র যাকে তার চারপাশের প্রিয়জনেরা শুধু শুধু কোন কারণ ছাড়াই বেশি ভালোবাসে।গল্পে তুতুলের আসল বাবা মায়ের খোঁজ ইচ্ছে করেই দেওয়া হয়নি।কারণ এখানে বুঝাতে চেয়েছি তুতুল আপন কেউ না।তাকে কুড়িয়ে পাওয়া হয়েছে।তবুও তাকে অসীম ভালোবাসা দিয়েছে তার মা,বাবা,বিশেষ করে তার ভাই।শুধু শুধু ভালোবাসার এটা একটা প্রমান।প্রতিটি মানুষ তাকে এত ভালোবাসতো।তবুও সে সারা জীবন সেই ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারলো না।গল্পটার আসল মানে হচ্ছে,অনেক সময় আমরা খুব করে কিছু জিনিস চাই।যার জন্য আমরা সব করতে পারি বা করি।একটা সময় সেই জিনিসটা আমরা পেয়েও যাই।কিন্তু যদি সেই জিনিস এত কষ্টের পরে পেয়েও হারিয়ে যায় তখন অনুভুতির অবস্থা কেমন হয় এটাই ছিল গল্পের মাঝে।অনেক সময় নষ্ট করেছি সবার।নিয়মিত গল্প দিতাম না।অনেক দিন পর পর দিতাম।তবুও কিছু পাঠক অপেক্ষা করেছে তাদের দেখে আমি সত্যি অবাক!আমার মনে হয়েছে তারা আমাকে তুতুলের মতই শুধু শুধু ভালোবেসেছে।তা না হলে এত অপেক্ষা যে লেখক করাতো তাকে ভালোবাসা পাঠকদের কাজ নয়।আমি নিজে একজন পাঠক।বইয়ের পরের পৃষ্ঠায় কি আছে জানার জন্যেই আমার অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করেনা।সেখানে আমি আপনাদের প্রায় দশদিনেরও বেশি সময় নিয়ে অপেক্ষা করিয়েছি।দুঃখিত বলা ছাড়া নিজের কৃতকর্মের জন্য আমার কাছে কিছুই নেই।আমি দুঃখি।আর হ্যাঁ এই গল্পটির কিছু অংশ আমি বাস্তব থেকে নিয়েছি।আজ শেয়ার করছি কারণ অনেকে ভাবতে পারেন আমি হুট করেই কেন সেড করে দিয়েছি গল্পটাকে।আসলে বাস্তব জীবনেও হুট করেই দুঃখ এসেছিল তাই।সামান্য কিছু মিল রয়েছে।বাকি সব আমি নিজেই তৈরি করে সাজিয়েছি।
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।আল্লাহ হাফেজ।পরের গল্প সেদিনই দিবো যেদিন একটু দ্রুত গল্প দিতে পারবো।পাঠকদের জন্যে কিছু করতে পারবো।বিশেষ করে যারা শুধু শুধুই ভালোবেসেছেন।তাদের জন্যে হলেও আমি আসবো।এমন কিছু নিয়ে যা একটু অদ্ভুত হবে আলাদা হবে।ভালোবাসা সকলের জন্য।
#সমাপ্ত!