#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
পর্ব : ১৩
.
বিয়ের রাতে বেনারসী শাড়ি পড়ে ছাদে যখন ঘুরঘুর করছিলো তখন তো পুরাই দেওভূত লাগছিলো । আর আজ তো শাড়ি পড়লে পুরাই শ্যাওড়া গাছের পেত্নী লাগবে !
.
আদ্রাফের কথা শুনে মেহের যেন বিস্মিত। সিরিয়াসলি ! শ্যাওড়া গাছের পেত্নী? এই উপাধি শুনে মেহেরের মরে যেতে মন চাচ্ছে। আয়ানায় আবারো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকে নিজেকে যে ঠিক কি কারনে আদ্রাফ মেহেরকে এ কথা বললো। কিন্ত অদ্ভুত বিষয় ; মেহেরের কাছে এরকম কিছুই লাগছে না। মেহের রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় আদ্রাফের দিকে।
.
আদ্রাফ এখনও নিজের কাজে মগ্ন। মেহের এবার গর্জে বলে ওঠে……..
.
—-কোন আ্যঙ্গেল থেকে আমায় শেওড়া গাছের পেত্নী লাগছে একটু বলবে?
.
—-এসব শাড়ি টাড়ি বাদ দিয়ে অন্য কিছু পড়ো। তোমার মতো দস্যু মেয়েকে শাড়ি মানায় না।
.
আদ্রাফের কথায় মেহের এবার বিরক্ত। শুধু বিরক্ত বললে ভুল হবে ; প্রচন্ড পরিমাণে বিরক্ত। কই একটু ভেবেছিলো আদ্রাফও বুঝি ওর প্রেমে পড়ে যাবে কিন্ত হলো আরও উল্টো। মুখ ফুলিয়ে বলে ওঠে……….
.
—-হুহ ! শাড়ি না পড়ে ওয়েস্টান পড়লে ভালো হতো। তখন আর শ্যাওড়া গাছের পেত্নী না লাগলেও পাক্কা সানি লিওন লাগবে।😁
.
এই বলে মেহের দাঁত কেলিয়ে আদ্রাফের দিকে তাকাতেই মুখের হাসিটা কেমন করে যেন মিলিয়ে যায়। আদ্রাফের চোখ-মুখ অদ্ভুদ কারনেই একেবারে লাল হয়ে গিয়েছে। ফাইল রেখে সে শান্তভাবে এগিয়ে আসতে থাকে মেহেরের দিকে। এটাই বুঝি ঝড়ের পূর্বাভাস। মেহেরের পিঠ একপর্যায়ে দেয়ালে ঠেকে যেতেই আদ্রাফ একেবারে মিশে দাঁড়ায় মেহেরের সাথে।
মেহেরের শ্বাসের গতি এবার যেন বেড়ে গিয়েছে।
.
—-এতই যখন সানি লিওন সাজার ইচ্ছা আমিও তবে নাহয় ইমরান হাশমি হয়ে যাই,……….কি বলো?
.
এতক্ষণ শ্বাসের গতি বেড়ে থাকলেও আদ্রাফের কথা শুনে মেহেরের শ্বাস একেবারে নিঃশ্বেস হয়ে গিয়েছে। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে সে আদ্রাফের দিকে। এ আবার কেমন কথা?তবে কি আদ্রাফও ইমরান হাশমির মতো উল্টাপাল্টা কাজ করবে বলছে? ছিঃ
.
—–নাউযুবিল্লাহ ! দেখো আদ্রাফ? আমি ভদ্র মেয়ে । আমার সাথে এমন লুতুপুতুমার্কা কাজ করবে না খবরদার !
.
—–তুমি করলে কিছু না আর আমি করলে তা লুতুপুতুমার্কা হয়ে যাবে? How Stunning !
.
এই কথাটা একপ্রকার মেহেরের ওপর হালকা ঝুঁকে পড়েই বলেছে আদ্রাফ। তার সব সাজানো গোছানো কথাগুলো নিমিষেই যেনো হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো উধাও হয়ে ।
ছোট ছোট চোখ করে সে বলে ওঠে,
.
—–তোমার সাথে কথা বলাই বেকার………..
.
—– এখন তো এ কথাই বলবে………
.
—–আমায় ভার্সিটি দিয়ে আসবে কি-না?
.
দাঁতে দাঁত চেপে আদ্রাফকে মেহের প্রশ্ন ছুড়ে মারে। আদ্রাফ বলে ওঠে…..
.
—–তাহলে কে দিয়ে আসবে হ্যাঁ। একা তো কখনই ছাড়ছি না তোমায়। এমনিতেও পেত্নী লাগছে । না জানি রাস্তায় কতজনের মাথায় চড়ে বসবে।
নিচে চলো?😒
.
.
.
.
.
চরম বিরক্তি নিয়ে মেহের নাদিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তার সাথেই আদ্রাফ দাঁড়ানো। নাদিয়া আসতেই সে চলে যাবে। কিন্ত মেহেরকে এখন একা ছাড়বে না সে। এমনিতেও ক’দিন আগে ভার্সিটির সিনিয়রদের সাথে ঝামেলা বাড়িয়েছে তাও আবার এখানকার পপুলার পাওয়ারকে। তাই মেহেরকে আদ্রাফ মোটেও একা ছাড়বে না।
.
—-বুঝতেসিনা নাদিয়া কি তীর্থ যাত্রা করে ভার্সিটিতে আসবো নাকি?
.
মেহেরের কথা শুনে আদ্রাফ ওর দিকে মনোনিবেশ করে। মেহেরের চোখ-মুখ বলে দিচ্ছে যে কতটা অধৈর্য হয়ে পড়েছে সে।
.
—–সবাই কি তোমার মতো মানুষের মাথায় পেত্নী সেজে চেপে বসবে নাকি ! একটু ওয়েট করো। টাইমমতো ঠিকই এসে পড়বে।
.
—–আমার সাথে ভালোমতো কথা বললে এই ব্যাটার মহাভারত কি অশুদ্ধ হয়ে যাইবো………………কিছু বুঝিনা [মেহের মনেমনে]
.
কিছুক্ষণ পরেই নাদিয়া এসে পড়ে সাদাতকে নিয়ে। নাদিয়া আজকে সবুজ রঙের শাড়ি পড়েছে যা ওর গায়ের সাথে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। সাদাতও সবুজ রঙের একটা পান্জাবী পড়েছে। দুজনের জুটিটা বলতে গেলে একেবারে চমৎকার লাগছে। মেহের খুশিতে গদগদ হয়ে বলে ওঠে……
.
—-দোস্তোওও ! তোরে একেবারে ঝাক্কাস লাগছে। আর ভাইয়া তোমাকেও। তবে তোমার বউয়ের থেকে বেশি না।
.
সাদাত হেসে দেয় মেহেরের কথা শুনে।
.
—-এটা বলতে পারলে মেহের? আমি তো ভেবেছিলাম কতজনকে আমার সুন্দর রূপ দিয়ে ঘায়েল করবো,,,,,,,,
.
আর কিছু বলতে যাবে সে তবে নাদিয়ার দৃষ্টি দেখে সে থেমে যায়। আদ্রাফ এতক্ষণ নীরব দর্শকের মতো ছিলো। সবার কথা শেষ হতেই আদ্রাফ সাদাতকে বলে ওঠে…………
.
—–দেখো সাদাত ভাই ! আমি জানি যে নবীনবরণের অনুষ্ঠানের জন্য তুমি অনেক ব্যস্ত থাকতে পারো। কিন্ত সময় পেলে খেয়াল রাখবে যে পাগল দুইটায় আবার যে ওই সিনিয়র গ্রুপের কাছে না যায়।
.
——আমি চেষ্টা করবো।
.
——আর কতবার বলবে একই কথা? বলেছিতো যাবোনা।
মেহেরের মিনমিনিয়ে কথা বলা দেখে আদ্রাফ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। যেন মেহেরের আর কোনো কথারই দাম নেই আদ্রাফের কাছে।মেহেরের হাত নিজের কাছে নিয়ে এসে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে…….
.
—–একবার না হাজারবার একই কথা বলবো। কারন তোমায় সম্পূর্ণ সেফ রাখতে চাই আমি।আশা করি আমার কথার আর নড়চড় হবে না। Take care of yourself………
.
আদ্রাফ একথা বলেই সেখান থেকে চলে যায়। মেহের একটা নীরব চাহিনী দিয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে। মেহেরের কাছে আদৌ এটা অজানা যে ছেলেটা তাকে ভালোবাসে কি না? মাঝে মাঝে তার ছোট ছোট যত্নে গড়া কথাগুলোও যেন অন্য দুনিয়ায় নিয়ে যায় মেহেরকে। হয়তো এটাই আদ্রাফের সুপ্ত কোণে থাকা এক বদ্ধ অনুভূতি !
.
.
.
.
ভার্সিটির চারিদিকের উৎসবমুখর পরিবেশের মাঝ দিয়েই প্রবেশ করে শাওন আর তার বাকি বন্ধুরা। শাওন আজ ব্ল্যাক কালার পান্জাবী পড়েছে। চুলগুলো হালকা স্পাইক করা। হাতে রয়েছে একটি সিলভার ওয়াচ। পুরাই যেন একটা ক্রাশ বয়। তার অন্যান্য বন্ধুদেরও বেশ চমৎকার লাগছে বিশেষ করে নিশিকে। নিশি অন্য চার-পাঁচটা মেয়ের মতো শাড়ি না পড়ে সিলভার রঙের একটি গাউন পড়েছে। মুখে রয়েছে ডার্ক মেকাপ।
.
নিশিকে দেখলে যে কেউ এটাই বলবে যে এই মেয়েকে শাড়ি না পড়ে গাউনেই বেশি মানাচ্ছে। রাহাত আশেপাশের মেয়েগুলোকে দেখছে আর ছোটখাটো মন্তব্য করে চলছে রাতুলের সাথে। শাওন এবার দুজনকে ধমক দিয়ে বলে ওঠে………
.
——এসব silly fact নিয়ে আলোচনা আমি মোটেও পছন্দ করে না। So shut up !
.
রাতুল এবার বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে……….
.
—–শালা নিজে তো ফ্লাটিং করস না আমারেও করতে দেস না।
.
.
.
.
শাওনকে স্টেজের কাছে দেখতেই মেহের সেদিকে আর এগোয় না। যদিও শাওনকে সে মোটেও ভয় পায় না তবুও শুধুমাত্র আদ্রাফের কথা মানার জন্যই অডিয়েন্স সিটে বসেছে সে। একে একে অনেকেই পার্ফম করছে স্টেজে।
কিন্ত মেহের আর নাদিয়া নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতা চালাচ্ছে। নবীনবরণের অনুষ্ঠানটি বলতে গেলে একেবারে চমৎকারভাবেই চলছে। মেহের এবার স্টেজে উঠে দাঁড়ায় একজন নিউ স্টুডেন্ট হিসেবে কিছু স্পীচ দেয়ার জন্য।
এত মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে বুকটা ধকধক করছে মেহেরের। যদিও এ কোনো নতুন অভিজ্ঞতা না কিন্ত বিষয়টি খুবই রোমাঞ্চকর মনে হয় মেহেরের কাছে।শাওন স্টেজের একপ্রান্তে নীরব চাহিনী দিয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরের প্রতিটা কার্যকলাপের দিকে।
.
একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে মেহের কিছু বলা শুরু করবে তখনই ঘটে গেলো এক দুর্ঘটনা। শর্ট সার্কিট হয়ার কারনে অডিটোরিয়ামে আগুন লেগে গিয়েছে। চারিদিকে আগুনের ছড়াছড়ি।
.
আগুনের তাপদাহ স্টেজকে ঘিরে থাকার কারনে সেখান থেকে বেরোতে পারছে না মেহের। সবাই মোটামুটি ছুটোছুটি করা শুরু করেছে। কালো ধোঁয়ার প্রবাহে মেহেরের নিঃশ্বাস ক্রমাগত ভারী হয়ে যাচ্ছে। চোখদুটোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আবছাভাবে। অদূরেই নাদিয়ার চিৎকার তার কানে বেজে উঠতেই মেহেরের মনে ভয়ের সঞ্চার হয়।
এই আগুনরাশির জালে সে কি তবে ভস্ম হয়ে যাবে? তবে কি কখনোই সে পারবে না আদ্রাফকে তার মনের অনুভূতি ব্যক্ত করতে।
.
.
মেহেরের জীবন প্রহর হয়তো এখানেই থেমে যাবে এটা বিশ্বাস করতে হচ্ছে তাকে। কিন্ত না ; তার একটুকরো আশায় আলোর ঝলক হয়ে আসে একজন। হাত বাড়িয়ে আগলে নেয় মেহেরকে। তার বুকের হৃদপিন্ড কড়াকড়িভাবে মেহের অনুভব করতে পারছে। কিন্ত কে এই আগন্তুক যে তাকে আগুনের গন্ডি থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসছে।
.
চোখ খোলার জন্য মেহেরের নিউরন যেনো সাড়া দিচ্ছে না। তবুও একপ্রকার যুদ্ধ করেই পিটপিট করে চোখ খুলে মেহের। আবছাভাবেদেখতে পায় শাওনের বিবর্ণ মুখ। এতটুকু দেখেই মেহের স্তব্ধ। ধীরে ধীরে সে মিলিয়ে যায় কোনো অজানা এক রাজত্বে।
.
.
.
সারা হসপিটাল মাথায় তুলে ফেলেছে শাওন। কোনো বার্ন স্পেশালিস্টকে না পেয়ে একপ্রকার তান্ডব রটিয়ে দিয়েছে । শাওনের বাবা যেহেতু বড় রাজনৈতিক নেতা তাই এখানে সবাই ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে। প্রায় আধঘন্টা পর ডক্টর আসতেই শাওন প্রখর গলায় বলে ওঠে……..
.
—-Doctor ! Operate her imidiately…….She is in danger!
.
মূলত মেহেরের উদ্দেশ্যেই শাওন এমন করছে। ডাক্তার একটু সাহস জুগিয়ে বলে ওঠে……….
.
—–Yes ; I tried my best….but আপনাকে একটা কনফার্ম লেটার সাইন করতে হবে এক্ষুণি। কি হয় মেয়েটি আপনার?
.
—–আমার বোন হয়……….Is it clear for you?
.
.
.#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব : ১৪
.
সময়ের প্রবাহ কেমন যেন থমকে গিয়েছে। বাইরে চলছে মুষলধারে বৃষ্টি। ভার্সিটির অডিটরিয়ামে অনেকেই আহত হয়েছে আগুনের দুর্ঘটনার কারনে। ওটির সামনে গুমশুম মেরে বসে আছে শাওন। পাশেই দাঁড়ানো সাদাত আর নাদিয়া। আদ্রাফকে এখনও কিছুই জানায়নি দুজনে। তবে মাকে জানিয়ে দিয়েছে। মা আদ্রাফকে বলেছে কি-না নাদিয়ার কাছে তা অজানা।
শাওনকে যেন নতুনভাবে দেখছে সবাই। নিজেকে যতটা খারাপ প্রমাণ করতে চায় সে ততটাও খারাপ না। তবে শাওন যে মনে মনে কি ভাবছে তার পাশে বসে থাকা নিশা , রাহাত, রাতুল , কেউই বুঝতে পারছে না।
.
প্রায় আধাঘন্টা ঘনিয়ে এসেছে কিন্ত অপারেশন থিয়েটার থেকে কেউই বের হচ্ছে না। শাওনের মাথাটা জুবুথুবু হয়ে আছে দুশ্চিন্তার কারনে। জানেনা , কেন এত দুশ্চিন্তা ওই মেয়েটার জন্য যে ওকে সবার সামনে থাপ্পড় মেরেছে। তার ঘৃণাটা সে প্রকাশ করতে পারছে না এটা ভাবতেই অবাক লাগছে শাওনের। এটা কি কখনো সম্ভব ?
যে শাওন চৌধুরি শুধু মারপিট-খুন খারাপি……বার-নাইট ক্লাব , হুইস্কি-আ্যলকোহল ছাড়া কিছুই বুঝতো না সে কি-না একটি সামান্য মেয়ের জন্য হসপিটালে বসে আছে, তাও আবার নিজের বোনের পরিচয় দিয়ে…..?
.
আর কিছু ভাবতে চাচ্ছে না সে। কেননা সে তার মনস্থির করে রেখেছে যে ; ”যে ভাবেই হোক , মেহেরকে বাঁচতে হবে।”
.
.
অগোছালোভাবে আদ্রাফ এসেছে ওটির সামনে। নাদিয়া আর সাদাতকে একপাশে দেখতে পেয়ে মস্তিষ্কের নিউরন যেন ওর সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মায়ের কল পেতেই যখন মেহেরের দুরবস্থার কথা শুনলো সাথে সাথেই অফিসের কাজ ফেলে মা-বাবার সাথে এখানে এসে পড়ে।
মেহেরর এ অবস্থা যেন কিছুতেই আদ্রাফ মানতে পারছে না। শাওন এবার চোখ তুলে তাকায় আদ্রাফের দিকে। আদ্রাফের দৃষ্টি বিধ্ধস্ত। মলিন মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে ওটির দরজার সামনে। গ্লাস ভেদ করে মেহেরের অক্সিজেন মাস্ক লাগানো মুখ দেখে আদ্রাফের নিঃশ্বাসও যেন সে পর্যায়ে আটকে গিয়েছে।
.
——আল্লাহর উপর ভরসা রাখো বাবা ! মেহেরের কিছুই হবে না।
.
আদ্রাফকে আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করে তার বাবা। আদ্রাফ বিনিময়ে কিছু বলে না। কি বলবে সে? যেই মেহের সবসময় দুষ্টুমিতে মেতে থাকতো তার এ অবস্থা কোন আপনজনই বা সহ্য করতে পারবে? হ্যাঁ রেগে ছিলো সে মেহেরের ওপর। তাই বলে মেহেরকে এত দূর করতে চায়নি সে।
.
হঠাৎ ওটির থেকে ডাক্তার বের হওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারকে ঘিরে সবাই জড়ো হয়ে দাঁড়ায়। আদ্রাফ একরাশ আশা নিয়ে তাকে প্রশ্ন করে……….
.
—-Doctor? How about she?
.
—-খুব একটা ভালো না। পেশেন্টের maybe কোনো ফোবিয়া আছে যার জন্য লাগামহীনভাবে নাক ও কান থেকে রক্ত পড়ছে যেদিকে এটা burn case…… We need O+ blood in emergency….
.
—-I have O+ blood…….
তাদের কথার মাঝে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে ওঠে শাওন। সবার দৃষ্টি পড়েছে এবার শাওনের দিকে। ডাক্তার একথা শুনে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। শাওন চৌধুরি কখনোই কাউকে ব্লাড দেয়নি সেখানে এখন ব্লাড দিলে ডাক্তারের ওপর কোনো উপর থেকে চাপ প্রয়োগ করবে এটা ভেবেই ডাক্তার ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে ওঠে…
.
—-Sorry Sir ! আপনার ব্লাড আমরা নিতে পারবো না। আপনার বাবা তাহলে আমাদের জানে মেরেও ফেলতে পারে।
.
এ কথা শুনে পাশের টেবিলে থাকা স্যাভলনের কাচের কৌটোটি সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে শাওন।
.
—-আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে। আমার কথা না শুনলে আমি তোমাদের শেষ করে ফেলবো। সো আমার কথা শুনবে নাকি আমার so called dad এর কথা শুনবে?
.
শাওনের হঠাৎ রাগাত্নক আক্রমণে ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়েছে ডাক্তারসহ বাকি নার্সরা। এখন শাওনের কথা না মানা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তাদের কাছে। অগত্যাই তারা নিজেদের কাজে লেগে পড়ে।
.
.
.
.
সকল ক্রিয়া শেষ করার পর নিজের জায়গায় বসে আছে শাওন। নিশা শাওনের কাধে হাত রাখতেই শাওন নিশার দিকে তাকায়।
.
—-রিলেক্স শাওন ! মেয়েটার কিছুই হবে না।
.
আদ্রাফ শক্ত রেখেছে নিজেকে। মেহেরকে হারানোর কথা কিছুতেই সে কল্পনা করতে পারবে না। মেহের নিজের দুষ্টুমি দিয়েই আদ্রাফের মনে জায়গা করে নিয়েছে নিজের। এক অবাধ্য অনুভূতির। মেহেরের মুখ ফুলানো ; কথা আটকিয়ে যাওয়া , তার ঠোঁটের স্পর্শ সবকিছুই পাগল করে দিতো আদ্রাফকে। তবে কি আদ্রাফ কখনোই অনুভব করতে পারবে তার মেহুর অবচেতন সেই স্পর্শ?
.
ওটির লাইট অফ হতেই সবার ধ্যান পুনরায় সেদিকে মনোনিবেশ করে। আদ্রাফ উঠে আকুলকন্ঠে ডাক্তারকে প্রশ্ন করে……..
.
—What happend ? মেহু……….ঠিকাছে তো?
.
শেষ কথাটুকু বলতে গিয়ে দম আটকে আসে আদ্রাফের। যেন মেহুর অন্তিম পরিণতি নিজের চোখে কখনোই সে সয্য করতে পারবে না। ডাক্তার তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে ওঠে…..
.
—-yeah youngman ! আল্লাহ তোমার কথা শুনেছে। She is absolutely fine……
.
আদ্রাফের বুকের থেকে যেন একটা চাপা পাথর সরে আসে । স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সবাই। ডাক্তার এবার বলে ওঠে……
.
—-তবে ধোয়ার মুখোমুখি হওয়াতে ফুসফুসে কিছু প্রবলেম আছে। Patient কে always air pollution থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। তাকে কেবিনে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।
.
নিশা, রাহাত, রাতুল সকলের মুখেই এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে শুধুমাত্র শাওন ছাড়া। তার চেহারা বরাবরের মতোই প্রতিক্রিয়াহীন। চোখের সামনে বারবার তার ভেসে আসছে কিছু করুন দৃশ্য। সবার চোখের অগোচরে নীরবেই হসপিটাল থেকে চলে আসে সে।
.
.
.
দুপুরের প্রহর পেরিয়ে বাইরে এখন দৃশ্যমান বিকেলের মৃদু আলোর খেলা। পিটপিট করে চোখ খুলতেই মেহেরের চোখ প্রথমে কেবিনের জানালার দিকে যায়। সারা পরিবেশ নিস্তব্ধ। মেহের মনে করার চেষ্টা করছে তার জ্ঞান হারাবার আগের ঘটনাগুলো। কিন্ত অজানাভাবে শাওনের বিবর্ণ মুখ ছাড়া আর কিছুই কল্পনা করতে পারছে না। তাকে চোখ খুলতে দেখে আদ্রাফ সোফা থেকে উঠে মেহেরের কাছে গিয়ে বসে।
.
আদ্রাফের চোখযুগল বলতে গেলে একেবারেই মলিন হয়ে আছে। মেহেরের চোখ ছলছল করে ওঠে আদ্রাফের এ অবস্থা দেখে। কেননা ওর মনে হয়েছিলো যে ও হয়তো কখনোই আদ্রাফকে তার মনের কথা বলতে পারবে না।
নিজের দুহাতে মেহেরের মুখ আগলে নিয়ে আদ্রাফ মেহেরের সারামুখে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে। মেহের আনমনে আদ্রাফের এক হাত দুরবলধাবে খামচে ধরেছে। বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রাফ মেহেরে কপালের সাথে নিজের কপাল লাগিয়ে দেয়।
সারাঘরে বিরাজ করছে কেমন যেন এক নিস্তব্দ্ধতা। দুজনের নিঃশ্বাস একে অপরের সাথে খেলা করতে মগ্ন। আদ্রাফ চোখ বন্ধ করে উদাসীন গলায় বলে ওঠে………
.
—–আজ তুমি হারিয়ে গেলে আমি নিজেও হারিয়ে যেতাম মেহু। এই মেহেরহীন আদ্রাফ একেবারে বিলীন হয়ে যেতাম। I can’t live anymore Mehu without you……Because you are my lifeline……
.
.
.
.
.
~চলবে
ভুলক্রুটি ক্ষমাসুলভ চোখে দেখবেন।
.
.
~চলবে
আজ সকালে একটা দিলাম আর এখন ১টা। তবে গল্পটি আমি বেশি আর এগিয়ে নিতে চাচ্ছিনা। অনেকেই গল্প পড়ে হয়তো বিরক্ত হচ্ছেন। আপনাদের আর বিরক্ত না করে চেষ্টা করবো খুব শীঘ্রই ইতি টেনে দিতে।