#মেঘ-বৃষ্টি
❤❤পর্ব=১১
রোদ-রোদেলা
#তানিয়া[আনিতা]
বৃষ্টি আর রোদ দুজনে দ্রুত গতিতে নিচে নেমে গেল।বৃষ্টি গিয়ে আবার রিসিপশনে বসলো আর রোদ একপাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিকে দেখছে।রোদ লক্ষ্য করল রোদেলা তাকে দূর থেকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। রোদ সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকাবে ঠিক তার সামনে মেঘ এসে দাড়ালো।
——তো কেমন লাগলো আমাদের বাড়ি
কথা টা শুনে থতমত খেয়ে উত্তর দিল
——মা….মানে
——না বলছিলাম এই প্রথম তো এলে আমাদের বাড়িতে তো কেমন লাগছে
——ভালোই লাগছে যেটা দেখার জন্য এসেছিলাম সেটাই দেখা হয়ে গেছে।
বলে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল। মেঘ বুঝতে পারল রোদ কি বুঝাতে চাইছে তাই কিছুটা রাগ নিয়ে জিজ্ঞেস করল
——তো খাবে না এসো খাওয়ার জায়গায় নিয়ে যায়
রোদ হেসে উত্তর দিল
—— থাক না জুতা মেরে গরু দান নাই বা করলে।কিন্তু কি জানাতো খেলাটা তুমি খুব ভালোই খেলেছো।মানতে হবে বুদ্ধি আছে তোমার।
——সব তো জেনেই গেছো তাহলে বলেই ফেলি সত্যি বলতো বৃষ্টি এসবের কিছুই জানতো না নিখুঁতভাবে সবটা আমি সাজিয়েছি। অফিসে জব দেওয়া, রেজিস্টি পেপারে সাইন করা সব আমার চাল ছিল আসলে কি বলবো যাকে ভালোবাসি তাকে কি করে অন্যের হতে দেয় আর বৃষ্টি ও আমাকে নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করবে না তাই এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হলো।বুঝোই তো সেই ভার্সীটি থেকে ভালোবেসে আসছি কিন্তু বৃষ্টি কিছুতেই আমাকে মানছে না তাই এক প্রকার বাধ্য হয়ে এমন কাজ করতে হয়েছে। হয়তো পথটা ভুল ছিল কিন্তু মানুষটাকে তো পেলাম।
——আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা তুমি কেড়ে নিয়েছো তাই আমি ও তোমার সবচেয়ে কাছের জিনিসটা কেড়ে নিব। মনে করো না জিতে গেলে আমি তোমাকে কখনো বৃষ্টিকে পেতে দিব না এরজন্য যা যা করতে হয় আমি সব করব, বৃষ্টিকে আমি আবারও আমার কছে নিয়ে আসব। রোদ বৃষ্টিকে কেউ আলাদা করতে পারবে না কারণ রোদের জন্য বৃষ্টির সৃষ্টি।
——হা হা হাসালে। কি বললে রোদের জন্য বৃষ্টির সৃষ্টি। ভুল কথা যদি প্রকৃতির রূপ দিয়ে বুঝতে যাও তাহলে রোদ আর বৃষ্টি সম্পূর্ণ বিপরীত যেখানে রোদের উত্তপ্ততা থাকে সেখানে ঠান্ডার আবাস নিয়ে আসে বৃষ্টি। আর বৃষ্টির সৃষ্টি হয় মেঘ থেকে। মেঘের বুক ছিড়েই কিন্তু বৃষ্টির উৎপত্তি ঘটে। তাই মেঘ বিহীন বৃষ্টির যেকানে কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে রোদকে কল্পনা করা আর মরুভূমিতে পানির খোজ করা একি কাজ।আর কি বলছিলে আমার প্রিয় জিনিস কেঁড়ে নিবে, তোমার যা ছিল তা পুরোপুরি আমার হয়ে গেছে তাই আমার কাছে আর এমন কিছু নেই যা তুমি নিতে পারো তাই তোমার এই চাওয়াটাও বিফলে যাবে।
কথা টা শুনে রোদ একবার রোদেলার দিকে তাকালো তারপর আবার মেঘের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলল
——ঠিক আছে দেখা যাক তাহলে শুরু হয়ে যাক আমাদের খেলা দেখি কে জেতে মনে রেখো যে খেলাটা তুমি শুরু করেছো সেটা আমি শেষ করব আর তোমার কাছের বস্তু দিয়েই সেটা শেষ হবে।
,
,
,
,
কথা টা বলেই রোদ মেঘের সামনে দিয়ে বৃষ্টির কাছে গেল।বৃষ্টি থেকে বিদায় নিয়ে মেঘের কাছে এসে আবারও মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল। মেঘ বুঝতে পারল না রোদ আসলে কি বুঝালো,তাই সে বৃষ্টির দিকে একবার তাকিয়ে আবারও বন্ধুদের কাছে চলে গেল।অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে। গেস্টরা চলে যেতে শুরু করল।মেঘের মা সবাইকে বিদায় দিতে লাগলো আর রোদেলা তার বান্ধবীদের নিয়ে বৃষ্টিকে ফুলশয্যার ঘরে নিয়ে গেল।বৃষ্টিকে রুমে বসিয়ে সবাই কিছুক্ষন আড্ডা দিতে থাকে। এমন সময় কারো গলার স্বর শুনে পেছনে ফিরে তাকাতে দেখে মেঘ দাঁড়িয়ে আছে। রোদেলা বান্ধবীদের নিয়ে মেঘের সামনে গিয়ে দাড়ালো আর বলল,
——-কি ভাইয়া একটু সবুর করতে পারলে না আমরা সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম।আর তুমি এসে পরলে।আচ্ছা কোনো ব্যাপার না টাকা দাও ৫০০০হাজার টাকা
——-(অবাক হয়ে) টাকা কীসের
——-এমা তুমি জানো না বাসর ঘরে ঢুকতে গেলে আগে পাহারাদারদের টাকা দিতে হয়।আমরা এতোক্ষণ তোমার বউকে পাহারা দিয়েছি সে হিসেবে এটাতো খুব কম চেয়েছি।দাও দাও টাকা দাও।
কি আর করার মেঘ জানে তার বোন নাছোড়বান্দা তাই আর কথা না বাড়িয়ে টাকা দিতেই তার বোন কানের কাছে এসে বলল
——-ভাইয়া বিড়ালটা কিন্তু আজকে রাতেই মারতে হবে নাহলে কিন্তু পরে তোমার লস বলে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।
.
.
.
.
.
মেঘ রোদেলার কথা কিছু বুঝল না তাই সে আর না ভেবে দরজা নক করে ঢুকে পরল। ঢুকেই আরেকদফা অবাক হলো।কারণ বৃষ্টি জানলার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরের আকাশ পানে দেখে আছে। মেঘ যতদূর জানে ফুলশয্যার রাতে নতুন বউ খাটে বসে থাকে,স্বামী আসলে উঠে গিয়ে সালাম করে তারপর নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় করে।কিন্তু এইতো নিজের ক্ষেএে ঠিক উল্টো। পরক্ষণে ভাবল আসলে তাদের বিয়েটাও হয়েছে অন্য দের চেয়ে আলাদা ভাবে তাই এসব কিছু আশা করা আর কলা গাছ দিয়ে ফার্নিচার তৈরি করা একি।তাই আর কিছু না ভেবে সে ধীর পায়ে বৃষ্টির কাছে গেল। পেছন থেকে কারো আাসার আবাস পেয়ে বৃষ্টি ঘুরে তাকালো। মেঘকে দেখে আবারও সামনের দিকে তাকালো এমন একটা ভাব নিল যেন মেঘের উপস্থিতিতে বৃষ্টির কিছু যায় আসে না।মেঘ কিছু না বলে বৃষ্টির সামনে গিয়ে দাড়ালো আর বলে
——-এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে মন খারাপ
——-বৃষ্টি তাচ্ছিল্যে একটা হাসি দিয়ে বলল আপনার কি মনে হয় আমি একরাশ আনন্দ নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছি।
,
,
,
মেঘ বুঝতে পারল বৃষ্টির সাথে কথা বলা মানে অনর্থক কিছু কথা টেনে আনা যার কোনো মানে হয়না। তার ওপর এমন একটা রাতে এসব নিয়ে কথা বলার ইচ্ছা করোর থাকে না। তাই কথা ঘুরানোর জন্য মেঘ বলল,
——আজ আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। চাইলে কি আমরা সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে পারিনা।যা হওয়ার হয়েছে এসো আজ সবকিছু ভুলে আমরা নতুনভাবে পথ চলা শুরু করি।এখন আমরা নতুন দম্পতি আর আমি শুনেছি আজকের রাতটা নাকি নতুন দম্পতিদের জন্য বিশেষ একটা রাত,ফুলশয্যার রাত তাই অযথা কথা বলে কেন এ রাতটা নষ্ট করব। বলেই যেইনা বৃষ্টির দিকে হাত বাড়াতে যাবে ওমনি বৃষ্টি একঝাটকায় হাতটা সরিয়ে দিল।মেঘ অপ্রস্তুত থাকায় ছিটকে একটু দূরে সরে যায়।,তবুও কিছু না বলে উঠে দাঁড়ালে বৃষ্টি বলে উঠে,
——-Hey,Mr.megh don’t touch me.How dare you to touch my hand.সাহস কি করে হয় আমার দিকে হাত বাড়ানোর। আর কি জানি বলছিলেন ফুলশয্যা আপনার কাছে এটাকে ফুলশয্যা মনে হচ্ছে আমার কাছে নয়।আমার মনে হচ্ছে আমি কণ্টকশয্যার মাঝে আছি যেখানে আমার দম আটকে আসছে।হুম ফুলশয্যা ভাবতাম যদি না আমাদের মধ্যে কোনো ভালোবাসা থাকতো।কিন্তু আমি আপনাকে ঘৃণা করি আর ঘৃণার সম্পর্কে কখনো ফুলশয্যা হতে পারে না।যেকোনো সম্পর্ক শুরু হতে গেলে বিশ্বাস ভরসা আর শ্রদ্ধা থাকতে হয়, সেখানে আমাদের মাঝে এর কোনোটা নেই তাহলে কিসের ওপর ভিত্তি করে নতুন সম্পর্ক শুরু করব।কারণ এর আগেই তো আপনি আমার সব ভিত্তি নষ্ট করে দিয়েছেন তাই চাইলেও আমি আর কিছুতেই এসবে নিজেকে জড়াতে পারবো না।তাই আমার ওপর নিজের কোনো অধিকার দেখাতে আসবেন না। এটা কোনো মুভি নয় যে আমি আপনাকে বলব, আমার দেহ পাবেন মন পাবেন না। এসব ফালতু ডায়লগ বলার কোনো মানে হয়না।আপনি না আমাকে পাবেন আর না আমার মন। কোনো কিছুর ওপর জোর দেখাতে আসবেন না নাহলে ফলাফল হবে খুব ভয়াবহ। জানেন তো আমার ওপর জোর কাটালো আমি কতোটা ভয়ানক হয়ে উঠি। আরেকটা কথা এক ছাদে, এক ঘরে থাকলেও এক বিছানায় থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।
বলেই বৃষ্টি বিছানা থেকে তার বালিশ আর একটা চাদর নিয়ে চলে যেতে নিলে মেঘ পেছন থেকে হাত ধরে নেই
——-কোথায় যাচ্ছো
—— চিন্তা করবেন না বাইরে যাব না বা পালিয়েও যাচ্ছি না এখানেই থাকবো তবে এক বিছানায় নয় মেঝেতে।
বলে হাতটা ছাড়িয়ে বিছানা ঠিক করতে থাকে।মেঘ এখনো দাঁড়িয়ে আছে বুঝে উঠতে পারছে না কি বলবে তাও নিজেকে শক্ত করে বললো,
——ঠিক আছে তুমি যেমনটা চাও হবে কিন্তু আমাদের মাঝে যেই সম্পর্কটা আজ তুমি ঠিক করে দিলে সেটা যেন কোনোভাবে এই চারদেয়ালের বাইরে না যায়।
——আমি এতোটাও নির্বোধ নই যে এসব কথা বলে বেরাবো আমরা দুজন চুপ থাকলে কেউ কিছু জানবে না আর হ্যা ভুলে ও আমার ঘুমের মধ্যে কোনো এডভান্টেজ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
বলে ওপর পাশ ফিরে শুয়ে পরল। এদিকে মেঘ বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার নিজের হাতের দিকে তাকালো এরপট মুঠ খুলে একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলল
——-ভেবেছিলাম আজ তোমাকে এই ডায়মন্ডের নোজপিনটা পরিয়ে দিয়ে নতুন করে আবারও ভালোবাসার কথা জানাবো নতুন একটা জীবন শুরু করব, কিন্তু তুমি তা হতে দিলে না আজও তোমার ইগো জিতে গেল, চাইলেই তোমাকে নিজের করে পেতে পারতাম কিন্তু জানি জোর করলে কখনো তুমি আমাকে মেনে নিবে না কারন তোমার জেদ সম্পর্কে আমার চেয়ে ভালো আর কে জানবে।
,
,
,
বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল তারপর রুমে গিয়ে আলমারি খুলে নোজপিনটা রেখে বিছানায় চলে গেল। বৃষ্টির দিকে মুখ করে শুয়ে পরল। পরের দিন সকালে বৃষ্টি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে গিয়ে সবার জন্য নাস্তা রেডি করল।তারপর টেবিলে সাজাতেই তার শ্বাশুড়ির আগমন ঘটল।বৃষ্টিকে দেখে তিনি বলে উঠলেন,
——কিরে মা এতো সকালে উঠলে যে আরেকটু ঘুমাতি,আর এসব কি এসব কাজের জন্য তো সার্ভেন্টরা ছিল তুই কেন কষ্ট করতে গেলি।
——কোনো ব্যাপার না এটা আমার রোজকারের অভ্যাস সকালে উঠে মায়ের সাথে কাজে সাহায্য করা। আপনি বসুন আমি আপনাকে নাস্তা দিচ্ছি বলতেই রোদেলাও চলে আসল আর টেবিল দেখে বলল,
——wow ভাবি এসব তুমি করেছো ভাবতে পারছি না। কখন করলে এসব।
——-বৃষ্টি হেসে বলল সকালে
,
,
,
,
,
এদিকে মেঘ উঠে দেখে বৃষ্টি বিছানায় নেই। তাই ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে গেল।কিন্তু সিড়ির অর্ধেকে এসে থেমে গেল কারন আজ বৃষ্টি হালকা নীল কালারের ওপর শাড়ি পরেছে,সাথে থ্রী কোয়ার্টারের হাতা,মাথায় ঘোমটা দেওয়া ঠিক নতুন বউয়ের মতো লাগছে।মেঘ এর আগে কখনো বৃষ্টিকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখে নি। ভার্সীটি আর অফিসে বৃষ্টি সবসময় থ্রী পিছ আর মাথায় হিজাব পরত।এই প্রথম মেঘ বৃষ্টিকে শাড়িতে দেখেছে তাই তার দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইল। হঠাৎ মায়ের ডাকে হুস ফিরল মেঘের
——-কিরে ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন নিচে আয় দেখ বউমা আজ নিজ হাতে রান্না করেছে
.
.
.
.
মায়ের কথা শুনে মেঘ নিচে নেমে চেয়ার টেনে বসল বৃষ্টি সবাইকে খাবার সার্ভ করছে।মুখে খাবার নিয়ে মেঘ আরেকবার শকড খেল কারণ বৃষ্টির হাতের রান্না যে কতো টেস্ট মেঘ এ প্রথম বুঝতে পারল। বৃষ্টির শ্বাশুড়ি বৃষ্টিকে তাদের সাথে খেতে বলেছিল কিন্তু বৃষ্টি না করে দেয়। বলেছে পরে খেয়ে নেবে।খাওয়া শেষ করে মেঘ কাজ থাকায় বেরিয়ে গেল। রোদেলা আর তার শ্বাশুড়ি ওপরে চলে গেল। বৃষ্টি নাস্তা করে সব গুছিয়ে রুমে গেল।রুমে গা এলিয়ে দিতেই আবার উঠে বসলো কারণ বৃষ্টির মনে পরলো তার ছুটির ৪ দিন চলে গেছে আর বাকি আছে একদিন। তার জবের কথাটা এখনো তার শ্বাশুড়িকে জানানো হয়নি।আসলে বিয়ের এতো চাপ ছিল যে বলা হয়ে উঠে নি।তাই সে কিছুক্ষন ভেবে তার শ্বাশুড়ি মায়ের রুমে দিকে হাটা ধরল।
,
,
,
,
,
,
,
,
চলবে………..
(আসলে খুব দ্রুতগতিতে গল্প লিখছি তাই ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ। )