মেঘ-বৃষ্টি ❤❤ পর্ব=১২

মেঘ-বৃষ্টি
❤❤ পর্ব=১২
রোদ-রোদেলা

#তানিয়া[আনিতা]

বৃষ্টি শ্বাশুড়ির রুমের সামনে গিয়ে দরজা নক করতেই দেখল দরজা খোলা তাই রুমে ঢুকল।রুমে ঢুকে দেখে তার শ্বাশুড়ি শুয়ে আছে। বৃষ্টিকে দেখেয় বসে পরল

——কিরে মা কিছু বলবি

——না মানে মা আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল

——ওও তো বলনা কি বলবি এভাবে আমতা আমতা করছিস কেন

——-আসলে মা আপনাকে তো বলা হয়নি আমি বিয়ের আগে একটা জব করতাম আর ওটা দিয়ে আমাদের সংসার চলতো, আপনি তো জানেন আমার বাবা নেই ছোট ভাই আছে আর মাও অসুস্থ তাই আমাকে পুরো পরিবার দেখতে হতো কিন্তু এখন তো হঠাৎ করে বিয়ে হয়ে গেছে তাই।

——-ও একথা। তুই এখন আমাদের বাড়ির বউ। আর আমাদের তো টাকার অভাব নেই তাই আমি চাই আজকের পর থেকে আমরাই তোর পরিবারের দায়িত্ব নিব। তাই তুই জবটা ছেড়ে দে।আমি চাই না আমার একমাএ পুএবধূ বাইরে কাজ করুক।

কথাটা শুনে বৃষ্টির মুখ কালো হয়ে গেল সে মাথা নিচু করে বলল,

——দুঃখিত মা আমি আপনার একথাটা মানতে পারলাম না।আমি আমার পরিবারকে আমার শ্বশুর বাড়ির কারো কাছে ছোট করতে পারবো না। আর তাছাড়া বাইরের মানুষ ও কথাটাকে ভালো চোখে দেখবে না। আমার কাছে আমার দুই পরিবার সম্মানের, কারো কাছে কাউকে ছোট করতে চাই না। আর আমি যে কোম্পানিতে কাজ করি সেটার সাথে আমার এগ্রিমেন্ট হয়েছে। সময়ের আগে জব ছাড়লে ওনারা পুলিশ স্টেপ নিবে।প্রয়োজনে আমি বাড়ির সব কাজ করে তারপর অফিসে যাব।
,
,
,
,
,
বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিল। আবারও বলল, ঠিক আছে আপনি যখন চাইছেন না তবে আমি কালকেই স্যারকে আরেকবার বলে দেখবো জবটা ছাড়ার কথা।বলে বের হতে গেলে তার শ্বাশুড়ি তাকে পেছন থেকে ধরে রাখে আর বলে,

——-পাগলি মেয়ে তুই কি আমাকে এতোদিনে এই চিনলি।আসলে আমি তোকে ওটা ভেবে বলিনি আমি মনে করি তোর পরিবার মানে আমার পরিবার তাই বলেছিলাম। আচ্ছা তুই যখন চাইছিস জবটা করবি তাহলে আমি আর না করব না বিয়ের আগে তুই যেভাবে পুরো সেলারি তোর মাকে দিতি এখনো তাই করবি, আমাদের দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর এবিষয়ে মেঘের সাথে কথা বলে নিবি ঠিক আছে। আর বাড়ির কাজ নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না ওসবের জন্য সার্ভেন্টরা আছে তুই মন দিয়ে কাজ করবি।
,
,
,
,
,
বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।বৃষ্টি তার শ্বাশুড়ির কথা শুনে চোখের জল ছেড়ে দিল কারণ একজন শ্বাশুড়ি কতোটা ভালো হয় তা ওনাকে না দেখলে বোঝা যেতনা।বৃষ্টি ওনাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। তা দেখে ওনি বললেন,

——আরে আরে কাদছিস কেন,যদি আমার কথায় কষ্ট পাস ক্ষমা করে দিস আসলে বয়স হয়েছে তাই কখন কি বলে ফেলি বলার আগেই বৃষ্টি মুখ তুলে বলল

——না মা আমি আপনার কথায় কষ্ট পাইনি আসলে সবার থেকে শুনতাম শ্বাশুড়ি নাকি বউকে কখনো মেয়ের মতো মনে করে না কিন্তু আপনাকে দেখে বুঝতে পারলাম সব শ্বাশুরি এক নয়।আপনি খুব ভালো মা।আমার খুব ভাগ্য আপনার মতো মা পেয়েছি।

কথাটা শুনে তিনি মুচকি হাসলেন। এরপর বৃষ্টি চলে যেতে নিলে আবার পেছনে ফিরে বলে,

——মা আপনাকে আরেকটা কথা বলার ছিল আসলে বিয়ের আগে আমি কখনো শাড়ি পরিনি থ্রী পিছ পরতাম শাড়িতে আমি কম্পরটেবল নই তাই আপনি যদি অনুমতি দেন তবে আমি থ্রী পিছ পরে অফিসে যেতে চাই ।

ওনি কিছুটা ভেবে বললেন

——-ঠিক আছে তুই যেটাতে স্বাচ্ছন্দবোধ করিস সেটাই পরবি কিন্তু একটা শর্ত বাইরে তুই শাড়ি না পরলেও বাসায় তোকে শাড়ি পরতে হবে,আসলে মেয়েদের শাড়ি পরলে নাকি বউ বউ লাগে যেটা মেঘের বাবার খুব ভালো লাগতো। মেঘেরও মনে হয় যখন মেয়েরা শাড়ি পরে তখন তাদের মধ্যে একপ্রকার মা মা অনুভূতি থাকে। জানিস বিয়ের পর আমিও তোর মতো শাড়ি পরতে পারতাম না কিন্তু মেঘের বাবার কথায় আমি শাড়ি পরা শুরু করি, মেঘ ও হয়েছে তার বাবার মতো।মেঘ আমাকে প্রায় বলতো যদি সে বিয়ে করে তবে কখনো অন্য কাপড় পরতে দিবে না শুধু শাড়ি পরবে।,
,
,
,
,
,
কিছুক্ষন ভেবে বলল, আই তোকে একটা জিনিস দেখায় বলে বৃষ্টিকে টানতে টানতে তাদের রুমে নিয়ে গেল।তারপর মেঘের আলমারি খুলতেই বৃষ্টির চোখ ছানাবড়া কারণ তার মনে হচ্ছে সে কোনো রুমে নই কোনো শাড়ির দোকানের সামনে দাড়িয়ে আছে। তার শ্বাশুড়ি বলতে শুরু করল,

——-জানিস এই সব শাড়ি মেঘ কিনে রেখেছে তার হবু বউয়ের জন্য। যখন যেখানে যেত শাড়ি পছন্দ হলেই নিয়ে আসতো আর আমাকে দেখিয়ে বলতো কেমন হয়েছে আমিও খুশি হয়ে বলতাম ভালো। তাই আজকের পর থেকে তুই প্রতিদিন এখান থেকে একটা একটা শাড়ি পরবি।
.
.
.
.
.
মুচকি হাসি দিয়ে কথাটা বলেই তিনি চলে গেলেন আর বৃষ্টি ধপ করে খাটে বসে পরল।একটা মানুষ কতোটা শৌখিন হলে বিয়ের আগে বউয়ের জন্য শাড়ি কিনে রাখে বৃষ্টি তা ভেবে পাইনা।অফিসের বিষয়টা বৃষ্টি সম্পূর্ণ ভাবে তার শ্বাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে চেপে গেল কারণ সে কোনোভাবে চাই না তার শ্বাশুড়ি জানতে পারুক সে যে অফিসে চাকরি সে অফিসের বস আর কেউ নয় তারই স্বামী মেঘ আহমেদ। আর তার শ্বাশুড়ি যাতে জানতেও না পারে তাই সে ব্যাপারে মেঘের সাথে কথা বলতে হবে।কিন্তু কথা বলবে কেমনে বিয়ের দিন থেকে তো এখনো অবধি মেঘের সাথে তার দেখা ও হয়নি। এদিকে মেঘ সকালে বের হয়েছে এখনো বাসায় আসেনি।ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে কোনো একটা কাজে সে বাসায় ফিরতে পারবে না। ফিরতে ফিরতে রাত হবে তাই কেউ যেন অপেক্ষা না করে। এরকম করে ৪ নং দিন ও চলে গেল। ৫ম দিন বৃষ্টি ভেবেছিল সকালে মেঘের সাথে এই নিয়ে কথা বলবে তাই সকালের নাস্তা রেডি করে রুমে যায় গিয়ে দেখে মেঘ রুমে নেই ওয়াশরুমে গেছে তাই বের হতে যাবে ওমনি ওয়াশরুমের দরজা খুলার শব্দ পেয়ে থেমে যায়। মেঘ বের হয়ে আচমকা বৃষ্টিকে দেখে একটু ঘাবড়ে গেল,

——-কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে আছো যে কিছু কি বলবে

——-হুম আপনার সাথে কিছু কথা ছিল কিন্তু কীভাবে বলবো বুঝে উঠতে পারছি না।

——-যেভাবে সব কথা সবসময় বলো সেভাবে বলো আমার একটু আর্জেন্ট কাজ আছে তাই
,
,
,
,
,
বৃষ্টি আর কথা না বাড়িয়ে যেইনা বলতে যাবে তার শ্বাশুড়ি তাকে ডাক দেয় তাই কিছু না বলে বৃষ্টি রুম থেকে বের হয়ে যায়। এদিকে সবাই একসাথে টেবিলে খেতে বসে। বৃষ্টি কোনোভাবে সুযোগ পাচ্ছে না মেঘকে কথাটা জানানোর। ভেবেছিল হয়তে নাস্তা করে রুমে গেলে বলবে কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত খাওয়ার টেবিলেই মেঘের ফোন আসে আর মেঘ কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যায় আর বেচারি বৃষ্টি চেয়ে থাকে তার যাওয়ার পানে।সারাদিনেও আর মেঘের দেখা পেলনা। কিন্তু এই নিয়ে মেঘের মা মেঘকে অনেক কথা শুনিয়েছে কারণ তার ধারণা নতুন বউকে এভাবে একা রেখে বাইরে সারাদিন কাজ করার কোনো মানে হয়না।দেখতে দেখতে এই দিনটাও কাটিয়ে দিল কিন্তু মেঘের কোনো দেখা মিললো না। মেঘ রাতে এসে দেখে বৃষ্টি ঘুমিয়ে পরেছে। মেঘ আস্তে আস্তে বৃষ্টির সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো।কিছুক্ষন তাকিয়ে বললো,

——-তুমি কি মনে করেছো আমি কাজের জন্য বাইরে থাকি, ভুল কথা, আসলে আমি তোমার থেকে নিজেকে আড়ালে রাখি আমি চাই না আমাকে দেখলে তোমার অসস্তি হোক,তুমি বিরক্ত হও,তোমার চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা না দেখলেও ঘৃণা দেখার ক্ষমতা আমার নেই তাই আমি সারাদিন বাইরে থেকে বেশি রাতে বাসায় ফিরি যাতে আমার মুখটা তোমার দেখতে না হয়। জানো তো আমার ও ইচ্ছা করে তোমার সাথে সময় কাটাতে কিন্তু কি জানাতো তুমি তো আমায় সহ্য করতে পারো না তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও তোমার থেকে নিজেকে দূরে রাখি।
,
,
,
,
এভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে শুয়ে পরল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখে বৃষ্টি অন্য দিনের মতো আজও তার আগে উঠে পরেছে।তাই আর কিছু না ভেবে পা বাড়ালো ওয়াশরুমের দরজায়।ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে মাথা মুছে বের হতেই সামনের দিকে তাকিয়ে মেঘ যেন যা দেখলো…………….





চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here