মেঘ-বৃষ্টি ❤পর্ব=১৩

মেঘ-বৃষ্টি
❤পর্ব=১৩
রোদ-রোদেলা

#তানিয়া[আনিতা]

মেঘ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে বৃষ্টি রেডি হচ্ছে। বৃষ্টি মেরুন রঙের সালোয়ার-কামিজ সাথে ম্যাচ করা হিজাব পরেছে, দেখে মনে হচ্ছে কোথাও যাবে কিন্তু এতো সাকালে কোথায় যেতে পারে বাবার বাড়ি। না না কেমনে সম্ভব ও তো শুনেছে বিয়ের পর মেয়ের বাবার বাড়িতে যেতে হলে তো দুজনকে একসাথে যেতে হবে কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে এখন তো ওখানে যাওয়া সম্ভব না তাহলে।একবার কি জিজ্ঞেস করবে যদি কিছু মনে করে। আবার ভাবল করলে করবে আমি ওর স্বামী আমার জানার অধিকার আছে এতো সকালে ও কোথায় যাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে বলে উঠল,

——-তুমি কি কোথাও যাচ্ছ

——চুপ

——-কি হলো তোমায় কিছু জিজ্ঞেস করছি উওর দাও তুমি কি কোথাও বের হচ্ছো

এবার বৃষ্টি কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে

——-দেখতেই তো পারছেন বের হচ্ছি তাহলে

——-সেটাই তো জিজ্ঞেস করছি যাচ্ছোটা কোথায়

——-অফিসে

মেঘ এবার অবাক না হয়ে পারল না

——-মানে

——-মানে কি আপনি কি ভুলে গেছেন আজ আমার ছুটি শেষ তাই আজকে থেকে আবারও অফিসে জয়েন করবো তাই জন্য রেডি হচ্ছি

——-তেমার মাথা ঠিক আছে তুমি আমার ওয়াইফ হয়ে আমার অফিসে কাজ করবে আর আমি সেটা মেনে নিব। আচ্ছা আমার কথা না হয় বাদ দিলাম মা কি মেনে নিবে

——-মাকে আমি সব বলছি ওনি আমাকে অনুমতি দিয়েছেন। আপনাকেও বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বিয়ের দিন থেকে তো আপনার কোনো হদিস পাওয়া যায় নি তাই আর কিছু বলতেও পারি নি।

——-জবটা করা কি খুব দরকার

——-আপনি তো জানেন বিয়ের আগে আমার পরিবার আমার ওপর ডিপেন্ড ছিল কিন্তু বিয়ের পর আমার পরিবারকে কে দেখবে তাই আমি জবটা করতে চাই
,
,
,
,
,
——-আমি কি তোমার পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারতাম না। আমি চাই না আমার ওয়াইফ হয়ে তুমি চাকরিটা করো।যদি সবাই জানতে পারে আমার ওয়াইফ আমার অফিসে কাজ করে তবে আমার পজিশনটা কোথায় যাবে তুমি বুঝতে পারছো। আর মা যদি জানতে পারে তুমি আমার অফিসে কাজ করো তাহলে বুঝতে পারছো কতো কেলেংকারী হবে।
,
,
,
,
——-সরি মি. মেঘ আমি আমার পরিবারকে অন্য কারো কাছে ছোট করতে পারবো না আর যতদিন আমি বেচে আছি ততদিন আমি আমার পরিবারের দায়িত্ব নিব। আর কি বলছিলেন আপনার ওয়াইফ হয়ে আপনার অফিসে কাজ করলে সবাই জানবে ভুল কথা আমাদের বিয়ের কথা আমি আপনি ছাড়া কেউ জানে না তাই আমি চাই না আমাদের সম্পর্কটা কেউ জানতে পারুক। আর আমি আগে যেভাবে কাজ করতাম এখনো ঠিক তেমনভাবে কাজ করবো। আপনার সাথে আমার সম্পর্ক অন্য কর্মচারির মতোই থাকবে বস- কর্মচারি।আর মা ওনাকে আমি বলেছি আমি অন্য একটা জায়গায় কাজ করি তাই ওনিও জানতে পারবে না যে আমি আপনার অফিসে কাজ করি। যদিনা আপনি বলেন আর আমি এও জানি আপনি মাকে কখনো এই নিয়ে কিছু বলবেন না।আর আমিও চাই না আমাদের বিয়েটা অফিসের কেউ জানুক তাই আপনি আমি দুজনি চুপ থাকবো।

——-আর আমি যদি তোমাকে এই চাকরি করতে না দিই

——-হাহা হাসালেন। আপনি হয়তো এগ্রিমেন্টের কথা ভুলে যাচ্ছেন আপনি চাইলেও এরকম কিছু করতে পারবেন না। কারণ এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী ৩ বছরের আগে আমি বা আপনি কেউ জবটা ছাড়তে পারবো না। আমি যেমন এই জব ছাড়তে পারবো না আপনিও আমাকে জব থেকে বের করতে পারবেন না কোনো কারণ ছাড়া। তাই বলছি আপনি আপনার মতো চলুন আর আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।
.
.
.
.
.
.
কথাটা বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেল আর মেঘ রাগে গজগজ করতে লাগলো। এখন তার নিজের গালে নিজের চর দিতে ইচ্ছা করছে কেন সে এমন একটা এগ্রিমেন্ট করল এখন চাইলেও সে বৃষ্টিকে অফিস থেকে বের করতে পারবেনা।আর কিছু না ভেবে মেঘ রেডি হতে চলে গেল ।
,
,,
,
,
এদিকে বৃষ্টি রান্না ঘরে গিয়ে তার শ্বাশুড়ির হাতে হাত কাজ করতে লাগলো। যদি ও তিনি মানা করেছিলেন কিন্তু বৃষ্টির জেদের কাছে হেরে গিয়ে আর কিছু বললেন না। তিনি খাবার ঠিক করছে আর বৃষ্টি এক এক করে টেবিলে আনছে। রোদেলাও চলে এসেছে কারণ বিয়ের কারণে এতোদিন কলেজে যাওয়া হয়নি তাই আজ কলেজ যাবে।বৃষ্টি খাবার ঠিক করতে করতে দেখে মেঘ সিড়ি দিয়ে নামছে। বৃষ্টি সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে আবারও নিজের কাজে মন দিল।মেঘ এসে একটা চেয়ার টেনে বসল। সবাই একসাথে খেতে বসলো।খাওয়ার একপর্যায়ে মেঘের মা বলে উঠল,

——-মেঘ তুই হয়তো জানিস বৌমা বিয়ের আগে একটা জব করতো আর এখন সে জবটা কন্টিনিউ করতে চাই তুই কি বলিস

মেঘ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে তার মাকে বলে,

——আমি আর কি বলবো তুমি যখন অনুমতি দিয়েছো আমার আর কিছু বলার নাই।

——ঠিক আছে তোর যখন কোনো আপত্তি নেই তাহলে আমি আর কি বলবো।তাহলে ভালোই হলো তুই রোজ বৌমাকে অফিসে দিয়ে নিজে অফিসে যাবি কি বলিস

মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগে কথাটা শুনে বৃষ্টি বিষম খাই তারপর নিজেকে ঠিক করে বলে

——না না মা আমি যেতে পারবো আসলে আমাকে দিতে গেলে ওনার দেরি হয়ে যাবে আর আমার অফিস ওনার অফিসের বিপরীত রাস্তায় তাই আমাকে দিতে গেলে ওনাকে ডাবল কষ্ট করতে হবে আর আমি সেটা চাই না তাই আমি চলে যেতে পারবো।

কথাটা শুনে মেঘ এবার আরো রেগে গেল মনে মনে বল্ল একি অফিসে কাজ করি আর বলে কিনা বিপরীত আসলে অফিস বিপরীত না নিজেই যে আমার বিপরীত সেটা বলতে পারছে না।তারপর উঠে নিতে গেলেওর মা বলে

——কিরে উঠে যাচ্ছিস যে কিছুই তো খেলিনা

——না মা খেয়েছি আসলে এতোদিন অফিসে যায়নি তাই অনেক কাজ জমে গেছে একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল রোদেলাও চলে গেল কলেজের উদ্দেশ্য। বৃষ্টি টেবিল গুছাতে চেয়েছিল কিন্তু তার শ্বাশুড়ির কথায় আর কিছু না বলে ওপরে গিয়ে ব্যাগ নিয়ে তার শ্বাশুড়িকে সালাম করে অফিসের জন্য বের হলো।কিন্তু বাইরে গিয়ে দেখে মেঘ দাঁড়িয়ে আছে গাড়িতে হেলান দিয়ে। বৃষ্টি দেখে ও না দেখার ভান করে চলে যেতে নিলে মেঘ বলে,

——-কি হলো ওদিকে কই যাচ্ছো দেখছো না আমি দাঁড়িয়ে আছি। গাড়িতে উঠো

——আমি তো বলে দিয়েছি আমি আপনার সাথে যাবো না কারণ একসাথে আমাদের দুজনকে গাড়ি থেকে নামতে দেখলে অফিসের সবাই কানাকানি করবে সেটা আমি চাই না।

——-করলে করবে এখন তুমি আমার ওয়াইফ সেহেতু করো কথায় আমার কিছু যায় আসে না।

——-আপনার না আসলেও আমার আসে কারণ আমি আপনার ওয়াইফ সেটা আমি আপনি জানি ওরা তো জানে না তাই আমি চাই না ওরা আমাদের কিছু নিয়ে সন্দেহ করুক বলে রিকশা নিয়ে চলে গেল।
,
,
,,
,
মেঘ আর কিছু না ভেবে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। মেঘ বৃষ্টির আগে পৌঁছে গেল। গিয়ে সোজা কেবিনে ঢুকল।একটুপর বৃষ্টি ও অফিসে পৌঁছে গেল। যেইনা গিয়ে চেয়ারে বসবে ওমনি মেঘের কল আসলো তার কেবিনে যেতে হবে। মেজাজ খারাপ হওয়া সত্বেও হাটা দিল মেঘের রুমের দিকে। রুমে ঢুকতেই……….





চনবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here