নারীর_সতীত্ব পর্ব শেষ

#নারীর_সতীত্ব
#পর্ব_২১
Wohad Mahmud

সাবনাজ ভাবির কাছে গিয়ে ভাবিকে ধরে রুম থেকে নিয়ে আসছে ছাদে যাবে বলে। সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় সিঁড়ি থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায় ভাবি।

সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে তেমন কিছু হয়নি। তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সবার ভয় হচ্ছিল বাচ্চার যেন, কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়। ভাবিকে যখন হাসপাতালে নেওয়া হয় তখন অজ্ঞান ছিল। আমি ডাক্তারকে বললাম ভাবি গর্ভবতী পরিক্ষা করে দেখবেন কোনো সমস্যা হয়েছে কী।

পরীক্ষার রিপোর্টে যা আসলো সেটা দেখে আমরা রিতিমত পুরাই অবাক হলাম। এটা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ভাবি গর্ভবতী ছিল না।‌ এতদিন সে আমাদের সাথে মিথ্যা বলে আসছে। আমরা প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল সেটা আজ বাস্তবে পরিণত হলো। তারপর ভাবিকে বিকালে বাসায় নিয়ে আসা হলো।

ভাইয়া তো রেগে আগুন হয়ে আছে। রাগে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। ইতোমধ্যে বাসার জিনিস পত্র ভাঙচুর করে দিয়েছে। তাকে নিজের স্ত্রী বলতে ঘৃণা করছে। ওর বাসায় খবর দাও নিয়ে তাদের মেয়ে। তার জন্য আমার বাসায় কোনো জায়গায় নেই।

বাসার বাকি সবাই ভাবির উপরে ক্ষুব্ধ। কারণ ইতোমধ্যে সবাই জেনে গিয়েছে ভাবি গর্ভবতী না। মিথ্যা কথা বলেছে। আর সে জন্যই সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দোষটা আজ সাবনাজকে দেয়নি। আমার ভয় হচ্ছিল ভাবি তো গর্ভবতী ছিল, যদি বাচ্চার কিছু হয়ে যায়। তাহলে সাবনাজকে ফাঁসিয়ে দিবে। কিন্তু অবাক কান্ড তার পেটে বাচ্চাই নেই।

রুমে এসে সাবনাজকে বললাম অনেক বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছ আজকে।

কেন আমাকে ডিভোর্স দিয়ে আফসানা কে ঘরে আনার চিন্তা ভাবনা করেছিলেন না কি?

আমি কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললাম, এটা কেমন ধরনের কথা সাবনাজ? আর কীভাবে বুঝালে তুমি বিষয় টা বুঝবে? আফসানার বিয়ে হয়ে গেছে আর আমারো বিয়ে হয়ে গেছে। তাকে তার মতো থাকতে দাও। আমারা আমাদের মতো থাকি।

আমি তো তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম ভাবির বিষয় নিয়ে। ভাবি আজ সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছে আর পাশে তুমি ছিলে। ভাবি যদি সত্যিই গর্ভবতী হতো আর সন্তানের কোনো সমস্যা হলে সব দোষারোপ তোমাকে করত। বলতো যে, তুমি ইচ্ছে করেই তাকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়েছো। এটা বলে রাগ করে রুমে থেকে বেরিয়ে আসলাম।

এভাবে বেশ অনেকদিন কেটে গেল। সবার চোখে সাবনাজ ভাবি একজন অবহেলার পাত্র রয়ে গেল। সাবনাজের সাথে সম্পর্ক টা আর আগের মতো নেই। আফসানাকে কেন্দ্র করে আমাদের আমাদের মাঝে অনেক টাই ফাটল ধরছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বাপের বাড়িতে আছে সাবনাজ। তেমন কথা হয় না আমাদের।

দুই সপ্তাহ পরে ভাবি আবার বলছে আমি প্রেগন্যান্ট। আমি মা হতে চলেছি।

কিন্তু কেউ বিশ্বাস করছে না। ভাইয়া তো সরাসরি বলে দিয়েছে এসব কথা মুখে নিয়ে আসলে সারাজীবনের জন্য বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দিব।

ভাবি তখন বেবি চেক দেখিয়ে বলল, আমার মুখের কথা বিশ্বাস না করলে এই যে, দেখো এটা দেখে তো বিশ্বাস করবে তুমি?

ভাইয়া তখন বলল আমি জানি এসবের ভিতরেও কোনো চক্রান্ত আছে। অবহেলা থেকে বাঁচার জন্য সবার চোখে ভালো হওয়ার জন্য এসব মিথ্যা নাটক করছো।

এই দুই সপ্তাহ আমি আর ভাবিকে আগের মতো দেখছি না। আগের মতো আর কারোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে না।‌ তার চোখে এখন শুধু অনুশোচনা দেখতে পাই।

সন্ধ্যায় চেম্বার থেকে বাসায় আসছিল অটোতে করে এমন সময় একটা প্রাইভেট কার এসে ধাক্কা মারে অটোতে। তারপর অজ্ঞান হয়ে যাই। দুদিন পর নিজেকে আবিস্কার করি হাসপাতালের বেডে। জানতে চাইলে কেউ একজন বলে আমি দুইদিন হাসপাতালের বেডে আছি। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়ার ফলে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম এবং জ্ঞান ফিরতে অনেক দেরি হয়েছে।

এক সপ্তাহ পরে আমাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। এই এক সপ্তাহ রাত দিন এক করে সাবনাজ আমার পাশে ছিল। বাবা অসুস্থ তাই মাকে তেমন থাকতে দেয়নি এখানে। মাঝে মাঝে এসে ঘুরে যেত এবার বাসায় গিয়ে বাবাকে দেখাশোনা করতেন। ভাবি মাঝে মাঝে এসে ঘুরে যেত। সাবনাজ আর মাহমুদা প্রতিটি মূহুর্ত আমার কাছে থাকতো।

বাসায় এসে সাবনাজকে বললাম হঠাৎ এতো পরিবর্তন হয়ে গেলে কেমন করে?

কেমন আবার পরিবর্তন হলাম আগের মতই তো আছি।

রাগ করে বাপের বাসায় চলে গিয়েছিলেন আমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে আবার এখানে চলে আসলে কেন ? অনেক কান্না করেছিলে আমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে।

কে বলছে তোমাকে? সব মিথ্যা কথা। আমি একটুও কষ্ট পায়নি তোমার জন্য।

তাহলে এক্সিডেন্ট করে মরে যায় ভালো ছিল। আমার জন্য যখন কেউ কষ্ট পাওয়ার মতো নেই তাহলে নিশ্চয়ই খুশি হতে মরে গেলে।

সাবনাজ তখন চোখের অশ্রু ছেড়ে বলে প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও মাহমুদ। আমি তোমাকে এই কয়দিন অনেক কষ্ট দিয়েছি ছোট একটা বিষয় কে কেন্দ্র করে। আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি।##

আমি হেসে বললাম এসব কথা বাদ দাও। যা হওয়ার হয়েছে। আমারো দোষ কম না। আগেই তোমাকে সবকিছু বলার পদরকার ছিল। আর সম্পর্কের মাঝে মান অভিমান সন্দেহ ভালোবাসা বাড়ে না।

সাবনাজ তখন বলল, আচ্ছা বাদ দিলাম। তবে একটা খুশির খবর আছে?

কী খুশির খবর?

কিছুটা লজ্জা নিয়ে বলল আমি মা হতে চলেছি।

তাহলে আমি বাবা হতে চলেছি। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম। খুশিতে শারীরিক কষ্ট গুলো সব মাটি হয়ে গেল।

দেখতে দেখতে এক মাস কেটে গেল। আজ ডাক্তার কাছ থেকে এসেছে ভাবি সত্যি প্রেগন্যান্ট।

ভাবি আজ আমাকে এমন এক সত্যি কথা বলল। সেটা আমি শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এতদিন সত্যি টা জানলেও আমাকে বলে নাই কিন্তু আজ আমাকে সত্যি টা বলে দিল।
রাকিবের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল প্রায় এক বছর আগে। সেটা নিয়ে আজো কেস চলছে। বাইরে থেকে নেশা করে এসে প্রতিদিন বউকে নির্যাতন করতো।

এতো কিছু হয়ে গেল, আর আমি কিছুই জানি না। আমি তো মনে করেছিলাম ভালো হয়ে গেছে। যদি এখন ভালো হয়ে যেত তাহলে আমি যখন মাহমুদার সাথে রাকিবের বিয়ের কথা বলেছিলাম তখন আমাকে সবটা খুলে বলতো। কিন্তু বলেনি লুকিয়ে রাখছে।

আমি মাহমুদা আর সাবনাজকে ডেকে সবকিছু বললাম। ওরা তো সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। আমার কথা শুনে সাবনাজ অনেক খুশি হয়েছে। কারণ সাবনাজ কখনও চায় মাহমুদার সাথে রাকিবের বিয়ে হোক।

সাবনাজ বলে তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। অনেক দিন থেকে বলব ভাবছি কিন্তু বলতে পারছি না।

বলো কী কথা?

আমি চাচ্ছিলাম মাহমুদার সাথে আমার ভাই আকাশের বিয়েটা হয়ে যাক।

আমিও হাসতে হাসতে বললাম তাহলে এই ব্যপার তাহলে এই জন্যই রাকিবের সাথে মাহমুদার বিয়ে মেনে নিতে পারছিলে না।

বাসার সবাই অনুমতি নিয়ে বেশ ভালোই করেই বিয়ে টা হয়ে যায় মাহমুদা আর আকাশের।

এভাবে বেশ অনেকদিন কেটে যায়। আজ ভাবির ডেলিভারি ডে। কিন্তু ডেলিভারিতে ভাবি বেঁচে গেলেও বাচ্চাকে বাঁচানো যায়নি। পরিবারে আজ শোকের ছায়া। কোনো ভাবেই ভাইয়া আর ভাবিকে শান্তনা দিয়ে বোঝানো যাচ্ছে না।

আর কয়দিন পরে সাবনাজের ডেলিভারি হবে। আমার অনেক ভয় করছে। আমি আমার সন্তান স্ত্রী কাউকে হারাতে চাই না। সবাই যেন সুস্থ থাকবে।

প্রায় এক সপ্তাহ পরে আজ সাবনাজের ডেলিভারি হচ্ছে। আমি বাইরে অস্থির হয়ে আছি। মনে হচ্ছে যেন আমার বুকের উপরে পাথর বেঁধে রাখা হয়েছে। কিছুক্ষণ পরে এসে ডাক্তার বলল, আপনি দুইটা মেয়ে বাচ্চার বাবা হয়েছেন মাহমুদ সাহবে। মা ও সন্তান সবাই সুস্থ আছে। আমরা সবাই সাবনাজের কাছে গেলাম। সাথে ভাবি আর ভাইয়া ও ছিল।

আমি একটা সন্তান ভাবির কোলে তুলে দিয়ে বললাম এটা আজ থেকে আপনার সন্তান। ভাবির চোখে তখন আমি খুশি ছাপ দেখতে পেয়েছিলাম।

হাসপাতালে থাকা অবস্থায় ভাবি আমাকে আড়ালে ডেকে বলল, কিছু কথা বলার ছিল মাহমুদ তোমার সাথে ‌

জ্বী বলেন ভাবি।

আসলে সাবনাজের সতীত্ব পরীক্ষার জন্য মায়ের কাছে রুমাল টা আমিই দিয়ে তোমাকে দিতে বলেছিলাম। আর আমি জানি তুমি সেই রুমালে তোমার হাতের রক্ত লাগিয়ে মাকে দেখিয়েছিলে। এই বিষয় টা সাবনাজকে তুমি না বললেও আমি সব বলে দিয়েছিলাম।

আমি তখন মুচকি হেসে বললাম। এসব বিষয় বাদ দেন। আগে যা হওয়ার হয়েছে এখন আমরা মিলেমিশে থাকব। আর আপনিও আগের মতো নেই। আগের বিষয় নিয়ে যা হয়েছে কষ্ট পাবেন না।

আমি একটা বিষয় চিন্তা করতে লাগলাম সাবনাজ সব জানলেও আমাকে কিছু বলে নাই। সব মানিয়ে নিয়েছে। এমন স্ত্রী যেন সব ঘরে ঘরে হয়।

আগের সব ঝামেলা থেকে বেরিয়ে আমরা খুব সুন্দর ভাবে জীবন পার করছি। এভাবেই যেন শান্তিপূর্ণ ভাবে জীবন চলতে থাকে। যে ব্যক্তি ভুল পথ থেকে সঠিক পথে ফিরে আসে আর সব ভুলে স্বীকার করে নেই অবশ্যই তার জন্য ক্ষমা প্রযোজ্য। ক্ষমা মানুষের মহৎ গুণ।

বি.দ্র: অনেক দিন থেকেই গল্প টা লিখছি। জানি না কার কাছে কেমন লাগছে। কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন। কোনো অভিযোগ থাকলে অবশ্যই বলবেন। ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি নতুন গল্প দিব।

———+++++++++সমাপ্ত++++++++++——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here