আমার_মনপাখি পর্ব ৯+১০

#আমার_মনপাখি
#পলি_আনান
#পর্ব – ৯

দাদিমার রুমের বারান্দায় দাড়িয় আছে রাইফা।তার ভিষণ মন খারাপ।সে ভাবতে থাকে গতকাল থেকে তার কিছুই ভালো যাচ্ছে না।সব কিছু এলো মেলো লাগছে।তার জিবনটা তো হাসি খুশি সুন্দর ছিল।তবে এমন কেন হলো।কে এই লোকটা তাকে বার বার হুমকি দিচ্ছে।এদিকে অনিক তাকে বার বার ফোন আর মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু সে রিপ্লাই দেয় না।রাইফার সব কিছু তিক্ত লাগছে।রাইফাদের একই বাড়িতে দুইটা বিলিং একটা আহাদ আর একটা তাদের। তাই পুরো বাড়ি জুড়ে আহাদ আর রাইফাদের বিশাল ফুলের বাগান।যেখানে আছে হরেক রকম ফুল।যে ফুলগুলো দেখলে আগে রাইফার মন ভালো হয়ে যেত।কিন্তু আজ সে ফুল গুলই তার ভালো লাগছেনা।তার গোটা মনে কালো মেঘ ধারন করেছে।
এমন সময় রাইফার ফোনে মেসেজ আসে।রাইফা স্কিনে তাকিয়ে দেখে সেই অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।রাইফা মেসেজটি পড়া শুরু করে,
“তোমার হাতের কি অবস্থা ঔষধ খেয়েছো ”

মেসেজটি পড়েই রাইফার মাথায় দপ করে আগুন লেগে যায়। “ইসস সাহস কম না,নিজে ব্যাথা দিয়ে আবার খবর নিতে এসেছে।একেই বলে, জুতা মেরে গরু দান। তোকে আজ ছাড়বোনা আর ভয় পাবনা,এর একটা বিহিত করতেই হবে”
রাইফা রাগের মাথায় মেসেজের রিপ্লাই দেয়,

“কেরে তুই আমার পিছে পড়লি কেন, সামনে পাইলে তোর খবর আছে”

লোকটি রাইফার মেসেজ পেয়ে তার চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে যায়।লোকটি রাইফার মেসেজ পড়ে মাথা গরম হয়ে যায়,
“তুমি এতো তুই তুকারি করছো কেন।তোমাকে আমি কি জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও”

রাইফা মেসেজটি পড়ে আবার উওর দেয়,
“তুই কেরে যে তোকে আমি সুন্দর করে সম্মোদন করবো”
লোকটি রিপ্লাই দেয়,
“দেখ রাইফা তুমি হয়তো ভুলে গেছ আমি তোমার দুই বন্ধু ইমন আর আশিকের হাত ভেঙে দিয়েছি।আমার টার্গেট কিন্তু তিনজন।এখনো কিন্তু কলি বাকি আছে।ও মেয়ে মানুষ বলে ছেড়ে দিয়েছি।যদি তুমি আমার সাথে এমন করে কথা বলো তবে কিন্তু কলির ও একই অবস্থা হবে।সো বি কেয়ারফুল।”
রাইফা মেসেজটি পড়েই চুপসে যায়,তার মনে প্রশ্ন জাগে এই ছেলেটা এই তিনজনের পিছনে লাগলো কেন।আমার বেস্টু তো মিম।মিমকে নিয়ে তো কোন হুমকি দেয় না।
রাইফার যেভাবা সেই কাজ সে অচেনা ছেলেটাকে মেসেজ দিল,
“আচ্ছা আপনি আমার ওই তিন বন্ধুর পিছনে লাগলেন কেন,কিন্তু মিমকে নিয়ে তো হুমকি দেননা কাহিনিটা কি বলুন তো”
রাইফার মেসেজটি পড়ে লোকটি মুচকি হাসে আর উওর দেয়,
“তোমার ওই তিন বন্ধুই তো নাটের গুরু।তাদের তো আমি সহজে ছাড়বো না,তাছাড়া মিম তাদের মতো এতো বাজেনা।সব কথা বাদ আগে গিয়ে ঔষধ খাও।”

“কিরে দাদুমনি একা একা দাঁড়িয়ে কি করছিস”
পেছন থেকে কারো কথা শুনে পেছনে তাকায় রাইফা।
“কি আর করবো। দাদিমা তোমার ওই নাতির জন্য তো এই বাড়িতে আসা যাবে না।দেখে নিও আমি আর আসবোনা তোমাদের বাসায়” (মুখ ঘোমড়া করে)
“সে কি কথা রাইফা।তুই আসবি না কেন,আহাদ থাকবে আহাদের কাজে আর তুই আসবি আমার কাছে,তোকে আমি কও ভালোবাসি বলতো।আয় রুমে আয়”
রাইফা রুমে ঢুকে।
“রাইফা যাতো আহাদের রুম থেকে আমার চশমা টা নিয়ে আয়।”
দাদিমার কথা শুনে রাইফার কানে দিয়ে ধৌয়া বেরোচ্ছে।
“কি, তুমি ভাবলো কি করে আমি ওই রুমে যাবো।কখনো না” নেভার(চোখ বড় করে)
“কি তুই আমার কথা শুনবিনা।আমি এখন তোর কাছে খারাপ হয়েগেছি ” (মন খারাপ করে)
“তুমি আমাকে ইমোশনাল করছো তাইনা”
“আমি তো এখন খারাপ হয়ে গেছি তোর কাছে।যা আনতে হবে না।” (মন খারাপ করে)
রাইফা কোমড়ে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে বললো
“আচ্ছা যাচ্ছি, রাগ করোনা”
রাইফা আহাদের রুমের উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়। আর দাদিমা রাইফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

🌿🌿🌿
রাইফা আহাদের রুমের সামনে এসে উকি দিচ্ছে। আহাদ রুমে আছে কি না তা দেখার জন্য।
“না তো পুরো রুম ফাকা।কেউ নেই”(মনে মনে)
রাইফা যেই রুমে প্রবেশ করে উমনি পিছন থেকে আহাদ দরজাটা বন্ধ করে দেয়।রাইফা আহাদকে দেখে ভূত দেখার মতো অবস্থা।
“আ….আপনি দ…দরজা বন্ধ করলেন কেন?(আমতা আমতা করে)
” আমার রুমের দরজা আমি বন্ধ করতেই পারি,তোমার কোন সমস্যা”(রাইফার কাছে এগোতে এগোতে)
“সমস্যা তো আমারি।আমি এই রুমে আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেন।
” খাওয়া ছেড়ে উঠে এলে কেন (পকেটে হাত দিয়ে)
“আমার ইচ্ছা আমি এসেছি তাতে আপনার কি”(নিচের দিকে তাকিয়ে)
“সবতো আমারি,তোমার শরীর খারাপ হলে তো আমারি কষ্ট হবে।তাতো তুমি বুঝবে না”(মনে মনে)কিন্তু সামনে বললো,
” চুপ বেয়াদপ মেয়ে সবসময় মুখে মুখে তর্ক করো”
আহাদ পকেটে থেকে ফোন নিয়ে কাকে যেন ফোন করে।একটু পর দরজায় টোকা পড়ে।আহাদ দরজার দিকে এগিয়ে যায়।কে এসেছে রাইফা তাকে দেখেনা।আহাদ হাতে করে খাওয়ারের প্লেট নিয়ে ঢুকে। আহাদ রাইফার দিকে তাকিয়ে বলে,
“যাও গিয়ে খাটে বসো”।
“আমি এসেছি দাদিমার চশমা নিতে বসতে আসিনি”
“তোমাকে আমি বসতে বলেছি” (রেগে)
“বললাম তো বসবো না”(চিৎকার দিয়ে)

আহাদ হাতে থাকা প্লেটটি খাটের সাইডের টেবিলে রেখে,রাইফাকে হেঁচকা টান দিয়ে খাটে বসায়।
“নাও খাও,আমি খাইয়ে দিচ্ছি”(রাইফার দিকে তাকিয়ে)
“আমি এখানে খেতে আসিনি(রেগে)
“তোমাকে আমি চুপচাপ খেতে বলেছি”
“কথা কানে যায় না আপনার বললাম তো খাবোনা(বিছানা থেকে উঠে চিৎকার দিয়ে)

এবার আহাদ বিছানায় বসে রাইফাকে হেচকা টান দিয়ে আহাদের কোলে বসিয়ে দেয়।
“প্লিজ, এবার খাও ”
“এই আপনি কি পাগল আমি বল……….
রাইফাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আহাদ রাইফার মাথার পেছন দিকটায় হাত দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। রাইফা আহাদের
কাছ থেকে ছাড়াতে কিল ঘুশি মেরেই যাচ্ছে কিন্তু আহাদ ছাড়ছেনা।রাইফা এবার জেদের বর্শে তার নখ দিয়ে আহাদের গলায় আচড় দেয়। কিন্তু আহাদ তখনো ছাড়েনা।আহাদ তার কাজে ব্যস্ত।প্রায় ১৫ মিনিট পর আহাদ রাইফাকে ছাড়ে।রাইফার কপালের সাথে তার কপাল লাগিয়ে শ্বাস নিতে থাকে।রাইফা আহাদের বুকে ধাক্কা দিয়ে উঠে যেতে নিলে আহাদ রাইফার কোমড় জড়িয়ে ধরে।রাইফা গাল চেপে ধরে আহাদ বলে..
” আমার কাছে আসলে এতো পালাই পালাই করো কেন তুমি,”
“আমাকে ছেড়ে দিন বলছি খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু “(নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে)
” যা খারাপ হওয়ার তা তো হয়েছে।আবার কি খারাপ হবে বলতো একটু শুনি”(রাইফাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
“আমি কিন্তু মামনি কে বলবো আপনার এসব বাকে ব্যবহারের কথা “(নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে)

” কি বলবে মাকে গিয়ে, বলবে মামনি আহাদ ভাই আমাকে ডিপ কিস করেছে,,,ছি ছি ছি তুই তোর মামনি কে এগুলো বলবি।তোর একটুও লজ্জা লাগবেনা,তারপর আর কি সবাই তোরই বদনাম করবে।আমি তো দেশ ছেড়ে বিদেশ যেতে পারবো কিন্তু তুই কি করবি।আর তাছাড়া অনেকে জানে তোর ববয়ফ্রেন্ড এর অভাব নেই।আমি গিয়ে যদি বলি তুই আমাকে নিজেই সুযোগ করে দিয়েছিস তাহলে কি হবে বলতো,,আর ছোট বেলার কথা ভুলে গেছিস, আমাকে কিন্তু কম জ্বালাস নি”(অভিনয় করে)

আহাদের কথা শুনে রাইফার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।সে কি করবে তার এখন মাথায় আসছে না।পরের টা পরে আগে এই রুম থেকে তার আগে বের হতে হবে।তাই সে আমতা আমতা করে আহাদ কে বললো,
“আমাকে ছেড়ে দিন না, কেন আটকে রেখেছেন আমাকে”
“চুপচাপ আমার হাতে খেয়ে নেও, ছেড়ে দেব”
রাইফা মাথা নাড়ে মানে সে খাবে।
“এই তো গুড র্গাল, চুপচাপ খাও”
রাইফা চুপচাপ খাচ্ছে আর আহাদ আদর করে যত্ন সহকারে খাইয়ে দিচ্ছে।খাওয়া শেষ হলে আহাদ রাইফার মুখ মুছে দেয়।
“আমি এবার আসি তাহলে”(রাইফা)
” যাবি,, আচ্ছা আগে আমার গলায় মলম লাগিয়ে দিয়ে যা”
“ক..কেন মলম লাগাবো।” আপনার আবার কি হলো”
আহাদ এবার রাইফার কাছে এগোতে থাকে আর রাইফা পেছাতে থাকে।এবার রাইফা দেয়ালের সাথে লেগে যায়।আহাদ দেয়ালে হাত দিয়ে রাইফার দিকে ঝুকে বলে,
” একটু আগে আমাকে কি করেছিস মনে নেই”
আহাদের কথা শুনে রাইফা চোখ বড় করে তাকায় আর বলে,
“আমি আবার কি করলাম যা করার আপনি তো করলেন”
আহাদ রাইফার কথা শুনে মুচকি হেসে শার্টের বোতাম খুলতে থাকে।
“ছি আপনি কি করছেন আহাদ ভাই”
আহাদ রাইফার কথায় কান না দিয়ে কলার টা একটু উচু করে ধরে আর বলে
“দেখ তুই আমার ঘাড় গলায় কি করেছিস তুই পুরো জংলী মেয়ে”
আহাদের কথায় রেগে যায় রাইফা।সে ড্রয়ার থেকে র্ফাস্ট এইড বক্স বের করে আহাদ কে টেনে বিছানায় বসিয়ে দেয়।সে দেখে অনেক গুলো নখের আচড় একসাথে লেগেছে।রক্ত বেরিয়ে শুকিয়ে গেছে।তার নিজের থেকেই এখন খারাপ লাগছে।তাই সে চুপচাপ ক্ষত স্থান ডেটল দিয়ে
পরিষ্কার করছে।আহাদের কিছুটা উনমুক্ত বুক রাইফার দৃষ্টি বারবার কেড়ে নিচ্ছে।তবুও সে নিজেকে সামলিয়ে নিচ্ছে।
আহাদ তাকিয়ে আছে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে।রাইফার চোখ, নাক, গাল খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।আহাদ মনে মনে বলে,
“আর কত দিন দূরে থাকবে তুমি,দীর্ঘ বছর অপেক্ষা করে আসছি তোমাকে পাওয়ার জন্য”
রাইফার মলম লাগানো শেষ হয়।রাইফা ধমক দিয়ে বলে
“লাগিয়ে দিয়েছি মলম এবার আমি যাই”
“যাই যাই করছিস কেন, দাড়া তোকে একটা চিহ্ন দেখাই”
এই বলে আহাদ তার বুকের ডান দিকটার র্শাট কিছুটা সরিয়ে দেয়।রাইফা দেখতে পায় কালো একটা দাগ বেশ পুরনো মনে হচ্ছে কিচ্ছু ঝাপসা হয়ে গেছে দাগটি।
“চিনতে পারছিস এই দাগ রাইফা”
রাইফা মাথা দুদিকে নাড়ায় মানে সে চিনতে পারছে না।

“মনে আছে তুই একদিন আমাকে বুকের বাম পাশটায় কামড় দিয়ে ছিলি।যা গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়।এই ক্ষত হওয়ার ২১ দিনের মাথায় আমাই ইউএস চলে যাই।কিন্তু এখন পর্যন্ত দাগ টা রয়ে গেছে।জানিস আমি যখন বিদেশে আমার বন্ধুদের সাথে সুইমিংপুলে গোসল করতাম তারা বলতো আমার জিএফ এর লাভ বাইট।উওরে আমি শুধু হাসতাম।শুধু শিহাব জানতো আমার বুকে লালন করা এই দাগটি তুই দিয়েছিস।,,, (আহাদ এবার নিজের আবেগ থেকে বেবিয়ে আসে।নিজেকে আগের রুপে এনে বলে)তো বল এখন আবার তুই আমার গলায় আচড় দিয়েছিস।আমার হবু বউকে আমি কি জবাব দিব।”

আহাদের কথা শুনে রাইফা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাইফার ফোন বেজে উঠে।ফোনের স্কৃিনে তাকিয়ে দেখে,,,,
#আমার_মনপাখি
#পলি_আনান
#পর্ব – ১০

গাড়িতে বসে আছে রাইফা, আহাদ আর শিহাব।কারো মুখে কোন কথা নেই।আহাদ ড্রাইভিং করছে আর আড় চোখে রাইফাকে দেখছে।তাদের গন্তব্য হলো মিমের বাসা আর উদ্দেশ্য হলো ইমন আর আসিফকে দেখতে যাওয়া।রাইফা যখন আহাদের রুমে তখন তার ফোন আসে।স্কৃিনে তাকিয়ে দেখে মিম ফোন করেছে।মিম ফোন করার কারন হলো রাইফা তখন মিমকে বলেছিল আসিফ আর ইমনকে দেখতে যাবে।তাই মিম আবার রাইফাকে কথাটা মনে করিয়ে দিল।আহাদের শাসন আর খুনশুটিতে রাইফা আসিফ আর ইমনের কথা ভুলে যায়। সাথে ওই অচেনা লোকটির কথাও। রাইফা বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে তার ফোনে একটা মেসেজ আসে অচেনা নাম্বার থেকে। সেখানে লেখা ছিল,

“আমি যানি তুমি ওই দুই বদমাইশকে দেখতে যাচ্ছ। যাও তবে ওদের সাবধান করে দেবে তোমার মাথায় যেন কোন কুমতলব না ডুকায়।আর বাড়ি থেকে বের হচ্ছ সেই সুযোগ বুঝে ভেবোনা অনিকের সাথে দেখা করবে।খবরদার বলে দিচ্ছি এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যাও।তোমার জন্য আমাকে আমার খারাপ রুপটা যেন বার বার না দেখাতে হয়।তাহলে কিন্তু তুমি নিজেই বিপদে পড়বে।……আর তোমার সাথে এখনো আমার একটা হিসাব বাকি। তুমি দুপুরে আহাদের রুমে প্রায় ৩০ মিনিট ছিলে। এতক্ষন থাকার কারন কি।সময় বুঝে আমি হিসাব নেব মনপাখি।আচ্ছা পরের টা পরে যেখানে যাচ্ছ যাও সাবধানে যাবে।”

রাইফা মেসেজটা পড়েই নিজেকে অসহায় বোধ করে।তার জিবনে এতো ঝামেলা তো আগে ছিল নি।তবে এখন কেন এইসব ঝামেলা তার পিছু নিচ্ছে।বাড়ি থেকে বের হতেই মিসেস ডালিয়া জোর করে আহাদের সঙ্গে যেতে বলে
রাইফাকে। আহাদ যেখানে শিহাব ও সেখানে তাই তাদের সাথে শিহাবো যাচ্ছে।

কিছুক্ষণের মধ্যে তারা মিমের বাসার সমনে চলে আসে।রাইফা বেগ থেকে ফোন বের করে মিম কে ফোন দেওয়ার জন্য। তখন সে দেখে অচেনা নাম্বারটি থেকে আরেকটি মসেজ।রাইফা মেসেজটি ওপেন করে।সেখানে লেখা ছিল,

“আহাদ ছেলেটার সাথে তুমি বের হচ্ছো আমি কিচ্ছু বললাম না।তবে ওই ছেলের সাথে বেশিক্ষণ থাকবেনা আর কথা বেশি বলবেনা।ভালো থেকো আমার মনপাখি।”

রাইফা মেসেজটি পড়েই চকিতে তাকালো আহাদের দিকে।আহাদ এতোক্ষণ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল রাইফার দিকে হঠাৎ রাইফা আহাদের দিকে তাকানোয় আহাদ ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।আহাদ পরিস্থিতি সামাল দিতে ধমক দিয়ে রাইফাকে বলে,

“এই তুমি মিমকে ফোন করবে আর কতক্ষন অপেক্ষা করবো।
“ক..করছি করছি আমি মিম কে ফোন করছি”
রাইফা মিমের নাম্বার ডায়াল করতেই মিম বাসার গেট থেকে বের হয়।মিমকে দেখেই রাইফা বললো,
“মিম পেছনে গিয়ে বস”

মিম পেছনে শিহাবকে আর সামনে আহাদকে দেখেই রাইফার দিকে প্রশ্ন বোধক চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। রাইফা মিমের ইশারা বুঝতে পেরে বলে “আগে গাড়িতে উঠ তারপর বলবো ওনারা কারা”
রাইফা পেছনে শিহাবের সাথে বসে আছে।রাইফা পেছনে মাথা ঘুরিছে মিমকে বলে,
“তোকে আহাদ ভাইয়ের কথা বলেছিলাম না ওনি আহাদ ভাই” (আহাদের দিকে ইশারা করে)
মিম আহাদকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
“হ্যালো ভাইয়া”
আহাদ ও মিমের সাথে বেশ হেসে হেসে কথা বলে।একটুপর রাইফা শিহাবের দিকে তাকায়। শিহাব জানালার বাইরে তাকিয়ে কোল্ড ড্রিংকস পান করছে।রাইফা শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে,
“উনি শিহাব, আহাদ ভাইয়ের বন্ধু।উনি বিবাহিত ওনার একটা বাচ্ছা আছে।”
হঠাৎ শিহাব বিবাহিত শুনে মুখে থাকা কোল্ড ড্রিংকস টি নাকে উঠে যায়।আর মুখ দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে আসে। শিহাবের কান্ড দেখে সবাই চমকে যায়।রাইফা শিহাবকে সন্দেহ চোখে জিজ্ঞেস করে,
“কি হলো শিহাব ভাইয়া, আপনার বিয়ের কথা শুনে আপনার চোখ মুখ উল্টে গেল কেন”
রাইফার হঠাৎ আক্রমণে শিহাব থতমত খেয়ে যায়।আহাদ বুঝতে পাতে রাইফা তাদের সন্দেহ করছে।তাই সে শিহাবকে বাচাতে বলে,
“রাইফা তুমি এমন করছো কেন, দেখছো শিহাবের অবস্থা খারাপ।”
আহাদ এবার শিহাবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কিরে শিহাব তুই বিয়ে করেছিস না,তোর তো মেয়ে ও আছে।ওদের বল”
আহাদের কথা শুনে শিহাব কথার তাল মেলায়।
“হ…….. হ্যা আমার বউ বাচ্ছা আছে।”আসলে ওসের খুব মিস করছি তো তাই আর কি।রাইফা তুমি কি আমায় সন্দেহ করছো”(ভ্রু কুচকে)
“ন্না…না সন্দেহ করবো কেন।

“এই গাড়ি থামান,, গাড়ি থামান,,(চিৎকার দিয়ে মিম)
আহাদ গাড়ি থামিয়ে মিমের দিকে তাকায়।
” ভাইয়া আমরা চলে এসেছি,রাইফু নাম”
মিম আর রাইফা গাড়ি থেকে নেমে যায়।

“রাইফা তোমার কাজ শেষ হলে আমাকে ফোন দিয়।আমারা দুজন একটু ঘুরে আসি”(রাইফাকে উদ্দেশ্য করে আহাদ)
আহাদ আর শিহাব গাড়ি নিয়ে চলে যায়।আহাদ শিহাবের দিকে একবার রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
” ফাজিল অল্পের জন্য ধরা পড়িনি,মন কই থাকে তোর,মন কই রেখে তুই গাড়িতে উঠছিস”
“তোর শালিকার কাছে আমার মনটা রেখে এসেছি বন্ধু”(আনমনে শিহাব)
শিহাবের কথা শুনে আহাদ গাড়ি জোরে ব্রেক করে।।যার কারনে শিহাব সামনের দিকে হেলে পড়ে।তার ধ্যান ভেঙ্গে যায়।আহাদ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শিহাবের দিকে।
” তুই কি বললি শিহাব”
শিহাবের মনে পড়ে সে কি বলেছে।সে আমতা আমতা করে বলে,
“তুই যদি বলছ আমি রাইসার থেকে সরে আসব” (মাথা নিচু করে)
আহাদ শিহাবের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলে,
“না তুই আগে আমার গাড়ি থেকে” (গম্ভির কন্ঠে)
“কে….কেন।”
“তোকে আমি নামতে বলছি নাম(ধমক দিয়ে)

শিহাব গাড়ি থেকে নেমে যায়।আহাদ ও গাড়ি থেকে নেমে যায়।তারপর শিহাবের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আহাদ মুচকি হেসে শিহাব কে বুকে টেনে নেয়।আহাদের আচরণে শিহাব অবাক হয়ে যায়।
” কিরে পাগল অবাক হচ্ছিস কেন, রাইসা খুব ভালো মেয়ে কোন ছেলের সাথে তার রিলেশন নেই।যার কারনে তোর রাস্তা ফাঁকা ।ওর বোনের মতো ও এতো পাগল না।তোর সাথে ওর ভালোই মিলবে।আমার তোর উপর বিশ্বাস আছে তুই ওকে সুখে রাখবি।”
আহাদের কথা শুনে শিহাবের চোখে জল চিকচিক করছে।
“তুইকি রাইসাকে তোর মনের কথা যানাইচিস”
“নারে আমি তোর অপেক্ষায় ছিলাম, কিন্তু তোকে বলবো বলবো করে আর বলতে পারিনি।”
“বোকা ছেলে আমাকে বলার কি আছে আজি যানাবি তুই ওকে”
আবার দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে।
🌿🌿🌿🌿

রাত ১২ টা রাইফা শুয়ে আছে তার রুমে। ভয়ে তার ঘুম আসছে না তার। রাইসাকে বলেছে তার সাথে ঘুমাতে কিন্তু রাইসা না করে দিয়েছে।বারান্দার দরজাটা খোলা। কেননা রাতের ৯টায় অচেনা লোকটা মেসেজে যানিয়েছে যদি বারান্দার দরজা না খোলা রাখে তবে কলির ক্ষতি করে দিবে।ইমন আর আসিফের হাত খুব বাজে ভাবে ভেঙ্গে দিয়েছে লোকটা। খুব সহযে ভালো হবে বলে মনে হয় না।রাইফার নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। লোকটি কি চায় তা খোলাখুলি বলছে না। তবে লোকটি তাকে পছন্দ করে তা বেশ বুঝতে পারছে রাইফা।

এভাবে কেটে যায় আরো আধা ঘণ্টা কিন্তু লোকটা আসেনা। এদিকে রাইফার চোখ দুটো ঘুমের সাগরে ভাসছে। আস্তে আস্তে রাইফা ঘুমের রাজ্য পাড়ি জমায়।
এতোক্ষন লেপটপের স্কৃিনের দিকে তাকয়ে ছিল অচেনা লোকটি। লেপটপের দিকে তাকিয়ে লোকটি বলে,”তুমি না ঘুমালে আমি কিভাবে তোমার কাছে যাবো মনপাখি,এবার আমি আসছি তোমার কাছে ওয়েট”

কিছুক্ষণের মধ্যে লোকটি রাইফার রুমে প্রবেশ করে।আস্তে আস্তে গিয়ে রাইফার পাশে বসে তারপর রাইফার দুই হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে অসংখ্য চুমু খেতে থাকে।লোকটির চোখে জল ভেসে যাচ্ছে।যেন এখনি চোখের কার্নিশ বেয়ে নেমে যাবে নোনা জল।লোকটি অশ্রুশিক্ত চোখে বলে
” তোমাকে আমি আঘাত করতে চাইনা মনপাখি।কিন্তু তোমার কাজে তুমি শাস্তি পাও।এতোদিন যেমন তেমন চলেছ কিন্তু এখন আমার মতো করে চলবে।তোমায় আমি আমার মতো করে গোড়ে তুলবো।”
তারপর লোকটি রাইফার পাশে গিয়ে রাইফাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

🌿🌿🌿🌿

ভোর সাড়ে পাঁচটা উচ্চ শব্দে বেজে উঠে রাইফার ফোন। নাম্বার না দেখেই রিসিভ করে সে।রাইফার এতো সুন্দর ঘুম ভেঙ্গে দেওয়ার কারনে মাথা গরম হয়ে যায় তার।তাই ঘুমের ঘোরে বলে,
“এই কেরে তুই, আমি ফায়ার সার্ভিস না যে যখন তখন ফোন দিবি,আর আমি আগুন নেভাতে যাবো”(ঘুমু ঘুমু কন্ঠে)
ওপর পাশ থেকে অচেনা লোকটি মনের মাঝে একটি শিহরন বয়ে যায়।কাছে থেকেও কাছের না পাওয়ার বেদনা অনুভব করতে থাকে।রাইফাকে সে কবে কাছে পাবে তা নিয়ে আকুলতা বেড়ে যায়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে লোকটি বলে,
“তুমিই তো আমার ফায়ার সার্ভিস। আমার মনের মাঝে যে আগুন প্রতিনিয়ত জ্বলে তা তোমায় দেখলে নিভে যায়। বেশি কথা না বলে ঘুম থেকে উঠে পড়ো।”
লোকটির কথা শুনে রাইফা চমকে যায়।নাম্বার চেক করে দেখে সেই অচেনা সেই লোকটি ফোন দিয়েছে।সে ঢোক গিলে বলে,
“আপনি এতো সকাল সকাল”
“কোথায় সকাল, নামাজ কালাম তো পড়ো না যাও অজু করে নামাজ পড়ো।দেখবে আল্লাহ তায়ালা তোমার মনে রহমত দান করবে ”
লোকটির কথা শুনে রাইফা বেশ অবাক হয় কারন কেউ তাকে এমন করে কখনো বলেনি।রাইফার কোন উওর না পেয়ে লোকটি ধমকে রাইফা কে বলে”কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না তোমার, নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা করবো”
“যাচ্ছি,,,,, যাচ্ছি আমি।
” হুম তাড়াতাড়ি যাও”
রাইফা অজু করে নামাজ পড়তে যায়।আর অচেনা লোকটি লেপটপের স্কৃিনে রাইফাকে নামাজ পড়তে দেখে শান্তির একটা নিশ্বাস ফেলে।

চলবে……..

(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)
চলবে……

(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here