বেলা_শেষে_ফেরা পর্ব ১২+১৩

#বেলা_শেষে_ফেরা

#পর্ব_১২

#লেখনীতে_Suchona_Islam

রাতে তূর্ণা বারান্দা’য় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চাপা কান্না করে চলেছে। কান্না করছে ঠিক’ই, তবে আওয়াজ করছে না। জোরে কান্না করলে তার মা উঠে যাবে এবং তাকে নানান প্রশ্ন করবে।
তূর্ণার মনে হচ্ছে কি অদ্ভুত এই পৃথিবীটা। সব সময় মেয়েদের’ই কেনো এতো কষ্ট সহ্য করতে হবে। হাজার ব্যথা-বেদনা থাকলে’ও, একটু ভুল হলে’ই জীবনটা’ই বদলে যায়।

রুমে এসে পড়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটি বক্স বের করে তূর্ণা। তাতে তন্ময়ের সেই পাওয়া চিরকুট এবং পচন ধরা শিউলি ফুল গুলো আছে। তূর্ণা চিরকুট গুলো বুকে জড়িয়ে কাঁদছে নিঃশব্দে। আর মনে মনে বলছে, “তোমাকে ভালোবাসতাম বলে’ই তো আমি এখনো তোমার পাওয়া চিরকুট এবং শিউলি ফুল যত্ন করে রেখেছি তন্ময়। সেগুলোর কোনো অযত্ন হতে দেই নি। তবে কেনো আজ তুমি অচেনা হলে, কেনো?”

পরদিন তূর্ণা অফিসে গেলো না ইচ্ছে করে। তন্ময়কে দেখলে তার কষ্ট হয়। কেমন অচেনা হয়ে গেল ছেলেটা। তন্ময়কে দেখলে তূর্ণার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। তাই জেদ করে আজ অফিসে যায় নি সে। যদি’ও আজ অনেক ইম্পরট্যান্ট একটা মিটিং ছিলো অফিসে। নতুন একটা প্রোজেক্টের অফার এসেছে ক্লাইন্টের থেকে। কিন্তু তূর্ণা আজ অফিসে যাবে না বলে মনে মনে শর্ত বুনে নেয়।

………………………….

নিজের চেম্বারে পায়চারী করছে তন্ময়। আজ তার ক্লাইন্টের সাথে মিটিং ছিলো দুপুরে। তবে তূর্ণা আসেনি বলে ক্লাইন্টের থেকে দু’দিন সময় চেয়ে নিলো তন্ময়। মনে মনে তূর্ণাকে গিলে খাচ্ছে সে। কারণ তূর্ণা’ই নতুন প্রোজেক্ট’টা নিয়ে কাজ করবে। কিন্তু আজ সে আসে নি কোনো। তন্ময় রাগ করে দেওয়ালে জোরে একটা ঘুষি দেয়। তূর্ণা সামনে থাকলে তার অবস্থা খারাপ করে দিতো সে। তূর্ণা যেহেতু আজ অফিসে আসে নি, তন্ময়ের কাজে’ও মন বসবে না। তাই বাধ্য হয়ে অফিস থেকে চলে গেলো।

তন্ময় এখন বিত্তশালী হয়ে’ও কিছু’টা সাধারণ জীবন-যাপন করে। একটা রিক্সা নিয়ে গেলো মন ভালো করতে। সেই লেকের পাড়ে যেখানে তার অজস্র স্মৃতি জড়িয়ে আছে তূর্ণার সাথে। কাটানো মূহুর্তগুলো মনে করলে তন্ময়ের ভালো লাগবে।

সেখানে গিয়ে তন্ময় দেখলো। লেকের পাড়’টা আগের চেয়ে কিছু’টা উন্নত হয়েছে। খুব সুন্দর হয়েছে জায়গা’টা। দেখতেও মনোরম্য। প্রশান্তি মাখা বাতাস ছুঁয়ে যায় হৃদয় অব্ধি। পাখির কিচিরমিচির শব্দ যেনো ঘোর লাগার অস্ত্র। তন্ময় চোখ বন্ধ করে উপলদ্ধি করছে প্রকৃতির অপরূপ মায়া। আশেপাশে মানুষের উপস্থিতি বেশ। তবে সে তো তার মতো করে পরিকল্পনা করে চলেছে প্রকৃতি-লগ্ন’কে।

………………………..

ভাগ্যিস আজ অফিসে যায় নি তূর্ণা। না হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেত। ভাবতেই গায়ের লোম সব খাড়া হয়ে গিয়েছে তূর্ণার। তবে তার চেয়ে’ও বেশি এখন যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে। ব্যথার ঔষুধ খেয়েছে তবু’ও ব্যথা কমছে না। গরম পানির ছেক দিচ্ছে তবু’ও এই যন্ত্রণা কমানো যাচ্ছে না।

মুনিয়া এসেছে তূর্ণাদের বাসায়। উদ্দেশ্য তূর্ণার বাবা-মা’র কাছে আসা, তবে তূর্ণা যে আজ বাসায় তা মুনিয়া জানতো না।

“কি রে, মুখ এমন কালো করে রাখছিস কেনো। পুরাই বান্দরনী লাগছে।” মুনিয়াকে কথা’টি বলেই তূর্ণা খিলখিলিয়ে হেসে দিলো।
“হ আফা! আমি বান্দরনী লাগি। হাসেন বেশি করে হাসেন আমার যে কেমন লাগছে তা আমি’ই ভালো করে জানি।”
“কেনো কি হয়েছে তোর। নাকি আবারো আসাদের সাথে তোর ঝগড়া লেগেছে। এ আর নতুন কি দুই দিন পরেই তো ঠিক হয়ে যাবে।”
“ঝগড়া না, ঝগড়া না। কিন্তু আমার আর তোর জন্যে সুসংবাদ বলতে পারিস।”
“তা কিসের?”
“আসাদ বিয়ে করছে।”
“কনগ্রেচুলেশন বিলাই!” খুশি হয়ে মুনিয়াকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরলো তূর্ণা।
“আরে ছাড় তো কন-মন। জ্বলে মন তো আমার জ্বলে। শালায় বিয়ে করছে তা’ও আমাকে না।” দুঃখি মুখ করে বললো মুনিয়া।
“কিইইইই!” তূর্ণা তো অবাকের চরম পর্যায়ে। যারা মিনিটে মিনিটে ঝগড়া করে কে কাকে কতোটা ভালোবাসে তা নিয়ে। আর আজ তূর্ণা কি শুনলো এসব মুনিয়ার থেকে। মুনিয়া তো মরেই যাবে আসাদকে না পেলে।
“হ্যা। মেয়েটিকে তুই’ও চিনিস।”
“আমি!”
“হ্যা তুই! সে হলো রাজকন্যা মুনিয়া, মুনিয়া, মুনিয়া।” এবার ফিক করে হেসে দিলো মুনিয়া। তূর্ণা তো রাগে ফেটে পরছে। একে তো সে অসুস্থ আর মুনিয়া আসছে তার সাথে আদিখ্যেতা করতে।
“হারামী, বান্দরনী, কুত্তী, ফাজিল, অসভ্য মাইয়া। যা আমার রুম থেকে চলে যা। তোর সাথে আমি কথা বলবো না। তুই জানিস তো আমি অসুস্থ। তার উপর তোর ননস্টপ বকবক শুনলাম বসে বসে। যন্ত্রণা আমাকে গ্রাস করেছে। পাঁজি আমার সামনে থেকে যা এখন।”
“হ্যা এখন তো বাহানা তুমি করবা’ই চান্দু। যাচ্ছি যাচ্ছি। এই রাখ ইনভেটেশন কার্ড। সবার আগে দাওয়াত আমি তোকেই দিলাম। ২ সপ্তাহ পরে আমাদের বিয়ে। বেচারা অনেক কষ্ট করেছে সাথে আমিও। তুই আমাদের বেস্টফ্রেন্ড। তাই তোকেই আগে আমি নিজে দাওয়াত করে গেলাম। আসাদও হয়তো তোকে কার্ড দিবে তুই নিবি না বলে দিলাম।”

তূর্ণা ‘হা’ করে মুনিয়ার দিকে চেয়ে কথা হজম করার চেষ্টা করছে তবে পারছে না। মুনিয়া তূর্ণার এমন ক্যাবলার মতো তার দিকে চেয়ে থাকাতে হেসে দিলো। তূর্ণা’ও হাল্কা হাসলো। মুনিয়া তূর্ণার সাথে আলিঙ্গন করে চলে গেলো।

……………………..

“আপা আপনার সমস্যা কি আমাকে একটু বুঝায় বলবেন প্লিজ?”
“ওই শালা। ২ সপ্তাহ পরে তোর বিয়ে করা বউ হবো আমি। আর তুই এখন আমাকে ‘আপা আপা’ লাগায় দিছোস।” রাগে গিজগিজ করছে মুনিয়া।
“তা শালি বল কি কারণে রেগে আছিস আমার উপরে!”
“ওই হারামী। তোর কবেকারের শালী হই আমি!”
“তা আমি কবেকারের তোর শালা লাগি?”

নিজের ফাঁদে এবার নিজেই আটকে পরলো মুনিয়া। একটু নড়েচড়ে বসলো সে। তারপর একটা ভাব নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো, “কে ওই মেয়েটা?”
মুনিয়ার কথা শুনে আসাদ হেসে দিলো। তারা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। আসাদের হাসির শব্দ শুনে আশেপাশের মানুষ তাদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে। আসাদ তা লক্ষ্য না করলে’ও মুনিয়া করেছে। তাই মুনিয়া টেবিলের নিচ দিয়ে আসাদের পা’য়ে একটা জোরে লাথি দিলো। আসাদ ব্যথায় মুখ দিয়ে অস্পষ্ট শব্দ করলো।
“ওই ব্যাটা। আশেপাশে লোক দেখস না। আর আমি কি এমন হাসির কথা বললাম যে তোর এতো হাসি উতলায় পরবে।” রাগী স্বরে কথাগুলো বললো মুনিয়া।
“হাসবো না তো কি ললিপপ চুষবো ডাফার।” আসাদও হাল্কা রাগ দেখালো মুনিয়ার সাথে।
“এই তুই যখন থেকে চাকরি করছিস, তখন থেকে তোর কাছে আমি পর হয়ে গেছি তাই না!” একটু কষ্ট পেয়েছে মুনিয়া আসাদের ব্যবহারে।
“ওই’টা কোনো মেয়ে না মহিলা ছিলো। আর সে আমার অফিসের এমডির ক্লাইন্ট। এমডি মিটিংয়ে আসতে পারে নাই বলে আমাকে পাঠাইছে তার কাছে মিটিং’টা সেরে নিতে।”

মুনিয়া এবার বুঝতে পারলো আসাদের কথাটা। তখন সেই মহিলাকে দেখে মুনিয়ার রাগ হচ্ছিলো। তূর্ণাদের বাসা থেকে বেড়িয়ে ভাবলো অনেকদিন রেস্টুরেন্টে যাওয়া হয়না। তাই চলে গেলো রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেখানে আসাদের সাথে সে একটি মেয়েকে দেখতে পায়। সে জানতো না সেই ব্যক্তি একজন মহিলা। কারণ দেখতে একটু গোলুমলু তবে টপ-জিন্স পরিহিত ছিলো। চুল গুলোতে লেয়ার কাট করা ছিলল বলে পিছন থেকে মেয়েই লেগেছিলো কিছুটা। আসাদ সেই মহিলার সাথে হাতে হাত মিলাচ্ছে আবার হেসে হেসে কথা বলছে, তা মুনিয়া মেনে নিতে পারে নি। মহিলাটা যাওয়ার পরে মুনিয়া আসাদের সামনে চলে যায়।

“তবু’ও তুই কিছুটা পরিবর্তন হয়েছিস। আগের আসাদ কেমন চুপচাপ থাকতো এবং বেশ শান্ত’ও ছিলো। কিন্তু যখন থেকে অফিসে কাজ করা শুরু করেছিস, তখন থেকে তুই একটু রাগচটা হয়ে গিয়েছিস।” কথায় বেশ অভিমান জমে আছে। মুনিয়ার চোখের কোণে নোনাজলের উপস্থিতি আসাদ তা বেশ বুঝতে পারছে।
“অফিসে শান্তু স্বভাবের হলে আমাকে সবাই বোকা বানাবে। একবার তো একজন করেছিলো তুই তো সেটা জানিস। তাই তো তারপর থেকে একটু পরিবর্তন হই। আর এই পরিবর্তনেই আমি হয়ে যাই অফিসের তৃতীয় ম্যানাজার পদে। খুব পরিশ্রম করতে হয়েছে রে সোনা। আমাকে ভুল বুঝিস না তুই।”

আসাদের’ও এবার মন একটু খারাপ হলো। কি করবে অল্প বয়সেই ছেলেটা পার্ট টাইম জব করছিলো। ভাগ্যিস বড় কোম্পানিতে একটা জব হয়েছিলো তার। আস্তে আস্তে এই পর্যন্ত। শুধু মাত্র মুনিয়াকে পাওয়ার আসায়। মুনিয়া এবার হাল্কা হেসে দেয়। দু’জনেই আবার ভালোবাসার একান্ত সময় কাটাবে।

……………………..

“মিস তূর্ণা। কাল আপনার না আসার কারণ’টা জানতে চাই আমি। আপনার জন্যে ক্লাইন্টকে আমার দুই দিন সময় দিতে হলো। আপনি জানতেন না আমাদের একটা প্রোজেক্টের মিটিং ছিলো। কাল শুধুমাত্র আপনার জন্যে আমরা আমাদের ক্লাইন্টের কাছে লজ্জিত হয়েছি।” কর্কশ কন্ঠে তূর্ণাকে বকে চলেছে তন্ময়।
“সরি স্যার!”
তন্ময়ের পাশেই দাঁড়ানো ম্যানাজার। তূর্ণা মাথা নিচু করে তন্ময়ের কথা হজম করে চলেছে। ম্যানাজার থাকায় সে কিছু বলতে’ও পারছে না। তন্ময় ম্যানাজার’কে বাইরে চলে যেতে বললো। ম্যানাজার চলে গেলে তন্ময় আবার’ও তূর্ণাকে একই প্রশ্ন করলো। তূর্ণা শুধু বললো সে অসুস্থ। কিন্তু তন্ময় বুঝতে পারলো না কিসের অসুস্থতার কথা বলছে তূর্ণা।

“তুমি যদি অসুস্থ’ই হতে তবে আজ অফিসে এলে কেনো। আর অসুস্থ থাকলে একটা কল তো করে জানাতে পারতে?”
“আসলে ইচ্ছে করে’ই বলতে চাই নি।” মাথা নিচু করেই কথা বলছে তূর্ণা।
“কি এমন হয়েছে তোমার যে ইচ্ছে করে আমায় জানাও নি?”
“পিড়িয়ড।” তূর্ণা তন্ময়ের দিকে তাকালো এবার। তন্ময় থতমত খেয়ে গেলো তূর্ণার কথায়। সে ভুলে’ই গিয়েছিলো এ ব্যপারে। আসলে একটা মেয়ে কতোটা স্ট্রাগল করলে পিড়িয়ডের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েও কাজ করতে পারে। হোক তা সাংসারিক বা বাইরের কাজ। তবু’ও তারা চুপচাপ কাজ করে চলে এই পিড়িয়ড নিয়েও। কোনো অভিযোগ নেই তাদের। তবে অনেক পরিবার/স্বামী/বিএফ/বন্ধু আছে যেখানে তারা মেয়ের এই পিড়িয়ড নিয়ে উপহাস করে। তারা ভাবে মেয়েরা শুধু নাটক করে। তবে এই ব্যপারে তারা কখনোই অনুতপ্ত হয়না বরঞ্চ উপহাস করে।

লজ্জাবোধ কাজ করছে তন্ময়ের এবার। ক্ষমা চেয়ে নিলো তূর্ণার কাছে সে। তূর্ণা চলে গেলো তার সামনে থেকে। তন্ময় ভাবছে তার মাঝে কোনো কমনসেন্স নেই। থাকলে সে তূর্ণাকে বকতে পারতো না।
#বেলা_শেষে_ফেরা

#পর্ব_১৩

#লেখনীতে_Suchona_Islam

আজ থেকে মুনিয়ার বিয়ের প্রথম পর্ব শুরু। মুনিয়া ও আসাদ তূর্ণাকে নিয়ে তাদের বিয়ের শপিং করেছে। সব তূর্ণার পছন্দ মতোই। অফিস শেষ করেই তূর্ণা মুনিয়ার বিয়ের শপিংয়ে যাওয়া-আসা করায়, ওর শরীর এবার আর চলতে চায় না।
গায়ে হলুদের একদিন আগে মেহেন্দি প্রোগ্রামের আয়োজন করে মুনিয়ার বাসা থেকে। মুনিয়ার বাবা মুনিয়ার সব চাপ তূর্ণার উপরে দিয়েছে। তূর্ণার এই কয়েকদিনে ঠিক মতো ঘুম হয়নি। তার মন চাচ্ছে কাজ না করতে। এতো কিছু সামলিয়েছে, আবার এখন মুনিয়ার বিয়ের সব প্রোগ্রামে তার চাপ পরেছে। তবু’ও বেস্টফ্রেন্ডের বিয়ে বলে কথা, আস্তে আস্তে সামলে নিবে।

বিয়ের ৩ দিন আগে থেকে’ই তূর্ণা মুনিয়াদের বাসায় থাকছে। মুনিয়া জোর করে তার কাছে তূর্ণাকে থাকতে নিয়ে গেছে। কিন্তু বিপত্তি হলো তূর্ণার ঠিক মতো ঘুম হয়না। মুনিয়া প্রায় সারারাত’ই আসাদ এর সাথে বকবক করতে’ই থাকে। তূর্ণার এই কয়েকদিনের চাপেই অবস্থা খারাপ। তার চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মুনিয়াকে বুঝিয়ে’ও কোনো লাভ হয়নি।

মুনিয়াদের বাসার ছাদে ডেকোরেশন করেছে। সেখানেই মেহেন্দির অনুষ্ঠান চলছে। তূর্ণা তো মেহেদী লাগিয়েই মুনিয়াকে বলেছে সে ক্লান্ত খুব অনেকটা ধকল গিয়েছে এই কয়দিনে তাই রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকবে। মুনিয়া’ও সায় দিলো। সত্যিই মেয়েটার উপর দিয়ে এই কয়েকদিনে প্রচুর ধকল গিয়েছে।
তূর্ণা মেহেদী হাতে লাগিয়েই ঘুমিয়ে পরেছে। অনেক রাতে সে কারো কথার আওয়াজ পাচ্ছে। আধোআধো ঘুম চোখে বেলকনিতে চোখ পেরেছে তূর্ণার। সেখানে মুনিয়া ফোনে কথা বলছে। তূর্ণা তেমন লক্ষ্য না করে আবার’ও ঘুমে তলিয়ে গেলো। কারণ সে জানে আসাদ ছাড়া আর কার সাথে এতো কথা বলবে মুনিয়া।

………………………..

পরেরদিন মুনিয়ার গায়ে হলুদ। তূর্ণা মুনিয়াকে পার্লারে নিয়ে গিয়েছে। সাথে কয়েকটা মুনিয়ার কাজিনরাও এসেছে। আগে সবাইকে সাজিয়ে বিদেয় করলো তূর্ণা। বরপক্ষের লোক আসবে আর এখানে সে মুনিয়ার সাথে থাকবে তাই। মুনিয়াকে তূর্ণা বাঙ্গালি স্টাইলে শাড়ি পড়াচ্ছে। যাকে বলে ‘আটপৌর’।

“কিরে তুই সাজবি না!”
“আমি সাজলে আমাকে পুরা’ই একটা ভুত লাগবে।”শাড়ি পড়াচ্ছে আর কথা বলছে মুনিয়ার সাথে তূর্ণা।
“এ্যাহ মিথ্যুক। যখন তোর সাথে ওই ছেমড়ার বিয়ে হইছিলো তখন সাজছিস কেনো?”
“আহা, তখন তো একটা ব্যাপার ছিল। এই ধর সমাজের লোক শুধু বউয়ের দিকে’ই তাকিয়ে থাকবে। তাই বাধ্য হয়ে পার্লার থেকে সাজতে হয়েছিলো।”
“আমি অত কিছু জানি না বাপু। তুই আমার বিয়েতে না সাজলে, আসাদকে বলে বিয়েই করবো না।”
“চাপা কম ছাড় বুইন।” মুনিয়ার দিকে তাকিয়ে কথা’টি বললো তূর্ণা।
“কিসের চাপা, কার চাপা। কে মরল!” আশেপাশে তাকাতে তাকাতে।
“পাগল চুপ। আমার সাথে এমন মজা করিস না। যে মেয়ে বিয়ের আগেই বিয়ের জন্যে লুঙ্গী ডান্স করে তাও হবু জামাইয়ের সাথে, সে মেয়ে বিয়ে করবে না তাও আমার জন্যে। হুহ!”
“এই ভেঙ্গচি দিবি না একদম।”
“তো! তুই বলবি আর আমি ভেঙ্গচি কাটবো না!”
“যাক সেসব তবে তুই না সাজলে আমি কিন্তু সাজবো না বিয়েতে। ভুত হয়ে যাবো দরকার হলে।”
“অবশ্য চলে এটা। তা ভুত হয়ে যা আমার আপত্তি নাই।” এ্যাটিটিউড ভাব নিয়ে বললো তূর্ণা। মুনিয়া ‘ভ্যা’ করে কেঁদে দিলো। পার্লারের বিউটিশিয়ানরা তো অবাক। মেকআপ করার আগেই বউ কাঁদছে। এক বিউটিশিয়ান তো বলে’ই বসলো, “আপু আপনি কি প্র্যাকটিস করছেন কান্নার?”
“আরে ধূর আপু কি যে বলেন না। আমার এই হারামী বান্ধবী সে আমাকে আমার’ই বিয়েতে ভুত সাজে দেখতে চায়। জীবনে শুনছেন কখনো, কনে কিনা নিজের বিয়েতে ভুত সাজবে!”
বিউটিশিয়ান একবার মুনিয়া তো একবার তূর্ণার দিকে তাকায়। ভাবছে কোনো পাগল-ছাগল না তো এই দু’জন।
“হইছে ড্রামা কুইন। ফাইন আমি’ও সাজবো। তোর বিয়ে থুক্কু গায়ে হলুদ বলে কথা। এতো কিছু আমার জন্যে খরচ করলি আর এটা পারবো না। নে সাজলাম তোর বিয়েতে থুক্কু গায়ে হলুদে।”
মুনিয়া তূর্ণাকে টাইট হাগ করলো। তূর্ণাও খুশি বান্ধবীর আবদার রেখে।

…………………………

গায়ে হলুদের আয়োজন শুরু করা হয়েছে। এই মাত্র বিয়ের কনে এবং তূর্ণা আসলো পার্লার থেকে কমিউনিটি সেন্টারে। উপস্থিত সকলেই হলুদ শাড়ি পড়েছে। তবে মুনিয়া আর তূর্ণার শাড়ির ডিজাইন কিছু’টা মিল। কিন্তু মুনিয়ার শাড়িটা হলুদের মাঝে গোল্ডেন কাজ করা, আর তূর্ণার লাল। মুনিয়াকে কাঁচা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে আর তূর্ণা কিছু অর্নামেন্টস পরেছে। দু’জনেকেই খুব সুন্দর লাগছে। দু’জনকে দেখেই অনেক ছেলেরা ক্রাশ খেলো। তবে কয়েকটা ছেলে আফসোস করলো বিয়ের কনের উপর ক্রাশ খেয়ে। তা মুনিয়া ও তূর্ণা শুনে নিয়ে হাসিতে মশগুল।

মুনিয়ার বড় ভাই মোহিত তূর্ণাকে দেখলেই প্রেমে পরে যায় যায় ভাব। যদি’ও সে বিবাহিত। তবে যখন থেকে মুনিয়ার সাথে তূর্ণার পরিচয় হয়েছে তখন থেকে মোহিত তূর্ণাকে ‘আই লাভ ইউ’ বলে বলে তূর্ণার মাথা খেয়ে ফেলছে। আজ’ও তার ব্যতীক্রম হলোনা। তূর্ণার কাছে গিয়ে তূর্ণাকে ‘আই লাভ ইউ’ বলে’ই সেখান থেকে চলে গেলো। তূর্ণা রাগে মোহিতের স্ত্রী এর কাছে যায় এবং ব্যপারটা খুলে বলে তাকে। মোহিতের স্ত্রী নন্দিনী তো রেগেমেগে মোহিতকে খুঁজছে। এক মেয়ের বাবা হয়ে’ও তার এসব কান্ড কি মেনে নিবে নন্দিনী। আজ এর একটা বিহিত করে’ই ছাড়বে সে।

…………………….

তন্ময় এসেছে মুনিয়ার গায়ে হলুদে। মুনিয়া ইনভেটেশন করেছিলো তন্ময়কে। তূর্ণা সেখানে ছিলো না মোহিতের স্ত্রীর সাথে কথা বলছিলো বলে তন্ময় তূর্ণাকে লক্ষ্য করেনি। মুনিয়ার সাথে আলাপ-আলোচনা করছিলো তন্ময়, তখনই তূর্ণা এসে মুনিয়ার পাশে বসে। সে খেয়াল করে নি তন্ময় সেখানে তার পাশেই দাঁড়ানো। আসলে তূর্ণা মোহিতকে খুঁজছে যদি আবার এসে তাকে জ্বালায় তাই।
“শুন মুনিয়া। তোর ভাইরে আমি পাইলে একটা ঘুষি মারবো। পাঁজি সব সময় আমার সাথে ওমন করে। এইজন্য তোদের বাসায় আসি না আমি।”
“আরে বলদি গেস্ট আসছে তোর সেদিকে খেয়াল নাই। এসে’ই আগে বসে পরলি। সে কি দাঁড়িয়ে থাকবে তোর জন্যে।”
“উপস সরি আস….!”
তূর্ণা তন্ময়কে দেখে’ই ফিট হয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। তন্ময় তো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তূর্ণার দিকে। এতো সুন্দর লাগছে তূর্ণাকে সে এই সৌন্দর্যে অন্ধ হয়ে যাবে। তূর্ণা তাৎক্ষণিক সেখান থেকে সরে পরলো। তন্ময়ের সামনে থাকলে তার মন খারাপ হবে, আর সে এই আনন্দে মন খারাপ করতে চায় না।

“আসাদের বাচ্চা। ওই তোর ফোন দে আমাকে।”
“কেনো আমি আবার কি করলাম!”
“তুই আমাকে তোর ফোনটা দিবি এটা’ই জানি এই মূহুর্তে।”
“ওকে নে তবে দিয়ে দিস।” অসহায় হয়ে ফোনটা তূর্ণার হাতে দিয়ে দিলো। তূর্ণা একগাল হেসে বললো, “হেহে। আর পাবি তুই ফোন। তোর জন্যে আমার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। সব দোষ তোর। ফাজিল তুই যদি আজ কারো ফোন দিয়ে মুনিয়াকে কল করেছিস তবে আমি তোক বিয়ের দিনকে শোকের দিনে পরিণত করবো। হুহ বায়!”
আসাদ তো মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো। তূর্ণা একবার পিছন ফিরে হাসতে হাসতে সামনে যায়। তূর্ণা তো আসাদের চেহেরা ভেবে হেসে’ই যাচ্ছে সামনে কি আছে তার কোনো ইয়াত্তা নাই। তূর্ণা কারো সাথে ধাক্কা খেলো, সে আর কেউ না তন্ময় ছিল।
তূর্ণা আবার’ও তন্ময়কে ইগনোর করে চলে গেলো। তন্ময়ের এবার অভিমান জাগলো মনে। কালই মুনিয়ার সাথে কথা বলে একটা ফন্দি আটতে হবে।

…………………….

গায়ে হলুদে নাচ-গান হবে না তা কি চলে। তূর্ণা নাচতে’ও পারেনা, গাইতে’ও। তাই তন্ময়কে’ই গান গাইতে বলছে মুনিয়া ও আসাদ। কিন্তু তন্ময় আধ্যাত্মিক খুব’ই পছন্দ করে, এটা আসাদ জানতো। তাই এক কোণে তন্ময়কে আসাদ নিয়ে আসে কথা বলার জন্যে। তা না হলে মেয়েরা জাপটে ধরবে তন্ময়কে। তন্ময় গায়ে হলুদে আসার পর থেকেই অনেক বিবাহিত মহিলারা’ও তন্ময়কে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।

“ভাই! তুমি তো আধ্যাত্মিক গান পছন্দ করো তা আমি জানি। কিন্তু আমার বিয়েতে আমি মোটেও বাংলা গান শুনতে চাই না। তুমি কি অন্যান্য গান শুনো না নাকি!” কাঁদোকাঁদো ফেস করে বললো আসাদ তন্ময়কে।
“হ্যা শুনি। ইংলিশ গান তবে হিন্দি গান কম শোনা হয়।”
“গ্রেট! তবে আজ তুমি ইংলিশ গান’ই গাইবা। না হলে আমি তোমার সাথে কথা বলবো না বলে দিলাম!” অভিমানী সুরে একটা আগলা রাগ দেখালো আসাদ তন্ময়ের সাথে।
তন্ময় হাল্কা হেসে সম্মতি জানালো।

Not tryna be indie
Not tryna be cool
Just tryna be in this
Tell me how you choose
Can you feel why you’re in this
Can you feel it through
All of the windows
Inside this room
‘Cause I wanna touch you, baby
And I wanna feel you, too
I wanna see the sunrise and your sins
Just me and you

Light it up, on the run
Let’s make love, tonight
Make it up, fall in love, try

But you’ll never be alone
I’ll be with you from dusk till dawn
I’ll be with you from dusk till dawn
Baby, I’m right here
I’ll hold you when things go wrong…..
I’ll be with you from dusk till dawn
I’ll be with you from dusk till dawn
Baby, I’m right here
I’ll be with you from dusk till dawn
Baby, I’m right here…..

We were shut like a jacket
So do your zip
We will roll down the rapids
To find a wave that fits
Can you feel where the wind is
Can you feel it through
All of the windows
Inside this room
‘Cause I wanna touch you, baby
I wanna feel you, too
I wanna see the sunrise and your sins
Just me and you

Light it up, on the run
Let’s make love tonight
Make it up, fall in love, try

But you’ll never be alone
I’ll be with you from dusk till dawn
I’ll be with you from dusk till dawn
Baby, I’m right here
I’ll hold you when things go wrong
I’ll be with you from dusk till dawn
I’ll be with you from dusk till dawn
Baby, I’m right here…..

Go, give love to your body
It’s only you that can stop it
Go, give love to your body
It’s only you that can stop it
Go, give love to your body
It’s only you that can stop it
Go, give love to your body
Go, give love to your body

But you’ll never be alone
I’ll be with you from dusk till dawn
I’ll be with you from dusk till dawn
Baby, I’m right here
I’ll hold you when things go wrong
I’ll be with you from dusk till dawn
I’ll be with you from dusk till dawn
Baby, I’m right here
I’ll be with you from dusk till dawn
Baby, I’m right here…..

তন্ময় যে তূর্ণাকে ঘিরে’ই গানটা গেয়েছে তা সে’ই জানে। তন্ময় গান গাওয়ার সময়’ও তূর্ণার দিকেই তাকিয়ে গানটা গেয়েছে। অনেক মেয়ে-মহিলারা পাগল হয়ে যাচ্ছিলো। এতো সুন্দর কন্ঠ তার উপর আউটস্ট্যান্ডিং ছেলে, মেয়েরা তো পাগল হবেই। তূর্ণা তন্ময়ের দিকে না তাকালেও সে গানের সুরে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলো।

“কালকের জন্যে একটা মাস্টার প্ল্যান করো। ও আজ কয়েকদিন হলো আমাকে ইগনোর’ই করে চলেছে। আমি কিনা ভাবলাম রাগে দুঃখে মনের কথা বলবে। সে মেয়ের সেসব জ্ঞান আছে নাকি। প্লিজ মুনিয়া ডু সামথিং!” রাগে ফেটে পরছে তন্ময় তূর্ণার ব্যহারে।
“ওকে ওকে আই’ল হ্যান্ডেল ইট! তবে এখন তো আমি কিছু করতে পারছি না। ভাবতে হবে আমাকে একটু। রাতে টেক্সট করে জানিয়ে দিবো কেমন!”
“হুম।”

#ক্রমশ…

(গল্পটি কেমন হলো মতামত জানাবেন। স্ববিনয়ে পড়ুন এবং ধন্যবাদ সকলকে।)
#ক্রমশ…

(অসুস্থ ছিলাম আমি। জ্বরে মাথা ব্যথায় শেষ একপ্রকার। গল্প দি কেমন করে বলুন আপনারা। তাই তো আজ দিলাম। গল্পটি কেমন হচ্ছে আপনার মতামত জানান। আপনাদের মতামত আমাকে আরো উৎসাহ করবে।
স্ববিনয়ে পড়ুন এবং ধন্যবাদ সকলকে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here