স্বপ্নময় ভালোবাসা
রোকসানা আক্তার
||পর্ব-১১||
আমাদের দেখে খালামণির মুখখানা স্মিত হয়ে যায়।তিনি সাবলীল ভঙ্গিমায় দরজার চৌকাঠের দিকে বাম পা বাড়িয়ে দিয়ে মাকে একহাতে জড়িয়ে বলেন,
“বুবু,ভেতরে আসো।”
আমরা ভেতরে যাই।খালামণি আমাদের সোফায় বসিয়ে দিয়ে মুহূর্তেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কাজের লোকদের এটা-ওটা করতে তাগাদা দিতে থাকেন।তা দেখে আমি এবং মা খানিকটা প্রত্ত্যুতর হই।মা বিগলিত গলায় বললেন,
“আহা,শাহিদা!এত অস্থির হোস না ত!মাত্রই ত আসলাম।শান্ত ধীরে সব আস্তে আস্তে করিস।আগে আমাদের একটা রুম দেখিয়ে দে।আমরা খুব ক্লান্ত। ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিব।”
খালামণি মায়ের কথা মেনে নেন।আর বলেন,
“আচ্ছা ঠিক আছে।আমি তোমাদের একটা রুম দেখিয়ে দিচ্ছি।তোমরা ফ্রেশ হয়ে নাও তোমাদের রুমেই চা পাঠিয়ে দিব।”
কথা শেষ করেই খালামণি আমাদের উনার সাথে দশম ফ্লোরে,অথার্থ উপরের তালায় নিয়ে যান।সেখানের একটা রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ভেতরে ঢুকতে বললেন,
“বুবু,তোমরা আসবা শুনে আজ সকালেই মরিয়মকে দিয়ে রুমটা গুছিয়ে রাখি।দ্যাখো ত পছন্দ হয়েছে কিনা?”
মা টগবগ চোখে রুমের চারপাশে তাকান। বলেন,
“বেশ ত!খুব পছন্দ হয়েছে শাহিদা।”
তারপর খালামণি আমার দিকে ফিরে বললেন,
“আর সানা তোমার পছন্দ হয়েছে?”
রুমটা চারকোণাকৃতির এবং বেশ বড়সড়।এটির কোণা ঘেঁষে সামনে লম্বা একটা বারান্দা।এতে তিন চারটে ঝুলন্ত টব হালকা বাতাসের ঝটকায় দিকে দিকে নড়ে উঠছে।আর ভেতরে একটি বেড,একটি কাবার্ড এবং একসেট চেয়ার-টেবিল। দেখতে খুব বেশি চমৎকার না হলেও মোটামুটি সুন্দর বলা যায়।বললাম,
“খারাপ না।”
খালামণি খুশি হয়ে যান।হাসি হাসি মুখ করে বলেন,
“হুম।আর যা যা প্রয়োজন হবে সেটা মরিয়মে বলবে।ও এসে দিয়ে যাবে।”
মা বললেন,
“যেটার প্রয়োজন হবে সেটা মরিয়মকে বলবো কেন?আমার বোনের বাড়ি মানেই ত আমার বাড়ি।যা যা লাগবে আমি নিজেই গিয়ে নিয়ে আসবো।”
মায়ের কথায় খালামণি শব্দ করে হেসে উঠেন।সাথে আমিও হেসে দিই,তবে নিঃশব্দে।
দুপুরের খাবার শেষ করে মাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে আমি বিছানায় হালকা পিঠ ঠেকাই।মুহূর্তে ক্লান্তিভরে চোখগুলোর পাতা ভার হয়ে আসে।অসাড় এবং অবচেতন হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে যাই সন্ধের সময় মায়ের ডাকে ঘুম না ভাঙ্গলে বুঝতাম না।বাইরে তাঁকিয়ে আঁবছা অন্ধকার।দূরের বাতির আলো ম্লান প্রজ্বলিত।এখনও তা গাঢ় রূপে চারপাশ ছড়িয়ে যেতে পারেনি দিনের হালকা স্ফীত আলোর কারণে।
আমি কাচুমাচু হয়ে হাত-পা নেড়েচেড়ে বিছানা থেকে নামি।বাথরুমের দিকে যেতে নিলেই মা বললেন,
“সানা,তোর মোবাইলে বার কয়েক ফোন এসেছিল।”
আমি হাঁটার গতি শ্লথ করে মায়ের দিকে ফিরি।বললাম,
“কে কল করেছে,জানো?”
“নাহ।আমি ত রিসিভ করিনি।”
“ওহ।আচ্ছা আমি বাথরুম থেকে আসি তাহলে।”
“যা।”
বাথরুম থেকে বেরিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি আকাশ কল করেছে!আমি ব্যাক করবো হঠাৎ মনে পড়লো এখন ত মাগরিবের ওয়াক্ত।হয়তো ও নামাজে যাবে।এখন কল করেও হয়তো পাবো না।তাহলে পরে দিব।ভেবেই ফোনটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিই।
মা
মাগরিবের সময় শেষ হয়। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে।আমি ব্যাগের জামাকাপড় গুলো এক এক বের করে কাবার্ডে রাখতেছি।মা বিছানার উপর বসে আসেন। এমতাবস্থায় মরিয়ম ভেতরে ঢোকে।সাথে খালামণিও।।
মরিয়ম নাস্তার ট্রে টা টেবিলের উপর রেখে চলে যায়। খালামণি বললো,
“বুবু,সানা নাস্তা করে নিও।”
মা সাবলীলভাবে মাথা নাড়েন।
খালামণি বলেন,
আর হ্যাঁ বুবু তুরাব বাসায় এসেছে।এখন ও ওর রুমেই।ওর বন্ধুরাও ওর সাথে এসেছে।তাই এখন ও ওদের সাথেই কথা বলতেছে।আমি ওকে গিয়ে তোমার কথা বলেছি।ও আসবে।এসেই তোমার রোগ অনুযায়ী ভালো ডাক্তার সাজেস্ট কর দিবে।”
মা হতবিহ্বল চোখে আমার দিকে তাঁকান।আমিও স্তম্ভিত প্রায়ই!খালামণিকে হঠাৎ বলা ঠিক হবে আসার আগেই আমি পরিচিত একজন ডাক্তারকে দেখিয়ে এসেছি!কাল রিপোর্ট বেরুবে।এমনটা বললে উনি কেমন রিয়েক্ট করবেন কে জানে!
ভেবেই অন্তঃগোপনে একটা ঢোক গিলি।প্রত্ত্যুতর হয়ে খালামণির দিকে এগিয়ে বললাম,
“খালামণি,ঢাকায় আমারও পরিচিত ভালো একজন মেডিসিন ডাক্তার আছে।ভাবলাম উনাকেও একবার দেখালে..!”
আন্টি আমার পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই বলে উঠলেন,
“সমস্যা কী!সেখানেও দেখাবা!মানুষ ত আর একজায়গায় দেখায় না।দুই তিন জায়গায় দেখালে রিপোর্ট মিলে গেলে অনেকটা চিন্তামুক্ত হওয়া যায়।”
“জ্বী।”
“আচ্ছা আমি গেলাম।খেয়ে নিও।”
বলেই খালামণি দ্রুতপদে বেরিয়ে যান।আমি হা হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকি! তবে বুঝে উঠতে পারলাম না তিনি বিষয়টা কী নর্মালি নিয়েছেন নাকি রাগ করেছেন!আসলে ভাবলেস হীন মানুষের কথা বুঝে উঠা কষ্টকর!
সন্ধের নাস্তা খাওয়া শেষ করে আমি ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকনির দিকে চলে আসি আকাশকে কল করবো ভেবে।এরইমধ্যে মা হঠাৎ কাতরিয়ে উঠেন।পেছন ঘুরে তাকিয়ে মা বুকে হাত রেখে চোখ-মুখ কুঁচকে আছেন!
দৌড়ে মায়ের কাছে আসি।কাঁধে আলতো হাত রেখে বললাম,
“মা শরীর খারাপ করছে?”
মা মিনমিন গলায় বলেন,
“বুকে খুব চিনচিন ব্যথা করছে রে।”
আমার ভেতরটায় আঁতকে উঠে।বললাম,
“বেশি ব্যথা করছে?”
“নাহ,হালকা।”
মার বুকে খানিক ঢলে দিয়ে আমি মাকে বিছানায় শুইয়ে দিই।তারপর টেবিলের উপর থেকে মার ওষুধের বাক্সটা খুলে ওখান থেকে একটা ব্যথার টেবলেট বের করে গ্লাসে পানি নিয়ে মাকে ওষুধটা খাইয়ে দিই।মা ওষুধ খেয়ে সোঁজা হয়ে শোয়।কিছুক্ষণ এভাবে কাঁটে।তারপর মার একদম কাছে আমার মুখটা এনে বললাম,
“মা,ব্যথা এখন কেমন?”
মা চোখবুঁজা রেখেই আস্তে গলায় উত্তর করলো,
“কিছুটা কমেছে। ”
তারপর মাকে আর জ্বালাতন করিনি।মা নিঃশব্দে শুয়ে থাকে।।খালামণিকেও আর এ ব্যাপারে কিছু বলি নি।দরকার কী একজনের বাসায় এসে উল্টো তাকে চিন্তায় এবং অস্থিরতায় ফেলা!
দশটার দিকে মরিয়ম আপু রুমে আসে।এসেই বললো,
“ম্যাডাম বলছে খেতে যেতেন।”
কথাটা শুনে আমি কিছুটা তটস্থ হই।খেতে যেতে হলে এখনতো নিচে যেতে হবে।আর নিচে গেলে তুরাব ভাইয়ার মুখোমুখি! তাছাড়া,মাও অসুস্থ! মাকে ত আর নিচে নিয়ে যাওয়া যাবে না!ভেবেই বললাম,
“মায়ের শরীরটা খারাপ।আপনি বরং খালামণিকে বলুন খাবার এখানেই পাঠিয়ে দিতে।”
“তাহলে খালাম্মা এখানে খাবে,আর আপনি সবার সাথে ওখানে খান।”
“নাহ মানে ওখানে ত অনেকেই।আমি..!”
“আরেহ অনেকে কই দেখলেন?তুরাব ভাইয়া,শুভ ভাইয়া,সুর্ভী আপা এবং ম্যাডামে!আর স্যার ত রাতে ভাত খায় না।ডায়বেটিক রোগী।উনি এখন উনার রুমেই। আর উনাকে উনার রুমেই এখন রুটি এবং সবজি করে দেওয়া হয়েছে!”
মরিয়ম আপার মুখ থেকে “সুর্ভী”শব্দটা শুনে উনার দিকে হতচকিতে তাকাই।দ্বিধা ভরা গলায় বললাম,
” সূর্ভী কে?”
“তুরাব ভাইয়ার বন্ধু।”
“শুধুই বন্ধু?”
“মানে?”
“নাহ,নাহ কিছু না।তুমি একটা কাজ করো আমাদের জন্যে এখানেই খাবার নিয়ে এসো।আমি নিচে যাবো না।”
মরিয়ম আর কিছু বলেনি।সায় দিয়ে চলে যায়।আর আমার মস্তিষ্কটা দশ বারো বারের মতো রক্তক্ষরণের মতো ব্যথা করে উঠে।ভাবনায় আসছে না এরকম একটা ছেলের মেয়ে বন্ধু থাকতে পারে।আবার তাও তার রাতবিরাতে এ বাসায় এসে আড্ডার আসর!হাউ ওয়ান্ডার্ড এ সিন ইজ!!স্বপ্নময় ভালোবাসা
রোকসানা আক্তার
||পর্ব-১২||
রাত দশটা কিংবা এগোরটা।আমি ডিনারটা সেড়ে হাতে একটা থ্রিলার বই নিয়ে চেয়ার টেনে বসি।এমতাবস্থায় কেউ দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে।আমি চমকে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে তুরাব ভাইয়া এসেছে।উনাকে দেখামাত্রই আমার ভেতরটায় এক দলা লজ্জা,সংকোচ গেড়ে বসে।মাথার অর্ধ আবৃত ওড়নাটা সামনে আরেকটু টেনে নিয়ে আবার তাড়াতাড়ি বইয়ে মুখ গুঁজি।আর কানদুটো পেছনের দিকে মনোনিবেশ করে রাখি।
তিন-চার সেকেন্ড কেঁটে যাওয়ার পর তুরাব ভাইয়া খানিকটা কেঁশে নিয়ে গলাটা একটু পরিষ্কার করেন।খুবই সুশীল এবং সুস্পষ্ট গলায় মাকে বলেন,
“আন্টি?ঘুমাচ্ছেন?
মার এতক্ষণ চোখের পাতা বুঁজা ছিল।ঠিক ঘুমায় নি,সন্ধের বুক ব্যথায় কাতর শরীরটা বিছানায় ছড়িয়ে দিয়েছেন মাত্র।কারো কথার আওয়াজ পেয়ে সেই কাতরতার গোচর কাঁটে।চোখজোড়া মেলে দেখেন তুরাব ভাইয়া।মুহূর্তেই মার ঠোঁটে এক দলা হাসি ঝুঁলে পড়ে।শোয়া থেকে ধীরগতিতে উঠে বসেন। তারপর বলেন,
“নাহ,বাবা।ঘুমাই নি।শরীরটা একটু খারাপ লাগছে ত তাই শুয়ে আছি।তা তুমি দাড়িয়ে কেন!চেয়ারে বসো।এই সানা,তুরাবকে একটা চেয়ার টেনে দে।”
“নাহ,আন্টি লাগবে না।আমি একটুপর চলে যাবো।”
খারাপ দেখাবে ভেবে আমি একগাট্টি লজ্জা, সংকোচ বোধ থাকা সত্ত্বেও মার কথায় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াই।চোখের দৃষ্টি নিচের দিকে রেখেই পাশ থেকে একটা চেয়ার টেনে এনে উনার দিকে এগিয়ে দিই।উনি সেখানে ধপাস করে বসে পড়েন!এ বিষয়টা আমার চোখে একটু বাঁধে।কেমন ম্যানারলেস রে!একজন দিয়ে দিলো,আর সে কেমন বেহায়ার মতো বসে গেল!
“তা আগে কোথাও ডাক্তার দেখিয়েছেন,আন্টি ?”
“হুম,বাবা দেখিয়েছে।কুমিল্লা মডার্নে।”
“কী বললেন ওই ডাক্তার?”
“হার্ট দুর্বলের কারণে নাকি বুকে ব্যথা হচ্ছে।আর আগে শুধু বুকে ব্যথাই ছিল, ইদানীং তারসাথে শ্বাসকষ্ট, বমি,মাথাঘোরা নতুন করে জুড়ে বসেছে।”
“তাহলে ত ব্যাপারটা সিরিয়াস!আচ্ছা, আমি তাহলে একজন ডাক্তারের এড্রেস দিয়ে দিচ্ছি।কাল গিয়েই দেখিয়ে আসুন।”
মার ঠোঁট নঁড়ার আগেই আমি পাশ থেকে ফোঁড়ন কেঁটে বললাম,
“কাল সম্ভব না!”
তুরাব ভাইয়া আমার দিকে অবাক নয়নে তাঁকান।বলেন,
“কেন সম্ভব না?”
মনে মনে কথাগুলোকে গুছিয়ে নিয়ে উনার সামনে নিজেকে যথেষ্ট সম্ভব প্রদর্শন করে বললাম,
“মা একজন হার্টের রোগী।অনেকটা পথ জার্নি করে এখানে এসেছে।এতে শরীরটা প্রায়ই অসাড়।এখন মার রেস্ট খুবই প্রয়োজন।তাই কালকের দিনটা সম্পূর্ণ রেস্টে কাঁটিয়ে ইনসাল্লাহ পরদিন নিয়ে যাবো ভেবেছি।”
তুরাব ভাইয়া নিঃশব্দে কথাগুলো শোনে নিয়ে দু’পাশে হালকা মাথা ঝাঁকিয়ে বলেন,
“তা বেশ,নো প্রবলেম!এজ ইউর উইশ!”
আমি আর কিছু বলিনি।চেয়ারে এসে বসে পড়ি।উনি উনার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে গন্তব্য ফিরতি মায়ের দিকে ফিরে বলেন,
“তা আন্টি আমি চলে যাচ্ছি ঠিকমতো ওষুধ খেয়ে নিবা।ওষুধ কিছুতেই মিস দিবা না।আর পর্যাপ্ত ঘুম দিবা,ওকে?”
“ঘুম ত বেশি আসে নারে বাবা!”
“না আসলেও চেষ্টা করতে হবে।আর যদি একেবারে না-ই আসে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শনুযায়ী মেডিসিন নিও।”
“দেখি..!”
“আচ্ছা, যাচ্ছি তাহলে।”
মা মাথা দুলে “হ্যা” ইঙ্গিত করেন।উনি বেরিয়ে যান।
উনি চলে যাওয়ার মিনিট দশেক পর আমি পুরো বারান্দাময় জুড়ে পায়চারী করতে থাকি !মা কিছুক্ষণ হলো ঘুমিয়ে গেছেন।বাতিও অফ করে দিয়েছি।এখন রুমটা পুরো অন্ধকার!আর বারান্দাটা চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় চকচক করছে।বাইরে দূরের দুই তিনটে কৃষ্ণচূড়া গাছ মৃদু বাতাসে কিছুক্ষণ পরপর দুলে উঠছে।আমি ওখানটায় একপলক তাকিয়ে একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ি। আজ ওই লোকটাকে মিথ্যে বলেছি। মার ক্লান্তির কারণে কাল নিয়ে যেতে পারবো না।জানি না লোকটা কি ভেবে নিয়েছে!সন্দেহ করেছে নাকি বিশ্বাস করেছে!যদি বিশ্বাসই করে নিল তবে কাল আমি কী বলে রিপোর্ট নিতে যেতে বেরুব? খালামণিকে কী বাহানা করে বলব যে খালামণি আমি বাইরে যাচ্ছি!
আচ্ছা,যদি সত্যটাই,অর্থাৎ আকাশের চেম্বার থেকে মাকে দেখিয়ে এনেছি,সে আমার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড এসব বলে দিতাম তাহলে উনারা কেমন রিয়াক্ট করতেন?বিষয়টি ভালোভাবে দেখতেন?অবশ্যই না।
তাহলে ভুলটা কী আমারই ছিল যে আমি প্রথমেই আকাশের চেম্বার থেকে মাকে দেখিয়ে এই বাসায় আসলাম?
তখন ত আর ওতকিছু ভেবে দেখি নি।উফস!এতশত ভাবনার মাঝেই হুট করে আমার কল বেঁজে উঠে।রুমে যেয়ে বাতিটা অন করে মোবাইল হাতে নিই।তারপর আমার বাতি অফ করে দিয়ে বারান্দায় চলক আসি।স্ক্রিনে তাকিয়ে আকাশ কল করেছে।কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো,
“খালামণির বাসায় গিয়ে আমাকে ভুলেই গেলি?”
“আরেহ নাহ।একটু ব্যস্ত আর কি আকাশ।তুই জানিস?মার আজকে সন্ধেও বুকব্যথা উঠেছে।”
“কী বলিস!?”
“হুম।”
“ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিস?”
“হু।ওষুধ খাওয়ানোর পরই ত স্বাভাবিক হলো মা।”
“আন্টির ভালোমতো খেয়াল রাখিস।আর কাল রিপোর্টগুলো ভালোমতো দেখবো কী কারণে এত রোগ!কাল ত আসছিস,না?”
আমি খানিক চুপ থেকে তারপর বললাম,
“যা-বো, আকাশ!
বলেই ছোট্ট একটা ঢোক গিলি।আকাশ বললো,
“ওকে তাহলে কাল আমাদের দেখা হচ্ছে। কাল কিন্তু আমার এখানে লাঞ্চ করবি বলে দিলাম!”
“সেটা পরে দেখা যাবে।”
“পরে দেখা যাবে মানে কী?এতকিছু বুঝি না কাল এখানেই লাঞ্চ করবিই!লাস্ট এন্ড ফাইনাল ডিসিশন!”
আমি ফিকে হেসে ।বললাম,
“আচ্ছা,বাবা করবো করবো।”
“আন্টি ঘুমিয়ে?”
“হু।”
“ওহহ।একটা কথা বলতাম সানা!”
“কী?”
আকাশ খানিক চুপ থাকে।ওর নিশ্চুপতা বুঝা গেল ও কিছু একটা ভাবছে।পরমুহূর্তে বললো,
“না কিছু না!”
“আচ্ছা।তা ডিনার করেছিস?”
“নাহ।”
“কেন?”
“বুয়ার বাসায় কি প্রবলেম হয়েছিল সেজন্যে আসতে পারে নি।তাই রান্না ও হয়নি।ফ্রিজে ফ্রুটস আছে। ফ্রুটস খেয়ে রাতের খাবারটা কোনমতে কাটিয়ে দিব।
তুই করেছিস?”
“আমি আরো আগে করেছি।আর শুন?যতদিন তোর সাথে কথা হলো ততইদিনই শুনলাম তোর এই সমস্যা,ওই সমস্যাএকটা কাজ করলেই ত পারিস!”
“কী?”
“একটা বিয়ে করে পেল!বউ সারাদিন ওটাসেটা খাওয়াবে।জামা ধুঁয়ে দিবে ইত্যাদি ইত্যাদি।”
আকাশ খিলখিল হেসে দেয়।হাসি থামিয়ে বললো,
“বিয়ে ত আর কখনো করবো না।তাই বউ আসবে কথেকে?”
একথাটি শুনামাত্র একমুহূর্তেই আমার ধমনী শিরা-উপশিরায় হীম স্রোহ বয়ে যায়।চোখদুটো ছলছলিয়ে ওঠে।বুকটা ভার হয়ে আসে!মনের অবচেতনে গুনগুনিয়ে উঠে,আকাশ আমায় এখনো অনেক ভালোবাসে?আচ্ছা কেন এত ভালোবাসে?কেন এত আবেগ মোহ বুকের পাশে জমা রেখে নিজের জীবনটাকে শেষ করে দিচ্ছে?কী লাভ তার?
ভেবেই নিজেকে সংযত করি।তারপর প্রসঙ্গ পাল্টে শান্ত গলায় বললাম,
“রাত অনেক হয়ে গেছে।ডিনার করে নে।আর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়।রাখলাম।”
“আর শুন শুন?কাল কখন আসবি?”
“বের হওয়ার সময় তোকে কল করে জানাবো।”
“ওকে,বায়।টেক কেয়ার।”
কলটা রেখে বেলকনির দরজা বন্ধ করে বিছানায় এসে শুই। আর ভাবতে থাকি কাল খালামণিকে কি বলে বাসা থেকে বেরুনো যায়!
চলবে….
(আপনারা বিলিভ করবেন কিনা জানি না।ইদানীং আমার প্রচণ্ড মাথাব্যথা!চেষ্টা করলেও লিখতে পারি না।ইভেন এখনও মাথাব্যথা নিয়ে লিখেছি!
আর হ্যাঁ,আরেকটা পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো আজ রাত ১২/১ টার দিকে।।।)
“চলবে….