গল্পঃ ঝরা পাতার দিনগুলো
।।
পর্ব- ১৩
।।
ইমিগ্রেশন শেষ করে ফুপা ফুপিকে বসিয়ে দিয়ে বাথরুমে চলে এলাম আমি।
চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এতো কস্ট হওয়ার কারন আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। প্রায় আধাঘন্টা পর বের হলাম। চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছি কাঁদতে কাঁদতে।
ভাগ্যিস ফুপা আর ফুপির সিট আমার সাথে পরেনি। তাহলে চোখের পানি ধরা পরে যেতো।
আমার যত কস্ট, যত কান্না আর দুঃখের দিন গুলো সব এই দেশেই রেখে যাচ্ছি। এর পর থেকে আমি আর কাঁদবো না। কখনোই কাঁদবো না।
ভ্রমণের দিনগুলো অনেক আনন্দের ছিলো। ফুপা ফুপির বাচ্চাদের মতো খুশি দেখে মন অনেকটায় শান্ত হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু কুয়ালালামপুর ওদের ফিরতি ফ্লাইটের সময় আবার পুরানো ক্ষত গুলো নতুন করে জেগে উঠলো।
পুরো সময়টাতে সাব্বির শুধুমাত্র একবার ফোন দিয়েছিলো। ভেবেছিলাম হয়তো আমাকে কিছু বলবে। কিন্তু আমি বরাবরই ওর ব্যাপারে কিছু বুঝতে পারি না।
রিশাদ ভাইয়ার সাথে কথা হতো নিয়মিত।
ফুপি অনেকবার জিগ্যেস করেছিলো সাব্বিরের সাথে কি হয়েছে আমার। কিন্তু সত্যি কথার বলার দায়িত্বটা তো ছোট ভাইয়া কে দিয়ে এসেছি। তাই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিলো না। ওদেরকে এই কস্টটা দিতে চাইনি কখনো আমি। কিন্তু আমার নিজেকেও তো বাচতে হবে।
আমার পরে যাওয়ার ব্যাপারে ফুপা ফুপিকে কনভিন্স করতে একটু কস্ট হলো।
বিদায় বেলায় এসে বুঝতে পারলাম এই মানুষ দুটো সত্যিকার অর্থেই আমাকে মেয়ের জায়গাটা দিয়েছেন।
তাই হয়তো একটু বেশিই কস্ট হচ্ছে।
উনাদের ফ্লাইট মালয়শিয়ান টাইম রাত আটটায়। আর আমার ফ্লাইট রাত সাড়ে বারোটায় ।
ফুপা ফুপি চলে যাওয়ার পর সেদিন কুয়ালালামপুর চেক ইন এ শতশত মানুষ আমার কান্নার সাক্ষী হয়ে রইলো।
সিডনির দিন গুলো হয়তো ভালোকিছুর সাক্ষী হয়ে থাকবে।
প্লেনে উঠা অব্দি ফুপিদের সাথে কথা বললাম। তারপর ছোট ভাইয়াকে একটা কল করলাম।
-ফ্লাইট কয়টায় তোর?
– বাংলাদেশি সময় রাত দশটায় । ওখানে গিয়ে পৌছুতে পৌছুতে ভোর সাড়ে পাঁচটা বাজবে। রিশাদ অথবা সাব্বির কে বলিস এসে নিয়ে যেতে। আর উনারা গিয়েছে কি না আমাকে একটু জানিয়ো। আমি আর ফোন দিবো না ওদেরকে।
– কে নিতে আসবে তোকে ওখানে?
-জানি না এখনো। মেইল করেছি প্রফেসরকে।
-ও, সাবধানে থাকিস। পৌছেই সিম কিনে ফোন করবি। টাকা পয়সা কত পাঠাতে হবে?
-এখন লাগবে না, লাগলে বলবো। বাসার কাউকে বলিস না আমি কোথায় আছি। বলিস আমি ভালো আছি।
-পাকনামি করতে হবে না। আসল জিনিসটায় তো আমাকে করতে দিয়ে গিয়েছিস।
-সাব্বিরের সাথে মারামারি করিস না প্লিজ!!
-ঢং এর তো পিএইচডিও শেষ করে ফেলছিস!! মাস্টার্স করে আর কি করবি। দেশে আসবি কবে?
– যেতেই তো পারিনি এখনোও। আগে যাই তারপর দেখি।
-তোর আসার ইচ্ছে নাই তাই না রে।
প্রতিউত্তরে আমার দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনে হয়তো উত্তর পেয়ে গিয়েছে।
ভালো থাকিস বলে ফোনটা কেটে দিলাম।
ফোনের গ্যালারি ঘেটে সাব্বিরের হাস্যজ্বল ছবি দেখতেই বুকের ভিতর অদ্ভুত এক ভালোবাসার টের পেলাম। এই ভালোবাসার কখনো শেষ নেই। এই ভালোবাসা শত কস্টের পরেও দিন শেষে আপন মানুষের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রশান্তির পরশ রেখে দিয়ে যায়। হয়তো ইগোর কারণে সাব্বিরের মুখোমুখি কোনো দিন হবো না। কিন্তু ওর প্রতি এই তীব্র ভালোবাসা অস্বীকার করার ক্ষমতা উপরওয়ালা আমাকে দেয়নি। তাই বাধ্য হয়েই পালিয়ে আসতে হলো।
এখনকার সময় রাত ১২.১৫ তে ছোট ভাইয়ার কল আসলো মেসেঞ্জারে। আমি তখন প্লেনের জন্য অপেক্ষা করছি সব চেকিং শেষ করে।
-কি বলবি তারাতাড়ি বল। আর পাচমিনিট পরে প্লেনে উঠবো।
– ফুপিরা আসছে সেইফলি।
-ও, কে নিয়ে আসতে গিয়েছিল?
-সাব্বির। আমাকে ফোন দিয়েছে ফুপি। বলেছে কালকে সকালে দেখা করতে।
প্রচন্ড রকম ভয় পেলাম কেনো জানি। এই দিনটি এতো তারাতাড়ি আশা করিনি, তাই হয়তো।
-কালকেই কিছু বলিস না। আর বলিস যে তোর সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি আমার।
আর ভুল করেও বলিস না আমি কোথায় আছি।
আচ্ছা বলবো না বলেই ও ফোনটা কেটে দিলো।
সিমটা খুলে ফোনটা অফ করে দিলাম।
রাত ঠিক ১২.৩০ মিনিটে মালয়শিয়ান এয়ারলাইনসের একটি প্লেন আমাকে নিয়ে সিডনির দিকে উড়াল দিলো।
সিডনির সময় সকাল ৮.৪৫ মিনিট আর বাংলাদেশি সময় ভোর ৪.৪৫ মিনিটে সেইফলি সিডনি পৌছালাম।
নেমেই সিম কিনে প্রফেসর কে ফোন করলাম।
প্রফেসর নিজে এসেছেন আমাকে রিসিভ করতে!!!!!
পরে জেনেছিলাম, আমার সুপারভাইজার ম্যাম আমাকে নিয়ে এমন ভাবে বলেছিলেন যে আমি আসছেন জেনে উনিই সরাসরি নিতে চলে এসেছেন!!!!
মোটা ফ্রেমের বৃদ্ধ প্রফেসর আমাকে সরাসরি উনার বাসায় নিয়ে গেলেন!!!!
এমনটা কখনো অন্য কারোর বেলায় হয়েছে আমি শুনিনি কখনোও। সাধারণত আগে থেকেই একোমোডেশন রেডি করে রাখতে হয় অথবা পরিচিত কেউ থাকলে ভিন্ন কথা।
প্রফেসরের বাসায় কেউ কখনো গিয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
প্রফেসরের স্ত্রীও একজন স্কুলের শিক্ষিকা।
ছেলে মেয়েরা কেউই দেশে নেই।
তাই আমি উনাদের বাসাতেই সাবলেট উঠে গেলাম।
শুরুর দিকে একটু অসুবিধে হলেও কয়েকদিনের মধ্যে ভালোই মানিয়ে নিলাম।
ছোট ভাইয়ার সাথে কথা হয় রেগুলার। ও গিয়েছিল সেদিন ফুপিদের বাসায়। কিন্তু ডিভোর্সের কথা বলতে পারেনি। শুধু এইটুকু বলেছে আমি আর ফিরবো না এইখানে। তাতেই ফুপির কান্নাকাটি দেখে আর কিছু বলার চেষ্টা করেনি।
বড় ভাইয়া আর মেজো ভাইয়া গড়াগড়ি দিয়ে কান্না করেছিলো শুনতেই আমারও কেমন জানি ভীষণ কান্না পেয়েছিলো।
অনেকবার আমার কথা জানতে চেয়েছিলো ওরা। উত্তরে ও একটা কথায় বলেছিলো যে আমি ভালো আছি।
কিন্তু আমিতো ভালো নেই। সবাইকে অনেক বেশি মিস করি। আর সাব্বিরের কথা মনে হলেই পাগল পাগল লাগে নিজেকে। এমন একটা দিনও নেই যে আমি ওর কথা ভেবে করে কান্না করিনি!!!
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো সাব্বির একবারও আমার কথা জানতে চায়নি!!!
সবকিছুর মধ্যে দিয়ে আমার রিসার্চ পড়াশোনা চলতে লাগলো। প্রফেসর মাঝে মাঝে একটা কথায় বলে,
মেহের ইউ শুড বি স্টে হেয়ার। প্লিজ, ডোন্ট গো টু ইউুর কানট্রি!!! আই উইল ট্রাই টু ম্যানেজ ইউুর সিটিজেনশিপ!!
উত্তরে আমি শুধু হাসি। আর উনি হতাশ হয়ে মাথা ঝাকান।
স্কলারশিপের টাকায় ভালোই বিলাসিতা করে চলে যায় আমার। তার সাথে একটা পার্ট টাইম অফিসিয়াল জবও এখানে এসে পরিচিত একজন বাঙালি ম্যানেজ করে দিয়েছেন। দেশের বাইরের আর ভিতরের বাঙালির মধ্যে অনেক পার্থক্য এখানে এসে আবিষ্কার করলাম।
আমার রিলেশনশিপের কথা জিগ্যেস করতেই সব ওদেরকে খুলে বললাম।
বৃদ্ধ প্রফেসর গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, মেহের আই থিংক, ইউ উইল মিট উইথ হিম ভেরি সুন।
আর ঠিক তখুনি ছোট ভাইয়া হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দিলো, সাব্বিরের ব্যাপারে আমার সাথে ইমারজেন্সি কথা আছে। ফোনটা যেনো পিক করি!!!!
।।
রাত দশটার দিকে ছোট ভাইয়াকে ফোন করলাম।
কিন্তু ও ফোনটা কেটে দিলো। এমনটা কখনো হয়নি এর আগে। খুব অসস্তি লাগছে।
প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট পর ও কল ব্যাক করলো।
ফোন ধরতেই গালি গালাজ শুরু করে দিলো ও।
-শয়তান মেয়ে একটা, কুত্তা, ফাজিল, নিজে আরাম করে অন্য দেশে যেয়ে বসে আছে, আর আমাকে সব যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে গেছে।
-কি করলাম আমি!!!
-সব নষ্টের মূলই তো তুই। তোরে কয়ছিলো কেডা প্রেম করতি একটারে আর বিয়ে করতি আরেকটারে??? ফকিন্নি কোনখানকার!! এখন দুইটাই মিলে আমারে জালাইতাছে!!!
দুইটা মিলে মানে!!! ফয়সাল বিরক্ত করবে জানি। কিন্তু সাব্বির!!! কেমনে কি!!
-সাব্বির কি বিরক্ত করলো??
-ওওওওও এখন ফয়সাল বাদ দিয়ে সাব্বির আগে?
ডিভোর্স দিয়ে এখন প্রেম দেখানো হচ্ছে!!
-ফাজলামো রাখ, কি হয়েছে সেটা বল।
-আর কি হবে?
গত একমাস ধরে ফুপি নিয়মিত আমাকে কল করে কান্নাকাটি করছে আর বলছে তোর খোজ যেনো একটা বার দেই!!!পায়ে ধরাটা বাকি রাখছে শুধু!!
-সাব্বির কি করছে!! কিছু জিগ্যেস করেনি!!
দিগুণ উৎসাহে আমি জিজ্ঞেস করলাম।
-ও কি করবে, কিছুই করে নাই। কিছু জিগ্যেসও করে নাই।
-কসম বল??!!!
আমার ওর কথা বিশ্বাস হচ্ছে না!!
-কার কসম দিবো বল।
সাথে সাথে চোখে পানি চলে আসলো। বরাবরের এইবারো আমি ওর ব্যাপারে ভুল।
আমার দীর্ঘশ্বাসের শব্দে ছোট ভাইয়া বললো
-তুই ভালোভাবেই মরেছিস রে মেহের!!
কিন্তু কথা হলো, তাইলে তোর এই পাঁচ বছরের প্রেম গেলো কই!!!!
যে উত্তরটা আমি ওকে বলতে পারিনি সেটা হলো, ফয়সালের প্রতি পেম তো পাঁচ বছর ধরে, কিন্তু সাব্বিরের প্রতি প্রেম তো তেরো বছর ধরে!!!
-আজে বাজে কথা বলিস না তো। এই ঘোড়ার ডিম বলতেই ফোন করেছিলি??
-হুম আপা, এখন তো আপনার কাছে এটা ঘোড়ার ডিমই মনে হবে, সব তো যাচ্ছে আমার উপর দিয়ে!!
-আর আমি যে ছয়টা মাস কাউকে কিছু না বলে সহ্য করেছি সেটা?
ভাইয়া চুপ হয়ে গেলো কিছুক্ষণের জন্য। আমি এইভাবে ওকে বলতে চাইনি।
-তুই কাউকে কিছু বলিসনি কেন বলতো? আগে বললে তো আরও আগেই সমাধান হয়ে যেতো।
-আগে হলে কি সমাধান করতি তোরা? ডিভোর্সই তো তাই না?
-দরকার পরলে তাই করতাম।
-এরপর আমি উঠতে বসতে ভাবিদের কথা শুনতাম তাই তো?
যে ভাইয়েরা এক বোন নিয়ে এতো কাহিনী করার পরেও আরেক বোনকে ওদের এক কথায় বিয়ে দিতে পারে, তারা ডিভোর্স হওয়ার পরে আমার সাথে কি করবে সেটা আন্দাজ করতে না পারার মতো, এতোটা গাধি আমি না।
বাপ মা থাকতো, তাহলে তাদের কাছে যেতাম। যাওয়ার জায়গাও তো নেই। তাহলে এতো আগে ডিভোর্স হওয়ার চেয়ে এখন হয়েছে সেটা ভালো না, বল?
ছোট ভাইয়া আর কিচ্ছু বলে নি। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ফোনটা কেটে দিলো।
এভাবে করেই প্রায় তিন মাস কেটে গেলো। কোনো ফ্রেন্ডসদের সাথেও কোনো যোগাযোগ রাখিনি। কারণ ফেসবুক আইডি ডিয়েক্টিভেট করা। আমাকে খুজে পাওয়ার কোনো অপশনই রাখিনি। সত্যিকার অর্থে আমাকে খোজার মতোই তো কেউ নেই!!! ভাবতেই মনে মনে হাসি পেলো।
মাঝখানে শুনেছিলাম সব কিছুর টেনশনে ফুপি অনেক অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো। খুব ইচ্ছে করছিলো একবার কথা বলি। কিন্তু মায়া বাড়িয়ে লাভ কি।
সিডনিতে এখন শরৎ কাল। কিন্তু বাংলাদেশের মতো আকাশে সাদা মেঘের ভেলা নেই। আছে রাস্তা ঘাটে কাপলদের উন্মুক্ত রোমান্স।
এটা টুরিস্ট সিজন তাই দেশি মানুষও একটু বেশিই দেখা যায়। ভালোই লাগে তখন।
দেশ ছেড়েছি প্রায় চারমাস হয়ে গেলো। দেশের মাস্টার্স আর করবো না ভাবছি। এক্সাম দেয়ার জন্যে তাহলে আবার দেশে যেতে হবে। যেটার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও আমার নেই।
ছোট ভাইয়ার জন্যে একটা জব ম্যানেজ করেছি এখানে। সেপ্টেম্বরের দিকে ওকে নিয়ে এখানে আসবো।
তখন বাইরে একটা দুই রুমের ফ্ল্যাট ভাড়া নিবো ভাই বোন মিলে।
এই কয়মাসে ছোট ভাইয়ার কাছে সবাই আমার খোজ জানতে চেয়েছে শুরুমাত্র সাব্বির ছাড়া। ব্যাপারটা একটু কেমন জানি লাগছে।
কথায় কথায় সেদিন ছোট ভাইয়া বলেছিলো, যেদিন রাতে বিয়ে ঠিক হয় সেদিন নাকি সাব্বির পাক্কা ত্রিশ মিনিট মেজ ভাইয়ার পায়ে ধরে বসে ছিলো বিয়েতে রাজি হওয়ার জন্যে!!!!! রাজি করিয়ে তবেই নাকি পা ছেড়েছিলো!!!!!
কি অদ্ভুত!!! আর সেই ছেলেই কিনা বিয়ের চারমাসের মাথায় ডিভোর্স দিলো!!
সিডনিতে এখন জুন মাস। শরৎ শেষ হয়ে শীত আসি আসি করছে। ভোরের দিকে ভালোই ঠান্ডা অনুভূত হয়। আমার এখন সেমিস্টার ব্রেক চলছে। প্রফেসর অনেক বলেছিলো দেশ থেকে ঘুরে আসতে। কিন্তু আমারই যেতে ইচ্ছে হয়নি।
উনি বলেন, দেশ থেকে ঘুরে আসলে নাকি আমি প্রাণ
খুলে হাসতে পারবো। সত্যিই তো, এখানে আসার পর একবারের জন্যেও উচ্চস্বরে হাসিনি!! তবে মাঝরাতে সপ্নে সাব্বিরকে দেখে নিঃশব্দে কাঁদি। এখানকার চাঁদটাকে অনেক বড় মনে হয় আমার। আকাশ ভেঙে যখন জোছনা পরে বুকের ভেতর মরুভূমির মতো অনুভূত হয়।
আগের মতো মরার ঘুমও ঘুমাই না। এখন হোয়াটসঅ্যাপের ম্যাসেজের টুং শব্দেও ঘুম ভেঙে যায়।
সময় আসলেই সব কিছু বদলে দেয়। শুধু বুকের মধ্যে জমে থাকা ভালোবাসা গুলো ছাড়া।
জুন মাসের খুব সুন্দর একটা ভোরে ঘুম ভাঙলো আমার। নামাজ পড়ে, একমগ কফি নিয়ে জানালার পাশে রাখা রিভলবিং চেয়ারে দিয়ে জানালায় পা ঠেকিয়ে হেলান বসে পড়লাম। সিডনি শহর হলেও এই দিকটাতে প্রচুর খালি জায়গা আর গাছপালা আছে। গ্রিনহাউজ আর একুয়াপোনিকস নিয়ে কর্মরত আমার প্রফেসর ভালো একটা খোলামেলা জায়গায়তেই বাড়ি কিনেছেন। এমন সুন্দর একটা বাড়ি সব মানুষের সপ্ন থাকে। সেদিক থেকে আমি অনেক লাকি।
কিছু নেই তার মধ্যেও অনেক কিছু পেয়েছি যা অন্য কেউ পায়নি।
জানালা দিয়ে ভোরের বাতাস আসছে। কফি খেতে খেতেই হালকা ঘুম ঘুম পাচ্ছে। কোনোরকম কফি শেষ করে চেয়ারে ঐ ভাবেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুমের মধ্যেই মনে হলো সাব্বির এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমার কপাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে একটা আলতো করে চুমু খেলো। তারপর আমাকে পাজাকোলা করে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিলো।
ওর স্পর্শগুলো এতোটা রিয়েল মনে হচ্ছে!!!!
চোখ মেলে তাকাতে ইচ্ছে করছে না।
কারণ আমি জানি এটা আমার ঘোর। ঘুম আর জেগে থাকার মাঝামাঝি অবস্থা।
তখন আমি বাস্তব আর কল্পনা আলাদা করতে পারি না। মনে হয় যা দেখছি সব সত্যি। কিন্তু ঘুম ভাঙার পরে দেখি সবই আমার সপ্ন ছিলো।
তাই চোখ বন্ধ করেই আমি সাব্বিরের স্পর্শটা ফিল করার চেষ্টা করছি। বাস্তবে তো কখনোই পাইনি।
হোক না এখন কল্পনায়, ক্ষতি কি!!!
কিন্তু হঠাৎ করেই ওর হাত আমার শার্টের তলা ভেদ করে উপরের দিকে উঠতে শুরু করলো!!!
পেটের মধ্যে ভীষণ শুড়শুড়ি লাগছে!!!
নাহ আর আজকে সাব্বির বেশি দুষ্টমি করছে। আর সপ্ন দেখা সম্ভব না।
চোখ মেলে তাকাতেই দেখি সাব্বির হাস্যজ্জ্বল ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, শেষ তো ঘুম…যাও এবার!! কোথাও শান্তি দিবা না আমাকে!! না বাস্তবে না সপ্নে। যাও এবার।
ওর হাসি উধাও হয়ে গেলো!! রাগত স্বরে বললো, আমার প্রতি এতো প্রেম আগে কই ছিলো তর????
আমি ধরফরিয়ে বিছানায় উঠে বসলাম।
চলবে