#তুমি_যে_আছো_অন্তরে_মিশে💔
#Writter_Ishanur_Tasmia[Mira]🌸
# Part : {06}
পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছে নিরা,,আর এ পাত্রপক্ষ আর কেউ না তূর্যর পরিবার,,,,
ঐদিন মিসেস মুজমাল তূর্যকে তাদের বাসায় আসতে বলেন,,, তূর্য যখন আসে তখন তার সাথে প্রথমে কিছুটা কুশল বিনিময়ে করেন,,,তারপর সরাসরি তূর্যর সাথে নিরার বিয়ের প্রস্তাব দেন মিসেস মুজমাল,,,,
এতে তূর্য এক কথায় রাজি হয়ে যায়,,,, মিসেস মুজমাল খুব ভালো করেই বুঝতেন যে তূর্যের মনে নিরার জন্য কিছু তো আছে,,,যা তূর্যের এত সহজে নিরাকে বিয়ে করতে রাজি হওয়ায় প্রমান হয়ে যায়,,,,
মিসেস মুজমালের তো খুশির শেষ নেই,,, এখন তিনি নিরাকে সারাজীবনের জন্য বিদায় করে দিতে পারবেন,,,তাই তিনি আর দেরি করতে চান না,,,, তূর্যকে কালই তার পরিবার নিয়ে আস্তে বলেন,,,তাতে তূর্যও রাজি হয়ে যায়,,,
এখন বাদ সারলো নিরাকে নিয়ে,,,সে কি এ বিয়েতে রাজি হবে,,, হয়তো হবে না,,,তাই-ই হলো,,নিরা এ বিয়ে করবে না,,,তা সে খুব স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছে,,,আর এতে মিসেস মুজমাল রেগে যান,, নিরার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তিনি বলেন,,,,
” দেখ নিরা,,, তুই যদি এ বিয়ে না করিস তাহলে আমি কিন্তু তোকে আর তোর মাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দেব,,,তারপর তোরা কোথায় যাবি ভেবে দেখেছিস কখনও,,,তারচেয়ে ভালো আমার কথামত এ বিয়ে করতে রাজি হয়ে যা,,, নাহলে তোর জন্য তোর মাকে ভুগতে হবে”
তারপর আরকি,, নিরার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও এ বিয়েতে রাজি হয়ে যায়,,এ বিয়ের ব্যপারে নিরা, তার মা,মিসেস মুজমাল,,তূর্যের মা-বাবা আর সে জানে,,,,আর কেউ জানে না,,,নিরব আর মিস্টার মুজমালও[ নিরবের বাবা ] জানে না,,, নিরবকে ইচ্ছা করে জানানো হয় নি,,, আর মিস্টার মুজমাল অফিসের কাজে বিদেশে যাওয়ায় তার সাথে অত যোগাযোগ হয় নি,,,,
সকাল থেকে নিরবকে দেখা যাচ্ছে না,,, মিসেস মুজমাল চালাকি করে নিরবকে একটা কাজে পাঠিয়ে দিয়েছেন,,,, তাতে নিরব রাতের আগে বাসায় ফিরবে না,,, তাই মিসেস মুজমাল এখন নিশ্চিন্তে আচ্ছেন,,,তূর্য আর তার পরিবার কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে নিরাকে দেখতে,,,,
,
,
,
,,
,
প্রায় আধা ঘন্টা পর,,,
তূর্য আর তার পরিবার এসে পরে নিরাকে দেখতে,,,আর নিরাও সব মেনে নেয়,,,কারন সে জানে নিরব হয়তো তাকে কখনই মেনে নিবে না,,,তাছাড়া মিসেস মুজমালের কথা মতো না চললে তাকে আর তার মাকে যে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবেন তিনি,,,তাই মিসেস মুজমালের কথা মতো নিরা পাত্রপক্ষের সামনে যায়,,,
নিরাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে,,,যা দেখে রিতিমতো তূর্যের মুখ ” হা ” হয়ে গেছে,,,আর তূর্যের পরিবার তো আগে থেকেই নিরাকে পছন্দ করতেন,,,,এখন নিরাকে এভাবে দেখে তাদের চেহারা যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে যায়,,,,তূর্যের মা মিসেস মুজমালকে উদ্দেশ্য করে বলেন,,,,,
তূর্যের মাঃ ভাবি মেয়ে তো আমাদের আগে থেকেই পছন্দ,,,আমরা এ বিয়েতে রাজি আছি,,,,
তূর্যের বাবাঃ হুম,,নিরাকে আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে,,,বিয়েটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করে ফেলতে চাই,,,,
মিসেস মুজমালঃ অবশ্যই অবশ্যই,,, ২-৩ দিনের মধ্যেই তাহলে বিয়েটা করে ফেলব,,,,
তূর্যঃ দাড়ান আন্টি,,, নিরাকেও তো জিজ্ঞেস করুন,,, ও আমাকে বিয়ে করবে নাকি,,,তারপর নাহয় বিয়ের তারিখ ঠিক করবেন,,,,
মিসেস মুজমালঃ ও আর কি বলবে,,আমরা যেখানে রাজি,, ও-ও সেখানে রাজি,,,
তূর্যঃ তাও আন্টি,,,আমি চাই নিরার মতামতটা জানতে,,,যদি কিছু মনে না করেন,,,তাহলে আমি কি নিরার সাথে একান্তভাবে কিছু কথা বলতে পারি,,,,
মিসেস মুজমাল প্রথমে আপত্তি করলেও,,, তূর্য আর তার মা বাবার জোড়াজোড়িতে রাজি হয়ে যান,,,আর নিরাকে বলেন তূর্যকে ছাদে নিয়ে যেতে,,,ইশারায় তাকে এটাও বলেন,, যেন সে তূর্যকে বলে,,যে সে এ বিয়েতে রাজি,,,নিরাও পুতুলের মত মিসেস মুজমাল যা যা করতে বলেন তাই করে,,,,
,
,
,
২ জনে ছাদের এক কোনে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে,,, কারো মুখে কোনো কথা নেই,,,নিরবতা ভেংগে তূর্য বলে,,,,
তূর্যঃ নিরা,,,,
নিরাঃ জ্বী,,,,
তূর্যঃ তুমি কি এ বিয়েতে রাজি আছো,,,
নিরাঃ সবাই তো বলল,,, এ বিয়েতে রাজি,,,
তূর্যঃ আমি তোমার কথা বলেছি,,,,
নিরাঃ…….
তূর্যঃ তুমি এ বিয়েতে রাজি আছো তো,,,??
নিরাঃ হুম,,,[ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ]
নিরা উত্তর শুনে নিরব একটা মুচকি হাসি দেয়,,,তারপর নিরাকে বলে,,,
তূর্যঃ আই প্রমিস নিরা,, তোমাকে কখনও কষ্ট দিব না,,,তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো,,,আর যদি তোমাকে কেউ জোড় করে এ বিয়ে করতে বলে,, তাহলে তুমি আমাকে বলতে পারো,,,আমি এ বিয়ে করব না,,
নিরাঃ…….
তূর্যঃ নিরা,,,তুমি আজকে এত চুপচাপ কেন,,,,কিছু কি হয়েছে,,,,
নিরাঃ না এমনি,,,মাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে তো তাই,,,,
তূর্যঃ ও,,,,আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়,,,,?
নিরাঃ কি,,??
তূর্যঃ বিয়ের পর তোমার আমাকেও আমাদের সাথে নিয়ে যাবো,,,কি বলো,,,😁😁
তূর্যের কথা শুনে নিরা একটা মুচকি হাসি দেয়,,,তারপর ২ জনেই চুপ হয়ে যায়,,,কিছুক্ষন পর হঠাৎ তূর্য বলে উঠে,,,
তূর্যঃ আমাদের বিয়েটা হবে তো নিরা,,,,
নিরাঃ হঠাৎ এ-ই প্রশ্ন,,,??
তূর্যঃ বলো না,,,,
নিরাঃ জীবন, বিয়ে, মৃত্যু সব আল্লাহর হাতে,,তিনি চাইলে হবে,,,,
তূর্যঃ জানি,,, কিন্তু আমি তোমার কাছ থেকে জানতে চাই,,,সারাজীবন আমার সাথে থাকবে তো,,,,
নিরাঃ হয়তো,,,,
তূর্যঃ হয়তো না,,, বলো হ্যাঁ,,,
নিরাঃ হুম থাকব,,,[ মুচকি হেসে ]
নিরার হাসি দেখে তূর্যও হেসে দেয়,,,তারপর কিছুক্ষন ছাদে থেকে নিচে চলে যায়,,,আর সবাইকে জানায় যে তারা এ বিয়েতে রাজি আছে,,,এতে সবাই খুশে হয়ে যান,,সবচেয়ে বেশি মিসেস মুজমাল,,,তিনি সবাইকে মিষ্টি মুখ করান,,,,
তারপর সব শেষে তূর্যরা চলে যায় নিজের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে,,,, তূর্যরা যেতেই নিরা নিজের রুমে দৌড়ে চলে যায়,,,তারপর বিছানায় উথ হয়ে শুয়ে কান্না করা শুরু করে,,,,হঠাৎ নিরা তার মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পায়,,,এ স্পর্শ নিরার খুব চেনা,,,এ যে তার মা,,,
নিরাঃ মা,, আমাদের এত কষ্ট কেন,,,,??আল্লাহ এত কষ্ট কেন দিয়েছেন আমাদের,,,,??[ কান্না জড়ানো কন্ঠে ]
মাঃ এভাবে কেন বলছিস মা,,,??কিছু কি হয়েছে,,,
নিরাঃ জানি না,, কেন যানি খুব খারাপ লাগছে,,,,
মাঃ তুই যদি এ বিয়ে করতে না চাস,,তাহলে করিস না,,,
নিরাঃ না মা,, আমি এ বিয়েতে রাজি আছি,,,
মাঃ সত্যি তো,,,
নিরাঃ হুম,,,
মাঃ তোর যা ইচ্ছা,,,এখন আয়,,আমার কোলে শুয়ে থাক,,, ভালো লাগবে,,,,
কথাটা শুনা মাত্রই নিরা তার মাকে জাপ্টে ধরে কান্না করা শুরু করে দেয়,,,,তা দেখে নিরার মা শুধুই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে,,,মেয়ের কষ্ট যে তার সহ্য হচ্ছে না,,,,
.
.
.
.
.
.
.
.
রাত প্রায় ১ টা,,,
নিরব মাত্রই বাসায় ডুকেছে,,,,রুমে ডুকেই সে প্রথমে ফ্রেশ হতে চলে যায়,,,
ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে নিরা টেবিলে খাবার বাড়ছে,,,,নিরব সে দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজের কাজ করা শুরু করে,,,
নিরা খাবার বেড়ে দিয়ে চলে যেতে নিবে,,, তখনই নিরব বলে উঠে,,,,
নিরবঃ আজকে কি কোনো অনুষ্টান ছিল নাকি বাসায়,,,বাসায় এত সাজগোজ কেন,,,??
নিরাঃ হুম,,,,,
নিরবঃ কিসের অনুষ্টান,,,,??
নিরাঃ পাত্রপক্ষ আমাকে দেখতে এসেছিল,,,
কথাটা বলে নিরা চুপ হয়ে যায়,,,,নিরব নিরার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,,,,
নিরবঃ “ও”
নিরার কথার প্রতি উত্তরে নিরব এমন উত্তর দিবে তা নিরা ভাবে নি,,,নিরবের ” ও” বলাটা যেন নিরার কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেয়,,,নিরা আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে সেখান থেকে চলে যায়,,,
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
#চলবে🍁