“তুমি_যে_আছো_অন্তরে_মিশে💔 Part : {13} [ Last part ]

#তুমি_যে_আছো_অন্তরে_মিশে💔
#Writter_Ishanur_Tasmia[Mira]
# Part : {13} [ Last part ]

নিরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে নিরব,,,সব কিছু কেমন ছাপ্সা মনে হচ্ছে তার,,,জীবনেও চিন্তা করতে পারে নি এমন হবে,,,এমনটা কি করার কোনো দরকার ছিল,,,??যদি সব সত্যি বলত তাদের,,,তাহলে তো তারা সব সম্পত্তি তাদের নামে লিখে দিতো,, তাই না,,,??

খুব বেশিই কষ্ট হচ্ছে নিরবের,,এসব মেনে নিতে পারছে না সে,,,,নিরবের থেকেও বেশি কষ্ট হচ্ছে নিরার,,,,যাকে সে মা -বাবা মনে করত,,আসলে তারা তার কেউ না,,,সে তো এতিম,,,,!!

হঠাৎ নিরব বলে উঠে,,,

নিরবঃ আচ্ছা নিরা,,এমনটা না হলেও তো পারতো,,,আমার না কেমন যানি লাগছে,,,আমি মার ছেলে না,, ও-ই জানোয়ারের ছেলে,,,,ইচ্ছা তো করছে নিজেকে শেষ করে দিতে,,,[ চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গালে গড়িয়ে পড়ে ]

নিরাঃ এমন বলতে নেই নিরব,,,,আপনারই যদি এমন মনে হয়,,, তাহলে আমার কি হবে,,,আপনি তো তাও,,,জানেন আপনার মা-বাবা কে,, কিন্তু আমি,, আমি তো জানি না আমার মা-বাবা কে,,, যাকে মা ভেবে ছিলাম সে পদে পদে আমাকে ঘৃণা করে,,,তাহলে আমার কি করা উচিত,,,তাছাড়া মা,,, মার কি করা উচিত,,তিনি তো তার স্বামীর থেকে প্রতারণার শিকার হয়েছেন,,,,তার কেমন লাগছে বলতে পারেন,,,

নিরবঃ……..

নিরাঃ এভাবে ভেঙ্গে পরলে চলবে না নিরব,,,,জানেন মাকে কতো কষ্ট করে শান্ত করানো হয়েছে,,,জোড়ে জোড়ে চিল্লাচ্ছিলেন তিনি,,এভাবে কাঁদতে আমি তাকে কখনও দেখি নি,,শেষ পর্যন্ত তো তাকে ঘুমের ঔষধ দিতে হয় আমার,,,,

নিরবঃ আমি ও-ই জানোয়ারদের ছাড়ব না,,,, আমার সব কষ্টের মূলে তারা আছে,,,আমার বাবা হওয়ার সুখও তারা নিয়ে নিয়েছে,,,,আমি তাদের কঠিন শাস্তি দিব,,,,

নিরব কথা বলতে বলতে বেশ উত্তেজিত হয়ে যায়,,, নিরা নিরবকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,,,মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,,,

নিরাঃ একটু শান্ত হন,, প্লিজ,,,ওদের শাস্তি আপনার দিতে হবে না,,,দেখবেন,,ইনশাল্লাহ,,, আল্লাহ-ই তাদের শাস্তি দিবেন,,,,

নিরবঃ আমার কিছু ভালো লাগছে না নিরা,,, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে,,,,তুই না থাকলে আমি যে কিভাবে থাকতাম,,,এত কিছু সামাল দিতে পারতাম না আমি,,,,

নিরাঃ আমার কারনেই তো এতকিছু হয়েছে,,,না আমি থাকতাম,,না এ-ই সম্পত্তির ছামেলা,,,,

নিরবঃ এখানে তোর কোনো দোষ নেই,,,সব দোষ ও-ই জানোয়ারদের,,,আমরা হওয়ার আগ থেকেই ওরা ওদের জানোয়ারগিরি করত,,,,[ রাগে ফুসতে ফুসতে ]

নিরাঃ নিরব,,, শান্ত হন,,,,একটু ঘুমানোর চেষ্টা করুন,,, ভালো লাগবে,,,

নিরা বলতে না বলতেই নিরব,, নিরার ঘারে মুখ ডুবিয়ে দেয়,,,তারপর নিরার ঘারে একটা চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে পরে,,,,,,,

.
.
.
.
.
.
.
.
৬ বছর পর,,,,

নিরবঃ নিরা,,,আমার ওয়ালেট টা কোথায়,,,,[ চিল্লিয়ে ]

নিরাঃ ড্রেসিং টেবিলে আছে,, দেখুন,,,,

নিরবঃ আমার টাই টা কোথায়,,,,??

নিরাঃ আরে বিছানার উপর আছে তো,,,,

নিরবঃ পাচ্ছি না তো,,,,

নিরাঃ ওখানেই তো আছে,,, একটু ভালো করে খুঁজুন না,,,

নিরবঃ পাইছি,,,এখন আয়,, আমাকে টাই পড়িয়ে দিবি,,,

নিরাঃ নিরব,,, আপনি একটু নিজে পড়ুন না,,,আমি ব্যস্ত আছি,,,,

নিরবঃ তুই আসবি,, নাকি আমি কোলে করে আনবো,,,,

নিরাঃ উফফ,,নিরব,,, জ্বালাবেন না তো,,,,

নিরবঃ নিরা,,,তুই যদি না আসিস তাহলে,,,

নিরাঃ তাহলে কি,,,??

নিরবঃ তাহলে আমি নিরা,, নিরা বলে ডাকতেই থাকবো,,,,

নিরা কিছু জবাবা দেয় না,,, তাই নিরব “নিরা ” “নিরা ” বলে চিল্লিনো শুরু করে,,, নিরবের এমন করায়,, নিরব বিরক্ত হয়ে রুমে যায়,,,রুমে ডুকতেই দেখে নিরব হাতে ফোন নিয়ে তা টিপছে,,, আর নিরা নিরা বলে চিল্লাচ্ছে,,,,নিরা একটু কাঁশি দিতেই নিরব তার হাত থেকে ফোনটা বিছানায় ফেলে দেয়,,তারপর শাহরুখ খানের মতো পস দিয়ে বলে,,,,

নিরবঃ জালদি আও মেরি জান,,,মে অফিস কে লিয়ে দেড় হো রাহাহু,,,,,

নিরবের কথায় একটা ভেঙচি দিয়ে নিরবের হাত থেকে টাই টা নিয়ে পড়ানো শুরু করে,,আর বলে,,,

নিরাঃ ঢং দেখলে বাঁচি না,,এত ঢং পান কোথা থেকে,,,

নিরব আয়েশ করে নিরার কোমড় জোড়িয়ে নিরাকে তার কাছে এনে বলে,,,

নিরবঃ তুই তো আমার এক মাত্র বউ,,তোর সামনে ঢং না করলে কার সামনে করব,,,??আমার কি ১০-১২টা বউ আছে নাকি,,, যে তাদের সামনে করব,,,তুই-ই তো আমার এক মাত্র বউ,,,

নিরাঃ হুম,,, জানি,,,আর আমি ছাড়া আপনার কেউ বউও হবে না,,আপনি যে আনরোমেন্টিক,,,,

নিরবঃ তাই নাকি,,,,??তাহলে তো আমার রোমান্টিকগিরি দেখাতে হবে,,, [ বাঁকা হেসে ]

বলেই নিরব নিরার ঠোঁটের দিকে এগুতে তাকে,,, তখনই কেউ একজন বলে উঠে,,,,

রোদ্রিঃ বাবাই,,,দেখো না রোদ্র আমাকে মেরেছে,,,,

রোদ্রঃ দেখো না মাম্মাম,,,রোদ্রি আমাকে মেরেছে,,,,

ওদের ২ জনকে দেখতেই নিরব নিরাকে ছেড়ে দেয়,,, তারপর রোদ্র – রোদ্রির কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে,,, আর বলে,,,

নিরবঃ রোদ্র – রোদ্রি,,,আরেকটু পরে আসতি,,,,আমি আর তোর মাম্মাম একটু রোমান্টিক হচ্ছিলাম,,তোরা এসে ডিস্টাব করে দিলি আমাদের,,,

নিরবের কথা শুনে ওরা ২ জনেই হেসে দেয়,,,,নিরা ভেবেছিল নিরব রোদ্র-রোদ্রিকে মারামারি করার জন্য বকা দিবে,,, কিন্তু এ কি বলে,,,ছোট ছোট বাচ্ছা দের কি শিখাচ্ছে টা কি নিরব,,,,??

নিরাঃ এ-ই আপনি কি বলছেন ওদের,,,ওরা কিছু বুঝে এগুলো,,,,

রোদ্রঃ আমি সব বুঝি মাম্মাম,,,,

রোদ্রিঃ আমিও মাম্মাম,,,,

নিরাঃ এ-ই,, একদম পাকনামি করবেন না আপনারা,,,যান জুতো পড়ুন,,,স্কুলের জন্য দেড়ি হয়ে যাচ্ছে,,,,

কথাটা শুনা মাত্রই রোদ্র আর রোদ্রি একটা দৌড় দিয়ে ড্রইংরুমে চলে যায়,,,আর এদিকে নিরব নিরার হাত ধরে এক টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে,, তারপর নাকে নাক ঘষতে ঘষতে বলে,,,

নিরবঃ কি বউ আমার,, সবাইকে সমানে আপনি বলে ডাকে,, এমনকি নিজের বেবিদের কেও ,,, কত চেষ্টা করলাম তোর মুখ থেকে তুমি ডাকটা বের করার,,,কিন্তু তুই তো তুই -ই,, আপনি তেই আটকে আছিস,,,

নিরা নিরবকে,, একটা ধাক্কা দিয়ে বলে,,,

নিরাঃ আমি যেমন,,আমি তেমনই থাকবো,,,,এখন যান,,, আপনার অফিসের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে,,, বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে তারপর নিজের অফিসে যান,, বুঝচ্ছেন,,,

নিরবঃ জো হুকুম মেরি জান,,,,[ চোখ টিপ মেরে ]

বলেই নিরব নিরার গালে টুপ করে চুমু দিয়ে দেয়,,, তারপর রোদ্র আর রোদ্রিকে নিয়ে চলে যায়,,,,

নিরব চলে যেতেই নিরা মিসেস মুজমালের রুমে যায়,,,সেখানে যেতেই দেখে তিনি বিছানায় বসে বসে তযবি পড়ছেন,,,নিরা তার পাশে বসতেই তিনি বলে উঠেন,,,,

মিসেস মুজমালঃ নিরব চলে গেছে,,,,

নিরাঃ জ্বী,,,,

মিসেস মুজমালঃআচ্ছা,, আমি তোর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি,,,, তাই না,,পারলে আমাকে মাফ করে দিস,,,,

নিরাঃ এভাবে কেন বলছেন মা,,,,

মিসেস মুজমালঃ তো আর কি বলব বল,,,আসল হিরাকে ফেলে আমি রুপার কাছে পরে ছিলাম,,,,আচ্ছা নিরা,,আমার পাপের জন্য আল্লাহ কি আমাকে মাফ করবে,,,??

নিরাঃ অবশ্যই করবে,,,এখন এসব বাদ দিন,,,বলুন দুপুরে কি খাবেন,,,??

এভাবে নানা রকম কথা বলে তারা,,,তারপর নিরা নিজের রুমে চলে যায়,,,,বারান্দায় দাড়াতেই দেখে নিরব নিচে থেকে নিরার দিকে তাকিয়ে আছে,,,আর ফ্লাইং কিস দিচ্ছে,,, এর বিনিময়ে নিরা একটা মিষ্টি হাসি দেয়,,,, তাতে নিরব তার বুকের বা পাশে হাত দিয়ে মরে যাওয়ার ভাব করে,,,তারপর নিরাকে আরেকটা ফ্লাইং কিস দিয়ে অফিসের জন্য চলে যায়,,,,

এ আর নতুন না,,,, নিরব প্রতিদিন রোদ্র আর রোদ্রিকে স্কুলে দিয়ে বাসার নিচে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর নিরার বারান্দায় আসার অপেক্ষা করে,,যখন নিরা বারান্দায় আসে,, তখন তার সাথে এমন করে অফিসে চলে যায়,,,এতে নিরা অনেক রাগারাগি করে নিরবের সাথে,,,কিন্তু মনের এক কোণে অনেক খুশি হয় নিরবের এমন করাতে,,,,

নিরবের আজিজ আর রুমিকে শাস্তি দিতে হয় নি,,,আল্লাহ-ই দিয়েছেন তাদের,,,,জেলে আজিজ সাহেবের কিভাবে যেন পায়ে একটা পেরাক ঢুকে যায়,,,,ফলে তার পায়ে মারাত্তক ইনফেক্সন হয়,,আর তার পা কেটে ফেলতে হয়,,অন্যদিকে রুমির গায়ের চামড়া পচে গেছে,,,খুব দুর্গন্ধ বের হয় তার গা থেকে,, কেউ তার কাছে যেতে চায় না,,, সারাটা দিন তিনি একা একা থাকেন,,,সঙ্গ দেওয়ার কেউ নেই,,,,,আর তূর্য সেও ভালো আছে,,রিয়ার বাবাকেও চিকিৎসা করানো হয়েছে,,যাতে তিনি একদম সুস্থ,,,,

আর নিরা -নিরব খুব সুখে আছে,,,আনন্দে কাটে তাদের প্রতিটা দিন,,,রোদ্র আর রোদ্রি নিরব আর নিরার সন্তান,,,,

নিরবের বাবা না হওয়াটা জন্মসুত্রে না,,, তাই ডাক্তার বলেছিলো যদি ট্রিটমেন্ট করা হয় তাহলে নিরবের বাবা হওয়ার সম্ভাবনা ৫০%,, আবার না হওয়ার সম্ভাবনা ৫০%,,, তাও তাদের মনে তো একটু আশার আলো যেগেছিলো,,,তাই যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে গেছে তারা,,,,আর তার শেষে ফল সরুপ নিরা আর নিরব পেয়েছে রোদ্র আর রোদ্রি কে,,,, খুব সুখে আছে তারা,,,খুব গর্বক করে বলে নিরা,, সে ভালো আছে,,,
সম্পর্কের শুরুটা খারাপ হলেও শেষ টা ভালো,,,,,

….…………🌸সমাপ্ত🌸…………….

অবশেষে গল্পটা শেষ করলাম,,কেমন হয়েছে অবশ্যই অবশ্যই জানাবেন,,,

আর সবাই ভালো থাকবেন,, সুস্থ থাকবেন,,,,

খোদা হাফেজ,,,,,😊😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here