শ্যামারঙা,পর্ব:৩২+৩৩+৩৪

#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ৩২

যদিও গলা ব্যথার দরুন আমারও কথা বলা হয়ে ওঠে নি।
তারপর ও তো আমি শুনতে পাই।

নাকি আমি বোবা আর বয়রা ( কানে কালা)

বাড়িতে এসেছি আজ দুই দিন হলো।
এসে থেকেই সবার বকা খেতে খেতে আমি শেষ।
যে যখন পারছে,যেভাবে পারছে আমাকে কথা শোনাচ্ছে।
যখন তখন বকছে।
ভালো লাগছে না আর।
আচ্ছা আমি যে অসুস্থ এতে কি আমার ভালো লাগছে?
সারাদিনে তিনবার খাবার আগে- পরে ওষুধ খেতে হচ্ছে।
ঘর থেকে বেরোনো বন্ধ।
কেউ কথা বলছে না আমার সাথে এতে কি আমার কষ্ট হচ্ছে না?
নাকি তারা আমাকে পাথর মনে করছে??

সারাদিন রাত রুম বন্দী হয়ে থাকতে ভালো লাগছিলো না।
তাই কাউকে না জানিয়ে লুকিয়ে বিকেলে ছাদে চলে এলাম।এতদিন পর মুক্ত আকাশের নিচে প্রান ভরে নিশ্বাস নিতে পেরে নিজেকে খুব হালকা লাগছে সাথে খুব ফ্রেশও লাগছে।

ছাদে এসে দোলনায় বসে কানে হেডফোন দিয়ে আপন মনে গান শুনছিলাম।
এসবেই মধ্যে স্নিগ্ধ ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শে কখন যে চোখ টা লেগে গিয়েছিলো বুঝতেই পারিনি।

ঘুম ভেঙে গেলে চারিদিকে অন্ধকার দেখে কোথায় আছি ভাবতে লাগলাম।
তখনই বিকেলে ছাদে আসার কথা মনে পরে গেল।
তাই আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি নিচে চলে এলাম।
মেইন দরজা খোলা থাকায় ঘরে ঢুকে পড়লাম
বসার ঘরে এসেই আমি অবাক।

বসার ঘরে নবুদের বাড়ির সবাই আছে আর তাদের সাথে আমার পরিবারের সবাই কথা কথা বলছে।
কিন্তু নীলাদ্রি দা নেই।
তাকে না দেখে মনটা খারাপ হলো সাথে রাগও হলো।

আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বড়মা বললেন..

— কি রে ওখানে দাড়িয়ে আছিস কেন…

— কই না…..
এমনি….

— হয়েছে,
আয় আমার পাশে এসে বস…

আমি মায়ের দিকে তাকালাম। কি হচ্ছে সেটা বোঝার জন্য। কিন্তু আমার মা আমাকে ইশারা দিলেন তাদের “প্রনাম” করার জন্য।
তাই আমি সেখানে উপস্থিত সবার পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করলাম।
শুধু মাত্র নবু আর আমার ছোট ভাইকে ছাড়া।
যদিও তারা এখানে নেই।

প্রনামের পর দাদু ভাই আমাকে তার পাশে বসালেন। তারপর মাথায় হাত দিয়ে আদর করলেন।

তাদের ভাব- গতি কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমাকে দেখে তারা তাদের আলোচনা থামিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে তারা চোখে চোখে ইশারায় তাদের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন একে অপরের সাথে…..

এদের মধ্যে থাকতে কেন জানি থাকতে ভালো লাগছিলো না।
তাই রুমে চলে এলাম।
রুমে এসে মাথায় খালি ওদের এবাড়িতে আসার কথা ঘুরপাক খাচ্ছিলো।
কিন্তু তারপর মন কে বোঝালাম ওরা আমাদের পরিচিত, আমাদের আত্মীয়।
তাই আসতেই পারে।

রাতে খাবার সময়ও কেউ আমার সাথে তেমন কথা বলেনি।

পরদিন সকাল থেকেই দেখছি সবাই খুব ব্যস্ত কিন্তু কি বা কোন কাজে ব্যস্ত এটা আমি জানি না।আর কাউকে যে জিজ্ঞেস করবো সেই সাহসটাও নেই।

বিকেলে শুয়ে আছি।হালকা ঘুম ঘুম পাচ্ছিলো।
আমার রুমের দরোজায় কে যেন নক করলো।
দরজা খোলাই ছিলো তাই দরজার দিকে তাকাতেই দেখি নবু রুমে ঢুকছে।
ওকে দেখে খুব অভিমান হলো।
এতদিনে আমার একটা খোঁজ নিতে পারেনি কিন্তু আজ কেন সে এসেছে আমার কাছে?

নবু কোন ভনিতা না করেই আমার পাশে এসে বসলো।
আর আমাকে শোয়া থেকে ওঠানোর জন্য চেষ্টা করছে।
সব দিক দিয়ে সে যখন ব্যর্থ হলো।
তখন সে মন খারাপ করে বললো…

— এই মেঘা রাগ করছিস কেন?

— তাই আমার কে যে আমি তোর ওপর রাগ করবো।

— এমন করে বলিস না।
আচ্ছা চল তো আজ আমি আর তুই একটু বেরিয়ে আসি।

— না আমি যাবো না।

— চল না রে,
তুই জানিস না তোকে ছাড়া আমার চলে না।
আমি কোথাও তোকে ছাড়া যাই না।
আর কাকিমা কে আমি বলেছি তিনি যেতে বলেছেন।

নবুর জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে যেতে রাজি হলাম।

— কোথায় যাবি রে..

— শোন আমাদের এলাকায় নতুন একটা পার্লার হয়েছে।সেখান থেকে সেজেগুজে তারপর মন্দিরে যাবো।

— মন্দিরে কেন?

— কেন আবার…
অর্প্ন আসবে আজ দেখা করতে। তাই বললাম যে এবার আর অন্য কোথাও যাবো না।
মন্দিরে গিয়ে ঈশ্বরের আশির্বাদ নেব….

— ওও আচ্ছা…

পার্লারে এসেছি একটু আগে।
বাসা থেকে বের হয়ে আসার সময় নবু আমার আলমারি থেকে সেদিন নীলাদ্রি দা যে প্যাকেট টা দিয়েছিলেন সেটা নিয়ে এসেছে।
কারণ প্যাকেট টা খুলে নবু তার মধ্যে একটি সুন্দর জামদানী শাড়ি দেখেছিলো।
আর আজ নাকি আমাকে ওটাই পরতে হবে আর এটা ওর আবদার…..

পার্লার থেকে হালকা সেজে দুজনে সোজা মন্দিরে চলে গেলাম।
সেখানে গিয়ে আমি চরম ভাবে অবাক হলাম।
সেখানে আমাদের দুই পরিবারের সবাই উপস্থিত আছেন। সাথে আছেন এলাকার কিছু গন্য- মান্য ব্যক্তিরা।

তাদের সকলের আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে এখানে কোন বিয়ের প্রস্তুতি চলছে।

তবে কি নবু র বিয়ে?

কিন্তু ওর সাজ পোশাক বা ভাব দেখে তো তেমন মনে হচ্ছে না।
আর বিয়ে হলে অর্পন দা এর পরিবার কোথায়?

তাহলে বিয়েটা কার?

আমাকে নবু মন্দিরের ভেতর নিয়ে গেল।
সেখানে যাবার পর আমার আর কোন কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না।
সব কিছুই জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।

কারণ আমার সামনে বর বেসে দাঁড়িয়ে আছেন নীলাদ্রি দা আর আমার গেটাপে আমি বিয়ের কনে…..

চলবে…

#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ৩৩

কারণ আমার সামনে বর বেসে দাঁড়িয়ে আছেন নীলাদ্রি দা আর আমার গেটাপে আমি বিয়ের কনে…..

পারিবারিক ভাবেই মন্দিরে আমার আর নীলাদ্রি দার বিয়েটা সম্পন্ন হয়।
সবার আশীর্বাদ নিয়ে এবার আমাদের বাড়িতে ফিরে যাবার পালা।
ছেলে-মেয়েদের বিয়েতে মায়েদের থাকতে হয় না হয় না তাই বিয়ে শুরু হবার আগেই মা আর বড়োমা আমাদের দুজনকে আশীর্বাদ করে বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন।

এখন আমাদের কে আমার বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে।সেখান থেকে বাকি অনুষ্ঠান করা হবে কিন্তু কি সেগুলো তা আমার জানা নেই। আর জানতেও চাই না।
জীবনে এত বড় ধাক্কা আমি কোনও দিনও পাইনি।

কেন জানি আজ আমার অতি কাছের মানুষ গুলোকেও পাশে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
আর সব থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে নীলাদ্রি সেন কে মানে আমার স্বামি কে মেনে নিতে।
সে তো আমার ভালোবাসার মানুষ ছিলো কিন্তু আজকের পর ভালোবাসার অনুভূতি গুলো ও অভিমানে, গভির অভিমানে রূপান্তরিত হয়েছে।

খুব কাদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু চোখের জল গুলোও অবরোধ করেছে।
যার ফলে চোখ গুলো খুব জ্বালা করছে।

বাসায় আসার পরমা আর বড়মা মিলে আমাদের বরন করে নিলেন।আমাদের একসাথে সোফায় বসানো হলো। সবাই খুব খুশি।
কিন্তু আমার পাশে বসা লোকটার কথা আমি জানি না।
জানি না তার মনের মধ্যে কি চলছে।
আর জানার ইচ্ছে ও নেই।
তার প্রতি আমার অনুভূতি গুলো কেন যেন ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে……

সবাই কথা বলায় ব্যাস্ত নবু আমাকে নিয়ে রুমে গেল।
নিজের বাড়িটাকেও আজ খুব অপরিচিত লাগছে।
রুমে গিয়ে সাথে সাথেই দরজা লক করে দিলাম।
নবু রুমে ঢোকার খুব চেষ্টা করেছে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।

রুমের দরোজা লক করে দিয়ে ওয়াসরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে নিরবে চোখের জল ঝরাতে লাগলাম।

ফ্রেশ হয়ে একটি শাড়ি পরে রুমের ভেতর বসে আছি।
মা বেশ কয়েকবার এসে ডেকে গেছে কিন্তু লক খুলিনি।
কি জন্য খুলবো?
যারা আমার জীবনের এত বড় একটা ঘটনা ঘটানোর আগে একবার আমাকে জানানোর দরকার টুকু মনে করলো না।
তাদের কাছে আমি কেন যাবো।

মা আবার এসে রুমের দরজা নক করলো খুব কড়া ভাবে আমাকে ডাকছে। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে দরজা খুলে দিলাম।
মা নবুকে বললেন…

–_ নবু মা ওকে নিয়ে যাও তো..

— আচ্ছা।
কাকিমনি নিয়ে যাচ্ছি।
চল মেঘা না মানে বৌদিভাই।

নবুর মুখে বৌদিভাই ডাকটা শুনে চোখ লাল করে রাগি ভাবে ওর দিকে তাকালাম।
ও আমার তাকানো দেখে শুকনো ঢোক গিললো আর ক্যাবলা হাসি দিলো।
ওর হাসি দেখে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে তাই সেখান থেকে হনহন করে বসার ঘরে চলে গেলাম।
আমাকে দেখে বড়মা উৎসুক ভাবে আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরলেন।
তারপর নীলাদ্রি দার পাশে বসিয়ে দিলেন।

আমাদের একসাথে বসিয়ে বড়মা আশীর্বাদ করলেন।
এরপর আমার গলায় একটি সোনার চেইন হাতে চুড়ি পরিয়ে দিলেন এবং বললেন…..

—- এবার তেমন কিছু দিতে পারলাম না।তবে পরের বার আমার ছেলের বৌ কে,
আমার মনের মতো করে সাজিয়ে ঘরে তুলবো।

পরের বার কথা টা শুনে আমি অবাক হয়ে বড়মার দিকে তাকালাম।
তিনি আমার মনের কথা বুঝতে পেরে হেসে দিয়ে আবার বললেন…

—- আরে এবার তো নামে বিয়ে দিলাম।
মানে তোকে আমাদের করে নিলাম।
পরের বার ধুমধাম করে অনেক বড়ো করে বিয়ে দেবো।

কথা শুনে আমি হা হয়ে গেলাম।
একবার বিয়ে দিয়ে এদের হয়নি আবার দেবে।
হায় ভগবান এদের মাথা কি গেছে।।।।

রাতে খাবার খেয়ে বড় মা আমাকে তাদের সাথে নিয়ে গেলেন। তার ছেলের বৌ বলে কথা।তাদের তো এখন আমার ওপর অনেক অধিকার।

এবাড়িতে আসার পর বেশ কিছু সময় সবাই মিলে আড্ডা দিলো।শুরু আমি আর নীলাদ্রি দা বাদে।
যেন আমরা কথা বলার শক্তিই হারিয়ে ফেলেছি।
যদিও বুঝতে পারছিলাম এই আড্ডা টা আমাদের দুজনকে সহজ করার জন্য।

একটু পর সবাই যে যার রুমে চলে গেল ঘুমাতে।
শুধু আমি আর নীলাদ্রি দা দুজনে পাশাপাশি বসে আছি
কিন্তু মনে হচ্ছে যেন আমাদের মাঝে হাজার হাজার মাইল দূরত্ব…..

এভাবে বেশ কিছু সময় বসে থাকার পর কোমর টা বেশ ব্যাথা করছিলো আর সেই সাথে খুব ঘুম পাচ্ছিলো তাই বসা থেকে উঠে দারিয়ে নবু র রুমের দিকে যাচ্ছিলাম।

যেই না নবুর রুমের দরোজায় নক করবো তখনই কেউ খপ করে আমার হাতটা ধরে ফেললো। যদিও বুঝতে বাকি নেই এটা কার কাজ।
তাই রাগী ভাবে তার দিকে তাকালাম।
কিন্তু তার মুখের ভাব স্বাভাবিক যেন কিছুই হয়নি।
সবকিছু নরমাল আছে।
সে স্বাভাবিক ভাবেই বললো….

— এখানে এসেছিস কেন?( এত দিন পর কথা বললো)

— ঘুম পাচ্ছে তাই এসেছি।

— এটা কি তোর রুম?

— নিজের রুম নেই বলেই তো এখানে এসেছি।

আমার কথা শুনে তিনি আমার হাত ধরে টানতে লাগলেন।
আমি।যতই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি তিনি ততই জোরে হাত চেপে ধরছেন আর টানছেন।

টানতে টানতে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দিলেন আর আমার কাছে এসে বললেন…

— আজ থেকে এখন থেকে এটাই তোর রুম।
এটা আমাদের রুম….

চলবে…

#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ৩৪

টানতে টানতে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দিলেন আর আমার কাছে এসে বললেন…

— আজ থেকে এখন থেকে এটাই তোর রুম।
এটা আমাদের রুম….

আমি হাত ধরে চপচাপ বসে আছি।খুব ব্যথা করছে হাতে।আর উনি সামনে সোফায় বসে কি যেন ভাবছেন।
হঠাৎই উঠে গিয়ে আলমারি থেকে কি যেন একটা বের করলেন আর মেঝেতে বসে পড়লেন।এবং আমার পায়ে হাত দিলেন।
আমি সাথে সাথেই লাফিয়ে উঠলাম।
কিন্তু তিনি পা ছাড়লেন না।পায়ে কি একটা পড়িয়ে দিলেন।আর সেখান থেকে সরে দাড়ালেন।
আমি তখনই পায়ে হাত দিলাম।
এবং অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম।

সে আমার অবাক হওয়া মখ দেখে ভুবন ভুলানো হাসি দিলেন।
যার অর্থ আমি বুঝলাম না।

তিনি এই নুপুর কোথায় পেলেন।
এটা তো আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।
কিন্তু এটা উনি কোথা থেকে পেলেন।
আমার জিজ্ঞাসু মুখ দেখে তিনি হেসেই যাচ্ছেন।
আর আমার খুব রাগ হচ্ছে। আমার রাগ দেখে তিনি হাসি থামিয়ে খুব সিরিয়াস ভাব নিয়ে বললেন….

—- হারিয়ে যাওয়া জিনিস টা কিন্তু সবাই খুঁজে পায় না।
আর এই নুপুরের কথাও আমি আজ তোকে বলবো না।
তবে হ্যা বলবো কোন একদিন যে দিন তুই নিজে মন থেকে এসে জানতে চাইবি।

—- আপনি জানতেন আজ আমাদের বিয়ে??

— মিথ্যে বলবো না,
জানতাম কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যে এসব ঘটবে বুঝতে পারিনি।

— তাহলে আমায় বলেন নি কেন?

— সেটা আজ বলতে পারবো না।

তোর না ঘুম পাচ্ছিলো। ঘুমিয়ে পর আমি চেঞ্জ করে আসি।

ঘুম আসছে না তাই রুম টাকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।কতদিন পর এই রুমটায় আমি আবার এলাম।
সেবার তার জন্মদিনের সেই ঘটনার পর আর আসিনি এই রুমে।
আর আজ থেকে এই রুম আমারও।
হাটতে হাটতে ব্যালকনিতে গেলাম।
রাতের শহরটি এখন বেশ শান্ত।
বাইরে ঠান্ডা বাতাস বইছে যা আমার অশান্ত শরীর ও মনকে নিবিড় ভাবে ছুয়ে যাচ্ছে।

পাশে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নীলাদ্রি দা।
তিনিও আমার মতো শান্ত শহরের নিবর পরিবেশ উপভোগ করছেন।

নিশ্চুপতা কাটিয়ে বেশ কিছু সময় পর তিনি বললেন….

—অনেক রাত হয়েছে চল ঘুমাতে চল।

আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম…

— আমার ঘুম আসছে না,
আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন।

— হ্যা,
তবে তার আগে তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।

আমি ওনার দিকে তাকালাম।
উনি রুমে চলে গেলেন।
তাইআমিও রুমে গেলাম।

তিনি আমাকে খাটে বসার জন্য ইশারা করলেন আর আলমারির দিকে আবার গেলেন।
কয়েকটি ব্যাগ বের করলেন এবং সেগুলো নিয়ে আমার কাছে এসে খাটের ওপর রাখলেন।

—- দেখ আমি তোকে কিছু কথা বলতে চাই।
জানি না তোর কেমন লাগবে।

— বলুন

— দেখ আমাদের বিয়েটা যেভাবেই হোক হয়ে গিয়েছে। আজ থেকে তুই আমার স্ত্রী আর আমি তোর স্বামি।
মানে আমরা দু’জন দু’জনার অর্ধাঙ্গিনী।
আর আমাদের সাথে আমাদের পরিবারের সবাই জড়িয়ে আছে….

আমি অবাক হয়ে তার কথা গুলো শুনছি।
তিনি বলেই যাচ্ছেন……

— আমি চাইবো তুই সবাইকে নিজের করে নিবি।
যদিও আমি জানি তুই আমার পরিবারের সবাই কে ভালোবাসিস কিন্তু তোর এই বিয়েতে যেহেতু কোন মতামত নেওয়া হয়নি তাই তাদের সাথে মিসবিহেভ করতেই পারিস।
তাই বললাম আর কি…

আর আমি এটাও জানি আমাকে মেনে নিতে তোর টাইম লাগবে।কিন্তু আমরা যেহেতু এখন থেকে একে অপরের সাথী তাই আমি চাইবো তোর সকল কথা তুই আমার সাথে শেয়ার করবি।
আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো।

— আমি চেষ্টা করবো।

আমার কথায় তিনি ঠোঁটের কোনায় হাসি এনে বললেন…

— আমার বিশ্বাস আছে।তুই পারবি।
আর এই নে এই ব্যাগ গুলো ধর।
এখানে কিছু শাড়ি আছে।আর বাকি জিনিস গুলো আমি আগামীকাল এনে দিবো।
এখন শুয়ে পর।

— আপনি শোবেন না?

— হ্যা।
বলেই তিনি খাটের একপাশে শুয়ে পড়লেন।
আমার খুব অন্যরকম লাগছে।
তার পাশে আমিও শুয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম ভেঙে গেলে চোখ মেলে অপরিচিত জায়গায় দেখে লাফিয়ে উঠলাম।
চোখের সামনে নীলাদ্রি দার ছবি দেখে সব মনে পরে গেল।
ছবির পাশে ঘড়ির দিকে চোখ গেল সময় দেখে চোখ চড়কগাছ। বেলা এগারোটা বাজে।

এই বাড়িতে প্রথম দিন আমি এতবেলা অব্দি ঘুমালাম।
ছি,ছি, সবাই কি ভাবছে।
পাশে তাকিয়ে দেখলাম নীলাদ্রি দাও বিছানায় নেই।
তার মানে তিনি আমাকে একবার ডাকলেন না।
রাগে আমার মাথা ভনভন করছে।
তাই দ্রুত বিছানা ত্যাগ করে ওয়াশরুমে গেলাম।

স্নান সেরে গতকাল রাতে তার দেওয়া শাড়ি গুলো থেকে একটি লাল শাড়ি পরে নিলাম।
তারপর নিচে বসার ঘরে গেলাম।
আমাকে দেখে নবু চিল্লিয়ে বড়মা কে বললো…

— মা,ওমা
তোর ছেলের বৌয়ের ঘুম ভেঙেছে।

বড়মা রান্নাঘর থেকে এলেন।
আমাকে দেখে হাসি মুখে বললেন আয় বোস অনেক বেলা হয়েছে।খাবার খেয়ে নে….

— খেতে ইচ্ছে করছে না..

— তা বললে তো হবে না।
আমাত বৌমা না খেয়ে থাকবে এটা তো হবে না।

—- প্লিজ

— আচ্ছা, তোর খেতে হবে না আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
হা কর।

খাবার শেষ করে নবু পাশে সোফায় বসলাম।
ও টিভি দেখছে আর আমাকে খোচাচ্ছে।আমি চুপচাপ বসে আছি কারণ আমার এখন ওর সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না।
তাই রান্নাঘরে গেলাম বড়মাকে রান্নায় সাহায্য করতে….

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here