উপন্যাসঃ
#আধখাওয়া_অষ্টভুজ
#উম্মে_নাদিয়া_তাবাসসুম
#পর্বঃ১১
সারা চোখ কচলে কচলে উঠে আবার ধুম করে শুয়ে পড়লো বিছানায়।ঘুম জড়ানো অবস্থায় সারাকে আস্তে করে কোলে তুলে নিলো সায়ান,আর সারা চেঁচাতে লাগলো “কোথায়? কোথায় নিচ্ছো,ছাড়ো ছাড়োওওও……”
সায়ান মুহাহাহাহাহা অদ্ভুত শব্দে একটা পাগলাটে হাসি হাসলো।
এলোমেলো কোঁকড়া চুলে বেশ লাগছিলো সারাকে।নারীর রূপ ক্ষণে ক্ষণে বদলায়।এই সুন্দর তো এই মায়াময়ী। আবার কখনো কখনো অদ্ভুত ভয়ংকর সুন্দর রূপ ধারণ করে তারা।একেক আলোকসজ্জায় একেকভাবে সজ্জিত হয়।সদ্য ঘুম থেকে এলোমেলো ঘুম জড়ানো চেহেরায় নারীদের অদ্ভুত ললিত লাগে।সারাকে এখন ঠিক তেমনই ললিত লাগছে।সায়ান তাকিয়ে আছে তো আছেই চোখ ফেরানোর নাম-গন্ধ নেই।সারা সায়ানের কোলে গুটিশুটি মেরে গুজে আছে।দেখতে একদম কাঠবেড়ালীর বাচ্চার মত লাগছে। সায়ান আহ্লাদী আহ্লাদী কন্ঠে বললো,”কই রে আমার পিচ্চি ছোট্ট বাচ্চাটা?এখনো ঘুমোবে নাকি?ছাদে তো উঠেও গেলাম।”
সারা এখনো গুটিসুটি মেরে শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে। সায়ান ও কে আলতো করে দোলনাতে শুইয়ে দিলো।পরম তৃপ্তিতে সারাকে দেখতে লাগলো।কি মায়াবী বাচ্চা বাচ্চা চেহেরা!কি সুন্দর আদুরে ভঙ্গিতে ঘুমোচ্ছে।
সায়ান পরম তৃপ্তিতে সারাকে দেখতে দেখতে গুণগুণ করে গান ধরলো,
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনি, দীর্ঘ বরস-মাস
যদি আর কারে ভালবাসো
যদি আর ফিরে নাহি আসো
তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও
আমি যত দুঃখ পাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই,তুমি তাই গো……..
আরাদ নিজের বাসায় এসেছে বেশ কিছুদিন হয়ে গেল।নিজের চিত্তকে কোনোভাবেই শান্ত করতে পারছেনা।হৃদয়ের ভাঙচুর যে বড় কঠিন জিনিস!
ল্যাপটপ টা নিয়ে বসে ফট করে এক কাপ কফি বানাতে চলে গেল কিচেনে।টুংটাং শব্দে কলিং বেল বেজে উঠল।দরজা খুলতেই চমকে গেল আরাদ “ভাবি, ভাইয়া! তোমরা!”
-কিরে দেবর মশাই!এভাবে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে আমাদের?
-দাঁড়িয়ে কই তুমি তো বসে বসে দিব্যি আছো।দাঁড়িয়ে আছি তো আমি।সায়ান বললো।
আরাদ ওর বাঁকাত্যাড়া দাঁতের হাসি হেসে “হয়েছে হয়েছে খুঁনসুটি ছাড়!ভেতরে আসো।”
-দেবর মশাই কে আমরা ডিস্টার্ব করে ফেললাম নাকি,হুম?তা বাবা ডিস্টার্ব করলে করেছি।আমাদের মন চাইলো আমরা চলে এলাম হিহিহি।
-আচ্ছা ভাবি,আর কেউ আসেনি?কেমন মুখের ভেতর করেই বললো আরাদ।তবুও সারা ঠিক শুনে নিয়েছে।
বলেই কেমন যেন হয়ে গেল আরাদ।ও জানে ইন্তিকা আসবেনা, তবুও মন মানতে চাইছিলো না।বারেবার মন চাইছিলো, “ইশ একটু যদি আসতো!”
সারা ব্যাপারটা খেয়াল করেও কথার মোড় ঘুরিয়ে নিলো অন্যদিকে।”আচ্ছা দেবর মশাই,আপনি তো নাকি বেশ ক্যাপাচিনো বানান।ভাবিকে খাওয়াবেন না বুঝি?”
-ভাবি হঠাৎ আপনি আপনি করছো কেনো?তোমাকে খাওয়াবোনা তা কি হয় বলো,বানিয়ে আনছি বসো।
-নাহ,আমার আবার ঐ একটু স্বভাব।আপনি,আমি,তুই সব মিশিয়ে পাঁচ মিশালি ভাষা বলি।
আরাদ মুচকি হাসছে।হাসতে হাসতেই আনমনে হারিয়ে গেছে কোথায় যেন।
মানুষের মন হারানোর কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা থাকেনা।তবে আরাদের আছে।সেই নির্দিষ্ট ঠিকানাতেই আরাদ হারিয়ে যায় প্রতিটাক্ষণ।
ঠিকানাটা কোথায় তা হয়তো আর কাউকে জানাতে হবেনা।
কল্পনার কাছে ছুটি নিয়ে আরাদ চলে গেল কিচেনে।
সারা বসে আছে বারান্দায়।ঝুম বৃষ্টি নেমেছে আকাশ ছেয়ে।আসার সময় দেখেছে কেমন গুড়ি গুড়ি ফোটা..কিছু সময়ের ব্যবধানে কেমন সব বদলে যায় তাইনা?হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছে বারান্দার ওপারে।বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে দিচ্ছে আঙুলের প্রতিটা কড়া।বারান্দার ওপারে একটা টিনের বাড়ি।টিনের চাল থেকে নেমে পড়ছে বৃষ্টিধারা।এই দৃশ্য সারার ভিষণ পছন্দের।সারার মন চাচ্ছিলো এক্ষুনি বাইরে ছুটে চলে যেতে, বৃষ্টিতে নাইতে।কিন্তু সাহস করে আর যেতে পারলোনা। সায়ান জানলে খুব রাগ করবে, সারা যে ঠান্ডা বাঁধিয়েছে বেশ।জ্বর জ্বর ও লাগছে কিছুটা।
আর এখন যদি বৃষ্টিতে ভেজার কথা ওঠে যুদ্ধ-বিগ্রহ সব লেগে তুলকালাম কান্ড হবে।
সারা কল্পানায় ভিজতে লাগলো খুব করে।কেমন যেন রিমঝিম রিমঝিম শ্রাবণধারার শব্দ শুনতে পেল স্পষ্ট। বিয়ের আগের স্মৃতিগাথা চোখে ভেসে এলো।কতই না বৃষ্টিবিলাস করেছে একা।হুট করে কানে বেজে ওঠে নূপুরের ঝুনঝুন শব্দ।
কোথায় এখন ঐ নূপুর? আর কোথায় বা সেই ঝুনঝুন শব্দ?
বিষণ্নতায় গ্রাস করে নেয় সারাকে।ভয়ংকর সুন্দর বৃষ্টি ও তখন উপেক্ষিত হয়ে যায়।ওর মন চাচ্ছে খুব করে কাঁদতে।আঁতকে আঁতকে ওঠে সারার কান্নার স্বর।ঝুম ঝুম বৃষ্টিতে অস্পষ্ট হয়ে যায় কত কিছু।এই শহরের প্রতিটা বারান্দায় কতই না গল্প বুনছে একেকজন।
-বেশ বানিয়েছিস ক্যাপাচিনো বুঝলি।তোর ভাবি তো একদম ফিদা হাহাহা।
মাথা নিচু করে কোনোমতে মুচকি হাসলো আরাদ।
-এই যে জেন্টেলম্যান!হোয়াটস আপ?
আরাদ এবারও কিছু বললো না।
-আরে বলবি তো কি হয়েছে।ঠিক আছে বলিস না।আমরা জানি সব।আমি আর তোর ভাবি তো এজন্যই এসেছি।
আরাদ মুখ নিচু করে কঠোর কন্ঠে বলে, “ওসব আর কিছু হবেনা ভাইয়া।বাদ দাও,চলো রুমে যাই।”
-আরে ব্যাটা,খুব বড় হয়ে গেছিস না?ভালোবাসা কোনো ভুল না বুঝলি।কখন হয়ে যায় তা কি কেউ বোঝে বল?এই দেখ সারা আর আমি ছিলাম একজন আরেকজন বিরাট বিপরীত। তুমুল ঝগড়া হতো আমাদের।এত কিছু যে হবে কখনো ভেবেছিলাম বল?তুই ইন্তিকাকে ভালোবেসেছিস এটা দোষের কিছু না।ও না করে দিয়েছে সেটাও ভুল না।তোরা দুজনেই দুজনের জায়গায় ঠিক আছিস।শুধু একটু সময় লাগবে।সব ঠিক হয়ে যাবে,দেখিস ভাই!সায়ান আরাদের পিঠ চাপড়ে বললো,মিঃজেন্টেল,জাস্ট চিলিং!
কিচ্ছু ঠিক হবেনা ভাইয়া, কিচ্ছু না!বিড়বিড় করতে থাকে আরাদ।হাহাকারে চূর্ণ চূর্ণ হয়ে যায় সে।ইন্তিকার সেদিনকার কথাগুলো কানে এসে এসে লাগে।বুকে কেমন যেন ব্যথা অনুভূত হতে থাকে তার।
Cobalt Blue Hue এর সাথে Chinese White মিশিয়ে পেপারে অদ্ভুত রঙ তৈরি করে নিলো ইন্তিকা।আজ ওর কোনো কল্পনা নেই,নেই কিছু।কি আঁকছে তা ও নিজেই ঠিক জানেনা।মনের আবেশ মিশিয়ে আঁকছে। Crimson Lake এর সাথে আধো আধো কয়েক রঙ মিশিয়ে পার্পলের বন্যা নামিয়ে দিল পেপারে।প্যালেট জুড়ে হাজারো রঙের মেলা।তুলিতে আচঁড় কেটে আঁকছেতো আঁকছেই,এই ধরার কিছুতেই যেন হুশ নেই ওর।
ধীরে ধীরে একটা দৃশ্যে রূপ নিলো পেপারটা।এলোমেলো সুরে উড়ছে এক অভাগীর লম্বা চুল।চারিপাশ জুড়ে কেমন সব অস্পষ্ট ছায়া আর একটা বাড়ানো নিষ্পাপ হাত।
ছবিটায় চোখ পড়তেই ইন্তিকা শিউরে উঠল।ওর চোখজোড়া শিথিল হয়ে গেল।কি এঁকেছে ও এটা?কেনই বা এঁকেছে? এর মানে কি?
মাথায় আসতে থাকা এসব শ’খানেক উদ্ভট প্রশ্নে দলাপাকিয়ে যায় সব।
বৃষ্টির ফোটা ছিটকে আসতে থাকে থেকে থেকে।জোরে জোরে মেঘের গুঞ্জন শোনা যায়।আচ্ছা,ওরাও কি আজ খুঁনসুটিতে ব্যস্ত?
চলবে….
#আধখাওয়া_অষ্টভুজ
#পর্বঃ১২
#উম্মে_নাদিয়া_তাবাসসুম
জামাল চাচার টঙ দোকানে আড্ডায় মশগুল আরাদ।সুদর্শন হাসিটা হাসছে।আড়চোখেই দেখছে ইন্তিকা।”এই হাবাটার হাসিটা আজ হঠাৎ সুন্দর লাগছে কেন?” ইন্তিকা ভেবে কুল পায়না।
আরাদের মুখটা কেমন শুকনো শুকনো হয়ে গেছে।মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ পড়ে গেছে,রঙটাও বেশ কালো হয়ে গেছে।
মাথা ঝেড়েই ওখান থেকে চলে গেল ইন্তিকা।
এদিক সেদিক তাকায় আরাদ,সর্বক্ষণই ওর দু’নয়ন যেন কিছু খুঁজছে আজ চারটা মাস কোথাও দেখেনা ইন্তিকাকে।
ফিহা পড়ালেখায় বেশ ভালো।বেশ ভালো রেজাল্ট করে,খুব সুনাম ওর এসবে।বিভিন্ন প্রতিযোগীতায়ও অংশগ্রহণ করলেই প্রাইজ নিয়ো আসে।২৫ তারিখ সাইন্স ফেয়ার হবে ওদের,তার প্রজেক্টই রেডি করছে ও।
হঠাৎ ফিহা ঠাস করে টেবিলে ফোনটা ছুঁড়ে ফেলল।মেজাজ ভীষণ তিরিক্ষি হয়ে আছে ফিহার।নিনাদের সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে নিনাদ বলে ওঠে,”বাকিসব ঠিকঠাক কিন্তু তোমার ভয়েসটা না সুন্দর না।”
কথাটা ভীষণ মনে লেগেছে ফিহার।নিনাদ কিভাবে এভাবে বলতে পারে?ভালোবাসার মানুষকে কেউ এভাবে বলে?
ফিহার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কেমন যেন লাগছে।হাজারটা প্রশ্ন হৃদয় ফুঁড়ে ফুঁড়ে যাচ্ছে।
এইদিকে নিনাদ কল করেই যাচ্ছে, কিন্তু ফোন সুইচড অফ আসছে।ম্যাসেঞ্জারে শ’খানেক ম্যাসেজ করে নিয়েছে নিনাদ কিন্তু ফোন যে অফ সিনই হলোনা কোনো টেক্সট।
পেছনে তাকাতেই বুয়াদাদী অবাক হয়ে যেন ভুত দেখেছে মতন লাফিয়ে উঠল।”আল্লাহ গো বাবাজীবন,সারা মা তোমরা আইসো!আল্লাহ গো আল্লাহ কি চমকানিটাই না চমকাইলাম!ডান হাতে গুঁজে রাখা পানটা নিয়ে মুখে পুড়ে দিলো বুয়াদাদী।চিবোতে চিবোতে বললো,”আমি যে এহন কি করি বাবাজীবনরা আইসে।ঘরে শুধু কাইল রাইতের এক ফুডা সালুন আছে,এই জমিলার লগে ভ্যারভ্যার করতে করতেই আমার রাঁধন আর হইলো না।যা শর বজ্জাত!সর!”
জমিলাকে ঠ্যালা দিয়ে সরিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে ছুটতে গিয়েই এই বুঝি একটা হোঁচট খেলো।তক্ষুনি সায়ান ধরে নিলো বুয়াদাদী কে,”দাদী!এত ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই,আমরা আমরাই তো।করে ধরে একসাথে খেয়ে নেব।তাছাড়া সারা তো আছে কয়েকদিন,ইন্তিকার সাথে থাকবে।”
-ওমা দেহ, বাবাজীবন কি কয়!নতুন জামাই বলে কাম করবো হেহে।কি শরমের কথান কয়। ও আল্লাহ আল্লাহ!সারা আম্মা আইসে এত্তডা দিন ফর,থাকবো না তো কি! না থাইকলে তো বাইন্ধা রাখতাম হেহে।আম্মা!নয়া নয়া বিয়া হইলে এমন চুল খুইল্লা আসতে নাই বুজলা?আসর-বিসুরে ঘুরঘুর করে,বুজচ্ছনি?এই জমিলা যা তো একখান ঝুটকি নিয়া আয়,ইশটাইল কইরা তোমরা কি জানি কও?আচ্ছা ছাড় যা ঝুটকি নিয়া আয়,চুলডি বাইন্ধা দি।
রামিসা কাটাকুটি শুরু করে দিয়েছে।ওর কাটাকুটি সবচেয়ে সুন্দর।পেয়াজ এত সুন্দর করে কুচি করে!রামিসার হাতের ত্বকটা ভিষণ পাতলা।মরিচ ছুঁলেই হাত জ্বালা করে।তবুও একদম কুচি কুচি করে কাটে।মরিচের ঝালটা ভালোমত না বের করা অবধি ওর শান্তি হয়না।রান্না রামিসার ভিষণ প্রিয় একটা জিনিস।একদম মন দিয়েই সবটা করে।
আজ রাঁধছে মুরগীর কোরমা,শাহি পোলাও,গরুর কালা ভুনা আর কাঁচা মরিচ,লেবুর রস আর পুদিনা বেটে একটা পেস্ট বানিয়েছে, তবে এতে আরও একটা জিনিস দেয় যেটা শুধু রামিসাই জানে, কাউকে বলা যাবেনা হিহি!পেস্ট টা এত অসাধারণ এসবের সাথে খেতে একদম অমৃতের মত লাগে।রান্নার স্বাদই ভিষণ বেড়ে যায়।এইটা রামিসার রান্নার একটক সিক্রেট, ও ছাড়া এটা বানাতে কেউ পারেনা।সারা দুবার এসে ফিরে গেছে।রামিসা কোনোমতেই ওকে কিছুতে হাত লাগাতে দেবেনা।পাকা বুড়ি একটা!
ইন্তিকা এসেই বিরাট চমকাল।দুজন বান্ধবীর সে কি হৃদয়বিদারক দৃশ্য।দুজন,দুজনকে জড়িয়ে কেমন ফুঁপিয়ে কাঁদছে।কত্তটা দিন একে অপরকে দেখেনি।কিভাবে যে থেকেছে ভাবতেই কেমন অবাক লাগে।
সারা ইন্তিকাকে জড়িয়ে ধরে ইন্তিকাকে নিয়ে ওর ঘরে গেল।
জমিলা স্প্রিংকেলস আর ক্যারেমেল কে নিয়ে দৌড়ঝাপ করছে।ক্যারামেল ল্যাং মেরে স্প্রিংকেলস কে ফেলে দিয়ে দিল ভোঁ ছুট।”ছুডোআফা যেন কঠিন নাম দিসে বিলাইগুলার!ডাকবারও ফারিনা।”
জমিলা ক্যারামেলের পিছনে অ্যায় অ্যায় করে ছুটতে থাকে কিন্তু ধরতে পারেনা।ক্যারামেল পিছনে ঘুরে উল্টো জমিলাকে তাড়া করতে লাগলো।জমিলাও দৌড়াচ্ছে পাগলের মতন আর ও আফা ও আফা! বলে বলে চেঁচাচ্ছে।রামিসা ওদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে হুটোপুটি খাচ্ছে।ক্যারামেল ভারী দুষ্ট হয়েছে ইদানীং।জমিলা ও কে খুব ভয় পায়।
“ছুডোআফা সি-সি-সি পংকাল আর কামান কেমনে আমারে ডর লাগাইতেসে দেহেন না!”
রামিসা হাসতে হাসতে কথাই বলতে পারছেনা,”কিহহহহ!কি ডাকলা জমিলা?সিপংকাল!কামান!হাহাহাহাহাহা…..
-তুই বোস,আমি আমার দেবর মশাইকে আসতে বলছি।বেচারা একা একা থাকে এসে ঘুরে যাবে ক্ষণ আর,আমাকেও নিয়ে যাবে। সায়ান তো রামিসা বুড়ির পাকা হাতের রান্না খেয়ে আঙুল চাটতে চাটতে চলে গেছে।
-সারা!উনাকে ডাকার কি দরকার?আর তুই বা চলে যাবি কেন?কত দিন পর আসলি।রাতটাও থাকবিনা?
-থাকবো কিন্তু এখন না।বিয়ের আগেই যদি আমার হবু জা’য়ের বাড়ি থাকি তাহলে লোকে কি বলবে বল তো!
ইন্তিকা ভ্রু কুঁচকে খানিকটা অবাক হয়ে চুপ করে রইল।
-কি বলছিস তুই সারা?খোলাসা করে বল
-ওরে আমার জা’রানীরে!তোমাকে আমার দেবরের বউ করে নেই কি বল?
ইন্তিকা মাথা নিচু করে চুপ করেই বসে রইল।আনমনেই ভাবছে সারা কি সব জেনে ফেলেছে?নিশ্চয়ই উনি বলেছে।
সারা ইন্তিকার গাল দু’খানা টেনে বললো,”কিরে ইন্তু কি ভাবছিস?ধুর পাগলী!আমিতো মজা করছিলাম।আরাদের তো পছন্দ আছে।মেয়েটা দেখতে একদম পুতুল।বিদেশ যাওয়ার আগে বিয়েটা করে নেবে বলছিলো।”
ইন্তিকা ভীষণ রকম ভাবে শক খেল।হাজারটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো।তবে তাকে বলা সব কথা,ওভাবে প্রপোজ করা সেসবের মানে কি?আরাদের কোনো কথায় তো অবিশ্বাস করার মত নয়।উনি যেভাবে বলেছে,করেছে সবকিছু..সবকিছু তো ভীষণ সত্যিই মনে হয়।
কি হচ্ছে এসব?তাহলে…তাহলে কি উনি…মানুষ এমনও হয়?
চলবে…