আমার সংসার পর্ব ১৯

আমার_সংসার
.
.
Part:19
.
.
Writer :Mollika Moly
.
.
৫ বছর পর।
আজ প্রায় ৫ বছর হয়ে গেছে সিনহা চলে গেছে সিফাত কে ছেড়ে। সিফাত তার মেয়েটিকে বুকে আগলে বেচে আছে।ওর মাঝে সিনহা কে খুজে পায় সে। প্রায় অনেকটাই সিনহার মতো হয়েছে ওদের মেয়ে।নাম রেখেছে জান্নাত।জান্নাতই এখন সিফাতের বেঁচে থাকার উৎস। জান্নাত না থাকলে সিফাত বাঁচতে পারতো না। ওর বাবা মা অনেকবার বলেছে ওকে আবারো বিয়ে করে সংসারী হতে কিন্তু সিফাত তা করেনি সে যে সিনহা কে ভালবাসে ওর জায়গা কাউকে দিতে পারবে না।আর সবচাইতে বড় কথা হলো সিফাত চায়নি তার মেয়ে জান্নাত সৎ মায়ের কবলে পড়ুক।সে কারো কাছে ভাগ হতে চায়নি।আজো সে সিনহা আর ওর মেয়ের সম্পদ হয়েই আছে,আজিবন থেকে যাবে এমন পরিকল্পনা তার। মেয়ে কে নিয়ে এখন সে বেশ ভালোই আছে।ঐ যে বললাম সিনহার ছায়ামূর্তি সে জান্নাতের মাঝে পায়,এতেই সে ভেবে নেয় সিনহা ওর সাথেই আছে।কষ্ট হয়েছিলো ঠিক সেসময় যখন সিনহা ওকে ছেড়ে দুধের বাচ্চার কথা চিন্তা না করে চলে গিয়েছিলো। বাচ্চা টা যখন মায়ের জন্য প্রচুর কান্না করতো।একটা দুধের শিশু কে মা ব্যতীত মানুষ করা অনেক কষ্টের। সেই খারাপ সময়গুলো সিফাত কাটিয়ে উঠেছে।পাশে পেয়েছে তার মা কে।মা হারা দুধের শিশুটি দাদী আর বাবার সাহচার্যে মানুষ হয়।সিফাতের বাবা আর নেই।সিনহার চলে যাওয়ার কথা শুনে হার্ট এট্যাক করেন তিনি।তখন থেকেই সিফাতদের বাড়িতে সিফাত আর ওর মা একা হয়ে যায়।সাথে ছোট্ট একটি মেয়ে কে নিয়ে তিনজনের সংসার চলে।আজ জান্নাত বড় হয়ে গেছে প্রায় ৫ বছর বয়স ওর।স্কুলে ভর্তি করিয়েছে ওকে নতুন।স্কুলে যায় ওর নতুন বন্ধু হয়েছে ওরা মায়ের সাথে আসে।জান্নাত নির্বাক তাকিয়ে থাকে মনে মনে ভাবে ওদের মা আসে আমার মা কই।আমার শুধু পাপ্পাই আসে।মা কেনো নেই আমার।স্কুল ছুটি হয়েছে জান্নাতের।ওর বন্ধু গুলো একে একে সবাইকে তাদের মা এসে নিয়ে গেলো।আর জান্নাত স্কুলের শিক্ষার্থী ছাউনির ব্রেঞ্চে বসে আছে মাথা নিচু করে।সিফাত এসে ওকে নিয়ে যাবে।
কিন্তু সিফাত আজ জ্যামে আটকা পড়েছে আসতে খুব দেরী হচ্ছে ওর।জান্নাত তাই গাল ফুলিয়েছে।
.
জান্নাতের পাশে একজন বসলো।ওর মাথায় হাত দিলো।
.
– “এখানে কি করো সোনা, বাসায় যাওনি এখনো তোমার মাম্মাম আসেনি?
.
জান্নাত মুখ তুলে তাকিয়ে দেখলো…!
.
– “নাহ আমার মাম্মাম নেই পাপ্পা আসবে।
-” কখন আসবে সোনা,কখন থেকে বসে আছো দেখছি?
– “ঐ তো এসে গেছে পাপ্পা।বলেই জান্নাতের চোখদুটো খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।জান্নাত ছুটে চলে গেলো।জান্নাতের সাথে থাকা মহিলারি ঘাড় টা একটু বাকিয়ে দেখলো একটা ছেলে জান্নাত কে গাড়ি তুলে নিয়ে গেলো।মুখটা দেখতে পেলো না সে।
.
গাড়িতে জান্নাত মুখ ফুলিয়ে চুপচাপ বসে আছে।সিফাত ড্রাইভ করতে করতে খেয়াল করলো বিষয়টা।বাব্বাহ মায়ের মতোই চাপা স্বভাবের হয়েছে।কিছু হলে বলবে না শুধু চুপচাপ থাকবে। আবার কখনো বুড়ো মানুষের মতো পাকা পাকা কথা বলবে।রাগ করেছে খুব রাগ টা ভাংগাতে হবে কিন্তু কি করে যে রাগী বাবারে। মায়ের মতো হতে গেলি কেন বলতো।আমার মতো হইতি।মনে মনে বললো সিফাত।
.
– “আমার প্রিন্সেসের কি হয়েছে?
-” নিশ্চুপ জান্নাত।
– “কি হয়েছে আমার প্রিন্সেসের কথা বলছে না কেনো সে?
– ” নিশ্চুপ আবারো।
– “রাগ হয়েছে আমার সাথে,সরি মাই লিটল প্রিন্সেস আর হবে না প্রমিস করছি।
– ” এইবারো চুপ জান্নাত।
যা এ দেখি কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
– “মামুনি দেখো আমি কান ধরেছি আর হবে না।সরি বেটা আর হবে না এইবার তে তাকাও কথা বলো।
– ” জান্নাত তাকাচ্ছেও না বলছেও না কিছু।
– কি হলো দেখবে না তো কথাও বলবে না।ঠিকাছে দেখতেও হবে না কথাও বলতে হবে না। আমি যখন মরে গিয়ে ঐ দুর আকাশে তারা হয়ে থাকবো তখন দেখো আমায় দুর থেকে।সিফাত কথাটি বলতেই জান্নাত সিফাতের গলা জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো।
– “পাপ্পা তুমি এমন কথা আর বলে না পাপ্পা।তুমি চলে গেলে আমার কি হবে। আমি কার কাছে থাকবো,কে ভালোবাসবে আমায়।আমায় রুপকথার রাজকন্যার গল্প কে শুনাবে।স্কুল থেকে কে নিয়ে যাবে।আমার তো মাম্মামো নেই,শুধু তুমি আর গ্রানি আছো।ওদের সবাই কে ওদেড মাম্মাম এসে নিয়ে যায় কিন্তু আমার মাম্মাম আসে না আমার মাম্মাম নেই।কোথাও নেই।বলো না পাপ্পা ওদের মাম্মাম আছে আমার মাম্মাম কেথায়।আমি আমার মাম্মামের কাছে যাবো পাপ্পা।এনে দাও না আমার মাম্মমকে প্লিজ।কেদে কেদে জান্নাত কথা গুলো বললো।সিফাতের কাধের শার্ট ভিজিয়ে দিলো।
.
তুমি কোথায় সিনহা। দেখো তোমার জন্য আজ আমাদের সন্তান কতোটা কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের সন্তানের চোখের জলের কারন তুমি সিনহা।কখনো তোমায় আমি ক্ষমা করবো না।কখনো না।
.
– “কি হলো পাপ্পা বলো না আমার মাম্মাম কোথায়।নিয়ে এসে দাও না পাপ্পা তাকে?
– ” তোমারও মাম্মাম আছে প্রিন্সেস, তোমার মাম্মাকে আমি এনে দেবো তোমার কাছে।
– “সত্যি,,?
– হুম সত্যি,,।
– ” ইয়ে আমার পাপ্পা গ্রেট বলে সিফাতের গালে হামি দিলো একটা জান্নাত।
.
অতঃপর তারা বাড়ি পৌছালো। ওর দাদী ওকে ফ্রেশ করিয়ে দিলো।সিফাতও ফ্রেশ হয়ে একসাথে তিনজন দুপুরের খাবার খেয়ে নিল।
.
বিকেলে সিফাত জান্নাত কে নিয়ে একটু ঘুরতে বের হলো।কিছু কেনা কাটা করার জন্য মলে গেলো।কারন কদিন পর জান্নাতের জন্মদিন।চারদিকে ঘুরে ঘুরে জান্নাত সব দেখছে।জান্নাতের জন্য কিছু জামা কাপড় কিনলো।বিল পেমেন্ট করতে লাগলো সিফাত আর এদিকে জান্নাত ঘুরতে ঘুরতে ওখান থেকে অন্যজায়গাতে চলে যায়।গেট দিয়ে বাহিরে চলে আসে।আর সিফাত পেমেন্ট করে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে জান্নাত নেই। কলিজা কেপে উঠে তার।সিনহার মতো জান্নাতও কি তাকে ছেড়ে চলে যাবে নাকি।তাহলে সে থাকবে কি করে।পাগল প্রায় হয়ে গিয়ে খুব খুজতে লাগলো সিফাত।
.
আর এদিকে গেট পেরিয়ে বাহিরে এসে জান্নাত এক ভদ্র মহিলার পিছু পিছু যেতে লেগেছে। মহিলার কাছাকাছি এসে শাড়ীর আচল টেনে ধরে জান্নাত।আচলে টান পেয়ে মহিলা পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে জান্নাত।
– “আরে সোনামনি তুমি এখানে কি করছো,কার সাথে এসেছো?
– ” পাপ্পার সাথে এসেছি।।
– “ওহ তাই তাহলে কি কিনতে এসেছো শুনি।
– বলে মহিলাটি জান্নাতের সামনে আলতো করে ওর সম্মুখে বসলো।হ্যাঁ মহিলাটি স্কুলেরই যে জান্নাতের পাশে এসে বসেছিলো।
– ” আমার তো কদিন পর বার্থডে হবে তাই নতুন জামা কিনতে এসেছি তোমাকে দেখলাম ওখানে তাই পিছু পিছু এলাম।
– “কেনো সোনা?
– আমার বার্থডে তে ইনভাইট করতে।সামনে ফ্রাইডে আমার বার্থডে তুমি আসবে কিন্তু ওকে।
– ” হুম ওকে সোনা আসবো আমি অবশ্যই। তো তুমি তোমার পাপ্পাকে বলে এসেছো আমার কাছে.
– “না বলিনি কিছু।
– ” এটা কিন্তু ঠিক করো নাই।পাপ্পা খুজবেতো যাও তারাতারি পাপ্পার কাছে যাও।
– “হ্যাঁ যাচ্ছি বলেই জান্নাত হাটতে লাগলো তখুনি মহিলাটি আবারো ডাকলো।
– ” সোনামনি দাড়াও?
– “হ্যা মামুনি বলো।
– ” চকলেট নিবা না?
– “হুম নিবোতো।কিছুটা সময় ভেবে জান্নাত উত্তর দিলো। ওকে চকলেট কিনে দিলো তারপর জান্নাত চলে গেলো ওর বাবার কাছে।
.
আর এদিকে জান্নাত কে খুজে না পেয়ে সিফাত প্রায় পাগল পাগল হয়ে গেটের সামনে আসতেই দেখে জান্নাত আসছে। ওকে দেখে সিফাত মনে হয় প্রান ফিরে পেলো।সস্তিী নিশ্বাস ফেললো।
.
to be continue…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here