#অন্যরকম_ভালোবাসা
#পর্ব_১১
পাক্কা দু’দিন বাদে মুশফিক সাহেবের হুঁশ ফিরলো। এর মাঝের সময়টা তার কাছে ছিল অতল অন্ধকার একটা গহ্বরের মত। সেই অন্ধকার গহ্বরে উনি কখনো কখনো পথ হারান আবার কখনো কখনো উদ্ভাসিত আলোয় দেখতে পান কিছু পরিচিত আর অপরিচিত মুখ।
অবশেষে দীর্ঘ দুইদিনের অবচেতন অবস্থা কাটিয়ে মুশফিক সাহেব চোখ মেলে তাকান। চেতনা ফিরতেই তিনি তার মেয়ে অন্তরার ক্লান্ত উদ্বিগ্ন মুখখানা দেখতে পান। অন্তরা তার পাশেই বসা ছিল। তাকে চোখ মেলতে দেখে অন্তরার ক্লান্ত উদ্বেগাকুল মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে পরম মমতায় বাবার কপালে হাত রেখে অল্প হাসে।
– কেমন আছো আব্বা ?
– ভালো। তোর মা কই অন্তু ?
– আম্মা একটু আগেই বাসায় গেছে আব্বা । এই দু’টো দিন তোমার পাশ থেকে একটুও নড়েনি , তাই আজকে সকালে যখন শুনলাম তোমার বিপদ কেটে গেছে একরকম জোর করেই তাকে বাসায় পাঠালাম।
– ভালো করেছিস।
স্বামীর জ্ঞান ফিরেছে শুনে একটু পরেই সাবিনা চলে এলেন। বাড়িতে গিয়ে ঠিক মতো হয়তো হাত মুখটাও ধোননি তিনি, খবরটা শুনেই ছুটে চলে এসেছেন আবার হসপিটালে। মুশফিক সাহেবকে সুস্থ স্বাভাবিক দেখে স্বামীর পায়ের কাছে বসে আবারও কান্না জুড়ে দিলেন সাবিনা। তার কান্না দেখে মুশফিক সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন,
– যখন তখন ফ্যাচ ফ্যাচ করে কান্না করার অভ্যাসটা তোমার গেল না সাবিনা! এই দুইদিন কি কাঁদোনি যে আজও তোমাকে পা বিছিয়ে বসে কাঁদতে হবে? এখন তো আমার জ্ঞান ফিরেছে তাইনা, তারপরও এত কাঁদার কি হলো?
সাবিনা চোখ মুছতে মুছতে বললেন,
– আনন্দে কাঁদি গো, সেইসাথে নিজের কপালের দোষেও কাঁদি! নিজের মেয়ে যখন বাবা মায়ের দুঃখ বোঝে না তখন কাঁদা ছাড়া আর কি বা করার আছে!
সাবিনা কড়া চোখে অন্তরার দিকে তাকান। অন্তরা মুখ ভার করে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
মুশফিক সাহেব স্ত্রীকে মৃদু ধমক দিয়ে বলেন,
– কি শুরু করলে! মনে হয় আমি অজ্ঞান ছিলাম তাই ভালো ছিলাম! অন্তরা তো বাচ্চা মানুষ , তার ভুল হতেই পারে। কিন্তু তুমিতো মা, তুমি কি দেখতে পাচ্ছো না মেয়েটার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ… সেইসঙ্গে কেমন মনমরা হয়ে আছে!
সাবিনা স্বামীর কথার উত্তর না দিয়ে নীরবে চোখ মুছতে থাকেন।
বিকেলে ম্যনেজার সাহেব মুশফিক সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে এলেন।
– এখন কেমন বোধ করছেন স্যার?
– ভালো , আপনি ভালো আছেন?
– জ্বী আমিতো ভালই আছি , তবে সেদিন যা ভয় পেয়েছিলাম!! একে এমন বিপদ তার উপর লিফট নষ্ট। ভাগ্যিস আপনার ভাতিজা ছিলো, নইলে কিযে হত !!
– ভাতিজা?
– হ্যাঁ , ওই ছেলেটা তো আপনার ভাতিজাই নাকি ? বড় সাহসী ছেলে ! আর কি দরদ আপনার জন্য! আপনাকে কাঁধে করে অতটা সিঁড়ি টপকে নীচে পৌঁছে গেলো একাই !!
মুশফিক সাহেবের মনে পড়লো স্পন্দন উনার সাথে ছিলো। ওর কথায় হঠাৎ রেগে গিয়ে কি যে হল ….! কিন্তু ছেলেটা যে উনাকে কাঁধে নিয়ে একাই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমেছিল তা তার জানা ছিল না। জ্ঞান ফেরার পর থেকে কেউই স্পন্দন সম্পর্কে কোন আলাপ করছে না, না সাবিনা, না অন্তরা। আর সেজন্য মুশফিক সাহেবও ব্যাপারটা সতর্কতার সাথে এড়িয়ে চলছিলেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে স্পন্দনের সম্পর্কে জানতে চাওয়া উচিত ছিল। ম্যানেজার সাহেব না বললে তো উনি জানতেই পারতেন না যে ছেলেটা তাকে কিভাবে হসপিটালে নিয়ে এসেছিল। তার এসব ঘটনার কিছুই মনে নেই ,শুধু স্মৃতি বলতে জ্ঞান হারাবার আগে ছেলেটার উতলা মুখটাই মনে পড়ছে বারবার। ছেলেটা আসলেই ভারী অদ্ভুত! উনি অন্তরার দিকে চাইলেন, দেখলেন অন্তরা ম্যনেজার সাহেবের কথায় মাথা নীচু করে বসে আছে।
– কেমন আছেন আঙ্কেল ?
স্বপ্ন বেডের পাশের চেয়ারটায় বসতে বসতে মুশফিক সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলো ।
– এইতো ভালো!
– বাবা এসেছিল আপনাকে দেখতে?
– হ্যাঁ , সকালে এসে একবার চেক করে গেছেন।
– যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন আমাদের সবাইকে! যাক্, এখন আর ভয় নেই। তবে সাবধানে থাকতে হবে, এটা কিন্তু বেশ বড় ধরনের একটা স্ট্রোক ছিল।
-আর সাবধান ! যেই রাহুর পাল্লায় পড়েছি!
অনুযোগের সুরে বললেন সাবিনা।
– সব ওই লাফাঙ্গা ছেলেটার দোষ !
সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন সাবিনা। স্বপ্নকে দেখে সাহস যেনো বাড়লো উনার , অন্তরাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন,
– দেখো না , প্রথমদিন দেখা করতে এসেই তোমার আঙ্কেলের কি অবস্থা করে ছেড়েছে ! এবার আমাদের কেবল মরা বাকী!
কথাটা অন্তরার বুকে তীরের মত গিয়ে বেঁধে। সেদিনের ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা স্পন্দন ওকে বলেছে। এটা ঠিক যে স্পন্দনের কথায় উত্তেজিত হয়েই তার বাবার এই অবস্থা, তবে এটাও ঠিক স্পন্দন তার বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টায় কোনো ত্রুটি করেনি। অথচ তার মা সবটা জানার পরও আজ দুদিন ধরে তার সাথে এমন আচরণই করছে। এই দুদিনে সুযোগ পেলেই সাবিনা অন্তরাকে শুনিয়ে শুনিয়ে এটা সেটা বলছে , কিন্তু এখন স্বপ্নর সামনে বলাতে আর মেনে নিতে পারলো না অন্তরা।
– আহ্ , থামবা তুমি আম্মা ! তুমি তো দেখি স্পন্দনকে পুরাই খুনী বানায় ফেলতেসো।
– খুনীই তো , আর একটু হলে তোর বাবাকে তো মেরেই ফেলতো বদমাশ ছেলেটা!
সাবিনা সমান তেজে জ্বলে ওঠেন।
– আম্মা, তুমি কি জানো? তুমি যাকে বদমাশ বলতেসো সে না থাকলে আব্বা আজ এভাবে বসে গল্প করতে পারতো না আমাদের সাথে। ডাক্তার কি বলসে শুনো নাই ? সেদিন যদি ও আব্বাকে কাঁধে করে নিয়ে নীচে না নেমে আসতো তবে এ্যাম্বুলেন্স এসে নামায় নিতে নিতে অনেক সময় নষ্ট হত। আর একটু দেরীতে আনলেই আব্বার আর কখনো জ্ঞান ফিরিয়ে আনা যেতো না, হয় মারা যেতো নয়তো কমায় চলে যেতো।
-হ্যাঁ ,হ্যাঁ গরু মেরে জুতা দান করছে সে!
মুখ ঝামটে বললেন সাবিনা ।
-আহ্ ,তোমরা কি শুরু করলে?
মৃদু ধমক দিলেন মুশফিক সাহেব।
– আন্টি, অন্তরা কিন্তু ঠিকই বলেছে।
স্বপ্নের এই কথায় যেনো বাজ পড়লো ঘরে। স্বপ্ন না দেখেও অনুভব করলো তিন জোড়া বিস্মিত চোখ তার দিকে চেয়ে। তারপরও কথা না থামিয়ে স্বপ্ন বলে চলে,
– সেদিন যদি আঙ্কেলকে সময় মত না আনা হত তবে অনেক খারাপ কিছু হতে পারতো। আমি ঠিক জানিনা সেদিন স্পন্দন সাহেবের সাথে আঙ্কেলের কি ঝামেলা হয়েছিল বা তাতে উনার কতটা দোষ ছিল। তবে এভাবে একজন সিরিয়াস পেশেন্টকে একা নয় তলা থেকে নামিয়ে আনা যেমন কষ্টের তেমনি যথেষ্ট সাহসের ব্যাপারও বটে। যাই হোক , যা হয়েছে হয়েছে। এখন আর এগুলো নিয়ে কথা বাড়িয়ে কাজ নেই। কটা দিন সব চিন্তা-ভাবনা ঝেড়ে ফেলে রেস্ট নিন ,সব ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।
স্বপ্নের কথা শুনে সাবিনার বিস্ময় কাটেনা, তিনি জবাবে শক্ত কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। তারপর মুখ গোমড়া করে স্বামীর পাশে চুপচাপ বসে রইলেন।
স্বপ্ন কেবিন থেকে বেরিয়ে একটু সামনে যেতেই শুনতে পেলো অন্তরা পেছন থেকে তাকে ডাকছে। স্বপ্ন থমকে দাঁড়ায়। আহ্, কতদিন পর !! মনে মনে ভাবে স্বপ্ন। সেই ছেলেবেলায় একসাথে ওদের বাড়ীর লনে যখন ওরা খেলতো তখন অন্তরা এভাবে ওকে নাম ধরে ডাকতো।
– স্বপ্ন দাঁড়াবেন? ইয়ে মানে… আপনার সাথে একটু কথা ছিল।
– এখানে বলবে? তার চেয়ে নীচের ফুড কর্ণারে বসে একটু কফি খাই চলো, তোমাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
অন্তরা নীরবে মাথা ঝাঁকিয়ে স্বপ্নের প্রস্তাবে সায় জানায়।
কফির অর্ডার দিয়ে দু’জন একটা টেবিল দখল করে নিয়ে বসে। অন্তরার উশখুশে ভাব দেখে স্বপ্নর মনে হলো অন্তরা তাকে কিছু বলতে চায়।
– কিছু বলবে অন্তরা?
– না মানে… আপনি স্পন্দনকে চেনেন?
– হ্যাঁ , কেনো স্পন্দন তোমাকে কিছু বলেনি ?
অন্তরা বিস্মিত কণ্ঠে বলে,
– আপনার ব্যাপারে? কই নাতো! আম্মার সাথে আপনার কনভার্সেশন শুনে আমার মনে হল চেনেন তাই জিজ্ঞাসা করলাম।
স্বপ্ন মনে মনে একটু অবাক হয়। সেদিন স্পন্দনের সাথে দেখা হবার পর রাগারাগি করে যখন ফিরছিল তখন হঠাৎই পেছন থেকে কে যেনো ওর ওপর হুড়মুড় করে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাল সামলাতে না পেরে দুজনই রাস্তার পাশের আইল্যান্ডে গিয়ে পড়ে তারা। আর তখনই একটা বাস ওদের গা ঘেঁষে চলে যায় দ্রুত গতিতে। স্বপ্ন বুঝতে পারে ও যাতে বাসের নীচে চাপা না পড়ে সেজন্যই লোকটা এমনটা করেছে।
– ধন্যবাদ।
গায়ের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে লোকটার দিকে চেয়ে চমকে ওঠে স্বপ্ন।
– একি আপনি !!
– আর একটু হলেই তো গিয়েছিলেন!
স্পন্দন হেসে বাকিটুকু না বলে হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দেয়।স্পন্দনের এহেন আচরণে স্বপ্ন ভীষণ অবাক হয়! একটু আগে যাকে এতকিছু বলে যাচ্ছেতাই অপমান করে এলো, সেই ছেলে কি মনে করে নিজের জীবন বাজী রেখে ওকে বাঁচাতে এলো!
সে বিব্রত কন্ঠে স্পন্দনের কাছে জানতে চায়,
– আপনি কি ভেবে এত বিপদ মাথায় নিয়ে আমাকে বাঁচালেন, বলুন তো ? হিসেবের একটু এদিক সেদিক হলে তো আপনিও মরতে পারতেন! তাছাড়া আমি মরলে তো আপনার রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যেতো, তাই না?
স্বপ্নের কথায় স্পন্দন জোরে জোরে হেসে ওঠে ।
– ভাইরে, কাউকে ল্যাং মেরে ফেলে রেসে জিতা আমার স্বভাব না। তাছাড়া অন্তরা আমাকে ভালোবাসে তাই আপনার থাকা না থাকা আমার জীবনে তেমন কোনো মানে রাখে না। যদি সত্যিই অন্তরাকে ভালোবাসতেন, তবে জানতেন সত্যিকারের ভালোবাসা গড়তে জানে …ছাড়তে জানে, কিন্তু ভাঙ্গতে জানে না। ভালোবাসার মানে জাপটে ধরা না, আঁকড়ে ধরা। এনিওয়ে, ভালো থাকবেন।
অত্যন্ত সহজ কন্ঠে কথাগুলো বলে হাসিমুখে স্বপ্নের দিকে হ্যান্ড শেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সেদিন স্পন্দন। সেদিন স্পন্দনের অদ্ভুত আচরণে স্বপ্ন যেমন অবাক হয়েছিল তেমনি তার বলা প্রতিটি কথা স্বপ্নের মর্মে মর্মে গিয়ে বেঁধে। তাইতো! অন্তরা তো তাকে নয়, স্পন্দনকে ভালোবাসে। তাহলে এত কৌশলে জোর করে তাকে ছিনিয়ে এনে লাভ কি, যদি তার মনটাই পাওয়া না গেলো! সবচেয়ে বড় কথা, যেই ছেলের ভালোবাসায় এত জোর তার সাথে স্বপ্ন কোন হাতিয়ার নিয়ে যুদ্ধে নামবে? তার চেয়ে তো তাকে পথ ছেড়ে দেয়াই ভালো।
স্বপ্ন ভেবেছিল স্পন্দন অন্তরাকে সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে সব বলেছে। অন্তত স্পন্দনের জায়গায় স্বপ্ন হলে তো তাই করতো।বরং হয়তো আরো বাড়িয়ে বানিয়ে বলতো। অথচ স্পন্দন অন্তরাকে কিছুই বলেনি। এমনকি স্বপ্নই যে কুরুচিপূর্ণ ছবি পাঠিয়ে ওদের ব্যপারটা আঙ্কেল আন্টিকে জানিয়ে দিয়েছে সেটাও সম্ভবত অন্তরাকে বলেনি স্পন্দন। সে অন্তরাকে চেনে, অন্তরা যদি জানতে পারত এমন একটা নীচ কাজ স্বপ্ন করেছে। তাহলে স্বপ্ন এরপরে যত ভাল কাজই করুক না কেন অন্তরা তার সঙ্গে আর জীবনেও কথা বলতো না। এই যে অন্তরা আজ তার সাথে বসে কফি খাচ্ছে, আন্তরিক ভঙ্গিতে কথা বলছে… এর সবটুকু সার্থকতা স্পন্দনের। মনে মনে লজ্জিত বোধ করে স্বপ্ন। সে অন্তরাকে বলতে চায়,স্পন্দনই তোমার যোগ্য অন্তরা। আমি বড় নীচ হীন কুটিল … আমার মত ছেলে তোমার মত নিষ্পাপ মেয়ের যোগ্য নয়।
বাস্তবে তার কিছুই বলা হয় না , কেননা হাজার চাইলেও স্বপ্ন কখনো স্পন্দন হতে পারবে না।
***
অন্তরার বাবা সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেছেন সপ্তাহখানেক হবে। অফিস থেকে এক মাসের ছুটি নিয়েছেন তিনি। তবে এই এক সপ্তাহেই তিনি বিরক্ত হয়ে গেছেন। এভাবে শুয়ে বসে সময় কাটানোর অভ্যাস তার নেই , তাই অলস সময়গুলো কিছুতেই যেনো কাটতে চায় না তার।
বিকেলে ছাদে গেলেন একটু হাঁটবেন বলে। ছাদে গিয়ে দেখেন অন্তরা দোলনায় বসে আছে চুপচাপ। কদিন ধরেই তিনি খেয়াল করছেন মেয়েটা কেমন যেনো চুপচাপ হয়ে গেছে! হসপিটালে ডিউটি শেষে বাড়ি ফিরে সবসময় মনমরা হয়ে ঘরে বসে থাকে।
মুশফিক সাহেব সস্নেহে মেয়ের মাথায় হাত রাখেন।
চমকে তাকিয়ে অন্তরা বলে,
– আব্বা তুমি ? কখন আসছো টেরই পাইনি।
– তুই এখানে এমন চুপচাপ বসে আছিস কেনরে মা ? মন খারাপ ?
– না আব্বা…. এম্নিই! আসলে ডিউটি থেকে ফিরেছি তো একটু আগে, তাই একটু টায়ার্ড লাগছে। চা খাবে আব্বা ? চা নিয়ে আসি?
মুশফিক সাহেব দরাজ কণ্ঠে বলেন,
– নিয়ে আয়, চা খেতে খেতে না হয় বাপ্ বেটিতে একটু আড্ডা হয়ে যাক্।
অন্তরা চায়ের কথা বলতে উঠে দাঁড়ায়।
– স্পন্দনের খবর কি অন্তু?
অন্তরা যাবার জন্য পা বাড়িয়েছিল কিন্তু হঠাৎ স্পন্দনের প্রসঙ্গ আসাতে চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়ে, তবে কিছু বলেনা।
– সেদিন এতসব হয়ে গেলো… ওর সাথে তো ঠিকমতো কথাই বলা হল না! ওকে একবার বাসায় আসতে বলবি? কথা ছিলো।
অন্তরা চমকে বাবার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে, তারপর শান্ত কণ্ঠে বলে,
-ওকে, স্পন্দনকে আমি বলবো আব্বা।
বলেই আর দাঁড়ায় না অন্তরা। কিছুক্ষণ পর মুশফিক সাহেব দেখেন সাবিনা চায়ের কাপ নিয়ে উপরে আসছেন। মুশফিক সাহেব একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়েন। মেয়েটার মনমরা হয়ে থাকার কারণ বোধহয় তিনি ধরতে পেরেছেন।
চলবে ….
#আফসানানীতু