আমার_শহরে_তুমি পর্ব ১৮+১৯

#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৮
,,,,,,,,
,,,,,,,,
রক্তিম তার কথা শেষ করে আমার চেয়ারের পাশে এসে দাড়ায় তারপর সেই আন্টিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
~দেখেন,আন্টি আপনার সাথে আমি এভাবে কথা বলতে চাইনি কিন্তু আপনি আমাকে বাধ্য করেছেন।আর রইলো কথা আমার মায়ের আমি তাকে খুব ভালো মতো বুঝিয়ে দিবো।
রক্তিমের কথা শেষ হতেই আন্টির মুখমন্ডলের দিকে তাকালাম এমন মনে হচ্ছে আকাশের যতো মেঘ আছে তার মুখে এসে পরেছে।আন্টি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন,
~রক্তিম,তুমি ভুল ভাবছো আসলে আমি এভাবে বলতে চাইনি।
রক্তিম বললো,
~আর আমি এখন কিছু ভাবতে চাইছিও না প্লিজ আপনি রাহির বিয়ে enjoy করুন।
রক্তিমের কথা শেষ হতেই আন্টি মাথা নিচু করে চলে যাই।আন্টি চলে যেতেই রক্তিম আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললেন,
~তোমার পা কী ব্যাথা করছে?
আমি বললাম,
~না।
রক্তিম বললো,
~আন্টির কথায় মনে কিছু করে লাভ নেই কারণ এমন মানুষের কাজই এগুলো তাই অধরা মুখে হাসি নিয়ে আসো।আর সাবিহা কোথায়?এই মেয়েকে তো আমি
বলেই সে দাড়িয়ে পড়লেন তারপর ফোন বের করে সাবিহাকে ফোন করলেন।সাবিহা ফোন রিসিভ করতেই রক্তিমের ধমকে বললেন,
~এই মেয়ে কোথায় তুই?হি হি করতে থাক তুই তোর complain যদি না করেছি তোর মায়ের কাছে আমার নাম রক্তিম রায়জাদা না।৫মিনিটে অধরার কাছে আয়
কথা শেষ করেই ফোন কেটে দিলেন।আমি রক্তিমের ধমক শুনেই শুকনো ঢোক গিললাম।আসলেই সাবিহা ৫মিনিটে চলে এসেছে মেয়েটা যে দৌড়ে এসেছে তা তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।রক্তিমকে দেখে সাবিহা ভয়ে ভয়ে আমার কাছে চলে আসে রক্তিম সাবিহার দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন,
~এখন যদি অধরাকে ছেড়ে এখান থেকে সেখানে যাস তোর বিয়ে করার শখ তোর বাবার কানে চলে যাবে।
রক্তিম তার কথা শেষ করে সামনে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিয়ে হাঁটা শুরু করলেন। আর তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে রইলো সাবিহা কিছুক্ষন সেভাবে তাকিয়ে থেকে আমার দিকে ফিরে কাঁদো কাঁদো গলায়,
~তোমার বর ফাজিল দেখেছো কীভাবে ভয় দেখালো?
আমি সাবিহার কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠলাম।

,,,,,,
,,,,,,
বরযাত্রা এসে পরেছে সেখানেই এখন সবার আকর্ষণ সাবিহা আমাকে ছেড়ে যেতে পারছেন না কিন্তু মেয়েটা সেখানে যাওয়ার জন্য উশখুশ করছে।আমি সাবিহাকে বললাম,
~তুমি যাও সাবিহা।
সাবিহা বললো,
~একটুও না।
আমি আর কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম হঠাৎ রাতকে দেখলাম আমার দিকে আসছে রাত আমার এখানে এসে একবার সাবিহার দিকে তারপর আমার দিকে তাকালো।সাবিহা রাতকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
~রাত ভাই তুমি এখানে?
রাত বললো,
~ওইখান টায় অনেক ভীর তাই এখানে চলে আসলাম।
রাত কথা শেষ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~অধরা,কালকের জন্য সরি i don’t want to hurt you.it’s just a accident.
রাতের কথা শুনে বললাম,
~it’s ok.আমি অসাবধানতার জন্য ব্যাথাটা পেয়েছি।
রাত আর কিছু না বলে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলো।আমিও সাবিহার সাথে কথা বলতে শুরু করলাম
আমার এখন বোর লাগছে রাহি আর অভিকে একসাথে কেমন লাগছে কে জানে?সবাই তাদেরই দেখতে ব্যস্ত।আমার আর সাবিহারই কপাল খারাপ। নাহ এভাবপ বসে থাকলে হবে না আমাকে রক্তিমের সাথে কথা বলতে হবে আমিও তো রাহি আর অভিকে দেখতে চাই।এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখ গেলো সামনের দিকে রক্তিম কারো সাথে কথা বলছে তাকে দেখেই আমি জোরে তার নাম ধরে ডেকে উঠলাম,
~রক্তিম রক্তিম।
রক্তিম আমার গলা শুনে আমার দিকে তাকালো আমি তাকে হাতের ইশারায় আমার কাছে আসতে বললাম।
রক্তিম আমার ইশারা বুঝতে পেরে এখানে চলে আসলো এসেই সাবিহাকে বললো,
~তুই যা ওখানে তোর প্রয়োজন।
সাবিহা যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েও আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~ভাবীকেও নিয়ে যাই।একটু দেখে চলে আসবে তুমি তো আছোই নিয়ে আসবে আবার এখানে।
সাবিহার কথায় রক্তিম কিছুক্ষন ভেবে বললেন,
~ঠিক আছে।
রক্তিমের কথা শুনে ৩২টা দাঁত বের করে একটা হাসি দিলাম।রক্তিম আমার সেই হাসি দেখে বললেন,
~কবুল পড়াবে তাই যেতে দিচ্ছি।কবুল পড়ানো শেষ আপনি আবার এখানে এসে পরবেন।
এই কথা বলে তার হাত আমার সামনে এগিয়ে দিলেন।আমি হাসি বন্ধ করে তার হাতে হাত দিয়ে উঠে দাড়ালাম স্টেজের সামনে নিয়ে গেলেন আমাকে অভিকে কবুল বলতে বলছেন কাজী সাহেব অভি ২সেকেন্ডও সময় নেয়নি এক নিশ্বাসে কবুল বলে দেয়।রাহি একটু সময় নেয় কান্নাকাটিও অনেক করে শেষ পর্যন্ত সেও কবুল বলে দেয়।রাহির সাথে অভির বিয়েটা হয়েই গেলো রক্তিম এখনো আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন।আমি তার দিকে তাকাতেই সে বললো,
~অধরা,তুমি খুশি তো ওদের বিয়ে দেখে।
আমি বললাম,
~জ্বী।
রক্তিম কিছু না বলে সামনের দিকে তাকালো।আমি মনে মনে ভাবছি আজ আপনিও অনেক খুশি হবেন যখন আমার মনে কথা জানবেন। রাহি আর অভি যেমন নিজের ভালোবাসার পূর্ণতা পেয়েছে তেমনি আমার আর আপনার ভালোবাসারও পূর্ণতা পাবে।
বিয়ের কার্যক্রম শেষ হলে আমি রাহি আর অভিকে অভিনন্দন জানিয়ে আবার নিজ জায়গায় এসে বসে পরি।মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১২.৪০মিনিট কিছুক্ষন পর হয়তো বিদায় হয়ে যাবে।সাবিহাকে দেখলাম আমার কাছেই আসছে।আমার সামনে এসে মেয়েটা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। তার কান্না দেখে আমি ভয় পেলাম সাবিহাকে জিজ্ঞেস করলাম,
~কী হয়েছে?
সাবিহা বললো,
~আপুর বিদায় হয়ে যাবে এখনই।
সাবিহার কথা শুনে নিজেরই এখন কান্না পাচ্ছে।আমি সাবিহার সাহায্যে বাগান বাড়ির বাহিরে চলে আসলাম রাহি তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে এই দৃশ্য দেখে নিজেরই খারাপ লাগছে।এই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম সময় নিজের মেয়েকে অন্যের ঘরে তুলে দেওয়া।আমি খেয়াল করালাম আমার চোখের পানি দিয়ে গাল দুটো ভিজে গেছে।রাহির নজর আমার দিকে পরতেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম রাহি চলে গেলো তার নতুন জীবন শুরু করতে যেখানে তার ভালোবাসার মানুষ আছে। এখন রাহিরও একটা সংসার হবে সুখের সংসার অভির ভালোবাসায় যাতে সে খুশি থাকে এটাই দোয়া রইলো আমার।

,,,,,,
,,,,,,,
রক্তিম সব কাজ গুছিয়ে আমার কাছে এসে পরলো আমরা সবাইকে বিদায় জানিয়ে রওনা হলাম বাসার উদ্দেশ্যে।বাবা আজ রায়হান চাচ্চুর সাথে থাকবে আর রাত অনেক আগেই চলে গেছে।আমি আর রক্তিম বাসায় ফিরছি একা রক্তিম গাড়ি ড্রাইভ করছে আর এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করছে।আমি তার দিকে আড়চোখে বার বার তাকাচ্ছি আর ভাবছি বাসায় গিয়ে কী থেকে কী করবো?রক্তিম আমার দিকে একবার তাকিয়ে বললেন,
~কিছু বলবে তুমি?
আমি বললাম,
~কী বলবো?
রক্তিম বললো,
~আমার মনে হলো তুমি কিছু বলবে।
আমি কিছু না বলে বাহিরের দিকে নজর দিলাম।রক্তিমের সাথে এখন কথা বলতেও অনেক লজ্জা লাগছে।এতো লজ্জা কেন রে ভাই আমার নিশ্চিত এমন লজ্জার কথা কেউ জানলে আমার উপরে সব পাবলিক হাসবে।বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মনোরম পরিবেশ রাতের নির্জন রাস্তা আশেপাশে কেউ নেই বাতাসের সো সো আওয়াজ আসছে।রাতের শহর আরো সুন্দর লাগছে আজকাল আমার আবার সবকিছুই সুন্দর লাগছে কারণ হয়তো এই যে আমার পাশে যে ড্রাইভ করছে,আমার বর রক্তিম।বাসায় পৌছে আমি গাড়ির দরজা খুলে বাসার ভিতরে ডুকে পরলাম একবার ভাবলাম দাদীর রুমে যাই তারপর ভাবলাম থাক রাত অনেক হয়েছে তিনি ঘুমিয়ে আছেন।তাই সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম রক্তিম এখনো আসেননি।আমি জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করলাম তারপর কার্বাড থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকলাম মুখে অনেকক্ষন পানি ছিটালাম আয়নার দিকে তাকিয়ে ভাবছি,
~আচ্ছা এতে এতো ভাবার কী আছে?আমারই তো বর তাকেই তো শুধু তিনটি ওয়ার্ড বলতে I love you।এতে লজ্জা পাওয়ার কী হলো?আমি একদম লজ্জা পাবো না এখন বাহিরে গিয়েই রক্তিমকে বলে দিবো।
শাড়ি চেঞ্জ করে বাহিরে এসে দেখি রক্তিম একহাত মাথায় দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন।আমার উপস্থিতি বুঝতে পেরে সে চোখ খুলে উঠে বসলো তারপর কার্বাড থেকে শার্ট আর টাউজার নিয়ে যেই না ওয়াশরুমে ডুকতে যাবে আমি তার হাত ধরে ফেললাম।
রক্তিম ভ্রুকুচকে তার মাথা একদিকে হেলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~কী হয়েছে?
আমি শুকনো ঢোক গিলে তার হাত ছেড়ে দিয়ে বললাম,
~একটা কথা বলতাম আর কি।
রক্তিম আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে বললেন,
~বলো কী বলবে?
রক্তিমের এহেন কান্ডে আমি বাকরুদ্ধ এই ছেলেটা এখন আমাকে লজ্জা দিতে দিতে মার্ডার করবে।অসভ্য একটা এখন আমি কীভাবে বলি নিজের মনের কথা।রক্তিম আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললেন,
~কী হলো বলো তো কী বলবে।
রক্তিমের কথায় আমি হেসে বললাম,
~আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন তারপর বলছি।
রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
~ওকে আমার বউ যেভাবে বলবে তাই করা হবে।
বলেই আমার গাল টেনে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।আমি বিছানায় পা গুটিয়ে বসে গালে হাত দিয়ে ভাবছি কীভাবে বলবো মুখ দিয়ে তো কথাই বের হচ্ছে না।
রক্তিম ওয়াশরুমে ঝর্নার নিচে দাড়িয়ে আছে সে বুঝতে পেরেছে তার প্রিয়তমা তাকে কী বলতে চায়।তাই তো সে অধরাকে সময় দিয়েছে যাতে অধরা তার লজ্জা কাটিয়ে নিজে রক্তিমের কাছে আসে।হয়তো আজই সেই রাত ভালোবাসি শব্দটা যখন অধরার মুখ থেকল শুনবে তখন হয়তো রক্তিম নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না।এসব ভাবতেই রক্তিমের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো রক্তিম শাওয়ার শেষ করে শার্ট আর টাউজার পরে মাথা মুছতপ মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে আর দেখে অধরা গালে হাত দিয়ে বসে আছে।রক্তিম মুচকি হেসে অধরার কাছে এসে টাওয়ালটা কোলে দিয়ে দেয় আর নিচে বসে পরে আর অধরাকে বলে,
~অধরা,মাথাটা মুছে দেও।
আমি ভাবনায় মসগুল তখনই রক্তিম আমাকে বললো মাথাটা মুছে দিতে।আমি টাওয়াল হাতে নিয়ে রক্তিমের মাথা মুছে দিতে থাকলাম তখনই রক্তিম বললো,
~এখনতো বলো কী বলতে চাও?
আমার হাত অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়
টাওয়ালটা বিছানার একপাশে রেখে মাথানিচু করে রাখলাম।এখন আমার কান্না পাচ্ছে আমি এতো অধম কেন?রক্তিম আমার পাশে বসে আমার গালে হাত দিয়ে মুখ তুলে বললেন,
~ভালোবাসি অধরা অনেক অনেক ভালোবাসি।
রক্তিমের মুখে এহেন কথা শুনে আমার বুকটা ধুকপুক শুরু করলো।

,,,,,,,
,,,,,,,
রক্তিম আমার নীরবতা দেখে বললেন,
~তোমার কাজটা আমি সহজ করে দিলাম তবুও তেমার মুখ থেকে সেই মনোরম কথাটা শুনতে পারলাম না।
কথা শেষ করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে যেই না উঠতে যাবে আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
~আমিও আপনাকে খুব খুব ভালোবাসি।
I love you Roktim Rayjada.
রক্তিমের মনে হলো সে স্বপ্ন দেখছে অধরা তাকে I love you বলেছে।রক্তিম আর কিছু না ভেবে অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে মুখ গুজে ঠোঁট ছুয়াতে থাকলেন।
রক্তিমের স্পর্শ পেয়ে আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে এ কেমন অনূভুতি মনের ভিতর অন্য এক শিহরণ কাজ করছে।রক্তিম আমার ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমার উপর ঝুঁকে বললেন,
~আজ কী তোমাকে আমি নিজের করে নিতে পারবো?
সেই অনুমুতি কী তুমি দিবে আমাকে।
আমি কিছু না বলে চোখ দিয়ে ইশারা করে সম্মতি জানাতেই রক্তিম মুচকি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।আমার চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো।এই পানি সুখের নিজের ভালোবাসাকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দ এই রাতটা যদি এখানেই থেমে যেতো।
আজ রাতে রক্তিম আর অধরা এক হয়ে গেলো এই রাতটা তাদের জন্য শ্রেষ্ঠ রাত।রক্তিম যে আজ অধরাকে একদম নিজের করে পেলো তার ভালোবাসার জয় হলো।অধরার মান-অভিমান মিটিয়ে আজ সে অধরাকে পেয়েছে।
আজকের রাত তাদের জন্য সুখ নিয়ে এসেছে।আগামীকাল কী হবে কেউ জানে না আর তারা জানতেও চায় না সকল সমস্যা এখন তারা মিটিয়ে নিতে পারবে কারণ দুজনই এখন ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ কেউ তাদের আলাদা করতে পারবে না।রক্তিম আগলে রাখবে তার অধরাকে ভালোবাসা দিয়ে
রাতের এই নির্জনতায় দুজন ব্যস্ত তাদের ভালোবাসার শহর গড়তে।
#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৯
,,,,,,
,,,,,
সকালের শুভ্রতা চারদিকে ছড়িয়ে পরেছে সূর্যের রোদে আলোকিত চারপাশ পাখিরা নিজের সুরে গান গাইছে।
মানুষ ব্যস্ত হয়ে গেছে নিজ নিজ কাজে।ছোট ছোট পাখি গুলো নীড় ছেড়ে এই খোলা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। সকালের এই সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় এই মিষ্টি রোদ গায়ে পরলেই আলাদা শিহরণ জেগে উঠে।
সকালের আলো জানালাভেদ করে ঘরে ডুকেই অধরার চোখে মুখে পরে আর মোবাইলের এর্লাম টাও বেজে উঠে।অধরা চোখ বন্ধ রেখেই মোবাইল বেড সাইড থেকে নিয়ে এর্লাম বন্ধ করলো।অধরা চোখ পিট পিট করে খুলে দেখলো রক্তিমের মাথা তার বুকে অধরা আসতে আসতে বুঝতে পারলো তার শরীর ওপর চাউলের বস্তার মতো ভারি কিছু আছে।সে ভালো মতো চোখ কচলে দেখলো রক্তিম তার উপর শুয়ে এরকম অবস্থা দেখে সে প্রথমে একটু অবাক হলেও গতকাল রাতের কথা মনে করতেই তার গাল লাল হয়ে গেছে।অধরা রক্তিমকে আসতে আসতে করে নিজের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু ফলাফল রক্তিম তাকে আরো শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলছে।
আমার ঘুম ভাঙ্গতেই কাল রাতের কথা মনে পরে গেলো।গতকাল রাতটা কতো না সুন্দর ছিল রক্তিমকে আমার মনের কথা বলে দিয়েছি। রক্তিমও আমাকে নিজের করে নিয়েছে এসব ভাবতেই আমার লজ্জা লাগছে হঠাৎ ঘড়ির দিকে খেয়াল করে দেখলাম সকাল ১০টা আমি রক্তিমকে নিজের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করতেই রক্তিম আমাকে আরো নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে।অনেক চেষ্টার পর আমি সফল হলাম রক্তিমকে খাটের অন্যপাশে শুইয়ে দিলাম ঠিকঠাক ভাবে রক্তিম আবারো উল্টো হয়ে শুয়ে পরলো।চুলগুলো হাত খোঁপা করে বিছানা ছেড়ে উঠে পরলাম তারপর একটা শাড়ি নিয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুম। শাওয়ার নিয়ে শাড়ি পরে বের হয়ে আসলাম বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি রক্তিম এখনো উপুর হয়ে শুয়ে আছে।রক্তিমকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে সস্বতির নিশ্বাস ছাড়লাম আজ সারাদিনেও আমি তার পাশে ঘুরবো না।আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছে সুন্দর করে খোঁপা করে রুম থেকে বের হয়ে সোজা চললাম রান্নাঘরে। নাস্তা তৈরি করতে করতে একবার রান্নাঘরের বাহিরেও চোখ বুলিয়ে নিলাম নাহ বাসার কেউ এখন পর্যন্ত উঠেনি।নাস্তার জন্য আলু ভাজি তৈরি করে আমি পরোটা বেলতে শুরু করলাম সার্ভেন্টরা যে যার কাজ করছে।নাস্তা টেবিলে সাজিয়ে আমি চলে গেলাম দাদীমার রুমে সে ঘুমিয়ে আছে নিশ্চন্তে তার দিকে তাকাতেই ভাবতে লাগলাম একসময় আমরা এমন বুড়ো হয়ে যাবো তখন না থাকবে সৌন্দর্যের অহংকার না থাকবে কোনো অধিকার।ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলাম বাগানে রক্তিমদের বাড়ির পিছনের সাইডে ছোট একটি বাগান।বাগানে হেঁটে হেঁটে ফুল গাছ গুলো ছুয়ে দিচ্ছি কিছুক্ষন আগেই হয়তো পানি দেওয়া হয়েছে তাই একটু ভিজা ভিজা লাগছে।সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে নয়নতারা গাছটা সূর্যের রশ্মিটা একদম সেই ফুলে গিয়েই পরেছে উজ্জ্বলতা আরো বেড়ে গেছে।কিছুক্ষন সেখানে কাটিয়ে আবার বাড়ির ভিতরে ডুকে পরলাম।
বাসায় ডুকেই দেখি সাহারা রায়জাদা নাস্তার টেবিলে একা বসে আছে।হয়তো সবার অপেক্ষা করছে আমি গিয়ে টেবিলের পাশে দাড়ালাম তার প্লেটে খাবার দিবো তখনই সে বলে উঠলো,
~আমি পরোটা খাইনা। এতে আমার গ্যাসট্রিকের প্রবলেম হয়।
আমি বললাম,
~তাহলে কী রুটি বানিয়ে দিবো?
সাহারা রায়জাদা কোনো জবাব দিলেন না আমি রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম সে পিছন থেকে বলে উঠলো,
~কোনো প্রয়োজন নেই তোমার বানানোর।আমি সার্ভেন্টকে বলে দিয়েছি সে বানিয়ে দিবে।তোমার সাথে কথা ছিল
আমি মনে মনে ভাবলাম,
~আমার সাথে ওনার আবার কীসের কথা?
মনের কথা মনে রেখেই আমি বললাম,
~কী কথা?
সাহারা রায়জাদা পানির গ্লাস থেকে একটু পানি পান করে বললেন,
~দেখো তোমার বিয়ে যেভাবেই হোক না কেন তুমি এ বাড়ির বউ তাই তোমার কিছু কর্তব্য আছে যা তোমার পালন করতে হবে।
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
~আমি অবশ্যই আমার কর্তব্য পালন করবো।
সাহারা রায়জাদা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন,
~রাত তোমার দেবর আর দেবরের শশুরবাড়িতে বড় ভাবির যাওয়াটা প্রয়োজন।সারার বাবা-মা চায় আমরা সবাই তাদের বাসায় আজ রাতের ডিনার করি তাই তোমার যাওয়াটা আমি আশা করছি।
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~আমি অবশ্যই যাবো।
সাহারা রায়জাদা বললো,
~রক্তিমকে বলে দিও আজ রাতে যেন কোনো প্রোগ্রাম না রাখে।
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালাম।

,,,,,,,
,,,,,,
রক্তিম ঘুম থেকে উঠে শোয়া থেকে উঠে বসে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে অধরাকে খুজছে।ওয়াশরুমের দরজা বাহির থেকে বন্ধ আর বারান্দার দরজাও রক্তিম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১১.৩০ আজ ছুটির দিন তাই তার কোনো প্যারা নেই।রক্তিম বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো কিছুক্ষন পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে অধরাকে দেখার জন্য সে মাথা মুছতে মুছতে সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে।অধরা দাদীমার রুমেই হবে তাই সে কোনো কিছু না ভেবে দাদীমার রুমে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখে দাদীমা বসে আছে বিছানায় পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে কোথাও অধরাকে পেলো না।দাদীমা মাথা তুলে দেখলেন রক্তিম তার ঘরে উঁকিঝুঁকি করছে।দাদীমা রক্তিমের এ অবস্থা দেখে বললেন,
~কীরে,ভাই কিছু বলবি?
রক্তিম দাদীমার ঘরে ডুকে বললো
~তোমার প্রিয় অধরাকে খুজে পাচ্ছিনা কই আছে জানো নাকি?
দাদীমা মিটমিট করে হেসে বললেন,
~তোর বউ শাশুড়ীর সাথে মার্কেটে গিয়েছে।
রক্তিম হা হয়ে দাদীমার দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষন পর সে বললো,
~এ আমি বিশ্বাস করি না দাদীমা তুমি কী বলছো?
দাদীমা খিলখিল করে হেসে বললেন,
~তোর ছায়াছবির ডায়লগ শেষ হলে নাস্তা করে ঘরে যা।
রক্তিম বললো,
~এটা কীভাবে হলো এটাতো বলো?
রক্তিমের কথায় দাদী বললো,
~সারাদের বাসায় রাতে দাওয়াত দিয়েছে তাই তোর মা আর তোর বউ তাদের জন্য মার্কেটে গিয়েছে গিফট কিনতে।
রক্তিম বললো,
~আচ্ছা সকাল সকাল এতো বড় সারপ্রাইজ দেওয়ার কোনো মানে আছে।
এতটুকু বলে রক্তিম দাদীমার রুম থেকে বিড়বিড় করতে করতে বের হয়ে গেলো।তার এখন অধরার উপর অনেক রাগ লাগছে তাকে বলে গেলে কী হতো?
কতক্ষন ধরে পাগলের মতো অধরাকে খুজে যাচ্ছি।এসব ভাবতে ভাবতে রক্তিম টেবিলে বসে পরলো আর পরোটা প্লেটে নিয়ে চিবুতে লাগলো। হঠাৎ রাত সেখানে এসে রক্তিমকে বললো,
~ভাইয়া আজকে সারাদের বাসায় যাবো আমরা সবাই তোমায় আর অধরাকেও যেতে হবে।সারা তোমাদের especially invite করতে বলেছে।
রাতের কথা শুনে রক্তিমের চোখ তার কোটর থেকে বের হওয়ার উপক্রম রক্তিমের এহেন অবস্থা দেখে রাত অবাক হয়ে বললো,
~কী হয়েছে?ভাইয়া তুমি ঠিক আছো।
রক্তিম বললো,
~সকাল থেকে তোরা যেমন করছিস কোন সময় আমার যেন হার্ট আট্যাক হয়ে যায়।
রাত ভ্রুকুচকে বললো,
~ভাইয়া এসব কেমন কথা?
রক্তিম বললো,
~অধরা যাবে কারণ মায়ের সাথে সে মার্কেট গিয়েছে সারাদের বাড়িট সবার জন্য কেনাকাটা করতে।আর অধরা যেখানে যাবে সেখানে আমি অবশ্যই যাবো।
রাত বললো,
~আমি তোমার কথা শুনে খুশি হলাম।
রক্তিম আর কিছু না বলে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

,,,,,,
,,,,,,
দুপুর ১.৩০মিনিট আমি আর সাহারা রায়জাদা শপিং থেকে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় আসতেই সোফার রুমে চোখ পরলো সাবিহা এসেছে।সাবিহা বসে বসে রক্তিম রাত আর দাদীমার সাথে কথা বলছে আমার দিকে ওর চোখ পরতেই চেচিয়ে বললো,
~ভাবি এসেছে।
বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো আমি তার পিঠে হাত বুলিয়ে বললাম,
~কখন এসেছপ আমার ননদীটা?
সাবিহা বললো,
~পাক্কা ১২টায় রাহাত চাচ্চুর সাথে এসেছি।
আমি বললাম,
~তোমাকে দেখে অনেক খুশি মনে হচ্ছে।কী খবর?
সাবিহা বললো,
~আমার এডমিশন তোমার ভার্সিটিতে হয়ে গেছে।তুমি এখন আমার সিনিয়র +ভাবি।
সাবিহার কথায় আমি অনেক খুশি হলাম তাকে বললাম,
~এতো অনেক খুশির খবর।সাবিহা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তুমি বসো।
কথা শেষ করেই আমি ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে যেই উপরে যেতে নিবো রক্তিমের দিকে চোখ পরলো সে কটমট করছে রেগে আর বিড়বিড় করে কিছু বলছে।
নির্ঘাত আমাকে শায়েস্তা করার প্ল্যান করছে।আমি এক হিসেবে দৌড়ে রুমের ভিতর চলে আসলাম যেই না রুমের দরজা লাগাতে যাবো তখনই রক্তিম দরজা ধরে ফেললো আমি তাকে দেখে শুকনো ঢোক গিললাম।রক্তিম আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিলো আর সে রুমে ঢুকে পরলো।রক্তিমকে দেখে আমার ভয় আরো বেড়ে গেলো সে দরজা বন্ধ করে হাতগুলো তার বুকে গুজে দরজার সাথে হেলান দিয়ে আছে।আমি একবার তার দিকে তাকিয়ে মাথা আবার নিচু করে ফেললাম রক্তিম শান্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,
~মিসেস অধরা,আপনার সাথে এখন কী করা যায়?
আমি তার কথার কোনো জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে আছি।রক্তিম আমার জবাব না পেয়ে বললেন,
~তোমার অবস্থা দেখে একটা গান মনে পরছে।
মার দিয়া যায় ইয়া ছোড় দিয়া যায় বোল তেরে সাথ ক্যা সুলুক কিয়া যায়।
রক্তিমের এহেন কথায় আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম।তবুও সাহস নিয়ে মাথা উঁচু করে বললাম,
~কী করেছি আমি?
রক্তিম কিছু না বলে আমার দিকে এক-পা দু-পা করে এগিয়ে আসতে থাকলো।তার এভাবে আগানো দেখে আমি পিছিয়ে যেতে থাকলাম একপর্যায়ে আমার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেলো রক্তিম আমার একদম কাছে এসে আমার দুপাশে হাত দিয়ে আটকিয়ে দিলো।তারপর বললো,
~এখন কী হবে?
আমি অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।রক্তিম আমাকে বললো,
~আমি সকাল থেকে পাগলের মতো আপনাকে খুঁজেছি ওইটার প্রতিদান দিতে হবে।
আমি কাপাকাপা কন্ঠে বললাম,
~আমি কী বলিছি আমাকে খুঁজতে?
রক্তিম রাগী কন্ঠে বললো,
~আমার মুখের উপরে কথা বলা পছন্দ নয়।আমাকে একটু বলে গেলে কী হতো?
আমি বললাম,
~বলে তো যেতেই চেয়েছিলাম আপনি তো মটকা মেরে ঘুমিয়ে ছিলেন।
রক্তিম আমার কথা শুনে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই ঘরের দরজায় কেউ টোকা দেয়।রক্তিম পিছে ঘুরে তাকাতেই আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম সাবিহা দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখে হাসি হাসি মুখ করে বললো,
~ভাবি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো খাবার টেবিলে দেওয়া হয়েছে।
আমি বললাম,
~আচ্ছা।
সাবিহা আরো কিছু বলবে তার আগেই শাড়ি নিয়ে ভো দৌড় ওয়াশরুমে।

,,,,,,
,,,,,,,,
দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করে সাবিহার সাথে আড্ডা দিতে দিতে বিকেল হয়ে গেলো।সাবিহারও চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেলো সে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাতের সাথে তাদের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে চলে গেলো।সাবিহাকে কিছুদিন থাকতে বলেছিলাম কিন্তু সে বললো পরে এসে থেকে যাবে মেয়েটা অনেকই মিশুক ভালো লাগে ওর সাথে সময় কাটাতে।
সন্ধ্যার সময় আমি রেডি হচ্ছি সারাদের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে হঠাৎ একটা নাম্বার থেকে ফোন আসলো।আমি ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে বলে উঠলে,
~আমি সারা,
আমি বললাম,
~সারা তুমি ফোন দিয়েছো কোন বিশেষ কাজ?
সারা বললো,
~আজকে বাসায় আসবে তো?
আমি বললাম,
~জ্বী।
সারা বললো,
~তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
বলেই সে ফোন কেটে দিলো আমি কিছুই বলতে পারলাম না।

চলবে।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)
চলবে।।।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here