#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২২
,,,,,
,,,,,
ঘামে ভেজা শার্ট নিয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করলো রক্তিম।এদিক সেদিক নজর বুলিয়ে কার্বাড থেকে শার্ট আর টাউজার নিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে মাথা মুছতে মুছতে পুরো ঘরে অধরাকে খুজতে থাকে কোথাও না পেয়ে হতাশ হয়ে টাওয়াল রেখে চলে যায় দাদীমার রুমে সেখানে গিয়ে রক্তিম আরো বেশি হতাশ হয় কারণ অধরা সেখানেও নেই।রক্তিম এখন মনে মনে বলছে,
~কোথায় যেতে পারে মেয়েটা?
রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো তার মা রান্নাঘরে কী যেন করছে।সাহারা ছেলেকে এভাবে উঁকিঝুকি করতে দেখে মুচকি হেসে গলার স্বর উঁচু করে বলে,
~অধরা বাসায় নেই।বাবার বাসায় গিয়েছে রাতে হয়তো সেখানে থাকবে।
মায়ের এহেন কথা শুনে রক্তিমের মাথা পুরো হ্যাংঙ্গ হয়ে গেলো।অধরা বাসায় নেই আমাকে না বলে সে কীভাবে চলে গেলো আর আজ রাতে সে ফিরবেনা।কতোটা বেয়াদব মেয়ে একবার হাতের কাছে পাই তারপর বোঝাবো।এসব ভাবছে তখনই সাহারা ছেলের কাঁধে হাত রাখলো রক্তিম পিছনে ফিরে মাকে দেখে মুচকি হাসলো।সাহারা ছেলেকে বললো,
~অধরার বাসা থেকে ফোন এসেছিল যে তার বাবার একটু শরীর খারাপ হয়েছে তাই মেয়েটা তাড়াহুরা করে চলে গেলো।আর তোকে অনেকবার ফোন করেছে তোর ফোন বন্ধ আসছিল তাই আমি ওকে বললাম চলে যেতে
মায়ের কথা শুনে রক্তিমের সব অভিমান পানি হয়ে গেলো কিন্তু চিন্তাটা বেড়ে গেলো।অধরার বাবার শরীর কী বেশি খারাপ নাকি একবার দেখে আসতে হয় তাহলে।রক্তিম এই ভেবে মাকে বললো,
~মা,আমি অধরার বাসায় যাচ্ছি।
সাহারা ছেলের কথা শুনে অস্থির হয়ে বললেন,
~খেয়ে যা সারাদিন তো কী না কী খেয়েছিস?
মায়ের কথা শুনে রক্তিমের মনটা ভালো হয়ে গেলো কতবছর পর মা তাকে খাবার খাওয়ার অনুরোধ করলো।রক্তিমের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো সে চেয়ার টেনে বসে পরলো তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
~ক্ষুধা লেগেছে মা,খাবার দেও।
সাহারা নিজের ছেলের মুখে এমন কথা শুনে চটজলদি তার প্লেটে খাবার তুলে দিলো।রক্তিম তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে তা দেখে সাহারার মনটা ভরে গেলো।রাতও তাকে ক্ষমা করে দিবে এই মনোভাব নিয়েই সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভার্সিটি থেকে বাসায় যেয়ে মাকে ফোন করে জানতে পারি বাবার শরীর ভালো না তাই আমি বাবার বাসায় চলে আসি।রক্তিমকে অনেকবার ফোন করেছি কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিল তাই রক্তিমকে না জানিয়েই চলে আসি আজ হয়তো বাসায় যাওয়া হবে না তাই আমার রুমের বিছানাটা ঠিক করছি হঠাৎ বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো কেউ বারবার শুধু বেল দিচ্ছি আমি রুম থেকে বের হয়ে দরজা খুলে দিলাম।
,,,,,
,,,,,,
আর দরজা খুলেই দেখতে পাই রক্তিম এসেছে তার হাত ভর্তি ফলের ব্যাগ বুঝা যাচ্ছে বাজার থেকে এসেছে।
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রক্তিম বললো,
~তাকিয়েই থাকো তুমি idiot একটা।
তার ধমক খেয়ে আমি কেঁপে উঠলাম সঙ্গে সঙ্গে মা পিছন থেকে বললো,
~এই বলদ জামাইকে দরজার সামনে দাড় করিয়ে রেখেছিস কেন?
রক্তিম আর মায়ের বকা খেয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বললাম,
~আমাকে তোমরা বকছো কেন?
মা আমাকে সরিয়ে দিয়ে রক্তিমকে বললো,
~ভিতরে আসো বাবা,এই গাধীর কথায় কান দিয়ো না।
রক্তিম ভিতরে এসে ব্যাগ গুলো সাইডে রেখে মাকে বললেন,
~বাবা কোথায়?তার শরীর এখন কেমন?
মা বললো,
~এখন একটু ভালো আছে।বয়স হয়েছে তাই একটু আধটু সমস্যা হয়ে থাকে তিনি রুমেই আছে।
রক্তিম আমার হাতে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বললো,
~এটা রুমে নিয়ে যাও।এতে আমার কাপড় আছে আগামীকাল কাজে দিবে আমি বাবার সাথে দেখা করে আসি।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে হনহন করতে করতে বাবার রুমে চলে গেলো আমি শুধু হা করে তাকিয়ে রইলাম কী মানুষরে বাবা?এমন করে কথা বলছে যেন তাকে আমি মার্ডার করে এখানে এসেছি এখন সে ভুত হয়ে এসে আমার সাথে এমন করছে।
এসব ভাবতে রুমে চলে আসলাম শপিং ব্যাগটা কার্বাডে রেখে চলে গেলাম মায়ের কাছে
মা চুলোয় মুরগীর রোস্ট বসিয়েছে রাতের খাবারের জন্য মেয়ের জামাই এসেছে তার জন্য তো সব ইস্পেসিয়াল করতে হবে।আর মেয়ে যে এখানে দাড়িয়ে আছে তার কোনো খেয়াল নেই।আমি মাকে বললাম,
~দেখেছো মা রক্তিম আমাকে কীভাবে বকা দিলো?
মা ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
~তোকে বকা দিবে নাতো আদর করবে।সবসময় গাধীর মতো কাজ করিস।
আমি রেগে বললাম,
~তুমি রক্তিমের সার্পোট করছো কেন?
মা বললো,
~সঠিকের সার্পোট করছি সবসময় তো তুই গাধীর মতো কাজ করোস।
আমি মুখ ফুলিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম রুমে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম আকাশের অবস্থা ভালো না যে কোন সময় বৃষ্টির আর্বিভাব হতে পারে।
আকাশটা পুরো মেঘে ডাকা একটু পর পর গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজ করছে।আমার বারান্দায় দোলনা আছে আমি সেটায় বসে এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম অনেক ভালো লাগছে এই আকাশটা দেখতে বৃষ্টিতে ভিজতে পারলপ আরো ভালো লাগতো।আমি দোলনা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই খেয়াল হলো রক্তিমও তো বাসায় আছে এখন কীভাবে যাবে।পরক্ষনেই মনে হলো রক্তিম তো ব্যস্ত তাই খেয়াল করবে না।যাবো আর আসবো এটা ভেবেই চুপিচুপি ফ্যাল্টের দরজা খুলে সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে গেলাম।বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে এ বাসার বাচ্চারাও বৃষ্টিতে ভিজতে ছাদে চলে এসেছে এদের মধ্যে অনেকেই আমাকে চেনে আমিও তাদের চিনি।ওই বাচ্চাদের মধ্যে একজনকে খুব ভালোমতো চিনি তার নাম পুতুল। আমি পুতুলকে দেখে জোড়ে চিল্লিয়ে বললাম,
~এই পুতুল কেমন আছো?
পুতুল চোখ পিটপিট করে আমার দিকে তাকালো আমাকে দেখে সে দৌড়ে চলে আসে আর বলে,
~ ভালো আপু,কেমন আছো তুমি?
আমি বললাম,
~ভালো।আন্টি বৃষ্টিতে ভিজার পারমিশন দিয়ে দিলো?
পুতুল তার ফোকলা দাঁত দেখিয়ে ফিক করে হেসে বলে,
~আরে আপু মা কী আর জানবে আমি এখানে আছি?বৃষ্টিতে ভিজে এখনই চলে যাবো আর মা তো বাসায় নেই।
পুতুলের কথা শুনে মাথায় হাত আমি তার দিকে চোখ চোখ বড় করে বললাম,
~ওরে বাটপার কী চালাক তুমি?
পুতুল বললো,
~আপু তুমি আমাদের সাথে খেলবে?
আমি কিছুক্ষন ভেবে বললাম,
~আচ্ছা।
শাড়ির আচল কোমড়ে গুজে তাদের সাথে কানামাছি খেলা শুরু করলাম।এই বৃষ্টিতে খেলার স্বাদ পেয়ে একদম ছোট বেলার মতো লাগছে
,,,,,,,
,,,,,,,
বাবার রুম থেকে বের হয়ে রক্তিম অধরার রুমে চলে গেলো।অধরাকে অনেকবার ডেকেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সে চলে গেলো শাশুড়ি মায়ের কাছে আর বললো,
~মা,অধরা কোথায়?
রক্তিমের কথা শুনে অধরার মা বললো,
~রুমে নেই।
রক্তিম বললো,
~নাহ
অধরার মা বললো,
~নিশ্চয়ই এই মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে চলে গেছে।
অধরার মায়ের কথা শুনে রক্তিমের আরো রাগ হলো এই অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজতে কেন গেলো?এই মেয়ে কে তো আজ ছাড়বোনা।
রক্তিম বললো,
~মা আমি আসছি।
বলেই ছাদের উদ্দেশ্যে চলে গেলে
বৃষ্টি অনেকটাই কমে গেছে তাই আমরা ছাদের ফ্লোরে বসে গল্প করছি বাচ্চারা কবিতা বলছে তো কেউ গল্প শুনাচ্ছে হঠাৎ কেউ রাগী গলায় বলে উঠলো,
~যদি আপনার বৃষ্টি বিলাস হয়ে থাকে তাহলে আমরা নিচে যেতে পারি।
এই কন্ঠ শুনে আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো।এতো আর কেউ নয় রক্তিম আমি পিছে ঘুড়ে তাকিয়ে দেখলাম রক্তিম ছাদের দরজায় হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে।পুতুল আর বাকি বাচ্চারা রক্তিমকে দেখে ভো দৌড় ওরা হয়তো মনে করেছে রক্তিম তাদের বলেছে।তাদের দৌড় দেখে আমিও একবার ভাবলাম দৌড় দেই পরে ভাবলাম এখন যদি পা ভেঙ্গে যায় তাহলে আরো অবস্থা খারাপ হবে।
রক্তিম আস্তে আস্তে আমার কাছে চলে আসলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে এতে রক্তিমের সাদা রঙ্গের শার্টটা ভিজে যাচ্ছে তার সামনের চুল গুলে সে হাত দিয়ে ঠিক করে। আমার একদম কাছে এসে বললেন,
~চুপচাপ রুমে যাবে কোনো কথা বললে কোলে নিয়ে নিবো।
তার কথা শেষ হতে দেরি আমার হাঁটতে দেরি হয়নি সোজা সিড়ি বেয়ে ফ্যাল্টে ডুকে একদম নিজের রুমে চলে গেলাম।মা আমাকে দেখেই বকা শুরু করেছেন আমি রুমে এসে শাড়ি নিয়ে যেই না ওয়াশরুমে ডুকতে যাবো তখনই দরজা বন্ধ করার আওয়াজ শুনে পিছে ঘুরে দেখি রক্তিম দাড়িয়ে আছে আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে বললেন,
~বৃষ্টিতে কেন ভিজতে গিয়েছো?
রক্তিমের শান্ত কন্ঠ আমার কাছে বড্ড অশান্ত মনে হচ্ছে।আমার জবাব না পেয়ে সে আমার কাছে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন,
~আর কোনোদিন এরকম করবে না নাহলে খুব বড় শাস্তি পাবে।
এতটুকু বলে রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিলো আমি ওয়াশরুমে চলে আসলাম।অনেক বড় বাঁচা বেঁচে গেছি
আমি শাড়ি পাল্টে ওয়াশরুম থেকে বেড় হয়ে দেখি রক্তিম বিছানায় শুয়ে আছে মাথায় হাত দিয়ে আমি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছতে শুরু করলাম
রক্তিম তার চোখ খুলে দেখতে পেলো এক রমনী তার চুল শুকাতে ব্যস্ত। রক্তিমের এখন মন চাচ্ছে এই রমণীকে একবার ছুয়ে দিতে তাও নিবিড় ভাবে। এই রমণীর উপরে তার অধিকার আছে রক্তিমের এই আকাশপাতাল ভাবনায় দরজায় টোকা পরলো জারিফ বাহির থেকে বলছে,
~আপু,নাস্তা রেডি করেছে দুলাভাইকে নিয়ে চলে আসে মাগরিবের আযান সেই কবে দিয়েছে।
আমি জারিফের কথা শুনে বললাম,
~আসছি।
এতটুকু বলে বিছানার দিকে তাকালাম রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি তাকে বললাম,
~চলেন নাস্তা করে আসি।
রক্তিম কিছি না বলে উঠে দাড়ালান আমিও তা পিছে পিছে হাঁটা শুরু করলাম।
,,,,,
,,,,,,
রাত আজ তার বাবার অফিসে গিয়েছিল নিজের কাজে ফোকাস করতে চায় সে তাই আজ থেকে কাজ শুরু করে দিলো সে।এইমাত্র বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসেছে রাত অনেক ক্ষুধা লেগেছে তখনই দাদীমা এসে রাতকে বললো,
~রাত দাদুভাই,প্লেটে খাবার নেও সেই যে সকালে বের হয়েছো এখন পর্যন্ত কিছু খাওনি
দাদীমার কথা শেষ হতেই সাহারা রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আসলো ছেলের প্লেটে খাবার বেড়ে রাতের সামনে দিয়ে দিলো।রাত চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো খাওয়ার মাঝেই দাদীমা বললো,
~রাত দাদুভাই,প্রথমদিন অফিসে কেমন কাটলে?
রক্তিম হাসি হাসি মুখ করে বললো,
~ভালো কেটেছে দাদীমা অর্ধেক বেলা ছিলাম।কালকে থেকে সকালেই চলে যাবো
দাদীমা বললো,
~ঠিক আছে।
রাত খাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসলো তারপর সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে চলে বারান্দায় একটা সিগারেট মুখে দিয়ে লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে সেটায় সুখটান দিতে লাগলো।সাহারা ছেলের রুমে এসেছে কোথাও রাতকে না পেয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখলো রাতের অবস্থা।সাহার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললো,
~রাত আর কতোক্ষন মায়ের সাথে রাগ করে থাকবি?
রাত সিগারেট হাত থেকে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো আর বললো,
~রাগ করিনি তোমার সাথে কীসের জন্য এসেছো তা বলো।
সাহারা বললো,
~তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছি অনেক ভালো তোর দাদীমা পছন্দ করেছে কালকে আমাদের সাথে চল মেয়েটাকে দেখে আসবি?
রাত মেকি হেসে বললো,
~বিয়ে করবো না মা।
সাহারা বললো,
~এখন কী বিয়ে করবি নাকি এখন শুধু দেখবি
রাত বললো,
~তোমার এক ছেলে বিয়ে না করলে কী ক্ষতি হবে মা?
এভাবেও তোমার এই বাজে ছেলেকে কে ভালোবাসবে?
বলেই রাত একদম বাসা থেকে বের হয়ে গেলো গাড়ি না নিয়ে হাঁটা ধরলো রাস্তায় মনটা হালকা করতে হবে।
সাহারা ছেলের কথায় স্তব্ধ কী বলে গেলো তার ছেলে এতো কষ্ট দিয়ে ফেললো তার সন্তানকে ভাবতেই তার চোখ দিয়ে পানি পরতে শুরু করলো।
#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২৩
,,,,,
,,,,,
রক্তিম বিছানায় শুয়ে আছে মূলত সে অধরার জন্য অপেক্ষা করছে। রাতের খাবারের পর রক্তিম রুমে আসলেও অধরা তার মাকে সাহায্য করবে বলে রান্নাঘরে চলে যায়।রক্তিম এভাবে শুয়ে থাকতে অনেক boring লাগছে তাই সে অধরার study table এর চেয়ারে বসে পরলো তারপর অধরার একেকটা পুরোনো খাতা দেখতে লাগলো অধরার লেখা দেখে রক্তিম মনে মনে বললো,
~এই মেয়ের লেখা তো দিনের দিন খারাপ হচ্ছে।কী যে করি এটাকে নিয়ে
এসব ভাবছিল তখনই কেউ রক্তিমের হাত থেকে খাতা টেনে নেয় রক্তিম মাথা উঁচু করে দেখে অধরা খাতা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে তার মুখে রাগ স্পষ্ট।
রক্তিম বললো,
~কী হয়েছে এমন মুখ করে রেখেছো কেন?
রক্তিমের প্রশ্ন শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো আমার খাতা নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে আর আমাকেই বলছে কী হয়েছে আমি নাক ফুলিয়ে বললাম,
~আপনি আমার খাতা কেন দেখছিলেন?
রক্তিম বললো,
~মনের সুখে দেখছিলাম আর তোমার লেখনী দেখে তো মন পুরো দুঃখে ভরে গেলো।ছি ছি কী অবস্থা?আমার অনেক ভালো একটা ছাত্রী আছে তার হাতের লেখা অনেক সুন্দর চাইলে তার থেকে ট্রেনিং নিতে পারো।
রক্তিমের কথায় আমার গা পিত্তি সব জ্বলে গেলো আমি রেগে গিয়ে তাকে কিছি না বলে খাতা টেবিলে রেখে চলে গেলাম বিছানায় অন্যপাশে মুখ করে শুয়ে পরলাম।অনেক কষ্ট লাগছে সে কীভাবে পারলো আরেকজনের সাথে আমাকে তুলনা করতে ব্যাটা খচ্চর কোনোদিন কথা বলবোনা।আমার চোখে পানি চলে আসলো।আসলে কেউই নিজের প্রিয় মানুষের মুখে অন্যজনের প্রশংসা শুনতে চায় না।কান্নার ফলে আমি বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছি
রক্তিম বুঝতে পেরেছে আজ তার মজাটা একদম ভুল পথে গিয়েছে তার প্রিয়তমা একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছে।রক্তিম ধীরপায়ে অধরার পাশে শুয়ে পরলো তারপর তাকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে তার কানে ফিসফিস করে বললো,
~হয়েছে তো আর কান্না করো না ভুল হয়েছে আমার
রক্তিম আমাকে এসে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে কথা বলছেন আমি তার সাথে কথা বলবো না যা করার করে নেক।
রক্তিম আমাকে কোমড় জড়িয়ে ধরে তার দিকল ফিরাতে চেষ্টা করে কিন্তু আমার জন্য তা করতে পারছেন না অনেক চেষ্টার পর আমাকে তার দিকে ফিরাতে সক্ষম হলেন।আমি চোখ বন্ধ করে আছি দুচোখ দিয়ে পানি পরেই যাচ্ছে রক্তিম আমার দুচোখে ঠোঁট ছুয়িয়ে পানি গুলো মুছে দিয়ে বললো,
~আর কান্না করো না আমি ভুল করেছি। আর কোনো দিন এমন করবো না
আমি কোনো কথায় বলছি না তাই সে আমার ঘাড়ে মুখ গুজে রাখলো আমি তাকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলে সে আমার হাত শক্ত করে ধরে বললেন,
~কেন এমন করছো প্রিয়তমা?তুমি কী জানো না তোমার এই অধম যে তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারে না।
আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললাম,
~আপনি অন্য একজন মেয়ের সাথে আমার কীভাবে তুলনা করতে পারলেন?
রক্তিম বললো,
~আর করবো না সরি ময়না পাখি।
আমি আর কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে ফেললাম ঘুম প্রয়োজন আমার।রক্তিম আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো
দুজনই ঘুমের রাজ্যে চলে গেলো এই বাসার সবাই সুখের ঘুম দিতে ব্যস্ত কিন্তু এই সুখের ঘুমের পর যে বিষাদের সকাল অপেক্ষা করছে তা হয়তো কেউ জানে না।
,,,,,
,,,,,,
ফজরের আযান কানে আসতেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।রক্তিমকে সরিয়ে আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ওজু করে জায়নামাজ নিয়ে দাড়িয়ে পরি নামাজে।নামাজ শেষ করে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি রক্তিম উবু হয়ে ঘুমিয়ে আছে।জায়নামাজ ঠিক জায়গায় রেখে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম রুমে ভালো লাগছিল না মা মনে হয় রান্নঘরে তাই রান্নাঘরে ছুটলাম কিন্তু মাকে কোথাও দেখলাম না। মা তো সবসময় নামাজ পরেই ভাইদের ডাকাডাকি করে তাহলে আজ কেন?আমি মায়ের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিলাম ভিতর থেকে কোনো আওয়াজ আসলো না হয়তো ঘুম থেকে এখনি উঠে নাই।আমি দরজার সামনে থেকে সরে আসতে নিবো তখনই দরজা খোলার আওয়াজ শুনে পিছে ঘুরতেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।মায়ের কান্না দেখে আমার অন্তরআত্মা কেঁপে উঠলো আমি বললাম,
~মা কী হয়েছে?
মা কোনো কথা না বলে কান্না করছে আমি মাকে ছাড়িয়ে ভিতরে গিয়ে দেখি বাবা চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছেন কোনো হেলদোল নেই আমি কাঁপা কাঁপা হাতে বাবার হাত ধরলাম একদম ঠান্ডা আমি চিৎকার দিয়ে বললাম,
~মা আরিফ জারিফকে ডাকো বাবাকে হাসপাতালে নিতে হবে।
মা বললো,
~দেরি হয়ে গেছে অধরা,তোর বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।
বলেই ফ্লোরে বসে সে কান্না শুরু করলো আমি সেখানেই স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম বাবার হাতটা আমার হাতে রেখে বাবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাম দুচোখ বেয়ে পানির বন্যা জড়ছে।
রক্তিমের ঘুম ভাঙ্গলো কারো চাপা কান্নার আওয়াজে সে ঘুমঘুম চোখে উঠে বসলো খেয়াল করলো রুমের দরজা খোলা এরমানে অধরা বাহিরে রক্তিম আর অপেক্ষা না করে বাহিরে চলে গেলো।বাহিরে এসে দেখতে পেলো অধরার বাবার ঘরের মেঝেতে বসে অধরার মা কান্না করছে।রক্তিম দেরি না করে রুমের ভিতর গিয়ে দেখে অধরা তার বাবার হাত ধরে বিছানার কাছে বসে।রক্তিম অধরার কাছে গিয়ে বললো,
~অধরা কী হয়েছে?
অধরা রক্তিমের দিকে লাল চোখে তাকিয়ে বললো,
~আমার জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ আজ আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেলো।
রক্তিমের আর বুঝতে বাকি রইলো না অধরার বাবা আর নেই।সে অধরাকে আগলিয়ে নিলো তখনই অধরার দুইভাই এসে হাজির তারা মায়ের কান্না আর বোনের স্তব্ধতা দেখে অনেক অবাক পরক্ষনেই বিছানার দিকে তাকাতে তাদের বুকে কেউ ছুরি ঢুকিয়ে দিলো বাবার লাশটাই হয়তো তার মা-বোনের কান্নার কারণ।আরিফ আর জারিফকে দেখে তার মায়ের কান্না আরো বেড়ে গেলো।ছেলেদের বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~আজ সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গতে দেরি হয়।তাই তাড়াহুরা করে হাত-মুখ ধুয়ে যেই তোর বাবাকে ডাক দিতে যাবো তখনই দেখি তোর বাবার শরীর ঠান্ডা নিঃশ্বাস চেক করে দেখি তো তোর বাবা নেই।
এতটুকু বলে সে ঢুকরে কেঁদে উঠে মায়ের কান্না অধরাকে আরো কষ্ট দিচ্ছে সে একধ্যানে তার বাবার দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো এখনই চোখ খুলে ঠোঁট নাড়িয়ে বলবে,
~এই বোকারা তোরা কাদঁছিস কেন?
কিন্তু সেটা হয়তো আর হবে না কারণ একবার যে চলে যায় সে আর ফিরে আসে না।
,,,,,,,,
,,,,,,,,
আমি চোখ মুছে রক্তিমকে বললো,
~বাবাকে একদম নিষ্পাপ লাগছে তাই না?
রক্তিম বললো,
~অধরা নিজেকে সামলাও।তুমি বড় সন্তান তাদের দুভাইয়ের বড় বোন যদি তুমিই দূর্বল হও তাহলে কীভাবে হবে?
আমি কান্নারত অবস্থায় বললাম,
~কেন নিজেকে সামলাবো রক্তিম?ছোট থেকে এক কথা শুনে এসেছি তুমি বড় সন্তান তোমার দূর্বল হলে চলবে না কঠোর হতে হবে।আজ নিজেকে কীভাবে সামলাবো আপনি একটু বলবেন আমায়।
এতটুকু বলে আমি রক্তিমকে জড়িয়ে কান্না করতে লাগলাম রক্তিম আমাকে বললো,
~এভাবে কান্না করতে হয় না এভাবে আহাজারি করো না আল্লাহ তা আলা নারাজ হবে।তুমি বাবার জন্য নামাজ পরে দোয়া করো এর থেকে ভালো আর কিছুই হবে না।
আমি রক্তিমের কথায় মাথাদুলালাম।রক্তিম আমাকে রেখে জারিফ আর আরিফকে সাথে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।আস্তে আস্তে বাবার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরতে লাগলো এলাকাবাসী আত্মীয়স্বজন সবাই চলে এসেছে।বাবার গোসল হয়ে গিয়েছে তাকে সাদা কাপড়ে আবদ্ধ করা হয়েছে একবার দেখার সৌভাগ্য হলো আমার বাবাকে।আর কোনো দিন বাবা বলে ডাকা হবে না এই চেহারাটা আর দেখে হবে না সেই নির্জন মাটির ঘরে তাকে রেখে আসবে।সবাই কান্না করছে এই কান্নার কোনো ফল নেই আমার বাবা ফিরে আসবে না।
বাবাকে নিয়ে যাওয়ার সময় হলো খাটিয়াতে তাকে সুন্দর করে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে রক্তিম,আরিফ জারিফ আর রাত বাবার খাটিয়া কাঁধে তুলে রওনা হলো গোরস্তানের পথে বাবা আর কোনোদিন এই রাস্তা দিয়ে ফিরে আসবে না আমি তাদের যাওয়ার পাণে তাকিয়ে রইলাম শেষ দেখা বাবার সাথে আমার।
বাসার ভিতরে ডুকে দেখি সবাই মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে আমি ঢুলুঢুলু পায়ে মায়ের কাছে গিয়ে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলাম মা নিষ্প্রাণ ভাবে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ আমার মাথায় কেউ হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আমি মাথা তুলে দেখি সাহারা রায়জাদা আমার হাত রেখে আছে সে আমার পাশেই বসে আছে।
তাকে দেখে মায়ের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে বসে পরলাম।সাহারা রায়জাদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~অধরা,নিজেকে সামলাও বাবা হারানোর যন্ত্রণা অনেক তা আমি জানি কিন্তু তোমার মাকেও তো সামলাতে হবে।
আমি তার বুকে মাথা রেখে হুহু করে কেঁদে উঠলাম।সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো
,,,,,,,,,
,,,,,,,,
সবাই চলে গেছে নিজ নিজ বাসায় আমি সোফার ঘরের ফ্লোরে বসে আছি বাবাকে কবর দিয়ে এসে রক্তিমও গোসল করে আমার পাশে বসে আছে।
রক্তিম আমার হাতের উপর তার হাত রেখে বললেন,
~দুপুর ৩টা বাজে কিছু খাবে না?
আমি ভাবলেশহীন ভাবে বললাম,
~মা খেয়েছে?আরিফ জারিফ আপনি খেয়েছেন?
রক্তিম বললো,
~চলো একসাথে খাবো আমরা সবাই।মা বাসা থেকে খাবার পাঠিয়েছে।
আমার হাত ধরে বসা থেকে দাড় করিয়ে টেবিলের সামনে নিয়ে গেলো।সবাই উপস্থিত কিন্তু আমার বাবা নেই এইটা ভাবতেই বুকটা ধুমরে মুচরে যাচ্ছে আপনজন হারানোর ব্যাথায় এতো কষ্ট।
বাবার মৃত্যুর আজ ১৫দিন। এই ১৫দিন আমি বেশিরভাগ আমার বাসায়ই কাটিয়েছি। কিছুদিন যাবত মায়ের শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না হয়তো বাবার শোকে।মায়ের এখন চিন্তাটাও বেড়ে গেছে এই সংসার মায়ের এমন মুখ দেখলেই আমার খুব খারাপ লাগে।হঠাৎ রক্তিম এসে বললো,
~অধরা কী ভাবছো?
আমি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে বললাম,
~মায়ের কথা ভাবছিলাম।
রক্তিম বললো,
~অধরা তুমি মাকে বলো কোনো টেনশন নিতে মানা আল্লাহ যা ভেবেছে তাই হবে।
আমি বললাম,
~হুম
রক্তিম বললো,
~আজ বাসায় চলে যাবো আমরা।
আমি বললাম,
~হুম আজকে গিয়ে কয়েকদিনপর আবার আসবো।
রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সেখান থেকে চলে গেলো
আমি জানি রক্তিমও আমার মতো অনেক চিন্তিত কিন্তু আমাকে তা বুঝতে দিচ্ছে না।
চলবে।।।।
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)
চলবে।।।
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?আর ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)