তুমি_আমার_অধিকার পর্ব ৭

#তুমি_আমার_অধিকার 🍂
#লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ
#পার্টঃ7

অন্তীর পচন্দইদ্রয়ী কাজ করছে না । নিলয়ের নিথর দেহটা রাস্তার মেঝে পড়ে আছে মাথার দিকে রক্তের ফিনকি ঝড়ে পড়ছে নিলয়ের। অন্তী দৌড়ে এসে নিলয়কে কোলে নিলো নিলয়ের মাথায় তার হাত চেপে রক্ত বন্ধ হওয়ার চেষ্টা করলো.

এইই কি হয়েছে তুমার, আর আপনারা কি করছেন দাড়িয়ে আমাকে একটু হেল্প করুন দ্রুত । ভীড় থেকে দুই তিনজন লোক এসে নিলয়কে ধরলো অন্তী তার ড্রাইবারকে কল করলো নিলয়কে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলো ।

যেই হাসাপাতালে নেওয়া হয়েছে ওইখানে নিলয়কে ভর্তি করানো যাবে না সাফ জানিয়ে দিয়েছে ডাক্তাররা
অন্তীতো এক প্রকার চিৎকার চেচামেচি জুড়ে দিয়েছে হাসাপাতালে । অন্তী তার বাবাকে কল দিলো তার বাবা পুলিশের এসপি ওনি অন্তীর কল পেয়ে দ্রুত হাসপাতালের সার্জনকে কল দিলো

ডাক্তার দ্রুত অন্তীর বাবার কল পেয়ে নিলয়কে ভর্তি করালো..

এর ‌মধ্যে আবির অথৈ এবং নিলয়ের বাবা মা ভাই বোন আত্নীয়স্বজন যারা আছে সবাই চলে আসলো হাসপাতালে.
এর মধ্যে নিলয়ের আম্মুর অবস্থা তো শোচনীয় পর্যায়ে চলে গেছে ওনি বারবার মূর্চা যাচ্ছে । নিলয়ের ছোট ভাই বোন কেদে প্রায় পাগলপাড়া । নিলয়ের আম্মু হাসাপাতালের বারান্দায় অন্তীকে ছুটে গেলেন

_ এই তুমি অন্তী না …

অন্তী তো নিলয়ের আম্মুকে ধরে কেদে দিলো আন্টি নিলয়
ওর কি হয়ে গেলো । ও । তার কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে বাচবো ।

নিলয়ের আম্মু নিজেই তো পেরেশান তার মধ্যে সে অন্তীকে কিভাবে সামলাবে ওনি এর মধ্যে অন্তী অজ্ঞান হয়ে পড়লো ।
অন্তীর বাবা হারুন সাহেব চলে আসলো

ওনি অন্তীকে অন্য কেবিনে নিয়ে গেলো ।
অপরেশন থিয়েটারের সামনের চেয়ারে আবির আর অথৈ বসে আছে । নিলয়ের আম্মুকে দেখে তারা দুজনে দাড়িয়ে গেলো ।
তুমরা থাকতে আমার নিলয়ের এই অবস্থা কি করে হলো হুম
তুমাদের দুজনকে আমি আমার নিজের সন্তানের মতো দেখতাম । আর তুমরা থাকতে আমার নিলয় আজ মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে ।

আবিরঃ- আসলে আন্টি?? এতটুকু বলতে অথৈ আবিরের হাতটা চেপে ধরলো আবির বলতে গিয়ে থেমে গেলো..
নিলয়ের আম্মুর চোখে বিষয়টা এড়ালো না
ওনি আবির কে আবার জিজ্ঞাসা করলেন দেখো কি হয়েছে তুমরা যা জানো সব আমাকে বলো??
আন্টির এইরকম পিড়াপীড়িতে আবির প্রথম থেকে সব খুলে বললো ।

নিলয়ের আম্মু সব শুনে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগলো
ছেলেটার ওপর এতো ঝড় গেলো অথচ তাদেরকে কিছু জানালো চুপ করে সহ্য করে গেলো ।

_ ছোটবেলা থেকে নিলয় চাপা স্বাভাবের আঘাত পেলে কাউকে কিছু বলে না ।
ছোট কালে একবার খেলতে গিয়ে পা কেটে গিয়েছিলো । দুই দিন পর ওনি জানতে পারলো যখন সে ব্যাথা কাতরাচ্ছে তখন সে বলে নাই , এই হলো নিলয়ের স্বাভাব ।
নিরা এমন মেয়ে তার নিলয়ের মা ভাবতে পারছে না । নিলয়ের আব্বুকে কিভাবে বলবে ওনি এইসব তবে হ্যা একটা কথা ওই মেয়ের সাথে নিলয়ের আর সম্পর্ক রাখতে দিবে না..
নিরার বাবা মা এইসব জানতে পারলে নির্ঘাত তারা শকড হবে তাদের মেয়ে এমন হলো কিভাবে??

_ রাত বারোটা বেজে গেলো কারো চোখে ঘুম নেই । নিলয়কে এখনো তারা অপরোশেন থিয়েটারে থেকে বের করে নাই ।

আবির আর নিলয়ের আব্বু এই‌মাএ এশারের নামাজ পড়ে তাহাজ্জুদও পড়ে নিলো । আদরের সন্তানের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করলো ।

অন্তীর এখনো জ্ঞান ফিরেনি , হারুন সাহেব আর অন্তীর পাশে বসে মাথায় হাত বুলাচ্ছে । একটু পর ডাক্তার অন্তীকে চেক আপ করে দিয়ে বললো আপনারা ওনাকে এখন নিয়ে যেতে পারেন । চিন্তা করার কেনো কারণ নেই, অতিরিক্ত টেনশনের কারণে এমন হয়েছে । হারুন সাহেব পরম মমতায় অন্তীর মাথায় হাত বুলাচ্ছে, মেয়েটাকে নিজের সন্তানের থেকে বেশি আদর করে তারা দুজন, কেনো কিছুর কমতি রাখে নাই । অন্তীও তাদের সাথে ভালোভাবে মিশে গেছে সারাদিন অন্তীর সাথে দৌড়াদৌড়ি করে ওনাদের দিন যায় ।

হারুন সাহেব অন্তীকে নিয়ে গেলো বাসায় ।

আজ দুই দিন হয়ে গেলো নিলয়ের জ্ঞান ফেরার নাম গন্ধ নেই. এই দুই দিনে অন্তীকে কেউ এক পা নড়াতে পারলো না নিলয়ের কাছ থেকে । তার একটিই কথা সে নিলয়ের পাশ থেকে কোথাও যাবে না । হারুন সাহেব অব্যশই অনেক জোড়াজোড়ি করেছে কিন্তু কাজ হয় নি দেখে ওনিও দুইদিন ধরে হাসপাতালে রয়ে গেলেন । নিলয়ের আব্বু আম্মুও কিছু বললো না ।

_ তিনদিন পর সকালের মৃদু হাওয়া জানালা দিয়ে সাই সাই করে ভেতরে আসলো ।আকাশটার যেনো আজ মন পরিষ্কার.
সূর্যের আলো নিলয়ের চোখে পড়ছে হালকা ভাবে । সে একটু একটু করে চোখ খুলতে লাগলো । বুকের ওপর ভারী কিছু অনুভব করলো ।
চোখটা মেলে তাকিয়ে দেখলো অন্তীর মাথায় তার বুকে, কত সুন্দর ভাবে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা । মেয়েটাকে দেখতেই এমনি মায়াবি লাগে তারপর ঘুমালে তো তার রুপ ফুটে । নিলয় পরম আদরে অন্তীর চুল গুলোতে হাত বুলাচ্ছে মুখটা শুকিয়ে গেছে চোখের নিচে কালো দাগ জমে গেছে মনে হচ্ছে কতদিন ধরে মেয়েটার চোখে ঘুম নেই । আজ রাজ্যের ঘুম তার চোখে ভর করেছে, এই ভাবছে আর অন্তীর মাথায় হাত বুলাচ্ছে চুলগুলো উসখুসকো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ।

মেয়েটাকে নিলয় প্রথম যেইদিন দেখেছে সেই থেকে এক মায়া কাজ করছে তার প্রতি । অব্যশই সেও চেয়েছিলো অন্তীকে জিবনসঙ্গীনি হিসাবে রাখতে । কিন্তু বাবার কারণে আর অন্তীর উধাও হওয়ার কারণে তা হয়ে উঠে নাই ।
তারপর যখন অন্তী আসলো আর নিলয়ের কেনো কিছু করার ছিলো না । আজ বহুত বছর অন্তীকে সে প্রাণভরে দেখছে ।

এর মধ্যে আবির আর অথৈ কেবিনে ডুকলো । ডুকেই তারা চমকে গেলো নিলয়ের জ্ঞান ফিরেছে । আবির জোরে চিৎকার করবে নিলয় আঙ্গুল দেখিয়ে থামিয়ে দিলো অন্তী ঘুমাচ্ছে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে ।

আবির আর অথৈ নিলয়ের পাশে এসে বসলো, এখন কেমন আছিস,
_হুম কিছুটা সুস্থ আছি ।..
আচ্ছা কি হয়েছে নিলয় হঠৎা করে দুর্ঘটানাটা কিভাবে ঘটলো কিভাবে বলতো..????

নিলয় একরাশ চাপা শ্বাস ছেড়ে বলা শুরু করলো..
ওইদিন অফিস করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে সে তাড়াতাড়ি বাসায় প্রবেশ করলো । বাসায় প্রবেশ করে দেখে নিরা তার ব্যাগ গুচাচ্ছে,
নিলয়ঃ- কি হলো তুমি ব্যাগ গুচাচ্ছো কেনো? কোথায় যাচ্ছো.
নিরাঃ- হদয়ের কাছে যাচ্ছি খুশির স্বরে বললো.
নিলয়ঃ- না তুমি এমনটি করতে পারো না । আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না । নিলয় নিরার হাত ধরে

নিরাঃ- আমার হাত ছাড়ো তুমি কোন সাহসে আমার হাত ধরো তুমি । আমি তুমাকে ভালোবাসি না কতবার বলবো আমি হদয়কে ভালোবাসি..

নিলয়ঃ- তুমি কিছুদিন আগে বললনা হদয় তুমার সাথে চিট করেছে । তাহলে এখন কেনো আবার যাচ্ছে আর হদয় ছেলেটা ভালো না । যেয়ো না তুমি..
. নিরাঃ- আমি যাবো, আমার পথ আটকাবে না এই বলে সে চলে যাচ্ছে.
নিলয় তার হাত ধরলো আবার, এইবার নিরা নিলয়কে ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে বসলো কোন অধিকারে তুমি আমার হাত ধরো আমার পথ আটকাও হুম…

বাসার সব সার্ভরা চেয়ে রইলো সব নিস্তব্দ হয়ে গেলো

_ নিলয় এইবার আর চুপ থাকতে পারলো না. সে ও‌ নিরাকে কষে থাপ্পড় মারলো..

ভাগ সালি বহুত হয়েছে আর মেনে নেওয়া যায় না । আজ থেকে তোকে এই বাড়িতে যেনো না আর না দেখি । আর ভুলেও কখনো আমার কাছে আসবি না ।

নিরা এক দৌড়ে চলে গেলো, আর মনে মনে সে ভাবলো যাক আপদ থেকে মুক্তি পেয়েছি ।

সব তো শুনলাম তো তুই এক্সিডেন্ট হলি কিভাবে ।
নিলয়ঃ- হুম বাসা থেকে বের হয় দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে রাস্তা দিয়ে বাসায় আসতেছিলাম তারপর অন্যমনষ্ক নাকি কি হয়েছে আমি নিজেও জানি না । তবে এইটুকু খেয়াল আছে আমার সামনে খুব জোড়ে ধেয়ে আসছিলো কার্ভাড ভ্যান তারপর আর কিছু খেয়াল নেই ।

নিলয়ের জ্ঞান ফিরেছে শুনতে পেয়ে নিলয়ের আব্বু আম্মু ভাই বোন সবাই হুড়ুমড়িয়ে কেবিনে ডুকলো ।
নিলয়ের আম্মু তো নিলয়কে ধরে কেদে দিলো বাবা তর কিছু হয়ে গেলে আজ আমরা কিভাবে থাকতাম । এই বলে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে শুরু করলো ।

নিলয়ঃ- মা মা, কেদো না এখন তো আমি সুস্থ?? আর বেশি কাদলে তুমি অসু্স্থ হয়ে যাবে.. নিলয়ের আম্মু অন্তীর দিকে তাকিয়ে বললো মেয়েটা আজ তিন চারদিন হলো কোথাও যায় নি কিচ্ছুটি খায় নি ।

অন্তীর এইবার ঘুম ভাঙ্গলো, ঘুম ভেঙ্গে দেখে সে নিলয়ের বুকে শুয়ে আছে । সে নিজেও তা খেয়াল করিনি, হুড়মুড়িয়ে উঠে গেলো সে । আর উঠে দেখে তাজ্জব কেবিনে সবাই তার পাশে দাড়িয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে । অন্তীর এইরকম অবস্থা দেখে নিলয় সবাইকে বের হতে বললো, সবাই চলে গেলো

আবির যাওয়া র‌ আগে নিলয়ের কানে কানে বললো বেস্টআফ লাক মামা । নিলয় রাগাণ্তিত ভাবে আবির দিকে তাকালো ।

সবাই চলে যাওয়ার পর অন্তী চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ।

নিলয় এইবার বলা শুরু করলো, হুম যে মেয়েটি সারা রাত আমার বুকে শুয়ে ছিলো আর এখন ঢং করা হচ্ছে ।
অন্তী কুওা বলে নিলয়ের বুকে কিল ঘুষি মারা শুরু করলো
নিলয়ঃ- আরে আস্তে আস্তে ব্যাথা পাবো তো
অন্তী:- পেলে পাবা হুম… এখন ওই ডাইনিটার কাছে আবার গেলে মেরে ফেলবো.

নিলয়ঃ- কি এতো সাহস, কোথার থেকে এলো মেম হুম..
নিলয় দুষ্টামি স্বরে বললো যাবো.. ( আস্তে বললো).
অন্তীঃ- কি বললা তুমি এইবার সে নিলয়ের গলা ধরলো আবার বলল কি বললি আবার বলল ।
নিলয়ঃ- আচ্ছা বাবা বলবো না ।
অনেকক্ষণ তাদের দুজনের খুনসুটি চলতে লাগলো ।
এরপর ডাক্তার তাদের কেবিনে ডুকলো অন্তী ডাক্তারকে দেখে সরে দাড়ালো । আচ্ছা ওনার গার্জিয়ান কোথায়
অন্তী নিলয়ের বাবা মা কে ডেকে আনলো…
ডাক্তারঃ- এখন ওনি মোটামোটি সুস্থ মাথায় ব্যান্ডেজটা দুই তিন পর এসে খুলে দিবো । আর তাকে আপনারা বাসায় নিয়ে যেতে পারেন.

নিলয়ের আব্বুঃ- থ্যাকুইউ ডাক্তার আচ্ছা ওর বিলটা কত হলো আমরা পে করে তাকে নিয়ে যাচ্ছি ।
ডাক্তারঃ- তার কেনো দরকার নেই হারুন সাহেব ( অন্তীর বাবা) দিয়ে দিছে
নিলয়ের আব্বু:- তার কি দরকার হারুন সাহেব আপনারা আমার ছেলের জন্য যা করছেন তার জন্য আমরা অনেক ঋণী হয়ে আছি । সময় পেলে আমাদের বাসায় আসবেন দাওয়াত রইলো । আর অন্তী মা তুমি অনেক ক্লান্ত যাও বাসায় চলে যাও তুমার বাবার সাথে ।

অন্তী প্রথমে যেতে চায়ছে না নিলয়ের দিকে তাকালো নিলয় তাকে চলে যেতে বললো, অন্তী রাগ করে রুম থেকে বের হয় গেলো পিছু পিছু হারুন সাহেব ও‌ তার বউ চলে আসলো ।

_ নিলয়কে কাছে পেয়ে তার ছোট দুই ভাই বোন দুষ্টামি আর খুনসুটিতে মেতে উঠলো ।

নিলয়ের আম্মুঃ- আরে কি করছিস, তর ভাই ব্যাথা পাবে তো.
নিপাঃ- কিছু হবে না ভাইয়াকে আর কোথাও যেতে দিবো না.

তাদের ভাই বোনের খুনসুটি দেখে নিলয়ের বাবা মা হে হে করে হেসে উঠলো । অনেক দিন পর তারা একসাথে হলো..

এইদিকে অন্তী বাসায় গিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো । হারুন সাহেব মেয়ের এমন আচারণ দেখে থতমত হয়ে গেলো ।

অনেকক্ষণ নিরা দাড়িয়ে রয়েছে হদয়ের আসার কেনো খোজ নেই…..

( পরের পার্টে নিরার পরিণিতি দেখানো হবে. আর কেমন হলো জানাবেন রহস্য আরো বাকি রয়েছে.) আর লেখা কেনো ভুল হলো দুঃখিত .
পরের পার্টের জন্য অপেক্ষা করুন ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here