আকাশী পর্ব ৬

“আকাশী”
পর্ব ৬…

‘আসতে পারি স্যার?’
হেডমাস্টার মাথা ঈষৎ নেড়ে সায় দিলেন। আকাশী তাঁর কাছে গেলে বললেন, ‘কী সমস্যা?’
‘স্যার, স্কুলে কি আমার বয়সী মেয়েদের মোবাইল আনা বৈধ?’
‘না তো। ছোট মেয়েদের মোবাইল দিয়ে কী কাজ?’
‘এখানে আমরা সবাই লেখাপড়া করতে আসি। আমাদের একে অপরকে ভাই-বোনের মতো করে দেখা উচিত। এখানে কিনা…
আমি যদি বলি এখানে বাহ্যিক কোনো কারণে কারো মোবাইল আনা হয়। যদি বলি, আমার একটা ক্লাসমেট আনে?’
হেডমাস্টার কিছুটা ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন, ‘লুকিয়ে মোবাইল আনা মোটেও ভালো কথা নয়। বলো কে এনেছে?’
‘আমি মেয়েটির সাথে প্রাইভেট পড়ি বলেই তাকে মোবাইল আনতে দেখেছি। জানি না, ওর মতো আর কত কত মেয়ে আনে। আর স্যার ওই মেয়েটির ওপর বিপদ আসতে পারে। প্লিজ ওকে রক্ষা করুন।’
‘কেন? কী হয়েছে?’
‘ওর নাম সেলিনা। ইদানীং ও একটা বদ ছেলের কবলে পড়েছে। আমি আজকে জেনে ওকে সতর্ক করতে চেয়েছি, কিন্তু ও ক্লাসে ঢুকে যাওয়ায় বলতে পারিনি। এরপর টিফিন পিরিয়ড শুরু হয়ে যায়। আমি আর ওর কাছে পৌঁছাতে পারিনি। আমার মনে হচ্ছে ও রাসেলের কাছেই গেছে।’
‘কী বললে?’, স্যারকে কিছুটা উত্তেজিত দেখাল।
‘রাসেলের কাছেই গেছে।’
‘ওহ্ শীট। রাসেলের সাথে ও কোথায় দেখা করবে জানো?’
আকাশী কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলল, ‘ও ফোনে জিজ্ঞেস করছিল, স্কুলের পেছনে যে পুরনো মাসির বাড়িটা আছে, ওখানে যেতে হবে কিনা। আমার মনে হচ্ছে ওখানেই গেছে।’
হেডমাস্টার কাঁচের টেবিলে হাতে একটা চাপড় দিয়ে হাকডাক করে বেরুলেন। আকাশী পিছুপিছু যায়। হেডমাস্টার দপ্তরিকে ডাকছেন। তার ডাকাডাকিতে আশেপাশের দুটো শ্রেণির শিক্ষক বেরিয়ে এলেন। আকাশী আসার একটু পর ক্লাস বসেছিল। অফিসের পাশের রুমের পর ক্লাস সেভেন। আকাশীদের স্যারের সাথে হেডমাস্টার আরেকটা ক্লাসের শিক্ষককে নিয়ে দপ্তরির সাথে বেরিয়ে পড়লেন। আকাশী বুঝতে পারছে না হেডমাস্টারের এরূপ উত্তেজিত হওয়ার কারণ। ইতোমধ্যে শিক্ষকবিহীন ক্লাসদুটো থেকে ছাত্রছাত্রীর শোরগোল ভেসে আসতে শুরু করেছে। সুযোগ পেয়ে ফারাবি বেরিয়ে এসে আকাশীকে জিজ্ঞেস করল, ‘কী হয়েছেরে?’
আকাশী বলল, ‘কী হয়েছে বুঝতে পারছি না। আমি যখন হেডমাস্টারকে বললাম, সেলিনাকে রাসেল পুরনো মাসিদের বাড়িতে দেখা করতে বলেছে, তিনি তৎক্ষণাৎ দপ্তরি হরিসদাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন স্যারদের সাথে।’
‘পুরনো মাসি?’
‘হ্যাঁ, কিন্তু কী হয়েছে?’
‘আরে ওই মাসি নাকি খারাপ, যার জন্য তাকে স্কুল থেকে বের করিয়ে দেয়া হয়েছিল।’
আকাশীর ভ্রূ নেচে উঠল, ‘চল।’
ফারাবিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আকাশী তাকে নিয়ে পেছনে গেল। তবে মাসির বাড়িতে গেল না। স্কুলের পেছনের ভবনে এলে বাড়িটা ওখান থেকে দেখা যায়। আকাশীরা দেখল, স্যারেরা বাড়ির সামনে জড় হয়েছে।
তাঁদের মাঝে দপ্তরি নেই। সম্ভবত মাটির ঘরটিতে ঢুকেছে। স্যারদের সামনে মাসি দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে কী যেন বলছে। আকাশী অল্পক্ষণ পরেই দেখল, দপ্তরি রাসেলের শার্টের কলার ধরে তাকে টেনে আনছে। তার শার্টের বোতামগুলো লাগানো নেই বলেই ওর লোমশ বুক বেরিয়ে এসেছে।
আকাশীর প্রথম কোনো ছেলেকে ওভাবে দেখে বীভৎস লাগছে। তারই একটু পর কাঁদতে কাঁদতে সেলিনা বেরিয়ে এলো। একজন স্যার তাকে শাসিয়ে উঠলেন। ওকে ওই অবস্থায় দেখে আকাশীর বুকের ভেতর ছ্যাঁৎ করে উঠল। তার মনে হচ্ছিলই, রাসেল তাকে অন্য কোনো মতলবে ডেকেছে। সেলিনা দৌড়ে দৌড়ে চলে আসে ভবনের কাছে। আকাশীদের দেখতে পেয়ে সে কান্না থামিয়ে আকাশীকে জড়িয়ে ধরলো। তাকে সান্ত্বনা দিয়ে মাসির বাড়ির সামনে আকাশী তাকায়। ওখান থেকে স্যারদের চিল্লানো ভেসে আসছে। ওদের ক্লাসের স্যার রাসেলকে তার শার্টের কলার ধরে চিৎকার করে বকা দিচ্ছেন, ‘তোকে আগেই ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আর কোনো মেয়েকে ডিস্টার্ব করবি না।’
‘না, এখন আর কোনো চান্স নেব না।’ হেডমাস্টার বললেন, ‘ওকে টিসি ছাড়াই স্কুল থেকে বের করে দেব। লেখাপড়া এই ধরনের চরিত্রের ছেলেদের দ্বারা হয় না।’
তার মানে রাসেল তার কল্পনার চেয়েও অতি জঘন্য একটা ছেলে।
আকাশী সেলিনাকে বলল, ‘রাসেলের সাথে তোমার কখন থেকে সম্পর্ক?’
নম্রস্বরে সে জানালো, ‘কাল থেকে।’
‘কি!’
‘তুমিই তো বললে ওকে বেশিরভাগই আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখ। আমার অনেক ভালো লেগেছিল কথাটা। এরপর আমিও দেখলাম, জানালার দিকে দাঁড়িয়ে ও আমার দিকে দেখছে। তারপর ও একটা কাগজ ছুঁড়ে মারল। আমি নিয়ে দেখলাম, তাতে ফোন নাম্বার লেখা আছে। আমি আমার মোবাইলে ওটা টুকে নিয়েছি। ওর সাথে রাতভর লুকিয়ে কথা বলেছি।’
‘কি!’ আকাশী দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে বলল, ‘ও কি জানে তুমি কল করেছ কিনা?’
‘হ্যাঁ, ও প্রথমে জিজ্ঞেস করেছিল আমার কণ্ঠ ভিন্ন কেন শোনাচ্ছে। এরপর অনেক কথা হয়েছে। আমি তো বলেছি আমি সেলিনা।’
‘তারপরও কিছু বলেনি?’
‘না।’
আকাশীর কপালে ভাঁজ পড়ল, ‘ও তোমাকে কী করেছে?’
সেলিনা ডুকরে কেঁদে উঠল, ‘আমি ভেবেছিলাম, ও শুধু আমাকে দেখতে চেয়েছে। বলেছিলও তাই। কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখি… ওখানে যাওয়ার পর ও আমাকে ভেতরে নিয়ে গেল। ও আমার বুকে এদিকে ওদিকে হাত দিয়েছে। বিশ্বাস করো, আমি ওকে ছাড়াতে চেয়েছিলাম।’ সেলিনা কাঁদতে লাগল।
আকাশী আর কিছু শুনতে না চেয়ে সেলিনাকে ফারাবির সাথে করে ক্লাসে নিয়ে আসে। ইতোমধ্যে ক্লাসের ভেতরটা একদম চুপচাপ হয়ে গেল সেলিনাকে ফোঁপাতে দেখে।
একটু পর ক্লাসে শিক্ষকেরা ফিরে এলেন। হেডমাস্টার সেলিনাকে ডাকলেন না। সবার উদ্দেশ্যে কড়াভাবে বললেন, ‘এখন থেকে কোনো মেয়ে স্কুলে মোবাইল আনতে পারবে না। আমি বিশেষ নজর রাখব এতে। কেউই যদি লুকিয়ে আনে আমি তার গার্জিয়ানকে ডাকতে বাধ্য হব। যদি এই সিদ্ধান্তের পরও গুরুতর কিছু হয়, তবে আমি তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করার সময় বিন্দুমাত্র ভাববো না। তোমরা একই স্কুলের ছাত্রছাত্রী। একে অপরের সহপাঠি এবং সহযোগী। তোমরা একে অপরের সাথে বন্ধুশোলভ ব্যবহার করবে। একে অপরের সাথে ভাই-বোনের মতো আচরণ করবে। তা না। এসব কী চলছে স্কুলে?’
আকাশী পেছনের সারির কিছু মেয়ের দিকে তাকালো। মেয়েগুলোর মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। এতদিন ওদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পায়নি বলে কাউকে আকাশী ধরতে পারেনি। এই মেয়েগুলোর কারণেই ক্লাসের বিশ পার্সেন্ট মেয়ে খারাপ হয়ে গেছে। নির্ঘাত সেলিনা ওদের কাছ থেকে দেখেই মোবাইল আনতে শুরু করেছে। অথচ সে কখনও তাদের সরাসরি ধরতে পারেনি। মোবাইল আনত তাও জানত না। অনেক সাবধানতা অবলম্বন করত মেয়েগুলো।
আকাশীর হঠাৎ খারাপ লাগল। আজ সে যদি সেলিনার মতোই আবেগপ্রবণ হতো, তবে আজ সেলিনার পরিবর্তে সেই ওই নৃশংস ঘটনার শিকার হতো। এরপর ক্লাসে পড়া তেমন একটা জমেনি।
আকাশী বাসায় এসে দেখল, বাবা চা খাচ্ছে। আকাশীকে দেখে তিনি কাছে ডাকলেন। সে বাবার পাশে বসে পড়ল।
‘স্কুলে ক্লাস কেমন হয়েছে?’
‘ভালো।’
‘তোর কি কিছু লাগবে?’
‘না বাবা।’
‘আমি এলাম একটা সপ্তাহ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই একই কথা জিজ্ঞেস করেছি। প্রত্যেকবার বলছিস, কিছু লাগবে না।’
‘সত্যি বলছি কিছু লাগবে না।’
‘আসার সময় বিভা যা যা বলেছে সবই এনেছি। তোর জন্য কাপড় ব্যতীত কিছুই আনতে না পারায় খারাপ লাগছে। “বাবা, আমার কিছু লাগবে না। আপনি সেফলি চলে আসুন। তাতেই মন ভরে যাবে।” এমন কি হয়? না আজ বল, আমার মেয়ের কী লাগবে।’
‘আচ্ছা, এতো জোর করছেন যখন বলছি, আমার জন্য শাড়ি আর চুড়ি আনবেন?’
তিনি কিছুটা কৌতুক বোধ করলেন, ‘এগুলো কেন? বিয়েসাদি করতে ইচ্ছে করছে নাকি?’
‘আরে না। শুধু বিয়েসাদির জন্যই মেয়েরা এসব পরে নাকি?’
আজমের হঠাৎ মনে পড়ল, দুই বছর আগের আকাশীটা এখন আর নেই। সে আগের চেয়ে যথেষ্ট লম্বা আর সুন্দর হয়েছে। আগের বাচ্চাপনাটা একদম নেই তার মাঝে। একটা মেয়েলিপনা সবার আগেই চোখে পড়ে। চুলগুলোও তার যথেষ্ট লম্বা হয়েছে, গলার স্বরে কোমলতা এসেছে। তিনি তার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা আনব। কিন্তু আমার মেয়ের হঠাৎ শাড়ি পরতে কেন মন চাইছে? শাড়ির পরিবর্তে দামি কোনো সেলোয়ার-কামিজ কিনে দিলে হবে না?’
‘না আমার শাড়ি পরতেই ইচ্ছে করছে, সুতির শাড়ি। আমি শাড়ি পরে ঘুরব।’
‘তোর মতো বয়সের মেয়েরা তো শাড়ি পরে না। লোকে কি বলবে!’
‘আমি লোকের জন্য পরতে চাইছি নাকি? আমি নিজের সুখের জন্য পরতে চাইছি। বিবিজানও তো পরতেন।’
‘বিবিজান? উনার কথা কিভাবে জানলি?’
‘অনেকের কাছ থেকে শুনেছি।’
‘হ্যাঁ, কিন্তু তখনকার যুগে তো মেয়েরা বেশিরভাগ শাড়িই পরত।’
‘তবু বাবা। আমি পরব।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
‘আর হ্যাঁ, একটা মেহেদিও আনবেন। আমার ফুল আঁকতে বেশি ভালো লাগে।’
আজম নীরবে সায় দিলেন। তিনি যেন এই নতুন আকাশীকে চিনতে পারছেন না। তার মাঝে বয়স হওয়ার পর অদ্ভুত এক পরিবর্তন এসেছে।

সন্ধ্যায় আজম তার চাহিদাগুলো পূরণ করলেন। দুইজোড়া চুড়ি, দুটো শাড়ি, মেহেদি আর কাজলের ছোট একটা কোটা পেয়ে আকাশী খুশিতে আটখানা হয়ে গেছে। সে দুইহাত ভরে মেহেদি দিলো। চমৎকার রং ধরেছে। এরপর কোনোভাবে আন্দাজে শাড়ি পরল। তাও দেখতে খারাপ হয়নি। হালকা জলপাই রঙের শাড়ির সাথে মিলিয়ে সে সবুজ রঙের চুড়িগুলো পরল। সে কখনও চোখে কাজল দেয়নি। এই প্রথমবারের মতো সে কাজল দিয়েছে। সাজলে যেকোনো সাধারণ মেয়েকে সুন্দর দেখায়, তা আকাশীর জানা ছিল না। আকাশী বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
‘বাবা, আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?’
আজম পত্রিকা থেকে চোখ তুলে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলেন। না, আকাশীকে একদমই ছোট লাগছে না। শাড়িতে তাকে আরও বড় দেখাচ্ছে। আকাশী তাঁকে পা ধরে সালাম করে বেরিয়ে গেল। প্রথমে অনিকের বাসায় গিয়ে সবাইকে সে চমকে দেয়। অনিক নির্বাক হয়ে তার দিকে তাকায়।
অনিক বলল, ‘ফুলি, তোকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। এভাবে সাজলি কেন?’
‘ইচ্ছে হয়েছে।’
‘যা বলিস, বেশ লাগছে তোকে।’
চেয়ারম্যান এসে বললেন, ‘বাহ্! ফুলি মা, তোকে তো একদম বিবিজানের মতো দেখাচ্ছে।’
আকাশীর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, ‘কেন? আমাকে তার মতো কেন দেখাবে? তিনি নাকি বোকা টাইপের ছিলেন।’
‘হ্যাঁ, বিবিজান হয়তো তোর মতো ফরসা ছিলেন না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তোর মতো মেয়ে কিন্তু আমাদের গ্রামসুদ্ধ আশেপাশের দুই-তিন গ্রামেও নেই।’
আকাশী কিছুটা লজ্জা পেয়েছে। তবু তিনি বলেছেন, তাকে বিবিজানের মতো দেখাচ্ছে। এটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কথাটা মাথায় আসতেই সে বেরিয়ে গেল। অপূর্বদের বাসার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর পরিচারিকা দরজা খুলল। সেও আকাশীকে দেখে বিস্মিত আর অভিভূত হয়ে গেছে।
আকাশী ভেতরে ঢুকে সানজিদার সামনে দাঁড়িয়ে হাসে। তিনিও অবাক না হয়ে পারলেন না। আকাশীকে শাড়িতে দেখে বিস্মিত হয়েছেন বটে। কিন্তু তাকে সুন্দর দেখাচ্ছে, এটা বলার অপেক্ষা তিনি করেননি।
আকাশী তার পাশে বসে গল্পগুজব করতে থাকে। তারা নাকি মাস দুয়েক পর বাড়িটা ছেড়ে দেবেন। এই বিষয়ে তারা যখন গল্প করছিল, তখন মায়ের রুমে অপূর্ব ঢুকল। আকাশী তার দিকে ফিরে তাকানোর পর অপূর্ব আচমকা একটা ঘোরে চলে গেল। যে আকাশীকে সে এই যাবৎ পড়িয়েছে তাকে নিয়ে কখনও ভাবেনি। আজ হঠাৎ তার প্রতি আকর্ষণ বোধ করছে। দেখতে ভালো লাগছে তাকে।
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here