মিহু গনিত বই বের করো,,বলেই তাহসিন স্যার ঘরের ভিতরে ঢুকলেন,,,
আমি এখন কি করব বুঝতে পারছি না। এই লোক কি পাগল হয়ে গেলেন।বাসররাতে কেউ কি বউকে অংক করায়,,, মানছি আমি তার ছাত্রী কিন্তু তাই বলে আজকে পড়তে বসতে হবে,,, তাকে যে কিছু বলব কিন্তু কীভাবে, বলতে গেলেই তো আমার আবার হাত পা কাঁপতে থাকে,,
আমি মাহিরা জাবিন মিহু। ক্লাস টেন এ পড়ি। আজকে হঠাৎ স্কুল থেকে ফেরার পর দেখলাম স্যার আর তার বাবা এসেছে। ব্যাপারটা আমি স্বাভাবিক নিয়েছিলাম। কারন আঙ্কেল মাঝেমধ্যে আমাদের বাড়িতে আসেন।কিন্তু যখন কাজী সাহেব আসলেন তখন আমার একটু সন্দেহ হয়। তারপর যখন বাবা বিয়ের কথা বলে আমি তখন আকাশ থেকে পড়ি। প্রথমে রাজি না থাকলেও পরে বাবার কথা রাখতে রাজি হয়ে যায়। আপু আমাকে হালকা পাতলা সাজিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এতটুকুতে আমার মন ভরে নি। কও স্বপ্ন ছিলো। স্যারের জন্য সব নষ্ট হয়ে গেল।সে কেন আমাকে বিয়ে করল,,হয়তো তার বাবার জন্য আমাকে বিয়ে করছেন।আমি কিভাবে তার সাথে থাকবো। তাকে দেখলেই তো আমার অনেক ভয় লাগে।ভেবেছিলাম আর পড়তে হবে না। কিন্তু আমার পোড়া কপাল, আজকে রাতেই আমাকে পড়তে বসতে হবে।
তাহসিন : কি হলো বই বের করো,,,
আমি: স্যার আজকে না আমাদের বাসর রাত?[ভয়ে]
তাহসিন : হ্যাঁ তো,,,
আমি: আজকে পড়বো না,,,
তাহসিন : কেন? বাসর করার শখ জাগছে?
স্যারের কথা শুনে আমার চোখ আপনাআপনি বড়ো করে তার। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে,,,
তাহসিন: কি হলো? বলো,,
আমি:না,, মানে,, আমার আজকে অনেক ক্লান্ত লাগছে,,, [নিচের দিকে তাকিয়ে]
তাহসিন : তোমার তো দেখি সাহস বেড়ে গিয়েছে মিহু ,,,
আমি: নিশ্চুপ,,,
তাহসিন :কোনো কথা নয় বই বের করো। কালকে তোমার পরীক্ষা। পরীক্ষায় যদি কম পাও তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে,,,
আমি স্যারের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলাম। তাই তারাতারি বই বের করলাম। আমার মনে হচ্ছে আমি পৃথিবীর প্রথম মেয়ে যে কিনা বাসররাতের অংক করছি,, তাও আবার স্যারের আছে। আল্লাহ,,,
আমি অংক করছি। স্যার মোবাইল স্ক্রোল করে। আমার এই মোটা শাড়িতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। তাই স্যারকে বললাম,,
আমি: স্যার,,
তাহসিন :হুম,,,,
আমি :ঘুমাবো,,,
তাহসিন : আগে অংক শেষ করো,,,
আমি: স্যার,,,
তাহসিন :বলো,, শুনছি তো,,,
আমি: স্যার শাড়িতে কষ্ট হচ্ছে,,
তাহসিন : খুলে ফেল,,
আমি স্যারের কথায় কি উওর দিব। ভেবে পাচ্ছি না,,
তাহসিন : যাও চেন্জ করো,,
আমি : কোথায় চেন্জ করব,,, আপনি বাইরে যান,, [কাঁপতে কাঁপতে]
তাহসিন : না যাব না,, তুমি বাতরুমে যাও,,
আমি : না স্যার,, আপনি বাইরে যান প্লিজ,,
স্যার এবার ফোন থেকে চোখ তুলে আমার দিকে তাকালো। কতক্ষণ এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি ইতস্তত বোধ করছি বুঝতে পেরে বাইরে বেরিয়ে গেলেন ।
স্যার যাওয়ার পর আমি শাড়ি পালটে সাদা রংয়ের একটা থ্রি পিস পড়লাম। এখন অনেকটা ভালো লাগছে। চেন্জ করে বিছানায় পড়তে বসলাম,, একটু পড়ে স্যার ঘরে আসল,,,
তাহসিন : হয়েছে তোমার?
আমি : হুম,,
প্রায় রাত দুটো পর্যন্ত স্যার আমাকে অংক করালেন। আমি আর পারছি না। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। কিন্তু সে একটু ক্লান্ত হয়নি।
আমি : ঘুমাবো,,
তাহসিন : ওকে।আর পড়তে হবে না। বাকি অংক গুলো সকালে বুঝিয়ে দিব,,
আমি: স্যার,, কোথায় ঘুমাবো,,
তাহসিন : তুমি কোথায় ঘুমোবে তা আমি জানি না। বিছানা থেকে নামো,,
আমি কোন কথা না বলে ভালো মেয়ের মতো খাটের থেকে নিচে নামলাম,,
তাহসিন : শোন মিহু,, আমার কাছে থেকে দূরে থাকবে। আর বিয়ের কথা ভূলে যাও। পড়াশোনা কর। নিজের বয়স দেখছো।তোমার বয়স মাএ পনেরো বছর,, আর আমি তোমার চেয়ে চৌদ্দ বছরের বড়ো। তাই আমি পারছি না তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মানতে। বাবার জন্য তোমাকে বিয়ে করলতে হলো,, নাহলে,,
আমি: নিশ্চুপ,,,
তাহসিন :দেখ তোমার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। সো ছোট্ট মানুষ ছোট্ট মানুষের মতো থাকবে। আমার বউ হওয়ার চেষ্টা করবে না,,,
স্যারের কথাগুলো শুনে আমার অনেক খারাপ লাগল। আমি চুপচাপ ফ্লোরে শুয়ে পড়লাম।অবাধ্য চোখের জল বৃষ্টির মতো পড়তে লাগল। নিশ্চুপ ভাবে কাঁদতে লাগলাম। সে যদি আমাকে বউ হিসেবে মানতে না পারে তাহলে কেন আমাকে বিয়ে করল? ,,, প্রচুর ক্লান্ত হওয়ার বেশিক্ষণ জাগতে পারলাম না আস্তে আস্তে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম,,
সকালে আজানের শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেল।মাথাটা প্রচুর ঝিম ঝিম করছে,, ভালো করে চারপাশে তাকিয়ে রইলাম আর যা দেখলাম আমি তো অবাকের শেষ পর্যায়ে,,,
(#চলবে)
#গল্পের নাম:#পবিএতার_ছোঁয়া( সিজন২)
#পর্ব :১
#লেখিকা :#জাবিন_মাছুরা [ছদ্মনাম]
[প্রথম পর্ব তাই ছোট করে দিলাম। ভূল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনারা খুশী তো? । সিজন ১ এর সাথে অল্প মিল থাকলেও পুরোটা এক রকম হবে না।]