#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া
৫
আহফিন কল দিয়েছে। তূবা তার কল পেয়ে চিন্তিত। ভাবছে এখন কি আবার যেতে হবে নাকি? তূবা ফোন নিয়ে একতলা বাড়ির ছাদে চলে গেল। এত না ভেবে সে কল টা ধরল।
“হ্যালো।”
“তোমাকে কি আমি যেতে বলেছিলাম?”
“…
“কি হলো? টাকা না নিয়েও চলে গেছো।”
“আমি ভেবেছি কাল এক সাথে নিয়ে নিব। আর আপনি ঘুমাচ্ছিলেন।”
“আগেআগে ভাবতে যাও কেন তুমি? এত বেশি বেশি ভাববে না। ডেমিট।”
আহফিন কল কেটে দিল। তূবা কিছু বুঝল না। মনে মনে বিড়বিড় করল “কি অদ্ভুত লোক।” তারপর নিচে গেল।
রাগে কিটিকিট করছে আহফিন।
“এই মেয়ে আমাকে যেমন শীতল করে তেমনি উষ্ণ করে তুলে। কি অদ্ভুত মেয়ে।”
খাবারের জন্যে ফরিদা আন্টি ডাকতে এলেন আহফিন কে।
“নিচ থেকে ডাক দিতে আন্টি আমি চলে যেতাম।”
“তুমি যে কাল রাতে খাও নি। কি মনে করেছো বলো তো। যার জন্যে খাবার বানাতে বললে সেও খায়নি। যা রান্না করে গিয়েছি তাই আছে।”
“আন্টি তুমি জানো না আমার কথা না শুনলে, মুখের উপর কথা বললে রাগ হয়ে যায়। তাই তখন বলি নি আর পরে ভুলে গিয়েছি।”
“আচ্ছা এখন খাবে নিচে চলো।”
“আমি একটু অফিস যাবো।”
“খেয়ে তো যাবে।”
“আচ্ছা। যাও তুমি। তোমার সাথে কি আর পারা যাবে।”
দিনটা তূবার একটু ভালোই কাটে। ও বাড়ি থেকে এসে গোসল করেই লম্বা একটা ঘুম দেয়। দুপুরে উঠে খেয়ে শুয়ে তুসির সাথে গল্প করে। বিকেল বেলায় রান্নায় একটু সাহায্য করতে গেলে শিরিন দেন না করতে। তুসির মাথায় বিলি কাটতে কাটতে নিজের দুঃখে হারিয়ে যায়। তবুও ভালোই লাগে এই সময় টা তার। প্রতিদিনকার মতো আজও তূবা নিজের চাকরির পথে ছুটল। আহফিন আজ তেমন কথা বলে নি। কোথা থেকে এসে যেন বলল,
“খাবার খেয়ে এসেছো?”
“….
“কি হলো?”
“হু।”
“মনে হচ্ছে না।”
“…
“নিচে চলো খাবে।”
“পেট ভরা আছে।”
“তূবা বারবার বলতে ভালো লাগে না। চলো।”
“আপনি যান আমার খিদে নেই।”
বলে তূবা পিছন ফিরে গেল। আহফিন তূবার কাছে গেল। বাহুতে বেশ শক্ত করেই চেঁপে ধরল।
“তুমি যাবে না জোর করে আমায় নিতে হবে?”
“ছাড়ুন হাতটা।”
“….
“যাচ্ছি ছাড়ুন।”
আহফিন হাতটা ছেড়ে দিল। তূবার সাথে সেও নিচে গেল। তূবা চারপাশ দেখছে। তখন আহফিন বলে উঠল,
“সকালে যাকে দেখেছিলে তিনি এখন নেই। তাই না খুঁজে খেয়ে নাও।”
“উনি আপনার কে হয়?”
“….
আহফিন কিছু না বলে তূবার দিকে তাকাল। তূবা চোখ নামিয়ে ফেলল সাথে সাথে। কি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি!
“এসব তোমার জানার কথা না। যে কাজের জন্যে এসেছো তাতে শুধু টাকাই নিতে পারো। এর বেশি কিছু না। চুপচাপ খেয়ে উঠো।”
তূবার রাগ হলো। মনে মনে বলল “আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিল লোকটা? খাডাসের মতো কথাবার্তা।” নাক ফুলে গেল তূবার। ওপর পাশে বসে থাকা আহফিন আড়চোখে কপাল কুঁচকে দেখল তাকে। লাল হয়ে গেছে তূবার মুখ। আহফিন ঠোঁট টিপে হাসল।
লোকটা আসছিল না দেখে তূবা ব্যালকুনিতে ছিল। বাতাসে লম্বা চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। তূবা কালো একটা শাড়ী পরে আছে। পাতলা একটা শাড়ী। খোলা চুল দমকা হাওয়ার সাথে সাথে নেচে চলছে আপন মনে।
“খুলে দাও তুমি এই চুলের বাঁধন
অবাধ্য হয়ে না হয় সে বাতাসেই উড়ুক।
ইচ্ছে হয় হাড়িয়ে যাই
ওই খোলা চুলের গভীরতায়।
খোলা চুল তুমি বলে দাও
কেনো মুগ্ধ না হবে কেউ তোমার মায়ায়।”
‘লম্বা এক গুচ্ছ কালো কেশ পুরুষের মন কেও প্রভাবিত করতে পারে।’
আহফিন তূবাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। তূবার পেটে টেনে ধরে আহফিন নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। চুলের মাঝে মুখ ডুবাল। তূবার ঘাড়ে নাক ঘষল কয়েকবার। ছোট ছোট কয়েকটা চুমু দিল তার উষ্ণ ঠোঁটে। তূবা বরাবারের মতো বোবা।
আহফিন তার ঘাড়ে গভীর ভাবে একটা কিস করে চলে গেল। সে যেতেই তূবা ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে দিল। চোখ গুলি চিকচিক করে উঠল তার।
সামান্য সময়ের ব্যবধানে আহফিন আবার ফিরে এলো। তূবা তখনো ওখানে আগের মতোই দাঁড়িয়ে ছিল। আহফিন গিয়ে তূবার ঘাড়ের চুল গুলি সরিয়ে এক পাশে রাখল।
তূবা বুঝতে পারে না এই লোকের চলা ফেরা। হঠাৎ ঘাড়ে ঠান্ডা কিছু অনুভব করল। আহফিন আলতো হাতে নিজের দেওয়া কামোড়ের স্থানে মলম লাগিয়ে দিল। তারপর তূবার দুই বাহুতে ধরে নিজের দিকে ফিরায়। দুই গালের পাশে দুই হাত রেখে আহফিন তূবার চিকচিক করা চোখ মুখ দেখতে লাগল। চোখে তার নেশা, মনে মাতাল করা অনুভূতি। সে বুঝে না এত অনুভূতি কোথা থেকে চলে আসে তূবার কাছে থাকলে। আহফিন নেশাভরা চোখ নিয়ে তূবা কে দেখছে। সমান তালে তূবাও আহফিনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করছে। নির্লিপ্ত চাউনি।
নরম কোমল স্বরে আহফিন বলল
“কি আছে তূবা তোমার মাঝে? কেন এত টানে আমাকে তোমার দিকে? দুই দিনে কি এমন করলে আমাকে? কোন তাবিজ মন্ত্র দিয়ে বশীভূত করলে আমায়? বলো তূবা বলো।”
“….
তূবা কিছু না বলে তার চোখের দিকে অগাধ দৃষ্টি দিয়ে অবলোকন করছিল। তার ভেতর অদ্ভুত রকম কিছু একটা হচ্ছে।
আহফিন আস্তেআস্তে তার মুখ এগিয়ে দিল তূবার দিকে। তূবা চোখ বন্ধ করে নিল। তূবার নিবদ্ধ চোখ মুখ দেখে আহফিনের ভেতরে আরো শিহরন বইতে লাগল। আলতো করে সে তূবার নরম ঠোঁট স্পর্শ করল। তার অতল ভূতিতে আস্তেআস্তে উপনীত হলো। তূবার গরম নিশ্বাস আহফিন বুক ভরে নিচ্ছে।
তূবার গলায় লেগে থাকা চুল গুলি সরিয়ে দিয়ে আহফিন সেখানে ঠোঁটের পরশ দিল। তূবা নিজের শাড়ীতেই খামছে ধরল। লোকটার স্পর্শ আজ অন্য রকম। কেমন আলাদা আলাদা।
আহফিন কিছু সময় পর তূবা কে কোলে তুলে নিল। নেশাগ্রস্থের মতো বলল,
“কালো শাড়ী তে আমার তূবা কে এক টুকরো বিষণ্ণ দেখাচ্ছে।”
“..
“তূবাকে তো টকটকে লাল রংয়ে মানায়। সেই প্রথম দিনের টকটকে লাল রংয়ের শাড়ী।”
আহফিন তূবা কে নিয়ে বিছানায় চলে গেল। কালো শাড়ীতে বিষন্ন লাগছে বলে সে তার আঁচল খুলে নিল। তূবার কানের লতির খুব কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল “তূবা মানে আমার নেশা। মাতাল করা এক নেশা।”
আহফিন আজ ৮ টায় উঠে গেছে। তূবা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আহফিন খালি গায়ে সোফায় বসে আছে। পরনে টাউজার টা সুঠাম দেহের নাভির নিচে পড়ে আছে। তূবা চোখ সরিয়ে নিল। নিজেকে ঠিকঠাক করে মাথা নুয়িয়ে চলে গেল পাশ দিয়ে। আহফিন তাকে ডাকল।
“তূবা।”
“…
“এদিকে আসো।”
তূবা চুপচাপ ওখানে যায়।
“খাম টা নাও। আর প্রয়োজন হলে কল দিবে আমায়।”
“ধন্যবাদ।”
“আজ বোধ হয় তোমাকে রাতে আসতে হবে না। আমি আজ থাকব না। আর হ্যাঁ ভুলেও লিলার বলা কোনো ছেলের সাথে দেখা করতে যাবে না।”
কথাটা শেষ করেই আহফিন তার গাল দুটি চেঁপে ধরল। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“তাহলে আহফিন চৌধুরী কে তুমি খুব ভালো করেই চিনবে। এবার আমি আর কিছু বরখাস্ত করব না। ভুলো টা এটা।”
আহফিন তূবার গাল ছেড়ে দিল। সে তার দিকে ভ্রুকুঞ্চন করে তাকাল গালে হাত দিয়ে। লেগেছে খানিক।
“চলার মতো প্রয়োজনীয় টাকা দিয়েছি ওখানে। তাই আমি যা বললাম তার একটা কথাও যেন নড়চড় না হয় তূবা। সাবধানে থাকবে।”
আহফিন এবার তূবার গালে আলতো হাত রেখে কপাল এগিয়ে আনল। কপালে গভীর কোমল একটা পরশ পরল তূবার। এই প্রথম হয়তো লোকটা তার কপালে চুমু খেলো। তূবার কাছে বিষয়টা কেমন যেন অন্যরকম লাগল। ভেতরে দৌড়ে কিছু একটা ছুটে গেল। তূবা আহফিনের দিকে তাকিয়ে রইল। তার এমন কাজে তূবা খুব অবাক হয়েছে।
আহফিন নীরবে ওয়াশরুমে চলে গেল। তূবা তখনো কেন যেন ঠাই বসে আছে। চোখের পাতা পড়ছে না তার। শূন্যে এখনো তাকিয়ে আছে সে। লোকটা আসলেই অদ্ভুত। অদ্ভুত তার কাজকর্ম। কখন কি করে বুঝা যায় না। ভেতরে কেন যেন লোকটার প্রতি একটা টান অনুভব করছে সে।
চলবে♥
(অসুস্থতার কারণে দিতে দেরি হলো। দোয়া করবেন❤️)