ওই_আকাশটা_আমার_ছিল পর্ব ১৩

#ওই আকাশটা আমার ছিল
#রোকসানা আক্তার
পর্ব-১৩

২০.
রহিমা চেম্বার থেকে বের হয়ে কেবিনে আসেন।এসে দেখেন অয়ন নেই। পৃথী একা বসে বসে ফোন টিপছে।রহিমা হাতের স্লিপটা টেবিলের উপর রেখে মেয়ের দিকে এগিয়ে যেয়ে বলেন ,
“অয়ন চলে গেছে,পৃথী?”
“হু।”
“কখন গেছে?
“কিছুক্ষণ আগে হবে।”
“তুই ওকে যদি একটু বসতে বলতিস আমি আসলে নাহয় পরে যেত!
“বলেছি।”
“কি বলেছে অয়ন?”
“বললো বাসায় নাকি কি আর্জেন্ট কাজ আছে তাই যেতে হচ্ছে নাহলে আরো কিছু সময় থাকতো।”
“ওহ!আমার এই জরুরীর সময় ছেলেটারও জরুরী পড়ে গেল!”
“তোমার আবার কি জরুরী?”
বলেই পৃথী এবার ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে রহিমার দিকে তাকায়।মেয়ের প্রশ্নাতীত বাক্যে রহিমার চোখমুখে মুহূর্তে এক হাসির ঝলক ছুঁয়ে যায়।বাচ্চাদের লাফ মেরে মেয়ের পাশ ঘেঁষে বসে পড়েন।আর গদগদ গলায় বলে উঠেন,

“পৃথী তোর জন্য একটা বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে।”
পৃথী কিছু বলে উঠার আগেই রহিমা আবার বলে উঠেন,
“ছেলেটাকে তুই চিনবি।খুবই ভালো করেই চিনবি।অবশ্যি তোরও পছন্দ হবে ছেলেটাকে!”

পৃথী অপ্রস্তুত হয়ে যায়।কি বলবে তাই ভেবে পায় না।রহিমা আবারও বলে উঠেন,
“ছেলেটা কে জানিস?অয়নের বন্ধু ডাক্তার ফাহাদ!অবশ্যি অয়নও জানে ফাহাদ তোকে বিয়ে করতে চায়।তাই অয়ন বাবার থেকে ছেলেটার ডিটেইলস সব জানবো।অয়ন বাবা যদি পুরোপুরি সাপোর্ট দেয় তাহলে তোকে ফাহাদের সাথে বিয়ে দিব।তাছাড়া, আমারও বিলিভ ফাহাদ ওতটা খারাপ হবে না।দেখতে সুন্দর,ব্যবহার সুন্দর তারউপর ডাক্তার!আর কি চাই! তুই তো একেবারে রাজকীয় ভাবে থাকবি!আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না এমন একটা ভালো পাত্রের সন্ধান পেয়ে যাবো।সবই ওই ওপরওয়ালার ইশারায়!”
” কে বলেছে ডাক্তার ফাহাদ যে আমাকে বিয়ে করতে চায়?”
“ফাহাদ নিজেই বলেছে।এখন যে চেম্বারে গেলাম না তখনই ছেলেটা আমাকে প্রস্তাবটা দেয়।প্রস্তাবটা দিতে যেয়েও ছেলেটা কত লজ্জা পেয়েছে, জানিস?আমি তো মনে মনে হাসতে হাসতে শেষ!”

পৃথী ফস করে একটা তপ্ত শ্বাস ছাড়ে।মাথা ঘুরিয়ে জানলা দিকে চোখ রাখে।বাইরের ব্যস্তময় শহরটার দিকে তাকিয়ে থাকতেই দুই চোখ ঝাপসে সে।বুকটা ভার হয়ে আসে।সাথে হার্টবির্টের গতি!দুই হাত কেবিন ক্লথের সাথে খুব জোরে আকড়ে ধরে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করে।রহিমা আবারো বলে উঠেন,

“ডাক্তার ফাহাদকে তোর কেমন লাগে পৃথী? পছন্দ হয়েছে?”

পৃথী এবার মার দিকে টানা চোখে তাকায়।মাকে অনেককিছু বলতে ইচ্ছে হয় কেনজানি মুখ থেকে শব্দ আসে না।আবার আগের মতনই নিশ্চুপ।রহিমাও তা খেয়াল করে নি।এই মুহূর্তে খেয়াল করার প্রয়োজনও নেই তার।এমন ভালো পাত্র মেয়ের অসম্মতি থাকার প্রশ্নই আসে না!

“পৃথী অয়নকে এবার একটু কল দে!আমি অয়নের সাথে কথা বলবো।কারণ আমি দেরী করতে চাই না।”
পৃথী মার দিকে ফোন এগিয়ে দেয়।জানে এখন ফোন না দিলে রহিমার এই ফোন করার অস্থিরতা আজ সারাদিনও শেষ হবে না।রহিমা ফোন হাতে নিয়ে নিজে নিজে অয়নের নাম্বার বের করে অয়নকে কল মারে,
“হ্যালো,অয়ন?আমি পৃথীর মা বলছি।”
“জ্বী,আসসালামু আলাইকুম আন্টি,বলুন?”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।বাবা পৃথীকে ত কাল সকালে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে বাসায় নিয়ে যাবো।বাবা তুমি কাল সকালে একবার এসে আমার সাথে একটু দেখা করে যেতে পারবে?”
“আন্টি সকালে মনে হয় না পারবো।সকালে আমার কিছু ক্লায়েন্ট আসবে।মিটিং আছে।আমি বিকেলের দিকে যদি আসি?”
“বিকেলে ত বাসায় থাকবো বাবা।”
“সমস্যা নেই আমি আপনার বাসায় যাবো।”
“অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।অনেক ধন্যবাদ!”

রহিমা হাসিমুখে কল রাখে।তারপর পৃথীর কাছে যেয়ে মোবাইল এগিয়ে দিতে দিতে বলে,
“অয়ন কাল আসবে!আর তুই একটু থাক।আমি বাইরে থেকে আসতেছি।রিলিজ করার ব্যাপারটা কার্টশির্ট করে আসি ”

বলেই রহিমা দ্রুতপদে কেবিন থেকে বেরিয়ে যান।রহিমার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে পৃথী হঠাৎ উদাস মনা থেকেই বলে,
“আপনার জন্য খুব ভালো হয়েছে, তাই না অয়ন?আমি আর কখনো আপনাকে বিরক্ত করতে যাবো না।ভালোবাসার কথা বলবো না।বার বার বেহায়া উপাধি পাবো না।আপনি এখন মুক্ত। একদম মুক্ত পাখির মতন মুক্ত!”
বলতে বলতে চোখজোড়া থেকে দুইফোঁটা জল টপ করো গালের উপর বেয়ে পড়লো।

২১.
পরদিন বিকেলে অয়ন রহিমার বাড়ি আসে।ঘরে বসার তেমন আসবাব নেই।পৃথীর রুমে একটা টেবিল আর একটা চেয়ার আছে।আপাতত কোনো রকমে পৃথীর রুমেই অয়নকে বসতে দেওয়া হয়।রহিমা বিছানার উপর বসে বসে অয়নের সাথে কথা বলছেন।আর পৃথীকে কাজে লাগিয়ে দিছেন চা,নাস্তা বানানোর জন্যে।পৃথী কিচেনে বসে বসে তাই করছে।কিচেনটা পৃথীর রুম থেকে সাত-আঁট ইঞ্চির দূরত্বে!রুমে কোনো খচখচ আওয়াজ হলেও তা কিচেনে শুনা যায়।পৃথী রহিমার এবং অয়নের কথোপকথন খুব ভালো ভাবেই শুনতে পাচ্ছে।

“ফাহাদ ত তোমার বন্ধু।আমার থেকেও তুমি তোমার বন্ধুর সম্পর্কে ভালো জানো নিশ্চয়ই।এখন ফাহাদ পৃথীর জন্যে কেমন হবে বাবা?”
“ভালো।খুবই ভালো।ফাহাদের মাঝে কোনরকম মারামারি নেই।কাঁটাকাঁটি নেই।ড্রিংক নেই।আড্ডা নেই।বলতে গেলে খারাপ কোনো কিছুই নেই। ও খুবই সুশ্রীল আর মার্জিত সম্পূর্ণ। ওর পরিবারের প্রতিটি লোকও তাই!পৃথী এমন একটি ছেলেরই এবং এমন একটি পরিবারেরই যোগ্য আন্টি।”
“আলহামদুলিল্লাহ!”

নির্লিপ্ত উত্তর!কি সুন্দর করেই না কথাগুলো বলে ফেললো!এ কথা গুলো বলতে অয়নের একবারও বুক কাঁপে নি?কিন্তু ওপাশে কেচিনে বসে যেই মানুষটি তারজন্যে নাস্তাপানি বানাচ্ছে সে ত কষ্টে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে!কাঁদছে।খুব কাঁদছে!তারই একফোঁটা জল এসে ময়দার উপর গড়িয়ে পড়েছে!সেই সময় ওই রুম থেকে রহিমার ডাক আসে।

“এই পৃথী?তাড়াতাড়ি নাস্তা নিয়ে আয়।এত দেরী হচ্ছে কেন তোর?”

পৃথী রহিমার কন্ঠে নড়ে উঠে।তরহর চোখের পানি মুছে পিঠা বানানোর কাজে আবার হাত দেয়।তারপর আধা ঘন্টার মাথায় পৃথী সেমাই,ফুলপিঠা,বিস্কুট,চানাচুর,চা এবং পানি নিয়ে হাজির হয়। দরজার সামনে ট্রে হাতে দাড়াতেই রহিমা বলেন,

“দে দে অয়ন বাবার সামনে এনে দে!”

অয়ন দরজার দিকে তাকায়।পৃথী লম্বা ঘোমটা টেনে দাঁড়িয়ে।ঘোমটার কারণে পৃথীর মুখটা ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না।অয়নের ভেতরটা টনকে উঠে।পৃথীকে কেনজানি আজ দেখতে বড্ড ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে!তার মায়াময় মুখের এই মুহূর্তের অনুভূতি গুলো শুনতে খুবই মন চাচ্ছে।সে কি রাজি আছে ফাহাদকে বিয়ে করতে?নাকি আড়ালে আবড়ালে কাদছে। কেঁদে কেঁদে বলছে -“নাহ মা আমি ফাহাদকে বিয়ে করবো না!আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি।তাকে নানান ভাবে আমার অনুভূতি বুঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু সে বুঝেও বুঝলো না।আমাকে এড়িয়ে গেল! সে কি আমাকে ভালোবাসে না?”
বাসে পৃথী।অয়নও তোমাকে খুব ভালোবাসে।কিন্তু সে তারমতো একটা গুন্ডার লাইফে তোমাকে জড়াতে দিবে না।তুমি তাকে নিয়ে কখনো সুখী হবে না!ফাহাদ খুব ভালো ছেলে।সে ই তোমার জন্যে পারফেক্ট পৃথী!
অয়নের ভাবনার মাঝেই পৃথী টেবিলের উপর ট্রে রাখে।ট্রে থেকে সবগুলো খাবার এক এক করে নামিয়ে দিয়ে আবার চলে যেতে উদ্যত হলেই রহিমা পেছন থেকে বলে উঠেন,

“কোথায় যাচ্ছিস?এখানে বস।”
“নাহ,তোমরা কথা বলো।”
বলেই পৃথী বেরিয়ে যায়।তা দেখে রহিমা খিলখিল হেসে দেন।হাসি রেখেই বলেন,

“মেয়ে মনে হয় লজ্জা পেয়েছে।”

পৃথী অন্যরুমে এসে দরজা টা আলতোভাবে বন্ধ করে দরজার নিচে ধপাস করে বসে পড়ে।আর দুই হাত হাঁটুর উপর ভাঁজ করে তার মাঝে মুখটা গুঁজে নেয়।হয়তো এখন খুব কাঁদবে। মন প্রাণ উজাড় করে কাঁদবে।

(রাত একটার দিকে আরেকটা পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো।অনেকের অনেক কমেন্টস দেখলাম।আমি সত্যিই পারলে গল্প টা পোস্ট করতাম!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here