#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি
#পর্ব- ৪২
#Jannatul_ferdosi_rimi
আমি প্রেগন্যান্ট!
কথাটি শুনে রুদ্রিক নিশব্দে বেড়িয়ে গেলো। আমার মনে অজানা ভয় ঢুকে গেলো। রুদ্রিক কী তাহলে এতো তাড়াতাড়ি বাচ্ছা নেওয়ার ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনি?আমিও ডক্টরের থেকে পারমিশন নিয়ে বেড়িয়ে এসে দেখি,রুদ্রিক হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও রুদ্রিকের পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠলাম,
—-“রুদ্রিক, শুনো?”
রুদ্রিকের দৃষ্টি সামনের দিকে। আমি আবারো মৃদ্যু ধাক্কা দিয়ে বললাম,
—-“রুদ্রিক, তুমি শুনতে পারছো? তুমি কি এখন বেবী নিতে চাইছো নাহ?”
রুদ্রিকের নিরবতা আমাকে বড্ড কষ্ট দিচ্ছে। তাই আমি কিছুটা অভিমানের সুরেই বললাম,
–“তুমি যদি বেবী নিতে না চাও, ওকে ফাইন। আমি তাহলে এই মূহুর্তে বেবী নিবো নাহ। আমি ডক্টরের সাথে গিয়ে কথা বলবো। ”
কথাটি বলে আমি চলে যেতে নিলে,রুদ্রিক আমার হাত ধরে আমাকে একেবারে কাছে নিয়ে এসে আমার ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে বলল,
–“একবার বলেছো। ওকে ফাইন,বাট নেক্সট টাইম যেনো নাহ শুনি। ”
এমা! রুদ্রিকের চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে।
আমি রুদ্রিকের চোখের জল দ্রুত মুছিয়ে দিয়ে বললাম,
—“তুমি কান্না করছো কেন রুদ্রিক?”
রুদ্রিক আমার হাত নিজের গালের সাথেই মিশিয়ে বলল,
—“আমার মধ্যে ঠিক কী চলছে তোকে বলে বুঝাতে পারবো নাহ। এক অদ্ভুদ অন্যরকম সুখ উপলদ্ধি হচ্ছে। আমার নিজের ফিলিংশটুকু হয়তো প্রকাশ করতে ব্যর্থ। বাবা হওয়ার মধ্যে যে সুখ রয়েছে তা সহজে প্রকাশ করা যায়না। ”
রুদ্রিকের কথায় আমিও নিজেও কেঁদে উঠলাম।
রুদ্রিক আমার চোখের জলটুকু মুছিয়ে, আমার কপাল কপাল ঠেকিয়ে বলল,
—-“তুই কাঁদছিস কেনো কাজল? তুই আজকে আমাকে ঠিক কি দিয়েছিস তুই জানিস নাহ। প্রথমবার বাবা হওয়ার সুখগুলো সত্যি মূল্যবান।আমি কখনো ভাবিনি আমি এতো তাড়াতাড়ি বাবা হওয়ার সুখটা উপলদ্ধি করবো। তুই ঠিই বুঝতে পারছিস আমি ঠিক কী বুঝাতে চাইছি? ”
রুদ্রিক অনেক কিছু বলতে চাইছে কিন্তু সে বলতে পারছে নাহ।
আমাদের দুজনের চোখেই আজ জলে পরিপূর্ন। উহু
দুঃখের না এতো পরম সুখের।
রুদ্রিক আমাকে কোলে তুলে নিয়ে সারা হসপিটাল ঘুড়তে থাকে। এতো মানুষের সামনে হুট করে কোলে নেওয়ায়, আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে যাই,কিন্তু রুদ্রিই সাহেব এইসবের কেয়ার করে নাকি? উনি নিজের মতো আমাকে কোলে নিয়ে ঘুড়ছেন। যেনো আজ উনার মতো খুশি আর কেউ নেই।
নার্স ও ডক্টর সকলেই আমার দিকে তাঁকিয়ে মুঁচকি মুঁচকি হাঁসছে।
—-“রুদ্রিক কি করছো কী? সবাই কি ভাবছে বলো তো? ”
উনি বরাবরের মতো বলে উঠলেন,
–“হু কেয়ারস? রাফসিন শেখ রুদ্রিক এইসব কেয়ার করেনা। ইয়াহু তুই জাস্ট ভাবতে পারছিস আমি বাবা হবো। ”
—” হ্যা হ্যা আমি খুব করে বুঝেছি। বাট আমাকে নামাও প্লিয। বেবীর ক্ষতি হতে পারে;এতো ঘুড়লে।”
—“একদম ঠিক বলেছিস কাজল। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক আমাকে নীচে নামিয়ে দিয়ে,হসপিটালের সবার কাছে গিয়ে বলতে থাকে,
—“এইযে শুনছেন? আমি বাবা হবো। রাফসিন শেখ রুদ্রিকের বেবী হবে, সেই বেবী আমার পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখবে।”
হসপিটালের একজন স্টাফ এসে বলল,
—“তা স্যার শুধু মুখে বললেই হবে? আমাদের বুঝি মিষ্টি পাওনা নেই। ”
রুদ্রিক কিছু ভেবে বললেন,
—“ইউ আর রাইট। রাফসিন শেখ রুদ্রিকের প্রিন্স বা প্রিন্সেস আসবে বলে কথা। আমি এখুনি হসপিটালের সবার জন্যে মিষ্টি আনাচ্ছি। ”
রুদ্রিক কান্ড দেখে আমি হাঁসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছিনা?কিন্তু মানুষটা খুশি এইটাই অনেক। মনে হচ্ছে রুদ্রিক গোটা পৃথিবীটাই যেনো পেয়ে গেছে। সত্যি রুদ্রিককে এতোটা খুশি আগে কখনো দেখিনি।
রুদ্রিকের কথা বলার মাঝেই ডক্টর এসে বলল,
—“মিঃ শেখ শুধু মিষ্টি বিলালেই তো হবেনা। এখন থেকে বেবী ও বেবীর মায়ের দায়িত্ব কিন্তু আপনার। দেখে তো কমবয়সী মনে হচ্ছে আপনাদের। আপনার বউকে সময়মতো চেকাপ করাতে নিয়ে আসবেন। কালকে আরেকবার চলে আসিয়েন। ”
ডক্টরের কথা শুনে রুদ্রিক বলল,
—“আপনি কোনো চিন্তা করবেন নাহ। আমি আমার বেবী এবং বেবীর মায়ের দুজনেই খেয়াল রাখবো।”
কথাটি বলে রুদ্রিক আমাকে আবারো কোলে তুলে নেয়।
—“আরে কি করছো? ”
আমাকে থামিয়ে রুদ্রিক বলল,
—“গাড়িতে গিয়েই একেবারে নামিয়ে দিয়ে আসবো।”
কথাটি বলে রুদ্রিক আমাকে হসপিটালের বাইরে নিয়ে চলে আয়।
ডক্টর মুঁচকি হাঁসে। একজন নার্স এসে বলল,
—“দুজনকে কি সুন্দর মানিয়েছে তাইনা? ”
ডক্টর চোখে চশমাটা পড়ে বললেন,
—“দোয়া করি এই ভালোবাসা যেনো আজীবন অটুট থাকুক। ”
,________________
সাদি সিথিকে একপ্রকার টেনেই লাইব্রেরিতে নিয়ে আসে। লাইব্রেরি দেখে সিথি বলে উঠলো,
–“তুমি নিশ্চই আমাকে এখানে পড়াশোনা করতে নিয়ে এসেছো তাইনা? একটা কথা আমি ভালোভাবে বলে দেই। আমি কিছুতেই আজকে পড়বো নাহ হুহ।”
সিথির এমন কথা শুনার জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলো নাহ। সাদি বলে উঠলো,
—“সিথি, তোমার কী মনে হয়? আমি এখন এখানে তোমাকে পড়ানোর জন্যে নিয়ে এসেছি? “,
—“তুমি যা পড়ুয়া। তোমাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। ”
—“সিথি, আমি কিন্তু সিরিয়াস। ”
—“আমিও সিরিয়াস সাদি ভাইয়া। এখন আমার ক্লাস আছে। কাজল মেইবি আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। ”
—“সিথি, তুমি আমাকে এভোয়েড করছো কেন? ”
করুন সুরে বলল সাদি। সাদির প্রশ্নে সিথি হাত ভাজ করে বলল,
—“আমি তোমাকেএভোয়েড করি? তাতে তোমার কি আসে যায়? যাও নাহ নিজের সেই রুমির সাথে ঢলাঢলি করো সাদি ভাইয়া। কালকে তো দেখলাম তুমি লাইব্রেরিতে,কীভাবে রুমির সাথে ঘেসে ঘেসে বসেছিলে। আমি বুঝি সব বুঝি। তাছাড়া রুমিও তো অনেকদিন ধরে তোমাকে লাইন মারার জন্যে
বসে আছে। যাও তুমিও এক্সেপ্ট করে ফেলো।”
সিথিকে দেখে বেশ রাগি মনে হচ্ছে।
সাদি হাঁসলো।
সাদির হাঁসি দেখে সিথি এইবার কোমড়ে হাত ধরে বলল,
—“তুমি হাঁসছো? ”
—“হাঁসবো নাহ? রুমি জাস্ট আমাকে লাইক করে আর কিছু নাহ। আমি তো রুমিকে লাইক করিনা তাইনা? তাছাড়া রুমি একটা ম্যাথ বুঝতাছিলো নাহ;তাই আমি জাস্ট হেল্প করেছিলাম। ”
সিথি মুখ বেঁকিয়ে বলে,
—“হু হু সবকিছুই বুঝি আমি।”
—“সিথি ইউ নো তুমি দিনের পর দিন পসিসিভ হয়ে উঠছো। একদম নিজের ভাইয়ের মতো। ব্যাপার নাহ এইটাই স্বাভাবিক। ”
—-“মানে? ”
—“তোমাকে রোগে ধরেছে।”
সিথি শুকনো ঢুগ গিলে বলে,
—“আমাকে আমার কিসের রোগে ধরেছে? ”
—-“হুম রোগে তো ধরেছেই।যাকে বলে ‘প্রেমরোগ। ‘
কথাটি বলে সাদি বাঁকা হেঁসে চলে যায়।
সিথি থম মেরে বসে থাকে। সবকিছুই যেনো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
________
শেখ বাড়িতে বিয়ের আগেই যেনো আরেকটি খুশির খবর পেয়ে সবাই আনন্দে আত্বহারা হয়ে গিয়েছে। বাবা ও রুদ্রিক মিলে মিষ্টির প্যাকেট এনে বাড়িকেই মিষ্টির দোকান বানিয়ে ফেলেছি। মায়ের তো খুশির শেষ নেই,তিনি সবাইকে ফোন করে খুশির খবরটা জানাচ্ছে। সিথি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—-“ওয়াও কাজল! আমি জাস্ট ভাবতে পারছি নাহ। আমাদের বাড়িতেও নতুন পুচু সোনা আসবে। আমাকেও পিপি বলে ডাকবে। ”
আমি হাঁসলাম।
দিয়া পিপি কোমড়ে হাত দিয়ে, কিছু একটা ভেবে চলেছে। সিথি ভ্রু কুচকে বলে,
—“তোমার আবার কি হলো? ”
দিয়া পিপি বললেন,
—“দেখ আমার বিয়েটার আগেই আমি দাদি হয়ে গেলাম। দূর। আচ্ছা যাই হোক তার আগে একটা সেল্ফি হয়ে যাক।”
(শুধু তুমি না দিয়া আমি নিজেও হয়েছি 🙂)
আমি হাঁসলাম।
________
অন্যদিকে,
ইশানি লকাপে বসে আছে। তখনি একজন পুলিশ মহিলা লকাপে প্রবেশ করে বলে,
—“আপনার স্বামীকে খুঁজে পাওয়া গেছে। ”
পুলিশের কথা শুনে ইশানি উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
—“কোথায় মাহির?”
—“তার আগে আপনাকে এক জায়গায় যেতে হবে। ”
ইশানি এইবার কিছুটা ক্ষিপ্ত গলায় বলল,
—“কোথায় যেতে হবে আমাকে? কোথাও যাবো নাহ
আমি। আগে আপনি বলুন আমার মাহির কোথায়?”
—“দেখুন আপনার হাজবেন্ড এর একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে,তাই এই মূহুর্তেই আপনাকে হসপিটালে যেতে হবে। ”
ইশানি কথাটি শুনে যেনো থমকে দাঁড়ায়।
____________
বিছানায় বসে আছি আমি। রুদ্রিক চারপাশে শুধু পাইচারি করে যাচ্ছি। কি এতো ভাবা হচ্ছে শুনি?
রুদ্রিক আমার একেবারে কাছে এসে বলল,
—“আমার না এখনো বিশ্বাস হচ্ছে নাহ আমি বাবা হবো। মানে বুঝতে পারছিস কাজল? এইতো সেদিনের কথা আমি পার্টি করতাম,ড্রিংক করতাম। যাকে বলে একেবারে বিঘরে যাওয়া ছেলে বলে। আই কেন্ট বিলিভড দ্যাট, আদো আদো গলায় আমাকে কেউ বাবা বলে ডাকবে। ”
রুদ্রিকের কথা শুনে আমি রুদ্রিকের বুকে মাথা রাখি। কেনো যেনো আমার কান্না পাচ্ছে।
রুদ্রিক আমার গালে হাত দিয়ে বলে,
—“কি হয়েছে কাজল? ”
আমি কিছুটা ভিতু গলায় বললাম,
—“ভয় হচ্ছে,ভীষন ভয় হচ্ছে। “#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ৪৩
#Jannatul_ferdosi_rimi
রুদ্রিকের বুকের মাঝে আবদ্ধ হয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছি। রুদ্রিক হয়তো বুঝতে পারছে নাহ আমার হঠাৎ কান্নার কারণ। রুদ্রিক আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
–“জানেমান, কি হয়েছে তোর?এইভাবে কাঁদিস নাহ প্লিয। আমার যে খুব কষ্ট হয়। আজকে এতোটা খুশির খবর পেলাম আমরা আর তুই কাঁদছিস।”
আমি রুদ্রিকের কাছে আরো ঘেসে বসে বলে উঠলাম,
—“রুদ্রিক, আমার কেন যেনো বড্ড ভয় হচ্ছে জানিনা। ”
—-“কিসের এতো ভয় তোর? একদম ভয় পাবিনা কাজল। সবসময় মনে রাখবি একটা কথা জীবনে অনেক কঠিন মূহুর্ত আসবে। সেই কঠিন মূহুর্তের মোকাবেলা করতে হবে আমাদের। আমাদের অনাগত সন্তানের জন্যে হলেও শক্ত হও। ”
—-“মোকাবেলা করতেই তো ভয় করে রুদ্রিক। আগে আমার নিজের জন্যে কখনো ভয় করতো নাহ,কিন্তু এখন আমাদের সাথে আমাদের বেবীও রয়েছে।”
রুদ্রিক আমার কথা শুনে কিছুটা ভ্রু কুচকে বলল,
—“বুঝেছি প্রেগ্ন্যাসির জন্যে তোর মাথায় একটু ঝং ধরেছে। থাক ব্যাপার নাহ। আমি আছি তো। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক আমাকে কোলে নিয়ে বারান্দায় নিয়ে আসে। আমাদের বারান্দাটা বেশ বড় হওয়ায়,বারান্দার বিশাল অংশ জুড়ে বেলীফুলের ছোটখাটো একটি বাগান রয়েছে। বেলীফুলের সুমিষ্ট গন্ধে পুরো বারান্দা মো মো করছে।
রুদ্রিক আমাকে বেলীফুলের ছোট্ট দোলনায় বসে আমাকে নিজের কোলে বসিয়ে, আমার পেটে মুখ গুজে দেয়। আমার পুরো শরীর যেনো কেঁপে উঠলো।
আমি থেমে বললাম,
—“কি করছো? ”
রুদ্রিক মুখ তুলে তাঁকিয়ে দেখে বলে,
—” আপাতত এখন তোর পেটে আমার বেবী কি করছে তা বুঝার চেস্টা করছি। বুঝেছিস?”
রুদ্রিক কথা শুনে আমি গালে হাত দিয়ে বললাম,
—-“তা মিঃ বেবী এখন কি বলছে। ”
রুদ্রিক কিছু একটা ভেবে বলে,
—“বেবী বলছে মাম্মা যেনো তার বাপিকে এত্তোগুলো আদর করে দেয়। ”
রুদ্রিকের কথা শুনে আমি না হেঁসে পারলাম নাহ। হেঁসেই দিলাম। রুদ্রিক ও হাঁসলো। এই মানুষটি আমাকে হাঁসাতে যথেষ্ট। তবুও কিছু ভয় থেকেই যায়।
_________
আমি বই-খাতা হাতে নিয়ে নীচে নেমে এসে দেখি বাবা-মা, সিথি, দিয়া পিপি টেবিল বসে ব্রেকফাস্ট করছে। আমাকে দেখে রুদ্রিক উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
—“কাজল তুই এইসব বই-খাতা নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস? ”
—-“কোথায় আবার সিথির সাথে ভার্সিটি যাবো।”
আমার কথায় রুদ্রিক সোজা এসে আমার বই খাতা আমার হাত থেকে নিয়ে বলল,
—“তোর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। সিথি তোর নোটস তুলে রাখবে এন্ড আমি তোর জন্যে টিউটর রেখে দিবো। ”
আমি মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলাম,
—“মাত্র ১ মাস ও হয়নি বেবীর আর আমি নাকি
এখন থেকেই ভার্সিটি কামাই করা শুরু করবো। ”
আমার কথাকে একপ্রকার পাত্তা না দিয়েই রুদ্রিক
টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করা শুরু করে দিলো।
সিথি আমার অবস্হা খানিক্টা বুঝতে পেরে বললো,
—-“ভাইয়ূ, কাজল তো বাসায় থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাবে। ”
—–“বোর হলে ফোন ঘাটবে দরকার পড়লে টিকটকাদের মতো প্রতিবন্ধ হয়ে টিকটক করবে তবুও বাইরে বের হওয়া যাবে নাহ। ”
রুদ্রিকের কথা শুনে রাগে যেনো আমার নাকের ঢগা লাল হয়ে যাচ্ছে।
রুদ্রিক এইবার দিয়া পিপির দিকেও তীক্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
— “আমি আর কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাইনা। ”
দিয়া পিপি হয়তো কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু রুদ্রিকের দিকে তাঁকিয়ে চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে গেলো।
আমি ব্যাগটা কাঁধ থেকে ফেলে দিয়ে মায়ের এসে পাশে দাঁড়ালাম। আমার মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছি।
বাবা রুদ্রিককে উদ্দেশ্য করে বললেন,
—“রুদ্রিক আমার মনে হয় কাজলকে এখন বের হতে দিলে ভালো হয়। ”
রুদ্রিক বেডে জেলি লাগাতে লাগাতে বলল,
—“কাজল বাইরে যাবে নাহ মানে যাবে নাহ।
দ্যাটস ইট। বাইরে বের হলে অসাবধানত বশত কোনো এক্সিডেন্ট হয়ে গেলে আমার বাচ্ছার কিংবা কাজলের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। নাহ আমি এতো রিষ্ক নিতে পারবো নাহ। ”
কথাটি বলেই রুদ্রিক উঠে দাঁড়িয়ে অফিসের টাইটা লাগাতে লাগাতে চলে গেলো। সিথিও আর কি করবে? সে ও হাতের ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
আমাকে ঘুমড়ো মুখ দেখে মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
—“মন খারাপ করিস নাহ রে মা। রুদ্রিক তো তোর এবং তোর বেবীর ভালো চায়। তাই তোকে বাইরে যেতে মানা করছে। ”
মায়ের কথা শুনে আমি ‘হ্যা ‘ সূচক জবাব দিলাম।
মা এইবার আমার হাত ধরে বলে উঠলেন,
—” কাজল, আমার সাথে একটু রুমে আসো তো। ”
মায়ের কথায় আমি মায়ের সাথে মায়ের রুমে আসলাম। মা আলমারি থেকে একটি বক্স বের করে, তা থেকে একটি হিরের গলার হার আমার গলায়ে পড়িয়ে দিয়ে বললেন,
—-“পছন্দ হয়েছে মা? ”
—-“মা এইসবের কি দরকার? ”
মা মিষ্টি হেঁসে বললেন,
—-“কেনো আবার? তুমি এই শেখ পরিবারকে এতো বড় একটা উপহার দিচ্ছো সেখানে এই হার তো কিছুই না। দোয়া করি মা স্বামী সংসার নিয়ে সুখে থাকো। ”
আমি মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম,
—“সবসময় আমাদের উপর এইভাবেই তুমি এবং বাবা ছায়া হয়ে থেকো।”
—-“অবশ্যই। ”
মাও আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
________
রুদ্রিক অফিস থেকে এসে নিজের কাঁধের ব্যাগটা বিছানায় রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়। আমি সেদিকে
গুরুত্ব না দিয়ে, নিজের মতো ডাইরিতে লিখতে থাকি।
রুদ্রিক বেড়িয়ে এসে আমার দিকে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে থেকে বলে,
—“কি করা হচ্ছে? ”
আমি চুপ হয়ে রইলাম। রুদ্রিক বোধহয় আমার চুপ হয়ে থাকার কারণটা জানে তাই সে আমার পাশে এসে বলে,
—“কাজল,তুই কী আমার উপর রেগে আছিস? আচ্ছা কাজল একটা জিনিস বুঝার চেস্টা কর। এই অবস্হাতে তোর বাইরে যাওয়া ঠিক নয়। ”
আমি বায়নার সুরে বললাম,
—“তুমিও আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করো। বাসায় থেকে থেকে আমি শুধু বোর হচ্ছি। ”
রুদ্রিক আমার বায়নাকে তয়োক্কা না করে বলল,
—“তোর বাইরে যাওয়া হবে নাহ। ”
—“তাহলে আমিও তোমার সাথে কথা বলবো নাহ হুহ। ”
কথাটি বলে আমি আবারো ডাইরিতে লিখা শুরু করলাম। । রুদ্রিক খেয়াল করে দেখলো আমার হাতে
লালা মোরাটে খয়েরি রংয়ের একটি সুন্দর ডাইরি। তাতে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘গোধূলী বেলার স্মৃতি ‘।
রুদ্রিক ডাইরাটার উদ্দেশ্য বলল,
—“তা এইটা হলো তোর সেই ফেমাস ডাইরিটা তাইতো? ”
আমি কিচ্ছু বললাম নাহ।
আমাদের মাঝে অনেকক্ষন নিরবতা চলল
নিরবতা ভেঁঙ্গে রুদ্রিক বলল,
—-“তা তোর এই ফেমাস ডাইরিটাতে ঠিক কী লেখা হচ্ছে? ”
—-“অভিযোগ তোমার বিরুদ্ধে। ”
রুদ্রিক ভ্র কুচকে বলল,
—“আমার বিরুদ্ধে? তা ঠিক কার কাছে?”
—“কার কাছে আবার? আমার বাবুর কাছে। সে বড় হলে এই ডাইরিটা পড়ে বুঝবে তার বাবাই কীভাবে তার মাকে বাইরে যেতে দিতো নাহ। সে তোমাকে বড় হয়ে মজা দেখাবে। ”
রুদ্রিক হেঁসে বলল,
—“ওকে তুই কনটিনিউ কর। আমি জানি আমার বাবু কিছুতেই তার মায়ের পক্ষ নিবে নাহ। কেননা সে জানে তার বাবাই একদম ঠিক। ”
আমি বেঁকিয়ে বললাম,
—“ঠিক আছে সময় আসলে ঠিক দেখা যাবে।”
______
সকালে প্রায় লুকিয়েই বই-খাতা গুলো ব্যাগে রেখে দিলাম। অনেক হয়েছে এই বাসায় থাকা। বাবাগো কি বোরিং হচ্ছি। নাহ আমি আজকে কিছুতেই বাসায় থাকবো নাহ। রুদ্রিক আজকে অফিসে চলে গেলেই, আমি আজকে সিথির সাথে লুকিয়ে ভার্সিটি চলে যাবো।
কথাটি ভেবে আমি আনমনে হাঁসলাম। তখনি রুদ্রিক পিছন থেকে বলল,
—“কি এতো ভাবা হচ্ছে ম্যাম। ”
রুদ্রিককে দেখে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।
হসপিটালে একপ্রকার দৌড়েই ছুটে চলেছে ইশানি।
মাহিরের কেবিনের সামনে এসে ইশানি থেমে যায়। মাহিরের মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো।
ইশানি শেখ পুলিশদের দিকে তাঁকিয়ে বলে,
—“আমার হাজবেন্ড এর এমন অবস্হা হলো কী করে?”
একজন অফিসার নিচুস্বরে বলে উঠেন,
—-“আপনার হাজবেন্ড ঢাকা দিয়ে পালাতে যাওয়ার সময় গাড়ি এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছিলো তখন সেখানকার লোকেরা আমাদের ইনফর্ম করে। আমরা তখন সেখানে গিয়ে মাহির আহমেদকে উদ্ধার করি।”
ইশানি হাত তালি দিয়ে বলে,
—“বাহ এক্সিলেন্ট! আমার হাজবেন্ডকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিলো সবাই আজকে। ওয়াও। নাহ, আমি থাকতে মাহিরের কিচ্ছু হবে নাহ। ”
ইশানি মাহিরের কাছে যেতে নিলে,একজন ডক্টর এসে তাকে থামিয়ে বলে উঠে,
—“পেশেন্টের অবস্হা খুব ক্রিটিকাল। এমন অবস্হায় আপনি তার কাছে যেতে পারবেন নাহ।”
ইশানি শেখ গলা উঁচু করে বললো,
—“আমার হাজবেন্ডকে আমি দেখতে যাবোই। কেউ আমাকে আটকাতে পারবে নাহ। ”
ইশানি শেখের কথার মাঝেই একজন মহিলা পুলিশ এসে কড়া বলল,
—“ডক্টর যেহুতু বলেছেন এই মূহুর্তে আপনি যেতে পারবেন নাহ। মানে পারবেন নাহ। আপনি আমাদের ওর্ডার মানতে বাধ্য মিস শেখ। ”
ইশানি নির্ভয় বলে,
—“জাস্ট শাট আপ ওকে? ইশানি শেখকে তোমরা আটকাবে? অনেক শুনেছি আজকে আমাকে কেউ আটকাতে পারবে নাহ। কেউ পারবে নাহ মানে পারবে নাহ। ”
কথাটি বলে ইশানি শেখ গটগট করে মাহিরের কেবিনে ঢুকে পড়লো।
মাহিরের অবস্হা সত্যি খারাপ। অক্সিজেন কোনোরকম চলছে। ইশানি মাহিরের অবস্হা দেখে প্রায় কেঁদেই দিলো। ইশানি মাহিরের হাত ধরে কান্নার সুরে বলে উঠলো,
—“কিচ্ছু হবেনা তোমার মাহির। আমি আছি তো তাইনা? জাস্ট একটু ভরসা রাখো। আমি থাকতে কিচ্ছু হতে দিবো নাহ তোমার। যারা তোমার এই অবস্হার জন্যে দায়ী সবাইকে দেখে নিবো। ”
ইশানি শেখ কাঁদতে কাঁদতে মাহিরের হাতে নিজের হাতে রেখে শক্ত করে চেপে ধরলো।। মাহিরের এই অবস্হা যেনো ইশানি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে নাহ।
বাকীটা আগামী পর্বে….
চলবে কী?
[