সবটাই_তুমিময় পর্ব ৩৫

#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৩৫

-উহুম!উহুম!

আস্থার গলা ঝাড়ার শব্দ শুনে অঙ্কুর ছেড়ে দিলেন আমাকে।মুহুর্তেই‌ স্বাভাবিক হয়ে ঘর,বিছানা দেখায় মনোযোগী হলেন উনি।আর আমি এলোমেলো মনে তার বলা কথাগুলো ভেবে চলেছি।আস্থা কাধ দিয়ে ধাক্কা মেরে বললো,

-কিরে?চান্স পে ডান্স?থুরি!রোমান্স?বাসরঘর তো তানহা-তিহানের।তা,এটুক ফুল দেখেই তোদেরও রোমান্সের ইচ্ছা জাগলো?

কটমটে চোখে তাকাতেই ও আমতা আমতা করে বললো,

-ইয়ে,আ’ম জোকিং!ইউ মে কন্টিনিউ!আ্…আমি বেরিয়ে যাচ্ছি।

সরু চোখে তাকিয়ে রইলাম ওরদিকে।ত্বোহা মোম নিয়ে এসেছে।তানহা তিহানও ভেতরে ঢুকলো।আস্থা আর আমি তানহার সাথে কথা বলছিলাম।অঙ্কুর মোমদুটো জ্বালিয়ে দিয়ে ওদের সামনে এসে দাড়িয়ে বললেন,

-উইশ ইউ আ ভেরি হ্যাপি ম্যারিড লাইফ।তানহা?আমার ভুল সংশোধন কিন্তু শেষ।কি বলো?

তানহা সালাম করতে যাচ্ছিলো অঙ্কুরকে।উনি তাড়াতাড়ি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

-আরে আরে,কি করছো কি?

-আপনার মতো একজন বড়ভাইয়া সত্যিসত্যি থাকলে আমার জীবনটা ধন্য হতো ভাইয়া।

অঙ্কুর মুচকি হেসে তানহার একগাল ছুয়ে বললেন,

-আ’ম অলওয়েজ দেয়ার ফর ইউ।

তিহান বললো,

-থ্যাংকস্ দিয়ে আপনাকে ছোট করবো না স্যার।তবে আজ আপনি যা করলেন….

-তানহাকে দেখো তিহান।ও কিন্তু ওর সবটা ছেড়েছে,তোমার হাত ধরবে বলে।ওর হাত কোনোদিন ছেড়ো না প্লিজ।ভালোবেসে আকড়ে ধরে রেখো আজীবন।

-আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো স্যার।

মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলেন উনি।আস্থাও দৌড় লাগালো।রোহান ভাইয়া ভেতরেই আসেননি।তাই ওউ এ ঘরে স্থির থাকতে পারে নি বেশিক্ষন।তা আমার,তানহার বা তিহানের কারো বুঝতে বাকি রইলো না।ওর কান্ডে শব্দ করে হেসে দিলাম তিনজন।হাসি থামিয়ে তিহানের সামনে দাড়ালাম গিয়ে।বললাম,

-সম্পর্কগুলোকে আগের মতোই সম্মান করবি,এমনটা আশা রাখছি তোর কাছে।

-তোদের চেনা তিহান,তোর চেনা তিহান কোনোদিন পাল্টাবে না আন্নু।ও জানে,কোনটা ওর বউয়ের প্রাপ্য,কোনটা ওর বন্ধুর।বন্ধু,ভালোবাসা,স্ত্রী,কর্তব্য সব সম্পর্কগুলোতে আমি নিজেকে ঠিক উপযুক্ত করে নেবো।দেখিস।

হাসি ফুটলো মুখে।মুঠো করা হাত ধরলাম ওর দিকে।ওউ হাত মুঠো করে ছুইয়ে দিলো হাতে।তানহাকে জরিয়ে আরেকবার অল দ্যা বেস্ট বলে বিদায় নিলাম তিহানদের বাসা থেকে।বাইরে বেরিয়ে দেখি রোহান ভাইয়া ফোনে কথা বলছেন আর অঙ্কুর গাড়িতে হেলান দিয়ে আমার দিক তাকিয়ে দাড়িয়ে আছেন।যেনো আমার জন্যই ওয়েট করছেন উনি।আস্থাকে বললাম,

-কিভাবে বাসায় ফিরবি?

-আর কিভাবে?তুই যা তোর বরের সাথে।আমাকে তোর দুলাভাইয়ের সাথে একলা ছাড়!

আমাকে কিছু বলার সুযোগই দেয়নি ও।হেলতে দুলতে রোহান ভাইয়ার দিকে এগিয়ে দাত কেলিয়ে বললো,

-মিস্টার রোহান?আসার সময় আম্মুকে বললাম আম্মু,তোমার হবু মেয়েজামাই,মানে আপনার সাথে বেরোবো।তাইতো আম্মু আসতে দিলো এতো রাতে।ব্যালকনি দিয়ে দেখেছেও আপনাকে।তাই আমাকে এখন আপনার সাথেই বাসায় ফিরতে হবে।মে উই?

কটমটে চোখে তাকিয়ে থেকে গাড়িতে উঠে বসলেন রোহান ভাইয়া।আস্থাও উঠে গেলো গাড়িতে।চলে গেলো দুজনে।আহম্মকের মতো তাকিয়ে দেখলাম গাড়িটার চলে যাওয়া।পাশে তাকিয়ে দেখি অঙ্কুর কোট খুলে হাতে ঝুলিয়ে ওভাবেই গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে।একটা শুকনো ঢোক গিলে সবে উল্টোদিকে একপা বারিয়েছি,উনি বলে উঠলেন,

-তোমার দাদুকে ফোন করবো ভাবছি অদ্রি।

পা থেমে গেলো আমার।পেছন ফিরে বললাম,

-কেনো?

-যাতে ওনার ঘুম ভেঙে যায়,আর উনি উঠে দেখেন তুমি রুমে নেই।

বড়বড় চোখে তাকালাম আমি।উনি ডোন্ট কেয়ার ভাবে গাড়িতে উঠতে উঠতে বললেন,

-ড্রামা না করে গাড়িতে উঠে বসো।ড্রাইভিংয়ে ব্যস্ত থাকলে ফোন করার কথা ভুলে যাবো।

বুঝলাম ঠান্ডা কথায় থ্রেট দিলেন উনি আমাকে।চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলাম।গাড়ি স্টার্ট দিলেন উনি।কিছুদুর আসার পর,ওনার ফোন বেজে উঠলো।মোবাইলের স্ক্রিনে রাইতা নামটা স্পষ্ট লেখা।কপাল কুচকে আসলো আমার।এতো রাতে এ কেনো ফোন করলো?উনি একপলক নামটা দেখে ভ্রুকুচকে তাকালেন।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে এক বিশ্বজয়ের হাসি ফুটিয়ে কানে গোজা ব্লুটুথে বলতে লাগলেন,

-হ্যাঁ,বলো রাইতা।

….

-ইটস্ ওকে।লাস্ট ডায়ালড্ নাম্বারটা যদি আমারই হয়,কলটা তো আমার কাছেই আসবে তাইনা?আর তাতে ক্ষতির কি বলোতো?তোমার এই ঘুমোঘুমো আওয়াজ শুনতে পেলাম।ফিলস্ গ্রেট!

….

-হ্যাঁ হ্যাঁ,কেনো মনে থাকবে না?আরে,তোমার সাথে দেখা করার কথা কি ভুলে যাওয়ার মতো কোনো কথা?ডোন্ট টক সিলি!নিজেকে ভুলবো,তাও তোমাকে ভুলবো না।

শেষ কথাটা অঙ্কুর আমার দিক তাকিয়েই বললেন।কিন্তু বললেন তো রাইতাকে।বিস্বাদে মন ভরে উঠলো।আজকের ঘটনাগুলোর মধ্যে ভুলেই গেছিলাম অঙ্কুর রাইতাকে পছন্দ করেন।উনি স্বাভাবিক হয়ে বললেন,

-এনিওয়েজ,ঘুমোও তুমি এখন।আ’ইল কল ইউ লেটার।সুইট ড্রিমস্।

এতো মিষ্টভাষায় কথা বললেন উনি,হাত মুঠো করে সামলালাম নিজেকে।কষ্ট হচ্ছিলো।কিন্তু এমনটাই তো হবে।তবে আমি কেনো কষ্ট পাবো?অঙ্কুর কথা শেষে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলেন।অনেকটা সময় পর বললাম,

-রাইতা ম্যামকে আপনার খুব পছন্দ তাইনা?

-হ্যাঁ।ও মানুষটাই পছন্দ করার মতো!

-আপনার ভালোবাসার মানুষটা…

-শোনো অদ্রি,তোমাকে ক্লিয়ারলি বলছি,আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে এতো আগ্রহ দেখাবে না।যেদিন সবাই জানবে,সেদিন তুমিও জানবে।টিল দেন,হ্যাভ পেশেন্স।তাছাড়া এই আগ্রহটা তোমাকে সুট করে না।তুমি তো মুক্তি চেয়েছিলো।তার ব্যবস্থাই করছি।ডোন্ট ওয়ারি।আমার বউ হওয়ার যোগ্যতা তো সেই রাখে,যাকে আমি যতোটা ভালোবাসি,সেও আমাকে ততোটাই ভালোবাসে।আর এটাই হবে।দেখে নিও।

কথাগুলো কাটকাট গলায় বললেন অঙ্কুর।আমার চোখ ভরে উঠেছে তার কথাগুলো শুনে।জামা খামচে ধরে তারদিকে তাকিয়ে রইলাম।উনি বললেন,

-আমি তো তোমার কেউ না।তুমি চাওনা এই সম্পর্কটা থাকুক।তোমার মতে এই এগ্রিমেন্টাল বিয়েটার কোনো মানে নেই।তাছাড়া আমিও কেনো গুরুত্ব দেবো বলোতো বিয়েটাকে?শুধু দায়িত্ব ছিলে তুমি আমার।সো ইয়াপ!ফরগেট এভরিথিং!আমি আমার মতো করে আমার লাইফ সাজিয়ে নেবো।এই এগ্রিমেন্টাল বিয়ের দাম আমার কাছেও নেই।নাও স্টপ থিংকিং আবাউট ইট।

তার সবগুলো কড়া কথা শুনলাম চুপচাপ।জলভরা চোখে তাকিয়ে তারদিকে।ওনার কাছে সত্যিই আমি শুধু দায়িত্ব ছিলাম।উনি মুভ অন করবেন।এই বিয়েটার কোনো মানে ছিলো না,থাকবেও না।অঙ্কুর গাড়িতে গান চালিয়ে দিলেন।গান বাজতে লাগলো,

Na kuch pucha
na kuch manga,
Tune dill se diya,Jo diya…
Na kuch bola
na kuch tola
Muskuraa ke diya,Jo diya…

Tuhi dhup,tuhi chaya,
Tuhi apna,paraya…
Or kuch na janu main,
Baas itna hi Janu…

গান থামিয়ে দিলাম আমি।অঙ্কুর আমার দিক ফেরার আগেই চোখ ফিরিয়ে নিলাম তারদিক থেকে।গানের কথাগুলো শুনে নিজেকে দুর্বল লাগছিলো।উনি বললেন,

-গানটা থামালে কেনো?

-ভালো লাগছে না।

-কেনো?

-জানি না।

-জানো।কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছো না।হেই ওয়েট!অদ্রির সাহস কম পরতে শুরু করেছে?লাইক সিরিয়াসলি?ওয়াও!

….

-মনের কথা বলতে শেখো অদ্রি।তাতে তোমারই মঙ্গল।

ওনার কথায় তাচ্ছিল্য ছিলো।আর আমি কাদছিলাম নিশব্দে।লুকিয়ে।বাইরে তাকিয়ে।কোনো কথা বলিনি আর।বাসার সামনে গাড়ি থামতেই অঙ্কুরের সাথে একটা কথা না বলে সোজা ভেতরে চলে আসলাম।

.

আজ মনিমার জন্মদিন।তানহা তিহানের বিয়ের পর আর দেখা হয়নি কারোর সাথেই।ভার্সিটিতে এ কয়দিন শুধু আস্থার সাথে ছিলাম।সকাল থেকে ফোন হাতে করে বসে আছি,মনিমাকে কল করবো বলে।বিকেল গরিয়ে গেছে।কিন্তু এখনো পারছিই না মনিমাকে ফোন করতে।বুক ভারি হয়ে আছে এটা ভেবে,এতোগুলো বছরে,এই প্রথমবার,এই দিনটাতে তার কাছে আমি নেই।কোনোদিন থাকতেও পারবো না।দাদু,দাদীমা একসাথে ড্রয়িংয়ে বসে।সব খারাপ লাগা একপাশে ঠেলে কল লাগালাম মনিমার ফোনে।মনিমা বললো,

-আন্নু!

চোখ বন্ধ করে বললাম,

-হ্যাপি বার্থডে মনিমা।

-তোর মনে আছে?

-কোনোবারও ভুলেছি?যে আজ মনে থাকবে না?

-হুম।বুঝলাম।তা মনিমার কাছে না এসে এভাবে শুধু ফোনে উইশ করবি?

-হ্ হ্যাঁ?হ্যাঁ,যাবো… যাবো তো!

-কবে?

-ওই,আসলে….

-থাক।আর বলতে হবে না।বুঝেছি।আজকে আসার কোনো প্লান নেই তোর।থাকলে এভাবে আমতাআমতা করতি না তুই।আজকের দিনেও তারমানে দেখা হবে না তোর সাথে।

চুপ রইলাম।দেখা করার প্রচন্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যাবো না ও বাসায়।হয়তো অঙ্কুর আজ মানা করতেন না।তবে ওনাকে দেখলে আমার নিজেকে নিয়ে ভয় হয়।এতোগুলো দিন দুরে থেকে তার কাছে থাকার অভ্যস বদলানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।লাভ হয়নি।বারবার,প্রতি মুহুর্তে তাকে অনুভব করেছি।আবার তার সত্যিকারের অনুপস্থিতি মনে করে কেদেছি।তাকে সামনে দেখলে হয়তো আরো দুর্বল হয়ে পরবো।তারচেয়ে থাকি না এভাবেই।সময়ের সাথে এই অনুভূতিগুলোও ঠিক হয়ে যাবে হয়তো।যেমনটা অঙ্কুর রাইতার সাথে অনেকটাই অন্তরঙ্গ হতে শুরু করেছেন,সেভাবে আমিও নিজেকে ঠিক গুছিয়ে নিতে পারবো।মনিমা বললো,

-আন্নু?অঙ্কুরের লাইভ হচ্ছে।

-হুম?ক্ কিসের লাইভ?

-লাস্ট ম্যাচ নিয়েই কোনো প্রেস ব্রিফিং হয়তো।কেনো?বলেনি তোকে?

-হুম?হ্ হ্যাঁ।বলেছে তো।

-আচ্ছা,এখন রাখছি।লাইভটা দেখি।

হুম বলে কল কাটলাম।দাদুও টিভি অন করেছে।বললো,

-আহানিতা?এই দেখো,অঙ্কুরের লাইভ।

দাদুর পেছনে সোফা ধরে দাড়ালাম।অঙ্কুরের হাসিমুখে কথা বলছিলেন।বরাবরই উনি প্রেসমিডিয়া,ফ্যান ফলোয়ার নিয়ে যতোক্ষন থাকেন,নিজের পুরোটা নিয়েই থাকেন।কিছু প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে এক সাংবাদিক হাত তুলে বলে উঠলেন,

-স্যার?ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড,আপনার ব্যক্তিগত এক বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাই।ক্যান আই?

-শিওর।নির্দ্বিধায় বলতে পারেন।

-শুনলাম খুব তাড়াতাড়িই নাকি আপনি বিয়ে করতে যাচ্ছেন?কথাটার সত্যতা কতোটুকো?

সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে উপস্থিত সকলের মাঝে গুন্জন শুরু হয়ে গেলো।সোফা শক্ত করে আকড়ে ধরলাম আমি।অঙ্কুর মুচকি হেসে মাইক্রোফোনের দিকে আরেকটু এগিয়ে বসে বললেন,

-হ্যাটস্ অফ টু দ্যা জার্নালিস্ট সোসাইটি।আপনারাই যে দেশের ফাস্টেস্ট নেটওয়ার্ক,তা আবারো প্রমান করে দিলেন।জ্বী।কথাটা সত্য।খুব তাড়াতাড়িই বিয়ে করতে যাচ্ছি আমি।ইনফ্যাক্ট মাকে আজই মেয়েপক্ষের বাসায় পাঠাবো বিয়ের ডেইট ঠিক করতে।

আরো শক্তিতে সোফা ধরলাম আমি।দাতে দাত চেপে আছি।অঙ্কুর বিয়ে করবেন কথাটা সহ্য করতে দম আটকে আসছে আমার।মনিমা মেয়েপক্ষের বাসায় যাবে।তারমানে মডেল রাইতাদের বাসায়।উনি মনিমাকে সবটা বলে দিয়েছেন।কিন্তু কই?মনিমা তো কিছু বললো না আমাকে।কেনো?হয়তো ছেলের পছন্দ শুনে,এগ্রিমেন্টাল বিয়ে,দায়িত্বের বিয়ে শুনে সেও সবটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছে।তবে তো ভালোই হলো।যেটা নিয়ে চিন্তা বেশি ছিলো,মনিমার রিয়্যাক্ট,সেটাই অত্যন্ত ভালোভাবে মিটেছে।অঙ্কুর বরাবরের মতো পক্ত হাতে সামলেছেন সবদিক।বিয়ের কথা শুনে সব সাংবাদিকেরা বিস্ময় নিয়ে তারদিকে তাকিয়ে।পরপরই আবারো গুন্জন।একজন বলে উঠলো,

-কনগ্রাচুলেশনস্ স্যার!আমরা কি আপনার হবু স্ত্রীর নাম জানতে পারি?

অঙ্কুরের ঠোট কামড়ে হাসলেন।একটু সময় নিয়ে বলে উঠলেন,

-আসলে,আজ আমার মায়ের জন্মদিন।গিফট্ হিসেবে মায়ের বউমার ইচ্ছে পুরন করবো ভেবেছি।বিয়েটা কবে,কোথায়,কাকে করছি,সবটা ঠিকঠাক হলে,আপনাদের আরো ভালোভাবে জানানো হবে।রাইট নাও,প্লিজ নো মোর কোশ্শেনস্ আবাউট দিস।এক্সকিউজ মি।

অঙ্কুর উঠে চলে গেলেন।সবটা দেখে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগলো আমার।দাদু,দাদীমার নজর টিভিতেই।আর পারলাম না ওখানে থাকতে।একছুটে রুমে চলে আসলাম।ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার অন করে দিলাম।পাথর হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে হাটু জরিয়ে বসে একধ্যানে মেঝের দিকে তাকিয়ে আমি।চোখ দিয়ে অনবরত পানি গরাচ্ছে।সময়ের হিসেব নেই।অনেকটা সময় পর তানহার গলা কানে আসলো।হয়তো খবরটা দেখেই এসেছে।চেন্জ করে নিজেকে স্বাভাবিক করে বেরিয়ে এসে বললাম,

-তান্নু তুই?হঠাৎ?

ও খুতিয়ে খুতিয়ে দেখতে লাগলো আমাকে।চোখমুখ লুকানোর চেষ্টায় ছিলাম।ও বললো,

-এখন শাওয়ার নিয়েছিস কেনো?তোর চোখমুখের এই অবস্থা কেনো?

নাক ডলে,ঠোট দিয়ে জিভ ভিজিয়ে বললাম,

-এ্ এমনি।এ কয়দিন ভার্সিটি আসলি না কেনো তোরা দুজন?

-তিহান জব খুজতে ব্যস্ত ছিলো,আর আমি টিউশনি।

-ও।আয় না?বস?

পাশ কাটিয়ে চলে আসছিলাম।তানহা হাত টেনে ধরে ওর সামনেই দাড় করালো।কড়া গলায় বললো,

-এএসএ বিয়ে করছে?এতো তাড়াতাড়ি?

-তাইতো দেখলাম তার প্রেস কনফারেন্সে।

-তুই এতোটা স্বাভাবিক কি করে?

-আমার আবার কি হবে?

আবারো চলে আসতে যাচ্ছিলাম।তানহা হাত টেনে ধরলো আমার।বললো,

-এতোটা কঠিন হোস না আন্নু!তোর কষ্ট হচ্ছে।তুই মানতে পারছিস না এএসএ’র বিয়ের খবরটা।তোর বরের বিয়ের খবরটা!

আর পারিনি থাকতে।ওকে জরিয়ে ডুকরে কেদে উঠলাম আমি।ও মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

-আজ তোর কান্না করাটা দরকার আন্নু!কান্না কর!বাধা দেবো না তোকে!

চিৎকার করে কাদতে লাগলাম এবার।বললাম,

-ওই মানুষটা তো এমনটাই করবে।বলেছিলোও আমাকে।আমিও জানতাম!তাহলে আমার কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে তান্নু?কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে?

….

-এটাই তো হওয়ার ছিলো রে!এমনটাই তো হতো!আমিও তো তা জানতাম!অঙ্কুর খুব তাড়াতাড়িই মুভ অন করবেন।তাহলে আজ কেনো মানতে পারছি না?কেনো নিজেকে সামলাতে পারছি না?কেনো?

……

-আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রে!ভেতরটা যেনো কেউ টুকরো টুকরো করে কাটছে।দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছি আমি।এই বাতাসের অক্সিজেন বিষাক্ত লাগছে আমার।দম আটকে আসছে।মনে হচ্ছে আমি মরে যাচ্ছি!মরে যাচ্ছি আমি!

-এটাকে ভালোবাসা বলে আন্নু!

বিস্ফোরিত চোখে ওরদিকে তাকালাম।কান্না থেমে গেছে আমার।ওকে ছেড়ে দু পা পিছিয়েও গেছি আমি।তানহা এগিয়ে এসে আমার দুগাল ধরে বললো,

-হ্যাঁ।তুই ভালোবাসিস এএসএ’কে।তুই তোর বরকে ভালোবাসিস ইয়ার।

-শুধু কষ্টই দিয়েছেন উনি আমাকে।

-বাচ্চাদের মতো কথা বলিস না।তুই নিজেও জানিস এএসএ তোকে নিয়ে কতোটা সেন্সিটিভ।আর তুই ভালোবাসিস বলেই তো কষ্ট পাচ্ছিস।আচ্ছা এটা বল তো?এই ভালোবাসার স্বীকৃতি আমি কেনো দেবো তোকে?তুই বুঝতে পারছিস না?এএসএ’র সাথে অন্য কাউকে মানতে পারবি না তুই!তোর বর সে!আর তুই ভালোবাসিস তাকে!অন্য কারো সাথে ভালোবাসার মানুষটাকে শেয়ার করতে না পারার কষ্ট হচ্ছে তোর।তোর বর অন্যকারো হয়ে যাবে সেই ভয় হচ্ছে তোর।বুঝতে পারছিস না তুই এসব?কেনো?

করুনভাবে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে।ও বললো,

-সত্যি করে বলতো?তুই সত্যি এএসএ কে ভালোবাসিস না?আজীবন তাকে ছাড়া থাকতে পারবি?অন্য কারো সাথে তাকে মানতে পারবি?বাচতে পারবি তাকে ছাড়া?

ওর কাছে কথাগুলো শুনেই মনে হচ্ছিলো আমি নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি।বাস্তবে এমন হলে তো আমি মরে যাবো,তা বলার অবকাশ থাকে না।ওর কাধে মাথা ঠেকিয়ে কাদতে কাদতে বলতে লাগলাম,

-ভালোবাসি তানহা।খুব ভালোবাসি ওনাকে।শুধু স্বীকার করতে ভয় পেয়েছি এতোদিন।কি করে স্বীকার করতাম?যেখানে সে মানুষটাই অন্য কারো সাথে নিজেকে জুরে দিয়েছে।এই ছেলেখেলা বিয়েটাকে অর্থহীন বলে আখ্যা দিয়েছে।আমাকে শুধু দায়িত্ব বলে সামলেছে।তাকে কি করে ভালোবাসি বলতাম।বল?কিন্তু ওনারই বলা,বোঝানো সেই সর্বনাশা অনুভুতি আমার সর্বস্ব হরন করেছে তানহা।আমাতে আমার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।ওনাকে ছাড়া এতোগুলো দিন,প্রতিটা মুহুর্তে,নিজের অস্তিত্বকে মৃত অনুভব হয়েছে আমার।আজীবন কি করে ‌বাচবো তাকে ছাড়া?আমার,একান্তই আমার নিজের ভাবতে শুরু করা মানুষটাকে কি করে অন্য কারো হয়ে যেতে দেখবো আমি তানহা?কি করে?তাকে যে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।অনেকটা বেশি।

কেদেছি অনেকক্ষন।বিছানায় বসেছে তানহা।মেঝেতে বসে ওর কোলে মাথা রেখে ফোপাচ্ছি।তানহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-এখন কি করবি তুই?

মাথা তুলে উঠে দাড়ালাম।কান্না থামিয়ে,নাক টেনে,হাতের পিঠে চোখমুখ মুছে বললাম,

-আমার করার কিছুই নেই তানহা।আমি কেনো আমার একতরফা ভালোবাসার অধিকার নিয়ে তার সামনে যাবো?উনি তো রাইতা ম্যামকে ভালোবাসেন।বিয়েও করতে চলেছেন।উনি ভালো থাকুক ওনার ভালোবাসার মানুষদের নিয়ে।আমি তো শুধুমাত্র ওনার দায়িত্ববোধ ছিলাম।ছিলাম!একটা বিষন্ন অতীতের কালোমেঘ!আমি চাইনা এই মেঘের অন্ধকারচ্ছন্ন ছায়া তার উজ্জল বর্তমান বা ভবিষ্যৎকে এতোটুকো আবছা করে দেয়।অঙ্কুর যেভাবে ভালো থাকতে চেয়েছেন,সেভাবেই ভালো থাকুক উনি।ওনার ভালো থাকাটা দেখে,আমিও ভালো থাকতে পারবো।ঠিক পারবো!
#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
✨স্পেশাল পর্ব✨

-বাসা থেকে বেরোও অদ্রি।রাইট নাও!

কলটা রিসিভ করেছিলাম অঙ্কুরকে অভিনন্দন জানাবো বলে।কিন্তু তার এই কথাটায় সে রাতের মতো আজও‌ ভেতরটা ধক করে উঠলো।তানহার একটা কল এসেছিলো বলে সবেই বেরিয়ে গেলো ও।একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম,

-আপনার সামনে বিয়ে।আমার সাথে কেনো দেখা করতে চাচ্ছেন?

-এই মুহুর্তে যদি বাসা থেকে না বেরোও,আমি বাসায় ঢুকে দাদুকে আমাদের বিয়ের সত্যিটা বলে দেবো অদ্রি!

কল কেটে গেলো।মনটা আবারো বিষাদময় হয়ে উঠলো।আজও এভাবে বিয়েটার বিষয়ে আমাকে থ্রেট দিচ্ছেন উনি।এই মুহুর্তে দাদুকে কিছু জানালে সবটা নষ্ট হয়ে যাবে।ড্রয়িংয়ে এসে দেখি দাদু দাদীমা বসে।আমাকে দেখে দাদীমা বললো,

-এমন দেখাচ্ছে কেনো তোকে বোনু?কি হয়েছে?চোখমুখ লাল কেনো?তানহা চলে গেলো কেনো?

-ওই,আসলে তিহান ফোন করেছিলো।আর আমার চোখে পোকা ঢুকেছিলো,তাই এমন হয়ে আছে।ও কিছু না।

-কিন্তু….

-কোনো কিন্তু না!তোমরা এখন রুমে গিয়ে রেস্ট নাও?আমি ডিনারের সময় ডেকে দেবো তোমাদের।

দাদু,দাদীমা উঠে রুমে চলে গেলো।একটা জোরে শ্বাস নিয়ে বেরোলাম বাসা থেকে।রাস্তার ল্যাম্পপোস্টটাও জ্বলেনি আজ।মোবাইলের ফ্লাশ অন করে গেইটের বাইরে পা রাখতেই চারপাশ আলোতে ভরে উঠলো।বাসার সামনে পুরো রাস্তাটার উপর দিয়ে সাদা মরিচবাতি টানানো।বিস্ময়ে চারপাশ দেখতে লাগলাম।কোথাও কেউ নেই।গুটিগুটি পায়ে আরেকটু এগোতেই গিটারের টুংটাং শব্দের সাথে কানে আসলো,

আমার অজানায়,
হলো কি?
তোমাকে তা কখনো,
বুঝতে দেবো না..
দৃষ্টির পানে আকাশে চেয়ে
তোমাকে আর খুজবো না
আকাশের পানে চেয়ে চেয়ে
ভালোবাসি তা বলবো না…..

পেছন ফিরতেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি।এ্যাশ রঙের গিটার হাতে স্বয়ং অঙ্কুর দাড়িয়ে।স্বপ্ন নাকি বাস্তব তা পরখ করতে চোখ দিয়ে বেরোনো জল হাতে ছুয়ে দেখলাম।এটা বাস্তব!সাদা ধবধবে শার্ট,কালো প্যান্ট পরনে ওনার।হাতা গুটানো,কপালের চুলগুলো মৃদ্যু বাতাসে উড়ছে।মুচকি হাসি নিয়ে দাড়িয়ে অঙ্কুর।আর আমি?কান্না পাচ্ছে আমার।তার গানের কথায় আরো কাতর হয়ে আছে মনপ্রান।বলে চলেছে,একটাবার বলুন অঙ্কুর।ভালোবাসি।একটাবার।শুধু ওইটুক নিয়েই বেচে থাকবো!আর কিছুই চাইনা!চাইবো না কোনোদিন।কিছু না বলে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।

আমার ভাবনার মাঝে হঠাৎই বিকট শব্দ!চমকে উঠে শব্দ অনুসরন করে পিছনে তাকালাম।রাস্তাটা কিছুটা দুরেই মোড় নিয়েছে।সে মোড়ে বাজির আলোতে উপরে আকাশজুড়ে আই লাভ ইউ লেখাটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।চোখ ভরে উঠেছে আমার।পেছন থেকে অঙ্কুর গিটারে সুর তুলে গাইতে গাইতে এগোলেন,

-তুমিও কি আমার মতো করে
একটু ভালো বাসবে না?

তারদিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলাম আমি।এবার হাতের বা পাশে শব্দ আসলো।সেদিক ফিরতে আবারো থমকে গেলাম।তিনতলা বিল্ডিংটার সবটা অন্ধকারে ঢাকা।ছাদে লাইটের মতো জ্বলতে থাকা বড় আই অক্ষর।তৃতীয়তলার ব্যালকনিতে ওরকম অক্ষর দিয়েই লাভ কথাটা লেখা।দ্বিতীয়তলায় ইউ লেখা।অঙ্কুরের কন্ঠে,

-তুমিও কি আমার মতো করে
একটু কাছে ডাকবেনা?

তার গানের সুরের সাথে ভেসে তৃতীয়বারের আসা শব্দে হাতের ডানপাশে তাকালাম।ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠটার পুরোটা জুরে ফুল,মরিচবাতি দিয়ে সুবিশাল লেখনি- আই লাভ ইউ।বাজিও ফুটছে।ওখান থেকে তিনটে বেলুন উড়ে গেলো।তাতেও আই লাভ ইউ লেখা।পিছনে অঙ্কুরের গিটারের সুর তুলেছেন,

-তুমিও কি আমার মতো করে
একটু ভালোবাসবে না?
তুমিও কি আমার মতো করে
একটু কাছে ডাকবেনা?

তারদিক ফিরলাম।অনেকটা এগিয়েছেন অঙ্কুর।অষ্টদিক বন্ধ আমার।এই ভালোবাসার বলয়ে নিজেকে জরিয়ে নেওয়ার চেয়ে সৌভাগ্যের হয়তো আর কিছুই না।তবুও চুপ করেই রইলাম।দাতে দাত চেপে সামলাচ্ছিলাম নিজেকে।অঙ্কুর একদম সামনে দাড়ালেন আমার।শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে গাইলেন,

-আগেও তো ভালো,বাসতে তুমি
আগেও তো কাছে,ডাকতে তুমি
তবে আজ কেনো দুরুত্বটা
সবচেয়ে কাছের?
ভালোবেসে কি ভুল,
করেছি আমি?

এটুকো বলেই গিটারটা ছেড়ে দিলেন উনি।বললেন,

-যে কথাগুলো তানহাকে বলেছো,আমাকে বলতে পারবে না অদ্রি?আজ অন্তত বলো?

এতোক্ষনে যেনো শ্বাস বেরোলো ভেতর থেকে।বাধা দেইনি আর নিজেকে।নিরবে দুফোটা চোখের জল ফেলে চোখ বন্ধ করে তার বুকে মাথা ঠেকালাম।শান্ত গলায় আস্তে করে বললাম,

-আই লাভ ইউ অঙ্কুর!ভালোবাসি আপনাকে।

উনি একহাতে জরিয়ে আরেকহাতে মাথার চুল মুঠো করে নিলেন আমার।চুলে ঠোট ছুইয়ে দিলেন বারকয়েক।কান্নায় প্রচন্ড শান্তি পাচ্ছিলাম ওই মুহুর্তে।বেশ কিছুটা সময় পর পিছিয়ে গেলাম তাকে ছেড়ে।যা বলেছি,তা নিয়ে আক্ষেপ হচ্ছিলো না একদমই।না বললে দম আটকে মারা যেতাম আমি।অঙ্কুর এগিয়ে দুগাল ধরে মুখ উচিয়ে ধরলেন আমার।চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে ঠোট টিপে হেসে বললেন,

-এট লাস্ট!বললে?ভালোবাসো!

….

-ভয় পেয়েছিলে?

….

-এতো কঠিন কেনো তুমি অদ্রি?কেনো স্বীকার করো নি এতোদিন?তাহলে এতো কষ্ট দিতে হতো না তোমাকে।আমাকেও এতোটা সইতে হতো না।

….

-বিয়েটা রাইতাকে করছি,সেটা একবারও বলেছি তোমাকে?

বিস্ময়ে তাকালাম।উনি ঠোট কামড়ে অন্যদিক তাকিয়ে একটা হাসি দিলেন।বললেন,

-বিয়ে একজনের সাথেই হয় অদ্রি।আর আমার বিয়ে তোমার সাথে হয়ে গেছে।তারসাথেই,যে আমার মতো করে আমাকে ভালোবাসে।ওটাতো সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করবো বলে বলেছিলাম।

-এতোদিন আপনি বলেন নি কেনো ভালোবাসেন?

-আজও তো বলিনি!তুমিই বললে।সিডনিতে আমার ম্যাচের দিন তুমিই তো বলেছিলে,ভালোবাসি শুনতে চাও না আমার কাছে।আজ আবার শুনতে চাইছো যে?

ভ্রুকুচকে তাকালাম আমি।অঙ্কুর গম্ভীরভাবে বললেন,

-সেদিন সব সত্যিটার সাথে তোমায় ভালোবাসি বলবো বলে প্রস্তুত করেছিলাম নিজেকে।কিন্তু তুমি?বলে দিলে শুনতে চাওনা!তাই এটুকো দুরুত্বের কষ্ট দিতে হলো তোমাকে,সইতে হলো আমাকেও।এইসব আই লাভ ইউ লেখাটেখা দেখে একদম নিজেকে আকাশে তুলো না!মুখে বলিনি কিন্তু এখনো!বলবোও না!শাস্তি তোমার!

রাগ উঠলো প্রচন্ড।এতোরকমভাবে প্রকাশ করেও এটিচিউড ছাড়বে না এই লোক!তার বুকের দিকের শার্ট খামচে ধরলাম।জোর গলায় বললাম,

-বলতে হবে না!আমিও উথড্রো করছি আমার কথা।আমি ভ্…

উনি আরো কাছে টেনে নিলেন আমাকে।বললেন,

-ভালোবাসি অদ্রি।ভালোবাসি।যদি তোমাকে ভালোবাসার অধিকার আমার নাও থাকে,তবুও সে অনোধিকার চর্চা করবো আমি।যদি ভুল হয়েও থাকে,এই ভুলে বারবার নিজেকে জড়াতে চাই আমি।যদি এ ভালোবাসার পরিনতি আজীবন এমনটাই যন্ত্রনাময় হয়,তবুও সে যন্ত্রনা সয়ে ভালোবাসতে চাই তোমাকে।বাচতে হলে আমার তোমাকেই লাগবে।নিজেকে অনেক আগেই হারিয়েছি।তোমাতে।বিশ্বাস করো অদ্রি,আমি না হয় আজ জানালাম তোমাকে,কিন্তু আমার অশান্ত,অগোছালো মনটা অনেক আগেই আমাকে জানিয়েছে।আমার মাঝে আমি নেই।আমার…আমার তো সবটাই তুমিময়।*সবটাই তুমিময়*

ঠোট কামড়ে ধরে কাদছিলাম।উনি জরিয়ে নিলেন আমাকে।পেছন থেকে জরিয়ে রেখে বললেন,

-আচ্ছা আচ্ছা,সরি!এবার তো থামো?আমি কি করে জানবো তুমি এতো ভালোবাসো আমাকে?সবসময় তো রাগটাই দেখিয়েছো।দেখো,আজ যখন তানহার ফোন থেকে জানলাম তুমিও আমাকে ভালোবাসো,আজই প্রপোজ করলাম তোমাকে।

নাক টেনে টেনে কাদছিলাম।অঙ্কুর আঙুল দিয়ে আকাশে তাকানোর জন্য ইশারা করলেন।তাকালাম।অন্ধকার আকাশ জুড়ে আলোর খেলা।তাতে স্পষ্ট লেখা,” উইল ইউ ম্যারি মি?”

-এগেইন?

অঙ্কুর আমার কানে ফিসফিসিয়ে বললেন কথাটা।এবার হেসে দিলাম আমি।ওভাবেই জরিয়ে রেখে সামনে আমার হাত তুলে ধরলেন উনি।আলতো স্পর্শে অনামিকা আঙুলে একটা আংটি পরিয়ে দিলেন।ওটা দেখে মনপ্রান ভরে উঠলো।পেছন ফিরে সবে তার গালে হাত ছোয়াবো বলে হাত বারিয়েছি,সাথেসাথে অনেক কোলাহল কানে বাজলো আমার।রাস্তাটা লোকে লোকারন্য হয়ে গেছে।অনেকগুলো গার্ডস্ মিলে ক্যামেরাধারী সাংবাদিক,পাব্লিককে আটকে রেখেছে।অঙ্কুরকে ছেড়ে মাথা নিচু করে খানিকটা পেছনে দাড়ালাম তার।প্রচন্ড ইতস্তত লাগছিলো।উনি হাত ধরে সামনে দাড় করালেন আমাকে।সবার সামনে বলে উঠলেন,

-মিট মাই ফিয়ন্সে।জার্নালিস্ট আকাশ ইলিয়াস আর অনিতা মেহরানের মেয়ে,আহানিতা সিদরাতুল।ওর সাথেই বিয়ে হতে চলেছে আমার।

সবাই একপ্রকার হুমড়ি খেয়ে পরছে এগোবে বলে।একের পর এক প্রশ্নও ছুড়ছে।অঙ্কুর বললেন,

-সবেমাত্র প্রোপোজ করলাম।এই লাভ বার্ড দুটোকে আপাতত ছেড়ে দিন?সবসময় সব পরিস্থিতিতে কোথথেকে অবতীর্ন হোন আপনারা,কে জানে!যাই হোক,আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর বিয়ের ইনভিটিশন কার্ডসহ পৌছে দেবো।প্রথমবারের মতো আপনাদের প্রশ্নকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য দুঃখিত।এক্সকিউজ আস!

গার্ডদের ইশারা করে ভীড় ঠেলে উনি হাত টেনে বাসার ভেতরে নিয়ে আসলেন আমাকে।ভেতরে ঢুকে দেখি মনিমা হাসিমুখে দাদু,দাদীমার সাথে কথা বলছে।অঙ্কুর আস্তেকরে বললেন,

-মাকে মেয়েপক্ষের বাসায় পাঠিয়েছিলাম,বিয়ের কথা বলতে।আর তুমি তো রাইতাকে কল্পনা করে কেদেকেদে একসা!

সরু চোখে তাকালাম তারদিকে।উনি ইনোসেন্ট একটা হাসি দিলেন।বললাম,

-আপনি সবটা জেনেশুনে…

-প্রথমবার দেখার পর থেকেই‌ আলাদা অনুভুতি ছিলো তোমাকে ঘিরে অদ্রি।মায়ের কথা মনে রেখে,ভেবেছিলাম,ইট উড বি আ রিভেন্জ স্টোরি।কিন্তু পারিনি নিজেকে সামলাতে।আমার অজান্তেই,ইট টার্নড্ ইনটু লাভস্টোরি।ইউ টার্নড্ ইনটু মাই এভরিথিং!যদি ভালোবাসি বলে ভালোবাসি নাই শুনতে পাই,তারচেয়ে কষ্টের আর কিই বা হতো?তাই তোমাকে জেলাস ফিল করাতে রাইতাকে নিয়ে এসব…

-তাই বলে এতোটা অঙ্কুর?এটা বলুন?আপনার জায়গায় আমি যদি অন্য কোনো ছেলের সাথে ওভাবে চলাফেরা করতাম?আপনি কি করতেন?

-ওমা!এজন্যই তো তিহানের বিয়েটা আগে দিলাম!তাছাড়া,এমনিতেও জানতাম,তিহানকে যখন রিজেক্ট করেছো,তোমার দ্বারা আমি ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসা পসিবল না!

ফু দিয়ে শ্বাস বের করলাম।দাদু আমাদের দরজায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,

-সবটা তো লাইভ টেলিকাস্ট দেখলাম।কিছুই বলার দরকার নেই।আমরা বড়রা বিয়ের ডেইট ফাইনালাইজ করছি,ততক্ষন তোমরা না হয় নিজেদের মধ্যে কথা বলে নাও?

-থ্যাংকস্ জমিদারমশাই!

তাদের কথাকে ইগ্নোর করেই মনিমার দিকে এগোচ্ছিলাম।কিন্তু অঙ্কুর হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসলেন আমাকে।হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,

-আরেহ্!এভাবে রুমে আনলেন কেনো?সবাই কি ভাবছে?চলুন বাইরে!ওরা….

-সবাই জানে তুমি আমার হবু বউ!ইনফ্যাক্ট তোমার দাদুকে প্রথমদিনই বলেছিলাম,তোমাকে ভালোবাসি।বিয়ে করতে চাই তোমাকে।তার কথা ছিলো,তোমার মতামত।আজ দেখেছে,উই লাভ ইচ আদার!আর কোনো কথাই নেই তার।আর রইলো মা?সে তো জানে,তুমি আমার বউ!

-তারমানে দাদু…

উনি এগোলেন।দুপা পেছোলাম আমি।অঙ্কুর মুচকি হেসে বললেন,

-ওসব ছাড়ো।এটা বলো,কলেজ লাইফের পর এএসএ প্রথমবারের মতো ব্যাট ছেড়ে গিটার ধরলো।কাজে দিয়েছে তাইনা?ওর ভালোবাসার মানুষটা ওকে ভালোবাসি বলেছে।এমনি এমনি বলি না অদ্রি,আমার বিশ্বাস সবসময় জিতে যায়।

মুচকি হেসে বললাম,

-আপনার এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে নিঃস্ব হতে চাই অঙ্কুর।যাতে সবসময় আপনার বিশ্বাস জিতে,আমাকে জিতিয়ে দিয়ে যায়,রাঙিয়ে দিয়ে যায়,আপনার ভালোবাসার রঙে।

উনি এগোলেন।কিছুটা হচকিয়ে গিয়ে বললাম,

-এ্…একি?এগোচ্ছেন কেনো?

-রাঙাই?আমার ভালোবাসার রঙে!

শিউরে উঠলাম।ওনার থামার নামগন্ধ নেই।পিছোতে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো আমার।আমার ঘাড়ের একপাশ দিয়ে দেয়ালে হাত রেখে দাড়ালেন উনি।কেমন যেনো অসম্ভব কম্পন শুরু হয়ে গেলো শরীরমন জুরে।নিজেকে শক্ত দেখাতে মাথা তুলে বললাম,

-দেখুন…

-হুম?

-স্ সরুন!য্ যেতে দিন।

-কেনো?বউ হও আমার!

-তাই?তা কষ্টও তো কম দেননি!

-এবার থেকে আদর করবো!

ভয়ের শুরু।এক অদ্ভুত আনন্দমিশ্রিত ভয়!পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গলা ঝেড়ে বলতে লাগলাম,

-আপনি জানেন আপনি একটা নিষ্ঠুর,স্বার্থপর,চরম কঠিন,অসম্ভব রহস্যময় একটা মানুষ।আর হ্যাঁ,খুব বোকাও!বাজে একটা লোক!এভাবে কষ্ট দিয়ে কি লাভ হলো?আমি তো….

আরো কিছু বলার আগেই অঙ্কুর একহাতে আমার কোমড় জরিয়ে ধরে কাছে টেনে নিয়েছেন আমাকে।গালে একহাত রেখে ঠোট নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে নিয়েছেন তৎক্ষনাৎ।পুরোপুরিভাবে নুইয়ে গেলাম আমি।চোখ বন্ধ করে জামা খামচে ধরে রইলাম।অনেকটাসময় পর ছেড়ে দিলেন উনি আমাকে।মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আমি।উনি বললেন,

-হ্যাঁ,আমি সব।

….

-বলেছিলাম না?তোমার এই চোখ তুলে কথা বলা সহ্য হয় না আমার।অতিরিক্ত সাহস কেড়ে নেবো তোমার।আজ দেখো,এতোটুকো চোখ তুলে তাকাতে পারছো না তুমি।মিসেস পর্বতশৃঙ্গের সাহসের কমতি পরা শুরু হয়ে গেছে।কি হবে তোমার অদ্রি?এটুকোতেই এই?আমার জমা করা সব ভালোবাসা যখন উজার করে দেবো তোমাকে,তখন কি হবে তোমার?

সত্যিই কোনো কথা বলতে পারছিলাম না।বেরোচ্ছিলোই না মুখ দিয়ে।জীবনে প্রথমবার,কারো এই ছোয়া,আমার নিজস্বতা কেড়ে নিয়েছে।অল্প কিছুক্ষনের ওই মুহুর্ত কথা বলার সব ক্ষমতা বিলীন করে দিয়ে গেছে আমার।অবশ লাগছে শরীর।অঙ্কুর আবারো হাত টেনে তার সামনে দাড় করালেন আমাকে।কপালের চুলগুলো কানে গুজে দিয়ে বললেন,

-হ্যাপি ফার্স্ট মান্থ এনিভার্সেরি অদ্রি।

বিস্ময়ে তাকালাম আমি।উনি মুচকি হেসে বললেন,

-ভুলোমনা বলেছিলে না আমাকে?কে হলো তবে?ভুলোমনা?

আবারো মাথা নিচু করে নিলাম আমি।উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললেন,

-পুরো পৃথিবীর দৃষ্টিতে আমার বউ হবে বলে প্রস্তুত হও অদ্রি।গেট রেডি!দুজনের প্রতি দুজনার এই দগ্ধ ভালোবাসার সুমিষ্ট পরিনতির জন্য যে বড্ড তৃষ্ণার্ত হয়ে আছি।আর দুরে রাখতে পারবো না তোমাকে।এতোটুকোও না!

#চলবে…

[ অতো বকলেন কেনো?ভুল কি বলেছিলাম?মন তো ভেঙেছেই অঙ্কুর ক্রাশদের তাইনা?এখন যদি অঙ্কুরোদ্রির বিয়ের দাওয়াত না দেই?😐
এনিওয়েজ,লেখিকা কিপ্টে না।সিয়া শুদ্ধর বিয়েতে দাওয়াত দেইনি বলে এতোএতো কথা শুনিয়েছেন সবাই মিলে!অঙ্কুরোদ্রির বিয়েতে আপনারা সবান্ধবে আমন্ত্রিত।আসিয়েন!ঠিকানা”….”
আর হ্যাঁ,আজ যারা গঠনমুলক মন্তব্য করবেন না,ঠিকানা চোখে পরবে না তাদের।ডট ডট দেখবেন😒তাই অঙ্কুরোদ্রির বিয়েতে পেটপুর্তি করতে চাইলে দুলাইন রিভিউ লিখে যাইয়েন!
হ্যাপি রিডিং♥ ]
#চলবে….

[ রি-চেইক হয়নি।আর হ্যাঁ,পরবর্তী পর্বে অনেক রিডার্সের মন ভাঙতে চলেছে।প্রস্তুত থাকিয়েন 😑 ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here