#একগুচ্ছ রক্তজবা
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১০
সাদাফ অফিসের কাজ সেরে বিকাল বেলা বাড়িতে ফিরে।ড্রয়িং রুম পেরিয়ে নিজের ঘরের যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে পিছন থেকে মিসেস রোজা বলে উঠেন।
“কী রে তুই বাড়িতে ফিরে এলি যে?কাব্যর সাথে যাস নি ঘুরতে?”
“কাব্যর সাথে ঘুরতে কেন যাব আমি!আমার কী আর কোন কাজ নেই?”
পিছন ফিরে বিরক্ত হয়ে বলে সাদাফ।মিসেস রোজা সাদাফের কথার প্রতিউওরে বলে উঠেন।
“তুই দিনদিন বড্ড বেশি বদমেজাজি হয়ে যাচ্ছিস।”
কথাটা বলে উনি সোফার উপর থেকে ফোন নিয়ে কাউকে কল লাগায়।আর সাদাফ তার মায়ের কথায় আর কিছু না বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার জন্য পা বাড়ায়।তখন তার মায়ের একটা কথা শুনে থেমে যায় সাদাফ।
“সুজন,সাবিহা আর সাফাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসিস।সন্ধ্যা হয়ে যাবে একটু পর,ত তাড়াতাড়ি চলে আসিস।”
কথাটা শুনে সাদাফ বুঝতে পারে কাব্য সাবিহাকেও সাথে নিয়ে গেছে।সাদাফের মনে ভয় জাগে এই বুঝি সাবিহা কাব্যকে সবটা বলে দিবে।আর তার আসল রূপ সবাই জেনে যাবে।কথাটা ভেবেই সাদাফ পিছন ফিরে দৌড় লাগায়।
মিসেস রোজা ফোনে কথা বলার মাঝেই দেখেই সাদাফ দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।উনি সাদাফকে পিছন থেকে ডেকেও কোন সারা পায় না।
______________________________________
সাদাফ একহাতে গাড়ি চালাচ্ছে আরেক হাতে ফোন দিয়ে ক্রমশ সুজনকে কল দিচ্ছে।সুজন ফোন ধরছে না তাই বাধ্য হয়ে সাফাকে কল দেয়।একবার রিং হতেই সাফা কল রিসিভ করে বলে।
“হ্যালো ভাইয়া।”
“হ্যা তরা কই আছিস?”
“আমরা ত এখন হাতিরঝিল আছি।”
কথাটা শুনেই সাদাফ সাফাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ফোনটা কেটে দেয়।ওপাশ থেকে সাফা হ্যালো হ্যালো করতে করতে ফোন কান থেকে নামিয়ে দেখে কেটে দিয়েছে।সাফাকে এভাবে হ্যালো হ্যালো করতে দেখে সুজন এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে।
“কী রে কী হয়েছে?”
“আরে বড় ভাইয়া ফোন দিল,জিজ্ঞেস করল কই আছি ত সেটা বলার সাথে সাথে ফোন কেটে দিল।বুঝলাম না কী হল!”
“হয়ত এমনি জানতে কল দিয়েছে।”
“হতে পারে।”
🍁
আমি আর কাব্য ভাইয়া পাশাপাশি হাতিরঝিলের ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে আছি।আমার দৃষ্টি ব্রিজের নিচে থাকা পানির মধ্যে।সাফা আর সুজন ভাইয়া আমাদের থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে থেকে ছবি তুলছে।
কলেজে তখন কাব্য ভাইয়াই এসেছিল,উনাকে দেখে আমি চমকে গেছিলাম ঠিকই।কিন্তু পাশে সুজন ভাইয়াকে দেখে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম।কাব্য ভাইয়া নাকি ঘুরতে যেতে চায় তাই কলেজে এসেছিল আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য।আমি যেতে মানা করলে সবাই অনেক রিকুয়েষ্ট করে তাই আসা।সাদাফকেও বলেছিল কাব্য ভাইয়া আসার জন্য সে মানা করে দেয়।তাই আমরাই আসি,কিন্তু এখানে এসে আমার মন একদমই টিকছে না।সাদাফ আজ সকালেই মানা করেছে কাব্য ভাইয়ার সাথে বেশি কথা না বলতে।আর আমি তার সাথেই ঘুরতে এসেছি,উনি জানতে পারলে খুব রাগ করবে।কথাগুলো ভেবে খুব চিন্তা হচ্ছে আমার।
আমার ভাবনার মাঝেই কাব্য ভাইয়া হঠাৎ করে বলে উঠেন।
“তোমার কী মন খারাপ?”
কাব্য ভাইয়ার কথায় আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাই আর হাতের ইশারায় প্রশ্ব করি।
“আপনার এমন কেন মনে হল ভাইয়া!”
কাব্য ভাইয়া আমার হাতের ইশারায় বলা কথাগুলো বুঝতে পারেন।এখনও আমার বলা কথাটা উনি বুঝতে পেরে মৃদু হেঁসে বলে উঠেন।
“একদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো,হাসছো না।তাই জিজ্ঞাসা করলাম যে মন খারাপ কী না!সাদাফ আসে নি বলে কী তোমার মন খারাপ?”
আমি মাথা নেড়ে না বুঝাই,কাব্য ভাইয়া আর কিছু বলে না কিন্তু একটু পর হঠাৎ করেই উনি বলে উঠেন।
“তোমাকে খুব কষ্ট দেয়,সেটা আমি জানি শুধু প্রমানের অপেক্ষা।”
কাব্য ভাইয়ার হঠাৎ এমন কথার মানে বুঝলাম না আমি,আমি উনাকে কিছু বলব তার আগেই কেউ আমার হাত টেনে ধরে।আমি পাশে তাকিয়ে দেখি সাদাফ রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।সাদাফ একবার কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে আসে সেখান থেকে।
অন্যদিকে সাদাফ যেতেই কাব্য বাঁকা হেঁসে বলে উঠে।
“মিশন সাকসেসফুল,এবার বাড়িতে গিয়ে বাকি ইপিসোড দেখব।”
_____________________________________
সাদাফ আমাকে টেনে গাড়িতে বসিয়ে নিজে উঠে বসে,আমি চুপ করে বসে আছি।অনেকক্ষণ পর আমরা বাড়িতে পৌঁছাই,উনি আমাকে একই ভাবে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে আসে।উনি রেগে আছেন সেটা উনার চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছি।হয়ত আমি ওখানে কাব্য ভাইয়ার সাথে গিয়েছি তার জন্যই এমন রেগে আছেন।কথাটা ভেবে আমিও কিছু বলি নি কারন আমি দোষ করেছি উনার কথা শুনি নি।
উনি ঘরে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।আমি পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে দাঁড়িয়ে রই।উনি এবার দরজা বন্ধ করে আমার সামনে এসে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
আমি গালে হাত দিয়ে চোখে পানি নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি এবার আমার গাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।
“তোকে সকালে সুন্দর করে বলেছি কাব্যর থেকে দূরে থাকতে।তুই দূরে থাকিস নি,ড্যাং ড্যাং করে ঘুরতে চলে গেছিস ঐ কাব্যর সাথে।ছেলেদের সঙ্গ তোর খুব ভালো লাগে হ্যাঁ!”
উনি এবার আমার গাল ছেড়ে দিয়ে পাশে থাকা ফুলদানিটা মাটিতে ফেলে ভেঙ্গে দেয়।আমি দুই পা পিছিয়ে যাই,উনি নিচ থেকে ভাঙ্গা একটা টুকরো তুলে আমার সামনে এসে গলায় হালকা চেপে ধরে।আমি হাত মুঠো করে চোখ বন্ধ করে ফেলি,উনি ধমকে বলে উঠে।
“এই তরে বলি নাই বিয়ের পর তোর সাথে কী করেছি না করেছি সেটা কাব্যকে না বলতে!বলেছি তকে কথাটা?”
আমি চোখ বন্ধ অবস্থাতেই মাথা নাড়াই,উনি তখন ফুলদানির ভাঙ্গা অংশটা গলায় আরেকটু চেপে ধরে।আমার চোখ থেকে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে তখন।উনি রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,
“তারপরও তুই কাব্যকে সবটা বলে দিয়েছিস,তোর সাহস হল কী করে এসব কাব্যকে জানানোর!
কাব্য যাতে এসব না জানে তার জন্য তকে মেনে নেয়ার নাটক করলাম তোর সাথে।আর সেই তুই কী না কাব্যকে সবটা বলে দিলি?আজ তকে মেরেই ফেলব আমি।আমার মানসম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিলি তুই,তোর বাঁচার কোন অধিকার নাই।”
উনি সেই ভাঙ্গা অংশটা আরেকটু চেপে ধরতে গেলে আমি উনার হাত ধরে ফেলি।আর উনার হাত ঝাড়া মেরে ফেলে দিয়ে ঠাস করে উনার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেই।
এতক্ষণ নিজের দোষ ভেবে চুপ করে ছিলাম।কিন্তু উনি ত,আমি কিছু ভাবতে পারছি না।আমার পাগল পাগল লাগছে,উনি কী বলল এসব!আমার সাথে নাটক করেছে,আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছেন উনি।কথাগুলো মাথায় ঘুরে চলছে প্রতিনিয়ত।আমার শরীর কাঁপছে রাগে,আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।অতিরিক্ত রাগ হচ্ছে আমার,তার সাথে বুকের ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে।
উনি আমার সাথে নাটক করেছে,আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছে কথাটা আবারও মাথায় আসলে আমি উনার কাছে গিয়ে রেগে আবারও উনার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেই।আমার এখন রেগে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে উনাকে,,,
“আপনি একটা অমানুষ,আপনার মত মানুষকে ২য় সুযোগ দিয়ে খুব বড় ভুল করেছি আমি।আপনি আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছেন।নিজের দোষ ঢেকে হিরো সেজে থাকার জন্য আমার সাথে নাটক করেছেন।আপনি যদি আমাকে এমনিই একবার বলতেন কাব্য ভাইয়াকে এসব না বলতে আমি বলতাম না।এমন নাটক করার কোন প্রয়োজন ছিল না।আপনাকে আমি কখনও ক্ষমা করব না,কখনও না।”
এমন হাজারও কথা বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আমি বলতে পারছি না।কেন আল্লাহ কেন তুমি আমার কথা বলার ক্ষমতা কেড়ে নিলা তুমি।কথাগুলো ভেবেই হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি।
আর সাদাফ গালে হাত দিয়ে রেগে তাকিয়ে আছে সাবিহার দিকে।সাদাফ সাবিহার দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে তখন হাত তালির শব্দে পিছন ফিরে সাদাফ।তাকিয়ে দেখে হাতে ক্যামেরা নিয়ে কাব্য দাঁড়িয়ে।
#চলবে,,,