একগুচ্ছ_রক্তজবা পর্ব১১

#একগুচ্ছ রক্তজবা
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১১

কাব্যকে এভাবে ঘরে দেখে সাদাফ খুব অবাক হয়।আর সাবিহাও হাত তালির আওয়াজে তাকিয়ে দেখে কাব্য দাঁড়িয়ে।কাব্যর পিছনে সুজন,সাফা,মিসেস রোজাও আছেন।মিসেস রোজা সাদাফের কাছে এসে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।সাদাফ অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে তার মায়ের দিকে তাকায়।মিসেস রোজা এবার রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

“তকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিতে লজ্জা হচ্ছে আমার।তুই কীভাবে পারলি সাবিহার সাথে এমন করতে।গতরাতে তকে সাবিহার জন্য অস্থির হতে দেখে আমরা সবাই ভেবেছি তুই সাবিহাকে মন থেকে মেনে নিয়েছিস।কিন্তু আজ যা শুনলাম তাতে তকে জানোয়ারের সাথে তুলনা করতেও দ্বীধা বোধ হচ্ছে না আমার।তুই আমার ছেলে সেটা ভাবতেই ঘৃনা লাগছে আমার।”

কথাগুলো বলেই মিসেস রোজা মুখ ফিরিয়ে নেয় সাদাফের উপর থেকে।আর সুজন দৌড়ে সাবিহার কাছে যায়,দেখে গলা কেমন লাল হয়ে আছে।আর অস্থির হয়ে বলে উঠে।

“সাফা ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে আয় জলদি।”

সাফাও সুজনের কথামত দৌড় লাগায় নিচে।সুজন সাবিহাকে ধরতে গেলে সাবিহা হাত দিয়ে বাঁধা দেয়।সুজন এবার সাবিহাকে বলে উঠে।

“বউমনি,,,

সুজন ভাইয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মাঝ পথে থামিয়ে দেই।আর বসা থেকে উঠে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে হাতের ইশারায় বলে উঠি।

“আমি আমার বাড়ি যেতে চাই।”

আমার হাতে ইশারা করা কথাটা কাব্য ভাইয়া সবাইকে বলেন।সেটা শুনে আম্মু এগিয়ে আসেন আমার কাছে আর গালে হাত দিয়ে করুন গলায় বলে উঠেন।

“মারে আমাদের ছেড়ে যাস না,আমার ছেলের ভুলের শাস্তি আমাদের দিস না।তুই ত আমারই আরেক মেয়েরে মা,যাস না আমাদের ছেড়ে।”

আমি আমার গাল থেকে আম্মুর হাত সরিয়ে হাতের ইশারায় বলে উঠি।

“তোমার ছেলের পরিচয়েই তোমাদের সাথে পরিচিত আমি।তোমার ছেলের সাথে আমার বিয়ে না হলে তোমাদের সাথে কোন সম্পর্ক গড়ে উঠত না।আর তোমাদের ছেলের সাথেই যখন কোন সম্পর্ক থাকবে না তখন আমি কোন পিছুটান রাখতে চাই না।”

কথাগুলো বলে আমি সরে আসি,কথাগুলো আম্মুকে বলার সময় খুব কষ্ট হচ্ছিল।কিন্তু আমার কিছু করার নেই,সাদাফ আমার সাথে যা করেছে তাতে সে প্রমান করে দিল সে আমাকে কখনও মেনে নিবে না।আর সাদাফ যা করেছে তাতে আমিও ওকে ক্ষমা করতে পারব না।একবার ক্ষমা করে ঠকেছি কিন্তু আর নয়।তাই এই বাড়িতে থাকার কোন প্রশ্নই আসে না,আর না এই সম্পর্ক রাখার কোন মানে আছে।
আমি লাগেজে নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে নেই।এই বাড়ির একটা জিনিসও নেই নি,আমার বাড়ি থেকে যা এনেছি তাই নিয়েছি।

সাদাফ এককোনে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে,তার চোখের পলক ফেলছে না।চোখে পানি টলমল করছে,আজ তার গায়ে সাবিহা হাত তুলেছে আর তাকে সে কিছুই করতে পারল না।কথাটা ভাবতেই সাদাফের রাগ বেড়ে যাচ্ছে।আবার তার মা গায়ে হাত তুলেছে,এসবে সাদাফের রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে।

আমি ব্যাগ গুছিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে নিলে সুজন ভাইয়া পথ আগলে দাঁড়ায়।আমি মাথা তুলে উনার দিকে তাকালে সুজন ভাইয়া বলেন।

“ভয় নেই তোমাকে আমি আটকাব না বউমনি।আমি জানি তুমি বড্ড কষ্ট পেয়েছো,আর সেটা আমার ভাই দিয়েছে তোমাকে।আমার ভাই অন্যায় করেছে তোমার সাথে।আর আমি কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেই না তাই তোমাকে আটকাব না।তবে এই সন্ধ্যা বেলা তোমাকে একাও ছাড়ব না আমি।আমি তোমাকে তোমার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসব।”

কথাটা বলেই সুজন ভাইয়া আমার হাত থেকে ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে সামনে হাটা দেয়।আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে,এই বাড়ির প্রতিটা মানুষ আমাকে আপন ভেবে কাছে টেনে নিয়েছে।কিন্তু যার কাছে টানার কথা সেই পারল না।এখান থেকে চলে যেতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে,আব্বু,আম্মু,সুজন ভাইয়া,সাফা ওদেরকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে।কথাগুলো আরেকবার ভেবে চোখের পানি মুছে চলে আসি সেখান থেকে।
একবার পিছন ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু আমি ঠিক করেছি আর কখনও পিছন ফিরে তাকাব না।আমার যা অতীত তাতে শুধু কষ্ট আর কষ্ট তাই আর ফিরে তাকাব না।পিছনে ফিরে কষ্ট ছাড়া আর কিছু পাব না।আমার জীবন আমার মত গড়ব আমি,আমার কথা বলতে না পারাটা আমার দুর্বলতা নয় সেটা প্রমান করব আমি।

______________________________________

সাদাফের মুখোমুখি কাব্য দাড়িয়ে আছে।আর সাদাফ নিজের চুল দু হাতে মুঠো করে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।বেশ অনেকক্ষণ পর কাব্য বাঁকা হেঁসে বলে উঠে,,,

“তুই যে সাবিহাকে বিয়ের পর এভাবে কষ্ট দিয়েছিস তার সমস্ত প্রমান এই ক্যামেরায় ভিডিও করা আছে।”

হাতে থাকা ক্যামেরাটা দেখিয়ে,সাদাফ এবার মাথা তুলে তাকিয়ে রেগে বলে উঠে।

“এই ক্যামেরায় থাকা একটা ভিডিও যদি তোর চ্যানেলে দেখানো হয় তবে কথা দিচ্ছি তার পরেরদিনের সকালটা তুই আর সাবিহা দেখতে পাবি না।”

কাব্য এবার হু হা করে হেঁসে উঠে,আর সাদাফের কাঁধে হাত দেয়।তখন সাদাফ কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে দেয়,কাব্য সেদিকে তাকিয়ে বলে উঠে।

“আমাকে এসব থ্রেট দিয়ে লাভ নেই,জীবনের রিস্ক নিয়ে দুই বছর যাবৎ সাংবাদিক এর কাজ করছি।আর তুই আমাকে মেরে ফেলার থ্রেট দিচ্ছিস!ব্যাপারটা নিতান্তই হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়।
আর রইল সাবিহার কথা সাবিহাকে মারলে পরে তুই নিজে অপরাধ বোধে ভুগবি।”

কাব্যর কথায় সাদাফ তাচ্ছিল্য হেঁসে বলে উঠে।

“ঐ মেয়েকে মারলে আমার বিন্দুমাত্র অপরাধ বোধ হবে না।এই মেয়ের জন্য আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশার উপক্রম হয়েছে।আর তাকে মেরে ফেলতে আমার একটুও কষ্ট হবে না।”

“আমি যদি বলি সাবিহার কারনে নয় তোর রাগের কারনে তোর মান সম্মান সব ধুলোয় মিশেছে!”

সাদাফ অবাক হয়ে কাব্যকে জিজ্ঞেস করে।

“মানেহ?”

“মানেটা খুব ইজি,তুই তোর রাগের কারনে আজ এ পর্যন্ত এসেছিস।তুই ত ভাবছিস সাবিহা আমাকে সবটা বলে দিয়েছে তাই আজ সাবিহার সাথে এমন আচরন করেছিস তুই।কিন্তু আসল কাহিনি হল সাবিহা আমাকে কিছুই বলে নি।”

সাদাফ এবার রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।

“মজা করছিস আমার সাথে!জোকার মনে হয় আমাকে!আমি নিজের কানে শুনেছি তুই সাবিহাকে বলেছিস,”তোমাকে খুব কষ্ট দেয়,সেটা আমি জানি শুধু প্রমানের অপেক্ষা।”এই কথাটা ত তুই ই বলেছিস সাবিহাকে।”

কাব্য এবার জোড়ে শব্দ করে হেসেই বলে উঠে।

“তুই নিজে প্রমান করলি তুই জোকার আর ঠিক কতটা বোকা।আমার এই একটা কথাতেই তুই ধরে নিলি সাবিহা আমাকে সব বলে দিয়েছে!সত্যি তুই বড্ড বেশি বোকা,আর রেগে থাকলে নিজের হুসে থাকছ না।
আসল কাহিনি শোন তুই,সাবিহা আমাকে কিছু বলে নি।তখন আমি তকে দেখে ইচ্ছে করেই কথাটা বলেছি।যাতে তুই রেগে গিয়ে সবটা স্বীকার করিস আর দেখ হলোও ঠিক তাই।তুই আমার একটা কথা শুনে কেমন রেগে গেলি আর সবটা নিজেই স্বীকার করলি।আসলে কী জানিস!আমার কাছে আগেই খবর ছিল তুই সাবিহাকে মেনে নিস নি।তাই প্রমানের জন্য এখানে আসা,আর দেখ সেটা আজই হয়ে গেলো।এবার কাল খবরের কাগজে বড়বড় করে লেখা থাকবে।
“শিল্পপতি সাদাফ তাহসান একজন নিকৃষ্ট মনের মানুষ,যে কী না একটা বোবা মেয়েকে বিয়ে করে দিনের পর দিন মানসিক আর শারীরিক ভাবে অত্যাচার করে গেছে।”
ভাবতেই ভালো লাগছে অনেক,তবে এসবে খুব খারাপ লাগছে সাবিহার জন্য।বেচারিকে কত কষ্ট দিলি তুই,এত কষ্ট দিয়ে নিজেও সুখে থাকতে পারবি না।কাউকে কষ্ট দিলে তার থেকে শতগুণে কষ্ট নিজেকে পেতে হয়।সেটা তুই কাল থেকে হাড়ে হাড়ে টের পাবি।”

কথাগুলো বলে কাব্য ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,আর সাদাফ সবটা শুনে পাথরের মত থম মেরে বসে আছে।সে সাবিহাকে ভুল বুঝেছে,খারাপ আচরন করেছে,ইমোশন নিয়ে খেলেছে।
শুধু নিজের স্বার্থের জন্য কিন্তু এতকিছু করেও শেষ রক্ষা করতে পারল না সে।কথাগুলো ভাবতেই সাদাফের চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।

#চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ অনেক তাড়াহুড়ো করে লিখেছি,রিচেক করা হয় নি।ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here