#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২১
তারপর খেয়াল করে দেখে আশেপাশে সবাই মিটিমিটি হাসছে ওদের দু’জন কে দেখে।মিম রেগে গিয়ে ইমানকে ছাড়িয়ে একাই গিয়ে বসে গাড়িতে।ইফরাজ হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে ইমান কে বলে,
– কি রে ভাই? তুই কেন শুধুশুধু রাগিয়ে দিলি ভাবি কে? ইমান মিটিমিটি হেসে বলে,
– আরে ভাই বুঝলি না? একটু রস করলাম তোর ভাবির সাথে।শুনেছি,বড্ড বেশি অভিমানী।দেখি এই মান অভিমান নিয়ে কতদিন থাকে।বলছিলাম ভাই তুই তো আজকে ফ্রী আছিস? চল না ভাবি এবং মামণি কে নিয়ে বেড়াতে আমাদের সাথে? তোর ভাবি অনেক বাচ্চা পছন্দ করে।ইখুম কে দেখে খুশি হয়ে যাবে।ইফরাজ একটু ইতস্ত করে বলে,
– তুই তো ভালো করে জানিস ভাই,আমার ইখুমের অটিজমের প্রবলেম আছে? ইমান মৃদু হেসে বলে,
– তাতে কি ভাই? দেখ ও কত হাসিমুখে খেলছে তোর ভাবির সাথে?
– এই মেয়ে টাই আমার সব ভাই আমি খুব ভালোবাসি ওকে।
– তাই তো বললাম,চল না আজকে না হয় ভাবি এবং মেয়ে কে নিয়ে ঘুরে আসবি আমাদের বাসা থেকে? খুশি সবটা শুনে খুশি হয়ে বলে,
– সত্যি ইফরাজ? আজকে আমরা বেড়াতে যাচ্ছি ইমান ভাইদের সাথে? যাগগে ভালো হলো, যে আমার আরো ভালো করে চেনার সুযোগ হয়েছে ভাবি (মিম) কে? মিম ইখুম কে আদর করতে করতে বলে,
– আম্মু তোমার এই চেইন টা পছন্দ হয়েছে? তুমি নেবে? খুশি হাসতে হাসতে বলে,
– ওর তো বোধহয় ভাবি আপনাকেই খুব পছন্দ হয়েছে ভাবি? বারবার আমার মেয়ে থেকে থেকে জড়িয়ে ধরছে আপনাকে।মিম মৃদু হেসে বলে,
– ইফরাজ ভাইয়া আপনি কিছু মনে না করলে আমি কিছু বলতে চাই আপনাকে।
– হ্যাঁ ভাবি বলেন,আমি অবশ্যই মেনে চলার চেষ্টা করবো আপনার কথা গুলো কে।মিম মৃদু হেসে বলে,
– ভাইয়া আপনি ইখুমের জন্য কথা বলুন কোনো এক চাইল্ড স্পেশালিষ্টের সাথে।ছোটো মানুষ তো? হয়তো মাঝেমধ্যে কষ্ট হলে বুঝিয়ে বলতে পারে না বাবা মা কে? আর হ্যাঁ,সময় করে কখনো কখনো শিশু পার্কে বা অন্য কোনো জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেন ওকে।কখনো মেয়ে টা কে ঘরবন্দী করে রাখবেন না ওর ও তো পৃথিবী তে বাঁচার অধিকার আছে? আমি এই কথা গুলো এই কারণে বলছি ভাইয়া আমার মামাতো বোনের মেয়ের ও অটিজম ছিলে কিন্তু সে এখন সুস্থ হয়ে গেছে।খুশি চোখের জল মুছতে মুছতে বলে,
– বিশ্বাস করেন ভাবি যখন কেউ বলেনা আমাদের মেয়ে টা প্রতিবন্ধী,তখন সব কিছু থেকে ও নিঃস্ব বলে হয় নিজেকে।মিম মৃদু হেসে খুশির হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
– শুনুন,
ভাবি।তারা মানুষিক ভাবে অসুস্থ ঠিক আছে? তাদের কথা গায়ে মাখবেন না তারা এসে ভালো করে দিয়ে যাবে না আপনাদের মেয়ে কে।ওকে কখনো অবহেলা করবেনন ভাবি ইখুম অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে।ইফরাজ পেছন থেকে ইমানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুই জিতে গেছিস ভাই,সারাজীবন এভাবেই হাসিমুখে কাটিয়ে দিস ভাবির সাথে।ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– গাড়ি থেকে নামবি? আমার বাড়ি এসে গেছে? মিম গাড়ি থেকে নামতে নামতে ওর গাল থেকে চেইন টা খুলে পরিয়ে দেয় ইখুমের গলাতে।ও চেইন টা পরে তাকিয়ে আছে ইফরাজের দিকে।ইমান ইখুমের গাল টেনে ধরে বলে,
– খুব সুন্দর লাগছে আম্মু তোমাকে।বাড়িতে ঢোকার সময় নয়ন তাঁরা বেগম চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
– তোরা ওখানে দাঁড়া একটু ভেতরে আসবি না ঠিক আছে? মিম কিছুটা ভয় পেয়ে আহমেদ সাহেব কে জিজ্ঞেস করে,
– বড় আব্বু বড় আম্মুর কি হয়েছে? তখন নয়ন তাঁরা এসে ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
– তোর বিয়ের সময়ে আমার তোকে বরণ করার সুযোগ হয়নি মা। তাই একটু “দৈ এর স্বাদ ঘোলে মেটাতে চাই বোঝা গেছে?” বরণ শেষে মিম ইমানের সাথে ঘরে ঢুকতেই রায়হান সাহেব এসে বলে,
– আমার মেয়ে টা একদিন বাড়িতে ছিল না,তাতেই সব সর্বশান্ত হয়ে গেছে।ইরাদ হাসতে হাসতে বলে,
– তুমি ঠিক বলেছ বাবা ছোটো (মিম) একাই পুরো বাড়ি টা মাতিয়ে রাখে।রিক্ত এসে মিমের গলা জড়িয়ে ধরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে,
– জোভান,জায়ান ও সাভিন তাড়াতাড়ি চলে আয় তোরা রাঙা মা এসে গেছে।ওয়াও ইফরাজ ভাইয়া তোমার বাবু তো বড় হয়ে গেছে? ইমান দুষ্টুমি করে বলে,
– নিজেই একটা বাবু? আবার তুমি বাবু বলছ কাকে?
– আমি তোর দাঁত ভেঙে দেবো শয়তান ছেলে একদম কথা বলবে না আমার সাথে।তারপর হঠাৎ মিহা এসে মিমকে বলে,
– এই প্রতিবন্ধী বাচ্চা টাকে তুই কেন কোলে নিয়েছিস? ভবিষ্যতে তোর বাচ্চা টাও এরকম প্রতিবন্ধী হবে।সাথেসাথে মিম উঠে দাঁড়িয়ে বাড়ি শুদ্ধো লোকের সামনে ওকে দু’টো চড় মারে ওকে,
– তোর ধ্যান ধারণা রাখ তোর কাছে,আর হ্যাঁ ইখুম আমার সন্তানের মতো।ওকে নিয়ে কোনো বাজে কথা শুনবো না আমি তোমার কাছে।তুমি আগে নিজে সন্তানের মা হও।তারপরে এসব ফালতু কথা বলতে এসো আমার সাথে।খুশি ভাবি আপনি এক্ষুনি এখান থেকে ঘরে চলুন আমার সাথে আর হ্যাঁ,
ওর কথায় কোনো কষ্ট পাবেননা।মানুষিক ভাবে অসুস্থ ছাড়া আমার আর কিছু বলে মনে হয় না ওকে।মিহা ইশানের কাছে ছুটে এসে বলে,
– কেমন স্বামী তুমি? তোমার চোখের সামনে তোমার ছেটো ভাইয়ের বউ তোমার বউয়ের গায়ে হাত তুললো আর তুমি কিছু বললে না তাকে?
– তুমি কি করে বাড়ির মেহমান কে অসম্মান করতে পারো এভাবে? তুমি না শুধু বিদেশ থেকে পুঁথিগত বিদ্যা নিয়ে এসেছ? ভালো মানুষ হতে পারোনি কোনো ভাবে এবং এখানে যদি মিমের কোনো অন্যায় থাকতো? তাহলে সবার আগে ইমান থামিয়ে দিতো তাকে।
– সে তো বউয়ের অন্ধভক্ত,বউ ছাড়া কিছুই বোঝে না সে? ইমান ইফরাজের হাত ধরে বলে,
– এখন থেকে চল আবার চিপ ড্রামা শুরু করেছে।
– আমি ভাবতে পারছিনা ভাবি এই পরিবেশে কিভাবে সুস্থ বাচ্চার জন্ম দেবে?
– আল্লাহ সহায়ক ভাই,একমাত্র তার ভরসায় ছেড়ে রেখেছি মেয়ে টাকে।মিম মন খারাপ করে ইখুম কে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– ভাবি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে পারলে প্লিজ ক্ষমা করে দেবেন আমাকে? খুশি মৃদু হেসে বলে,
– কি আশ্চর্য?
ভাবি আপনি কেন ক্ষমা চাইছেন? আমি খুব খুশি হয়েছি আপনার আচারবিচার দেখে।আমি এবং ইফরাজ যা আমাদের সন্তানের জন্য করতে পারিনি।আপনি সেটা করে দিয়েছেন আজকে।জানেন আমরা কেন বাড়ি ছেড়েছি?
আমার শশুড় শাশুড়ি বলতো তাদের অনাদর করার জন্য নাকি আমাদের একটা প্রতিবন্ধী বাচ্চা হয়েছে।তার হয়তো বুঝতে পারেনি সন্তান যেমন হোক না কেন? সে খুব প্রিয় হয় তার বাবা মায়ের কাছে।আপনার ভাই আমার কথায় ঘর ছাড়েনি বরং নিজেই বিরক্ত হয়ে গেছে নিজের উচ্চ শিক্ষিত বাবা মায়ের আচারবিচার দেখে।আমার মেয়ে টা কি সুন্দর করে খাচ্ছে আপনার হাতে? অধরা ও নিপা এসে খুশি কে বলে,
– তুমি কিছু মনে করো না বোন।এই বাড়িতে ডাইনির নজর পরেছে।হৃদিকা এহসান এসে মিমের কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– এখন আমি নিশ্চিত ডাইনির নজর ও কিছু করতে পারবে না এই বাড়িকে।ইমান এসে খুঁত খুঁত করে বলে,
– তোমাদের কথা বলা হলে কি আমি একটু কথা বলতে পারি আমার বউয়ের সাথে? তখন ময়না এসে ইমানকে বলে,
– গেদা ভাইয়া আপনের জন্য বড় আম্মায়ে চা দিয়েছে।মিম মুখ ভেংচে ইমানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– লুচ্চা একটা? আমার বিয়ে হয়েছে একটা ক্যারেক্টারলেস লোকের সাথে।ইমান মনেমনে বলে,”ধুরর,এই ময়না টা কি আসার সময় পায় না? বউ টা আবার ভুল বুঝলো আমাকে?” মিম মৃদু হেসে মনেমনে বলে,”সবে তো শুরু হলো কর্নেল সাহেব? দেখো না কত লেজে খেলাই তোমাকে? বারবার সবার সামনে লজ্জায় ফেলা না আমাকে? চান্দু তুমি এখনো চিনতে পারোনি গো আমাকে।”