কর্নেল_সাহেব পর্ব ২২+২৩

#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২২

“চান্দু তুমি এখনো চিনতে পারোনি গো আমাকে।” ইমান কিছুক্ষণ মন খারাপ করে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বাহিরে এসে ইফরাজ কে বলে,”কি জানি? দুষ্টুটা কি ছক কষেছে?”
– আমার তো মনে হচ্ছে তুই সারাদিন ভাবি কে লজ্জাজনক অবস্থায় ফেলতে থাকো না? তাই একটু তোকে লাইনে আনার জন্য ইনিশিয়েটিভ নিয়েছে।ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– চল দুপুর তো হয়ে গেলো,জামাতের নামাজ টা পড়ে আসি মসজিদ থেকে। ছেলে (ইমান) কে এতো টা মনমরা দেখে রায়হান সাহেব নামাজ পড়ে উঠে তার কাছে জানতে চায় কি হয়েছে? তখন ইমান মৃদু হেসে বলে,
– তুমি তো জানো বাবা,আমি আদর করে এটা-সেটা বলে বা ডাকতে থাকি তোমাদের বউ মা কে।আজ সকালে ওকে আদর করে “ময়না” ডেকে ছিলাম।সে হয়তো ভাবছে আমার কোনো প্রকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে “ময়না’র” সাথে।রায়হান সাহেব ছেলের কথা শুনে মৃদু হেসে বলেন,
– দেখ বাবা এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু হয়নি।ঠিক আছে? এক হচ্ছে ও হয়তো তোকো শায়েস্তা করার জন্য দুষ্টুমি করছে তোর সাথে,আর নয়তো প্রেগ্ন্যাসিতে অনেক সময় হরমোনাল চেইঞ্জ হয় আর তাই হয়তো সে উল্টোপাল্টা হ্যালুসিনেট করছে ঠিক আছে?
দেখ বাবা,আমি নিজে এর ভুক্তভোগী কারণ তোর মা (এনা) ও প্রেগন্যান্সি কালীন সময় গুলোতে অহেতুক সন্দেহ করতো আমাকে।যেহেতু এই সময় বিভিন্ন ধরনের হরমোনাল চেইঞ্জ হয়।তাই আমাদের ভয় না পেয়ে ভুক্তভোগীর সাথে থাকা উচিত এবং তাকে খুব যত্নে রাখা প্রয়োজন ঠিক আছে? কারণ এই সময় গুলো তো আমাকে হারানোর ভয় দেখেছিলাম আমি তোদের মায়ের (এনা) চোখে।ইমান কিছু না বলে অস্থির হয়ে তাকিয়ে থাকে রায়হান সাহেবের মুখের দিকে।তারপর হঠাৎ জিলাপি কিনে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে যায় বাড়ির দিকে।

দুপুরে,
মিম আয়নার সামনে বসে বসে ব্লাউজের হূক লাগানোর চেষ্টা করছিল।তখন হঠাৎ ইমান এসে আলতো করে চুমু খায় ওর পিঠে।মিম কিছুক্ষণ পর ইমানকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– এতোক্ষণ আপনি কোথায় ছিলেন? আপনি জানেন না যে আপনার বাড়িতে প্রেগন্যান্ট বউ আছে? ইমান ওর মুখের সামনে জিলাপির প্যাকেট তুলে ধরে বলে,
– নামাজ পড়ে তোমার জন্য জিলাপি কিনতে গিয়ে ছিলাম।তোমার তো জিলাপি খেতে খুব ভালো লাগে? আচ্ছা এক কাজ করো তুমি জিলাপি গুলো খাও আমি বরং তোমার ব্লাউজের হূক হুলো লাগিয়ে দেই? ঠিক আছে? মিম খুশি হয়ে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর টা দিয়ে দেয় ওকে।

দুপুরে,ইমান মিমকে নিয়ে খেতে বসতেই ময়না এসে ইচ্ছে করে পরে গিয়ে ইমানকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে সাথেসাথে।ইমান খাওয়ার টেবিল থেকে উঠে এসে ঠাসঠাস করে দু’টো চড় মারে ওকে।তারপর প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলে,
– তোর আর এ বাড়িতে কাজ করার প্রয়োজন নেই। বড় মা (হৃদিকা) মাইনের টাকা টা দিয়ে বিদায় করো একে।মিম একটু চিন্তিত হয়ে মনেমনে বলে,”লোকটার কি হলো আজ? এমন করছে কেন ময়নার সাথে? না আমার দুষ্টুমি তে লোকটা হঠাৎ আমাকে নিয়ে সিরিয়াস হয়ে গেছে?” খাওয়া শেষে ইমান ময়না কে সবার আড়ালে নিয়ে গিয়ে বলে,
– দেখ আমার সাথে তোরা চালাকি করে পার পাবি না।আমি কিন্তু প্রথম থেকে জানি,তুই সেদিন মিহার কথায় জুসের সাথে কিছু একটা মিলে খাইয়ে ছিলি আমার অসুস্থ বউ টাকে।ময়না ইমানের পা ধরে বলে,
– গেদা ভাইয়া,আপনি আমাকে আর একটা সুযোগ দিয়ে দেখেন।আমি আর কষ্ট দেবো না বউ মণি কে।আহমেদ সাহেব আড়ালে দাঁড়িয়ে সবটা শুনে বাড়িতে পুলিশ ডেকে বলেন,
– আমরা আর সে সময় বা সুযোগ কোনো টাই দেবো না তোমাকে।মিহা বেশ ভয় পেয়ে সায়েরা বানু কে ফোন করে বলে,
– দাদি ময়না ধরা পড়ে গেছে সবার কাছে।
– এখন মুই কিতা করতাম বোকা? তোকে আগেই বলে ছিলাম ওকে মাস মাইনে দিয়ে বাড়ি থেকে বিদায় দিতে।যাই হোক চিন্তা করিস না।আমি কিছু একটা ভেবে জানাচ্ছি তোকে।

এদিকে,মিম খুব অবাক।ও কিছুতেই যেন মেনে নিতে পারছেনা ময়না এসব কি করে করলো ওর সাথে? নিপা অধরা কে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলে,
– আমার তো প্রথম থেকে সন্দেহ মিহা কে?
– দেখ হয়তো মিহা ওকে টাকাপয়সা খাইয়ে কাজ টা করিয়েছে কোনো ভাবে?
– তারমানে আমাদের আরো সাবধানে রাখতে হবে ছোটো কে? মিম কাঁদতে কাঁদতে ইমানকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– এতোকিছুর পর,আমি কিভাবে এই পরিবেশে জন্ম দেবো আমাদের বাচ্চা টা কে? ইমান ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
– আমি আছি না? ভরসা করো আমাকে।
– আমি আর কোনো প্রকার কাওকে নিয়ে মজা করবো না আপনার সাথে।ইমান ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– তাতে কি সোনা? কাওকে দেখে কি বোঝা যায় কার মনে কি আছে? তুমি এভাবে কেঁদো না জাদু আমি সবসময় আছি তোমার সাথে।মিম কাঁদতে কাঁদতে কোনো একসময় ঘুমিয়ে যায় ইমানের বুকে।

মাঝরাতে,হঠাৎ করে মেয়ে টা ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে।ইমান তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে এসে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে,
– কি হয়েছে? এতো ভয় পাচ্ছে কেন এভাবে? মিম মনেমনে বলে,”তাহলে কি আমি যা ভেবেছিলাম তাই ঠিক? মা (এনা) একদম সুস্থ হয়ে গেছে?” কিন্তু তাহলে সে কেন এখনো পাগল হওয়ার নাটক করে বেড়াচ্ছে সবার সাথে?” ইমান বেশ ভয় পেয়ে ওকে আদর করে বলে,
– কি হয়েছে? এমন কেন লাগছে তোমাকে? মিম মৃদু হেসে বলে,
– জানো মা (এনা) স্বপ্নে এসে আদর করে গেলেন আমাকে? আর বললেন,সে কিছু হতে দেবে না আমাকে।ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– যাক বাবা তুমি তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে আমাকে।হয়তো তোমার বেশ কয়েকদিন মায়ের সাথে দেখা হয়নি।তাই হয়তো তুমি স্বপ্নের মাঝে হ্যালুসিনেট করছিলে তাকে? মিম মনেমনে বলে,”আমি কোনো হ্যালুসিনেট করছিনা কর্নেল সাহেব।মা (এনা) এসে ছিল আমার কাছে এবং আমি তখন চোখ বুঝে শুয়ে ছিলাম।হ্যাঁ মা এসেছিল আমার কাছে।” ইমান মৃদু হেসে বলে,
– কি হলো জাদু? কি এতো ভাবছ গভীর ভাবে? মিম ওর বুকে মাথা রেখে বলে,
– এই একটা শান্তির জায়গায় এখন আমার ভয় করছে না কোনো ভাবে।ইমান হাসতে হাসতে তখন ওর ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় মিমের ঠোঁটে।ইশান ওদের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মৃদু হেসে বলে,
– আমি বৃথাই সময় নষ্ট করছি,ওদের দাম্পত্য জীবন খুব সুখে কাটছে সুন্দর ভাবে।মিহা এসে ইশানের হাত ধরে বলে,
– এভাবে দাঁড়িয়ে গেলে যে? চলো।তোমার মনে হয় না আমাদের এখন বেবি প্ল্যান করার সময় এসেছে?
– তুমি না মিমের সাথে পাল্লা দেওয়ার চেষ্টা কম করো ঠিক আছে? বেশ বুঝতে পারছি তোমার খুব জ্বলছে ওকে দেখে।ইশানের কথা গুলো মিহার বুকে হাতুড়ির ন্যায় আঘাত করেছে।চোখের জল আজ বাঁধ মানছে না আর।ও কি করে হেরে গেল মিমের কাছে? ইমান দরজা টা লাগিয়ে এসে পাতলা কাঁথা গায়ে চড়িয়ে তাহার মধ্যে মিমকে টেনে নেয় সাথেসাথে।তারপর ফিসফিস করে ওর কানে কানে বলে,
– বাবু হওয়ার পর কিন্তু তোমাকে শুতে হবে আমাদের দু’জনের মাঝে? মিম লজ্জা পেয়ে ইমানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– হুমম,তবে তোমার হাবভাব তো ভালো ঠেকছে না আমার কাছে?

দেখতে দেখতে চোখ পলকে মিমের প্রেগ্ন্যাসির ছয় মাস কেটে গেছে।অথচ মিমকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে মা হতে চলেছে।#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২৩

দেখতে দেখতে চোখের পলকে মিমের প্রেগ্ন্যাসির ছয় মাস কেটে গেছে।অথচ ওকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে ও মা হতে চলেছে।
ইমান আজ সাভার সেনানিবাসের একটা অনুষ্ঠানে মিমকে সাথে করে নিয়ে এসেছে।সবার মুখে এক কথা ম্যাম নাকি প্রেগন্যান্ট? অথচ তাকে দেখে মনে হচ্ছে না যে সে গর্ভবতী হয়েছে।একজন অফিসারের ওয়াইফ তো মিমকে জিজ্ঞেস করে ফেলেছে,
– ভাবি আপনার কি মিসক্যারেজ হয়েছে? না আপনার সাহেব ম্যারেড লাইফ এনজয় করার জন্য অ্যাবরশন করিয়েছে? মিম একটু রেগে গিয়ে বলে,
– ভাবি আপনাকে এতো ভাবতে কে বলেছে? আমি কি একবারো এ কথা গুলো বলেছি আপনাকে? আপনি না হাই সোসাইটি তে বিলং করেন? এমন গুজব ছড়ানো কি মানায় আপনাকে? মিসেস তালহা রেগে গিয়ে স্বামীর কাছে এসে বলেন,
– দু’দিনের একটা মেয়ে আমাকে শেখাতে এসেছে? আজগর সাহেব মৃদু হেসে বলেন,
– তুমি গিয়ে অশিক্ষিত’র মতো আচরণ করলে কেন তার সাথে? সে এখনো অনেক সুন্দরী বলে দেখে হিংসে হচ্ছে তাকে?
শোনো,সে তোমার খায় ও না পরে ওনা ঠিক আছে? এতো এই পার্টিতে যাও,সেই পার্টিতে যাও অথচ নূন্যতম কমনসেন্স নেই তোমার মাঝে? আমি রিকোয়েস্ট করছি এটা তোমার বাড়ি না।আমার কর্মস্থল।তাই বুঝেশুনে কথা বলো সবার সাথে।আর হ্যাঁ,
একটা কথা মনে রেখো যে সম্মান দিলে,সম্মান পাবে সবার কাছে।আর নয়তো এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে তোমার স্বামীর পয়সা আছে বলে সবাই মাথায় তুলে রাখবে তোমাকে।মিসেস তালহা স্বামীর সাথে বেশি সুবিধা না করতে পেরে রাগে গজগজ করতে করতে দূরে গিয়ে কথা বলতে শুরু করে অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত গেস্টদের সাথে।ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজগর এগিয়ে এসে মিমকে বলে,
– ভাবি আপনি কিছু মনে করবেননা।কোথায় কি বলতে হয় এতটুকু কমনসেন্স নেই তার মাঝে।মিম মৃদু হেসে বলে,
– ব্যাপার না ভাইয়া ঠিক আছে।ইমান কনফারেন্স শেষ করে এসে মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– কি ব্যাপার সোনা? এমন মনমরা লাগছে কেন তোমাকে? মিম ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– আমার শরীরে এখনো মাতৃত্বের কোনো চিহ্ন ফুটে ওঠেনি বলে যাচ্ছে তাই বলছে লোকে? ইমান হাসতে হাসতে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– ইগনোর দেম বেবি,এখানে কেউ তো আর আমার বউয়ের মতো ন্যাচারাল সুন্দরী নয়।সব আটা-ময়দা মেখে এসেছে বিউটি পার্লার থেকে।সেভাবে কেউ কারো নজর কারতে পারছেনা।তাই সবার হিংসে হচ্ছে তোমাকে দেখে।
– যতোই বলো না কেনো তুমি তো দুধের মতো সাদা,তা হলে কি দেখে পছন্দ করেছ এই কালুকে? ইমান রেগে গিয়ে বলে,
– আর কখনো এমনতর কথা বললে, তোমার একদিন কি আমার একদিন ঠিক আছে?
শোনো,তুমি যেমন আমি তেমন করে ভালোবাসি তোমাকে।তোমার গায়ের রং কখনো ম্যাটার করেনি আমার কাছে।কারণ আল্লাহ তাআ’লার সৃষ্টি সবকিছু সুন্দর।আমার অসম্মান করার কোনো অধিকার নেই তাকে।মিম হাসতে হাসতে নিজের মাথাটা রাখে ইমানের বুকে।তখন ক্যাপ্টেন রেহান মাথা চুলকতে চুলকতে এসে ইমানকে বলে,
– স্যার ম্যামকে কোথায় বসিয়ে দিন।দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কষ্ট হবে।ইমান মৃদ হেসে বলে,
– বলে লাভ নেই তোমাদের ম্যাম সারাদিন এমন ছটফট করতে থাকে।অনুষ্ঠান শুরু হতেই মিসেস তালহা এবং আরো কিছু মহিলা এসে মিমকে জিজ্ঞেস করে,
– ভাবি আপনার শাড়ি টা অনেক সুন্দর।নিয়েছেন কোথা থেকে? মিম মৃদু হেসে বলে,
– আমি বলতে পারবোনা ভাবি।আপনাদের ভাই অনলাইন থেকে নিয়েছে।মিসেস নিসি মৃদু হেসে বলে,
– মেয়ে টা কি হিংসুটে? তালহা ভাবি ঠিক বলেছে।পাশ থেকে ইমান রেগে গিয়ে বলে ওঠে,
– আপনারা কতদিন ধরে চেনেন আমার স্ত্রী কে? যে এসে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিচ্ছেন তাকে? ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজগর এসে নিজের স্ত্রীর হাত ধরে বলেন,
– তোমার এই অনুষ্ঠানে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।শুধুশুধু আমার মান সম্মান ডোবাবে।আর ভাবি (মিম আপনি প্লিজ এদের কথা গায়ে মাখবেননা।শিক্ষিত লোকদের কাজ এমন না।
– ঠিক আছে,তবে ভাইয়া প্লিজ আপনি নিয়ে যাবেননা ভাবিকে।আজগর সাহেব তার স্ত্রীর হাত ছেড়ে দিয়ে প্রস্থান করেন সেখান থেকে।

কিছুক্ষণ পর,লাহাব সাহেব ইমানকে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
– বউ মা কুসিকাঁটা দিয়ে কি করছে? ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– আমি আবদার করেছিলাম স্যার,তাই সে আমার জন্য একটা সোয়েটার বুনে দিচ্ছে।
– বাহ!
অনেক গুণী তো? বাচ্চার জন্যে কিছু বানিয়েছে? ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– তার কাঁথা থেকে শুরু করে শীতের জুতো সব নিজের হাতে বানিয়েছে।যদিও আমি মানা করেছিলাম তবে আমার কথা গুলো গায়ে মাখেনি সে।মিম হাসতে হাসতে বলে,
– স্যার সারাদিন কি বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগে? আমাকে এক গ্লাস পানি ঢেলে ও খেতে হয় না।আপনাদের কর্নেল সাহেব এমন ব্যবস্থা করেছে।
– তোমরা সুখী থাকো মা,আল্লাহ তাআ’লা একটা সুস্থ সন্তান দান করুক তোমাকে।এর মধ্যে ইখুম এসে মিমের গলা জড়িয়ে ধরেছে।খুশি হাসতে হাসতে মিমের হাত চেপে ধরে বলে,
– তোমার ভাইয়া তোমার কথা মতো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চাইল্ড স্পেশালিষ্টের সাথে কথা বলেছে।আমরা তার কাছে আজ গিয়েছিলাম উনি তুমি যে কথা গুলো বলেছ সে গুলোই বলেছে।আজ তোমার ভাইয়াকে দেখলাম মেয়ে সুস্থ হয়ে যাবে শুনে সে খুশি হয়ে খুব কেঁদেছে।তখন ইফরাজ এগিয়ে এসে মিমকে বলে,
– আপু এই ছোটো গিফট টা তোমার জন্য।মিম মৃদু হেসে বলে,
– ভাইয়া এটা আনতে কে বলেছে?
– ভাইয়া বলে ডাকছ আবার কথা শোনাচ্ছ আমাকে? এই যে কর্নেল সাহেব? এই আংটি টা পরিয়ে দেন তার হাতে।আমি কিন্তু আপনাদের এনগেজমেন্টে ছিলাম না মনে আছে? ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– ক্ষমা করে দে ভাই ভুল হয়ে গেছে।এই নে দ্বিতীয় বার এনগেজমেন্ট করে ফেললাম এবার দ্বিতীয় বার বিয়ের খরচ ও বউ ভাতের খরচ টা ও তুই দিয়ে দিস ঠিক আছে? ইফরাজ হাসতে হাসতে বলে,
– হ্যাঁ অবশ্যই,ভাবি কে নিয়ে খেতে চল খাওয়ার সময় হয়েছে।এক টেবিলে বিয়ে বাড়ির ন্যায় প্রায় বিশ থেকে পঁচিশ জন খেতে বসেছে।মিম ওয়াস বেসিন থেকে হাত ধুয়ে বের হতেই একজন লোক এসে বলে,
– ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড,আপনার ফোন নাম্বার টা পাওয়া যাবে? মিম মৃদু হেসে বলে,
– নাহ!
ভাইয়া।আমি ফোন নম্বর টা শেয়ার করি না কারো সাথে।”ভাইয়া” শব্দ টা শুনে ভদ্রলোক এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
– আপনার কোন এঙ্গেল থেকে “ভাইয়া” বলে মনে হচ্ছে আমাকে? ভাইয়া বলে যখন ডাকলেন,তখন কি আপনার বাপের সম্পত্তির ভাগ দেবেন আমাকে? মিম তাকে পাত্তা না দিয়ে ইমানের সাথে খেতে বসে।ইমান খেয়াল করে দেখে পাশের টেবিল থেকে বিহান চুপ করে তাকিয়ে আছে মিমের দিকে।তাতে ওর কিছু যায় আসে না,কারণ ও খুব যত্ন করে মিমকে খাইয়ে দিচ্ছে নিজের হাতে এবং মিম ও আস্তে আস্তে করে গ্রাস তুলে দিচ্ছে ইমানের মুখে।

সকালে,ইমান ঘুম থেকে উঠে দেখে বিহান ওর বাবা মা কে নিয়ে হাজির হয়েছে ওদের বাড়িতে।মিমকে দেখিয়ে রাহুল সাহেব রায়হান সাহেব কে বলে,
– ভাই আপনার ওই মেয়ে টাকে দেবেন আমাকে? রায়হান সাহেব ও আহমেদ সাহেব ব্যাপার টা বুঝতে পেরে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে একে অপরকে দেখে।বিহান এগিয়ে এসে ইমানকে বলে,
– তুমি তো কখনো বলোনি ইমান,যে তোমার সুন্দর একটা ছোটো বোন (মিম) আছে? পাকা রিক্ত চোখ পাকিয়ে বিহান কে বলে,
– সেটা আপনাকে ঘটা করে বলার কি আছে? ইমান রেগে গিয়ে আচমকা ঝাড়ি মেরে বলে,
– আপনার সাহস তো কম না? খবর না নিয়ে মেয়ে দেখতে চলে এলেন এই বাড়িতে?
– কেন ছোটো বোন (মিম) কে বিয়ে টিয়ে দেবে না? বসিয়ে সারাজীবন বসিয়ে খাওয়াবে তাকে? মিম শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে তেড়ে এসে বিহান কল বলে,
– আপনার সাহস তো কম না? ফালতু কথা বলছেন কোন আপনি আমার স্বামীর সাথে? আমি এ বাড়ির বউ আর ইনি আমার স্বামী প্লাস হবু সন্তানের বাবা ঠিক আছে?
বেচারা বিহান বড়সড় রকমের একটা ধাক্কা খেয়ে তাকিয়ে আছে মিমের মুখের দিকে।

এদিকে,রান্নাঘরে বসে হাসতে হাসতে সব শেষ,নয়ন তাঁরা বেগম বলে,
– আমাদের ছোটোর (মিম) জন্য আবার বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে? হৃদিকা এহসান হাসতে হাসতে বলে,
– প্রথমটার কথা তো ছেলে (ইমান) জানতো না,দ্বিতীয়টার কথা জেনে গেছে।জোভান এসে হাসতে হাসতে বলে,
– মা,দাদি? হলো চলো ছোটো বাবা (ইমান) পারলে মেরে তারায় লোকটা কে? ইমান চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে,
– কমনসেন্স নেই খোঁজ খবর না নিয়ে মেয়ে দেখতে চলে এসেছে।বিহান রাগে কটমট করতে করতে বলে,
– খোঁজ নিয়ে ছিলাম শালার ঘটক ওকে (মিম) বাড়ির মেয়ে বলেছে।বাসায় যাই আজ ওই লোকের একদিন কি আমার একদিন? শালার ব্যাটা আমার কত টাকা মেরে খেয়েছে।আর শোনেন, বাড়ির বউকে বাড়ির বউয়ের মতো রাখবেন ঠিক আছে? মেয়ে বানিয়ে রাখেন কেন? আমার মতো লোকে বোকা বনে যায় মেয়ে দেখতে এসে।ইমান আর কোনো কথা না বাড়িয়ে হাসতে হাসতে মিমকে নিয়ে ঘরে চলে আসে।মিম মনেমনে বলে,”ওরে আমার জেলাস রে? এভাবে কখনো রাগতে দেখিনি তাকে?” ইমান বিড়বিড় করে বলে,”শালার ব্যাটা,শখ কত? আমার বউকে বিয়ে করতে এসেছে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here