ভিনদেশী পর্ব ২৪+২৫+২৬

#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ২৪

শ্রুতি রাস্তার দিকে নজর দিতেই চোখে পরল একটা রেড কালার গাড়ি। শ্রুতি চমকে উঠল।

–এটা তো জ্যাকের গাড়ি। ও এখানে কী করছে?
শ্রুতি তাড়াতাড়ি রুমে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল জ্যাক এখন কল করছে। শ্রুতি তাড়াতাড়ি কলটা রিসিভ করে বলল,

–জ্যাক তুমি আমার বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে কী করছো?

–শ্রুতি একটু নিচে আসো।তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।

জ্যাকের কথা শুনে শ্রুতির রাগটা যেন আরও বেড়ে গেল৷ রাত ১১.৩০টায় কল দিয়ে বলে জরুরি কথা আছে। আরে ভাই তুই সারাদিন কী করছিলি। শ্রুতি কর্কশ কন্ঠে বলল,

–যা কথা আছে ফোনে বলো৷ আমি নিচে যেতে পারবো না।

জ্যাক অনুরোধের সুরে বলল,

–প্লিজ শ্রুতি একবার আসো না। প্লিজ প্লিজ।

জ্যাকের অনুরাগীর কন্ঠ শুনে শ্রুতির রাগ টা নিমেষেই উধাও হয়ে গেল। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে মৃদু স্বরে বলল ,

–আসছি।

বাহিরে এখন বেশ ঠান্ডা। শ্রুতি নিজের জ্যাকেটটা পরে নিল।আর নিজের ক্যাপ টুপিটা পরে নিল। অতঃপর রুমের দরজাটা ভেজানো রেখে পা টিপে টিপে মেইন ডোর টা খুলে বাহিরে আসল।
জ্যাকের গাড়ির সামনে গিয়ে জানালায় টোকা দিল।

–জ্যাক আমি এসেছি৷ এখন কী জরুরি কথা বলবে তাড়াতাড়ি বলো।

জ্যাক গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে ভিতরে এসে বসতে বলল।

শ্রুতি ব্যস্ততা দেখিয়ে বলে,

–না জ্যাক ভিতরে আসার সময় নেই। কেউ দেখে ফেলবে। যা বলার এরকমই বলো।

জ্যাক শ্রুতির কথা শুনে শ্রুতির হাতটা ধরে হ্যাঁচকা টানে গাড়ির ভিতরে নিয়ে আসল। শ্রুতি হতভম্ব হয়ে গেছে। এইসব কী করছে জ্যাক সে বুঝতে পারছে না।

–জ্যাক, কী করছো এসব? বাসায় যেতে হবে। কী কথা বলবা বলো?

প্রশ্নটা করেই শ্রুতি গাড়ির দরজাটা খোলার চেষ্টা করল। কিন্তু খুলতেই পারছে।কী হলো বুজলো না? জ্যাক শ্রুতিকে বলল,

–গাড়ির দরজা লক করে দিয়েছে। খুলতে পারবে না।

শ্রুতি জ্যাকের দিকে অবাক হয়ে তাকালো।জরুরি কথা বলার জন্য ডেকে আনলো। তাহলে গাড়ির দরজা লক কেন করলো? শ্রুতির ভয় হতে লাগলো।জ্যাক খারাপ কিছু করবে নাতো। কিন্তু জ্যাক তো এরকম ছেলে না। শ্রুতি তা বিশ্বাস করে। জ্যাক শ্রুতির দিকে এগিয়ে গালে হাত দিয়ে বলল,

–আজকে আমরা গাড়ি নিয়ে পুরো শহর ঘুরবো।

জ্যাকের কথা শুনে শ্রুতির মাথা ঘোরানোর মতো অবস্থা। এতো রাতে পুরো শহর ঘোরা?শ্রুতির জ্যাকের প্রতি রাগ লাগছে।কী আবোলতাবোল বকছে। দিনে কী করছে? যে রাতে শহর ঘোরা লাগবে।ওহ মনেই ছিলো না দিনে তো সে জেসিকার সাথে সময় কাটিয়েছে। আর এখন আসছে তার কাছে। যদি খালামনি আর লুসি জেগে যায় তখন যদি তাকে বাসায় না পায় তখন কী হবে?বিশাল কেলেংকারী হয়ে যাবে।

শ্রুতি গাল থেকে জ্যাক হাত সরিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলল,

–জ্যাক আমার ঘুরতে হবে না। আমি বাসায় যাবো। গাড়ির দরজার লক খোলো।

জ্যাক শ্রুতির চোখমুখ দেখেই বুজতে পারলো, শ্রুতি টেনশন করছে।
জ্যাক গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল,

–আরে এতো টেনশন করো না। আমি খারাপ কিছু করব। আমাকে তুমি বিশ্বাস করো আমি তা জানি। আর বাসার কথাও চিন্তা করো না। তোমার খালামনি কিছুই জানবে না। আমি লুসিকে আগেই বলেছি। ও ম্যানেজ করে নিবে।

জ্যাক কথা শুনে শ্রুতি অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে জ্যাকের দিকে তাকালো। এই ছেলেটা তার মনের কথা জানলো কীভাবে? ও কী মনের কথা পড়তে পারে?লুসিকে কী বলেছে?আর লুসিও এতো রাতে তাকে জ্যাকের সাথে জেতে দিতে রাজি হয়েছে?
শ্রুতির মাথায় প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সে জ্যাকের দিকে তাকালো সে একমনে গাড়ি ড্রাইভ করছে।
শ্রুতি প্রশ্নগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে জানালার বাইরে তাকালো।শহরে না না আলোর বাতি দিয়ে রাস্তার পাশের সব গুলো বাড়ি সাজানো। শ্রুতি সৌন্দর্য টা আরও উপভোগ করতে চাওয়ার জন্য জানালা খুলতে নিলে, জ্যাক এক ধমক দিয়ে বললো,

–জানালা খুলো না। তোমার ঠান্ডা লাগবে।

শ্রুতির জ্যাকের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল৷ সে ঠোঁট ফুলিয়ে বসে রইল।
জ্যাক শ্রুতির অবস্থা দেখে মৃদু হাসল।

–আচ্ছা অল্প একটু খোলো। বেশি না। ঠান্ডা বাতাসে তোমার ঠান্ডা লাগবে।

শ্রুতি জ্যাকের কথা শুনে খুব খুশি হলো। সে হালকা একটু জানালা টা খুলল।

এক দমকা হিমশীতল বাতাস এসে তার চোখ মুখে বারি খেল। সে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল।
আস্তে আস্তে চোখ খুলল। রাস্তার পাশের এখন বাড়িগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এই তুষার পতের ভিতরেও এইদিকের মানুষ সৌন্দর্য কোনো কমতি রাখে নি। বাড়ি বিভিন্ন লাইটিং দিয়ে সাজানো হয়েছে। রাস্তার পাশে ক্রিসমাস ট্রি, সান্তা ক্লোজ এর ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে। রাস্তার পাশের গাছ গুলোও যেন সৌন্দর্যের এক নিদর্শন।
শ্রুতির খুব ভালো লাগছে। মাঝ রাতে এই প্রথম ও শহর ঘুরতে বেরিয়েছে। রাতের শহরটা যে এতো সুন্দর হতে পারে তা শ্রুতির ধারণার ও বাইরে ছিল। একটা আলাদা এক্সাইমেন্ট কাজ করছে।আর এই পুরো ক্রেডিট টাই জ্যাকের । ও না থাকলে এসব সম্ভব হতো না।
দৈবাত্ গাড়ি ব্রেক করলো জ্যাক। শ্রুতি চমকে গেলো।
জ্যাক গাড়ি থেকে নামতে বললো। শ্রুতিও বিনা কথায় গাড়ি থেকে নামল। শ্রুতি আশেপাশে তাকালো। রাস্তায় তেমন মানুষ নেই।
শ্রুতি সামনে তাকিয়ে একটা লাক্সারিয়াস রেস্টুরেন্ট দেখতে পেলো। জ্যাক সেই দিকে যাচ্ছে। শ্রুতিও জ্যাকের পিছন পিছন গেলো।
জ্যাক আর শ্রুতি রেস্টুরেন্টে ডুকতেই তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালো।রেস্টুরেন্টে তেমন ভীড় নেই।কিছু কাপল আছে শুধুমাত্র।
শ্রুতি জ্যাককে বলল,

–জ্যাক এখানে আসার কী দরকার ছিলো? তুমি তো বললা ঘুরবে আজকে। তাহলে আবার এই রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসলা কেন?

জ্যাক মেনু কার্ড দেখতে দেখতে বলল,

–ক্ষুধা লেগেছিল খুব। রাতরে ডিনার করেনি। তোমার সাথে ডিনার করবো বলে।

জ্যাকের এই খাপছাড়া কথা শ্রুতির ভালো লাগলো না। জ্যাক শ্রুতির দিকে মেনু কার্ড এগিয়ে দিলে শ্রুতি বললো,

–তোমার যা ইচ্ছা অর্ডার দেও। আমার তেমন ক্ষুধা লাগছে না। আমি রাতরে ডিনার করেছি।

জ্যাক একজন ওয়েটারকে ডেকে খাবারের অর্ডার দিল।
শ্রুতি রেস্টুরেন্ট টাকে তার চক্ষু দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। লাক্সারিয়াস রেস্টুরেন্ট এমনি সৌন্দর্যের বাহার। কিন্তু ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে আরও সাজানো হয়েছে যেনো সৌন্দর্য উপচে পড়ছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ওয়েটার খাবার নিয়ে আসলো।
জ্যাক অনেক খাবারই অর্ডার করেছে।ওয়েটার একেএকে খাবার গুলো পরিবেশন করলো। এর মধ্যে টার্কির রয়েছে স্টাফিং, ম্যাশড আলু, ক্র্যানবেরি সস, ক্রিসমাস পুডিং, ক্রিসমাস কেক, মাখন টার্ট। পানীয়ের মধ্যে আছে অ্যালকোহল, ককটেল, ম্যাপল সিরাপ।
এতো খাবার দেখে শ্রুতি অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্হা।
শ্রুতি আনমনেই প্রশ্ন করলো,

–এতো খাবার খাবে কে?

জ্যাক স্টাফিং টায় কামড় দিতে দিতে বলল,

–কেনো তুমি আর আমি?

শ্রুতি ভেংচি কেটে বলল,

–আমি অর্ডার করি নি। তুমি করেছো। তাই তোমাকেই খেতে হবে হুম।

–আগে খাওয়া শুরু করো। তারপর দেখা যাবে।

শ্রুতি প্রথমেই ক্র্যানবেরি সসটা অল্প একটু টেস্ট করলো।এভাবে সব খাবারই অল্প অল্প করে খেলো। ম্যাপল সিরাপটা হাত নিলো।জ্যাক উইন্টার ককটেল খাচ্ছে।হঠাত্ জ্যাক শ্রুতির চেয়ারটা টেনে তার পাশে নিয়ে আসল।শ্রুতির হাত দিয়ে একটু জন্য ম্যাপল সিরাপটা পরে নি। শ্রুতি কিছু বলতে যাবে তার আগেই জ্যাক তার মুখে ভিতর এক পিস কেক ঢুকিয়ে দিল। শ্রুতির ঠোঁটের চারপাশ পুরো মেখে গেছে। জ্যাকের আকস্মিক এই আক্রমণে শ্রুতি প্রস্তুত ছিলো না। জ্যাক এই রকম কিছু করবে শ্রুতির মাথায় ছিলো না। শ্রুতি কিছু বলতে নিয়েও পারলো না। কথা গুলো গলা পর্যন্ত আসছে। মুখ পুরো ভরতি, কথা বলবে কীভাবে। শ্রুতি মন মনে ভাবলো, আগে কেকটা খাই। নাহলে ওকে কিছুই বলতে পারবো না। বেশি বাড়তেছে দিনদিন।
জ্যাক শ্রুতির এইরকম অবস্হা দেখে হাসল। শ্রুতির মুখের কেকটা খাওয়া শেষ হলেই জ্যাক বলল,

–ওয়াও শ্রুতি তোমাকে কী কিউট লাগছে!
বলেই শ্রুতি ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকা ক্রিমগুলোর নিজের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে নিয়ে খেতে খেতে বলল ,

–আহ, কী স্বাদ!

জ্যাকের কথা শুনে শ্রুতির রাগ লাগছে। আগে মুখে কেক ঢুকিয়ে দিয়েছে এখন এইসব কথা বলছে।রাগটা যেনো আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেল,

শ্রুতি কিছু বলতে নিবে তার আগেই জ্যাক মাথা নিচু করে বলল,

–সরি, আসলে মজা করছিলাম তোমার সাথে।

শ্রুতি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। জ্যাক তো সরি বলেছে। আর কী বলবে।
জ্যাক আড়চোখ দিয়ে শ্রুতিকে দেখে ঠোঁট চেপে হাসল। জ্যাক শ্রুতির মুখের এক্সপ্রেসন দেখেই বুঝে নিয়েছে শ্রুতি রাগ করেছে।তাই যেনো ঝামেলা না হয় তাই আগেই সরি বললো।

গাড়িতে,
শ্রুতির ঘুম পাচ্ছিল। সে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে দেখলো জ্যাক গাড়ি চালাচ্ছে। সাউন্ডবক্সে মৃদু শব্দে বাজছে,

Justin Bieber এর Baby song
You know you love me, I know you care

শ্রুতি নিজের সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বাইরে তাকালো। কখন যে ঘুমালো সে নিজেই জানে না।

অনেকক্ষণ ধরে শ্রুতির কোনো সারাশব্দ না পেয়ে জ্যাক গাড়ি থামালো৷ শ্রুতির সিটের দিকে তাকিয়ে দেখে শ্রুতি ঘুমিয়ে পড়েছে। জ্যাক শ্রুতির কাছে আসতেই থমকে যায়।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রুতির দিকে। ঘুমন্ত শ্রুতিকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে। জ্যাক মনে মনে আওড়াতে থাকলো,

–This girl is enough to make me crazy.

এভাবে কতক্ষণ যে তাকিয়ে থাকলো নিজেও জানে না। হঠাৎ খেয়াল করলো শ্রুতির মাথাটা সিট থেকে পরে যাচ্ছে৷ জ্যাক শ্রুতিকে নিজের কাছে টেনে এনে শ্রুতির কপালে গভীরভাবে ঠোঁট ছোয়ালো। অতঃপর শ্রুতির মাথাটা নিজের বুকে রেখে এক হাত দিয়ে কোমড় আঁকড়ে ধরে গাড়ি স্টার্ট দিল।

সকালে,,,

শ্রুতি নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো। নিজেকে বিছানায় থেকে সে খুব অবাক হলো। সে তো গাড়িতে ছিল এখানে আসলো কীভাবে? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আটটা বাজে। সে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হলো। মুখটা মুছে তাড়াতাড়ি নিজের মোবাইলটা নিয়ে জ্যাককে কল করল।কয়েকবার রিং হতেই জ্যাক কল ধরে, ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,

–হুম শ্রুতি বলো।

–জ্যাক রাতরে তো আমি তোমার সাথে ছিলাম। তারপর কী হলো?

–তুমি গাড়িতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলে। তারপর আমি তোমায় বাসায় নিয়েগিয়েছি৷

শ্রুতির কথাটা শুনে ভয়টা আরো বেড়ে গেল।তার ভয় হচ্ছে যে কেউ দেখেনি তো।

–জ্যাক কীভাবে নিয়ে আসলা? না মানে বোজাতে চাচ্ছি
কেউ দেখিনি।

–না, লুসি সাথে ছিল।

–আচ্ছা রাখি।

ফোনটা কেটে শ্রুতি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। লুসির জন্য কালকে বেঁচে গেছে ও। না হলে মনে হয় ধরাই পড়তো৷
#ভিনদেশী
#পার্ট ঃ২৫
#আদ্রিয়ানা নীলা

রাস্তা দুটো গাড়ি দ্রুত বেগে চলছে। যাদের উদ্দেশ্য ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য। আমেরিকায় এসেছে ক্যালিফোর্নিয়া ঘুরতে যাবে না তা কী হয়!
অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতির আশীর্বাদধন্য ক্যালিফোর্নিয়া এক উৎসবের রাজ্য।প্রকৃতি দুহাতে উজাড় করে দিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়াকে। এখানকার মানুষের বসবাস প্রকৃতির সঙ্গেই। প্রশান্ত মহাসাগরের কোল ঘেঁষে প্রায় নয় শ মাইল বিস্তৃত মেক্সিকো সীমান্ত ঘিরে গড়ে ওঠা রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া।

শ্রুতিরাও যাচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া ঘুরতে।৫দিনের ট্রিপ। তারা কিছু ফ্রেন্ড মিলে। এর মধ্যে আছে এলিশা, লুসি, লিও, জ্যাক। আরও তাদের কিছু ফ্রেন্ড যাদের সাথে শ্রুতির বেশি পরিচয় নেই।শ্রুতি ওদের সবার থেকে ১বছর জুনিয়র হলেও সব সময় ওদের সাথেই চলে।ওদের সাথে চললে শ্রুতির নিজেকে ওদের সমবয়সী মনে হয়।ওরাও শ্রুতিকে নিজের বন্ধু হিসেবেই ট্রিট করে।শ্রুতি কখনো ভাবে নি এই ভিনদেশে এসে এতো ভালো বন্ধু পাবে। এরকম বন্ধু পেয়ে সত্যিই গর্বিত সে। এই ভিনদেশে যেন তারাই তার পথ চলার প্রেরণা, সুখ, দুঃখের অংশীদার, নতুন কিছু দেখা শেখার উত্স।

ক্যালিফোর্নিয়া যাওয়ার একটা কারণ হলো এখানে এ
গানের কমপিটিশন আছে।এছাড়াও আর একটা কারণ হলো এখানের মানুষ ক্রিসমাস বা বড়দিনে নানা ধরনের আনন্দ আয়োজনে মেতে ওঠে। এ উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রে দেওয়া হয় লম্বা ছুটি। ফলে মানুষ প্রিয়জনদের নিয়ে নিজেদের মতো করে ছুটি কাটায়। কেউ ঘুরতে বের হয়ে যায়। কারণ, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা কিংবা জর্জিয়ার মতো রাজ্যগুলোতে শীতেও অতোটা ঠাণ্ডা থাকে না।
শ্রুতির ইচ্ছা ছিল লস অ্যাঞ্জেলস শহরটা ঘোরা। শহরটা নাকি প্রচুর সুন্দর।প্রত্যেক বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে এই শহরে । শ্রুতির সেই ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে।

ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্য থেকে ক্যালিফোর্নিয়া গাড়িতে যেতে প্রায়ই ১২ ঘন্টা লাগে। অনেক বড়ো একটা জার্নি। শ্রুতি এতক্ষণ গাড়ি জার্নি করা এক দম ভালো লাগে না। কিন্তু আজকে বন্ড ভালো লাগছে। পাশে জ্যাক বসে গাড়ি ড্রাইভ করছে। এতক্ষণ লিও করছিল আর এখন সে। শ্রুতি গাড়ির কাচটা নামিয়ে জানালার পাশে হাত ভর করে বাহিরে তাকিয়ে আছে।হালকা বাতাস বইছে। তবুও শ্রুতির ভালো লাগছে এই বাতাসটা তেমন ওয়াশিংটন বাতাসের মতো হীম শীতল না। ক্যালিফোর্নিয়ার কাছাকাছি চলে এসেছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবে।

জ্যাক গাড়ি থামালো। সবাইকে একে একে নামতে বলল। শ্রুতি বুঝতে পারলো তারা পৌঁছে গেছে। শ্রুতি গাড়ি থেকে নামলে ওর অন্তরে একটা উত্তেজনার সঞ্চয় হলো যেটা গাছের সর্বাঙ্গ প্রবাহিত রসের মধ্যে ফুল ফোটাবার মতো ।সবাই একে একে নামছে। লিও, জ্যাক গাড়ি থেকে সবার লাগেজ নামাচ্ছে। শ্রুতি আশেপাশে তাকালো। সামনে একটা লোহার গেট। গেট বেশি উচু না ।মাঝারি।রিসোর্ট টার চারপাশ বাউন্ডারি করা।

শ্রুতি এইসব পর্যবেক্ষণ করছিল। এমন সময় একজন লোক হন্তদন্ত হয়ে লোহার গেট খুলে তাদের সামনে এসে স্বাগত জানালো।লোকটার মাথায় টুপি পড়া। গায়ে কালো কালারের একটা জ্যাকেট। দেখে মনে হয় বয়স ৪৫ এর কাছাকাছি।শ্রুতির মনে হলো এই রিসোর্ট এর মালিক এনিই৷ লোকটি জ্যাকের সাথে কী কী যেন কথা বলছে।
কথা বলা শেষ হলে তিনি চেচিয়ে ফারনান্দ নামের একটি ছেলেকে ডাক দিলেন৷
ছেলেটি ডাক শোনার সাথে সাথে বাড়ির ভিতর থেকে ছুটে আসল। অতঃপর লোকটির সামনে মাথা নত করে বলল,

–জি স্যার বলুন।

–তুমি ওদের লাগেজ গুলো রুমে পৌঁছে দেও।

সেই মুহূর্তে জ্যাক বলল,

–আংকেল লাগবে না। আমরা নিজেরাই নিতে পারবো। ওর কষ্ট করতে হবে না।

–আচ্ছা, ফারনান্দ তুমি ওদের রুম গুলো দেখিও দিও।

সবাই নিজের নিজের লাগেজ গুলো নিয়ে ফারনান্দ ছেলেটির পিছনে যেতে লাগলো। শ্রুতি নিজের লাগেজটা নিয়ে যাওয়া ধরবে সেই সময় জ্যাক এসে তার হাত দিয়ে লাগেজের হ্যান্ডেলটা ধরে বলল,

–আমাকে দেও। আমি নিয়ে যাচ্ছি।

শ্রুতি নাকোচ করে বলল,

–থাক লাগবে না আমি পারবো।

জ্যাক শ্রুতির কথা না শুনেই শ্রুতির হাত থেকে লাগেজটা নিয়ে ফারনান্দ ছেলেটির পিছন পিছন গেল। শ্রুতিও কিছু না বলে সামনের দিকে এগোতে লাগলো। শ্রুতি লোহার গেট টা দিয়ে ভিতরে ঢুকল। লোহার গেট থেকে বাড়ি পর্যন্ত সোজা সরু একটা পাকা রাস্তা।রাস্তারটির পাশে সারি বেঁধে কিছু ফুল গাছে লাগানো হয়েছে৷ একতলা বিশিষ্ট বাড়িটা বাহির থেকে সুন্দর দেখায়। বাড়ির চারপাশ টাও বেশ খোলা মেলা একটা জায়গা।

জ্যাক শ্রুতির লাগেজ রুমে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। শ্রুতির রুমের পাশেই তার রুম। রিসোর্টটাতে মোটমাট ৫টা রুম আছে৷ তাদের জন্য বরাদ্ব ৪টা। শ্রুতি রুমটায় একটা থাকবে না। তার সাথে আছে আরও দু জন। এলিশা আর লুসি। জ্যাক একাই থাকবে। আর দুটো রুমে লিও, আর বাকি তার ফ্রেন্ড গুলো।৫টা রুম ছাড়াও একটা খাওয়ার ঘর আছে।

শ্রুতি রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ক্লান্ত লাগছে তার। শ্রুতিকে এরকম শুয়ে থাকতে দেখে এলিশা, আর লুসি দুজনে ভ্রু কুঁচকালো। এলিশা শ্রুতির কাছে গিয়ে বলল শ্রুতির কাঁধে হাত রেখে ঝাকাতে ঝাকাতে বলল,

–শ্রুতি ফ্রেশ না হয়ে এসেই শুয়ে পড়লা কেন? যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।

শ্রুতি এলিশার কথা শুনে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো ঘরে কেউ নেই৷ শ্রুতি ভাবলো হয়তো বাহিরে গেছে।শ্রুতির খুব ঘুম পাচ্ছে। কালকে ঠিক মতো ঘুমাতে পারে নি।সকাল ৪টার সময় গাড়িতে চড়েছে।শ্রুতি পেটে হাত দিল।খুব ক্ষুধাও লাগছে। কিন্তু ঘুম পাচ্ছে বেশি। শ্রুতি খাওয়ার চিন্তা না করেই আবার শুয়ে পড়ল। আগে ঘুম তারপর না হয় ঘুম থেকে উঠে ক্ষুধা নিবারণ করা যাবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।

এদিকে,

জ্যাক, এলিশা, লুসি, লিও সহ তাদের আরও ফ্রেন্ডরা রেস্টুরেন্টে এসেছে লান্স করতে। এখন প্রায় বিকাল হয়েছে। তারা দুপুরের লান্স করেনি করা হয়নি । তাই করতে এসেছে।
ওয়েটার খাবার নিয়ে আসলে জ্যাক এলিশা আর লুসিকে উদ্দেশ্য প্রশ্ন করল,

–শ্রুতি কোথায়? তোমরা কী ওকে নিয়ে আসো নি।

লুসি চাউমিন মুখে দিতে দিতে বলল,

–শ্রুতি ঘুমাচ্ছে।আমি এখানে আসার আগে দেখে এসেছি। মেয়েটা অনেক ক্লান্ত। তাই আর ডিস্টার্ব করে নি ।

জ্যাকের লুসির কথাটা শুনে খারাপ লাগল। সে নিজের প্লেটে চামচ দিয়ে খচ খচ করতে করতে আনমনেই বলল,

–ও তো দুপুরে কিছুই খায় নি। ওর অনেক ক্ষুধা লেগেছে হয়তো। না খেয়েই ঘুমালো কেন?

জ্যাকের কথা শুনে টেবিলে থাকা সবাই একে অপরের মুখের দিকে তাকালো৷ এ কোন জ্যাককে দেখছে তারা৷জ্যাককে কোনো মেয়ে নিয়ে এতো সেনসিটিভ হতে দেখেনি৷ অথচ এই কয়মাস ধরে খেয়াল করছে জ্যাক শ্রুতির প্রতি অধিক যত্নশীল। কেউ জিজ্ঞেস করার ও সময় পাইনি। সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিলো। শীতকাল আসলে এখানের মানুষের কাজের ফাঁক থাকে না। একের পর এক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে।
এলিশা আর না পেরে বলেই দিলো,

–জ্যাক তোমাকে দেখছি তুমি শ্রুতিকে নিয়ে একটু বেশি ভাবতেছো? কয়দিন ধরেই খেয়াল করছি। তুমি কী শ্রুতি লাভ করো নাকি?

জ্যাক এলিশার প্রশ্ন শুনে হাতে থাকা চামচটা পরে গেলো। সে অবাক হয়ে এলিশার দিকে তাকালো। ওপাশ থেকে লিও বললো,

–হ্যাঁ আমি তো দেখছি শ্রুতি যেদিন থেকে এখানে এসেছে তখন থেকেই।দেখোনি সেদিন ক্লাবের পার্টিতে যেদিন শ্রুতির সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় হয়েছিল। সেদিন ক্লেভ শ্রুতির সাথে হ্যান্ডশ্যাক করতে নিলে। জ্যাক শ্রুতির হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে। সত্যি কথা বলো জ্যাক কিছু চলছে নাকি তোমাদের মধ্যে?

জ্যাক বুঝতেছে না কী করবে?শ্রুতি তো ওকে এখনও কিছু বলে নি। এখন যদি ওদেরকে বলে যে ও শ্রুতি লাভ করে। আর তা যদি শ্রুতি জেনে যায় তাহলে মনে হয় শ্রুতি রাগ করবে তার সাথে। সেটাই জ্যাকের মনে হচ্ছে।

জ্যাক টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা টা হাতে নিতে নিতে বলল,

— আরে না তোমরা যা ভাবছো ওরকম কিছু না। যাস্ট ফ্রেন্ড হিসেবেই জিজ্ঞেস করি।

এলিশা ভ্রু কুঁচকাল।তার জ্যাকের কথা বিশ্বাস হচ্ছে না। কেনো যেনো মনে হচ্ছে জ্যাক মিথ্যা বলছে।
লুসি বলল,

–মোটেও যাস্ট ফ্রেন্ড না। তোমরা জানো ক্রিসমাস ডে এর রাতে জ্যাক শ্রুতিকে নিয়ে ঘুরতে গেছিল।

জ্যাক লুসির কথা শুনে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তার দিকে। লুসি দাঁত কেলিয়ে হাসল। এদিকে সবাই সব কিছু বুঝি গেছে। এলিশাও বলল,

–আমি দেখিছি তুমি যেমন শ্রুতির প্রতি সেনসিটিভ। শ্রুতিও তোমার প্রতি। তোমাদের মধ্যে অবশ্যই কিছু চলছে। জ্যাক দেখো আমরা তোমার বন্ধু হই। আমাদেরকে বলো।
এলিশার কথায় সবাই সায় দিলো। জ্যাক আর উপায় পেলো না। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব বললো। শ্রুতিকে যে ও প্রপোজ করেছে তাও বললো।

সব কথা শুনে এলিশা বলল,

–আমি আগেই বুঝেছিলাম তোমাদের মাঝে কিছুতো চলছে। আমাদের বললা না কেন? আমরা তো তোমার বন্ধু। আবার আমরা একটু আগে জিজ্ঞেস করতেই নাকচ করলা কেন?

–আসলে শ্রুতি তো আমার প্রস্তাব রিজেক্ট করেছে। আমি তো এখন ওকে রাজি করানোর চেষ্টা করতেছি। তোমাদেরকে বললে যদি ও রাগ করে তাই বলেনি৷

–ওকে শ্রুতি রাজি করানোর দ্বায়িত্ব আমাদের সকলের। ওকে ফ্রেন্ড।

সকলে সম্মতি জানালো।
কিন্তু জ্যাকের মন গললো না ওদের কথায়। সে বলল,

–তোমাদের ওকে রাজি করানোর দরকার নেই। ও আমাকে ভালোবাসে আমি জানি। কিন্তু ও এটা মানতে চাইছে না । আর ও বুঝতেও পারছে না ওর মনের কথা। আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে ওকে বুঝাবো যে ও আমাকে ভালোবাসে। তখন এমনি আমার কাছে ধরা দিবে ।

জ্যাকের কথা শুনে সবাই মিটিমিটি হাসছে। লিও জ্যাকের পিঠে চাপর দিয়ে বলে,

–Well done Jack. এই না হলে আমাদের জ্যাক।প্রেমে পরে কতো রোমান্টিক কথা বলছে !

লিওর কথা শুনে সবাই জোরে হেসে দিল। এলিশা হাসতে হাসতে বলল,

–ও আমরা তো ভুলেই গেছিলাম। লিও তো লিলি নামের মেয়েটার প্রেমে পরেছে। লিও তুমি কয়দিন পর জ্যাক মতো রোমান্টিক কথা বলবা।
এলিশা চোখে হাত দিয়ে কান্নার ঢং করে বলল,

–শুধু আমিই সিংগেল থাকলাম।

লুসি হাসতে হাসতে বলল,

–সমস্যা নেই। আমরা মিনগেল বানিয়ে দেবো।

সবাই হাসি খুশি মুডে লান্স না শেষ করল।
#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ২৬

শ্রুতি বধুবেশে বসে আছে। আর পাশে বসে সোহা তাকে বিভিন্ন কথা বলে লজ্জা দিচ্ছে৷ এর মধ্যেই নিচে চিত্কার চেচামেচির আওয়াজ শোনা গেল। সোহা দাঁড়িয়ে বলল,

–বর এসেছে মনে হয়। তুই থাক আমি আমি যাই।

কথাটা বলে সোহা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সোহার পাশ থেকে সেজোথী বলল,

–আহ,বর এসে গেল৷ কিছুক্ষণ পর তোর বিয়ে হবে। তারপর কয়দিন পর চলে যাবি আমেরিকা।তখন কী এখানে আসবি আর? আমাদের কথা তো ভুলেই যাবি।

সেজোথীর কথা শুনে শ্রুতির মুখটা মলিন হয়ে গেল। সত্যিই বিয়ে হওয়ার পর সে জ্যাকের সাথে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবে। তার পর তো এখানে আর থাকা হবে না৷ আবার সেই ভিনদেশে চলে যেতে হবে। মা -বাবার সাথে কবে দেখা হবে তর ঠিক নেই। শ্রুতি এই রকম বিচিত্র অনেক কিছু ভাবতে লাগলো।
সেজোথী শ্রুতির এই রকম অবস্থা দেখে বলল,

–আরে মজা করছিলাম।আজ না তোর বিয়ে তোর ভালোবাসার মানুষের সাথে। এখন কী এইরকম মন খারাপ করে থাকতে হয়? জিজু যদি দেখে আমাদের একটাকেও বাঁচিয়ে রাখবে।

সেজোথীর কথা শুনে শ্রুতি লজ্জা পেল। অতঃপর সেজোথীকে জড়িয়ে ধরে বলল,

–তোদের কোনোদিনও ভুলবো না৷ তোরা আমার সেই ছোটবেলার বন্ধু। তোদের কী ভুলতে পারি?

ততক্ষণাত্ রুমে কতোগুলো মেয়ে এসে বলল,

–চলো, বর এসে গেছে। বউকে নিয়ে আসো।

সেজোথী সোহাকে নিয়ে রুম থেকে বের হলো৷
সিড়ি দিয়ে নামার সময় দেখে জ্যাক বসে আছে কাজীর পাশে। জ্যাক অফ হোয়াইট কালারের দামি বাহারি কাজ করা একটা শেরওয়ানী পড়েছে৷ফর্সা শরীরে শেরওয়ানীটা ভালো মানিয়েছে। একদম হিরোর মতো লাগছে । হঠাৎ তার সাথে জ্যাকের চোখাচোখি হতেই শ্রুতি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল।

শ্রুতিকে নিয়ে জ্যাকের পাশে বসানো হলো। শ্রুতি জ্যাকের দিকে আর একবার তাকালো। জ্যাক তার দিকে এখনও তাকিয়ে আছে।
কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করল। কিছুক্ষণ পর জ্যাককে কবুল বলতে বলল, জ্যাক তাড়াতাড়ি কবুল বলে দিল। অতঃপর শ্রুতি কবুল বলার পালা। শ্রুতি কবুল বলতে নিবে,
তার আগেই শ্রুতি ঘুম ভেঙ্গে গেলো৷ শ্রুতি উঠে বসলো। তার বুকের ভিতর ধুকপুক শব্দ হচ্ছে। একটু আগে কী ভয়ংকর স্বপ্ন দেখলো সে। জ্যাকের সাথে তার বিয়ে? এই ভয়ংকর স্বপ্নটা তাকেই দেখতে হলো। এ কোনোদিন ও সম্ভব নয়।
শ্রুতি নিজের মাথা দু হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল,

–আল্লাহ্ এই ছেলে আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছে। এতো দিন বাহিরে জ্বালাতো এখন ঘুমের মধ্যেও জ্বালায়। এই ছেলে আমাকে শান্তি দিবে না।

কিছুক্ষণ কেটে গেল এভাবেই। শ্রুতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে গেলে সে নিজের ফোন হাতে নিয়ে টাইম দেখলো । ৭টা বেজেছে এখন।
শ্রুতি মনে মনে বললো,

–এখন সকাল না রাত?

শ্রুতি আশেপাশে তাকালো। রুমের ভিতর কেউ নেই।হালকা অন্ধকার, ডিম লাইট জ্বলছে । শ্রুতি ভয় করতে লাগলো। তাকে ছেড়ে কী সবাই চলে গেছে?সে তো ঘুমিয়ে ছিল সেই সুযোগে। সে কয়দিন এইরকম ঘুমিয়ে ছিলো। শ্রুতির একটা সমস্যা আছে, সে বিকালে ঘুম দিলে যদি সন্ধ্যার সময় ঘুম থেকে উঠে তখন তার মনে হয় সে পরেরদিনের সকাল বেলা উঠেছে। সকাল হয়ে গেছে। (এইটা আমারও হয়)

শ্রুতি ফোনের ফ্লাশলাইট টা জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে রুমের লাইট টা জ্বালিয়ে দিলো। লাইট জ্বালালে পুরো রুম উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। শ্রুতি রুমটার আনাচে কানাচে চোখ বুলাতে লাগল। রুমটা বেশ বড়বড়। রুমের ডানদিকে দুইটা জালানা আছে।শ্রুতি জানালার দিকে তাকালো। বাহিরে অন্ধকার ।শ্রুতি ভাবলো,বিকালে ঘুমিয়েছিলাম এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। শ্রুতি বাম দিকে তাকালো৷ হঠাৎ তার নজরে পড়ল এলিশা, লুসির লাগেজ। শ্রুতি একটু এগিয়ে গিয়ে ভালো করে দেখলো। লাগেজ গুলো দেখে শ্রুতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তার মানে ওরা যায় নি।

শ্রুতি ঘর থেকে বের হলো। একটু সামনে আগতেই দেখতে পেলো সবাই বাগানের চেয়ারে বসে আছে। হয়তো গল্প করছে। শ্রুতি ওদের দেখে আবার রুমের দিকে গেলো গেলো।ভয়টা তার চলে গেছে। কিন্তু স্বপ্নটা নিয়ে একটু ভাবছে। শ্রুতি এসব ভাবনা বাদ দিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো।

শ্রুতি ফ্রেশ হয়ে এসে বাগানের দিকে গেলো। প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে তার। মনে হচ্ছে পেটের ভিতর ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।

শ্রুতি যখন জ্যাক, এলিশা, লুসি ওদের কাছাকাছি গেল তখন লুসি শ্রুতিকে দেখে বললো,

–আরে ওই দেখো শ্রুতি এসে গেছে।

জ্যাক এতক্ষণ ফেসবুকিং করছিল। শ্রুতির নাম শুনে সামনে তাকালো।
শ্রুতি জ্যাকের দিকে তাকিয়ে ছিল। ফলে দু জনের চোখাচোখি হলো। জ্যাকের তাকানো দেখে শ্রুতির হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলো। এ কেমন অনুভূতি সে বুঝতে পারছে? সে দ্রুত চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।

শ্রুতি ওদের ওখানে গিয়ে দেখলো কোনো চেয়ার খালি নেই। শুধু জ্যাকের পাশের চেয়ারটা খালি আছে।জ্যাকের পাশে শ্রুতির বসতে ইচ্ছা করছে না৷ ওর দিকে তাকালেই ওর বুকের ভিতর কেমন যেন করে? আর এখন তো ওই স্বপ্নের কথা মনে পড়ছে। শ্রুতি জ্যাকের পাশ থেকে চেয়ারটা নিয়ে লুসির পাশে বসার সিদ্ধান্ত নিল। সে এগিয়ে চেয়ারটা নিতে যাবে ওমনি জ্যাক ওর হাতটা খপ করে ধরল।
জ্যাক শ্রুতির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

–চেয়ার নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?

শ্রুতি আমতা আমতা করে বলল,

–না, মা,নে লুসির পা,শে বসবো,

–আমার পাশে বসতে সমস্যা কী?আমাকে কী ভয় পাও নাকি?

শ্রুতি এদিকে ওদিক তাকাতে তাকাতে বলল,

–না কেন, ভয় পাবো কেন?

–তাহলে এখানেই বসো।

–না আমি বসবো না। আমার ক্ষুধা লেগেছে।কিছু খাবো।

কথাটা বলেই শ্রুতি নিজের ঠোঁটে কামড় দিয়ে মনে মনে বলল,

–ইস, শ্রুতি তুই কত বোকা!ছোট বাচ্চাদের মতো বলছিস ক্ষুধা লেগেছে।এই পোলার কারণে তোর মানসম্মান সব গেলো।

শ্রুতি এইরকম কথা শুনে জ্যাক ঠোঁট চেপে হাসল।ফোনটা প্যান্টের পকেটে নিয়ে দাড়াতে দাড়াতে বলল,

–ওকে চল। সামনেই একটা রেস্টুরেন্টে আছে।

শ্রুতির জ্যাকের সাথে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা। জ্যাকের থেকে যত দূরে থাকা যাবে ততই ভালো হবে। নাহলে জ্যাকের পাগলামি আরও বাড়বে। এমনি অর্ধেক মাথা খেয়ে ফেলেছে তার,শ্রুতি কথাগুলো মনে মনে ভাবলো।

সে লুসিকে যাওয়ার জন্য বলবে তার আগেই এলিশা বলল,

–আমরা আগেই খেয়ে এসেছি। তুমি তখন ঘুমে ছিলা। তাই তোমাকে ডাকি নি। এখন জ্যাকের সাথে গিয়ে খেয়ে আসো৷

শ্রুতি আর কিছুই বলতে পারলো না।সে চুপচাপ জ্যাকের পিছন পিছন যেতে লাগলো।

,(,চলবে)

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here