নীলাম্বরীর প্রেমে পর্ব ১১

#নীলাম্বরীর_প্রেমে
#Tuhina pakira
পর্ব : ১১

সকাল ৭:৩৬ ।।

-” তিশু অঙ্কগুলো ঠিক মতো কর। কেউ বলবে তুই ক্লাস টু তে পড়িস। এখনও তুই মাঝে মাঝে যোগ এর জায়গায় বিয়োগ আর বিয়োগের জায়গায় যোগ করে চলেছিস। এইবার ভুল হলে আজ তোর কপালে মার জুটবে। ”

-” উহু, বললেই হলো তুমি আমাকে মারবে না আমি জানি। ”

-” বড্ড কথা বলছিস তুই আজ। দাঁড়া না কদিন পর থেকে তো আর আমি পড়াবো না তখন বুঝবি। মা এর বকা তুই খুব মিস করছিস না? ”

তিশা মুখে পেন পুড়ে কথা জড়িয়ে বললো,

-” মা বলেছে এবার থেকে সময় পেলে তোমার কাছে পড়তে বসতে। আমি তো তোমার কাছেই পড়বো।”

-” হ্যাঁ তাতো পড়বেই। আমি আপনাকে বকি না কিনা। তবে এবার থেকে তোকে কান ধরে উঠবস করাবো।”

তিশা আয়ুর গালগুলো ধরে বললো,

-” তুমি তো আমার ভালো আয়ু দি। তুমি আমাকে বকতে পারবেই না। ”

-” চুপ চাপ কাজটা কর। আমাকে কলেজ যেতে হবে। তাড়াতাড়ি কাজ কর।”

আয়ু বিছানায় বসে নিজের কিছু ডকুমেন্টস ঠিক করতে লাগলো। তিশা নিজের মতো অঙ্ক করছে। মাঝে মাঝে গাঁট গুনতে গিয়ে নিজের ভাবনায় হারিয়ে গিয়ে আয়ুর ঘরের বারান্দার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

নীচে কারোর চিৎকার শুনে তিশা ছুটে বারান্দায় চলে গেলো। নীচে তাকিয়ে দেখলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে দ্রুতি আর দিহান ঝগড়া করছে।

কাল রাত থেকে দ্রুতি তক্কে তক্কে আছে। দিহান সকালে এই পাড়ায় ঢুকলেই ও ওর ঠ্যাং খোঁড়া করবে। ওরা সবে এই প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে। তাও আবার একই কলেজে আবার একই ডিপার্টমেন্টে। এই গতকাল ওরা কেবল সবে নতুন কলেজে গিয়েছিল। সেখানে ওদের ডিপার্টমেন্টের অনেকের সঙ্গেই বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। বলতে গেলে গলায় গলায় বন্ধুত্ত্ব। বেশ ভালো ভাবেই ওরা ক্লাস করে বাড়ি আসছিল। তখনই দূর থেকে ওদের ডিপার্টমেন্টের একটা ছেলে দ্রুতি কে ডেকে বললো,

-” বাই ফ্রুটি, কাল আসবি তো?”

ব্যাস দ্রুতি বুঝে গেছে ওর নামের পিন্ডি কোন গর্দভ চটকেছে। সেই থেকে ও রেগে আছে। শুধু মাত্র রাস্তার লোকেরা দেখবে বলে ও কালকে কিচ্ছুটি বলে নি। দাঁতে দাঁত চেপে বাড়ি ফিরেছে। তাইতো সকাল থেকে ওই বাড়িতে ঘাপটি মেরে বসে ছিল। দিহান যেই স্পর্শের বাড়ির চৌকাঠে পা দিয়েছে সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতি ওকে ছুট কাটিয়েছে।

-” আঃ , ফ্রুটি লাগছে চুল ছাড়। ”

-” তোর চুল ছাড়া যাবে না গর্দভ কোথাকার।”

-” ওই তুই আমাকে গর্দভ বলবিনা একদম। আমকে কী গর্দভের মতো দেখতে নাকি? ”

-” দেখতে না তুই গর্দভই। ”

দিহানের পিঠে দ্রুতি গুমগুম করে কয়েকটা কিল মেরে বললো,

-” আমাকে সবার সামনে ফ্রুটি বলার তোকে কে সাহস দিয়েছে? নেক্সট টাইম যদি কারোর মুখে ওই নামটা শুনি তবে তোকে ওই খানেই মেরে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেবো বলে রাখছি। তখন আর এই পাড়ায় ঢুকতে পারবি না।

দিহান নিজের পিঠে যতটুকু হাত যায় সেই টুকুর মধ্যে হাত বুলিয়ে ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠছিল।

-” তোর হাতের যা মার। আর কারোর সামনে তোকে ওই নামে ডাকা তো দূর, তোকে ডাকবোই না। আজকে আর মারিস না। আজ অনেক কাজ করতে হবে আমায়। পারলে হেল্প করবি আয়।”

-” তুই যা, যাচ্ছি আমি।

-” পাড়ায় ঢুকলে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেবে ,
বলেছে পাশের পাড়ার মেয়েটা।
কুঁজো হয়ে আমি যাচ্ছি তাই,
স্পর্শ দা আমি আর আসবো না।।
স্পর্শ দা আমি আর আসবো না।।”

নিজের সাজানো গান গাইতে গাইতে স্পর্শদের বাড়ির দিকে ঝুঁকে বুড়োদের মতো দিহান বাড়ির ভিতরে পা বাড়ালো।

– ” কেনো যে ও আমার কলেজে আবার একই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হলো কে জানে? নির্ঘাত বাকি প্রতিটা ইয়ার মাথা খেয়ে ফেলবে।”

নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে দ্রুতি ওর পিছনে গেলো।

তিশা বারান্দা থেকে ছুটে গিয়ে আয়ুর গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

-” জানো আয়ু দি আজ স্পর্শ দা আসবে। ”

আয়ু কিছু বললো না। চুপচাপ নিজের কাজ করতে থাকলো।
-” খুব মজা হবে বলো। স্পর্শ দা খুব ভালো আমার জন্যে চকলেট আনবেও বলেছে।”

-” তুই স্পর্শকে চিনিস তিশা?”

মায়ের কথায় আয়ু চোখ তুলে দরজার দিকে তাকালো। তিশা জেম্মাকে দেখে বিছানায় উঠে দাঁড়িয়ে বললো ,

-” চিনিতো, আমার সঙ্গে কথা হয়েছে ভিডিও কলে। জানোতো স্পর্শ দাকে খুব সুন্দর দেখতে; পুরো রাজপুত্র। ”

-” তোর ছোটবেলার স্পর্শ দার কথা মনে আছে তিশা?”

-” কই নাতো। তবে জানো জেম্মা আমার অন্নপ্রাশনের একটা ছবি আছে ওখানে আয়ু দির কোলে আমি আর স্পর্শ দা পাশে বসে আমাকে নেবার চেষ্টা করছিল। মা বলে স্পর্শ দা আয়ু দির থেকে আমাকে নিয়ে নিচ্ছিল। আর আয়ু দি দেবে না বলে কাঁদছিল। ”

-” ঠিকই বলেছে তোর মা। এই দুটো ছোটো বেলায় খুব দুষ্টু ছিল। খালি একে অপরের পিছনে লেগে থাকতো। ”

আয়ু এতক্ষণ চুপ করে সব কথা শুনছিল। কিছুই বলার মতো পাইনি সে।

-” কিছু বলবে মা?”

-” ও হ্যাঁ , তিশা মা ডাকছে বাড়ি যাও। আজ আর পড়তে হবে না।”

পড়তে হবে না শুনে তিশা কী খুশি। ব্যাগ গুছিয়ে আয়ু কে বলল,

-” আয়ু দি আমার ছুটি? ”

তিশার কিউট করে বলা কথা শুনে আয়ু বললো ,

-” যা। ”

তিশা কে আর কে পায় ছুট লাগালো নীচে। দুই অক্ষরের ছোট্ট শব্দ’ ছুটি’। প্রতিটা মানুষের বেশ ভালো লাগে। সবাই নিজের জীবনে ছুটি চায়। কেউ পড়াশোনা থেকে, কেউ দুঃখ দুর্দশা থেকে, কেউ ক্লান্ত অবসর থেকে, কেউবা নিজের জীবন থেকে।

আয়ুর মা ওর যাবার দিকে তাকিয়ে বললো ,
-” আস্তে পড়ে যাবি।”

-” কিছু বলবে মা?”

-” হ্যাঁ , বলছি আজ কি কলেজ যেতেই হবে?”

– ” হ্যাঁ যেতেই হবে। আজ অ্যাসাইনমেন্ট সাবমিট করতেই হবে। ”

-” আজ কেনো? যেতে হবে না অন্য দিন দিস। আর এমনিতে তোর মিমি আজ থাকতে বলেছে তোকে। ”

-” সে পরে আমি মিমির সাথে দেখা করে নেবো। তুমি আমাকে এক কাপ চা দাও। ”

-” নীচে আয়। ”

আয়ুর মা চলে যেতেই আয়ু গিয়ে বারন্দায় দাঁড়ালো। সামনে স্পর্শের ঘরের বারান্দায় হাওয়ার তালে উইন্ড চিমস এর মেটেল গুলো একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এক অপরূপ শব্দ করছে।
আয়ু সেই দিকে তাকিয়ে রইল। দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে সাড়ে তিন বছর। সময়ের ছন্দে কতো কিছু পরিবর্তন হয়েছে। নিজে পরিবর্তন হয়েছে। কাউকে ছাড়া থাকতেও শিখে গেছে, অনুভূতি লুকাতে শিখে গেছে। তবে এখনও কিছু কথা মনটাকে বড্ড খচ খচ করে। নীচে বাড়ির সামনে ওর আর স্পর্শের বাবা কথা বলছে। সম্ভবত স্পর্শ কখন আসবে সেই বিষয়ে। আয়ু নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। আপন মনে বিড়বিড় করে বললো ,

-” কই কখনও আমার সাথে কথা বলার জন্য জোর করলো নাতো। হয়তো সে ভুলে গেছে। অবশ্য ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কে আমি তার? কেউ না। ”

বিছানার উপর রাখা ফোনটা নিয়ে আয়ু ফোন লাগালো রুহিকে। রুহি ওর কলেজ ফ্রেন্ড।

-” কী রে পেত্নী সব কমপ্লিট?”

-” আমার তো কমপ্লিট। তোদের হয়েছে?”

-” আমার কমপ্লিট। তবে সজলের হালত খারাপ। বেচারা কাল লিখতে বসেছে। আজকের মধ্যে হবে কী বলতে পারছি না। তবে তোর উপর খোঁচে আছে খুব। বলেছে আয়ু কে হাতের সামনে পেলে তোর ভর্তা বানাবে। আচ্ছা আয়ু, কী দরকার আজকে সাবমিট করার। আমার তো আজ কলেজ যেতেই ইচ্ছে করছে না। আয়ু চলনা কাল কলেজ যাই একেবারে। ”

-” তোরা যাবি কী বল সেটা?”

-” আরে রাগিস না। যাবো যাবো। এবার রেডি হবো খালি। চল রাখছি। ”

-” বাই। ”

-” নিশিতা কাল তোমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো। ”

-” আরে না ঠিক আছি আমি। তোমাকে টেনশন করতে হবে না।”

চেয়ারে বসে চা খাচ্ছিল নিশিতা। শুভ এগিয়ে গিয়ে ওর পাশের চেয়ারে বসে বললো,

-” উহু , ডক্টর বলেছেন তোমাকে মাসে মাসে চেক আপ করাতে। তাই তোমাকে কালকেই যেতে হবে। আজই নিয়ে যেতাম তবে আমাকে স্পর্শ কে স্টেশন থেকে আনতে যেতে হবে। ”

তিশা ছুটে এসে ওর মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-” ডাকছো আমাকে মা? ”

-” হ্যাঁ ডাকছি। বসো আমি তোমাকে খাইয়ে দিই। তুমি তো বাবার সাথে স্টেশনে যাবে।”

-” বাবা তুমি নিয়ে যাবে?”

শুভ মেয়েকে কোলে নিয়ে বললো,
-” নিয়ে যাবো তো মামনি। যাও শান্ত হয়ে খেয়ে নাও। মাকে জ্বালাবে না কিন্তু। ”

-” আচ্ছা।”

তিশা ওর বাবার কোল থেকে নেমে মায়ের পেটে হাত দিয়ে বললো,

-” তাড়াতাড়ি চলে আয় ভাই। তারপর তুই আর আমি মিলে একসঙ্গে বাবার সাথে ঘুরতে যাবো। ঠিক আছে।”

নিশিতা মেয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিল। পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট ও। তিশা কে একভাবে বসে পড়াতে কষ্ট হয়। তার উপর তিশার দুষ্টমিতে ও একটু তেই ক্লান্ত হয়ে যায় তাই কয়েকমাস আয়ুর কাছে গিয়ে পড়া গুলো করে আসে।

(চলবে )
{ বিঃ : কাল রাতে গল্প লিখে রেখেও পোস্ট করতে পারিনি। ফোনে ব্যালেন্স ছিল না। আজ ব্যালেন্স পুরে পোস্ট করতে দেরি হয়ে গেছে। ত্রুটি ক্ষমা করবেন । ভালো কিংবা খারাপ কেমন হয়েছে জানাবেন । হ্যাপি রিডিং }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here