গল্পঃ #প্রতিশোধ
পর্বঃ ২৩+২৪
লেখাঃ #Mst_Liza
,
মায়ার চোখ বেয়ে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে।মাহির দেখে গারদের গিরিলের উপর রাখা মায়ার হাত দুটি নিয়ে নিজের হাতের আঙুলে মায়ার হাতের আঙুল চেপে ধরে এক অপলক দৃস্টিতে মায়ার মুখপানে তাকিয়ে থাকে।মায়ার হাতের এই স্পর্শ মাহিরকে কাল রাতের কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়।
মাহিরঃ কাল রাতে কি করেছিলে তুমি আমার সাথে?
মায়াঃ আমি?
মাহির চোখদুটো বড় বড় করে মায়ার দিকে তাকায়।যা দেখলে মায়া সত্যিই ভয়ে মরে যাবে।মায়া মাথাটা ডানে, বামে ঝাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বলে,
মায়াঃ কই কিছু করি নি তো
মাহিরঃ একদম মিথ্যা বলবা না আমার সব মনে পরে গেছে
মায়াঃ কি মনে পরেছে?
মাহিরঃ আমাকে বোকা বানিয়ে আদর খেয়েছো!
মায়া কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না।
মায়াঃ সরি আমি আসলে
মাহিরঃ থাক আর বলতে হবে না। এর শাস্তি তো তোমায় আমি বাইরে এসে দেব।এতো বড় সাহস তুমি পাও কোথায়?
মায়াঃ আমি ভেবেছিলাম আপনি..
মাহিরঃ আমি কি?
মায়াঃ কিছু না। আপনি আগে বাইরে আসুন তো তারপর আমাকে যে শাস্তি দেবেন দিয়েন।
কথাটা বলেই মায়া কেঁদে দেয়।
মাহিরঃ এই মেয়ে কাদঁছো কেন?
মায়া কাঁদতেই থাকে।
মাহিরঃ আচ্ছা থামো।এবারের মতো তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।আর কখনও যেন এমনটা করা হয় না।মনে থাকবে?
মায়া তবু্ও কেঁদে চলেছে।মাহির জোড়ে একটা ধমক দেয়।
মাহিরঃ থামো বলছি।
মাহিরের ধমক শুনে মায়া কেঁপে ওঠে।ভয়ে ভয়ে মাহিরের দিকে তাকায়।দেখে মাহির মুচকি মুচকি হাসছে।
মায়াঃ আপনি সত্যিই খুব খারাপ।এমন একটা পরিস্থিতিতেও আমাকে ধমকাচ্ছেন।
মাহিরঃ আচ্ছা আর ধমকাবো না যেটা বলেছি সেটা গিয়ে আগে কর।
মায়াঃ আমি যদি না পারি।
মাহিরঃ পারবে
মায়াঃ আমার খুব ভয় করছে স্যার
মাহিরঃ কিসের ভয়?
মায়াঃ হারিয়ে ফেলার ভয়।আমি পারবো না আপনাকে হারাতে।
মাহিরঃ কি বললে?
মায়া জ্বীব কামড়ে ধরে, কি বললাম এটা?
মাহিরঃ তুমি কিন্তু অনেক পেকে গেছো। তোমাকে এবার শাসন না করলে হচ্ছে না।
সোহেব খান উকিলের সাথে কথা বলছিল।সে এসে মায়া আর মাহিরের দিকে অসহায় দৃস্টিতে তাকায়।
মায়া শ্বশুরকে আসতে দেখে মাহিরের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে শ্বশুরের দিকে ঘুরে দাড়ায়।তারপর প্রশ্ন করে।
মায়াঃ কি হয়েছে বাবা?
সোহেব খানঃ উকিল বলেছে জামিন করানো যাবে না।কাল শনিবার কোর্ট বন্ধ।রবিবারে কেসটা কোর্টে উঠবে।আমাদের হাতে মাত্র দু’দিন সময় আছে।এর মধ্যেই যা করার করতে হবে।নইলে..
মাহিরঃ এতো চিন্তা করো না বাবা তোমার বৌমা আছে তো ও সব ঠিক করে দেবে।
মাহিরের মুখে বৌমা কথাটা শুনে মায়ার মনের ভেতরটা খুশিতে ভরে ওঠে।তাহলে কি মাহির মন থেকে মায়াকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিলো?
আবার মনে মনে ভাবতে থাকে, সে কি পারবে মাহিরকে নির্দোষ প্রমাণ করতে?
কিছুক্ষণ পর,
মায়া আর সোহেব খান বাড়িতে আসে।মায়ার শ্বাশুড়ি মা তখন সবজি কাটছে দুপুরে রান্না করার জন্য।সে কিছুই যানে না।
মুফতি খানঃ কি গো দুজন একসাথে কোথা থেকে আসছো?
বৌমা আজ কি হসপিটালে যাও নি?
এই তুমিও অফিসে না গিয়ে বৌমাকে নিয়ে আজ আবার কোথা থেকে আসছো?
তোমাদের এই অভ্যাসটা আর গেল না।
মাহির যদি যানতে পারে কি হবে যানো? ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বৌমাকে নিয়ে তুমি আজও নিশ্চয় ফুসকা খাওয়াতে গিয়েছিলে? এসবের জন্যই ওদের দুজনের মাঝে মনোমালিন্য চলে। তোমার অন্তত এসব বোঝা উচিৎ ছিল।
সোহেব খানঃ আহ মুফতি থামবে।সেই এসেছি ধরেই শুধু বকবক করে যাচ্ছো।
মুফতি খানঃ আমি বকবক করছি?
মায়াঃ প্লিজ থামো না তোমরা।
মায়া তার শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে গিয়ে সব খুলে বলে।
।
স্নিদ্ধা বসে বসে টিভিতে মাহিরের নিউজ দেখে চোখের পানি ফেলছে।নেহা ঠাসসসস করে ডা. নাহিদের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।মনা এসে নেহাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।
মনাঃ তোমার সাহস হয় কিভাবে আমার ছেলের গায়ে হাত তোলার?
স্নিদ্ধা উঠে এসে ডা. নাহিদকে টেনে ধরে নেহার থেকেও জোড়ে একটা থাপ্পড় মারে।
মনা ভীষণ রেগে যায়।সিদ্ধার দিকে ঘুরে রাগী দৃস্টিতে তাকায়।
মনাঃ সিদ্ধা তুই তোর ভাইকে মারছিস?
নেহাঃ ঠিকই করেছে মেরে।একটা অকর্মের ঢেকি।একটা কাজও ঠিক ভাবে করতে পারে না।
সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
মনাঃ দেখ নেহা তোমার শত্রুতা রাইসূল সিকদারের সাথে আর আমার শত্রুতা সোহাগ মির্জার সাথে।
নেহাঃ আর সেজন্যই এদের উপর প্রতিশোধ তুলতে আমি তোমার সাথে হাত মিলিয়ে ছিলাম।
তোমার ছেলে কি একটা কাজও ঠিক ভাবে করতে পারে না?
ডা.নাহিদঃ প্লিজ আন্টি বিশ্বাস করুন আমি আমার দিক থেকে যথেষ্ট চেস্টা করেছি রাইসূল সিকদারের স্বপ্নের হসপিটালের দুর্নাম করতে।ভেবেছিলাম আপনাদের সারপ্রাইজ দেব তাই প্লানটার কথা আগে বলা হয় নি।
স্নিগ্ধাঃ তোর প্ল্যানের চক্করে আজ আমার মাহিরটা ফেঁসে গেছে বেয়াদব।
সিদ্ধা ডা.নাহিদকে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
ডা.নাহিদঃ আপু আমি আসলে…
চলবে….
গল্পঃ #প্রতিশোধ
পর্বঃ ২৪
লেখাঃ #Mst_Liza
,
মুফতি খানঃ নাআআআআআআ এ আমি বিশ্বাস করি নাআআআআ।
আমার মাহির কিছুতেই এমনটা করতে পারে না।
মায়াঃ মা আপনি শান্ত হোন।আমরা সকলেই যানি উনি কিছু করেন নি
মুফতি খানঃ আমি কিচ্ছু জানি না। আমার মাহিরকে তোমরা যেভাবেই হোক এনে দাও।
।
।
স্নিগ্ধাঃ ঠাসস
ডা. নাহিদঃ আপু আমাকে ক্ষমা..
স্নিগ্ধাঃ ঠাসস
ডা.নাহিদঃ আপু আমি ইচ্ছে করে…
স্নিগ্ধাঃ ঠাসস
ডা.নাহিদঃ বিশ্বাস করো আপু..
স্নিগ্ধাঃ ঠাসস
ডা.নাহিদ যতবার কথা বলছে ততোবার চর খাচ্ছে।যতোবার কথা বলছে ততোবার ঠাসস ঠাসস করে চর খেতেই আছে স্নিগ্ধার হাতে। এমন সময়ে মনা এসে স্নিগ্ধাকে ঘুরিয়ে ঠাসস করে একটা চর বসিয়ে দিলে স্নিগ্ধা গালে তারপর গিয়ে থামে।
মনাঃ কোথাকার কোন ছেলে তার জন্য তুই তোর ভাইকে মারছিস?
স্নিগ্ধাঃ ও কোথাকার কোন ছেলে নয় মা।ও মাহির। আমার ভালোবাসা মাহির।যাকে আমি স্কুল লাইফ থেকে ভালোবেসে এসেছি।আজ তোমার গুনোধর ছেলে ওকে এমন ভাবে ফাঁসিয়েছে ইচ্ছে করছে তো ওকে মেরেই ফেলি।
কথাটা বলে স্নিগ্ধা সব জিনিসপত্র ভাঙতে শুরু করে।
নেহা, মনা, ডা.নাহিদ মিলে স্নিগ্ধাকে আটকানোর চেস্টা করে।কিন্তু স্নিগ্ধার যখন রাগ হয় তখন সে কাউকে মানে না।
মনাঃ এমনটা করিস না মা আমি দেখছি কি করা যায়।প্লিজ এখন থাম।
স্নিগ্ধা জিনিসপত্র ছুড়তেই থাকে। কারও কোনো কথা কানে নেয় না।
স্নিগ্ধাঃ আমার মাহিরকে আমি চাই।যেভাবেই হোক ওকে বাইরে বের কর।
বলছে আর ভাংচুর করেই যাচ্ছে।
স্নিগ্ধাকে কিভাবে শান্ত করা যায়?নেহা কিছু একটা ভেবে নাহিদ আর মনাকে পাশে ডাকে।তারপর নেহার কথামতো স্নিগ্ধাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়।
মনা আর নেহা স্নিগ্ধার হাত পা চেপে ধরে রাখে।ডা.নাহিদ এসে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিলে স্নিগ্ধা ঘুমিয়ে যায়।
মনাঃ ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঠিক করলাম?
নেহাঃ এছাড়া যে স্নিগ্ধাকে এই মুহূর্তে বোঝানো খুব কঠিন হয়ে পরেছিল।
।
।
মাহির লকাপের ভেতরে বসে বসে ভাবছে স্নিগ্ধার কথা।
মাহিরঃ এমন একটা খবর তো স্নিগ্ধার কানে অনেক আগেই চলে গেছে।সকাল পেরিয়ে দুপুর, দুপুর পেরিয়ে বিকাল হতে চলল খবরটা শুনেও স্নিগ্ধা আমায় দেখতে আসলো না? তাহলে কি স্নিগ্ধা আমাকে ভালোবাসে নি মন থেকে? আমিই ভুল করেছি ওর নাটকটা বিশ্বাস করে? সেদিন মায়াকে বিয়ে করে আনার পর বাসর রাতে স্নিগ্ধা আমায় ফোন করেছিল।আমি কখনও ওর ভালোবাসায় সারা দেয় নি।শুধু ওকে একটা ভালো ফ্রেন্ড হিসেবে ভেবে এসেছি।ওকে ফ্রেন্ড ভেবেই বলেছিলাম আমার আর মায়ার বিয়েটার কথা।ও খবরটা শুনে আমাকে হুমকি দেয় আত্মহত্যা করবে।আমি ওর কোনও কথায় বিশ্বাস করি না।আমি বাসর ঘরে গিয়েছিলাম।মায়ার খুব কাছেও চলে এসেছিলাম হঠাৎ নাহিদের ফোন স্নিগ্ধা হসপিটালে।ও নাকি বিষ খেয়েছে। তাহলে সবটাই ছিল সাজানো নাটক মাত্র। স্নিগ্ধা কখনোই আমাকে ভালোবাসেনি, শুধুই জেদের বষে চেয়েছে।আর আমি কিনা বোকার মতো একটা বছর কাটিয়ে দিলাম! আমি তো মন থেকে শুধু মায়াকে ভালোবেসেছি। স্নিগ্ধা এমন ছেলেমানুষী যাতে না করে তার জন্য অভিনয় করেছি স্নিগ্ধার সাথে এতোদিন। কিন্তু আর না।এখন স্নিগ্ধা নিজেই যখন দূরে সরে যাচ্ছে আমি আমার মায়ার সাথে ভালোভাবে থাকতে পারবো।যতো ভুল বোঝাবুঝি আমাদের মধ্যে আছে সব ঠিক করে নতুন ভাবে সবকিছু শুরু করব।এখান থেকে বের হয়েই আগে মায়াকে বলব মায়া তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি।
।
।
প্রিয় পাঠকগণ, আপনাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা।
অনেকেই কমেন্টে বলেন কিচ্ছু বুঝলাম না।আসলে আমার পুরো গল্পটাই রহস্যে ভরা।আমি চাই আস্তেধীরে সব রহস্যের উদঘাটন করতে।একবারে সব রহস্য আপনাদের সামনে আনতে গেলে আমার পুরো গল্পটাই ঘেটে যাবে।তাছাড়াও আমি প্রতি পর্বে নতুন টুইস্ট আনার চেস্টা করি। আপনাদের বলে রাখি আগের একটা পর্ব না পরে পরের পর্বের কিছুই বুঝতে পারবেন না।তাই আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো প্লিজ সব পর্বগুলো পরে তারপর কমেন্ট করবেন।পরবর্তীতে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে করতে পারেন।আমি চেস্টা করব আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর গল্পের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে।এবার গল্পে আসা যাক।পরের দিন সকালে,
হসপিটালে
মায়াঃ নিধি, মিতু, রুসা, সজীব সবাই রেডী তো? ডা.নাহিদ এখনই বের হবে।
সজীবঃ কি করতে চাচ্ছিস বল তো তুই?
মায়াঃ কি দ না প!
সবাইঃ কিইইইইইই?
মিতুঃ এটা ঠিক না মায়া।একজন মানুষকে কিদনাপ করা আমার পক্ষে অন্যায় মনে হচ্ছে।
রুসাঃ আরে রাখ তো তোর অন্যায়। একজন নির্দোষ মানুষ শাস্তি পাবে সেটা কি ন্যায়?
নিধিঃ আমার মনে হয় রুসা ঠিক বলছে।সবাই রাজি হয়ে যা।তাছাড়া মাহির স্যার কতো ভালো আমরা সবাই যানি।
সজীবঃ ঠিক আছে আমি রাজি।
একএক করে সবাই রাজি হয়।একসাথে সবাই হাত মিলিয়ে সামনের দিকে আগায়।
ডা.নাহিদ কেবিন থেকে বের হতেই তার নাকের সামনে সজীব একটা রুমাল চেপে ধরে।ডা.নাহিদ রুমালটা নাকের সামনে ধরার সাথেই সেন্সলেন্স হয়ে পরে যায়।মায়া, রুসা, মিতু নিধি এসে একটা মানকিটুপি ডা.নাহিদের মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়।তারপর তাকে চাদরে মুড়িয়ে সবাই মিলে স্টোর রুমের কাছে যায়।সবাই যার যার মুখ থেকে ঢেকে রাখা চাদর সরিয়ে স্টোর রুমের চেয়ারে বসিয়ে ডা.নাহিদকে বাঁধে।
,
,
,
চলবে…..