#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -১৪
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা
আমি দেখেছি চিরকুট লেখক কে প্রিয়ু।—দৃঢ় কন্ঠে মিন মিন করে কথাটা বলাম। আমার মুখে এমন কথা শুনে আমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো প্রিয়ু।উল্লাসিত স্বরে বলে উঠল,,,
—-সত্যি বলছিস?কে সে? কই তোর বিয়ের আগে তো কখনও তুই দেখিস নি ওনাকে! আমার জানামতে পাঁচ মাস থেকেই গায়েব ওনি। আর আগেও কখনও দেখা দেয় নি তোকে।আড়ালে থেকে সবসময় তোকে প্রটেক্ট করেছে। লোকটা কিভাবে এতো সার্থপর হতে পারল?একবার ও আসে নি।
—-থাক বাদ দে সেসব। আমার ভাগ্যে অন্য কারো হওয়া লিখা ছিল আবার বিধবা হওয়া ও।
—চিরকুট লেখক কে শ্রেয়া?আর তুই কিভাবে তাকে চিনেছিস? ওনি কি তোর কাছে এসেছিল?
—-ওনাকে তুই ও চিনিস। আমাদেরই ইউনিভার্সিটির টপ বয় সে। দেখেছি ভার্সিটিতে তবে জানতাম না বেয়াদব সেই ছেলেটাই আমার চিরকুট লেখক ।ট্যুরে গিয়ে চিনতে পেরেছি ওনাকে। কিভাবে চিনেছি সেটা পরে বলব একসময়। চিরকুট লেখক হলেন,,,তূররর,,
নামটা প্রিয়ু কে বলার আগেই বাহিরে কারো চিতকার চেচামেচি শুনে আঁতকে উঠলাম আমরা।দৌড়ে বেরিয়ে এলাম ক্লাসরুম থেকে। দু তালা থেকে নিচে তাকাতেই যা দেখলাম তাতে মাথা টা ঘুরে গেল আমার। ভয়ে জমে গেলাম আমি। প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে আতংকিত স্বরে বললাম,,,
—এএএই ছেলেটাই তো সকালে আমার ওড়না টেনে ধরে ছিল। বাজে কথা বলেছিল তূর্য ভাইয়া ও আমাকে নিয়ে। সাথে বাকি ছেলেগুলো ও নিশি আপু ছিল।
মাঠের মাঝখানে ফেলে বেধরম পিটাচ্ছে ছেলেটাকে তূর্য ভাইয়া। একটু পর পর ব্যাথায় চিল্লিয়ে উঠছে ছেলেটা। আয়ুশ ভাইয়া,, ফুহাদ ভাইয়া মিলে বাকি গুলোকে মারছে। মিথি আপু নিশির আপুর হাত ধরে রেখেছে। মাথা নিচু কের থরথর করে কাপছেন নিশি আপু। সবাই গোল হয়ে দেখে যাচ্ছে কিন্তু কেউই আটকাচ্ছে না তাদেরকে।
— তূর্য ভাইয়া কেন মারছেন ছেলেটা কে?এভাবে মারতে থাকলে তো ছেলেটা মরে যাবেন। তোর জন্য নয়তো শ্রেয়া?
প্রিয়ুর কথা শুনে বুকটা ধুক করে উঠল আমার। তূর্যর কানে সকালের কথা যায় নি তো? ছেলেটা কে মেরে ফেলবে নাতো রাগের মাথায়? এতে তো ওনার ক্ষতি হতে পারে! যেভাবেই হোক আটকাতে হবে আমার।
এলেমেলো পায়ে কারো দিকে না তাকিয়ে ছুটতে লাগলাম আমি। পিছন পিছন প্রিয়ু ও আসতে লাগল। মাঠের কাছে এসে ভিড় ঠেলে তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে গেলাম আমি। পিছন থেকে আমাকে টেনে ধরল মিহি ও প্রিয়ু। রাগী চোখে তাকালাম ওদের দিকে।
—কি করছিস তোরা? ছাড় আমায়। নয়তো ছেলেটা মেরে ফেলবেন ওনি।দেখছিস না কিভাবে মারছে?ছাড় আমাকে।
কিন্তু আমার কোনো কথায় শুনল না ওরা দুজন। আটকে রাখল আমাকে। পেট বরাবর লাথি বসিয়ে দিতেই জোরে চিতকার করে উঠল ছেলেটা। চুলগুলো এলেমেলো,হাতের কপালের রগ গুলো দৃশ্য মান, রক্ত চক্ষু নিয়ে এলোপাথাড়ি মেরে যাচ্ছেই ছেলেটা কে।প্রিয়ু আর মিহি থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে এসে তূর্য ভাইয়ার কাছে দাড়ালাম আমি। জোরে চিল্লিয়ে বলে উঠলাম,,,
—কি করছেন আপনি?এভাবে মারছেন কেন ওনাকে?ছাড়ুন মরে যাবে তো।
শ্রেয়ার কথায় থেমে গেল আয়ুশ, ফুহাদ। অবাক চোখে তাকিয়ে রইল সবাই। ফিহা ফিসফিস করে শয়তানি হাসি দিয়ে পাশের মেয়েটা কে বলল,,,
—এই বিধবা মেয়েটার অনেক সাহস। ভার্সিটিতে নতুন এসেই টক্কর নিয়েছে আমার ক্রাশ তূর্যর সাথে। আজ দেখিস তূর্যর কাজে বাঁধা দেওয়ার জন্য কেমন যন্ত্রণা পোহাতে হয় এই মেয়ের। এখনই দেখবি তূর্য কেমন থাপ্পড় মারে মেয়েটা কে।
—হুম ঠিক বলেছিস। তূর্য ভাইয়া যা চিজ এই মেয়েকে কখনই ছাড় দিবেন না।
আমার কথা হয়তো কর্ণগোচর হয় নি তূর্য ভাইয়ার। বাকি সবাই থেমে গেলে ও থেমে নেই তিনি। আগের চেয়েও জোরে জোরে লাথি মারছে ছেলেটা কে। মাটি থেকে কলার ধরে টেনে তুলে মুখ বরাবর ঘুষি বসিয়ে দিতেই ছেলেটা লুটিয়ে পড়ল আবার মাটিতে। সাথে সাথেই মুখ থেকে ছিটকে বেরিয়ে এল রক্ত। আবারও মারতে গেলে শব্দ করে কেঁদে দিলাম আমি। একটা মানুষ এতো হিংস্র কি করে হতে পারে?ওনার এই হিংস্র রুপে ভীষণ ভয় লাগছে আমার। আমার দিকে ফিরে তাকালেন তূর্য রক্ত চক্ষু নিয়ে। ওনার ধরালো ও হিংস্র চাহনি তে এক কদম পিছিয়ে গেলাম আমি। আকস্মিক ভাবে আমার হাত টা ধরে নিজের একদম কাছে টেনে এনে কোমড় জরিয়ে ধরলেন তূর্য ভাইয়া ভরা মাঠে। অভিশঙ্কায়, লজ্জায় চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসল আমার ।আবদ্ধ হয়ে পড়লাম ওনার বাহুডোরে। হৃদয়ের কম্পন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ওনার হৃৎস্পন্দনের আওয়াজ কানে এসে বারি খাচ্ছে বার বার। বুক থেকে মাথা তুলে তাকাতেই ওনার লালচে চোখ দেখে মাথা নিচু করে ফেললাম। আমার কোমর জরিয়ে রেখে মাটিতে পড়ে থাকা অসভ্য ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে চেচিয়ে বলতে লাগলেন,,,,
—জানোয়ারের বা****** তোর সাহস কি করে হলো এই মেয়েটার দিকে হাত বাড়ানোর? তুই জানিস কে এই মেয়ে?তূর্য চৌধুরীর জীবন এই মেয়েটা। তূর্য চৌধুরীর হৃদপিন্ডে জুড়ে বসবাস করে মেয়েটা। আর তুই তূর্য চৌধুরীর হৃদপিন্ডে আঘাত করার সাহস দেখিয়েছিস? ওর সাথে রাত কাটাবি তাই না?অনেক শখ জেগেছে তোর। তোর এই শখ পূরণ করার আর কোনো রাস্তাই আমি খোলা রাখব না। আজ তোর জীবনে পৌষ মাস ডেকে আনব। আড়ালে থেকে ও যার ধারে কাছে কখনও কাউকে ঘেঁষার অধিকার দেই নি আর তুই সরাসরি হাত বাড়িয়েছিস ওর দিকে। রাত কাটানোর শখ সারাজীবনের জন্য ঘুচিয়ে দিব আজ।
কথাটা বলেই শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে ছেলেটার মেইন পয়েন্ট বরাবর লাথি বসিয়ে দিল তূর্য। ছেলেটার আর্তনাদে কানে হাত দিয়ে ভয়ার্ত চোখে চেয়ে রইল সবাই। কারোই সাহস হচ্ছে না আটকানোর। আয়ুশের পক্ষে ও সম্ভব না এ মুহুর্তে তূর্য কে বাঁধা দেওয়ার। তূর্যর রাগ সম্পর্কে সবাই অবগত। আঘাত যখন তার হৃদয়ে হেনেছে তখন রক্ষে নেই। ফিহা ও তার বান্ধবীরা সহ ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। এ কি দেখছে তারা! তূর্যর লাইফ এই বিধবা মেয়েটা!একের পর এক লাথি দিয়েই যাচ্ছে তূর্য। ছেলেটার চিতকারের আর্তনাদ কানে এসে আঘাত করছে খুব ভয়ংকর ভাবে।কান চেপে ধরে দাড়িয়ে রইলাম আমি। আমাকে ছেড়ে দিয়ে ছেলেটাকে লাথি লাথি দিতে বলে উঠলেন,,,,
—শী ইজ মাই লেডি। শী ইজ অনলি মাইন। আই ডোন্ট স্পেয়ার ইউ। আজ মেরেই ফেলব তোকে।রাত কাটাবি শালা! কাটা এখন। —বলেই পাশে থাকা হকিস্টিক দিয়ে বেশ জোরে বারি দিলেন তিনি। জ্ঞান হারাল ছেলেটা। হকিস্টিক টা ফেলে সবার দিকে চোখ রাঙিয়ে বললেন,,,
—যে আমার শুভ্রপরীর দিকে হাত বাড়াবে তার হাত কেটে ফেলব আমি। যে ব্যাক্তি সাহস করবে আমার শুভ্রপরীকে কলঙ্ক করার তার ঠিক এমন অবস্থা করব আমি। মাইন্ড ইট।
“আমার শুভ্রপরী”” শব্দটা আজ চিরকুটে নয় বাস্তবে আমার কানে মধুর ধ্বনির মতো বাজছে। বুকের দুরুদুরু কম্পন টা প্রচন্ড বেগে বাড়ছে। হাজারো ভালো লাগা মন মাঝে এসে ভিড় জমাচ্ছে । এক মুহূর্তের জন্য ভুলে গেলাম সবকিছু। ছুটে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম ওনার বুকের মাঝে। কান্নার বেগ বেড়ে গেল দ্বিগুণ। শক্ত করে নিজের সাথে আমায় জড়িয়ে নিলেন তূর্য। হাতের বাধন এতোই শক্ত যে ছেড়ে দিলেই বুঝি হারিয়ে যাব আমি।পরম যত্নে আগলে নিলেন আমায়।ওনার সাড়া পেয়ে কাঁদতে লাগলাম বুকে মাথা রেখে।
হতভম্ব হয়ে পড়ল মাঠে উপস্থিত থাকা মানুষ গুলো। এ কোন তূর্য চৌধুরী? যেই ছেলের জন্য হাজারো মেয়ে পাগল অথচ কখনও কাউকে কাছেও ঘেঁষতে দেয় নি সে কিনা সাধারণ বিধবা একটা মেয়ের জন্য এতো পাগল,,এতো মরিয়া হয়ে উঠেছে! প্রিয়ু যা বুঝার বুঝে গেছে। ভালো লাগলেও ভীষণ অভিমান জমা হয়েছে তার মাঝে। কেন আসে নি তূর্য শ্রেয়ার বিয়ে আটকাতে! তূর্যর বুকে শ্রেয়া কে কাঁদতে দেখে প্রিয়ুর চোখে ও পানি চলে এল। এই অশ্রু বান্ধবী কে মন খুলে প্রিয় মানুষের বুকে কান্না করতে দেখে ভালো লাগার অশ্রু। প্রিয়ু ভালো করেই জানে নিজের বছর ধরে লুকিয়ে রাখা অনুরাগের কাছে হেরে গেছে শ্রেয়া। পারে নি নিজেকে লুকিয়ে রাখতে আর না পেরেছে আবেগ কে কন্ট্রোল করতে। যখন শান্ত হয়ে আসবে তখন হয়তো আবারও ডুবে যাবে নিজের সেই কালো অতীতে। ভাবতেই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে প্রিয়ুর। মিনমিন করে বলে উঠল,,,-
–“তুই আবেগেই ডুবে থাক শ্রেয়া। সুন্দর একটা জীবন হোক তোর চিরকুট লেখকের সাথে এটাই আমার প্রত্যাশা। ”
বুক থেকে মাথা তুলে চারদিকে তাকিয়ে লজ্জায় সরে যেতে নিলে তূর্য আরো কাছে টেনে নিলেন আমায়। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন,,,,
—সরে যাওয়ার আর কোনো রাস্তা নেই শুভ্রপরী। তোমার সাথে তোমার চিরকুট লেখকের হাজারো হিসাব -নিকাশ এখনো বাকি। আমার শান্ত মনে অশান্তির ঝড় তোলার প্রতিশোধ নেওয়া বাকি। আমায় নিঃশেষ করে দেওয়ার শাস্তি ভোগ করা এখনও বাকি। আমায় ছেড়ে অন্য কারো হওয়ার জন্য তিলে তিলে,,,,
আর কিছু বলার আগেই পিছন থেকে তূর্যর কলার টেনে ধরল কেউ। মাথা তুলে পুলিশ কে দেখেই আতংক বিরাজ করতে লাগল আমার মনে। যেটার ভয় পাচ্ছিলাম সেটাই হলো। অগ্নি সিক্ত চোখ নিয়ে পিছন থেকে কলার টেনে ধরা মানুষটাকে সামনে এনে ছুড়ে ফেলল তূর্য। সাথে সাথেই বাকি সবাই পুলিশ এসে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে লাগল তূর্য কে। পিছন থেকে মাথায় আঘাত পেতেই ছিটকে পড়ল তূর্য। আয়ুশ ভাইয়া,,ফুহাদ,,,তিহান ভাইয়া কে ও ধরে রাখল পুলিশ। ওনাদের চিল্লানো তে পুলিশ ওনাদের ও আঘাত করছেন। কষ্টে বুক টা ফেটে যাচ্ছে আমার। তাড়াতাড়ি করে তূর্য কে ধরতেই একটা পুলিশ আমায় সরাতে যাবে নাক বরাবর ঘুষি মেরে দিলেন তূর্য। কিছুটা শক্তি জুগিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে পিছনে লুকালেন তিনি।
—কুত্তার বা*** আমাকে নিয়ে যাবি নিয়ে যা। কিন্তু ভুলেও আমার শুভ্রপরীর গায়ে স্পর্শ করার চেষ্টা করবি না। লাশ বানিয়ে এখানেই পুঁতে দিব।
—কথাটা বলেই পুলিশের গাড়িতে উঠে বসলেন ওনি। ছুটে গেলাম ওনার কাছে।
—কোথায় যাচ্ছেন আপনি তূর্য? কি দরকার ছিল ওই ছেলেকে মারার? প্লিজ যাবেন না আপনি।
কান্না মিশ্রিত কন্ঠে পুলিশের কাছে গিয়ে বললাম,,,—ছেড়ে দিন ওনাকে প্লিজ। সব আমার জন্য হয়েছে। ওনার সাথে আমাকে ও নিয়ে চলুন প্লিজ।আল্লাহর দোহাই লাগে ওনাকে ছেড়ে দিন। ওনার কোনো দোষ নেই।
মুচকি হাসল তূর্য। শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,,
—আমার শুভ্রপরী কারো সামনে নত হলে আমি মরে যাব। একদম নত হবে না শুভ্রময়ী। সম্মানের সাথে ফিরবে তোমার চিরকুট লেখক।
গাড়ি চোখের আড়াল হতেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম আমি। কেদে উঠলাম চিতকার করে। প্রিয়ু এসে জরিয়ে ধরতেই বলে উঠলাম,,,
—আমি অপয়া প্রিয়ু। দেখনা আমার জন্য ওনি কতো কষ্ট পাচ্ছেন। এজন্য জেনেও দূরে দূরে থাকতাম। ওনি খুব কষ্ট পাচ্ছেন প্রিয়ু্। ওনার মুচকি হাসি আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করছে। আমায় ওনার কাছে নিয়ে চল দয়া করে নিয়ে চল প্রিয়ু।
।
।
কারাগারে বন্দি করে রেখেছে তূর্য, আয়ুশ,তিহান,ফুহাদ কে। শয়তানি হাসি হাসল অফিসার টা।
—কি তূর্য চৌধুরী আর কতো? কি ভেবেছেন সবাই কে মেরে রেহাই পেয়ে যাবেন? মনে আছে মাস খানেক আগে আমার ভাইকে মেরেছিলি তুই? কারণ কি?তোর ওই লায়লি রক্ষিতা মাইয়ার দিকে আকাশ হাত বাড়াইছিল বলে? আরে আমার ভাইটা তো ভুল কইরা ফেলছে। তোর লায়লী রে উত্যক্ত না কইরা সবার সামনে রেপ করন উচিত আছিল। মাইয়া এক খান খাসা মাল। বিধবা হইয়া রুপ দো আরো বাইড়া গেছে। আমারই দো,,,
কথাটা শেষ করতে দিল না তূর্য। হাত বাড়িয়ে চেপে ধরল অফিসারের গলা। দেয়ালের সাথে মিশিয়ে আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলল,,,
— তোর সর্বনাশ ডেকে এনেছিস তুই। শুভ্রপরীর জন্য যেমন জীবন দিতে পারব তেমন নিতে ও পারব। তোর মতো এক নরপশু কে বাঁচতে দিব না আমি। তোর ভাইয়ের মতো তোকে ও আজ আইসিইউ তে পাঠাব আমি।—চোয়াল শক্ত করে বলল তূর্য।
আর একটু হলেই অফিসারের দমটা বের হয়ে যাবে। বাহির থেকে লক আপে ঢুকল কয়েক জন পুলিশ। আয়ুশ,, তিহান সবাই মিলে ছাড়িয়ে আনল তূর্য কে। ছাড়া পেতেই অফিসার মোটা লাঠি দিয়ে তীব্র আঘাত করেতে লাগল তূর্যর শরীরে। আমি এসে এসব দেখতেই চিতকার করে উঠলাম।
—আঘাত করবেন না। একটু নরম হন দয়া করে। মারবেন না ওনাকে।–বলতে বলতে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লাম আমি।প্রিয়ু এসে সামলে নিল আমায়। একজন মহিলা পুলিশ আমায় আঘাত করতে নিলে গর্জে উঠলেন তূর্য,,,
—ওকে আঘাত করলে আজ আপনার ভাত উঠে যাবে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হবেন আপনি। ধ্বংস করে দিব একদম আমি।
ভয়ে ঢুক গিলল মহিলা টা। তূর্য চৌধুরী কে খুব ভালো করেই চিনে সে। রাজনীতিবিদ তোহাশ সাহেবের ছোট ভাই সে। একজন ফোন নিয়ে দৌড়ে আসলেন অফিসারের কাছে। হ্যালো বলতেই মুখ থেকে শয়তানি হাসিটা গায়েব হয়ে গেল তার। একজন কনষ্টেবল কে উদ্দেশ্যে করে বলল,,,
—স্যার কে ছেড়ে দাও। ওনার বন্ধুদের কে ও।
বাঁকা হাসল তূর্য। শরীর ঝাড়া দিয়ে বেরিয়ে এল লক আপ থেকে। পুলিশ অফিসারের দিকে তাকিয়ে বলল,,,
—চোখ দুটো সামলে রাখিস। খুব শীগ্রই হয়তো হারাতে যাচ্ছিস।
কপালের ঘাম মুছে নিল অফিসার। কোনো দিকে না তাকিয়ে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। হাঁটু মুড়ে আমার কাছে বসলেন তূর্য। ঠোঁটের কোণে রক্ত জমে আছে তার। মুচকি হেসে আমার কপালের চুল গুলো কানের পিছে গুজে দিলেন ওনি। ওড়না দিয়ে ঘোমটা টেনে দিলেন আমার মাথায়।মুগ্ধময় হাসি বজায় রেখে বললেন,,,
—ঘোমটাতে এক অন্যরকম সৌন্দর্য ভর করে আমার হৃদয়স্পর্শীর মুখশ্রীতে। অম্লান এক রুপ তার যাতে ঘায়েল হয়েছি আমি বহুবার।
মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম ওনার দিকে। কখন যে শূণ্যে ভাসতে লাগলাম তার ও কোনো হুশ নেই আমার। আমি তো বিভোর হচ্ছি ওনার ঠোঁটের কোণে প্রসারিত সেই মুচকি হাসি টায়।
।
।
কেঁদে একাকার প্রিয়ু।আয়ুশের দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,,,
—আপনি ঠিক আছেন?
—একদম। তূর্য থাকতে আমাদের আঘাত করার সাহস কারো নেই। তুমি আমার সাথে চলো। তূর্য হয়তো তার শুভ্রপরী কে নিয়ে যাবে।
—হুম।
——————————
বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে তূর্যর গাড়ি। ওনার বাড়ি থেকে হয়তো ড্রাইভার নিয়ে এসেছিলেন গাড়িটা। রাস্তায় কোনো কথা হয় নি দুজনের। নীরবতা ছেয়ে ছিল শুধু। গাড়ি এসে আমার বাসার সামনে থামতেই অবাক হলাম আমি। দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লাম গাড়ি থেকে। পা বাড়াতেই তূর্যর ডাকে থেমে গেলাম।
—-শুভ্রপরী,,,
হৃদয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল তৎক্ষণাৎ। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দিলাম,,,
—–হু।
—কাল তোমার সাথে জরুরি কথা আছে আমার। ক্লাস শুরু হওয়ার একটু আগে পৌঁছাবে ভার্সিটিতে। কোনো টিউশন করানোর প্রয়োজন নেই তোমার।–ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে বললেন তূর্য।
সারা রাস্তা কল্পনা জল্পনা করে ও কথাগুলো বার বার গলায় আঁটকে যাচ্ছে। জানি কষ্ট হবে খুব বেশি। চোখ বন্ধ করে কঠোর গলায় বলে উঠলাম,,,
—আমার আপনার সাথে কোনো কথা নেই। কেন এসেছেন আপনি? আপনার প্রয়োজন আমার সেই কবেই ফুড়িয়ে গেছে। আপনাকে আর চাই না আমি। লজ্জা করে না আপনার আমাকে স্পর্শ করতে?নিজের লিমিটে থাকবেন। আপনাকে আমি কোনোদিন ও চাই নি। সব আমার আবেগ ছিল। বিয়ের পর থেকে আমার স্বামীই আমার সব। আমি আমার স্বামী কেই ভাললললোবাসি।
শেষ লাইনটা বলতে গিয়ে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছিল আমার। ওনার দিকে এক পলক ও না তাকিয়ে পালিয়ে এলাম সেখান থেকে। রুমে ঢুকে ভেঙে পড়লাম কান্নায়। সমাজ ঠিকি বলে অপয়া আমি। বিধবাদের সুখের আশা করা ভুল।
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কোনো ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। যারা যারা গল্পটা পড়েন অবশ্যই রেসপন্স করবেন।)