তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব -১৩

#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -১৩
#লেখিকা -আসরিফা সুলতানা জেবা

আজ সবাই ঢাকা ব্যাক করবে। মাথা টা ঝিম ধরে আছে। সারারাত অতীতের কিছু মধুর স্মৃতির কথা ভেবে একটুও ঘুম হয় নি। ইশশ যদি একবার ফিরে যেতে পারতাম অতীতের সেই স্মৃতির পাতায়। কিন্তু তা কখনও সম্ভব না। চাইলে ও আগের সময় গুলো ফিরে পাওয়া যায় না। তবে কখনও যদি সম্ভব হতো তবে ফিরে যেতাম আমি। চিতকার করে বলতাম “ভালোবাসি চিরকুট লেখক। বড্ড ভালোবাসি আপনায়।” এক নজর আপনাকে দেখার জন্য কতো অপেক্ষার প্রহর গুনেছি আমি অথচ আজ আপনি অতি নিকটে হয়েও দূরে থাকার ভাবনা ভাবি আমি। পায়ের ব্যাথাটা কিছুটা কমেছে। হাঁটতে একটু কষ্ট হলেও কোনো মতে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। গায়ের ড্রেস টা পাল্টিয়ে লাল কালার একটা থ্রি পিস পড়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখলাম প্রিয়ু বসে আছে বিছানায়।আমাকে দেখেই বলল,,,

—আমি তো তোকে নাস্তার জন্য ডাকতে এসেছিলাম। রাতে ও খাস নি তূর্য ভাইয়ার সাথে রাগ দেখিয়ে। কিন্তু এসে দেখলাম ওয়েটার রুমেই তোর নাস্তা দিয়ে গেছে।

প্রিয়ুর কথায় ভ্রু কুঁচকে ছোট টি টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই নাস্তা দিয়ে গেছে। কই আমি তো কাউকে বলি নি।সবার মতো তো আমারও নিচে গিয়ে খাওয়ার কথা।এক্সট্রা ভাবে রুমে নাস্তা দিয়ে গেলেন খুবই রহস্যজনক ব্যাপার। হঠাৎ মস্তিষ্কে খেলে গেল একজনের কথা। হুম নিশ্চয়ই ওনারই কান্ড এসব। এতো কেয়ার কেন করছে মানুষ টা! আগে যেমন ওনার মায়ায় পড়েছিলাম এখন তা আরও বাজে ভাবে আঁকড়ে ধরছে আমায়। কিভাবে থাকব আমি এই লোক থেকে দূরে? চাইলে ও কি আদোও পসিবল হবে আমার জন্য?আর ওনি কি মানবেন আমার আবারও হারিয়ে যাওয়া? আর কোনো কিছু না ভেবে প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললাম,,,

—হয়তো আমার পায়ে ব্যাথা তাই উপরে দিয়ে গেছেন!

—হতে ও পারে। কিন্তু তোর চোখ গুলো এতো লাল হয়ে আছে কেন শ্রেয়া?

—রাতে ঘুম হয় নি তো তাই হয়তো।

—-মিথ্যা বলছিস?রাত জেগে কান্না করছিলি তাই না?

—এমন কিছুই না। শরীর একটু খারাপ লাগছিল।দেরি হয়ে যাচ্ছে চল নাস্তা করে নেই। একটু পর তো বেরিয়ে যাবে সবাই।

—হুম চল। ওহ আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি। ভাইয়া এসেছে দেশে। তাই আম্মু বাড়িতে যেতে বলল তোকে। তুই তো আমাদের বাড়িতে যেতেই চাস না। তাই ভাইয়া আসার উপলক্ষে বাসায় আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দিয়েছে আম্মু। তোকে ও যেতে বলেছে।আমি জানিয়ে দিলাম তবে ভাইয়া অথবা আম্মু ফোন দিবে আবারও।

—শিহাব ভাইয়া কবে এলো?আমায় তো জানালি না।(অবাক হয়ে)

— গতকাল বিকালে এসেছে। কাল ভেজালে আর বলা হয় নি দোস্ত। ভাইয়া বার বার জিজ্ঞেস করছিল তোর কথা।

—আচ্ছা যাব।


প্রিয়ুর সাহায্যে বাসের কাছে এলাম আমি। চারদিকে একবার চোখ বুলালাম তূর্য ভাইয়ার সন্ধানে। কোথাও নেই ওনি। কাল এতো রেগে বেরিয়ে গেলেন। রাতে ও ওনাকে দেখি নি অন্ধকারে।সকাল থেকে ও ওনাকে এক বার ও দেখা যায় নি। ওনি কি চলে গিয়েছেন? সবাই অলরেডি বাসে উঠে গেছেন। টিচার দের বাস ও ছেড়ে দিয়েছেন। আমি প্রিয়ু ও আয়ুশ ভাইয়া দাড়িয়ে। আয়ুশ ভাইয়া বাসে উঠতে বললে আমি ও প্রিয়ু উঠতে নিলেই কারো কথায় থমকে গেলাম দু’জনে। পিছন ফিরে তূর্য ভাইয়া কে দেখেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি। নীল রঙা শার্ট আর চোখে সানগ্লাসে ভীষণ সুন্দর লাগছে ওনাকে।

—শ্রেয়সী আমার সাথে যাবে।—মুচকি হেসে বললেন তূর্য।

তূর্যর কথায় চমকে উঠলাম আমি আর প্রিয়ু। কাল ওনি আমায় এতো কিছু বললেন অথচ আজকেই আবার এসে ওনার সাথে যাওয়ার কথা বলছেন। হুট করে বলে উঠলাম আমি,,,,

—আমি বাসে যাবো। আপনার সাথে যাবো না।

আমার কথায় কোনো কর্ণপাত করলেন না তূর্য। আয়ুশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,

—প্রিয়ু কে নিয়ে তুই বাসে চলে যা। শ্রেয়সী আমার সাথে গাড়িতে যাবে।

তূর্যর কথায় হাসি ফুটে উঠল আয়ুশের চেহারায়। কিছুটা কাছে গিয়ে স্লো ভয়েসে বলল,,,

—ঠিক আছে দোস্ত। সাবধানে যাস জেরি কে নিয়ে। কোনো সমস্যা যেন না হয় জেরির।

—তূর্য বেঁচে থাকতে জেরি টেরির কিছুই হবে না।—মুচকি হেসে একটু জোরে কথাটা বলল তূর্য।

আয়ুশ প্রিয়ু কে বাসে উঠতে ইশারা করতেই প্রিয়ু মাথা নেড়ে না জানাল। সাথে সাথেই কপাট রাগ দেখাল আয়ুশ। হাত টা ধরে টেনে বাসে তুলল প্রিয়ু কে। এমন কান্ড দেখে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম আমি। পা বাড়িয়ে বাসে উঠতে যাবো সাথে সাথেই আমার হাত টা টেনে ধরল তূর্য ভাইয়া। কিছুটা রাগ দেখিয়ে বললাম,,,

—হাত ছাড়ুন ভাইয়া। আমি বাসে যাব। আপনার সাথে যেতে চাই না আমি। প্লিজ লিভ মাই হ্যান্ড।

—-তুমি আমার সাথেই যাবে। কাটা পা নিয়ে বাসে কষ্ট হবে। আমি গাড়ি করে যাব। কষ্টে যাওয়ার চেয়ে বরং তুমি আমার সাথেই চলো।খালা মণি যদি জানতে পারেন আমি তোমার খেয়াল রাখি নি তবে খুব কষ্ট পাবেন। সো তুমি আমার সাথেই যাচ্ছো।

— আমার পা কাটুক মাথা কাটুক অথবা মরে যায় তাতে আপনার কি? ছাড়ুন আমায়। আমার নিজের খেয়াল আমি খুব ভালোভাবেই রাখতে পারি। আর আপনি কোন অধিকারে অলওয়েজ পাবলিক প্লেসে আমার হাত ধরেন,,কোলে তুলে নেন?লজ্জা করে না আপনার একটা বিধবা মেয়ের সাথে বার বার এমন আচরণ করতে?

মেজাজ খারাপ হয়ে এলো তূর্যর। রাগে ভেসে উঠল কপালের রগ গুলো।ওনার রাগী চেহারা দেখে আমতা আমতা করে কিছু বলতে নিব তার আগেই টেনে হিঁচড়ে আমায় নিয়ে যেতে লাগলেন ওনি। পায়ের ব্যাথায় মনে হচ্ছে এই মুহূর্তেই মরে যাব। একটা মানুষ এতো কঠোর কিভাবে হতে পারে?ওনি কি ভুলে গেছেন আমার পায়ের কথা? টেনে হিঁচড়ে এনে গাড়িতে বসালেন আমায়। ব্যাথায় দম বের হয়ে যাচ্ছে আমার। পা দিয়ে ও রক্ত ঝড়ছে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম আমি। গাড়িতে বসে খুব জোরে দরজা টা লাগালেন ওনি। মনে হলো নিজের সব রাগ দরজাটার উপরই ঝারলেন। গম্ভীর গলায় ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,,,,,

—একদম সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাবেন।

—জ্বি স্যার।

আচমকা আমার হাতটা টেনে ধরে নিজের একদম কাছে টেনে নিলেন তূর্য। আমার দু হাত গিয়ে ঠেকল ওনার বুকে। অশ্রুসিক্ত নয়নে ওনার দিকে তাকালাম আমি। রাগে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে ওনার চোখ দুটি। এই বুঝি ওনার চোখের অগ্নি তেজে জ্বলে পুরে ভস্ম হয়ে যাব আমি। সরে আসতে নিলে আমার কোমড়ে হাত দুটো চেপে ধরে নিজের আরো কাছে টেনে নিলেন। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বললেন,,,

—তোকে ছোঁয়ার জন্য তূর্য চৌধুরীর কোনো অধিকারের প্রয়োজন নেই। বরং অন্য কারো তোর গায়ে হাত দিতে অনেক সাহসের প্রয়োজন হবে। যেদিন কোনো ব্যাক্তি এই সাহস টা দেখাবে সেদিনটাই হবে তার শেষ দিন। ফারদার যদি তোর মুখ থেকে আমি উল্টা পাল্টা কিছু শুনেছি তো কথার বলার জন্য এই মুখই আর তোর থাকবে না।

কথাগুলো বলেই এক প্রকার ছুড়ে মারল আমায়। আর আওয়াজ না করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগলাম আমি। মিনিট পাঁচেক পর গাড়ি থামাতেই অবাক হলাম। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম মোবাইলে ব্যস্ত তূর্য। আমার ব্যাগ মোবাইল সবই প্রিয়ুর কাছে।কিছুই ভালো লাগছে না।যতই এই মানুষ টা থেকে দূরে যেতে চাচ্ছি ততই বেশি কাছে টানছেন তিনি। ড্রাইভার ফিরে এসে গাড়ি স্টার্ট দিতেই তূর্য ভাইয়া বলে উঠলেন,,,

—–যা যা বলেছি সব এনেছেন?

—জ্বি স্যার।

—ঠিক আছে নির্জন কোনো জায়গায় গাড়িটা থামাবেন।

ফোন বেজে উঠতেই রিসিভ করলেন তূর্য। কিছু সেকেন্ড পর বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। কানে ধরতেই ভেসে এল প্রিয়ুর কন্ঠ।

—ঠিক আছিস দোস্ত?

—হুম।

—-এটা আয়ুশ ভাইয়ার ফোন। তোর ফোন আমার কাছে রয়ে গেছে তাই আয়ুশ ভাইয়া কে বলাতে ওনি তূর্য ভাইয়া কে কল করলেন। সত্যি তুই ঠিক আছিস তো?

—রিলেক্স প্রিয়ু। আমি সত্যিই একদম ঠিক আছি।
কিছুটা চাপা স্বরে বললাম,,, নিশ্চয়ই আয়ুশ ভাইয়া পাশে। সুযোগ লুটে নাও প্রিয়ু রাণী। সময় আজ তোমারই।

আমার কথায় প্রিয়ু ভীষণ লজ্জা পেয়েছে না দেখেই বেশ বুঝতে পারছি আমি। ফিসফিস করে বলল,,,

–ঠিক আছে দোস্ত। কথা বললে সুযোগ কখন কাজে লাগাব বল?রাখছি।

প্রিয়ুর কথায় হালকা হাসলাম ।ইশ আমিও যদি সুযোগ পেয়েও লুটতে পারতাম প্রিয়ুর মতো! কান থেকে ফোনটা নামিয়ে ওনার দিকে এগিয়ে দিব এমন সময় স্ক্রিনে কিছু একটা আবছা নজরে পড়তেই ভালো করে দেখতে নিব তার আগেই এক প্রকার আমার হাত থেকে মোবাইল টা কেড়ে নিলেন তূর্য ভাইয়া। চমকে তাকালাম আমি ওনার দিকে।এভাবে কেঁড়ে নেওয়ার কি আছে?আমি কি খেয়ে ফেলতাম নাকি ওনার অর্ধেক খাওয়া আপেল চিহ্নিত আইফোন টা। নির্ঝন একটা জায়গায় রাস্তার একপাশে গাড়ি থামালেন ড্রাইভার। এখানে আবার কেন থামালেন ভাবতেই দরজা খুলে বের হলেন তূর্য ভাইয়া। আমার সাইডের দরজা খুলতেই অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। এক হাঁটু ভাজ করে মাটিতে বসে পড়লেন তূর্য । আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে আমার কাটা পা টা নিয়ে রাখলেন ওনার হাঁটুর উপর। বিদ্যুতের মতো ছলকে উঠল সারা শরীর। হৃদয়ে বয়ে যেতে লাগল শীতল স্রোত। তাড়াতাড়ি করে পা টা সরিয়ে নিতে গেলে চেপে ধরলেন ওনি। একদম শান্ত স্বরে বলে উঠলেন,,,,,,,

—- পা টা সরাবে না একদম। দেখছো না রক্ত ঝরছে? ব্যান্ডেজ টা পাল্টাতে হবে। তোমার দেহে যদি ক্ষতের কারণ হয় আমি তবে সেই ক্ষত নিবারণের ঔষধ ও হবো আমি।

কথাগুলো বলে ঔষধ লাগিয়ে পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলেন ওনি খুব যত্নসহকারে।
স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইলাম আমি। কিছু বলার ভাষা ও হারিয়ে ফেলেছি। এই মানুষ টা কে কিছু বলার সাধ্য আমার নেই। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়তে লাগল জল। মাস খানেক আগে আড়ালে কেয়ার করে যেত মানুষ টা আর এখন করছেন প্রকাশ্যে। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল এক চিলতে হাসি। প্রশান্তির হাসি। এতো কেয়ারিং একটা ছেলে সব মেয়েরাই চায়। আমিও চাইতাম একটা সময়। কিন্তু পেয়েও ধরে রাখতে পারি নি। ওনি তাকাতেই তাড়াতাড়ি করে চোখের জল মুছে নিলাম আমি। ওনাকে কোনোভাবেই বুঝতে দেওয়া যাবে না আমি জেনে গেছি ওনিই আমার চিরকুট লেখক। বুঝতে পারলে এক বিন্দু ও ছাড় দিবে না আমাকে।


বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে এল। ভাবতেই ভীষণ লজ্জা লাগছে আমার পুরো রাস্তা আমি গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়েছিলাম তূর্য ভাইয়ার বুকে। ঘুম ভেঙে নিজেকে ওনার বুকে আবিষ্কার করার পর থেকে একবারও ওনার মুখের দিকে তাকানোর সাহস আমার হয় নি। ভার্সিটি গেট থেকে প্রিয়ু উঠে গাড়িতে। আমার বাসার সামনে আসতেই প্রিয়ুসহ নেমে পড়লাম আমি। ওনার দিকে তাকাতেই একটা মুচকি হাসি দিলেন। নিয়ন লাইটের আলোতে ওনার হাসিটা খুব বেশি নজর কাড়া। ছেলেদের হাসি এতো সুন্দর হয় নাকি?ওনার হাসি এতো মুগ্ধকর কেন?আমার ভাবনার মাঝেই ওনি প্রিয়ুর উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,,,

—সাবধানে নিয়ে যাবে। আমি অপেক্ষা করছি। রাতের বেলা তোমায় একা ছেড়ে যেতে পারছি না তাই তোমায় পৌঁছে দিয়েই বাসায় যাব। তাড়াতাড়ি এসো।

আমাকে ধরে নিয়ে যেতে লাগল প্রিয়ু। পিছন ফিরে একবার তাকালাম আমি। তূর্য ভাইয়ার দৃষ্টি আমাতেই নিবদ্ধ। এক নজরে তাকিয়ে আছেন তিনি আমাদের যাওয়ার পানে।প্রিয়ু রুমে দিয়ে চলে গেল। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম ওনি গাড়ির বাহিরে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে। একদম শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সামনের দিকে। প্রিয়ু আসতেই সামনের সিটে বসে পড়লেন তূর্য ভাইয়া । গাড়িটা বেরিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাকিয়ে রইলাম এক দৃষ্টিতে। জীবনে কেন আমারই কষ্ট সইতে হচ্ছে? কেন বার বার প্রিয় মানুষগুলো হারিয়ে যাচ্ছে? চোখের পানি মুছে রুমে চলে এলাম।

——————————

প্রাইভেট পড়িয়ে বেরিয়ে পড়লাম ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য। গত তিন দিন অনেক রেস্ট নেওয়া হয়েছে। আরো কয়েকদিন রেস্ট নিলে ভাত উঠে যাবে আমার কপাল থেকে।কারণ সামনেই এক স্টুডেন্টের এক্সাম। বিকালের টিউশনি টা ও এখন সকালেই করাই। পায়ের সামান্য ব্যাথার জন্য ঘরে বসে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে।ক্লাসে এসে বসতে না বসতেই টিচার চলে এলেন। একটু আগের কথা মনে পড়তেই খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। রাগে ঘৃণায় কেঁদে দিলাম শব্দ করে। প্রিয়ুসহ সবাই আঁতকে উঠল।টিচার এগিয়ে এসে বললেন,,,

—হোয়াট হেপেন্ড শ্রেয়সী? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?

কি জবাব দিব আমি!কিছুই বলার নেই আমার। প্রিয়ু বলল,,,

—স্যার ওর মাথা ব্যাথা করছে অনেক। আমি বরং বাহিরে নিয়ে যায়।

—ওকে নিয়ে যাও।

শ্রেয়া কে ধরে বাইরে নিয়ে আসল প্রিয়ু।খালি একটা ক্লাসরুম দেখতেই সেখানে এনে একটা বেঞ্চিতে বসাল। ব্যাপারটা ভালো ঠেকছে না তার কাছে। শ্রেয়া কখনও অযথা কারণে কান্না করার মেয়ে না। নিশ্চয়ই খুব খারাপ কিছু ঘটেছে।এসব ভেবেই প্রশ্ন করল,,,

—কি হয়েছে শ্রেয়া কাঁদছিস কেন?কি হয়েছে বল আমায়?বল দোস্ত।

কোনো মতে কান্না থামিয়ে আমি বলতে শুরু করলাম,,,,

ভার্সিটিতে ঢুকে দু তালায় উঠে ক্লাসে আসতে নিব তখনি আমার সামনে এসে দাঁড়াল কয়েকটা ছেলে এবং সাথে নিশি আপু ও। কোনো কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিব তখনি একটা ছেলে আমার ওড়না টেনে ধরল। ভয়ে আঁতকে উঠলাম আমি। ঘৃণায় রি রি করে উঠল পুরো শরীর। দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগল জল।

–এটা কেমন অসভ্যতামি?আমার ওড়না টেনে ধরেছেন কেন?

—তূর্য ওড়না টেনে ধরলেও কি এমন তেজী হয়ে উঠো বেবি?আহা কি তেজ তোমার। তূর্যর মতো পোলা কি এমনে এমনে ঘায়েল হইছে নাকি! তোমার রুপের জালে তো আমিও ফেসে যাচ্ছি। তা তূর্যর সাথে রাত কাটানো শেষ? আমার জন্য একটু সময় বের কইরো তো বেবি। মানুষ কি শুধু শুধু বলে নাকি তূর্য চৌধুরীর পছন্দ মানেই নেশা ধরানো।

কথাগুলো বলেই হেসে উঠল ছেলেটা সাথে বাকি সবাই। ঘৃণায় কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার। কোনোমতে ওড়না টা ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে এলাম কোনোদিকে না তাকিয়ে।

দু’হাতে ঝাপটে ধরল আমাকে প্রিয়ু। কেঁদে দিয়েছে মেয়েটা। প্রিয়ু কে জরিয়ে ধরে বললাম,,,

—তুই আবার কাঁদছিস কেন?চলার পথে এমন কুকুর কতই কামড়াতে আসে। ভয় পেয়ে পালালে কুকুর গুলো আরো তাড়া করে বেশি। আমি ভয় পায় নি। মনে নেই আকাশ ও এমন করতো রাস্তা ঘাটে।

কাঁদতে কাঁদতে প্রিয়ু জবাব দিল,,,

–তখন তো তোর চিরকুট লেখক ছিল তোকে প্রটেক্ট করার জন্য। ওনি কি আর ফিরে আসবেন না শ্রেয়া?ওনি কোথায় হারিয়ে গেলেন? ওনি ফিরে আসলে তোর অগোছালো জীবনটা কতো সুন্দর হতো।কেন এলেন না ওনি শ্রেয়া?আমি এখনও দোয়া করি আল্লাহর কাছে শুধু একবার,, একবারের জন্য হলেও যেন আল্লাহ ওনাকে আবার ফিরিয়ে দেয় তোর জীবনে।

দরজার আড়াল থেকে কথাগুলো শুনল আয়ুশ। শ্রেয়া কে কাঁদতে দেখে পিছন পিছন এসেছিল সে। রাগে থরথর করে কাঁপছে তার সারা শরীর। মোবাইল টা কানে ধরে বলে উঠল,,,

—তোর শুভ্রপরীর দিকে এক কুত্তার বাচ্চা হাত বাড়িয়েছে। তোর শুভ্রপরীর চোখের জল ঝরিয়েছে।

আর কিছু বলার সুযোগ হয় নি আয়ুশের। ফোনের অপর পাশের ব্যাক্তি কল কেটে দিয়েছে।

চলবে,,,,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here