অন্তরালে ভালবাসা পর্ব ১৩

#অন্তরালে_ভালবাসা
১৩
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা_হঠাৎ_বৃষ্টি

অহিন, আরিশাকে নিয়ে রুমে এসে শুইয়ে দিয়ে।নিজে ফোনে কারো সাথে অনেকটা সময় কথা বলে নেয়।
তারপর অহিন আরিশার পাশে ঘুমাতে যায়।কিন্তু আরিশার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে অহিনের খুব মায়া হহ।আরিশার পাশে বসে আরিশার মুখের উপর পড়া চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দেয়।আরিশাকে ভালো রাখতে পারলে অহিন নিজেও ভালো থাকে।অহিন চুপচাপ শুয়ে পড়ে আরিশার পাশে।আরিশা ঘুমের মধ্যে অসাবধানতায় অহিনের বুকের উপর হাত রাখে।অহিনের খুব ইচ্ছে করছে ঘুমন্ত আরিশার কপালে চুমু খেতে কিন্তু তার অধিকার থাকলেও অনুমতি নেই তাই নিজেকে যথা সম্ভব সামলে নেয়।আরিশার পাশে শুয়ে অহিন একটাই কথা ভাবে তুই আর কিছুদিন পরেই তোর ভালবাসা পাবি আরু।এই কয়েকটা দিন আমি তোর ইচ্ছে পূরন করবো।তোকে এখানকার সব জায়গা ঘুরে দেখাবো।
এভাবেই নানা চিন্তায় কেটে যায় অহিনের নির্ঘুম রাত। ভোরের দিকে অহিনের চোখ লেগে আসে।

ভোরের আলো বারান্দার গ্লাস ভেদ করে রুমে ঢুকছে।সেই আলো গিয়ে পড়ছে আরিশার মুখে। আরিশার ঘুম ভেঙে যায়।তাতেই আরিশা চোখ মেলে তাকায়, চোখ মেলে আরিশা এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখলো , আরিশা অহিনের বুকে আর অহিনের দুইবাহুর এক বাহুতে আরিশা শুয়ে আছে অন্য বাহুতে অহিন আরিশাকে আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। ঘুম ঘুম চোখে অহিনের দিকে তাকিয়ে দেখে আরিশা আরিশা এই মুহুর্তে অদ্ভুত কিছু একটা অনুভব করলো সেটা হচ্ছে,অহিনের বুকে এভাবে দেখে নিজেকে তার অহিনের উপর রাগ হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে আরিশার তেমন কোন রাগ হচ্ছে না।যা হচ্ছে তা আরিশার কাছে স্পষ্ট না।অহিন ঘুমিয়ে থাকায় তার চোখের ঘন পল্লব গুলো যেনো আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে ফর্সা গালে দুইতিন দিনের অযত্নে রাখা দাঁড়িগুলো যেনো আরও সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে অহিনের।
আরিশা আজ প্রথম আবিষ্কার করলো অহিনকে ঘুমালে দেখতে খুব সুন্দর লাগে।মায়া লাগে।এতো মায়া আগেতো কোনদিন লাগেনি!কালো ঘন সিল্কি চুলগুলো হালকা হালকা উড়ছে জানালার বাতাসে।অহিন প্রায় সিগারেট খায় কিন্তু তার চাপ অহিনের ঠোঁটে বিন্দুমাত্র নেই।বরং তার ঠোঁটে গোলাপি আভা খেলে যায়।মুহূর্তে আরিশার মনে হলো তার বন্ধু অহিন দেখতে আসলেই অনেক কিউট।যে মেয়ে তাকে পাবে সে নিসন্দেহে খুব ভাগ্যবতী হবে।

আরিশা উঠতে গেলে অহিনের ঘুম ভেঙে যায়।অহিন নিজের বাহুতে আরিশাকে দেখে চমকে উঠে কখন এমন হইছে অহিন বুঝতে পারেনি।এই জন্য আরিশার সাথে ঘুমাতে চায় না অহিন।কখন কি ভুল হয়ে যায়,আর তাতে আরিশার খারাপ লেগে যায়।
অহিন সরি বলে আরিশাকে। বলে বুঝিনিরে কখন এমন হইছে।
আরিশা হেসে কুটিকুটি হয়ে বলে হইছে তুই এখন সরির দোকান খুলে বসিস না।
অহিনের বুক থেকে পাথর নেমে গেলো যেনো। একটু অবাক হলো অহিন আরিশাকে আজ বেস স্বাভাবিক লাগছে।অদ্ভুত ব্যাপার!

তারপর দুজনে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে কিছুক্ষণ রিসোর্টের চারপাশে ঘুরে।
আরিশা বলে আজ আমরা কোথায় যাবো?
ফাতার বন অহিন জবাব দেয়।

দুজনে বের হয় ফাতার বনের উদ্দেশ্যে। একটা ট্রলার ভাড়া করে অহিন তাদের জন্য।ট্রলারে উঠতে ভয় লাগে আরিশার তাই ট্রলারে উঠেই অহিনের হাতের ভেতর নিজের হাত ঢুকিয়ে দিয়ে শক্ত করে ধরে বসে আরিশা। অহিন আরিশার অবস্থা দেখে হেসে খুন হয়ে যাচ্ছে।সেই হাসি যেই হাসিতে চোখ হাসে,যে হাসিতে ঠোঁট হাসে!স্নিগ্ধ সেই হাসি!
আরিশার অহিনের হাসি দেখে খুব রাগ হয়।তাই কিছু করতে না পেরে অহিনের পেটে খামছি বসিয়ে দেয়।অহিন অবাক চোখে তাকায় আরিশার দিকে।বলে,মানে কিরে আরু?তুই কি খামচি,চিমটি, কামড় এসব ছাড়া কিছু বুঝিস না নাকি?
আরিশা দাঁত মুখ খিচে বলে বেস করেছি।তুই এমন শয়তানের মত হাসিস ক্যান?
অহিন ভ্রু কুচকে বলে,আমার হাসি শয়তানের মত?
আরিশা কিছু একটা ভেবে দার্শনিকের ভঙ্গিতে বলে,না তোর হাসিটা খুব খুব খুব সুন্দর! তোর বউ অনেক লাকি হবে মামা এতো সুন্দর হাসি দেখে ফিদা হয়ে যাবে।
অহিন বলে,আমার বউ?
হুম তোর বউ জবাব দেয় আরিশা।

অহিন উত্তরে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।ভাবে আমার বউতো তুই আরু।তোর জায়গা আমি আর কাউকে দিতে পারবো না।তুই আমার আজীবন বউ থাকবি।সেটা বাস্তবে না হলেও কল্পনায়। আমার স্বপ্নে।

আরিশা হঠাৎ বলে উঠে, ওয়াও কি সুন্দর চারপাশ
ট্রলারে চেপে যখনই তারা ফাতরার চরের খালে ঢুকে, তখনই তারা দেখতে পায় তাদের স্বাগত জানাচ্ছে দুপাশের ঘন সবুজ অরণ্য। খালের চারপাশে সবুজ গাছে ঘেরা এতো সুন্দর দেখতে চোখ জুড়িয়ে যায়।তারা এসে পৌঁছে যায় ফাতরার চরে।অহিন নেমে গিয়ে আরিশার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় ট্রলার থেকে নামার জন্য।ট্রলারের জেটি পেরিয়ে তারা চরের ভেতরে ঢুকলেই চোখে দেখতে পায় শান-বাঁধানো একটি পুকুর ও বন বিভাগ নির্মিত একটি রেস্টহাউস। আরিশা অহিনকে বলে এটা কি কারো বাড়ি অহিন?
এই গভীর জঙ্গলে এরা থাকে কিভাবে?অহিন বলে এটা মূলত চরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করা মানুষের মিঠাপানির জন্য করা হয়েছে এই পুকুর। বন বিভাগের কয়েকজন বনরক্ষী ছাড়া এখানে কেউ স্থায়ীভাবে বসবাস করে না। পুকুরপাড় দিয়ে তারা প্রবেশ করে ঘন গহিন অরণ্যে।

অহিন বলে দেখেছিস কত সুন্দর চারপাশ, প্রকৃতির এই নিস্তব্ধতার মাঝে ক্ষণে ক্ষণে ডেকে ওঠা পাখির ডাক যেনো এই মুহুর্তটাকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। চরের পূর্ব অংশে রয়েছে একটি ছোট সমুদ্রসৈকত।এখানে যেতে হলে বনের সবুজ অরণ্য আর কয়েকটি ছোট খালের ওপরে তৈরি বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে যেতে হয়।অহিন বলে তুই কি যেতে পারবি?
সাঁকো দিয়ে।আরিশা বলে না আমি পড়ে যাবো।তুই যা আমি এখানে দাড়াচ্ছি।
অহিন বলে তোকে এখানে একা রেখে আমি কিভাবে যাবো?কিছু একটা ভেবে অহিন আরিশাকে কোলে নিয়ে নেয়,আরিশা চিৎকার করে বলে,এই অহিন কি করিছিস?
অহিন আরিশার কোন কথা কান না দিয়ে চুপচাপ সাঁকো পার হয়ে যায় আরশাকে কোলে নিয়ে।আরিশা ভেবেছে অহিন আরিশাকে নিয়ে খালে পড়ে যাবে তাই চোখ মুখ খিচে আছে।অহিন আরিশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
তারা ভেতরে ঢুকে সব দেখে নেয়।সব কিছু কেমন মুগ্ধ করার মত!এই ফাতরার চরকে দেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন বলা হয়।
সবুজে ঘেরা এই বন দেখে অহিন আরিশা ফিরে যায় রাখাইন পল্লী সেখানে বাস করে রাখাইনরা। হাটতে হাটতে দুজন রাখাইন ছেলে মেয়ের সাথে দেখা হয়।
তারা একে অপরকে বলছে “নে বু নাসিকি”
কথাটা অহিনের কানে যেতেই অহিন বলে এই কথার মানে কি জানিস আরু?
আরিশা বলে কোন কথা।ওইযে ছেলেটা মেয়েটাকে বললো। আমি তো ঠিক করে বুঝিনি। তাছাড়া উনাদের ভাষা আমি কিভাবে বুঝবো?

অহিন বলে, “নে বু নাসিকি”মানে আমি তোমাকে ভালবাসি!

আরিশা বলে বাহ তুই কিভাবে জানিস?
অহিন বলে আমি আগে একবার এসেছি তাই জানি।
আরিশা এই কথাটা মুখস্ত করে নেয়।
তারপর তারা তিন নদীর মোহনায়।সেখানে তারা সুর্যাস্ত দেখতে যায়।
কিছুক্ষণের মাঝেই একটু একটু করে সুর্যাস্ত যাওয়া শুরু করে।আরিশা মুগ্ধ নয়নে সে দৃশ্য দেখে,আরিশা বলে সূর্যোদয়ের চেয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্যটা বোধহয় বেশি চমৎকার লাগে অহিন। সুর্যটা সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার সময় রংয়ের পরিবর্তনটা স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে।চারপাশ কমলা রঙের বর্ন ধারণ করছে।আরিশা সুর্যাস্ত দেখছে। আর অহিন দেখছে আরিশাকে।মুগ্ধ নয়নে।সমুদ্রের পাড়ে বাতাসে আরিশার চুলগুলো উড়ছে।শাড়ির আঁচল উড়ছে।অহিনের ইচ্ছে করছিলো আরিশার এলো চুলগুলো কানের পাশে গুজে দিতে।বড্ড বিরক্ত করে এই চুলগুলো আরিশাকে!
অহিনের মনে কেমন সুখ সুখ অনুভব করছে।কিন্তু সিহাবের ফোনের কথা মনে হতেই ভাবে আর মাত্র কয়েকটা দিন রাফিন ফিরে আসবে।আর নিয়ে যাবে তার আরিশাকে।শূন্য হয়ে যাবে অহিন।

যখনই অহিন আরিশাকে নিয়ে ভালো কিছু চিন্তা করে তখনই অহিনের কথা মাথায় এসে যায়।আর তার মনটা ভরে যায় এক আকাশ হতাশায়।জীবন বড় বৈচিত্র‍্যময়।মানুষ ভাবে এক হয় আরেক।জীবনের মোড় কখন কোনদিকে চলে যাবে তার কোন ঠিক নেই।অহিনের মনে আবার শুরু হয় আরিশাকে একেবারে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রনা। যা মনের মাঝে বড্ড খোঁচা দেয় তাকে।আশান্ত হয়ে পড়ে এই সমুদ্রের জোয়ারের মত।

কি হতে চলেছে অহিন আরিশার জীবনে?
অহিন কি পেয়েও হারিয়ে ফেলবে আরিশাকে?

চলবে,,,

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here