এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব ৬৪ ও শেষ পর্ব

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৬৪(অন্তিম পর্বের প্রথম অংশ)
#WriterঃMousumi_Akter

“বিহান ভাই ভেবে দেখেছেন আপনার বউ যদি মহিলা মেম্বার হয় তাহলে কত দাম বেড়ে যাবে।জানেন মানুষের বাড়ি মাঝে মাঝে মারাত্মক ঝগড়া হয় আবার তা নিয়ে আবার শালিস বিচার ও হয় তা আমি যদি মেম্বার হয় রেগুলার আমার বাড়িতে বসে জানতে পারবো কার বাড়িতে কি নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে।আমাদের বাড়ির পাশে যে তরিকুল দের বাড়ি আছে না বিহান ভাই জানেন না ওদের বাড়ি কি মারাত্মক ঝগড়া হয়।ওরা পাঁচ ভাই আর তাদের বউয়েরা মিলে রেগুলার খুব বিশ্রি ভাষায় গালি গালাজ করে আর ঝগড়া করে।পাড়ার মানুষ যে কি পরিমান হাসে ওদের ঝগড়ার অধ্যাতিক কথা আর গালি শুনে।আমি তো উঁকি ঝুঁকু মের শুনি শুনি সেগুলা আম্মু আমাকে যেতেই দেয় না।তাই ভাবছি আমি মেম্বার হলে ওসব শালিস আমার বাড়িতেই হবে।”

“বিহান ভাই স্হির নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমার কথা গুলো মুখ বুজে হজম করে ভ্রু কুচকে বললেন,একমাত্র তোর দ্বারাই সম্ভব এসব আধ্যাতিক কথা চিন্তা করা।দুনিয়ায় এত ভাল ভাল জিনিস রেখে তোর মানুষের ঝামেলা ভাল লাগে।”

“আরে না আমি সমাজের উন্নয়ন ও করবো।সমাজ সেবা করা কি খারাপ নাকি?”

“তোকে ভোট দিবে কে?”

“আরে সবাই দিবে।আপনি সবার বাড়ি বাড়ি যাবেন।বয়স্ক মহিলাদের একটা করে গুল দিবেন সাথে পান আর জর্দা দিবেন দেখবেন তারা সিওর ভোট দিবেই।আর পুরুষ দের চা খাওয়াবেন রেগুলার বিকালে।আর মাইকে প্রচার করবেন ভোট চাই ভোটারের দোয়া চাই সকলের।ভোট দিবেন ভাই কোন খানে দিয়া আপার মার্কার মাঝ খানে।জনতার আপা দিয়া আপা।সে একজন বিশিষ্ট সমাজসেবক আপনাদের অচল রাস্তাঘাট মেরামত করে দিবে।”

“উনি বিরক্ত হয়ে বললেন মানুষ মরে যাবে তবুও রাজাকার দের ভোট দিবে না।যদি একবার জানে খান বংশের রাজাকার এবারের প্রার্থী মানুষ বলবে মাফ চাই।তোর দাদা তো মেয়র হয়েছিলো শুনেছি চাল ডাল সব জনতার টা মেরে খেয়ে ইয়া লম্বা ভুড়ি বানিয়েছে।”

“দেখুন মুখ সামলে কথা বলবেন আপনি।আমার দাদা কয়েক একর জমি বেঁচে মানুষ কে খাইয়েছে।অসভ্য লোক একটা।”

“আমি চাইনা জনতার জিনিস তুই খেয়ে ভুড়ি বানাস।মানুষ ভাববে এই মহিলা কি বারো মাস ই প্রেগন্যান্ট থাকে।আর আমাকে ভাববে অসভ্য পুরুষ। তোর বাবা বলেছিলো তোকে যেনো খালি পেটে না রাখি বাট তাই বলে ওইভাবে ও তো রাখতে পারি নাহ।”

“রিয়া আর বিভোর ভাই হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছে।”

আমি রাগে ফুঁশছি।উনি এই অসভ্য আধ্যাতিক কথা কিভাবে বানিয়ে বানিয়ে বলেন।সারাজীবন কি এভাবেই জ্বালাবেন।

কেটে গেলো আরো কয়েক টা মাস।মেহু আপুর হসপিটালে একটা ছেলে হয়েছে।ছেলেটা নাকি একদম ই আমার মতো হয়েছে দেখতে।বাড়িতে নতুন সদস্যর আগমনে সবাই অনেক অনেক খুশি।ইদানিং বাবা,আম্মুর সমাই কাটছে তাদের পুচকু নাতি নিয়ে।লেখাপড়ার চাপে আমি আর রিয়া যেতে পারি নি।ধীরে ধীরে আমাদের পুচকু টা বেড়েই চলেছে।দিন দিনে ওর মুখে ফুটছে হাসি।যে হাসির মায়ায় আমাদের পুরো পরিবার পাগল।

__________________________________
“রিয়া তুমি কিন্তু অনেক বড় হয়ে গিয়েছো, অনেক কেয়ারিং হয়েছো আগের মতো আর ঝগড়া করো না।দেখতে দেখতে এতটা বড় হয়ে গেলে আমি বুঝতেই পারলাম না।সেই পিচ্চি রিয়া যাকে খুব রাগিয়ে দিতাম আর সে কিচিরমিচির করে ঝগড়া করতো।আর আমি ইচ্ছা করেই রাগিয়ে আগুন বানাতাম।এখন রাগাতে চাইলেও রাগে না।একজন পাক্কা গৃহিণী কিভাবে হয়েছে বুঝলাম ই না।”

“কি বলো তুমি বিভোর আমার হাইট অনেক বছর ৫ ফিট সাড়ে তিন ই আছে আর তুমি বলছো কিনা আমি বড় হয়েছি কোথায় বড় হয়েছি বলো তো।এখনো তো সেই তোমার কাধ অবধি ই আছি।বড় হয়েছি কই আমি তো আকাশ ছুতে পারি না।”

“প্রাঙ্ক করলে তো আমার সাথে।লম্বা না হলেও বুদ্ধি বেড়েছে বেশ।এইযে যে প্রঙ্ক গুলা আমি করতাম সেগুলা তুমি করো রোজ।”

“তাই না। এবার বলো তো এত কষ্ট করে অফিসের কাজ ফেলে আমাকে ডেকেছো কেনো? ”

“তুমি বলোতো কেনো ডেকেছি আমার ময়না পাখিটা।”

“আমি তো জানিনা মিস্টার কেনো ডেকেছেন?এবার বলবেন প্লিজ।”

“আজ কত তারিখ রিয়া। ”

“২ ফেব্রুয়ারী। ”

“এই দিন কে শুভেচ্ছা জানাতে তোমাকে ডেকেছি। এই দিনে এই প্রথিবীতে আমার জন্য এক পৃথিবী ভালবাসা নিয়ে আগমন হয়েছিলো তোমার।শুভ জন্মদিন রিয়া পাখি টা আমার।”

“ওহ মাই গড বিভোর তুমি।তুমি এই দিন তারিখ মনে রেখেছো।আমার তো মনেই ছিলো না।”

“আমি থাকতেও তোমাকে কেনো মনে রাখতে হবে একটু বলবে প্লিজ।তুমি শুধু এটুকুই মনে রাখো বিভোর নামে এক পাগল তোমাকে ভীষণ ভালবাসে।”

“বিভোর কে বলে দিও রিয়া বউ সাজতে চাই।চারদিকে সবাই বিয়ে করেছে রিয়ার ও বউ সাজতে মন চাইছে খুব।রিয়ার একা একা ঘুম আসে না বিভোর ছাড়া।সে যেনো কাল ই বাবাকে বলে আমাদের বিয়ের কথা।”

“রিয়ার বাবা তার ডাক্তার মেয়েকে কি এই সাধারণ একজন ব্যাংকার এর সাথে বিয়ে দিবে।”

“একদম বাজে কথা বলবা না তো।রিয়ার জীবনে বিভোর একটা ভালবাসার পৃথিবী। বিভোর ময় পৃথিবীতে রিয়া সারাক্ষণ বিচরণ করে।রিয়া মানসিক তৃপ্তি খুজে পেয়েছে বিভোরের মাঝে।”

“মেডিকেল এর চার টা বছর কেটে গিয়েছে দেখতে দেখতে।সময় একটু একটু করে পেছনে চলে গিয়েছে।শুধু আমার আর বিহান এর সম্পর্ক আজ ও আগের মতোই আছে।”

কলেজে এসেছি আজ ও অন্যদিনের মতোই।নির্বান স্যার আজ ক্যান্টিনে ডেকেছেন।বিহান ভাই এর অনুমতি নিয়েই উনার সাথে দেখা করতে গিয়েছি আজ।

“দিয়া অনেক দিন ধরে একটা কথা বলবো বলা হয়ে ওঠে নি।”

শান্ত কন্ঠেই বললাম বলুন না স্যার কি বলবেন?

সেদিন আমি ভীষণ লজ্জা পেয়েছিলাম যেদিন জেনেছিলাম বিহান তোমাকে ভালবাসে।আমি লজ্জায় কিভাবে বিহান কে মুখ দেখাবো বুঝতেই পারি নি।আমি বিহান কে যখন বললাম তোর ফুফাকে আমার দিয়ার বিয়ের কথা বলেছি তখন বিহান বললো ওইটা আমার ছোট বেলার বউ।খুজে খুজে মেয়ে আর পেলি না। আমার শ্বশুরকে ফোন করে বল তুই এখন বিয়ে করতে পারবি না।আমি খুব অবাক হয়েছিলাম বিহান এটা কি বলছে।আমি বাকরুদ্ধ হয়েছিলাম। তোমাকে আমার ভাল লেগেছিলো বাট বিহানের মতো অতটা ভাল লাগেনি।বিহানের ভাল লাগার সাথে অন্য কারো তুলনা হয় না।

বিহান তোমাকে অনেক ভালবাসে দিয়া।যে ভালবাসা পৃথিবীর আর কেউ তোমাকে দিতে পারবে না।সেদিন বিহানের চোখে আমি পানি দেখেছিলাম আর খুব অবাক হয়েছিলাম।যখন শুনেছিলো তোমার বিয়ে আমাকে ভীষণ মন খারাপ নিয়ে বলেছিলো কার বিয়ে দিয়া মানে আমার দিয়ার বিয়ে।দিয়া ছাড়া অপূর্ণ আমার জীবন।দিয়া ছাড়া চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে যাবো আমি।ওই পিচ্চি আমার জীবনের আলো।পিচ্চির মুখের দিকে তাকালে ভীষণ ভাল লাগার তৃপ্তি পায় আমি।যা পৃথিবীর কোনো সুন্দরী মেয়ে আমাকে দিতে পারে নি।দিয়ার জন্মের পর কোনদিন আর কোনো সুন্দরী মেয়ে আমার চোখে পড়ে নি।পিচ্চিকে বড্ড ভালবাসি আমি।
জানো দিয়া বিহানের মতো ছেলেরা ভালবাসার দিকে ভীষণ জেদী হয়।ওরা যাকে একবার মন দেয় আর পেছনে তাকায় না।সামনে পেছনে তার থেকে সুন্দর কিছু খোজার চেষ্টাও করে না।ওদের রাগের মাঝে পিওর ভালবাসা থাকে।রাগি মানুষরা তাদের ভালবাসা রাগের মাধ্যমেই প্রকাশ করে।পৃথিবীর প্রতিটা ছেলে যেনো বিহানের মতো ভালবাসায় লয়াল থাকে।তাহলে পৃথিবীতে প্রেম প্রতরণা বলে কিছুই থাকবে না।

উনার কথা শুনে বিহান ভাই এর মুখ টা বার বার ভেষে উঠলো।ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো।

স্যার আমাকে আবার ও বললেন,বিহান আমাকে বলেছে তোমার কাজিন তোহাকে বিয়ে করতে।মেয়েটা নাকি অনেক ভালো।

এক্সসাইটেড হয়ে বললাম সত্যি করবেন?

বিহান বলেছে আমি আর না করি কিভাবে।কিন্তু যে ফ্যামিলির এক মেয়ের সাথে বিয়ে ভেঙে দিলাম সেই ফ্যামিলির অন্য মেয়ে কি আমার সাথে দিবে।বাট বিহান বললো সে ম্যানেজ করেছে বাকিটা।

আপনি আমার দুলাভাই হবেন তাহলে স্যার।ওয়াও স্যার।খানিক টা সময় গল্প করে বাসায় ফিরলাম।

আজ অনেক দিন পর নড়াইল এ যাচ্ছি।বিভোর ভাই আর রিয়ার বিয়ে খুব জাকজমক ভাবেই হবে।অনেক এক্সসাইটেড রিয়ার বিয়ের জন্য আমি আর বিহান ভাই।বিহান ভাই ড্রাইভ করছেন আর আমি উনার পাশেই বসে আছি।মুগ্ধ হয়ে দেখছি মানুষ টাকে। সেই ছোট্ট বেলা থেকে তার সাথে পরিচয় একদিন আমরা বুড়ো বুড়ি ও হবো কিন্তু আমাদের ভালবাসা টা এমন ই থেকে যাবে। উনার কাঁধে মাথা দিয়ে গাড়িতে বসে আছি আমি।উনি মাঝে মধ্য মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর ড্রাইভ করছেন।

বাড়িতে পৌছানোর সাথেই মামি এগিয়ে এলো।এই প্রথমবার মামিকে বললাম কেমন আছো মা?

আমার মুখে মা ডাক শুনে মামি খুব খুশি আজ।দিয়া মা তোদের আসার অপেক্ষায় ছিলাম।দে ব্যাগ গুলা দে আমার কাছে।

মামির ছেলে মানে আমার উনি বিহান বললো আম্মু তোমার এই ছেলে থাকতে তুমি কেনো ব্যাগ নিবে বলোতো।

আজ অনেক দিন বাদে মামির হাতে খাচ্ছি আমি।মামি নিজ হাতে আমাকে আর তার ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছে।মামি বলে উঠলেন কোথায় আজ এ বাসায় ছোট্ট নাতি নাতনি থাকবে তাকে খাওয়াবো তা নয় এই বুড় দের খাওয়াচ্ছি।আমি বলে উঠলাম চিন্তা করো না আগামি বছর ই পেয়ে যাবে।বিহান ভাই খাওয়া ছেড়ে উঠে গেলেন লজ্জায়।

খুব মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপ এ কিছু একটা দেখছেন বিহান ভাই।আমি রুমে গিয়ে উনার ল্যাপটপের সাটার অফ করে দিয়ে উনার কোলের উপর বসে বললাম এত ল্যাপটপ দেখে কি হবে ডাক্তার এবার আমাকেও একটু দেখেন।আপনাকে কাছে পেতে মন চাইছে ডাক্তার।

-আমি কি দূরে আছি ম্যাডাম।

-কাছে থেকেও দূরেই তো আছো ডাক্তার।মন সারাক্ষণ ল্যাপটপ রুগি এসব দিকে।আমি যে অপনার অভাবে অনেক বড় রুগি সেটা দেখেন না কেনো ডাক্তার।

-উনার বুকের সাথে মাথা টা শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে বললেন পিচ্চি টা মাঝে মাঝে এত পাগলামি করেনা।

-শুনুন না।

-বলো।

-একটা বেবি চাই আমার।আপনার মতো এমন গুলুমুলু বেবি।

-কপালে চুমু দিয়ে বললেন বেবি তো হবে।তোমার এই ছোট্ট পেটে আমাদের বেবি আসবে।

রিয়া আর বিভোর ভাই এর বিয়েটা ধুমধাম ভাবে হয়ে গেলো।ওরা দুজন আজ পৃথিবীর সব থেকে বড় সুখ টা পেয়েছে।

আমাদের ডাক্তারি পড়ার ও সমাপ্তি হয়েছে কিছুদিন।তোহা আপুর সাথে নির্বাণ স্যারের বিয়েটাও হয়ে গিয়েছে।সবাই চারদিকে যে যার মতো ভাল আছে।

বিহান ঘুমিয়ে আছে বিকালে আমি ওর চুল ধরে টেনে বললাম আজ না ভ্যালেন্টাইন্স ডে আপনি আমাকে উইশ করবেন না।উনি আমাকে এক টানে কোলের মাঝে নিয়ে বললেন তোমার সাথে আমার কিসের আলাদা ভ্যালেন্টাইন্স শুনি।আমি সব সময় ই ভ্যালেন্টাইন্স মনে করি বুঝলে পিচ্চি।

তার সাথে এভাবেই আমার দুষ্টু মিষ্টি সময় কেটে যাচ্ছে।একদিন অফিস থেকে এসে আমাকে সুয়ে থাকতে দেখে বললেন,

-দিয়া তোমার কি জ্বর হয়েছে এভাবে সুয়ে আছো যে?

-কপালে হাত দিয়ে দেখুন না ডাক্তার।

-তুমিও তো ডাক্তার।

-আমার ডাক্তার শুধু তুমি মিস্টার বিহান।

-কই কপালে তো কোনো তাপমাত্রা নেই?

-জানিনা শরীর ভাল লাগছে না।কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে আমার।

-কিসের?

-তিন মাস মিসিং আমার।আমি কোনো টেস্ট ও করিনি।কিন্তু আমার ও খাবারে তেমন অরুচি নেই।কোনো বমি বমি ভাব নেই, মাথাও ঘুরায় না।

-উনি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে গালে চুমু দিয়ে বললেন তোমার সন্দেহ যেনো সত্যি হয়। আমি ভীষণ খুশি হবো দিয়া। এত খুশি হবো তোমাকে বুঝাতে পারবো না।বাট তিন মাস না দুই মাস মিসিং তোমার।

-আপনি জানলেন কিভাবে?

-বাহ রে আমার বউ এর সব কিছুই আমার মুখস্থ।

পরের দিন ইউরিন টেস্ট করে পজিটিভ দেখে বিহান অনেক বেশী খুশি হলো।একটা ছেলের জীবনের বাবা হওয়ার মতো আনন্দ এই পৃথিবীতে আর কোন কিছুতে নেই।আমিও পেয়েছি পৃথিবীর চমৎকার এক ভাল লাগার অনুভুতি। মা হওয়ার চেয়ে আনন্দ পৃথিবীতে অন্য কিছুতে নেই।বিহান আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রইলো।অতি অনন্দএ ওর মুখে কোনো কথা নেই আমাকে জড়িয়ে ধরে অনুভব করছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখ।

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৬৫(অন্তিম অংশ)
#WriterঃMousumi_Akter

মন চাইছে আজ বৃষ্টি নামুক,ভীষণ বৃষ্টি যে বৃষ্টিতে প্লাবিত হবো দুজনে।কিন্ত এই অবেলায় কি বৃষ্টি নামবে মেঘেরা কি আমার প্রার্থণা শুনবে।ওই মেঘ তোমরা আমার চাওয়া গুলো বুঝো না কেনো বিহানের মতো।বিহানের যদি বৃষ্টি হয়ে নামার ক্ষমতা থাকতো এক্ষুনি আমার মন পড়ে বৃষ্টি হয়ে নামতো।খুব মন চাইছে এই সন্ধ্যায় বৃষ্টি নামুক তার সাথে এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা উপভোগ করি।

দরজায় কলিং বেল বাজতেই ছুটে গেলাম।দরজা খুললাম হাঁপাতে হাঁপাতে উনার ক্লন্ত মুখে আমাকে দেখে তৃপ্তির হাসি।বিন্দু বিন্দু ঘামে গায়ের শার্ট ভিজে গিয়েছে।আমি উয়ার ঘামে ভেজা শরীরে দুই হাতে জড়িয়ে ধরলাম।উনার এই ঘামে ভেজা শরীরের গন্ধ টা তে অভ্যস্ত আমি,ভীষন অভ্যস্ত,।উনি আমাকে তুলে বললেন দিয়া এভাবে ছুটে আসতে নিষেধ করেছি না।কোথায় পড়ে যাবে আমাদের বেবি আর তুমি দুজনের ই ক্ষতি হতে পারে।এইভাবে ছুটে আসে কেউ পাগলি।এই ঘামযুক্ত শরীরে প্রচুর জীবানু থাকে তুমি আর কখনো আমি বাইরে থেকে এলে এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরবে না।

-উনার শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললাম এগুলো আমার নেশা।আপনার কাছে ছুটে যাওয়ার মতো নেশা নেই।

-কিছু চাই নাকি পাগলি?মুখ টা এমন গম্ভীর গম্ভীর কেনো?

-জানেন আমার না খুব বৃষ্টি দেখতে মন চাইছে বাট হচ্ছেই না।আপনি একটু বলুন না মেঘ কে আমাদের ঘরে বৃষ্টি দিতে।

-তাই প্রকৃতির সাথে এত অভিমান।

-হ্যাঁ।

-আজ সন্ধ্যায় আমার বৃষ্টি চাই ই চাই।আপনার বুকে মাথা রেখে বৃষ্টি উপভোগ করতে চাই আজ।

-এই যে মেঘ মশাই রা আমার বৃষ্টিবিলাসি বউ এর আজ তোমাদের প্রয়োজন প্লিজ কাম।এই যে বলেছি বৃষ্টি আসবে।

-আপনি যখন বলেছেন নিশ্চয়ই আসবে বৃষ্টি।

-শ্যাম্পু করবে না চুলে আজ।

-আজ না আগামিকাল করবো।

-আজ ই করো সাওয়ার নিতে চলো আমি সুন্দর ভাবে শ্যাম্পু করিয়ে দিবো তোমায়।

-আপনার হাতে শ্যাম্পু করার ভীষণ অভ্যাস হয়ে গিয়েছে জানেন।আমি বড্ড অলস হয়ে গিয়েছি এখন।নিজে থেকে অনেক কিছুই করতে মন চাই না আমার।সব কিছু আপনার উপর ডিপেন্ডেন্ট হয়ে গিয়েছে।

-আমি যে তোমার অভ্যাসে পরিনত হতে পেরেছি এর চেয়ে বড় পাওয়া কি আর কিছুতে আছে দিয়া।

সাওয়ার এ উনার সাথে এই প্রথমবার না আমার এর আগে সহস্রদিন উনার সাথেই সাওয়ার নিয়েছি আমি।উনি শ্যাম্পুর ফ্যানা তুলে পুরা মাথা সাদা মেঘের ন্যায় করে ফেলছেন।মানুষ টা কত যত্ন সহকারে আমার মাথায় শ্যাম্পু করে দেন রেগুলার।উনার হাত ধরে বললাম আসুন না আজ আপনার মাথায় ও আমি শ্যাম্পু করিয়ে দেয়।উনি বাচ্চার ছেলের মতো মাথা টে এগিয়ে দিলেন।আমি উনার ছোট্ট চুলে আঙুল গুজে শ্যাম্পু করে দিলাম।গোসল শেষে আমার মাথা মুছিয়ে উনি নিজের হাতে গাড় লাল একটা শাড়ি পরিয়ে দিলেন।উনি খালি গায়ে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন।পরনে সাদা টাওয়াল উনার।কেনো জানি ভীষণ লজ্জা লাগছে হঠাত।এত দিন বিয়ে হয়েছে অথচ আজ ও আমার লজ্জা আগের মতোই থেকে গিয়েছে।সহস্র বার উনাকে আলিঙ্গন করেও আমার লজ্জা সেই আগের মতোই থেকে গিয়েছে।উনার বুকের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।সুঠাম দেহের অধিকারী বিহান ভাই।যাকে দেখে ভাল লাগার শেষ নেই।যার কেয়ার,শাষন,ভালবাসা কোনটায় কম নয়।একটা মানুষ এতটা দায়িত্বশীল কিভাবে হতে পারে।উনার বুকের আমার ডান হাতের পাঁচ আঙুল লাগিয়ে হাতের ছাপ লাগিয়ে দিলাম।ভীষণ লাজুক ভাবে চাহনি দিলাম।উনি আমার চিবুক ধরে উঁচু করে বললেন বার বার সহস্রবার এই নতুন লাজুকতার রুপ দেখেছি তোমার মাঝে।প্রতিদিন নতুন রুপে আমার কাছে ধরা দিয়েছো তুমি।

জানালায় ভীষণ হাওয়ায় দিচ্ছে সত্যি কি বৃষ্টি নামবে আজ।প্রকৃতি কি আমার চাওয়া পূরণ করবে।মাত্রই সন্ধ্যা নেমেছে বাইরে টুপটাপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে।আমি দৌড়ে গিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম।বেলকনির গ্রিল দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ধরছি।হাতের উপর টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে।বিহান ভাই আমার কোমর এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আরেক হাত আমার হাতের নিচে রাখলেন।উনার হাতের উপর আমার হাত রয়েছে সেখানে পড়ছে বৃষ্টির টুপটাপ ফোঁটা।উনি কিছুটা পানি আমার চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলেন আমার মুখ ঝাড়ি দিতেই ভেজা চুল উনার চোখ মুখ স্পর্শ করলো।

উনার দুই হাতে আমাকে ভীষণ আদরের সাথে জড়িয়ে ধরে বললেন,

-শ্যামাপাখি জানো আমি না বড্ড ছেলে মানুষ হয়ে গিয়েছি।আমি বাইরের সবার সাথে এক রকম আর তোমার কাছে এলে অন্যরকম হয়ে যায়। জীবনে কতশত স্মৃতি আমার তোমাকে ঘিরে।আমার জীবনে কোনো মেয়ের সাথে একটা ফান ও আমি করিনি।জানো কেনো করিনি আমার মনে হতো আমার সব কিছুর প্রতি আমার শ্যামাপাখির অধিকার।অহেতুক একটা মেয়েকে ইমপ্রেস করতে দুই চারটা কথা বলে লাভ কি।আদেও কি কোনো আছে।যাকে ভালবাসতে পারবো না তাকে ইমপ্রেস করে লাভ কি।দুই চার টা বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে হয়তো মেয়েদের ইমপ্রেস করা যায়।মেয়েদের কাছে রোমিও হওয়া যায়, বন্ধুদের কাছে প্রাউড ফিল করা যায় কত গুলা মেয়েকে ইমপ্রেস করতে পেরেছি।এটা কি কোনো পুরুষের কাজ।প্রকৃত পুরুষ তো সেই যে একজনের জীবনে রোমিও হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।শতজন কে শতভাবে ইমপ্রেস করে ভাল না বেসে একজন কে শতভাবে ইমপ্রেস করে শত উপায়ে ভালবাসার নাম ই প্রকৃত ভালবাসা যেটা প্রকৃত পুরুষ করে থাকে।শুধু কি গায়ের ভাল রং, ভাল হাইট হলেই প্রকৃত পুরুষ হওয়া যায়।ভেতরের মনুষ্যত্ত্ব টাই মেইন।আমার মন এই পিচ্চি শ্যামাপাখিতে আসক্ত আজীবন।

-আপনি কেনো সুন্দরী বেছে নিলেন না বলুন তো?

-পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারীতে আসক্ত আমি।তাছাড়া রুপ চেহারা এগুলো ক্ষনিকের জন্য।আজীবন স্হায়ী নয়।যেখানে মানসিক শান্তি মিলে সেখানে রুপ চেহারা, হাইট সব তুচ্ছ।

উনার প্রতিটা কথাই মুগ্ধ করার মতো।উনি না থাকলে বুঝতাম ই না চেহারা,হাইট,যোগ্যতা,বয়স এগুলো কিছুই না ভালবাসার কাছে।

আমাদের বাসায় বিভোর ভাই রিয়া, মেহু আপু ভাইয়া,তোহা আপু তিয়াস ভাইয়া,নির্বান স্যার, বিভা আপু দুলাভাই,মামা মামিরা,বাবা,মা কাকি মনি, কাকুরা সবাই এসছে।আজ আমাদের ম্যারেজ ডে।সবাই অনেক অনেক গিফট নিয়ে এসছে।সোফায় বসে মামা,বাবা গল্প করছে।মেহু আপু বাবুকে সামলাতে বিজি আছে।আম্মু আমার রুম গোছাচ্ছে।কাকি মনি,মামি রা সবাই রান্নাঘরে বিজি আছে।রান্নার জিনিসপত্র গোছাচ্ছে।রুই মাছের মাথা দিয়ে মুড়ি ঘন্টা, খাসি,মুরগি,ছোট মাছ,চিংড়ি রান্না হচ্ছে।বাসায় আজ প্রাণ ফিরে পেয়েছে সবার আগমনে।আমি বেডের উপর বসে আছি বিহান ভাই,বিভোর ভাই,শুভ ভাইয়া আর দুলাভাই কেরাম খেলছে বারান্দায়।আমি বারান্দায় যেতেই বিহান ভাই আমার দিকে তাকাতেই উনার নিশানা হারালেন।আমি আর বিহান ভাই অজস্র বার কেরাম খেলেছি।রাতে দুজনে ব্যাডমিন্টন খেলেছি।রান্না শেষে সবাই আজ কবজি ডুবিয়ে খেলো।

কিছুক্ষণ পরেই দেখি বিভোর ভাই আর রিয়া দুজনে মারামারি করছে কি নিয়ে জানিনা।রিয়া বিভোর ভাই এর পিছে ছুটছে আর বিভোর ভাই দৌড়াচ্ছে।ছুটতে ছুটতে রিয়া বিভোর ভাই এর গায়ের উপর গিয়ে পড়লো।বিভোর ভাই কোলে তুলে পাশের রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন অতপর কি হলো জানিনা।

সবার গল্পের মাঝেই আমার লেবার পেইন শুরু হলো।ধীরে ধীরে ব্যাথা ক্রমশ বাড়তে শুরু হলো।বিহান দ্রুত গাড়ি বের করলো।আমাকে গাড়িতে করে হসপিটাল নেওয়া হলো।বিহান শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরে রেখেছে।ওর চোখে মুখে ভীষণ চিন্তা। আমি যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছি বিহান আমার কপালে চুমু দিয়ে বললো কিছু হবে না তোমার।ওর ভালবাসায় সত্যি কিছু হলো না আমার।খুব সহজেই নরমাল ডেলিভারি হলো আমার।বিহানের মতো কিউটের ডিব্বা মেয়ে হলো আমার।যার নাম বিহান সকাল রাখলো।

হসপিটাল থেকে ফেরার পর সবাই আমাদের বেবি নিয়ে ভীষণ আনন্দের সাথে দিন কাটাচ্ছে।

আজ আবার ও একটি বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পেলাম।প্রচন্ডবৃষ্টিতে সুয়ে আছি। বিহান আমাকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে আছে।বাইরের ঠান্ডা হাওয়া প্রেমিক প্রেমিকা যুগলের মাঝে প্রেমময় আসক্তির সৃষ্টি করছে।বিহান আলতো পরশের ছোয়ায় আমাকে কাছে টানছে।আমি ওর গালে চুমু দিয়ে বললাম আমি কি তোমার কাছে পূরন হবো না।ও আরো শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো উহু আমার শ্যামাপাখি পিচ্চি আমার বুকে পিচ্চি হয়েই থাকবে।বার বার বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ফিরে আসুক। আর সাক্ষী হয়ে থাকুক আমাদের ভালবাসার।

“কোন প্রার্থনা নেই? কিছুই চাওয়ার নেই
তোমার রক্তের স্রোতে বাসনার বুনোজল আছে।
তোমার অরন্যে আছে অপরুপ চিতল হরিন,
সাদা খরগোশ, সবুজ হরিয়াল।
তোমার কিনারে আছে জলের পরশ,
শিমুল বৃক্ষের ছাঁয়া, নিরতিশয় মিষ্টি বায়ু।
তোমার পরনে আছে শীতের চাদর
আর পায়ে কুয়াশা মাখানো জলকণা।

কোন প্রার্থনা নেই? কিছুই চাওয়ার নেই
আঁধার দেখা তোমার ভাষায়।
আঁধারে পোকা জন্মে, জন্মে কালো।
তোমার আঁধার রাখে জড়ায়ে তোমার খাঁচায়।
তোমার জীবন শুধু আমাকে তাড়ায়।
খেয়াঘাটে অপর পাড়ে শূন্য চোখে
অদেখা মেঘ হয়ে আমার অবস্থান।
বিশ্বাসের কাছে আকাঙ্ক্ষার মূল্য আছে,
তাই জন্ম নেয় নীল পোকা।
শীতল ব্যাথায় বাঁধা হরিনটিও বোঝে
অরন্যের শৃঙ্গ, জলের উত্কলিকা।
শুধু কেবলি তোমার মস্তিষ্কে ধরে না।
কোন সংশোধনী নেই? কিছুই পাওয়ার নেই
শুধু তোমার ভালো থাকাটাই পার্থিব।

(ফেসবুক থেকে কালেক্টেড)”

বিহানের সাথে আমার ভালবাসা চলুক আজন্মকাল।আমাদের প্রেমের যাত্রা হউক দীর্ঘ।

সমাপ্ত।

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here