অপূর্ণতা পর্ব ২৬+২৭+২৮+২৯

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_২৬_২৭

তা হয় না। অন্য কোনো সময় না হয় আবার এসে থাকবো।

তুই যা ভালো মনে করিস্।মনে মনে খুশি হয়ে বলেন, একদিনেই আমার মেয়েটা সংসারী হয়ে গেছে। আগে আমাদের ছাড়া কোথায়ও একদিন পর্যন্ত থাকতে পারতো না। এখন কত সুন্দর করে শ্বশুরবাড়িতে মানিয়ে নিয়েছে।আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যাতে তোকে সব- সময় এই ভাবে হাসি- খুশি রাখে।আরিয়ান যেন তোকে নিজের মন থেকে মেনে নেয়।তুই না বললে কি হবে আমি ঠিকই বুঝেছি আরিয়ান তোকে এখনো পরিপূর্ণ ভাবে মেনে নিতে পারেনি।

কোথায় হারিয়ে গেছো।এইভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে খেয়ে নাও। এমনেটেই ডিসেম্বর মাস অনেক শীত পড়েছে আর এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে পরে ঠান্ডা লেগে যাবে, তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরো।

মা হেসে বলেন, হুমম যাচ্ছি। তুইও ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে শুয়ে পর্র।জামাই হয়তো তোর জন্য অপেক্ষা করছে তাড়াতাড়ি যা।

অদ্রিতা অন্যমনস্ক হয়ে বলে, হুমম যাচ্ছি।

আমাকে তো এখনো স্ত্রী হিসেবেই মেনে নিতে পারেনি আবার অপেক্ষা করবে এইটা তো কল্পনাই করা যায় না। আমি রুমে না ঢুকলেই হয়তো ওনী খুশি হবেন মনে মনে কথা গুলো ভাবলো কিন্তুু মুখে কিছু না বলে রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দেখে আরিয়ান এখনো ঘুমাইনি শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছে। সে রুমে এসে দরজা লক করে ওয়াশরুমে চলে যায়। একটু পরে ফ্রেস হয়ে এসে আয়নার সামনে এসে চুলগুলো খুলে একটু আঁচড়িয়ে পরে আরিয়ানের সামনে গিয়ে বলে,আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।আমাকে পছন্দ না হওয়ার পরেও আমার পরিবারের সবার সাথে এতভালো ব্যবহার করার জন্য। সত্যিই আপনি অনেক ভালো, তা না হলে আমাকে পছন্দ না হওয়ার সত্ত্বেও আমার পরিবারের সাথে এত ভালোভাবে কথা বলতেন না।

আরিয়ান ফোনের দিকে তাকিয়েই বলে, হুমম। তোমার কাজ শেষ হলে লাইট অফ করে দিও, আমি ঘুমাবো। আর কিছু না বলে শুয়ে পরে।

অদ্রিতা লাইট অফ করে আরিয়ানের ওই পাশে এসে ঘুমিয়ে পরে।পরের দিন সকালে নাস্তা করে তারা চলে আসে। বাড়িতে এসে কলিং বেল বাজাতেই তাদের বাড়ির কাজের লোক দরজা খুলে দেয়। পরে বলে…. বউমনি তুমি এত সকালেই চলে এসেছো।ম্যাডামকে ডাক দিচ্ছি, এই বলে তিনি আরিয়ানের মাকে ডাক দেয়।

আরিয়ানের মা এসে বলে,তোমাদের কোনো অসুবিধা হয়নি তো?

অদ্রিতা হেসে বলে, না মা। আমাদের আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি।

তোমরা অনেকটা পথ যার্নি করে এসেছ রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাও।

ঠিক আছে মা। এই বলে অদ্রিতা আর আরিয়ান রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেয়। তারপর সে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে সবার জন্য রান্না করে নেয়।

অন্যদিকে,,,,,,,,,,
নিলয় সকাল সকালই অফিস চলে গেছে। এমনিটে নিলয় অফিসে সকালেই আসে কিন্তু আজ প্রায় ১ ঘন্টা আগেই অফিসে চলে এসেছে। আরও দুই এক জন ছাড়া পুরো অফিসে আর কেউ নেই কারণ ৯ টা সময় কাজ শুরু হয়। সবাই ওই সময়ই আসে।আজ তার একটা কাজ আছে তাই একটু তাড়াতাড়ি এসেছে।এসেই আসিফকে ফোন দেয়। আসিফ হলো নিলয়ের অনেক ভালো বন্ধু।সে এখন পুলিশের উচ্চ পদস্থ একজন কর্মকতা। আসিফের বাবা নিলয়ের অফিসে কাজ করতো কিন্তু হঠাৎ একটা দুর্ঘটনায় তার বাবা মারা যায়। তখন তার বয়স ১০ বা ১১ বছর হবে। তখন থেকেই নিলয়ের বাবা তাদের দেখাশুনা করে আর তার জন্য সে এখন এই পর্যায়ে আসতে পেরেছে।তাই আসিফ নিলয়কে আর তার বাবাকে অনেক সম্মান করে আর নিলয়ও আসিফকে নিজের ভাইয়ের থেকে কম মনে করে।

আসিফ ফোন রিসিভ করে বলে, এতো দিন পরে ফোন করলি।আমাকে তো ভুলেই গেছোট্ মনে হয়।

মার খাবি,,,,, তোকে আমি ভুলতে পারি এইকথা কি করে বলতে পারলি?আচ্ছা বাদ দে,আমার না তোর কাছ থেকে একটা হেল্প চাই। আমাকে একজনের ইনফরমেশন এনে দিতে হবে, তুই পারবি?

তোর জন্য আমি জীবনও দিয় দিতে পারবো সামান্য ইনফরমেশন সে আর কি জিনিস। তুই শুধু বল কার ইনফরমেশন লাগবে?

নিলয় আসিফকে সব কিছু খোলে বলে।

আসিফ সব কিছু শুনে বলে, এই ব্যপার তুই কিছু চিন্তা করিস্ না। আমাকে জাস্ট একটা দিন সময় দে সব ইনফরমেশন পেয়ে যাবি।

তুই আমার অনেক উপকার করলি।মাথা থেকে অনেক বড় একটা চিন্তা নামলো।এখন শুধু এক দিনের অপেক্ষা।তবে কাল বিকালে দেখা হচ্ছে।আচ্ছা এখন রাখি,,,,,,

আচ্ছা,রাখ্।আমারও কিছু কাজ আছে।

নিলয় ফোন কেটে দিয়ে মনে মনে বলে, তুমি না বললে কি হবে সত্যিটা তো আমাকে জানতে হবে। আর শুধু একটি দিনের অপেক্ষা পরে আমি সবকিছুর সত্যি জেনে যাবো।

এদিকে অদ্রিতার রান্না শেষ হলে সবাই খেয়ে নেয়।পরে সবাই যার যার রুমে গিয়ে রেস্ট নেয়।

বিকালে অদ্রিতা তাদের বাড়ির বাগানে যায়। সেখানে অনেক প্রকার ফুলের গাছ লাগানো।এখন ডিসেম্বর মাস বিকালেই বাহিরে হাল্কা কুয়াশা পড়েছে আর হাল্কা শীতও লাগছে।বাগানের একপাশে বিভিন্ন রকমের গাধা ফুল গাছ লাগানো তাতে ফুল ফোঁটে আছে। সে গিয়ে ফুলগুলো ছোঁয়ে দেখলো পরে তার ঘ্রান নিল। অন্যদিকে বিভিন্ন রকমের গোলাপ ফুল লাগানো।সাদা,লাল আর গোলাপি রঙের গোলাপ ফুল ফোঁটে আছে। সাদা আর গোলাপি রঙের গোলাপ ফুলের গাছের কাছে যায়।ফুলগুলো দেখেই তার আগের কথা মনে পরলো!

একদিন নিলয় কলেজ কম্পাস থেকে ভিতরে যাওয়ার সময় হঠাৎই একজায়গায় দাঁড়িয়ে পরে, অদ্রিতা তার পিছনেই ছিল সে দাঁড়িয়ে পরায় সে তাকে জিজ্ঞেস করে কি হলো নিলয় ভাইয়া দাঁড়িয়ে পরলেন কেন? ক্লাসে যাবেন না?

হুমম, যাবো তো। দেখো গোলাপগুলো অনেক সুন্দর তাই না। আমার অনেক পছন্দ এই সাদা আর গোলাপি রঙের গোলাপ।আমি যত অপসেটই থাকি না কেন এই ফুলগুলো দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।

অদ্রিতা তখন আর কিছু বলেনি।

অদ্রিতা আগের কথা মনে করতে চায়নি তবুও ফুলগুলো দেখে তার আগের কথা মনে পরে গেছে।তাই সে নিজেকে সামলিয়ে অন্যদিকে চলে যায়।বাগানে কয়েকটা ফলের গাছও লাগানো আছে।অনেকদিন পরে এই খোলা আবহাওয়ার এসে তার অনেক ফ্রেস লাগছে।মন ভালো লাগছে।

এই খোলা পরিবেশে থেকে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে তার খেয়াল নেই।হঠাৎই খালার কথায় হুশ আসে,,,

বউমনি সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়।এই শীতে এতক্ষন এইভাবে থাকলে আবার আপনার ঠান্ডা লেগে যাবে। গিয়ে গরম কাপড় পরে নিন।

উহু আর পাঁচ মিনিট পরে যাচ্ছি। আপনি গিয়ে সবাইকে চা দিয়ে দেন।এখন তো সবার চা খাওয়ার সময়।

আচ্ছা বউমনি,আমি যাই।

অদ্রিতা আর কিছুক্ষন বাগানে থেকে পরে ভিতরে যায়।সবাই ডয়িং রুমে বসে আছে। অদ্রিতা গিয়ে তার শ্বাশুড়ির সাথে বসে, ওনার সাথে গল্প করে।
একটু পরে খালা চা নিয়ে আসলে,সে সবাইকে চা দেয় আর নিজের জন্যও চা নেয়।পরে আবার গল্প করতে থাকে।
.
.
.
চলবে…….
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_২৮

নিলয় অথৈকে প্রায় ৩-৪ বার ফোন দেওয়ার পরে অথৈ ফোন রিসিভ করে বলে,আসসালামু আলাইকুম। আপনি কে বলছেন?

ওয়ালাইকুম আসসালাম।আমি নিলয় বলছি।তোমার সাথে কিছু কথা ছিল?

নিলয়ের নাম শুনেই অথৈ ভয় পেয়ে যায়। ভাবতে থাকে এত বছর পরে নিলয় আবার তাকে ফোন কেন করেছে?তাছাড়া এইটা তো নতুন নাম্বার নিলয় এইটা কি করে পেলো?নিলয় আবার সব কিছু জেনে গেলো নাকি।উফফ,,, আর ভাবতে পারছি না।

অথৈ নিজেকে সামলিয়ে বলে,সরি ভাইয়া।প্রায় ২ বছর পরে ফোন দিয়েছেন তো তাই প্রথমে চিনতে পারি নি।তাছাড়া আপনি আমার ফোন নম্বর কোথায় পেলেন?আর আমার সাথে আপনার কি কথা থাকতে পারে?

নিলয় গম্ভীর স্বরে বলে, এত কিছু তোমাকে জানতে হবে না।আমি যা বলছি শুধু তাই শুনো? আমি জানতে চাই তুমি অদ্রিতাকে আমার বিষয়ে কি বলেছো? তোমাকে দুই দিনের মধ্যে ঢাকায় আসতে হবে।অদ্রিতা আমার কোনো কথা বিশ্বাস করবে না।তুমি তাকে সব সত্যি খোলে বলবে।

অথৈ না বুঝার অভিয়ন করে বলে,মানে!আমি তো আপনার সম্পর্কে নিজেই কিছু জানি না তো অদ্রিতাকে কি বলবো?আমি এখন ঢাকা আসতে পারবো না।রাখি,,,,

নিলয় রাগে কর্কশ স্বরে বলে,আমি যখন বলছি তোমাকে ঢাকায় আসতে তবে তোমাকে ঢাকায় আসতেই হবে।তোমার হাতে আর অন্য কোন অপসন নেয়।আমি তোমার সম্পর্কে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে নিয়েছি।তুমি ৬ মাস হলো বিয়ে করেছো। এখন চট্টগ্রামে স্বামীর সাথে থাকো।তোমার হাজবেন্ড ব্যাংকে জব করে।ওনার ফোন নম্বরও আমার কাছে আছে।আমি চাইনা তোমাদের সম্পর্কটা নষ্ট হউক,,,,,

অথৈ কিছুটা ভয় পেয়ে বলে,নষ্ট হবে মানে,কি বলতে চাইছেন আপনি?

নিলয় বাঁকা হেসে বলে,তোমাকে তো এটতা বোকা বলে আমার মনে হয় না।আমি কি বলতে চাইছি তা তুমি অনেক ভালো করেই বুঝতে পেরেছো।তবুও যদি না বুঝতে পারো তবে বলছি, তোমার স্বামী নিশ্চয়ই তোমার অতীত সম্পর্কে জানে না।আমার কাছে সব কিছুর প্রমান আছে।যদি তুমি রাজি না হও তবে সব কিছু তোমার স্বামীর কাছে পাঠাতে আমার বেশি সময় লাগবে না।এখন নিজেই ভেবে দেখো কি করবে?

নিলয়ের কথা শুনে অথৈ ভয় পেয়ে যায়। নিলয় যদি সব কিছু সত্যি সত্যি তার হাসবেন্ডকে বলে দেয় তবে তার স্বামী তাকে ভুল বুঝবে।হয়তো তার সুখের সংসার ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।সে চায় না অতীতের করা কোন ভুলের জন্য তার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নষ্ট হউক। তাই ভয়ে ভয়েই বলে ঠিক আছে আসবো।কোথায় আসতে হবে?

পরে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিব। কিন্তু তুমি যদি তোমার কথার খেলাপ করো তবে এর পরিণতি কটতা খারাপ হতে পারে তা তো নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো। আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়,,,,

কেটে যায় দুই দিন_
নিলয় অনেকক্ষন ধরে একটি রেস্টুরেন্টে বসে আছে।অপেক্ষা করছে অথৈ এর জন্যে।
প্রায় একঘণ্টা ওয়েট করার পরে অথৈকে রেস্টুরেন্টে ঢুকতে দেখলো নিলয়।রেস্টুরেন্টে ঢুকে অথৈ এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে থাকলো নিলয়কে হঠাৎই নিজের সামনে নিলয়কে দেখতে পায় সে।
নিলয় অথৈকে সামনের দিকে একটি টেবিলে বসতে বলে।যদিও রেস্টুরেন্টটি শহরের ভিতরে তবুও এখানের পরিবেশটা বেশ নিরিবিলি। অথৈ আর নিলয় টেবিলে গিয়ে বসে।

নিলয় গম্ভীর স্বরে বলে,আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না। যা বলার সুজাসুজি বলছি।তুমি আমার নামে অদ্রিতা কি বলেছো? যার জন্য ও আমাকে ঘৃণা করে।আমি বিদেশে যাওয়ার পরে কি এমন হয়েছিল যার জন্য পরে আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখেনি, আমিও অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুতেই তার সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারি নি। ওই দিন ওর সাথে কথা বলে যা বুঝলাম তাতে আমি সিউর তুমি সব কিছু জানো।সো এখনি সব সত্যিটা আমাকে বলবে।

নিলয়ের কথা শুনে অথৈ বুঝতে পারে অদ্রিতা নিলয়কে কিছু বলেনি। আসল সত্যি নিলয় জানে না আর সে যদি এখন মিথ্যা বলে তবে নিলয় ধরতেও পারবে না।তাই সে ভাবছে নিলয়কে এখন মিথ্যা বলবে।

অথৈ এর চুপ করা দেখে নিলয়ের রাগ উঠে যায়।তাই একটু জোরেই বলে,আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি।তার উত্তর দাও,আন্সার মি।ডেমিট,,,,,,নিলয়ের কথা শুনে রেস্টুরেন্টের অনেক মানুষ তাদের দিকে তাকায়।পরিস্থিতি বুঝে নিলয় নিজেকে শান্ত করে।

অথৈ খুব শান্ত স্বরে বলে,আমি সত্যিই এই বিষয়ে কিছু জানি না। অদ্রিতাকে আমি আপনার বিষয়ে কিছু বলিনি।হয়তো অদ্রিতা অন্য কাউকে পছন্দ করতো তার জন্যই হয়তো ও আর আপনার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেনি। এখন যখন ফিরে এসেছেন সে আমাকে এই বিষয়ে ফাঁসাতে চাইছে যাতে আপনার মনে হয় সব কিছুর পিছনে আমি দায়ি।আমি আগেই বলেছিলাম এই অদ্রিতা আপনার যোগ্য না কিন্তু আপনি তখন আমার কোনো কথা শুনেন নি।এখন দেখলেন তো,,,

অথৈ আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিলয় দাঁতে দাঁত চেপে কর্কশ স্বরে বলে উঠে,shut up.I say Shut up.তোমার সাহস কি করে হয় অদ্রিতার নামে মিথ্যা বলার?আসলে ভুলটা আমারই।আমি কি করে ভাবতে পারলাম তোমার মতো মেয়ে এত সহজে আমাকে সত্যিটা বলে দিবে?just wait and see,,,, এখন আমি কি করি?এই বলে নিলয় নিজের ফোন বের করে।

অথৈ কিছুটা ভয় পেয়ে নিলয়কে জিজ্ঞেস করে, আ… আপনি কাকে ফোন করছেন?

নিলয় ফোন অথৈ এর স্বামীর ডায়াল করে অথৈকে দেখায় পরে তাকে কল করে,
নিলয়ের এই কাজে অথৈ অনেক ভয় পেয়ে যায়।তাই আমতা আমতা করে বলে,প্লিজ এমন করবেন না।আমি সব সত্যি আপনাকে বলবো তবুও প্লিজ ওনাকে কিছু বলবেন না।

নিলয় বাঁকা হেসে বলে,আগে তো ভালো করেই বলেছি কিন্তু তুমিই তো শুনো নি।এখন আমার আর কিছু করার নেই।অনেক লেট করে ফেলেছো।এখন তো তোমার স্বামী কি জানি নাম? ও মনে পরেছে,,, মি. সায়ান।ওনাকে তো সব সত্যিটা আমাকে জানাতেই হবে।নিলয় আগেই ফোন স্পিকারে রেখে দেয়, যাতে অথৈ সব শুনতে পায়।সায়ান ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলে,নিলয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই অথৈ নিলয়ের হাত থেকে ফোন নিয়ে কেটে দেয়।তা দেখে নিলয় বাঁকা হাসি দিয়ে অথৈ এর হাত থেকে ফোন নিয়ে নেয় আর বলে একবার কেটে দিয়েছো তো কি হয়েছে?আবার দিচ্ছি।বলেই আবার সায়ানকে ফোন দিতে নেয়!

অথৈ করুন স্বরে বলে,প্লিজ এমনটা করবেন না। আমি আর কোন মিথ্যা কথা বলবো না।সব সত্যি বলবো।প্লিজ একটা চান্স দেন,,,,,,,

নিলয় অন্যদিকে ফিরে বাঁকা হাসি দেয়,পরে অথৈ এর দিকে তাকিয়ে বলে ওকে এটাই তোমার লাস্ট চান্স। এখন যদি সব সত্যি না বলো তবে এর পরিণতি কি হবে তা তুমি আমার থেকে ভালো জানো।

আমি এখন আর কোনো মিথ্যা বলবো না।পরে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু নিলয়কে খোলে বলে।অথৈ এর কথা শুনে রাগে নিলয়ের চোখ – মুখ পুরো লাল হয়ে যায়।অথৈ এর জায়গায় যদি কোনো ছেলে হতো তবে এতক্ষনে নিলয় তার হাড়গুর ভেঙে ফেলতো কিন্তু মেয়ে বলে কিছু করতেও পারছেন।সে ভাবতে পারছে না একটা মেয়ে এতটা স্বার্থপর আর নিকৃষ্ট চিন্তা কি করে হতে পারে?

নিলয়ের অবস্থা দেখে অথৈ ভয় পেয়ে যায়।নিলয়কে এতটা রাগ করতে সে আগে কখনো দেখেনি। তাই ভয়ে ভয়েই বলে,আমি যা জানতাম তার সব কিছু আপনাকে বলে দিয়েছি।আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।আসলে তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না।আপনি আমাকে অপমান করেছিলেন ওই অদ্রিতার জন্য, আমার ভালোবাসাকে প্রত্যাখান করেছিলেন তাই রাগের মাথায় এইসব করে ফেলেছি।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন,,,,,

নিলয় নিচের দিকে তাকিয়ে দুইহাত শক্ত করে মুঠ করে রাখে।আসলে ও এখন নিজের রাগ কন্টোল করছে।সে চাইছে না এই পাবলিক প্লেসে কোনো সিন ক্রিয়েক্ট করতে। তাই যথা সম্ভব নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।তার চোখ দিয়ে যেন আগুনের ফুলকি ঝড়ছে।

নিজেকে একটু শান্ত করে নিলয় অথৈকে অদ্রিতার ফোন নম্বর দেয় আর বলে তাকে ফোন দিয়ে এখানে আসতে বলতে।আর এটাও বলে দেয় অদ্রিতা যেন এইটা না জানে যে নিলয় তাকে এখানে ডেকেছে।

অথৈ কিছুটা ভয়েই নিলয়ের হাত থেকে ফোন নম্বর নেয় আর অদ্রিতাকে ফোন দেয়!
.
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_২৮_২৯

(২৮)

নিলয় অথৈকে প্রায় ৩-৪ বার ফোন দেওয়ার পরে অথৈ ফোন রিসিভ করে বলে,আসসালামু আলাইকুম। আপনি কে বলছেন?

ওয়ালাইকুম আসসালাম।আমি নিলয় বলছি।তোমার সাথে কিছু কথা ছিল?

নিলয়ের নাম শুনেই অথৈ ভয় পেয়ে যায়। ভাবতে থাকে এত বছর পরে নিলয় আবার তাকে ফোন কেন করেছে?তাছাড়া এইটা তো নতুন নাম্বার নিলয় এইটা কি করে পেলো?নিলয় আবার সব কিছু জেনে গেলো নাকি।উফফ,,, আর ভাবতে পারছি না।

অথৈ নিজেকে সামলিয়ে বলে,সরি ভাইয়া।প্রায় ২ বছর পরে ফোন দিয়েছেন তো তাই প্রথমে চিনতে পারি নি।তাছাড়া আপনি আমার ফোন নম্বর কোথায় পেলেন?আর আমার সাথে আপনার কি কথা থাকতে পারে?

নিলয় গম্ভীর স্বরে বলে, এত কিছু তোমাকে জানতে হবে না।আমি যা বলছি শুধু তাই শুনো? আমি জানতে চাই তুমি অদ্রিতাকে আমার বিষয়ে কি বলেছো? তোমাকে দুই দিনের মধ্যে ঢাকায় আসতে হবে।অদ্রিতা আমার কোনো কথা বিশ্বাস করবে না।তুমি তাকে সব সত্যি খোলে বলবে।

অথৈ না বুঝার অভিয়ন করে বলে,মানে!আমি তো আপনার সম্পর্কে নিজেই কিছু জানি না তো অদ্রিতাকে কি বলবো?আমি এখন ঢাকা আসতে পারবো না।রাখি,,,,

নিলয় রাগে কর্কশ স্বরে বলে,আমি যখন বলছি তোমাকে ঢাকায় আসতে তবে তোমাকে ঢাকায় আসতেই হবে।তোমার হাতে আর অন্য কোন অপসন নেয়।আমি তোমার সম্পর্কে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে নিয়েছি।তুমি ৬ মাস হলো বিয়ে করেছো। এখন চট্টগ্রামে স্বামীর সাথে থাকো।তোমার হাজবেন্ড ব্যাংকে জব করে।ওনার ফোন নম্বরও আমার কাছে আছে।আমি চাইনা তোমাদের সম্পর্কটা নষ্ট হউক,,,,,

অথৈ কিছুটা ভয় পেয়ে বলে,নষ্ট হবে মানে,কি বলতে চাইছেন আপনি?

নিলয় বাঁকা হেসে বলে,তোমাকে তো এটতা বোকা বলে আমার মনে হয় না।আমি কি বলতে চাইছি তা তুমি অনেক ভালো করেই বুঝতে পেরেছো।তবুও যদি না বুঝতে পারো তবে বলছি, তোমার স্বামী নিশ্চয়ই তোমার অতীত সম্পর্কে জানে না।আমার কাছে সব কিছুর প্রমান আছে।যদি তুমি রাজি না হও তবে সব কিছু তোমার স্বামীর কাছে পাঠাতে আমার বেশি সময় লাগবে না।এখন নিজেই ভেবে দেখো কি করবে?

নিলয়ের কথা শুনে অথৈ ভয় পেয়ে যায়। নিলয় যদি সব কিছু সত্যি সত্যি তার হাসবেন্ডকে বলে দেয় তবে তার স্বামী তাকে ভুল বুঝবে।হয়তো তার সুখের সংসার ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।সে চায় না অতীতের করা কোন ভুলের জন্য তার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নষ্ট হউক। তাই ভয়ে ভয়েই বলে ঠিক আছে আসবো।কোথায় আসতে হবে?

পরে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিব। কিন্তু তুমি যদি তোমার কথার খেলাপ করো তবে এর পরিণতি কটতা খারাপ হতে পারে তা তো নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো। আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়,,,,

কেটে যায় দুই দিন_
নিলয় অনেকক্ষন ধরে একটি রেস্টুরেন্টে বসে আছে।অপেক্ষা করছে অথৈ এর জন্যে।
প্রায় একঘণ্টা ওয়েট করার পরে অথৈকে রেস্টুরেন্টে ঢুকতে দেখলো নিলয়।রেস্টুরেন্টে ঢুকে অথৈ এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে থাকলো নিলয়কে হঠাৎই নিজের সামনে নিলয়কে দেখতে পায় সে।
নিলয় অথৈকে সামনের দিকে একটি টেবিলে বসতে বলে।যদিও রেস্টুরেন্টটি শহরের ভিতরে তবুও এখানের পরিবেশটা বেশ নিরিবিলি। অথৈ আর নিলয় টেবিলে গিয়ে বসে।

নিলয় গম্ভীর স্বরে বলে,আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না। যা বলার সুজাসুজি বলছি।তুমি আমার নামে অদ্রিতা কি বলেছো? যার জন্য ও আমাকে ঘৃণা করে।আমি বিদেশে যাওয়ার পরে কি এমন হয়েছিল যার জন্য পরে আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখেনি, আমিও অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুতেই তার সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারি নি। ওই দিন ওর সাথে কথা বলে যা বুঝলাম তাতে আমি সিউর তুমি সব কিছু জানো।সো এখনি সব সত্যিটা আমাকে বলবে।

নিলয়ের কথা শুনে অথৈ বুঝতে পারে অদ্রিতা নিলয়কে কিছু বলেনি। আসল সত্যি নিলয় জানে না আর সে যদি এখন মিথ্যা বলে তবে নিলয় ধরতেও পারবে না।তাই সে ভাবছে নিলয়কে এখন মিথ্যা বলবে।

অথৈ এর চুপ করা দেখে নিলয়ের রাগ উঠে যায়।তাই একটু জোরেই বলে,আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি।তার উত্তর দাও,আন্সার মি।ডেমিট,,,,,,নিলয়ের কথা শুনে রেস্টুরেন্টের অনেক মানুষ তাদের দিকে তাকায়।পরিস্থিতি বুঝে নিলয় নিজেকে শান্ত করে।

অথৈ খুব শান্ত স্বরে বলে,আমি সত্যিই এই বিষয়ে কিছু জানি না। অদ্রিতাকে আমি আপনার বিষয়ে কিছু বলিনি।হয়তো অদ্রিতা অন্য কাউকে পছন্দ করতো তার জন্যই হয়তো ও আর আপনার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেনি। এখন যখন ফিরে এসেছেন সে আমাকে এই বিষয়ে ফাঁসাতে চাইছে যাতে আপনার মনে হয় সব কিছুর পিছনে আমি দায়ি।আমি আগেই বলেছিলাম এই অদ্রিতা আপনার যোগ্য না কিন্তু আপনি তখন আমার কোনো কথা শুনেন নি।এখন দেখলেন তো,,,

অথৈ আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিলয় দাঁতে দাঁত চেপে কর্কশ স্বরে বলে উঠে,shut up.I say Shut up.তোমার সাহস কি করে হয় অদ্রিতার নামে মিথ্যা বলার?আসলে ভুলটা আমারই।আমি কি করে ভাবতে পারলাম তোমার মতো মেয়ে এত সহজে আমাকে সত্যিটা বলে দিবে?just wait and see,,,, এখন আমি কি করি?এই বলে নিলয় নিজের ফোন বের করে।

অথৈ কিছুটা ভয় পেয়ে নিলয়কে জিজ্ঞেস করে, আ… আপনি কাকে ফোন করছেন?

নিলয় ফোন অথৈ এর স্বামীর ডায়াল করে অথৈকে দেখায় পরে তাকে কল করে,
নিলয়ের এই কাজে অথৈ অনেক ভয় পেয়ে যায়।তাই আমতা আমতা করে বলে,প্লিজ এমন করবেন না।আমি সব সত্যি আপনাকে বলবো তবুও প্লিজ ওনাকে কিছু বলবেন না।

নিলয় বাঁকা হেসে বলে,আগে তো ভালো করেই বলেছি কিন্তু তুমিই তো শুনো নি।এখন আমার আর কিছু করার নেই।অনেক লেট করে ফেলেছো।এখন তো তোমার স্বামী কি জানি নাম? ও মনে পরেছে,,, মি. সায়ান।ওনাকে তো সব সত্যিটা আমাকে জানাতেই হবে।নিলয় আগেই ফোন স্পিকারে রেখে দেয়, যাতে অথৈ সব শুনতে পায়।সায়ান ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলে,নিলয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই অথৈ নিলয়ের হাত থেকে ফোন নিয়ে কেটে দেয়।তা দেখে নিলয় বাঁকা হাসি দিয়ে অথৈ এর হাত থেকে ফোন নিয়ে নেয় আর বলে একবার কেটে দিয়েছো তো কি হয়েছে?আবার দিচ্ছি।বলেই আবার সায়ানকে ফোন দিতে নেয়!

অথৈ করুন স্বরে বলে,প্লিজ এমনটা করবেন না। আমি আর কোন মিথ্যা কথা বলবো না।সব সত্যি বলবো।প্লিজ একটা চান্স দেন,,,,,,,

নিলয় অন্যদিকে ফিরে বাঁকা হাসি দেয়,পরে অথৈ এর দিকে তাকিয়ে বলে ওকে এটাই তোমার লাস্ট চান্স। এখন যদি সব সত্যি না বলো তবে এর পরিণতি কি হবে তা তুমি আমার থেকে ভালো জানো।

আমি এখন আর কোনো মিথ্যা বলবো না।পরে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু নিলয়কে খোলে বলে।অথৈ এর কথা শুনে রাগে নিলয়ের চোখ – মুখ পুরো লাল হয়ে যায়।অথৈ এর জায়গায় যদি কোনো ছেলে হতো তবে এতক্ষনে নিলয় তার হাড়গুর ভেঙে ফেলতো কিন্তু মেয়ে বলে কিছু করতেও পারছেন।সে ভাবতে পারছে না একটা মেয়ে এতটা স্বার্থপর আর নিকৃষ্ট চিন্তা কি করে হতে পারে?

নিলয়ের অবস্থা দেখে অথৈ ভয় পেয়ে যায়।নিলয়কে এতটা রাগ করতে সে আগে কখনো দেখেনি। তাই ভয়ে ভয়েই বলে,আমি যা জানতাম তার সব কিছু আপনাকে বলে দিয়েছি।আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।আসলে তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না।আপনি আমাকে অপমান করেছিলেন ওই অদ্রিতার জন্য, আমার ভালোবাসাকে প্রত্যাখান করেছিলেন তাই রাগের মাথায় এইসব করে ফেলেছি।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন,,,,,

নিলয় নিচের দিকে তাকিয়ে দুইহাত শক্ত করে মুঠ করে রাখে।আসলে ও এখন নিজের রাগ কন্টোল করছে।সে চাইছে না এই পাবলিক প্লেসে কোনো সিন ক্রিয়েক্ট করতে। তাই যথা সম্ভব নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।তার চোখ দিয়ে যেন আগুনের ফুলকি ঝড়ছে।

নিজেকে একটু শান্ত করে নিলয় অথৈকে অদ্রিতার ফোন নম্বর দেয় আর বলে তাকে ফোন দিয়ে এখানে আসতে বলতে।আর এটাও বলে দেয় অদ্রিতা যেন এইটা না জানে যে নিলয় তাকে এখানে ডেকেছে।

অথৈ কিছুটা ভয়েই নিলয়ের হাত থেকে ফোন নম্বর নেয় আর অদ্রিতাকে ফোন দেয়!
.
.
.
চলবে……….
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_২৯

অথৈ কিছুটা ভয়েই নিলয়ের হাত থেকে ফোন নম্বর নেয় আর অদ্রিতাকে কল দেয়।২-৩ বার কল দেওয়ার পরে অদ্রিতা ফোন রিসিভ করে বলে, আসসালামু আলাইকুম। আপনি কে বলছেন?

ওয়ালাইকুম আসসালাম।আমি অথৈ,কেমন আছোস্?

অদ্রিতা অবাক হয়ে বলে,আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তুই হঠাৎ এতদিন পরে ফোন দিলি।কি কারণ, এতদিন কোথায় ছিলি?কোনো খোঁজ খবর নাই?

অথৈ হেসে বলে,আরে বাবা,একসাথে এত প্রশ্ন।আমি কোনটার উওর দিবো কিছুই বুঝছি না!আচ্ছা রাখ এইসব। তোর সাথে আমার খুব ইমপোর্টেন্ট কিছু কথা আছে।আমার সাথে দেখা করতে পারবি?প্লিজ না করিস্ না,প্লিজ।

হইছে আর কিছু বলতে হবে না।শুধু বল্ কোথায় আসতে হবে?

তোকে অনেক অনেক থ্যাংকস্।আচ্ছা আমি জায়গাটা ম্যাসেজ করে দিচ্ছি তুই চলে আয়,বাকী কথা সেখানেই হবে।আচ্ছা এখন রাখি,,,,,

ঠিক আছে,আল্লাহ হাফেজ।

এখন তো প্রায় ৩ টা বাজে ওইখানে গেলে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাবে।কাউকে কিছু না বলে তো আর যাওয়া যাবে না। তাই সে তার শ্বাশুড়ির কাছে যায়।
ওনাদের রুমে গিয়ে দরজায় নক করে বলে, মা আসতে পারি?

মায়ের কাছে আসবি আবার জিজ্ঞেস করতে হবে নাকি।শুধু এসে পরবি,এখন আয়।কিছু বলবি?

অদ্রিতা একটু অবাক হয়ে বলে,তুমি কি করে বুঝলে আমি কিছু বলতে এসেছি?

ওনী মুচকি হেসে বলে,শোন মেয়ের কথা।এইটা তো তোর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তুই কিছু বলতে চাস্।কিন্তু ভয় পাচ্ছিস্।এবার বল কি বলতে চাস্?

অদ্রিতা কিভাবে বলবে বুঝতে না পেয়ে বলে, না,মা।আসলে আমার এক বান্ধবী ফোন করেছিল। আমাকে বলছে তার সাথে গিয়ে দেখা করতে।আমার সাথে বলে কিছু দরকারি কথা আছে তাই। মা এখন কি আমি যাব?

এই কথা বলার জন্য এত ভয় পাচ্ছিস্।তাড়াতাড়ি যা,সে হয়তো তোর জন্য অপেক্ষা করছে।কখন আসবি?

হয়তো সন্ধ্যা হবে,,,,,,,

আচ্ছা,ঠিক মতো যাস্।

অদ্রিতা মুচকি হেসে বলে, ঠিক আছে মা।এই বলে সে রুমে এসে বোরকা পরে রেডি হয়ে নেয়। অথৈ এর দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী রেস্টুরেন্টে পৌঁছে যায়। ভিতরে ঢুকতেই সামনের কর্নারের একদিকের একটি টেবিলে অথৈকে দেখতে পায়।সে গিয়ে অথৈকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে।হঠাৎ পিছন থেকে ধরায় অথৈ কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।সে পিছনে তাকাতেই অদ্রিতাকে দেখতে পেয়ে মনে মনে স্বস্তি পায়।

অদ্রিতা হেসে বলে, ভয় পেয়ে গেলি নাকি।এত দিন কোথায় ছিলি? হঠাৎ করে আমার কথা কি করে মনে পরলো? সামনে যে নিলয় বসে আসে এখন সে তা খেয়াল করে নি।অথৈকে দেখে সে আর অন্য দিকে তাকায় নি।

আগে তো চেয়ারে বস,পরে সব বলছি।

হুমম,বসছি। সে চেয়ারে বসতেই সামনে নিলয়কে বসা দেখতে পায়।সাথে সাথেই তার মুখের হাসি চলে যায়।এতক্ষনে সে অথৈ এর এখানে আসতে বলার কারণ বুঝতে পারে।কিন্তু সে নিলয়ের সাথে কোন কথা বলতে চায় না তাই সাথে সাথে উঠে চলে যেতে চায় আর অথৈ তার হাত ধরে ফেলে,অদ্রিতা রাগি চোখে তার দিকে তাকায়।

অথৈ করুণ স্বরে বলে, প্লিজ অদ্রিতা যাস্ না।তোকে আমার কিছু কথা বলার আছে আর কথাগুলো নিলয় ভাইয়াকে নিয়েই।আমি জানি তুই নিলয় ভাইয়ার সম্পর্কে আর কোন কথা শুনতে চাস্ না।কিন্তু ঐদিন আমি তোকে যা বলেছিলাম তার সব কিছুই মিথ্যা ছিল।তোকে সব সত্যি বলতেই আমি এখন এখানে তোকে ডেকেছি।এসেই যখন পরেছিস্ তবে শুনে যা, প্লিজ।

অথৈ এর কথা শুনে অদ্রিতা আবার চেয়ারে বসে বলে, কি বলতে চাস্? জলদি বল,,,

তারপর অথৈ অদ্রিতাকে সব কিছু খোলে বলে।সে কেন মিথ্যা বলেছিল তাও বলে।সব কিছু শুনার পরে অদ্রিতা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।অদ্রিতার মনে এখনো সংসয় রয়েই যায়।অথৈ যদি এখন সব কিছু সত্যি বলে তবে ঐ ম্যাসেজ গুলো কি ছিল আর নিলয়ই বা হঠাৎ করে কোথায় চলে গিয়েছিল?
তাই সে বলে মানলাম এখন তুই যা বলছোট্ তার সবি সত্যি কিন্তু ঐ ম্যাসেজগুলো!আমি যে দেখিছি তা কি করে মিথ্যা হতে পারে।

আমি জানতাম তুই কখনো আমার মুখের কথা বিশ্বাস করবি না। তাই তো একদিন মিথ্যা কথা বলে আমি ওনার কাছ থেকে ফোন নিয়ে নিজেই ওই ম্যাসেজ গুলো করি। যাতে তোকে দেখাতে পারি।পরে আমি নিলয় ভাইয়ার ফোন থেকে সব ম্যাসেজ ডিলিট করে দেই এই বিষয়ে ওনী কিছুই জানতেন না।সব কিছু আমি করেছি।আমি কিছুতেই এইটা মানতে পারিনি যে নিলয় আমাকে ছেড়ে তোকে ভালোবাসবে।সেদিন ওনী আমাকে যখন অপমান করে তখন মনে মনে আমিও ঠিক করি,আমার ভালোবাসা যখন পূর্ণতা পায়নি তবে আমিও তোদের ভালোবাসাকে পূর্ণতা পেতে দিব না। তাই তো তোদের আলাদা করার অনেক চেষ্টা করি,কিন্তু পারিনি। একদিন সুযোগটা আমি পেয়েই যাই।যা আমি কাজে লাগাই।প্লিজ আমাকে মাফ করে দে্।আমি জানি আমি যা করেছি তা সব ভুল আর এই ভুলের কোনো ক্ষমা হয়না।তবুও তুই আমাকে ক্ষমা করে দে্।আমার স্বামীকে প্লিজ কিছু বলিস্ না।তবে সারা জীবন সে আমাকে ছোট করে কথা বলবে।প্লিজ অদ্রিতা কিছু বল্?

অদ্রিতার এখন কি বলা উচিত সে কিছুই বুঝছে না।তার নিজের অজান্তেই তার চোখ দিয়ে পানি পরছে।এতদিন তো সে নিলয়কে ভুল বুঝেছে কিন্তু আজ যখন সে সব সত্যিটা জানতে পেরেছে তখন সে নিরুপায়।তার হাতে কিছু নেই। এইসব কিছুই এখন তার কাছে অতীত কিন্তু এইটা এমন এক অতীত যা সে ভুলতে পারছে না। এখন সে অন্য কারো স্ত্রী, এটাই এখন তার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। আর কিছু দিন আগেও যদি সে সব কিছু জানতে পারতো তবে হয়তো তাকে এত কষ্ট পেতে হতো না।আর না আরিয়ানকে তার নিজের অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও তাকে বিয়ে করতে হতো।কিন্তু এখন আর কিছুই করার নেই।সে নিজের মন থেকে এখন আরিয়ানকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছে। মনে মনে অথৈ এর উপর তার অনেক রাগ হচ্ছে কিন্তু তাকেই বা সে কি বলবে!তার ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে।এতে তো আর কারো কিছু করার নেই।

অদ্রিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গম্ভীর স্বরে বলে,তোকে আমি কোনো দিন ক্ষমা করতে পারবো কি না তা আমার জানা নেই।কিন্তু আমি তোর মতো নই যে শুধুমাএ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কারো জীবন নষ্ট করবো।আমি তো কোনদিন তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি। তোকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম কিন্তু তার প্রতিদান তুই আমাকে এইভাবে দিবি তা আমি কোনদিন কল্পনাও করিনি।আমি দোয়া করি তুই তোর স্বামীর সাথে অনেক সুখে থাক।আজকের পর থেকে তোর আর আমার সব সম্পর্ক শেষ। দয়া করে তুই কোনদিন আর আমার সামনে আসবি না।তোকে দেখলে আমার তোর বিশ্বাসঘাতকতার কথা মনে হবে যা আমি ভুলতে চাই।

অদ্রিতার কথা শুনে অথৈ নিজের করা কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়।অদ্রিতার জায়গায় সে নিজে হলে হয়তো এত সহজে সব কিছু ছেড়ে দিত না।না মেনে নিতে পারতো।কিন্তু অদ্রিতা তাকে তেমন কিছুই বলেনি।সে নিজের মাঝে কিছুটা সাহস এনে বলে, এখন তো তুই সব সত্যিটা জানস্।তবে তো আর কোন বাঁধা রইলো না।এখন তো তুই নিলয় ভাইকে মেনে নিতে পারিস্। সব সত্যিটা জানার পর তো আর কোন ভুল বুঝাবুঝি নেই।আগের কথা সব ভুলে গিয়ে সুখে থাক।যেই সময়টা চলে গেছে তা তো আর ফিরে আসবে না কিন্তু তুই ভবিষ্যতে অনেক সুখি হবি এই দোয়া করি।

অথৈ এর কথা শুনে অদ্রিতা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।মনে মনে বলে,সুখ!সে তো আমার জন্য অচিন পাখি। ধরা_ছোঁয়ার বাহিরে।সুখ তো আমার ভাগ্যে নেই তো আমি কি করে সুখে থাকবো।

অথৈ এর দিকে তাকিয়ে সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,আমি এখন বিবাহিত।অন্য কারো স্ত্রী। এইসব ভাবাও এখন আমার জন্য পাপ।থাক এইসব বাদ দে,তুই ভালো থাকিস্ এই দোয়াই করি।পরে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,নিলয় ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দিন। সত্যিটা না জেনে সেদিন আপনার চরিত্র সম্পর্কে বাজে কথা বলা আমার ঠিক হয়নি। আচ্ছা এতসব কিছুর পরেও একটা কথা থেকেই যায়,আপনি হঠাৎ করেই কোথায় চলে গিয়েছিলেন আর কেনই বা চলে গিয়েছিলেন?
.
.
.
চলবে.,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here