অপূর্ণতা পর্ব ৩০+৩১+৩২

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৩০_৩১

অদ্রিতার কথা শুনে নিলয় কিছুক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে পরে বলা শুরু করে,আজ থেকে দেড়বছর আগের কথা। আমি কলেজ থেকে বাড়িতে পৌঁছেই দেখি আব্বু মেঝেতে পড়ে আছে।আব্বুকে এই অবস্থায় দেখে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়।ছোট থেকে আব্বুই আমার সব।তাকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না।আর সেই আব্বুকে এইভাবে দেখবো তা কখনো কল্পনাও করিনি।নিজেকে সামলিয়ে আমি আব্বুর কাছে যাই,পার্লস চেক করে দেখি আব্বু বেঁচে আছে।তখন যেন নিজের প্রাণ ফিরে পেলাম।আব্বু অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পরে ছিল অনেক চেষ্টা করি কিন্তু কিছুতেই ওনার জ্ঞান ফিরাতে পারিনি তাই তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাই।হাসপাতালে ওনার জ্ঞান ফিরে।ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারি আব্বুর ব্রেন টিউমার হয়েছে এবং তা এখন লাস্ট স্টেজে আছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওনার অপারেশন করাতে হবে।কিন্তু এদেশে তা সম্ভব ছিলনা।তাই বিদেশে নিয়ে যেতে বলে।তখন আমার মাথায় আর অন্য কিছু ছিল না।শুধু কিভাবে আব্বুকে সুস্থ করবো তাছাড়া।তাই কাউকে কিছু না বলে আব্বুকে নিয়ে বিদেশে চলে আসি।সেখানে যাওয়ার ১ সপ্তাহ পরে আব্বুর অপারেশন করা হয়।ও.টি থেকে ডাক্তার বের হওয়ার জিজ্ঞেস করলে বলে ২৪ ঘন্টা না গেলে কিছুই বলতে পারবে না।এইটুকু বলে নিলয় একটু থামে,তার চোখ দিয়ে পানি পরতে থাকে।

অদ্রিতা কি বলবে তা বুঝতে না পেরে চুপ করে থাকে। নিলয় নিজেকে শান্ত করে আবার বলা শুরু করে,এই ২৪ ঘন্টা আমি কি করে পার করেছি তা আমি নিজেই জানি না।সারাক্ষণ আল্লাহকে ডেকেছি। মোনাজাতে শুধু একটা জিনিস চেয়েছি,আব্বু যেন সুস্থ হয়ে যায়।২৪ ঘন্টা পরে ডাক্তার বললো আব্বু এখন মোটামুটি সুস্থ কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে।তখন যেন আমি আবার নিজেকে ফিরে পেলাম।প্রায় ১ মাস পরে সেদিন আমি শান্তিতে ঘুমিয়ে ছিলাম।পরিস্থিতির হাতে আমি সত্যিই অনেক নিরুপায় ছিলাম।তাই তো তোমার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারি নি,কিন্তু সব কিছু ঠিক হওয়ার পরে তোমার সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করি কিন্তু পারি নি। যতবারই তোমাকে কল করার চেষ্টা করেছি তোমার ফোন সুইচঅফ বলেছে।আব্বু তখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়নি।এততা পথ যার্নি করা ওনার জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ হতো, তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও দেশে আসতে পারিনি।তবুও তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি।কিন্তু হয়তো আল্লাহ চায়নি তাই তো আমার শতচেষ্টা করা সত্ত্বেও তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।দেশে ফিরেই আমি তোমার বাড়িতে গিয়েছিলাম।সেদিন দেখি তোমার বিয়ে হয়ে গেছে।এটা দেখার পরে আমার শরীরে আর বিন্দু পরিমাণ শক্তি ছিল না,তাই তো কার সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে তা না দেখেই সেখান থেকে আমি চলে আসি।আমি যদি জানতাম আরিয়ানের সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে তবে কিছুতেই সেদিন আমি তোমার বউভাতে যেতাম না। কারণ তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। বুকের ভিতরটা জ্বলে-পুঁড়ে শেষ হয়ে যায়। তখন অনেক কষ্টে আমি নিজেকে সামলিয়েছি৷ বিশ্বাস করো আমি এতটা খারাপ নই যে তোমার বিবাহিত জীবনে কোন প্রকার পবলেম করবো।তুমি কখনো আমার হতে পারবে না,আর এটাই আমার নিয়তি। আমি তা মেনে নিয়েছি।

নিলয় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারও বলা শুরু করে,আসলে আমি শুধু এটাই চেয়েছি তুমি যাতে আমাকে ঘৃণা না করো।ভুল না বুঝ,তাই শুধু সত্যিটা তোমাকে বলতে চেয়েছি। তুমি যদি এখন বলো আর কোনদিন তোমার সামনে না আসতে।বিশ্বাস করো আজকের পর থেকে আর কোনদিন আমি তোমার সামনে আসবো না।আমি শুধু এটাই চাই তুমি যেখানেই থাকো না কেন সুখে থাকো।তবেই আমি সুখে থাকবো।সবার ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না।আমারটাও না হয় অপূর্ণই থাকোক।আমি জানি তুমি আরিয়ানকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছো,হয়তো এখন তাকেই ভালোবাসো।আর এতে তোমার কোন দোষ নেই, তুমি আমাকে ঠকাও নি। ঠকিয়েছে তো আমাদের ভাগ্য আমাদের। দোয়া করি তুমি আর আরিয়ান সবসময় সুখে থাকো।

অদ্রিতার চোখ দিয়ে পানি পরছে।সে ভাবতেও পারেনি নিলয় এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে।যখন তাকে তার সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল তখনই সে তাকে ভুল বুঝেছে।কি করে সব সত্যিটা না জেনে সে নিলয়কে ভুল বুঝলো?তার তো উচিত ছিল নিলয়কে সব কিছু জিজ্ঞেস করা।অথৈ সব কিছু সত্যি বলছে কিনা তা যাচাই করা।কিন্তু সে কি করলো,উল্টো নিলয়কে ভুল বুঝে তার থেকে দূরে সরে এসেছে।যা হয়ে গেছে তা কি বদলানো সম্ভব!কখনোই সম্ভব নয়।এখন সে নিলয়কে কি বলবে সে নিজেই জানে না।কেউ তাকে এততা ভালোবাসতে পারে তা তার জানা ছিল না।নিজেকে শান্ত করে সে নিলয়কে বলে,আমাকে ক্ষমা করে দিন।ভুলটা আমারই ছিল। আমারই উচিত হয়নি সব সত্যিটা না জেনে আপনাকে ভুল বুঝা।আপনার চরিত্র সম্পর্কে বাজে কথা বলা।কিন্তু এখন আমার হাতে কিছু নেই।আগের সব কথা ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করুন।অন্য কাউকে নিয়ে সুখে থাকুন।আমি চাইনা আপনি আগের কথা ভেবে আর কষ্ট পান,,,,আমি এখন অন্য কারো স্ত্রী আর তাকে আমি নিজের মন থেকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি।আপনিও নিজের জীবনে এগিয়ে যান।আপনার বন্ধু হিসেবে আমাকে আপনার পাশে পাবেন।

অদ্রিতার কথা শুনে নিলয়ের মন খুশিতে ভরে যায়।অদ্রিতা তার বন্ধু হয়ে তার পাশে থাকবে এটাই তার জন্য অনেক। তাই সে বলে,তুমি আমার বন্ধু হয়ে আমার পাশে থাকবে তবেই হবে।আমার আর কিছু চাই না।অন্য কাউকে নিজের জীবনের সাথে জড়াতে পারবো কিনা তা আমার জানা নেই কিন্তু ভালো থাকার চেষ্টা করবো। তুমি ভালো থেকো,আমার জন্য চিন্তা করতে হবে না।আমি ভালোই থাকবো।তুমি কোন বিপদে পড়লে সব সময় আমাকে পাশে পাবে।দোয়া করি সব সময় ভালো থেকো আর নিজের যত্ন নিও।

অদ্রিতা কোন কথা বলে না।আসলে এখন তার কি বলা উচিত তা সে নিজেই জানে না।তাই শুধু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে। নিলয় তার অবস্থা বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে,সন্ধ্যা তো হয়ে গেছে বাড়িতে যাবে না?

হুমম যাবো,আচ্ছা যাই।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে,আমি তোমাকে দিয়ে আসি।এখন তোমাকে আমি একা ছাড়তে পারবো না।পরে অথৈকে জিজ্ঞেস করে তুমি কখন যাবে?

অথৈ নিলয়ের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। এতকিছুর পরেও তার জন্য চিন্তা করার জন্য। সে শান্ত স্বরে বলে, কাল যাব।আজ রাতে হোটেলে থাকবো,আপনারা যান।

আচ্ছা আর কিছু না বলে অদ্রিতাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বাহিরে চলে আসে।রেস্টুরেন্ট থেকে বাহিরে এসে অদ্রিতা বলে,আমি একা যেতে পারবো আপনি যান।এই বলে সে চলে যেতে নেয় কিন্তু নিলয় তাকে পিছন থেকে ডাক দেয়।অদ্রিতা থেমে পিছনে তাকায়।

নিলয় ভরশা দিয়ে বলে, চিন্তা করো না আমি তোমার শ্বশুরবাড়িতে যাবো না।কিন্তু এই সময় একটি মেয়েকে আমি একা ছাড়তে পারবো না।তোমার শ্বশুরবাড়ির একটু সামনেই তোমাকে নামিয়ে দিব।

অদ্রিতা আর কিছু না বলে নিলয়ের গাড়িতে উঠে। গাড়িতে কেউ আর কোনো কথা বলেনি।নিলয় অদ্রিতার শ্বশুরবাড়ির সামনেই তাকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।অদ্রিতা কিছুক্ষন নিলয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে পরে বাড়িতে চলে আসে।কলিংবেল
বাজাতেই তার শ্বাশুড়ি দরজা খুলে দেয়।ভিতরে ঢুকতেই জিজ্ঞেস করে,আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো।

না মা,,,,,,,

আচ্ছা যাও।গিয়ে রেস্ট নিয়ে নাও,,,,,

জি, মা।বলে রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে রেস্ট নেয়,,,,,
.
..

চলবে,,,,,

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৩১

এভাবেই কেটে যায় ১ সপ্তাহ। যদিও তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি তাকে অনেক ভালোবাসে। তাকে নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করে তবুও তার ভিতরে খারাপ লাগা কাজ করে।আরিয়ান এতদিনেও তাকে মেনে নিতে পারেনি।

আদৌও কি ওনি কখনো আমাকে মেনে নিবেন?না কালো বলে সবসময় এই ভাবে আমাকে অপমান করবেন, অবহেলা করবেন।ওনিই বা কি করে আমাকে মেনে নিবেন?আমার মতো কালো মেয়েতো সত্যিই ওনার সাথে মানায় না। ওনার সাথে তো কোন সুন্দরী, স্মার্ট ও মর্ডান মেয়েকেই মানায়।যাকে দেখে সবাই তার রুপের প্রশংসা করবে।আমি তো কোন সুন্দরী মেয়ে না।কি করে ওনি আমাকে মেনে নিবেন?বেলকনিতে বসে নিজেই মনে মনে ভাবছে এইসব।

অন্যদিকে আরিয়ান অফিসে বসে আছে।যদিও তার কাজ অনেক আগেই শেষ তবুও বাড়িতে আসছে না।নিজের কেবিনেই বসে আছে।তার কাছে অদ্রিতার ব্যবহার,আচার-আচরণ, মূল্যবোধ,নম্নতা,বড়দের সম্মান করা, ছোটোদের স্নেহ করা এইসবই অনেক ভালো লাগে। তবুও তার মনের ভিতরে একটা দুটানা রয়েই যায়। মাঝে মাঝে মনে হয় সে হয়তো অদ্রিতাকে পছন্দ করে ফেলেছে কিন্তু পরক্ষনেই সে ভাবে,সে কখনোই অদ্রিতাকে পছন্দ করতে পারে না।অদ্রিতা তো তার যোগ্যই না।কোথায় সে আর কোথায় অদ্রিতা।তার সাথে তো অদ্রিতাকে একদমই মানায় না। তার সাথে তো মানাতো রাইসাকে। যেমন সুন্দরী তেমন স্মার্ট আর ধনী। সবদিক থেকে সে তার জন্য পারফেক্ট আর সে তো তাকে ভালোবাসে।সতিই কি তাকে ভালোবাসে কিনা তা এখন বুঝতে পারছে না! এইসব ভাবছে ঠিক সেই সময়ই একটি মেয়ে এসে বলে স্যার, আপনি বাড়ি যাবেন না?মেয়েটি হচ্ছে তার পি.এ। মেয়েটির কথা তার মাথায় ঢুকছে না সে আপন মনে ভেবেই যাচ্ছে। ৩-৪ বার ডাক দেওয়ার পরে আরিয়ানের ভাবনার ছেদ পরে,,,,

আরিয়ান কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে, What’s happen?

আরিশা বুঝতে পেরে নম্র স্বরে বলে,১০ টা বাজে আপনি বাড়িতে যাবেন না?না,মানে আমি তো বাড়িতে যাবো তাই বলছি।তার পি,এ এর নাম আরিশা, আরিয়ানের কথা শুনেই কিছুটা ভয় পায় তাই একটু ভয় পেয়েই কথাটা বলে।

আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,আমি কখন বাড়িতে যাবো না যাবো তার কৈফিয়ত কি আমি তোমাকে দিবো নাকি?আর তোমাকে কি আমি যেতে নিষেধ করেছি নাকি?কাজ শেষ হলে চলে যাও।

আরিশা শান্ত স্বরে বলে, জি স্যার সব কাজ শেষ।

তো যাও,,,,,

আরিশা সেখানে আর একমুহূর্তও থাকে না।সাথে সাথেই কেবিন থেকে বের হয়ে নিজের বাড়িতে চলে যায়।আরিয়ান এখনো কেবিনেই বসে আছে প্রায় ১১ টা বাজে।

অন্যদিকে অদ্রিতা তার জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করছে সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। অদ্রিতা তার জন্য টেনশন করছে। ওনি কি কোন পমলেমে পরেছে নাকি নয়তো প্রতিদিন তো ১০ টা সময়ই বাড়িতে চলে আসে। আজ ১১ টা বাজে এখনো এলেন না।আমি কি ওনাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবো?না, থাক। আমি ফোন দিলে তো আবার ওনি রাগ করেন। কিন্তু তার মন মানছে না। তাই কল দেয়,যা-ই হোক পরে দেখা যাবে। অদ্রিতা কল দিতেই আরিয়ান ফোন রিসিভ করে কর্কশ স্বরে বলে, কেন কল দিয়েছো?

অদ্রিতা আরিয়ানের কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে বলে, কিছু না।মানে, অনেক রাত হয়ে গেছে আপনি কখন বাড়িতে আসবেন?

আরিয়ান বিরক্তির স্বরে বলে,একটু পরেই আসবো আর কিছু বলবে?

না

তবে রাখি বলে ফোন কেটে দেয়।

প্রায় সাড়ে ১১ টার দিকে আরিয়ান বাড়িতে আসে। কলিংবেলটা বাজাটেই অদ্রিতা দরজা খোলে দিয়ে বলে,আপনি ফ্রেস হয়ে আসেন আমি খাবার গরম করে দিচ্ছি।

আমি খেয়ে এসেছি,তুমি খেয়েছো?

অদ্রিতা কিছুটা অবাক হয় আরিয়ানের কথায়।আরিয়ান তো কখনো জিজ্ঞেস করে না সে খেয়েছে কি না?আবার কিছুটা খুশিও হয়। সে বলে, না।

আরিয়ান ছোট করে বলে,কেন?

আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তাছাড়া আপনি খেয়েছেন কিনা তা না জেনে কি করে খাই?

আরিয়ান বিরক্ত হয়ে বলে, যত্তসব ঢং।এইসব আধিক্ষেতা আমার একদম পছন্দ না।এরপর থেকে যেন এইসব না দেখি।এই বলে রুমে চলে যায়।

আরিয়ানের কথায় সে অনেক কষ্ট পায়। তার ভালোবাসা, কেয়ার তাকে নিয়ে টেনশন করাকে তার ঢং মনে হয়। এখন তার গলাদিয়ে আর খাবার নামবে না।তাই সে কিছু না খেয়েই সবকিছু গুছিয়ে রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দেখে আরিয়ান ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়ে ফোন টিপছে।সে কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে। ফ্রেস হয়ে এসে নিজের বাঁধা চুলগুলো খোলে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। চিড়ুনি দিয়ে নিজের চুল আঁচড়াছে। অন্যদিকে আরিয়ান একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।আরিয়ান যেন একধরনের ঘোরের মধ্যে চলে গেছে।আজকে কি খুব ভুল হবে অদ্রিতাকে নিজের করে নিলে।অদ্রিতার চুলের ঘ্রাণ তাকে মাতাল করে দিচ্ছে।সে কিছুতেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না।

আজকের রাতটা কেমন যেন অন্যরকম।এখন ডিসেম্বর মাস বাহিরে প্রচন্ড ঠান্ডা পরছে।কিন্তু অদ্রিতার রুমে থাকতে একটুও ভালো লাগছে না।তাই সে একটা চাদর নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।আজ জোসনা রাত। চাঁদের আলোয় চারিদিকটা অনেক সুন্দর লাগছে।কুয়াশা পরছে তার সাথে এই চাঁদের আলো কেন জানি তার এই পরিবেশটা অসম্ভব ভালো লাগছে।আবার মাঝে মাঝেই হালকা বাতাস বইছে।তাতে ঠান্ডাটা যেন আরও একটু বেশিই লাগছে।অদ্রিতার মন চাচ্ছে এমন একটি রাতে আরিয়ানের হাতে হাত রেখে ছাদে গিয়ে প্রকৃতির এই সৌন্দর্যটা উপভোগ করতে।তার কাঁধে মাথা রেখে বসে বসে গল্প করতে। কিন্তু আপসোস এইসবই কোন দিনই সম্ভব নয়।আরিয়ান তো তাকে সহ্যই করতে পারে না। তাকে ভালোবেসে কাছে নেওয়া তো অনেক দূরের কথা।বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আর এই কথাগুলো ভাবছে,,,,,,,

অন্যদিকে আজকে আরিয়ানের চোখে ঘুম আসছে না। নিজের মনের ভিতর অদ্ভুত একধরনের অনুভূতি কাজ করছে। আজ সে একধরনের ঘোরে মধ্যে আছে। কিছুতেই সেই ঘোর কাটাতে পারছে না।সে যেন আজ নিজের মাঝেই নেই।কিছু না ভেবে সেও বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। অদ্রিতার পিছনে দাঁড়িয়ে তার চুলের মাতাল করা ঘ্রান নিতে থাকে,,,,,,
. #গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৩২

আরিয়ানও বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।অদ্রিতার পিছনে দাঁড়িয়ে তার চুলের মাতাল করা ঘ্রান নিতে থাকে,,,,,,

অদ্রিতার সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সেতো প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত।তার পিছনে যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে সে তা বুঝতেই পারছে না।আরিয়ান ঘোর লাগা চোখে তাকে দেখছে। হঠাৎই সে পিছন থেকে অদ্রিতাকে জরিয়ে ধরে,তার চুলে নিজের মুখ গুজে দেয়।ঘটনার আকস্মিকতায় অদ্রিতা অবাকের চূড়ান্ত সীমানায় পৌঁছে যায়।রুমে তো সে আর আরিয়ান ছাড়া অন্য কেউ নেই।তবে কি ওনি আমাকে এভাবে জরিয়ে ধরলেন?আরিয়ান এমন একটি কাজ করতে পারে তা সে স্বপ্নেও ভাবেনি। সে অদ্রিতার পিঠ থেকে চুল সরিয়ে হাত দিয়ে পিঠে সাইড করতে থাকে। আরিয়ানের প্রতিটি স্পর্শে অদ্রিতা শিহরিত হয়ে উঠছে।তার হার্ট খবু জোরে বিট করতে লাগলো।মনে হচ্ছে যে কোন সময় বেরিয়ে আসবে।কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে নিজের ভিতরে আবার ভয়ও করছে।তার পা অবশ হয়ে যাচ্ছে, দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছে না। তাই আরিয়ান থেকে দূরে যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে। তাকে ধাঁক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরাতে চায়, কিন্তু আরিয়ান উল্টো তার আরও কাছে চলে আসে,,,,,,

এইবার সে আরও ভয় পেয়ে যায়।তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। তবুও বলে,কি..ক..করছেন তা কি? ছাড়েন আমাকে।আরিয়ান তার হাতে এক টান দিয়ে তাকে নিজের দিকে ঘুরায়, তার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে, হুশ,একদম কথা বলবে না নেশাক্ত কন্ঠে বলে আরিয়ান। আরিয়ানের কন্ঠে অদ্ভুত এক মাদকতা জড়িয়ে আছে।অদ্রিতার মন কোন ভাবেই তা উপক্ষা করতে পারছে না। তার সারা শরীরে হীম শীতল করা অনুভূতি হচ্ছে। আরিয়ানের কথা শুনে সে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।আরিয়ান আবারও তাকে নিজের দিকে ফিরায়। অদ্রিতা ভয়ে ভয়েই আরিয়ানের দিকে তাকায়।তার চোখের দিকে তাকাতেই সে দেখতে পায় আরিয়ান অদ্ভুত ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন জানি অন্যরকম নেশাক্ত চোখে তাকে দেখছে।আরিয়ানের এই চাওয়াতে তার আরও বেশি অস্বস্তি লাগছে। তার হার্ট আরও অনেক জোরে জোরে বিট করতে লাগলো আবার ভয়ও করছে বেশ।আরিয়ানকে কখনো তার দিকে এভাবে তাকাতে দেখে নি। তাই আবারও আরিয়ান থেকে দূরে যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে।এতে তার মুখের উপর চুল এসে পরে।আরিয়ান হাত দিয়ে তার চুল সরিয়ে কানের পিছে গুজে দিয়ে তার গাড়ে মুখ ঢুবায়।অদ্রিতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিয়ান তার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে নেয়।এক হাতে অদ্রিতার কুমোরে ধরে অন্য হাতে তাকে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসে।

অদ্রিতা তাকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু তাকে এক চুলও নড়াতে পারলো না।কিছুক্ষন পরে আরিয়ান নিজেই তাকে ছেড়ে দেয়।অদ্রিতার দম যেন এতক্ষনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ছাড়া পেয়েই সে হাপাতে লাগলো।সে দৌঁড়ে সেখান থেকে পালাতে চাইলে আরিয়ান তাকে নিজের কোলে নিয়ে নেয়।অদ্রিতা তার কোল থেকে নামার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে কিন্তু না পেরে চুপ করে আরিয়ানের দিকে একপলক তাকিয়ে পরে লজ্জায় নিচের দিকে তাকায়,,,,,,

আরিয়ান তাকে বিছনায় এনে শুয়িয়ে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।ঘোর লাগা চোখে তাকে দেখতে থাকে। অদ্রিতার খেয়াল হতেই সে বিছানা থেকে দ্রুত উঠে যেতে নেয় কিন্তু আরিয়ান অদ্রিতার হাতে একটান দিয়ে তাকে নিজের আরও অনেক কাছে নিয়ে আসে।অদ্রিতা বুঝতে পারে আরিয়ানের থেকে দূরে যাওয়া এখন তার পক্ষে সম্ভব নয়।তাই সেও আর কিছু বলে না। দুইজনেই হারিয়ে যায় ভালোবাসার অন্য এক জগতে।

সকালে আজানের শব্দে অদ্রিতার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলতেই নিজেকে আরিয়ানের বুকে দেখতে পায়।আরিয়ান তাকে দুইহাতে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে।এমন করে জরিয়ে ধরে আছে মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই যেন সে পালিয়ে যাবে।অদ্রিতা কতক্ষন আরিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে তার কপালে হাল্কা করে ঠোঁট ছোঁয়ায়, আস্তে করে আরিয়ানের হাত ছাড়িয়ে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে রাতের কথা ভাবতেই লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে যায়।আজ সে পরিপূর্ণ ভাবে আরিয়ানের স্ত্রী হওয়ার অধিকারও মর্যাদা পেয়েছে। আজ সে অনেক খুশি কারণ আজ পূর্ণতা পেয়েছে তার ভালোবাসা, তার সম্পর্ক, তার জীবন।

সত্যিই কি সকল #অপূর্ণতা মুছে গেছে অদ্রিতার জীবন থেকে! সত্যিই কি পূর্ণতা পেতে চলেছে অদ্রিতার জীবন! নাকি এই সুখটুকু ক্ষনস্থায়ী।তার জন্য অপেক্ষা করছে আরও অনেক বড় ঝড়, যা শেষ করে দিবে সব কিছু।

ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নামাজ পরে নেয়।নামাজ পরা শেষ হলে আরিয়ানের দিকে তাকায়, সে এখন ঘুম থেকে উঠে নি।আরিয়ানের দিকে তাকাতেই লজ্জায় সে চোখ সরিয়ে নেয়।সাথে সাথেই রুম থেকে বের হয়ে বাগানে চলে যায়। আজ সে অনেক খুশি।কিছুক্ষন বাগানে থেকে পরে রান্নাঘরে চলে আসে রান্না করতে।সে রান্না করছে আর রাতের কথা ভেবে লজ্জা পাচ্ছে আর এই ভেবে তার খুব ভালো লাগছে আরিয়ান তাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছে, তাই একা একাই মুচকি হাসছে।

তার শ্বাশুড়ি অনেকক্ষন ধরে রান্নাঘরে এসেছে কিন্তু সেদিকে অদ্রিতার কোন খেয়ালই নেই। সে তো নিজের চিন্তা আর অনূভুতির থেকে বাহিরে বেরিয়ে আসতে পারছে না।

তার শ্বাশুড়ি দাঁড়িয়ে থেকে এই বিষয়টি লক্ষ্য করেন। তাই তিনি তাকে পিছন থেকে ডাক দেন।

হঠাৎই পিছন থেকে কারো কথা শুনে অদ্রিতা চমকে যায় আর ভাবনা থেকে বের হয়ে এসে পিছনে তাকায়।,তাকিয়েই তার শ্বাশুড়িকে দেখতে পেয়ে বলে,মা তুমি।কিছু লাগবে?

অদ্রিতার শ্বাশুড়ি মুচকি হেসে বলে,না,,,তুই ঠিক আছোট্ তো?আজ তোর কি হয়েছে?একা একাই লজ্জা পাচ্ছিস্ আর মুচকি হাসচ্ছিস্! কোন কারণ তো নিশ্চয়ই আছে?

অদ্রিতা লজ্জা পেয়ে বলে, কিছু হয়নি তো।এমনি আজ অনেক ভালো লাগছে।

তিনি একটু হেসে মজা করে বলে, ভালো,,, তো নাতি- নাতনির মুখ কবে দেখছি।

লজ্জায় অদ্রিতার পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে।সে কোন রকম বলে তুমিও না,কি যে বলো? সে এখান থেকে যাওয়ার জন্য কারণ খুঁজতে থাকে আর পেয়েও যায়। মা,,, রান্না শেষ। আমি খাবারগুলো টেবিলে রেখে আসছি।সে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে খাবার নিয়ে চলে যায়।

অদ্রিতার শ্বাশুড়ি মুচকি হেসে বলে,পাগলি মেয়ে একটা। মায়ের কাছেও এত লজ্জা পায়।

অন্যদিকে আরিয়ানের ঘুম ভেঙে যায়। রাতের কথা মনে পড়তেই এখন তার নিজের উপরই রাগ হচ্ছে। এমন একটি কাজ সে কি করে করতে পারে!
.
..

চলবে,,,,,,,
.
.
চলবে,,,,,,৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here