অতল গভীরে পর্ব ৭+৮

#অতল_গভীরে
#পর্ব ৭
Eliyana Aara
—-আমাকে বাঁচান আয়মান।আমি বাঁচতে চাই এই নেশার জীবন থেকে।আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো থাকতে চাই।চাই না এই মদ বিয়ার সিগারেট এর কালো জীবন। খুব রঙিন একটা জীবন চাই।আর সেটা আপনি পারবেন আয়মান দিতে।আপনার রঙে নিজেকে রাঙাতে চাই।

তানহা কান্না করতে করতে উঠে বসে এই কথা গুলো বললো।আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম।

—-বাবা এই আয়মানকেতো এতদিন দেখতেই পারিসনি এখোন তার রঙ দিয়ে নিজেকে রাঙাতে চাস?কবে থেকে হলো এরকমটা??

—-ওনেক আগে থেকে।যখোন আমি ক্লাস টেনে পরি তখোন থেকে।

—-তো এতদিন বলিসনি কেন?

—-বললেও কি আপনি আমাকে ভালোবাসতেন?আপনিতো কোন মেয়েকেই নিজের গার্লফ্রেন্ড বানানি।

—-তা ঠিক।কিন্তু হয়তো তুই বললে রাজি হয়ে যেতাম।

—-কি করে বলাতাম।আপনি তো আমাকে দেখতেই পারতেন না আপনাকে জ্বালাতাম বলে।আপনাকে আমি ভালোবাসতাম তাই সব আবদার আবেদন আপনার কছেই করতাম।যানতাম কিছু সময় রাগারাগি করলেও পরে আপনি ঠিকি তা পুরোন করতেন।মনে মনে ভাবতাম যে বলে দেই কিন্তু কোন এক অজানা ভয় মনে বিরাজ করতো তাই বলতে পারতাম না।

—-ওওও আচ্ছা এই কথা।

—–হুম।আর আপনিও কি করলেন।আপনার পরালেখা শেষ হওয়ার সাথে সাথে কোর্স করতে চলে গেলেন বাহিরে।বুঝলেন না আমার মনের কথাটা।তাই আপনি যাওয়ার পর থেকে আপনার সাথে আর কথাই বলিনি কিন্তু বাসা থেকে যখোন সবাই কথা বলতো তখোন লাউড স্পিকারে দিয়ে আমি আপনার ভয়েস শুনতাম।

—–কিন্তু এসবের মাঝে তুই নেশা করা কেন শুরু করলি????

ও এবার ফুফিয়ে কিছুটা ডোক গিলে গলা ভজিয়ে আবার বলতে লাগলো,

—-অনেক মাস পেরিয়ে গেলো আপনি দেশের বাহিরে জাওয়ার।আমি রোজ একা একা ভার্সিটি যেতাম।তো একদিন ভার্সিটি থেকে আসার সময় দেখতে পেলাম একটা লোক আমাদের ওখানের একটা টংয়ের চাচাকে মারধোর করছে।আমার কাছে বেপারটা খুব খারাপ লাগলো,তাই লোকটাকে থামাতে আমি গিয়ে লোকটার গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিলাম। আমাকে থাপ্পড় মারা দেখে লোকটাও আমাকে তেরে মারতে আসে,,, কিন্তু আমাকে এভাবে এগিয়ে যেতেই আর কিছু মানুষও ওখানে যরো হয়ে জায়।যার কারোনে লোকটি আমার গায়ে হাত না উঠিয়ে গাড়ি করে চলে জায়।দেখে মনেহচ্ছিলো অনেক বড় ঘরের ছেলে। আমি আর জিনিসটাকে বেশি পাত্তা দিলাম না ওইদিনকার মতো বাসায় চলে এলাম।

কিছু দিন পর ভার্সিটি থেকে আসার সময় কে জানো আমার মুখে রুমাল দিয়ে অজ্ঞান করে ফেললো যখোন আমার জ্ঞান ফিরলো তখোন নিজেকে একটা রুমে আবিস্কার করলাম।হাত পা মুখ বাধা অবস্থায়। আমি ভয়ে চুপসে রইলাম কিছুসময় পর দরোজা খোলার আওয়াজে সেদিকে তাকাতেই দেখতে পারলাম ওইদিনকার সেই লোকটা। হাসতে হাসতে আমার কাছে এসে আমার মুখের বাধোনটা খুলে দিলো।মুখ খুলতেই আমি বললাম,

—-ক কে আপনি? তুলে এনেছেন কেন? কোথায় এনেছেন???

—-আহ্ বেবি শান্ত। কোথায় এনেছি? আমি কে?এসব জানা লাগবে না।শুধু এটা জানলেই চলবে ওই দিনকার থাপ্পড় এর শাস্তি হিসেবে আজকের জন্য তুমি আমার।
এতটুকু বলেই লোকটা আমার কাছে এসে……)

তানহা কান্নার চোটে দম ফেলতে পারছিলো না…..আমি নিজের চোখের পানি মুছে।ওকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম এক হাতে জড়িয়ে ধরলাম,

—–তানু কান্না করিস না।আমি আছিতো।ভয় পাস না।তোর সাথে যাই হয়ে থাক তোর আয়মান কোন দিনও তোকে ছেরে যাবে না।বিশ্বাস করিসতে আমাকে???

—-হুম।

—-তাহলে পুরোটা বল না বললে লোকটাকে আমি শাস্তি দিবো কি করে, লোকটাকে চিনবিতো দেখলে আবার?

—–হুম। ওই দিনকার থাপ্পড় এর প্রতিশোধ নিতে সেই লোকটা আমাকে নষ্টা বানাতে চেয়েছিলো রেপ করতে চেয়েছিলো আমাকে।কিন্তু আমার হাত পায়ের বাধোন খুলে দিলে আমি লোকটার সাথে জোড়া জুরি করতে থাকি।এক পর্যায়ে একটা কাচের টি টেবিল ভেঙে ফেলে সেখানের কাচের সাথে লেগে আমার কোমরের কিছুটা অংশ ওই দিন কেটে জায়।

তানহা কিছুটা থেমে বড় আরেকটা নিশ্বাস ফেলে আমার হাতটা নিয়ে,ওর ঘারে রেখে বললো,

—-এই খানটায় ওই নোংরা হাতটা ছুয়ে ছিলো আয়মান।
আবার পেটে হাত রেখে বললো,

—-এই খানটায় ওও ওই হাতটা দিয়ে স্পর্ষ করেছিলো।

তানহার কথা গুলো শুনে আমার রাগে মনে হচ্ছে ওই কুত্তাটাকে গিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলি।যেই হাত দিয়ে আমার তানুর গায়ে স্পর্শ করেছে সেই হাত আমি কেটে ফেলি।আমার চোখ দিয়ে যেন আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। তানহা আবার বলতে লাগলো,

—–ওইদিন লোকটার মাথায় একটা কাচের বোতল ভেঙে নিজের সম্মান নিয়ে ফিরতে পেরেছিলাম।ভয়ে ভয়ে একটা আন্টি থেকে বোরকা ধার করে নিয়ে অনেক কষ্টে বাসায় ফিরেছিলাম।বাসায় গিয়ে নিজের শরীরের চামরা গুলো তুলে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো।
ওইদিনকার পর থেকে খুব ভয় পেয়ে গেলাম ভার্সিটিও যেতে চাইতাম না।বাসায় এসে কাউকে ওই লোকটার কথাও বলতে পারছিলাম না।কিসের ভয় তা জানতাম না।সেটা আত্মসম্মান নাকি অন্য কিছু তা যানতাম না।
চেয়েছিলাম আপনাকে সব খুলে বলবো, মোবাইল হাতে নিয়েও আপনাকে আর বলার সাহস পেতাম না।সারাদিন ঘর বন্ধি হতে থাকলাম।নিজেকে সব কিছু থেকে একেবারে গুটিয়ে নিলাম ভয়ে।
যেতাম না ভার্সিটি। আমি সারাদিন ডিপ্রেশনে থাকতাম।ইচ্ছে করছিলো মরে যাই তাও ভয় হতো।নিজেকে ঠিক করে একদিন ভার্সিটি গেলাম সেখানে আমার এক বান্ধবী লিমা,আমাকে এরকম মন মরা থাকতে দেখে আমাকে ওর সাথেই নিয়ে ঘুরাতো।ও খুব পরিমানে এসবে এডিক্টিড ছিলো।
একদিন আমাকেও কিনে দিলো বললো খেয়ে দেখ মন ভালো থাকবে।প্রথমে না না করলেও পরবর্তীতে আমি খেতে থাকলাম।ধীরে ধীরে আমারও এসবে আসক্তি এসে গেলো।আমি নেশাগ্রস্থ হয়ে গেলাম।

আমি এমন কোন নেশা জাতীয় জিনিস ছিলো না যেটা আমি খাইনি।সবার থেকে দুরে চলে গেলাম তাহমিনাদের সবার থেকে দুরে।অনেক সময় বাসায় খুব দেরি করে আসতাম।
বাসার বাহিরে থাকলে বেশি নেশা করতাম না ঘরে বসেই নেশা করে পরে থাকতাম।দেখতে দেখতে অনেক সময় কেটে গেল। আপনি বিদেশ থেকে আসলেন কিন্তু আপনাকে ওই কয়েকটা বছর খুব মিস করেছি।যেদিন আসলেন ওইদিন ইচ্ছে করছিলো মন ভরে বসে দেখি কিন্তু আসার পরেই আম্মু আমাকে বিয়ের কথা বললো আপনার সাথে আমি রাজি হলাম না।

এরকম নেশা গ্রস্থ আমি,চাই না আপনার লাইফটাকে নষ্ট করতে।আপনার ভালো একটা বউ হবে ফেমেলি থাকবে সুখে থাকবেন।কিন্তু আমার সাথে আপনি ভালো থাকবেন না তাই না করে দিলাম।তাও ওরা সবাই জোর করে বিয়ে করিয়েই দিলো।

আপনার জীবন থেকে চলে যেতে আপনাকে ডিভোর্স এর জন্য বলেছিলাম আপনিও রাজি হয়ে গেলেন এতে কষ্ট লাগেনি বরং খুশি হয়ে ছিলাম এরকম একটা এডিক্টেড মেয়ের সাথে না থাকাই ভালো।

কিন্তু সব উলটাই হলো আপনার থেকে দুরে যেতে চাইলে জেন আরো কাছে চলে আসতাম।আপনার জব এখানে ঠিক হলো সবাই মিলে এখানে পাঠিয়ে দিলো।চলে এলাম এখানে,এখানে এসে আপনার থেকে দুরে থাকারই চেষ্টা করেছি।আম্মুরা সবাই আসলে দুজনে একি রুমে ছিলাম একি বিছানায় ওই দিন আপনি কোল বালিশ শরিয়ে রাখেননি আমি ইচ্ছা করে রেখেছিলাম।আপনাকে জড়িয়ে ধরে আমিই শুয়ে থাকতাম আপনি না।

আপনার কাছে থাকতে থাকতে এখোন আর দুরে যেতে ইচ্ছে করতো না তাই আপনি কিছু বললে প্রথমে না না করলে পরে ঠিকি রাজি হয়ে যাই।ক্লাবে পার্টিতে যেতেও রাজি হয়ে গেলাম।ভালোই হয়েছে গিয়েছিলাম। গিয়ে যে ওই মানুষটাকে দেখবো কখোন কল্পনা করিনি।

—–তুই পার্টিতে লোকটাকে দেখেছিস কে সে এখোনি বল????

—-আপনার বসের ছেলে আয়মান।যাকে এতগুলো বছর পর দেখে আমার ওই দিনটার কথা মনে পরে গিয়েছিলো।ভয় পেয়েগিয়েছিলা খুব।যদি ওদিন নিজেকে রক্ষা করতে না পারতাম তবে আমিও এখন ধর্ষণের নামে পরিচিত হতাম।আমার গায়েও ধর্ষণ এর টেগ লেগে যেতো।

বলেই হিচকি তুলে কান্না করছে।আমি ওকে সান্তনা দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে শুয়ে পরলাম এখোনও ফজরে আযান দিতে দেরি আছে তাই ওকে শুইয়ে ঘুম পারাতে লাগলাম।আর ভাবতে লাগলাম ওই জানোয়ারকে কি করে শাস্তি দিবো।আমার তানহার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো মেরে ফেলবো ওকে।এতগুলা দিন নিজে কুরে কুরে কষ্ট পেয়েছে তাও কাউকে একটি বারো বলেনি।

নিজের কাছে নিজেকেই আজ তুচ্ছ মনে হচ্ছে। মেয়েটা আমাকে এতো ভালো বাসে আর আমি তাকে কিনা বুঝার চেষ্টাও করিনি কখোনও।আর না তানহা, আমি আর কখোন কষ্ট পেতে দিবো না।যতদিন আমার নিশ্বাস চলবে ততোদিন আমি তোকে নিয়েই বাচতে চাই।আর এই সালা কেতো আমি দেখে নিবো সালা চরিএহীন কাপুরুষ কোথাকার।মেয়েদের গায়ে হাত দেয়।ছিহ্।

সবার আগে আমি তানহাকে ঠিক করবো তারপর ওই সালাকে খতম করবো।ভিখিরি বানিয়ে যেই পর্যন্ত জেল না খাঠিয়েছি আমার শান্তি নেই।

সকালে,

—-গুড মর্নিং তানু।

—– গুড মর্নিং, যানেনতো এই তানু ডাকটাকে না বড্ড মিস করেছি।কেউ তানু বলে ডাকলেও আমি কখোন সারা দেইনি যেই পর্যন্ত আপনা না ডাক দিতেন।শুধু আপনার জন্যই তানু ডাকটা।

—-হি হি পাগলি ওঠ।এখোন না গুড মর্নিং না গুড আফটারনুন।সাড়ে বারোটা বাজে।আমি বাহির থেকে খাবার অর্ডায় করে এনেছি।তুই যা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি নাস্তা প্লেটে নিচ্ছি।

—–আচ্ছা।
তানহা ফ্রেশ হতে চলে গেলো আর আমি প্লেটে খাবার বেরে রাখলাম।

ও এসে আমার কাছে বললো,

—–খায়িয়ে দিন আমি নিজ হাতে খেতে পারবো না।

—–এটাতো আমিও বলতে পারি, নিজ হাতে খেতে পারবো না খায়িয়ে দে।

—–না আপনি খায়িয়ে দিবেন আমাকে।

—–আচ্ছা আচ্ছা দিবো।

আমিও প্লেট নিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি আনিয়েছি সেটাই লোকমা ধরে ওর মুখে ধরলাম ও হা করে মুখে খাবারটা নিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।আমিও দেখতে লাগলাম পাগলিটাকে,দেখতে দেখতে দেখলাম ওর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে।নিরবে চোখ থেকে পানি ফেলছে।আমি বাম হাত দিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে বললাম,

—–আর না।খাওয়ার সময় আর কোন কান্না না।

ওওও নিজের হাতে এক লোকমা নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলো।আমি খাবারটা মুখে নিয়ে ওর হাতে কামোর দিয়ে ধরে রাখলাম,

ওওও হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমিও আঙুলটা ছেরে দিলাম।ও হাতটা ছুটতে পেয়েই আমাকে চুল গুলো এলো মেলো করে দিলো।দুজনেই হাসতে লাগলাম।এরপর খাবার শেষ করলাম।

খবার শেষে ওর জন্য একটা চার্ট করেছি ডাক্তার এর পরামর্শ নিয়ে যে একেবারেইতো আর মদ এসব ছারানো যাবে না তাই ডাক্তার বলেছে অল্প অল্প করে দিনে দুইবার খেতে দিতে।আর মুখে চকলেট দিয়ে রাখতে।

ওই অনুযায়ি ডেইলি ওকে ট্রিট করতে লাগলাম।যতটুক খেলে ও সুস্থ থাকবে ততটুকুই দিতাম।কিন্তু ডাক্তার বলেছিলো যতোটা রাতের বেলা না দিতে বা কম দিতে।রাতের বেলা না দিলে ও প্রচুর পেটের বেথায় কাতরাতো।ওর কষ্ট দেখে আমারি চোখ থেকে পানি পরতো।
#অতল_গভীরে
#পর্ব ৮
Eliyana Aara
দেখতে দেখতে আরো দুই মাস চলে গেলো।তানু এখোন আগের থেকে অনেকটা বেটার। এখোন আর আগের মত মদ সিগারেট নিয়ে পরে থাকে না।আমার খেয়াল রাখে নিজের যত্ন নেয়। বাড়ির সবার সাথে দুই একদিন পর পর কথা বলে।সবাই খুশি ওকে দেখে।তানহা নিজেও যথেষ্ট কষ্ট করেছে এগুলা ছারতে।

দুজনেই বারান্দায় বসে আছি। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে ঝিরি ঝিরি।বসে বসে বৃষ্টি বিলাশ করছি।তানহা আমার কাধে মাথা রেখে হাত জরিয়ে ধরে বললো,

—–চলেন না বাড়িতে যাই।মাস খানেক হয়ে গেছে কারো সাথে দেখা হয়নি।সবাইকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।

—-দেখতে ইচ্ছে করছে তো যা দেখা করে আয়।

—–আমি কি একা জাবো নাকি।

—–তো সাথে কে যাবে??

—-কেন আপনি জাবেন!

—–পারবো না।

—-পারতে আপনাকে হবেই।আমাকে আমার বাবার বাসায় প্লাস শশুর বাড়িতে নিয়ে যেতেই হবে।

—-ওরে মামা বাড়ির আবদার।

—- না জেঠু বাঠির আবদার।

—–তা যাবি ভালো কথা ওখানে জাওয়ার টাকাটা কে দিবে তোর শশুর বাপে নাকি তোর বাপে।

—–আপনি থাকতে উনারা কেন দিবেন?

—–আমার কাছে টাকা নেই।ওই জানোয়ার আসার পর থেকে অফিসের সব কর্মচারীর টাকা যেন মেরেই খাচ্ছে। ঠিকমতো সেলারিও দেয় না।কিছুদিন উনার আন্ডারে একটা প্রোজেক্টে কাজ করেছিলাম তখোন আমি উনার বেপারে কিছু প্রমান জোগার করেছি।কিন্তু এই কয়েকটা দিয়ে উনাকে এই পদ থেকে নামানো যাবে না।আরো বড় প্রুফ লাগবে।

—–ওওওও ধেত ভালো লাগে না।তাহলে এক কাজ করি আব্বুর থেকে টাকা নেই আমি বাড়ি যাবো সবাইকে দেখবো আমার ভালো লাগছে না।

—-হুম বুঝেছি আমার তানু বেবি।টাকা নেওয়া লাগবে না।আমরা কাছে যা আছে তা দিয়েই হবে।কিন্তু ওই সালার কাছ থেকে গিয়ে ছুটি নিতে হবে আমাকে। এর মুখটা দেখতে আর ইচ্ছে করে না জানিসতো।ইচ্ছে করে সামনে পেলেই মেরে নাক মুখ ফাটিয়ে দেই।

—–হাহহাহহা।পরে আপনি ওকে কি জেল খাটাবেন, ওই আপনাকে জেলে পুরে দিবে।

—–হহাহহাহাহ।গেলে সাথে তোকেও নিয়ে জাবো।আমার আবার আমার বউ ছারা কোথাও ভালো লাগে না।

—-আহারে সখ কতো।জানতো

—–একটা কিস দে সরে জাবো।

——হুস কিস। মেরে তক্তা বানিয়ে দিবো।ওই লিমা কিন্তু আমাকে কেরাটেও শিখিয়েছে।

——ও আচ্ছা একটু দেখা দেখি।

তানহা উঠে ডান পা টা কিছুটা ভাজ উপরে উঠালো।এরপর ডান হাতটাকে সাপের ছোবল এর মতো করে উঠিয়ে, বাম হাতটাকে ওরকম করেই নিচে রাখলো।পরে হাইয়া হু করে আমার মাথায় সাপের মতো ছোবল দিয়েই দৌড়ে বিছানায় শুয়ে পরলো কাথা টেনে।
এটা কি হলো,আমি আহাম্মক এর মতো বসে রইলাম কিছুসময়। আিল্লিশে বললাম,—তানহারে তোর কেরাটি ছিলো এটা?? নাগিন মাইয়া দারা তুই পালিয়ে গিয়েছিস আসছি আমি বলেই, রুমের দিকে হাটা ধরলাম,গিয়ে দেখি কাথা মুরি দিয়ে ঘুমানোর ভান ধরে আছে।আমিও কাথার নিচে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে আমার উপর থেকে ঘুরিয়ে এনে ইচ্ছে করে ফ্লোরে ফেলে দিসি।

ও কাথা দিয়ে পুরো পেচিয়ে গেছে কোনরকম মুখটা বের করে বললো,

—–আহ্ আম্মুগো আমার কোমড়টা বুঝি ভেঙ্গেই গেলোগো।খাইষ্টা জামাই।

আমি শুয়ে শুয়ে হাসছি।

ও কাথার পেচ খুলেই আমার উপর উঠে বসলো,চুল গুলো সব টেনে দিয়ে নিচে নেমে গেলো।লেগে গেলে দুজনের মধ্যে WWE, Raw. জন সিনা আর দা আন্ডারটেকার ফাইট।হাহহাহা।

ফাইট করতে করতে দুজনে একসময় হাপিয়ে ওই বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে গেলাম।
সকাল সকাল উঠে এখোন তানহাই সব রান্না বান্না করে। আমি সকালের নাস্তা করেই অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলাম। অফিসে ঢুকে কেবিনে কিছু ফাইল গুছিয়ে রাখলাম,বস কিছু কাজ দিয়েছে ওগুলাই বসে বসে করছি না চাইতেও।

ওহহো বসের পরিচয় দেই ভালোমতো।বর্তমান বসের নাম হলো সাদ্দাফ সৈকত। আর সাদ্দফ এর বাবার নাম ছিলো সালাম চৌধুরী আঙ্কেল খুবই ভালো একজন লোক, আসার পর থেকে দেখেছিলাম খুব ভালো ব্যবাহর করেন।সবার থেকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করার পরেও ওনার নামে খারাপ কথা শুনিনি। কিন্তু এই সাদ্দাফ এর নামে সবাই দেখি শুধু কমপ্লেইন করে।বিশেষ করে মেয়েরা করে।করবে না এর চরিত্রের নাই ঠিক কেরেক্টার লেস জানোয়ার একটা।পারছিনা শুধু কিছু পাকা প্রমান যেটা দিয়ে আমি পুলিশের কাছে কমপ্লেইন করতে পারি।

কাজ শেষে চলে গেলাম বসের রুমে নক দিতেই রুমে ডেকে নিলেন। গিয়ে বসে পরলাম বসে বলতে লাগলাম,

—– আস্সালামু আলাইকুম বস।

—-হুম আয়মান বলুন
(মনে মনে বলতে লাগলাম সালা সালামের উত্তরটাও নেয় না।)

—–জি বস আসলে আমার ১০ দিনের ছুটি লাগতো।

—–এখোন কিসের ছুটি।কোন ছুটি নেই।

—–কেন সের আমি অফিসে জয়েন হওয়ার পর থেকে একদিনোও ছুটি নেই নি। আর আমি কাজও ভালো করছি তাহলে ছুটি কেন পাবো না।

(মনে মনে, হু হু আমাকে ছুটি দিবি কেন!দিবিতো সুন্দরী সুন্দরী মেয়েদের যাদের দেখে নিজের লোভ সামলাতে পারিস না চোখ দিয়েই গিলে খাস।)

—–আহ্ ওকে লিভ। বাট এরপর চাইলে আর ছুটি দিবো না।

—-ওকে বস।

(মনে মনে,না দে লাগবে না তোর ছুটি তোকে এখান থেকে বের করতেই আমি ছুটি নিলাম, বাড়িতেতো আর এত দিন থাকবো না। ৫ দিন ওখানে পাচ দিন এখানে তারপর তোর বেপারে আমি সব প্রমান জোগার করবো।)

—-যাও।আর রানিকে ডেকে দিয়ে যাও।

—ওকে।

কেবিন থেকে বের হয়ে রানির কাছে গেলাম।আমার কলিগ ও।ওর কাছে গিয়ে ডেস্কে দুটো বাড়ি দিতেই আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

—–ওওও আয়মান ভাইয়া তুমি কিছু লাগবে???

—–বস তোমাকে ডাকছে।

—–এই হালাকে কেন যে সালাম স্যর বস বানালেন কে জানে। এতো ভালো বাপের এতো কেরেক্টার লেস ছেলে।আমাদের মেয়েদের হয়ে গেছে জ্বালা। এর জন্য ইচ্ছে করে বোরকা পরে আসি।এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে দেখলে মনে হয় চোখ গুলো টেস্টার দিয়ে তুলে ফেলি।

—-চিন্তা করো না।আর কয়েকটা দিন এরে সয্য করো, এর ব্যাবস্থাতো আমি করছি।আর রুমে জাওয়ার পর দরোজা খোলা রাখবা লক করবা না।

—-ওকে।

ওওও চলে গেলো বসের কেবিনে।আর আমি কাজ করতে লাগলাম।প্লাস বাসের টিকিটও কেটে রাখলাম কালকের।
কাজ শেষে বাসায় চলে গেলাম। গিয়ে দেখি তানহা পপকর্ন আর কোকাকোলা নিয়ে মুভি দেখতে বসেছে।আমিও ফ্রেশ হয়ে টাউজার আর একটা টিশার্ট পরে ডাইনিংয়ে বসলাম।আমি এসে তানহার পাশে বসেছি এতে যেন ওর কোন খেয়ালি নেই।একমনে বসে টিবি দেখছে। সারাইনুডু আল্লু আরজুন এর মুভি দেখছে।

আমার পাশে আরধেক কোকা কোলা পরে আছে।সেটা নিতেই তানহা আমার দিকে কেমন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।আমি মুখা খুলে মুখে দিতেই মুখ থেকে সব বেরিয়ে এলো।ও পপকর্ন এর পেকেট রেখেই দাঁড়িয়ে গেলো,

আমি ওর দিকে তেডি নজর দিতেই ওওও ভয়ে দৌড়াতে লাগলো,কেননা ও কোকাকোলার বোতনে হুইস্কি মিলিয়ে খাচ্ছিলো।এখোন আমার কাছে ধরা খেয়ে দৌড়াচ্ছে আমিও ওর পিছনে দৌড়াচ্ছি। এক পর্যায়ে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম,

—–হুইস্কি খাচ্ছিলি কেন??

—–হি হি জানি না একটু খেতে ইচ্ছে করছিলো অনেক।তাই খেয়েছি।

—–খেতে ইচ্ছে করবে দেখে খেয়ে নিবি।

—–হুম।

—–এখোন আমার তোকে তুলে একটা আছার দিতে ইচ্ছে করছে তুলে আছার দিয়ে দেই।

—–না।

—–দেই।

—–না।

বলেই আমাকে কোনই দিয়ে একটা দাক্কা দিয়ে রুমে চলে গেলো।আমিও ওর পিছোন ছুটলাম।ওই দারা কোথায় যাস।

আমি ওকে আবার ধরতে গিয়ে কারপেটে বেধে পরে যেতে নিলাম ওকে সামনে পেয়ে ওর হাতে ধরে টান দিতেই দুজনেই ঠাস করে বিছানয় পরে গিয়েছি।

তানহা হাত ডলতে ডলতে বললো,

—–নিজে পরবেন ভালো কথা আমাকে নিয়ে পরার কি দরকার।

—–তুই না বলিস আপনার সব জিনিস আমার ফিফটি ফিফটি অধিকার।তো আমি বেথা পাইলে তোকেও পাওয়া লাগবে না।

—–গন্ডারের চামরা আপনার বেথা লাগে না।

—–এই কি বললি আমি গন্ডার???

ও মাথা উপর নিচ করছে।একবার হে তো আবার না করছে।

—-যা থাক তুই আমি যাই অন্য রুমে।

আমি উঠে যেতেই ও আমার হাতে ধরে রেখেছে।আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।আজ ওর চোখ গুলোর ভাষা অন্য কিছু বলছে।আমাকে কিছু একটা জানান দিচ্ছে। আমিও বসে ওর কানে ফিস ফিস করে বললাম,

মে আই…..

উঠে ওর চোখের দিকে তাকাতেই একবার চোখের পলক ফেলে মিষ্টি একটা হাসি দিলো।ডুবে গেলাম দুজনে এক বন্ধনে।স্বামী স্ত্রীর এক পবিএ বন্ধনে।

এরপর দিন কাপোর চোপর গুছিয়ে দুজনেই ঢাকার দিকে রওনা হলাম। রাত ১০টা বজে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। বাস আসতেই উঠে পরলাম দুজনেই বাসে। বাসে উঠে কানে হেডফোন গুজে তানহা আমার কাধে মাথা রেখে ঘুম। বাস জায়গা মতো আসতেই আমি ওকে উঠিয়ে দিলেন।বাস থেকে নেমে বাসার দিকে রওনা দিলাম।বাসায় গিয়ে কলিংবেল দিতেই সুমি আর তানজিল এসে দরোজা খুলে দিলো।আমাদের দুজনে দেখে দুজনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কেননা সবাইকে না বলে এসেছি।

সুমি এসে গিয়ে তানহাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

——তানহা আপু, কেমন আছো?ভাইয়া কেমন আছো??ভিতরে আসো ভিতরে আসো।
ভিতরে ঢুকতেই সুমি সবাইকে ডাক লাগালো।সবাই একে একে এসে অবাক হয়ে গেলো।সবাই একসাথে এটা সেটা জিগ্যেস করতে লাগলো আর আমার উত্তর দিতে লাগলাম।সবার সাথে কথা শেষে চলে গেলাম আমার রুমে ফ্রেশ হতে।

এখানে এসেও ঝগরা কে আগে জাবে সেটা নিয়ে তানুর সাথে ঝগড়ায় না পেরে ওকেই আগে যেতে দিলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here